৬১. সেই অভাবনীয় কাণ্ডটি

সমরেশ মজুমদার

 একষট্টি

তিন নম্বর ঈশ্বরপুকুর লেনে সেই অভাবনীয় কাণ্ডটি ঘটে গেল। মোট বাহান্নটি পরিবারের মধ্যে পঞ্চাশটি পরিবার এখন একত্রিত হয়েছে। দুটি পরিবার অপেক্ষাকৃত সচ্ছল। বস্তিতে থেকেও তারা চিরকাল নিজেদের আলাদা করে রেখেছিল, এবারও রাখল। পঞ্চাশটি পরিবারের মোট সংখ্যা, প্রাপ্তবয়স্ক দুশো বারো, শিশু একশ তিনজন।

শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্করা একই রকম খাবার খাবে না, পরিমাণেও পার্থক্য থাকবে। সুতরাং দেয় চাঁদা কখনই এক হতে পারে না। বিলু এটা মানতে পারছিল না। কিন্তু অর্ক নরম হল। একটা তিনবছরের বাচ্চার জন্যে সমান টাকা চাওয়া অন্যায় হবে বলে মনে হচ্ছিল। সেই জন্যে ঠিক হল দশ বছরের নিচে তিরিশ টাকা দিতে হবে।

দশজনের একটি কমিটি ঠিক করা হল। বিলু ক্যাশিয়ার। এই দশজন সমস্ত কিছু তদারকি করবে। দুজন রান্নার ঠাকুর রাখা হল যারা ঝুমকির তত্ত্বাবধানে কাজ করবে। প্রায় যজ্ঞবাড়ির মত ব্যবস্থা। কিন্তু কদিন চালু হতে সেটাও সহজ হয়ে দাঁড়াল। বিলু ফাঁক পেলেই অর্ককে হিসেবটা শোনাতো। মাসের শেষ কটা দিন না খাওয়াতে পারলে তিন নম্বরের লোক চামড়া ছাড়িয়ে নেবে। অর্ক কূল পাচ্ছিল না।

কিন্তু এই পঞ্চাশটি পরিবারে কতগুলো পরিবর্তন স্পষ্ট ধরা পড়ল। মেয়েরা কাজ কমে যাওয়ায় সংসারের দিকে মন দিতে পারল। তাদের বাচ্চারা বেশি সহানুভূতি এবং যত্ন পাওয়ায় নিয়ন্ত্রিত হল। তিন নম্বরে বেশ শান্তিপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করতে লাগল।

মাধবীলতা এখন ধীরে ধীরে হাঁটাচলা করতে পারে। যদিও তাকে বেশ বয়স্কা দেখায় কিন্তু উৎসাহ দ্রুত সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছে। মাঝে মাঝে সে বারোয়ারি রান্নার জায়গায় চলে এসে ঝুমকিকে পরামর্শ দেয়। এই বস্তির মেয়েরাও মাধবীলতাকে আপনজন ভাবতে শুরু করেছে। এতবছর একসঙ্গে এই বস্তিতে থেকেও মাধবীলতার সঙ্গে তাদের কোন সংযোগ গড়ে ওঠেনি। চিরকাল তারা ওকে ঈর্ষার চোখে দেখায় একটা দূরত্ব থেকেই গিয়েছিল। কিন্তু এখন সেই বাঁধটা যেন হঠাৎ সরে গেল। একসঙ্গে খাওয়ার সুবাদে মানুষগুলো কাছাকাছি এসে গেল।

পড়াশুনা আরম্ভ করলেও অর্ক মন বসাতে পারছিল না। সব সময় মাথার মধ্যে বিলুর হিসেবটা কিলবিল করছিল। এখন তিন নম্বরের সবাই তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। যার যা সমস্যা হয় সোজা চলে আসে অর্কর কাছে। দেখা যাচ্ছে অর্কর সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছে সবাই। এমনকি ন্যাড়ারও পরিবর্তন ঘটে গেছে। কাজের ভার পেয়ে ছেলেটা আন্তরিকতার সঙ্গে খেটে যাচ্ছে। কাছাকাছি বাজার থেকে জিনিস না কিনে দূর থেকে আনলে সস্তা হয় আবিষ্কার করে ন্যাড়া সেই দায়িত্ব নিয়েছে। অনিমেষও এই ব্যাপারে উৎসাহী। এতগুলো মানুষের পেট ভরাবার কাজে সে ছেলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তিন নম্বরের বয়স্করা তার কাছে মনের কথা খুলে বলে। মাঝে মাঝে অনিমেষের মনে হয় ঠিক এই রকম একটা কিছু তারা চেয়েছিল। এই রকম বললে অবশ্য ঠিক বলা হয় না, এর কাছাকাছি একটা ব্যবস্থা। না এদেশে হবে না বলে মনে হয়েছিল। অসম অর্থনীতির একত্রীকরণ অনেক দূরের কথা কিন্তু সমআর্থিক অবস্থার মানুষেরাও যে একই ছাদের তলায় এল এটাই বা কম কথা কি! হয়তো এরা সংখ্যায় নগণ্য, বিশাল ভারতবর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে কোন হিসেবেই আসে না কিন্তু তবু এর একটা আলাদা মূল্য আছে। জুলিয়েনরা বোধ হয় এই রকম চেয়েছিল। গ্রামে গ্রামে মানুষদের একত্রিত করতে, তাদের আর্থিক সামাজিক এবং মানসিক গঠনে সামঞ্জস্য এলে বর্তমান কাঠামোর বিরুদ্ধে পা ফেলার সংকল্প ভাল কিন্তু তা বাস্তবায়িত হতে নানান বাধা। অনিমেষ কিছুতেই ভাবতে পারে না কি করে অর্ক এই রকম একটা পরিকল্পনা নিল। প্রথমে তো সে তার সঙ্গে কোন আলোচনা করেনি। শুধু একটা মাতাল লোকের সঙ্গে ঝগড়া করে এতবড় একটা ব্যাপার করা কম কথা নয়। তারপরে অনিমেষ অর্কর সঙ্গে অনেক আলোচনা করেছে। এখন তো সে নিজেই জড়িয়ে পড়েছে এই কর্মকাণ্ডে।

দিন আটেক বাদে অর্ক কথাটা তুলল। তখন দুপুর। এই সময় বারোয়ারি রান্নার কাজকর্ম বন্ধ থাকে। সমস্যা শুনে অনিমেষ বলল, ‘এটা আগে ভাবিসনি?’

‘ভেবেছিলাম। কিন্তু মনে হয়েছিল যাহোক কিছু করে ম্যানেজ হয়ে যাবে। প্রথমে অল্প লোক ছিল তাই কেয়ার করিনি। কিন্তু যত লোক বাড়ছে তত সব উল্টোপাল্টা হয়ে যাচ্ছে। কি করি বলো তো? সবাইকে খুলে বলব?’

অনিমেষ বলল, ‘তোদের উচিত ছিল খরচ কমানো। পেটভরে খাওয়া নিয়ে কথা। দুটো পদ করার কোন দরকার ছিল না।’

অর্ক হাসল, ‘তাতে বদনাম হতো। প্রথম থেকে রটে যেত আমরা পয়সা মারছি।’

অনিমেষ বলল, ‘তাহলে?’

অর্ক শুয়ে পড়ল পাটিতে, ‘সবাইকে জানানো ছাড়া কোন উপায় নেই। যদি প্রত্যেকে বাড়তি টাকা দেয় তাহলে চলবে নইলে—!’

অনিমেষ ছেলের দিকে তাকাল। কথাটা অর্ক খুব সহজ ভঙ্গীতে বলছে না। এবং এটা বলতেও যে ভাল লাগছে না তা বুঝতে অসুবিধে হল না। কিন্তু সে কোন কূল পাচ্ছিল না। এই সময় মাধবীলতা কথা বলল। চুপচাপ শুয়ে বই পড়ছিল সে। এবার বইটাকে মুড়ে রেখে ডাকল, ‘খোকা!’

‘বল।’

‘তুই হেরে যাবি?’

‘কি করব বল? আমার তো নিজের টাকা নেই যে সবাইকে খাওয়াব।’ ‘একটা কিছু রাস্তা বের কর।’

অর্ক উঠে বসল, ‘জানো মা, আমরা তো টাকার চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছি। আজ বিলু বলল ও টাকার ব্যবস্থা করে আনতে পারে যদি আগের কাজটা মাসে দু’তিনদিন করে।’ অর্ক হাসল শব্দ করে।

‘আগের কাজ?’

‘স্মাগলিং। কয়লার সঙ্গে যেটা করত।’

‘ছিঃ।’

‘আরে তুমি ক্ষেপেছ? কিন্তু ব্যাপারটা দ্যাখো, ও আজ সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। পাগলের মত এটা নিয়ে পড়ে রয়েছে। টাকার যখন ভীষণ দরকার তখন ও মরিয়া হয়ে এটা করতে চাইল। কারণ ওই একটা পথ ছাড়া অন্য পথ আর ওর জানা নেই।’ অর্ক অনিমেষের দিকে তাকাল, ‘এই ভাবে কজন বলবে?’

মাধবীলতা বলল, ‘তোদের সামনে কি কোন পথ খোলা নেই।’

অর্ক মাথা নাড়ল, ‘বুঝতে পারছি না।’

‘তার আগে বল তো তুই এই ব্যাপারে ঝাঁপালি কেন? শুধু একটা মাতালের সঙ্গে ঝগড়া করে এতগুলো লোকের দায়িত্ব নিয়ে নিলি?’

অর্ক স্বীকার করল, ‘প্রথমে আমার মনে হয়েছিল এই রকম করলে লোকগুলো হয়তো একটু আরামে থাকবে। তুমি বলতে না, তিনজনের রান্নায় চারজনের হয়ে যায়! তাই ভেবেছিলাম অনেকগুলো পরিবার একসঙ্গে এলে খরচ কমে যাবে।’

‘শুধু তাই?’

‘তার মানে?’

‘এই লোকগুলোকে যখন এক হাঁড়িতে এনেছিস তখন অন্য ব্যাপারগুলো ভুলে থাকলি কি করে? এতে প্রত্যেকের নাহয় পেট ভরে খাওয়া জুটলো কিন্তু আর্থিক অবস্থা তো যা ছিল তাই রয়ে গেল। তোরা কেন বাচ্চাগুলোকে পড়াবার জন্যে একটা নাইট স্কুল চালু করলি না? যে টাকা হাতে এসেছিল সেটা তো একদিনে খরচ হচ্ছে না। যারা বেকার তাদের দিয়ে এখন কিছু কিছু ব্যবসা করলি না কেন যাতে তাদেরও উপকার হয় তোদের ফাণ্ডে কিছু জমা পড়ে। আমি বলছি প্রত্যেকটা পরিবারকে যদি আর্থিক ব্যাপারে পরস্পরের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলতে পারতিস তাহলে অনেক বেশী উপকার করা হতো, তোদেরও সমস্যা আসতো না।’ কথাগুলো একটানা বলে মাধবীলতা দম নেবার জন্যে থামল। অনিমেষ চমকে উঠেছিল। মাধবীলতা যা বলছে সেটা করতে পারলে দারুণ ব্যাপার হবে। এতদিন ধরে যেসব থিওরির কথা সে পড়ে আসছে এটি তারই চমৎকার ব্যাখ্যা।

অর্ক উঠে দাঁড়াল, ‘মা, সত্যি তুমি ভাল।’

‘মানে?’ মাধবীলতার কপালে ভাঁজ পড়ল।

অর্ক কয়েকপা এগিয়ে আচমকা মাধবীলতাকে চুমু খেল। ছেলের এ ধরনের আদরের জন্যে প্রস্তুত ছিল না মাধবীলতা। হাতের চেটো দিয়ে কপাল মুছতে মুছতে বলল, ‘ইস, থুতু মাখিয়ে দিলি।’

ততক্ষণে দরজায় চলে গেছে অর্ক। মুখ ফিরিয়ে বলল, ‘অনভ্যাস। কতকাল যে তোমাকে চুমু খাইনি তা ভেবেছ?’

ছেলে বেরিয়ে গেলেও মাধবীলতার মুখের রক্তাভা কমল না। অর্ক কোন অন্যায় করেনি কিন্তু মনে মনে সে খুব লজ্জিত হয়ে পড়েছিল। সে জানে অনিমেষ তার দিকে তাকিয়ে আছে। এটাই তাকে আরও লজ্জিত করছে। তাছাড়া অত বড় ছেলে যে এমন কাণ্ড করবে তা সে আঁচ করতে পারেনি।

এই সময় অনিমেষ বলল, ‘হাত পা নাড়ো।’

‘কেন?’ মাধবীলতার কাছে নিজের গলার স্বরই অপরিচিত শোনাল।

‘শরীরের সব রক্ত এখন মুখে জমেছে।’ অনিমেষ তরল গলায় জানাল।

‘যাঃ।’

‘লজ্জা পেলে তোমাকে এখনও সুন্দর দেখায়।’

‘থাক হয়েছে।’

‘হয়নি। এই মুহূর্তে তোমাকে দেখে একটা স্মৃতি মনে এল।’

‘কি?’ মাধবীলতা চেষ্টা করছিল গম্ভীর হতে।

‘তোমাকে আমি যেদিন প্রথম চুমু খেয়েছিলাম সেদিন এরকম মুখ হয়েছিল তোমার। অবিকল এই রকম।’ অনিমেষ নিঃশ্বাস ফেলল।

‘কি আজেবাজে বকছ? ছেলের সঙ্গে নিজের তুলনা করতে বাধছে না?’

‘তুলনা কারো সঙ্গে করছি না। আমি শুধু লজ্জাটা যে এক তাই বলছি।’

‘যত বাজে কথা! ওইসব পুরোনো দিনের ছবি ভেবে কি লাভ?’

‘দিনগুলো কি সত্যি খুব পুরোনো?’

মাধবীলতা এবার পাশ ফিরে শুলো, ‘তুমি কিন্তু এবার সত্যি সত্যি সত্যি নিজের ছেলেকে হিংসে করছ?’

‘হিংসে করছি না। নিজেকে বড্ড বেশি অপদার্থ মনে হচ্ছে।’

‘তার মানে?’

‘আমি তোমাকে ঠিক বোঝাতে পারব না।’ অনিমেষ হাসল।

মাধবীলতা চোখ বন্ধ করল। তারপর নিচু গলায় বলল, ‘তাই ভাল।’

অনিমেষ এই ভঙ্গীটা পছন্দ করল না। আজকাল মাধবীলতা যেন সব ব্যাপারেই হঠাৎ নির্লিপ্ত হয়ে যায়। অনিমেষের এই ব্যাপারটা একদম ভাল লাগে না। অসুখের পর থেকেই মাধবীলতা যেন উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। শুধু অর্কর সঙ্গে কথা বলার সময়ে ওকে স্বাভাবিক দেখায়। অথচ অনিমেষের সঙ্গে মাধবীলতা কখনই খারাপ ব্যবহার করে না। প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে নানান কথাবার্তা হয়। কিন্তু তার মধ্যেই হঠাৎ যে সে অন্যমনস্ক হয়ে যায় সেটা লক্ষ্য করেছে অনিমেষ।

মাধবীলতার ভঙ্গীটা ভাল লাগছিল না। জলপাইগুড়ি থেকে ফিরে আসার পর অনেক কথা হলেও একটা অদৃশ্য দূরত্ব যেন থেকেই গেছে। অনিমেষ উঠে দাঁড়াল। ক্রাচদুটো শব্দ করতেই মাধবীলতা চোখ খুলল। চোখাচোখি হতে অনিমেষ স্থির হয়ে গেল। তার বুকের ভেতর টনটন করছিল। সে এগিয়ে এল খাটের কাছে। মাধবীলতা নড়ল না একটুও। সেই একই ভঙ্গীতে চেয়ে আছে অনিমেষের মুখের দিকে। কাঁপা হাত রাখল অনিমেষ মাধবীলতার কপালে। কথা বলতে চাইল কিন্তু পারল না। তার গলার কাছে যেন কিছু আটকে গেল অকস্মাৎ। মাধবীলতা প্রথমে স্থির হয়ে ছিল। তারপর ওর একটা হাত ধীরে ধীরে অনিমেষের হাতটাকে স্পর্শ করল। তারপর বলল, ‘তুমি আমাকে ভুল বুঝো না।’

‘না!’ অনিমেষ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর খোলা দরজার দিকে তাকিয়ে চট করে হাতটা সরিয়ে নিয়ে বলল, ‘তুমি বিশ্রাম নাও, আমি আসছি।’

তিন নম্বরের পঞ্চাশটি পরিবারে বেকার যুবকের সংখ্যা তিরিশটি। এরা চাকরির খোঁজ যতটা না করে তার অনেক বেশী আড্ডা মেরে কাটায়। এদের মধ্যে মাত্র পাঁচজন স্কুল ফাইন্যাল পাশ করেছে।

সেদিন সন্ধ্যায় তাদের নিয়ে বসেছিল অর্ক। এদের অনেকের বয়স ওর চেয়ে ঢের বেশী হলেও এখন সবাই অর্ককে বেশ সমীহের চোখে দেখছে। তাদের কাছে প্রস্তাবটা রাখল অর্ক। স্রেফ বেকার না বসে থেকে কিছু আয় করতে হবে। কমিটি প্রত্যেককে দিনে দশ টাকা করে দেবে। সেই টাকায় বড়বাজার থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে এনে বিক্রি করলে অন্তত পাঁচ টাকা লাভ হবে। লাভের শতকরা বিশ ভাগ কমিটির কাছে জমা দিতে হবে মূল টাকার সুদ বাবদ। কমিটি সেই টাকা তিন নম্বরের পরিবারের জন্যেই ব্যয় করবে।

তিন নম্বরের বয়স্ক মানুষরাও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। ব্যাপারটা তাঁদেরও খুব উৎসাহিত করেছিল। ছেলেগুলো বেকার বসে গেঁজিয়ে সময় নষ্ট না করে কিছু রোজগার করুক তাতে পরিবারের লাভ হয়। তাঁদের মধ্যে একজন প্রস্তাব দিলেন, এমন অনেক জায়গায় অফিসপাড়া আছে যেখানে টিফিনের সময় কোন খাবার পাওয়া যায় না। কমিটির পয়সায় যদি ছেলেরা খাবার বানিয়ে সেসব জায়গায় গিয়ে বিক্রি করে তাহলে প্রচুর লাভ হতে পারে। ব্যাপারটা অর্কর খুব পছন্দ হল। সে এই নিয়ে সবার মতামত চাইল। কিন্তু দেখা গেল তিরিশজনের মধ্যে একুশজন এই রকম ব্যবসায়ের ব্যাপারে উৎসাহী হয়েছে। বাকি নজন নানান টালবাহানা করতে লাগল। অর্ক বুঝল এদের জোর দিয়ে কোন লাভ হবে না। অনভ্যাস এবং বেকার বসে থেকে এদের মনে জং ধরে গেছে। আর একুশজন যে সম্মতি জানিয়েছে এইটেই অনেক কথা। এরা সক্রিয় হলে হয়তো নজন শেষপর্যন্ত উৎসাহী হবে। ওই একুশজনের মধ্যে তিনজনকে নির্বাচিত করা হল ব্যবসাটা দেখার জন্যে। বলা হল, কমিটির ফাণ্ড যেহেতু বেশী নেই তাই প্রতিদিন টাকাটা ফেরত দেবার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

তিন নম্বরে আর একটা ব্যবসা বারোয়ারিভাবে শুরু হল। বড়বাজার থেকে গোটা সুপুরি কিনে এনে মাপসই কেটে আবার ফেরত দিলে ভাল পয়সা পাওয়া যায়। এই কাজ দুপুরবেলায় মেয়েদের পক্ষে সম্ভব। কমিটি টাকা জমা রেখে সুপুরি এনে দিলে মেয়েরা কাজ শুরু করল। প্রথম প্রথম আয়টা চোখে দেখা না গেলেও পরে সেটা বোঝা গেল। পনের দিনের মাথায় নিশ্চিন্ত হল অর্ক। এইভাবে চললে কমিটির প্রাপ্য শেয়ার থেকে বাকি দিনগুলো চলে যাবে। যে আর্থিক গ্যাপটা ছিল তা মিটে যাবে। বিলু বলল, ‘তোমার খুরে খুরে প্রণাম গুরু। এ শালা আমার মাথায় ঢোকেনি। সবাই কেমন ব্যবসা করতে লেগে গেছে। পঞ্চাশ টাকার খাবার তৈরি করে একশ টাকায় বিক্রি করছে।’

অর্ক বলল, ‘এটা আমার মাথাতেও আসেনি। মা বলায় বুদ্ধিটা এল।’

‘কিন্তু আমি শালা বেকার রয়ে গেলাম। আমাকে একটা ব্যবসা করার ক্যাপিটাল দাও।’

‘কি ব্যবসা?’

‘আমি তো একটাই জানি। তুমি পঞ্চাশ দিলে তোমাকে পঁচিশ টাকা ডেইলি ফেরত দিয়েও আমার পঁচিশের বেশি থাকবে।’

অর্ক অবাক হল, ‘বাপ রে! এ কি ব্যবসা?’

বিলু হাসল, ‘দুটাকা পাঁচের টিকিট পাঁচ টাকা। বাকিটা পুলিসকে দিতে হবে।’

‘মারব এক থাপ্পড়! এর পরে বলবি বিশ বোতল চুল্লু কিনে এনে ব্ল্যাকে বিক্রি করলে হেভি প্রফিট থাকবে। ওসব চলবে না।’

‘কিন্তু আমাকে তো কিছু করতে হবে। সারাজীবন পরের খেটে ত চলবে না।’

‘সে কথা তো আমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।’

‘তুমি তো রাত্রে পড়াশুনা করছ। পরীক্ষা দেবে। তোমার কথা আলাদা।’

‘পরীক্ষা দেব মায়ের জন্যে। পাশ করলেও যা হবে না করলেও তাই।’

বিলু হয়তো খুব সিরিয়াস ভঙ্গীতে কথাটা বলেনি কিন্তু ঝুমকি বলল।

সকাল বেলায় যখন ঠাকুররা ব্যস্ত তখন অর্ক দাঁড়িয়ে তাদের কাজ দেখছিল। ঝুমকি সরে এল কাছে, ‘এভাবে কতদিন চলবে?’

‘মানে?’

‘এখানে যা করছি তার জন্যে দুবেলা খেতে দিচ্ছ। কিন্তু এভাবে চলবে?’

‘কি বলতে চাইছ?’ অর্ক বুঝেও জিজ্ঞাসা করল।

‘আমাদের অন্যান্য খরচ আছে। ওষুধ তো রোজই দরকার। একটা কিছু না করলে…।’

‘সুপুরি কাটছ না?’

‘তাতে যা হচ্ছে জানো না? হাতখরচ চলবে, বাকিটা?’

‘আমি একটু ভেবে দেখি। সবে তো এসব শুরু হয়েছে। কটা দিন অপেক্ষা করো।’ কথাটা শুনে ফিরে গেল ঝুমকি। কিন্তু অর্ক মনে মনে খুব অসহায় বোধ করল। এতগুলো পরিবারকে আর্থিক সাচ্ছল্য দেবার কোন উপায় তার জানা নেই। এটুকু করতেই চোখে অন্ধকার দেখতে হচ্ছে।

এই সময় বিলু এসে খবর দিল, ‘গুরু শুনেছ কয়লা জামিন পেয়েছ।’

‘জামিন?’

‘হ্যাঁ। খুব বড় উকিল জামিন পাইয়ে দিয়েছে। এই নিয়ে শান্তি কমিটিতে খুব গোলমাল শুরু হয়েছে। তুমি জানো না?’

‘না তো।’ অনেকদিন ওমুখো হওয়ায় সময় পায়নি সে। বিলুকে জিজ্ঞাসা করল, ‘শান্তি কমিটিতে গোলমাল হচ্ছে কেন?’

‘জানি না, সতীশদারা বেরিয়ে এসেছে শান্তি কমিটি থেকে। শুনলাম ওরা নাকি একটা পৃথক শান্তি কমিটি গড়বে। আমার গুরু খুব ভয় করছে। কয়লা যদি এই সুযোগে বদলা নিতে চায় তাহলে আমি মারা পড়ব।’

‘চুপ কর। মেঘ জমল না আর তুই বৃষ্টির ভয় পাচ্ছিস।’

সেদিনই শান্তি কমিটির অফিসে গেল অর্ক। সুবল বসেছিল একা। অর্ককে দেখে বলল, ‘শুনেছ। সতীশদা কমিটিতে নেই।’

‘কি ব্যাপার?’

‘কয়লা জামিন পেয়েছে।’

‘তাতে কি হয়েছে?’

‘সতীশদার ধারণা কয়লার জামিনের পেছনে কংগ্রেসীদের হাত আছে। কারণ কয়লাকে এক সময় যুবনেতা বলা হয়েছিল। কমিটির কংগ্রেসী সদস্যরা সেকথা স্বীকার করছে না। সতীশদা অবশ্য বলেছে কমিটিতে নেই বলে যেন ভাবা না হয় যে ওরা আমাদের সব কাজের বিরোধিতা করবে। কিন্তু—।’ সুবলকে খুব অন্যমনস্ক দেখাচ্ছিল।

অর্ক জিজ্ঞাসা করল, ‘কয়লা কি ওর বাড়িতে ফিরে এসেছে?’

‘না। পাড়ায় ঢোকা ওর পক্ষে মুশকিল হবে। তাছাড়া জামিনের শর্ত হল ও এই এলাকার তিনটে থানায় পা দিতে পারবে না। কিন্তু বিশ্বাস করা মুশকিল।’

অর্ক বলল, ‘আর যাই হোক তিন নম্বরে সমাজবিরোধীরা পাত্তা পাবে না। ওখানকার পঞ্চাশটা ফ্যামিলি এখন একটা ফ্যামিলিতে পরিণত হয়েছে।’

সুবল বলল, ‘তুমি অসাধ্য সাধন করেছ। তবে এর মধ্যে অনেকেই তোমার সম্পর্কে নানান কথা বলছে। তুমি নাকি মোটা লাভ করছ।’

‘লাভ করছি! আমাকে কিভাবে চালাতে হচ্ছে তা সবাই জানে।’

‘জানলেও প্রচার চালাতে দোষ কি। বাঙালি কখনো কেউ ভাল কাজ করলে সহ্য করবে না। তারা চাইবে সেটা ভেস্তে দিতে।’

‘দিতে আসুক, আমরা প্রাণ থাকতে সেটা হতে দেব না।’

সুবলকে খুব নিস্তেজ দেখাচ্ছিল। অর্ক বেরিয়ে এল সেখান থেকে। মোড়ের মাথায় তিনটে ছেলে দাঁড়িয়েছিল। একজন চাপা গলায় বলে উঠল, ‘এই, অক্ক আসছে।’

‘আসুক না। আমরা তো শান্তি কমিটির মেম্বার।’

ওদের সামনে এসে অর্ক থমকে দাঁড়াল। এরা ঈশ্বরপুকুরের ছেলে নয়। একজন যেন সামান্য টলছে। দিনদুপুরে মাল খেয়েছে এরা। কয়লা গ্রেপ্তার হবার পর এই দৃশ্য এখানে দেখা যেত না। মাথা গরম হয়ে যাচ্ছিল ওর। তিনজনেই ওর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শেষ পর্যন্ত অর্ক নিজেকে সামলে নিল। খামোকা ঝামেলা করে লাভ নেই। সুবলের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে হবে। তবে ওর মনে হল কয়লার জামিন পাওয়ার সঙ্গে এই পরিবর্তনের সম্পর্ক আছে। শান্তি কমিটি যদি ভেতরে ভেতরে দুর্বল হয়ে পড়ে তাহলে এরকমটা ঘটবেই।

সতীশদা পার্টির অফিসে ছিল। ওকে দেখে চেঁচিয়ে উঠল, ‘আরে, এসো এসো। আমি তোমার কথা ভাবছিলাম।’

অর্ক দেখল ঘরে অন্তত সাতআটজন ছেলে বসে আছে। বেশ উত্তেজনাপূর্ণ আলোচনা চলছিল সেটা বোঝা যাচ্ছে। সতীশদা যেন ওকে দেখে বেশ স্বস্তি পেল। অর্ক বলল, ‘আপনার সঙ্গে কথা বলতে এলাম।’

‘হ্যাঁ নিশ্চয়ই বসো। তারপর ছেলেদের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোমরা কেউ উত্তেজিত হবে না। আমরা আজ সন্ধ্যেবেলায় পার্কে সভা করছি। নেতারা আসবেন। পার্টি যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই করবে। ওরা প্ররোচনা করলেও তোমরা ফাঁদে পা দেবে না। এসো অর্ক।’ সতীশদা উঠে দাঁড়াতে অর্ক তাকে অনুসরণ করল।

‘কি ব্যাপার?’

‘আপনি শান্তি কমিটি থেকে বেরিয়ে এসেছেন?’

‘ঠিক বেরিয়ে নয়। সুবলের একার পক্ষে সামলানো সম্ভব নয়। কংগ্রেসী ছেলেরা এই সুযোগে নিজেদের শক্তি বাড়াবার চেষ্টা করছে, এটা কি করে হতে দেওয়া যায়? তাছাড়া কয়লা ছাড়া পাওয়া মাত্র কিছু কিছু ঘটনার কথা আমাদের কানে এসেছে। কয়লা নেই কিন্তু শান্তি কমিটির ছদ্মবেশে আর একটা কয়লা তৈরি হোক আমি চাই না। শান্তি কমিটির সদস্যরা যে সবাই সতীলক্ষ্মী এ ভাবার কোন কারণ নেই।’

‘এসব তো আপনি ভেতরে থেকেও সংশোধন করতে পারতেন।’

‘পারতাম না। কারণ বিপরীত মেরুর রাজনৈতিক ভাবনা নিয়ে পা বাড়ানো যায় না। তাছাড়া কর্পোরেশন ইলেকশন আসছে। ওরা যেভাবে কাজ গোছাচ্ছে তাতে আমরা অসুবিধেয় পড়ব। আমি সুবলকে বলেছি ওদের সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সব সময় শামিল হবো। যাক, তোমার খবর বল।’

অর্ক লোকটার দিকে ভাল করে দেখল। এইসব সমস্যার কথা সে আগেই ভেবেছিল। সেটা মিলে গেল। সে বলল, ‘এখন পাড়ায় শান্তি আছে, সেটা বজায় রাখুন।’

‘নিশ্চয়ই। শুনলে তো, আমি ছেলেদের উত্তেজিত হতে নিষেধ করেছি। কয়লা পাড়ায় ঢুকতে চাইলে আমরা বাধা দেব। কিন্তু তোমার সঙ্গে আমার কথা আছে।’

‘বলুন।’

‘তুমি যেটা করছ সেটা খুব ভাল উদ্যোগ। তবে তোমার একার পক্ষে কতদিন চালানো সম্ভব হবে? তুমি যদি আমাদের সদস্যপদ নাও তাহলে অনেক সুবিধে হবে।’

অর্ক মাথা নাড়ল, ‘এখন তো কোন অসুবিধে হচ্ছে না।’

‘হচ্ছে কিন্তু বলছ না। লোকে বলছে তুমি আর বিলু নাকি ঘি খাচ্ছ। আমি বিশ্বাস করি না কিন্তু লোকের মুখ চাপা দিতে হলে তোমাকে পার্টিতে আসতে হবে।’

‘শুনলাম।’

‘তোমার পার্টিতে আসতে অসুবিধে কি?’

‘আমি ভেবে দেখিনি।’

‘কথাটা অনেক দিন থেকে বলছ। এখন তিন নম্বরে সবকটা লোক তোমার কথা শুনে চলছে। তুমি আজ ওদের পার্কের মিটিং-এ আসতে বল।’

‘পার্কের মিটিং-এ?’

‘হ্যাঁ। কেন্দ্রীয় নেতারা আসছেন। আমরা সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখব। শান্তি কমিটি যাতে সঠিক পথে চলে তার দাবি জানাবো আর আগামী কর্পোরেশনের ইলেকশনের জন্যে প্রচার করব। তিন নম্বরে অন্তত শ’ দেড়েক মানুষ সব সময় টলমলো করে। তাদের রাজনৈতিক চিন্তাশক্তি খুব দুর্বল। তোমাকে দায়িত্ব নিতে হবে।’

অর্ক বলল, ‘এসব কথা ওদের বললে পারেন। কে যাবে বা না যাবে তা আমি বলার কে? আমি কি ওদের গার্জেন?’

সতীশদা অর্কর কাঁধে হাত রাখল, ‘এসব বলছ কেন? ওরা তোমার ওপর নির্ভর করে আছে। তুমি বললে কেউ না বলতে পারবে না।’

‘আপনি কি আমাকে ব্যবহার করতে চান?’

‘মানে? কি বলছ তুমি?’

‘যা বলছি তা তো বুঝতেই পারছেন।’

‘অর্ক। তুমি বাজে কথা বলছ। তুমি সমাজবিরোধীদের প্রশ্রয় দিচ্ছ। বিলু, ন্যাড়া সমাজবিরোধী। বিলুর নাম তো তুমিই লিস্টে ঢুকিয়েছিলে। এসব কথা আমার মুখ থেকে শুনলে পাবলিক তোমাকে ভাল চোখে দেখবে না।’

অর্ক হাসল। ঠিক আছে সতীশদা। আপনি যা পারেন করুন। ভয় দেখিয়ে কেউ আমাকে কোন কাজ করাতে পারবে না। আমি এই রাজনীতির মধ্যে নেই।’

সকল অধ্যায়

১. ০১. কাল রাতের বেলায় কাছাকাছি কোথাও বৃষ্টি হয়েছিল
২. ০২. ঠাস ঠাস করে ঘুমন্ত ছেলের গালে
৩. ০৩. বেলা দুটো নাগাদ ঈশ্বরপুকুর লেন
৪. ০৪. অনুর মা এখন ফুলের বিছানায়
৫. ০৫. উঠে দাঁড়াতে গিয়ে অর্ক দেখল
৬. ০৬. কল-পায়খানা নিয়ে অর্ক
৭. ০৭. বেলগাছিয়া থেকে সেকেণ্ড ক্লাস ট্রামে
৮. ০৮. সত্যি কথা বল
৯. ০৯. অর্ক দরজা ঠেলতেই মাধবীলতা
১০. ১০. কথাগুলো কানে ঢুকছিল না অর্কর
১১. ১১. দুচারটে বোম পড়লেই
১২. ১২. এক লাফে রিকশা থেকে নেমে
১৩. ১৩. প্রিয়তোষের দিকে তাকিয়ে
১৪. ১৪. গলির ভেতরটায় তেমন মানুষজন নেই
১৫. ১৫. অর্ক যেন অনেক কিছু জেনে ফেলল
১৬. ১৬. খাওয়া দাওয়া শেষ করতেই
১৭. ১৭. শ্যামবাজারের পাঁচ মাথার মোড়
১৮. ১৮. সাত দিন বিছানায় পড়ে ছিল অর্ক
১৯. ১৯. কিলাকে দেখা মাত্র
২০. ২০. চারজোড়া চোখ তখন অর্কর ওপর
২১. ২১. তিনটে শরীর উদ্দাম নেচে যাচ্ছে
২২. ২২. দিন সাতেক বাদে সুস্থ হল অর্ক
২৩. ২৩. সন্ধ্যে পার হয়ে গেলে
২৪. ২৪. ফেরার পথে অর্ক জিজ্ঞাসা করল
২৫. ২৫. প্রচণ্ড অবিশ্বাসে অর্ক
২৬. ২৬. মাধবীলতা ততক্ষণে দরজায়
২৭. ২৭. ছুটির দরখাস্ত লিখতে গিয়ে
২৮. ২৮. ওই দ্যাখো পাহাড়
২৯. ২৯. লোহার গেটে কোন প্রতিরোধ নেই
৩০. ৩০. অনিমেষ চুপচাপ বসেছিল
৩১. ৩১. অনিমেষ হো হো করে হেসে উঠল
৩২. ৩২. পিসীমা আর দাঁড়াননি
৩৩. ৩৩. প্রথমদিনেই খাওয়া শেষ করতে
৩৪. ৩৪. পাপ, পাপ, মহাপাপ
৩৫. ৩৫. মহীতোষের আবার বাড়াবাড়ি হল
৩৬. ৩৬. মহীতোষ মারা যাওয়ার পর
৩৭. ৩৭. খালিপায়ে হাঁটছিল অর্ক
৩৮. ৩৮. মহীতোষের কাজ শেষ
৩৯. ৩৯. সন্ধ্যের পরেই টিপিস টিপিস বৃষ্টি
৪০. ৪০. হঠাৎ একটা কনকনে ঢেউ
৪১. ৪১. ভোর বেলায় অনিমেষ ফিরে এল
৪২. ৪২. অর্কর প্রণাম করা শেষ হলে
৪৩. ৪৩. দুপুর থেকেই আকাশটা পিচকালো
৪৪. ৪৪. খাটে চিৎ হয়ে শুয়ে অর্ক
৪৫. ৪৫. দরজাটা ভেজানোই ছিল
৪৬. ৪৬. তিন নম্বর ঈশ্বরপুকুর লেনে
৪৭. ৪৭. বিকেলে হাসপাতালে মাধবীলতা
৪৮. ৪৮. বেলগাছিয়ার ট্রাম ডিপোর কাছে
৪৯. ৪৯. শেষ পর্যন্ত পুলিসের ভ্যান ফিরে এল
৫০. ৫০. সারাটা রাত হাসপাতালের বারান্দায়
৫১. ৫১. কাঁধ টনটন করছে
৫২. ৫২. জরুরী মিটিং ছিল রাত্রে
৫৩. ৫৩. মাধবীলতার অপারেশন হয়ে গেল
৫৪. ৫৪. সকালে একবার চোখ মেলেছিল অর্ক
৫৫. ৫৫. ট্রামে উঠেই মাথা গরম
৫৬. ৫৬. অর্ক একটুও নড়ল না
৫৭. ৫৭. মাধবীলতাকে বিপদমুক্ত ঘোষণা
৫৮. ৫৮. কলকাতা শহরের বিখ্যাত ব্যক্তি
৫৯. ৫৯. একটি অভিনব কাণ্ড আরম্ভ হল
৬০. ৬০. কলতলায় মানুষের ভিড়
৬১. ৬১. সেই অভাবনীয় কাণ্ডটি
৬২. ৬২. মধ্যরাত্রে গোটা আটেক মোটর সাইকেল
৬৩. ৬৩. গতরাত্রে আগুন যখন জ্বলেছিল

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন