সুমনকুমার দাশ
শেখ ভানুর গান
আওয়ালে জানাই সালাম পইড়া কালাম
‘আলিফ-লাম-মীম’ পরওয়ারে।
বিরাজে কাজল কোটা চান্দের চটা
আঁইখে আছে নিশানি আপনি ॥
দুয়ামে সালাম করি পাক পাঞ্জাতন
যারে সৃজিলা নিরাঞ্জন হু হু হু।
যারে আল্লাহর নুরে পয়দা করে
গুহাহগারের আহছানী আপনি ॥
সিয়ামে সালাম মোর আওলিয়া সকল
যাদের অন্তর নির্মল হু হু হু।
হায় মরি মোর দেহ তরি কৃপা করি
বান্দা যার চরণি আপনি ॥
চাহামে সালাম মোর মুর্শিদের চরণ
মনে থাকে যে স্মরণ হু হু হু।
আমার হইতে মরণ পাই যে চরণ
শাহ্ মীরাণ চান্দ মণি আপনি ॥
আখের মাটির তল মাটিতে মিশিব রে মন
মন তুমি চিনলায় না রে আপন ॥
মন রে, আজরাইল আসিয়া যখন করিব গিরিপতার
সেই মোকামে লুকাইবে রূপ আপনার,
সেই মোকামে আসিয়া পাইবায় আজরাইলের দিদার ॥
মন রে, হাত টানিবায় পাও টানিবায় করবায় জোরাজুরি
সেই সময় নি থাকব তোমার এ দিনের বাহাদুরি ॥
মন রে, কাবিল হইয়া ধরিও মুর্শিদ কই বারেবার
নিকাশ কালে খাড়া হইবা মুর্শিদ তোমার ॥
মন রে, অধীন শেখ ভানু বলে, নদীর কূলে বইয়া
পার অইমু পার অইমু করি দিন তো গেল গইয়া ॥
মন তুমি চিনলায় না রে আপন ॥
আজব লীলা রঙ মহলে বাজে কলের গান
নাসিকাতে বাজে বাঁশি, কে কইরাছে এই সন্ধান ॥
মন রে, সাধন করে শোনো ইন্দ্রপুরে
বাদ্য বাজে নানান সুরে রে
হাওয়ার জোরে তিনটি তারে শ্রীকুলাতে বাজে ঝনঝন
আজব লীলা রঙমহলে বাজে কলের গান ॥
মন রে, সাধু-সন্ত মহাজনে, আনন্দে বসিয়া শুনে,
ঘুর করিয়া দু নয়নে, করতাছে সেই রূপ ধ্যান
আজব লীলা রঙমহলে বাজে কলের গান ॥
মন রে, আহা আহা মরি মরি, কি আশ্চর্য কারিগরি
কত ফানুস দেওয়াল ঘুরে, শামা জ্বলে স্থানে স্থানে
চার ভাই চৈতন্য সাজে, তাতে কি নাকাড়া বাজে
মধুরও মন্দিরা বাজে ফাঁকে ফাঁকে দিয়া মান
আজব লীলা রঙমহলে বাজে কলের গান ॥
মন রে, ইন্দ্রপুরের বালাখানা তার খেকরী কাটা নয় নিশানা
পঞ্চকুড়ি ষোল জনা সৈন্য সেনা মেঘাবান
আজব লীলা রঙমহলে বাজে কলের গান ॥
মন রে, সপ্তম হাউজ কাটা তাতে লাগে জোয়ার ভাটা
যেমন চন্দ্রে ছটা চৌদিকেতে ফুল বাগান
আজব লীলা রঙমহলে বাজে কলের গান ॥
মন রে, বলি যে বাগানের কথা, কর্মচারী তার চারজন মালী
কত লক্ষ লক্ষ পুষ্পরাজি ভ্রমর করে মধু পান
আজব লীলা রঙ মহলে বাজে কলের গান ॥
অধীন শেখ ভানু বলে, মন ভুল্যা অমন অমৃত ছেড়ে
পইড়া কামিনীর ঘুরে বাজে কথায় দিয়াছ কান
আজব লীলা রঙমহলে বাজে কলের গান ॥
আপন চিনিয়া নাম লইও রে সোনার ময়না
ও ময়না দমের ভরসা নাই রে।
ও মন তুই চিনলে না তারে ॥
মনা ভাই, আব, আতশ, খাক, বাদ, অজুদ তোমার
চাইরের সঙ্গে এক দিয়া যোগ মিশাইও তারে ॥
মনা ভাই, চেহেল অজুদ তোমার চিনিয়া মোহিনী
চিনির বোঝা মাথায় লইয়া না চিনিলাম চিনি ॥
মনা ভাই আটরাগ, বার বরুজ চিনিয়া মোকাম
ত্রিপিনিতে বসিয়া রে, নীরবে লইও তার নাম ॥
মনা ভাই, চাইর কুতুব, ষোল প্রহরী, লতিফা ছয়
সেই মুলুক ভ্রমিলে হইব চন্দ্রের উদয় ॥
মনা ভাই, জুলুমের বার দরিয়া হইতে হবে পার
ওরে নেয়ামতের বার কিস্তি করো না তৈয়ার ॥
মনা ভাই, অধীন শেখ ভানু বলে, চিনিলে না আপন
বৃথায় কাটিয়া গেল, তোর মনুষ্য জীবন ॥
আমার উম্মত তরানী মোহাম্মদ ও সাধু ভাই।
আমার উম্মত তরানী মোহাম্মদ ॥
নবউজির কলেমা পড়ি, আখেরে ধরিলাম পাড়ি
কাণ্ডারি হইবা মোহাম্মদ ॥
চোখের নিমিষে ঐ পাড়ি জমাইবে রে
আল্লা তরাইবে, সরাইয়া বিপদ।
সাধু ভাই।
নবউজির উম্মতের ডুরি, ধরিও মজবুত করি,
কখন জানি ছুটিয়া না যায়।
যেমন অন্ধের লড়ি, হস্তে না থাকিলে রে
ও যেমন পন্থে বসি করবে হায় হায়।
সাধু ভাই।
নবউজির উম্মতের ভেলা, সাজাইও নিশার বেলা,
তিন তারে বাজাই গৎ।
বুলেতে মিশাই লজ্জত ॥
খাইবে কমলা, পুষ্পের শরবত,
সাধু ভাই।
অধীন শেখ ভানু বলে, নবউজির চরণ তলে
আমি অধীনে জাগা যেন পাই ॥
হাশরের ময়দানে ধূপের জ্বলনে রে,
আল্লা আমারে নি করিবায় রেহাই।
ও সাধু ভাই।
আমার কি হবে উপায়, ছাড়াইতে চাহিলাম স্বভাব
ও স্বভাব ছাড়ে না আমায় কি হবে উপায়।
মায়ের গর্ভে ছিলাম ভালো
হস্তে লাগাইয়া বন্ধন
জঠর যন্ত্রণা কত করিয়া বহন।
মায়ের গর্ভ হইতে মনরে বাহিরে আসিয়া সংসারে
ও মন রে বাহিরে আসিয়া সংসারে।
ভাইবে মহাজনের যত পুঞ্জি, ভুলিলাম তাহারে ॥
দশটি মাণিক্য মোরে দিল মহাজন
শামুকের জঙ্গল বইলে, না করলে যতন।
অধীন শেখ ভানু বলে, ভুইল্যা রিপুর সনে
কাল হইল কামিনীর মধু সদায় উঠে মনে
আমার কি হবে উপায় ॥
আমার মন মোহিনী রূপে হইল, ও রূপ ধরতাম কি প্রকার।
ভবনদীর না দেখি কিনার।
ও মন আমি কেমনে ধরি ভবের পাড়ি।
গুণ ছিঁড়া মোর ভাঙা দাঁড়,
ছয়জনা ডাকাইতে পাইয়া
আমার তরি হিলায় বারেবার ॥
ভবে পাড়ি তুফান ভারি, ঢেউ উঠে কেমন ভয়ঙ্করি
তাতে আছে জল কুম্ভীর রে, গিলবে সাধের নাও তোমারই
অধীন শেখ ভানু বলে, ভব যদি হইবে পার
গুরুর চরণ সার করিয়া, চিনিয়া লও ত্রিপুনীর দ্বার ॥
আমার মালিক মৌলানা আমার খালিক মৌলানা
আমারে বানাইয়া দেও কাবার দেওয়ানা ॥
কাবা শরীফ আল্লার ঘর, মক্কা শরীফ ঠিকানা
তোয়াফ করিবার তফিক, মুই গরিবরে দিলায় না ॥
একলাখ ছুয়াব মিলে কাবাঘর ঠিকানা
মুই যাইবার তফিক দাও ইয়া মালিক ইয়া রাব্বানা ॥
আদমের গোনা মাফ আরফাত ময়দান ঠিকানা
গোনা মাফ করিলায় কইছেন রাব্বানা-জালমনা ॥
অধীন শেখ ভানু কয়, জন্মি কেন মইলাম না
বাঁচলাম যদি হজের তফিক, আমায় কেন দিলে না ॥
আমার মৌলার লাগিয়া প্রাণ কান্দে
কান্দে গো সখী আমার বন্ধের লাগিয়া।
সখী গো কি হইল, হইল মনে
প্রেম কইরে বন্ধুয়ার সনে গো
আমার কলিজা জ্বলিয়া হইল কালা।
কলসি বান্ধিয়া গলে, জলেতে ডুবিমু গো
আমার সহে না প্রাণ বন্ধুয়ার জ্বালা ॥
প্রাণসখী গো, আমার ঘরে আছে ছয়জন প্রহরী
তারা হইল পরানের বৈরী গো
আমার কথায় কথায় করে গণ্ডগোল ॥
কাল ননদীর জ্বালা, সহে না অন্তরে গো
আমি তারি লাগি হারাইলাম বন্ধের কূল ॥
প্রাণসখী গো, আমার প্রেমানলে অঙ্গ জ্বলে
হইয়া প্রেমেরই মরা গো
আমি বসে রইলাম পন্থ নিরক্ষিয়া ॥
প্রাণসখী গো, অধীন শেখ ভানু বলে, রাইখো বন্ধুর চরণ তলে
পুরাইয়ো মোর মনের আশা
সময় বুঝিয়া লইও খুঁজিয়ারে
ও আমার আন্ধাইর ঘর করিয়া প্রকাশ ॥
আমি কইমু দুঃখ কারে রে, প্রাণবন্ধের লাগি মন ঝুরে
সাধনের ধন চক্ষু রতন, সেই ধন নিল চোরে রে
আমি কইমু দুঃখ কারে রে ॥
আসব বইলা গেল চলে, আমায় রেখে ঘরে
আবার পাইলে দেখা, দুঃখ মোর যাইত দূরে রে
আমি কইমু দুঃখ কারে রে ॥
তোমার বিচ্ছেদ জ্বালায় ঢাকা মোর অন্তর রে
মনে হইলে উঠে জ্বইলা কেউ নিবায় না তারে
আমি কইমু দুঃখ কারে রে ॥
সরলে গরলে মিশিয়া খাওয়াইল আমারে
কি যাদু করিল মোরে, প্রাণ টিকে না ঘরে রে
আমি কইমু দুঃখ কারে রে ॥
আমার বন্ধু প্রাণ সিন্ধু ভালোবাসে যারে
সর্প হইয়া কাটে তারে ওঝা হইয়া ঝারে রে
আমি কইমু দুঃখ কারে রে ॥
আমি বলি প্রাণবন্ধু ভুলিয়াছে যারে
দুঃখ তার কপালের লিখা সে কি খণ্ডাতে পারে রে
আমি কইমু দুঃখ কারে রে ॥
অধম ভানু বলে, পাইলে বন্ধু নয়ন জলে গোসল করাইমু তারে
একবার আইসা ভালো বাইসা ও বন্ধু দেখা দেও আমারে রে
আমি কইমু দুঃখ কারে রে ॥
আমি ডাকি অধম গোনাহগার ও দয়াল নবিজি মোহাম্মদ
আমি কি হালে হইমু পাড় ॥
নবিজি, আমার একখানা জীর্ণ তরি, পাপে বোঝাই হইল ভারী
আমি নাহি জানি ঐ নদীর দ্বার ॥
উত্তরাল দক্ষিণাল বাও, আফালে ধরিবে নাও
আমার ভরসা শুধু চরণ তোমার ॥
নবিজি, নদীতে তুফান ভারী কেমনে ধরিবাম পাড়ি
আমি না দেখি ঐ নদীর পাড় ॥
নবিজি, দাঁড় ছাড়িবে চারজন দাঁড়ি হাওয়াতে মিশিবে প্রহরী
আমার মাঝি যাবে ছাড়িয়া কাণ্ডার ॥
নবিজি, লোহা কাষ্ঠ জাঙ্গা দড়ি এইসব রহিবে পড়ি
আমার মাঝি কান্দবে বসিয়া কিনার ॥
নবিজি, ভাবিয়া শেখ ভানু বলে নবি না-লইলে কোলে
আমি কেমনে তরিমু গোনাহগার ॥
আমি তোমায় ডাকি বন্ধুরে ও বন্ধু না পাইলাম উদ্দেশ
না পাইলাম তুই বন্ধুর উদ্দেশ ॥
বন্ধুও, সাজাইয়া বাসর রইলায় একেশ্বর
কান্দিয়া পোহাইলাম নিশি না পাইলাম দোসর
তোর লাগিয়া বন্ধু কান্দিয়া কান্দিয়া রজনী হইল শেষ
না পাইলাম তুই বন্ধুর উদ্দেশ ॥
বন্ধুও, সাপে দংশিল যারে, সে কইতে পারে কেমন যন্ত্রণা গো
তার পরাণ কি যে করে, বিষের অঙ্গারে বন্ধু
অঙ্গ জরজর, যারে মারিল সাপে নেছ ॥
না পাইলাম তুই বন্ধের উদ্দেশ ॥
আমার দুঃখের কপাল রইল চিরকাল
মরিলে হইত ভালা, পুরাইত জঞ্জাল ॥
প্রাণ তেজিমু রে বন্ধু, সরোবরে কলসে বান্ধিয়া কেশ
না পাইলাম তুই বন্ধুর উদ্দেশ ॥
কুলুবিন্ন মুমেনিন শুনি চিরদিন
হাদিসে চাইনে তালাশিয়ে
অধীন শেখ ভানু বলে রে বন্ধু, আপনা দিলে
দেখলে না কইরে কোশেশ
না পাইলাম তুই বন্ধুর উদ্দেশ ॥
আমি তোমার চরণের অধীন, ও সোনার মুর্শিদ
মৌলাজি তোমার আশায় আশায় আমার গেল দিন ॥
মুর্শিদও, গুণে কাটে যারে সে থাকে নিগুম ঘরে
আশেক থাকে মাশুকের অধীন,
আশায় আমার গেল দিন ॥
চাতকিনী পাখির মতো, আশায় নিশি হইল গত,
তব চরণ না পাইলাম আমি এ অধীন মুর্শিদও,
আমি দেখিলাম ত্রিপিনির বাঁকে
শনি শুনে, রবি দেখে, সোমে বাঁশি বাজায় রাত্র-দিন ॥
মঙ্গলে কালাম করে, বুধ থাকে অন্তরপুরে,
ও তারে না চিনিলাম জাহির কি বাতিন ॥
মুর্শিদও বৃহস্পতি, শুক্রবার, মুর্শিদ নামটি করো সার,
জপো মন হইয়া দীনের হীন ॥
ভাবিয়া শেখ ভানু বলে, সাঁই চরণ কি মুফতে মিলে
ও আমার মুর্শিদ দয়াল, গলাও না মোমের মতো
আমি যে কঠিন, তোমার আশায় আশায় গেল দিন ॥
আমি মইলাম তোর পিরিতের আশে প্ৰাণ কালিয়া
আমি মইলাম তোর পিরিতের আশে ॥
কলিয়া রে, কাজল কোঠায় বসি বাজাও মোহন বাঁশি
লিলুয়া বাতাসে উড়ায় ধ্বনি ॥
তুমি বন্ধের লাগিয়া নিশীথে জাগিয়া জাগিয়া
নিরলে বসিয়া শুনি ॥
কালিয়া রে তোমার প্রেমের সাগরে ভাসাইলে আমারে
ও আমি সাঁতরাইয়া না পাইলাম কিনার
ডুবিলাম ডুবিলাম অকূলে ডুবিলায় মোরে
আপনি করো না মোরে পাড় ॥
কালিয়া রে অধীন শেখ ভানু বলে বেড়িলা মায়ার জালে রে
আমি বাহির হইতে রাহা নাহি পাই
ভাবিয়া চিন্তিয়া রহিলাম বসিয়া
আমি ভরসা কইরাছি, তুমি যে সার ॥
আমি মরিমু মুর্শিদ ভাবে বুঝা যায়
মরিলে নি দয়াল মুর্শিদ তুমি দেখিবে আমায়
ও রে সোনার মুর্শিদ আমার নিদয়া হইলায় ॥
মুর্শিদ গো, আমি যদি যাই মইরে, না দেখিয়া
তোমায় তুমি নি দেখিবায় মোরে, হস্ত দিয়া গায় গো
ওরে সোনার মুর্শিদ আমার নিদয়া হইলায় ॥
আহারে অধীন শেখ ভানু কান্দে, উপায় নাই উপায় নাই
নিদান কালে মুর্শিদ মিরান নামটি
ও তোমরা লিখিয়া দিও আমার সিনায়
ওরে সোনার মুর্শিদ আমার নিদয়া হইলায় ॥
আমি মরিলাম তার পিরিতের অনলে গো সজনী
ও সজনী বলিও দেখা হলে তারে ॥
ও আমি বন্ধু হারা, জিতে মরা
মাথায় মোর কলঙ্কের ডালা গো
ও সজনী বলিও দেখা হলে তারে ॥
সজনী গো, জিতে যারে না পাইলাম
পাইব কি আর মরে গো,
আমি মইলে পরে বলিও তারে
সে যেন আসে দেখতে মোরে গো।
ও সজনী বলিও দেখা হলে তারে ॥
প্রেমের মরা মরছে যারা বন্ধু বন্ধু কইরা গো
ও তার মলিন বদন, চঞ্চল মন বিচ্ছেদেরই কারণ গো
ও সজনী বলিও দেখা হলে তারে ॥
ভানু বলে প্রেমানলে আঁখি অশ্রু ঝরে
ও তার দয়া গুণে এই অধীনে রে, মনে যেন করে গো
ও সজনী বলিও দেখা হলে তারে ॥
আর জ্বালাইও না রে বন্ধু, ও বন্ধু তোর পিরিতের অনলে
ও তোর পিরিতে রঙ্গ ভাসে, আমার দু নয়নের জলে ॥
আমি কান্দিলে মন্দ বলে, বলুক যত নিন্দুকে
আমি কান্দিব ফিরাইয়া আঁখি, ঢাকিয়া মোর আঞ্চলে ॥
আমি শুইলে স্বপ্ন দেখি, জাগিলে কেন তুই নাইরে
আর জ্বালাইও না রে বন্ধু, ও বন্ধু তোর পিরিতের অনলে ॥
অধীন শেখ ভানু বলে, এই বুঝি ছিল আমার কপালে
আমি মরিলে আইস বন্ধু, ঠাঁই দিও তোমারই চরণ তলে
আর জ্বালাইও না রে বন্ধু, ও বন্ধু তোর পিরিতের অনলে ॥
১৮
আরে মন বলি তোরে, বারেবারে।
কি ধন নিবে সঙ্গে কৈরে ॥
দেখো মন চারিটি পরশ ছয়টি গহর
কেবা কোন নাম ধৈরে ॥
পঞ্চ লাল ত্রিশ মতি, সঙ্গের সাথী,
সেই ধন তুমি চিনলে না রে ॥
পলকে আসবে শমন, করবে দমন,
হাতে গলে বাঁধবে রশি ॥
তখন মইয়তের পরে, অন্ধকার ঘোরে,
একা একা কান্দবে বসি।
হীন শেখ ভানু বলে, জীবন গেলে
থাকবে না তোর বিষমগিরি ॥
তখন হবে রোজা নমাজ,
চার কলেমা ছয় গহর কবরের প্রহরী ॥
১৯
আল্লা আল্লা বলো ভাই যত মুমিনান
তোরা এচা লিখি আমি কান্দনের বয়ান ॥
কান্দনের হালত তোরা শোনো ভাইজান
একখানে খেলা করে দুইটি সন্তান ॥
এর মধ্যে এক লাড়কা কান্দিয়া উঠিলে
আসিয়া তাহার মাতা তুলে লইবে কোলে ॥
চক্ষু দুইটি তার মাতা দিবে পুছাইয়া
দুধ পিলাইবে তারে কোলে উঠাইয়া ॥
যে পুলা না কান্দিবে থাকিবে খেলায় ভুলিয়া
দুগ্ধ না দিবে মাতা তারে কোলে লইয়া ॥
আয় ভাই মুমিন সব হুঁশ করো দিলে
ভবের খেলায় দিন গেল পড়িয়া গাফিলে ॥
পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্র, ভাই-বেরাদর
কেহই না যাইবে সঙ্গে তোমার কবরের ভিতর ॥
মরিলে যে কান্দে লোকে শুনো তার হাল
ভবের ভাবিক হইয়া করিবে খেয়াল ॥
স্ত্রী বলে কোথা গেলা পরম আমার
কে দিবে ঢাকাই শাড়ি অঙ্গের অলংকার ॥
সে কথা করিয়া মনে করিবে কান্দন
শয়ন ঘরেতে কেবা করিবে শয়ন ॥
পুতে কান্দন করে সুর কইরে গলা
কে দিবে আনিয়া মোরে আম কাঁঠাল কলা ॥
ভাই কান্দে কে হবে দুঃখ সুখের সাথি
সোয়ারীর ঘোড়া গেল কান্দবে তোমার নাতি ॥
ওহে আল্লাহ পরোয়ার কাদির সোবহান
কান্দিলে নি দয়া হবে হাশরের ময়দান
দয়া যদি নাহি করো ওহে দয়াময়
কান্দিয়া আরশ আমি লড়াইমু নিশ্চয় ॥
এ বিনে অধম ভানু না জানে সাধন
দয়া কইরা শুনো এই অধমের কান্দন ॥
২০
আসমান জমিন জিলকি চমকায়
আরবের মক্কাশরে তামাম দুনিয়ায় ॥
নুর নবির জনম ধরায়
পাখিরা সবে গুণ গাথা গায়
মরা গাছের ডালে পাতায়
পুণ্যের জোয়ার খেলিয়া যায় ॥
রাজা ফকির নাই ভেদাভেদ
সবার মুখে খুশি বেহদ
জুয়ান বুড়া মনের খোশে
আমির ফকির এক জায়গায় ॥
নবির নুরের প্রেম পরশে
টগবগিয়ে লহু হাসে
হরিব হাসে ভুখ পিয়াসে
নুরের ঝলক ক্ষুধা নাশায় ॥
জ্বীন পরী ইনসান হাসে
সব মনের কালিমা নাশে
খুশির জোয়ারে ভাসে
খুশিতে জিকির গায়
শেখ ভানুর মনে আশে
দিন কাটাই ভাই হেসে খুশে
শফাকারী এই দিবসে
আইল আজি দুনিয়ায় ॥
আসরে মন বনফুলে খেলা করব সাধনে
ফুলের খেলা নিশা বেলা, করছে খেলা ওলী রে
মুর্শিদ চরণ তলে সিনান করিও নয়ন জলে
কুঞ্জি দিয়া যমের কলে কররে আরাধনা রে
আসরে মন বনফুলে খেলা করব সাধনে ॥
নব রত্ন নয় দ্বারে বন্ধ করো কুঞ্জি মাইরে
নত শিরে আসন কইরে নেচ্ছারই জীবন রে
খাকির খাটে কাজল কোঠা ভাবিয়া দেখো
চান্দের ছটা যে দেখিয়াছে পুষ্প ফোটা
সাফল্য তার জীবন রে
আসরে মন বনফুলে খেলা করব সাধনে ॥
অধীন শেখ ভানু বলে, ওরে মন পাগলা
ছাইড়া দে তুই কামিনীর খেলা
হইলে রে তুই পথ ভুলা, আইলরে শমন
আসরে মন বনফুলে খেলা করব সাধনে ॥
আহারে জীবন গেল বইয়া নদীর পারে ॥
একে আমার ভাঙা তরি, কেমনে ধরিমু পাড়ি,
ও মন রে প্রাণ কান্দে জল কুম্ভিরিণীর ডরে ॥
স্ত্রী-পুত্র পিতা-মাতা, জাগা বাড়িঘর ॥
ছাড়িয়া এই সবের মায়া, পৈড়ে রবে শুধু কায়া,
ও মন রে যাইতে হবে হইয়া একেশ্বর ॥
লাহুত দরিয়া পারি ঢেউয়ে খলখল ॥
দেখিয়া ত্রিপিনি নদী, কান্দিতে হবে নিরবধি,
ও মন রে বাইন চুয়াইয়া উঠিবে নায়ে জল ॥
কেউর সঙ্গী তো কেউ হবে না ভাবিয়া দেখো রে মন ॥
অধীন শেখ ভানু বলে, ডুবলে না কলিমার কলে,
ও মন রে বৃথা কাজে গেল জীবন।
আহারে নিষ্ঠুর বাঁশি, কেবা বসি
বাজায় তোরে মধুর সুরে ॥
বাঁশি তোর এত যত্ন, যেমন রত্ন, মধ্যে বানছে সোনা
আবার বাইরে দেখি, মিছা ফাঁকি
হাওয়া বয়ত আর কিছু না
বাঁশি তোর নয়টি কলে, হাওয়া চলে
যেন সর্পে ধরছে ফণা ॥
আবার কর্ণে শুনি, সরোদ শুনি
বন্ধের নামটি হয় জপনা ॥
বাঁশি তব এত শোভা মনোলোভা
রাই শুইনে তোরে ভুলে মনি ॥
ভাইবে শেখ ভানু বলে, জলের ছলে
কদম্ব তলে যাও ওগো কদম্বিনী ॥
আহা রে পাষাণের মন রে তোর কি হইবে গতি
যখনে আজরাইলে আসি, কাড়িয়া লইবে বাঁশি
ও মন রে ছাড়াইয়া এই ঘরের বসতি ॥
কাটিয়া কলার গাছ করিব তিন খাড়ি,
গোসল কাফন দিয়া, লইবে দেহ দুলা সাজাইয়া,
ও মন রে কান্দিয়া যাইবে নিজপুরী ॥
বান্ধিয়া বাঁশের খাটি, লইবে চারিজন
ভাই বন্ধু নিষ্ঠুর হইয়া, ঘরবাড়ি ছাড়িয়া,
ও মন রে কবরে করিবে দাফন ॥
মাটির বিছানা হইব কবরে তোমার
মধ্যখানে দিয়া খাটি, উপরে ঢালিবে মাটি,
ও মন রে কান্দিবে দেইখা ঘোর অন্ধকার ॥
মুনকির নকির আসি, করিবে জাকাজুরি
ভাবিয়া শেখ ভানু বলে, ভাটার নৌকা মারা গেলে,
ও মন রে জওয়াব দিবে ঐ নায়ের বেপারী ॥
এই দেশে রইব না রে পাগল মনুয়া
এই দেশে রইব না ॥
মনুয়া রে, তুমি ভাবলে না ভাবের ভাবে
আর ভাবনা করবে কবে, দিন গেল তোর মিছা ভাবনায়।
অকালে ভাবনা করা, হয়তো জিতা নয়তো মরা
আমায় বইল্যা গেলা মিরান শাহ
এই দেশে রইব না ॥
মনুয়া রে, তোর দশ ইন্দ্র হবে হ্রাস, কষ্টেতে বইবে শ্বাস
কেমনে সইবে এ যন্ত্রণা
লাগাইব কফের ফাঁসি, রবে না চান্দ মুখের হাসি
কান্দবে রে দেখিয়া দুনিয়া ফানা
এই দেশে রইব না ॥
মনুয়া রে, স্বদেশে যাইবার বেলা, রইবে না তোর শাল-দোশালা
এ পন্থে যাইতে হবে রে তনা
মুর্শিদের টিকেট ছাড়া হবে রে তুই পন্থ হারা
তস্করে লুটিয়া নিব সোনা
এই দেশে রইব না ॥
মনুয়া রে, তুই এই বিষয় আশয় পাইয়া রে
একদৃষ্টে রইলে চাইয়া রে
চিনলে না রাঙ পাইলে না কি সোনা
ভাইবে শেখ ভানু বলে, মোম জ্বালায়ে
আর কত বুঝাইমু তোরে
ও তুই বিষয়েতে রইলে দেওয়ানা
এই দেশে রইব না ॥
এইবার আর হইল না বেপার
আসিয়া এই ভবের হাটে, না জানি কোন দশা ঘটে
বেচাকেনা নাই শুমার
ও মনা ভাই, তোমার বুঝতে হইল ভুল, করিয়া গণ্ডগোল
ঘরে বইয়া ভাঙিয়া খাইলে মহাজনের মূল ॥
দিন তো গেল রে মনা ভাই দিন তো গেল,
সন্ধ্যা হইল ভাঙিব ভবের এ বাজার ॥
ও মনা ভাই, মহাজনের ধন করলে বিতরণ,
খরিদ করলে, ঘুণের গুঁড়া মূল্য দিয়া রতন ॥
ও মনা ভাই, সুজন বেপারী কইরে চাতরি
মহাজনের সদর অফিসে করছে নামজারি ॥
ও তোর হিসাব খাতা, বেচাকেনা সবই রইল বাকি,
আলস্যে, মহাজনের কড়ি বনে থুইয়া
কুচিন্তা কইরাছ সার, হিসাব তোর মূলেই অপরিষ্কার ॥
ও মনা ভাই, তোর হিসাবের দিন হইব রে কঠিন
ধুলায় পইড়া কান্দবে রে তুই, যেমন জল ছাড়া হয় মীন ॥
ভানু বলে, হিসাব কালে, মুর্শিদের চরণই সার ॥
বেচাকেনা নাই শুমার ॥
একদিন তোর এই দেহের বসতি ছাড়তে হবে
তোর অমূল্য ধন পিরের সাধন, সেই সাধনা করবে কবে
এই না মায়ার ভবে ॥
কত পয়গাম্বর শাহ সেকান্দর, আউলিয়া-আবদাল
কেউ না রইল চিরকাল, হায় রে
ও তুই বইসে ঘরে ভাবছিস কি রে, এই দিনে কি এমনি যাবে ॥
কত রঙ্গে ভঙ্গে সোনার অঙ্গে, বেশ তো দিন কাটাইলে রে
এই না মায়ার ভবে ॥
ওরে একবার তুই নয়ন তুলে পন্থপানে চাও, হায় রে
একদিন তোর আসবে শমন, চিলে যেমন মাছটি নিয়ে উড়ে যাবে ॥
এই না মায়ার ভবে ॥
ওরে ধইরা নিবে খুপের কইতর, পইড়া রবে লাশ
কেউ আর করবে না তোর তালাশ, হায় রে
ও তুই হইলে ফানা, যাবে জানা কোন দেশের বসতি হবে ॥
অধীন শেখ ভানু বলে, আহা মরি ভুলের এ জীবন
ভুলাইল কামিনী কাঞ্চন, হায় হায় রে
আমি কর্ম দোষী কপালপুড়ি এক একি কান্দতে হবে ॥
এই না মায়ার ভবে ॥
এলাহি আল আমিন আল্লাহ পরোয়ার।
দন্তজুরে ডাকি আমি গুনাহগার ॥
হাজতি ফরিয়াদি আমি দরগাতে ॥
মেহের করো মাবুদ আল্লাহ আমারে ॥
নবিজির উম্মত আমি হইয়া,
বড়ো গোনা করিয়াছি ভুলিয়া ॥
আয় আল্লাহ অধীনের করো মেহের,
উম্মত আমি তেরা দুস্ত হাবিবের ॥
তোমার কুদরত আল্লাহ বুঝা ভার,
বুঝিয়াছে, বুঝাবার তাকত কার ॥
খলিলে রে কিরাইলা আতশে,
বাছাইলা মেহেরে বাতাসে ॥
নহেত মরিত খলিল জ্বলিয়া।
দুস্ত বইলে কে ডাকাতি খেলিয়া ॥
কালামে হুঁশুমে হুঁশুম দিলেন আপনি,
বেটা তেরা করো নবি কোরবানী ॥
ছুরির নিচে শির রাখেন ইসমাইল,
বাঁচাইলেন পাঠাইয়া জিবরাইল ॥
ইয়াকুবের বেটা ইউসুফ নবিকে,
কত দুঃখ দিলেন আল্লাহ কোয়াতে ॥
উঠাইলেন পাঠাইয়া সওদাগর,
ফিরাইলেন কত দেশ-দেশান্তর ॥
এমনে গজব ঢাল যাহারে,
মিশরের বাদশা দিলেন তাহারে ॥
ফাতেমা জরুরা বিবি মা খাতুন,
তাঁর বেটা আলীজাদা শাহা হোছনি ॥
বেছির করিল আল্লাহ কারবালায়,
কাপিরের তাকত কি মারিতে তাঁর ॥
রাখো মারো যাহা করো আপে সাঁই,
তুই বিনে ফরিয়াদের আর জায়গা নাই ॥
জনম হরইলাম আমি গাফিলে,
ফানা চাই ভানু আমি, নবিজির তুফাইলে ॥
এলাহি বারে খোদা মাবুদগনি শাঁইন সাঁই।
এথায় সেথায় উদ্ধারিতে তুই বিনে কাণ্ডারি নাই ॥
তোমারই কুদরত কৌশলে শূন্যেতে পাথর ঝুলে।
সরকার বিচারের কালে ঐ পাষাণে বসাবেন সাঁই ॥
যেই ভাবেতে যেই ডাকে সেই ভাবেতে সে রাজি থাকে।
আমি ডাকি লাখে লাখে আমার কর্ম দোষে শুনেন নাই ॥
ও বন্ধু দেও দরশন
তোমার চরণের আশা গেল মোর জীবন
ও বন্ধু দেও দরশন ॥
কোরআন বলে তোমার সনে, ভেজে আল্লা নিরঞ্জনে
ও বন্ধু যার খাতিরে করলা লাখ লাখ সৃজন
ও বন্ধু দেও দরশন
ও বন্ধু তোমায় যদি না সৃজিত, অন্ধকার অন্ধকারই রইত
ও বন্ধু না হইত দুনিয়া রৌশন ॥
তোমার চরণের আশে, ভ্রমি নানা দেশেও
তোমায় না পেয়ে বন্ধু, আঁখি জলে ভিজাইলাম বসন
ও বন্ধু দেও দরশন ॥
দুই নয়নে বহে বারি, নিশাতে শয়ন করিও
ও বন্ধু, আমার কর্ম দোষে না হইল স্বপন
ও বন্ধু দেও দরশন ॥
অধীন শেখ ভানু বলে, আমার মরণ কালেও
ও আল্লাহ তোমার নামটি আমায় করাইও স্মরণ
ও বন্ধু দেও দরশন ॥
ও শ্যাম বন্ধুয়ারে, ও বন্ধু আমি তোমার দরশন ভিখারিরে
ও শ্যাম রে
আর বন্ধের আতে তোতার ছাও—
ও আল্লাহ, খেওয়া ঘাটে নাইরে নাও রে;
ও আমার খেওয়ানীরে খাইছে লঙ্কার বাঘে রে
ও শ্যাম রে
আর বন্ধের আতে তালের পাঙ্খা-
ও আল্লা তাতে রাধার নামটি লেখা রে
ও আমার কালার নামটি কে দিল লিখাইয়া
ও শ্যাম রে
আরে দুখের দুখিলা যত,
ও আল্লা তারারে পালাইলাম পক্ষ রে;
ও আল্লা, তারা রইলা আল্লার দিকে চাইয়া
ও শ্যাম রে
আর কইন তো ফকির ভানু শায়—
ও আল্লা, দীনের পন্থে দিন তো যায় রে;
ও আমি বৃথা জনম গওয়াইলাম হেথায়
ও শ্যাম রে
ও বন্ধু আমি তোর দরশন ভিখারী রে।
ওরে দুনিয়া স্বপনের ঘর
ডাক দিলে চলিয়া যাইবে
ও মন কয়বর ভিতর।
ওরে দুনিয়া স্বপনের ঘর ॥
ওরে মনকির নাকির দুই ফিরিস্তা
কয়বরে আসিবে তারা
ছিরে বসিয়া জিজ্ঞাসিবা কোছের আমল
জবাব দিবে বান্দা তারই উপর
ওরে দুনিয়া স্বপনের ঘর ॥
ওরে কার ভরসা করো মন রে
কে তোর আপনা হইবে
মুর্শিদ বিনে কাণ্ডারি নাই
এই দুনিয়ার উপর
ওরে দুনিয়া স্বপনের ঘর ॥
ওরে ভাবিয়া শেখ ভানু বলে
এই দুনিয়ায় তুই কয়দিন রবে
দিনে দিনে দিন গুয়াইবে
আখেরে চলিয়া যাইবে
ও তুই কয়বর ভিতর
ওরে দুনিয়া স্বপনের ঘর ॥
৩৩
কাঙালের বন্ধুও, সময়ে নি পাইমু তোমারে
কেমনে রহিমু একা ঘরে রে কাঙালের বন্ধু
ও বন্ধু সময়ে নি পাইমু তোমারে ॥
বন্ধুও, আছিল কপালের লিখা আমি দোষ দিমু কারে
ও বন্ধু সময়ে নি পাইমু তোমারে ॥
বন্ধুও তিপিলি অঙ্কুর কালে খেলা দিতে মোরে
লাগাইয়া মায়ার ফাঁসি ভড়াইলে আমারে রে
ও বন্ধু সময়ে নি পাইমু তোমারে ॥
বন্ধুও, কোন দেশে রইলারে বন্ধু সদায় মন জুরে
কান্দিয়া জনম গেল, না পাইলাম তোমারে রে
ও বন্ধু সময়ে নি পাইমু তোমারে ॥
বন্ধুও, জন্মিয়া না মৈলে রে বন্ধু মজুদ সংসারে
কেমনে পরের জ্বালা বুঝিবে অন্তরে রে
ও বন্ধু সময়ে নি পাইমু তোমারে ॥
৩৪
কান্দিয়া না পাইলাম তোমার দিদার বন্ধুয়া গো
রইল দুঃখ দিলেতে আমার
বন্ধুয়া গো, কান্দাইলে যেই অবধি, বহিল মালকুত নদী
জমাইলে হইত সাঁতার ॥
বন্ধুয়া গো, করিয়া তোমারই আশা জঙ্গলায় হইল বাসা
তবু চরণ না পাইলাম তোমার ॥
বন্ধুয়া গো, শুকাইল লাহুতের জল অঙ্গ কাঁপে থরথর
এমন সময় বন্ধু কই আমার ॥
বন্ধুয়া গো, মউত সামনে খাড়া এখনই পড়িব ধরা
আইস বন্ধু ডাকি গোনাহগার ॥
বন্ধুয়া গো, আমার মরণ হইলে কে ডাকিব বন্ধু বইলে
পন্থে বসি কে কান্দিব আর ॥
বন্ধুয়া গো, শফিউল উম্মতুন নবি কোরানে যাহার খুবি
রইল দয়াল নামে কলঙ্ক তোমার ॥
বন্ধুয়া গো, আশায় আশায় দিন তো গেল আশা আমার না পুরিল
না বুঝিলাম মহিমা তোমার ॥
বন্ধুয়া গো অধীন শেখ ভানু বলে, ঠেকলাম ভবের মায়া জালে
বন্ধু বিনে মিছে এ সংসার
বন্ধুয়া গো, রইল দুঃখ দিলেতে আমার ॥
কারে বা দেখাইব মনের দুঃখ গো হৃদয় ছিঁড়িয়া
সোনা বন্ধে মোরে ভুইল্যা গেল গো, কুলটা বানাইয়া গো
হৃদয় ছিঁড়িয়া ॥
আগে তো কইরা ছিলাম পিরিত সরল জানিয়া
সই গো সরল জানিয়া
সে যে মারিব ভেদ, ভয় না রাখে গো, কঠিন তার হিয়া গো
হৃদয় ছিঁড়িয়া ॥
দিবা নিশি ঝরে আঁখি যাহার লাগিয়া গো
তার বুঝি নাই রে মনে, সে যে রইয়াছে ভুলিয়া গো
হৃদয় ছিঁড়িয়া ॥
আমি জিয়ন্তে হইয়াছি মরা, পিরিতি করিয়া গো
সই পিরিতি করিয়া
ও আমার বাকি জীবন যাইব বুঝি কান্দিয়া কান্দিয়া গো
হৃদয় ছিঁড়িয়া ॥
অধীন শেখ ভানু বলে, মনেতে ভাবিয়া গো
আমার সোনার অঙ্গ মলিন হইল তাহারও লাগিয়া গো
হৃদয় ছিঁড়িয়া ॥
কে আছে রে ভাই হাশরের দিনে
উম্মত তারণ আমার সার পাঞ্জাতন ॥
আপে আলা আপন নুরে হাবিব সৃজন করে
আমার হজরত আলি দুই ভাই ইমাম বিবি মা খাতুন ॥
আকাশ পাতাল রবি শশী সৃজিয়াছেন যত ইতি
কেউ হবে না কার সাথী বিনে পাঞ্জাতন ॥
নবিজির পরজন্দ জহুরা, তামাম আলমে বলে মা
উম্মত পার হবে যার ধরিয়া দাওন ॥
অধীন শেখ ভানু বলে কি বলব অধিক
ছাইড় না ছাইড় না ভাই নবিজির তরিক
তরিক ছাড়া পন্থ হারা, হবে না সাধন ॥
কেমনে গড়িল এই তরি,
ও মন মাঝি রে, কই রইল সুজন মেস্তরি।
বিনা কাষ্ঠে, বিনা লোহায়
নাও বানাইছে চৌদ্দ পোয়া
ও সে কেমনে করিল কারিগরি ॥
ও মন মাঝি রে, হাওয়াতে চালাইলা তরি
উজান ভাটি সমান পাড়ি রে ॥
ও মন মাঝি রে, বিনা তৈলের বাতি জ্বলে ঐ নায়ে
সঙ্গে লইয়া চারিজন সোয়ারী।
এই নায়ের হাল ধইরাছে মনুয়া বেপারী ॥
ও মন মাঝি রে, নয় দরজা রাইখে খোলা,
এক দরজায় মারছে তালা রে,
ও রে পলকে ডুবায় রে, পলকে ভাসায় রে,
দুয়ারেতে বসাইয়াছে দুই প্রহরী ॥
ও মন মাঝি রে, অধীন শেখ ভানু বলে, আফসোস কলিজা জ্বলে
দিতে হবে আজুরার কড়ি ॥
ও রে ছয়জনা ডাকাইতের কুমন্ত্রণা করি,
লুটিয়া নিল ঐ তেরজুড়ি ॥
খুঁইজা না পাইলাম তারে নিকুঞ্জ মন্দিরে
হায় রে বৃথা গেল মোর সাধন ও ভজন
যদি না পাইলাম তারে রে ॥
আট কুঠরি নয় দরজা চন্দ্ৰ চলা চল
এমন আজব মহল হায় রে
ও তার চেহেল ভাগে শক্ত লাগে,
পাই না তারে নিহার কইরে
খুঁইজ্যা না পাইলাম তারে নিকুঞ্জ মন্দিরে ॥
সেই মহলে শামা জ্বাইলে সাধু মহাজন
করে প্রেম আরাধনা হায় রে
ও অবস্ত্র বলে হস্ত জুড়ে অশ্রুধারা আপনি ঝরে
খুঁইজ্যা না পাইলাম তারে নিকুঞ্জ মন্দিরে ॥
উর্ধ্ব পাতালে খেলা জপে আল্লাহু
কোথায় থাকে রূহু হায় রে
ও সে রূহের ছায়া থাকতে কায়ায় দেখতে পায় পির ধরে
খুঁইজ্যা না পাইলাম তারে নিকুঞ্জ মন্দিরে ॥
পাঁচ আন পাঁচ্চ দ্বিদমে করো সার
করো জিগির ‘আল্লাহু’ হায় রে
ও তার হইতে থাকবে স্মরণ, বেগম সিন্ধু যাবে ছাই রে
খুঁইজ্যা না পাইলাম তারে নিকুঞ্জ মন্দিরে ॥
ভানু বলে আহা মরি, গেল এ জীবন
না পাইলাম দরশন হায় রে
জিতে যদি না পাইলাম মরলে কি পাব তারে
খুঁইজ্যা না পাইলাম তারে নিকুঞ্জ মন্দিরে ॥
খুঁজলে না মন অমূল্য ধন,
খুঁজলে পাবে দরশন
খুঁজলে না রে অবুঝ মন ॥
মন রে ডাক দে কলে, আসবে ছলে
মিলবে রে অমূল্য ধন ॥
তোমার সুরে বসি, বাজবে বাঁশি,
শুনবে রে মন মনের মতন
মন রে চন্দ্র ধরা পড়ে,
সদায় রাখিও নিরীক্ষণ ॥
প্রেম সুতে না গাঁথলে তারে,
গ্রাস করিবে রিপুগণ ॥
মন রে, অধীন শেখ ভানু বলে,
ধইরে গুরুর শ্রীচরণ।
গুরুর খুঁজে খোঁজ করিব,
এজন্যে চঞ্চল আমার এ মন ॥
গাফিলে বসিয়া রইলে ঘরে রে সুজন নাইয়া ও নাইয়া,
তোমার নৌকা ঠেকিবে বালুচরে।
ঠেকিলে বালুচরে শমনে বান্ধিবে তোরে রে ॥
মাঝি ভাই চৌদ্দ পোয়া নাওখানা
তোমার আজব এক কারখানা ॥
সারি সারি গোড়া নায়ে জাঙ্ঘায় রাখে টানা
মাঝি ভাই ঠিক রাখিবা তোর হাইলের কাঁটা
ধরিও ভবে পাড়ি ॥
মন বাতাসে ঢেউ উঠিলে শীঘ্র লইও খাড়ি
মাঝি ভাই ঐ দেখো ত্রিপিনি ঘাট, তার তিন দিকে তিন দ্বার
গাফিলে ফেলিয়া নাও লুটিবে তোমায়
মাঝি ভাই অধীন শেখ ভানু বলে নায়ে মারল ভাটি ॥
লাভে মূলে হবে তল, না ধরিলে হার কাটি।
ছাড়াইলে না এই ভবের মায়া রে মনুয়া,
ছাড়াইলে না এই ভবের মায়া ॥
সাঁই দিয়াছে যত ধন, করলে না তারে নিরূপণ
রাঙ দিয়া বদলিলে কাঁচা সোনা রে মনুয়া ॥
তোর দেহতে হস্তীর জোর, বেকামে হইল ভোর
তারে না ফিরাইলে জ্ঞানের অঙ্কুশ দিয়া রে মনুয়া ॥
গাফিলে কাটাইলে দিন, হইয়া রিপুর অধীন
তরে কখন জানি বান্ধিবে শমন রে মনুয়া ॥
অধীন শেখ ভানু বলে ধরিয়া ইয়ার গলে
তার বাজাইও ভাবের আঙুলে রে মনুয়া ॥
জীবন গইয়া যায় রে, জীবন গইয়া যায়,
মন তুমি ভেজো দরুদ, নবি মোস্তফায় ॥
হাশরে তরাইবা নবি, আশাতে উম্মত সবি,
ও আমি রইয়াছি সে চরণের আশায় ॥
মন রে এ এমন দয়াল নবি, দুনু জাহানের খুবি
আমি শুনিয়াছি জাগায় জাগায় রে ॥
অধমে আরজ করি, পাইতে নবির তরি
আমার সেই আশানি পুরাইবা মৌলায় ॥
যে জন তার আশার আশে, বার হইল উদাসীর বেশে
ও তার চরণ পাইবে গেলে মদিনায় ॥
অধীন শেখ ভানু বলে, কেন রে মন তুই ভুইলে রইলে
ঐ যে আইল শমন ধরিতে আমায় ॥
জীবন গইয়া যায় রে, জীবন গইয়া যায় ॥
তুই বন্ধের পিরিতিরে হারাইলাম জাতি কুল
লোকে ডাকে কলঙ্কিনী, হাসাইলে গোকুল
অন্তরে হইল শূল ॥
আগর চন্দন সোয়া নানা জাতি কুল
ওরে তোর লাগিয়া সাজাইলাম
মন্দির লাহুলরে
আমার যে আশা আছিল মনে সে হইল আদুলা
ওরে মেওয়ার বাগানে যেমন বঞ্চিত বুলবুল
অন্তরে হইল শূল ॥
অধীন শেখ ভানু বলে, ভাবিয়া গেল দু কূল
ও তার আশায় আশে দিন তো গেল
অন্তরে হইল শূল ॥
তুমি আমার হৃদয় রতন রে বন্ধু
তুমি আমার হৃদয় রতন ॥
তুমি স্বর্ণ তুমি রত্ন তুমি যে কাঞ্চন
তুমি আমার গলার মালা অঙ্গেরই বসন
তুমি আমার হৃদয় রতন ॥
আমি শুইলে স্বপন দেখি শিহরে তুমি আছ যেমন
জাগিয়া না পাইলাম তোরে জিয়নে মরণে
তুমি আমার হৃদয় রতন ॥
আহা রে অধীন শেখ ভানু বলে বন্ধু বড়ো ধন
আমি চক্ষু মুজে দেখি তোমার চান্দ বদন
তুমি আমার হৃদয় রতন ॥
তোরা আয় গো সখীগণ, বিনামূল্যে খরিদ করো পঞ্চরসের ধন
প্রেম বাজারে প্রেমের পসার, খুলছে মহাজন হায় রে ॥
কত হীরা লাল পরশমণি রত্ন কাঞ্চন
বিনামূল্যে খরিদ করো পঞ্চরসের ধন ॥
দিনে দিনে মাইল্য ভাটি, ও তোর এ রূপ-যৌবন হায় রে
ভাঙবে বাজার মিলবে না আর তোর সাধনার ধন রে ॥
শাশুড়ি ননদী জাল ওরা তিন জন হায় রে
চিনিয়া লইও তুমি তোমার মায়ারই স্বজন রে ॥
ভানু বলে কপাট খুলে দেখো গো সখীগণ হায় রে
লা-মোকামে গেলে পাবে তোরা, বন্ধুর দরশন রে ॥
ওরে খালেছ দিলে যে হইবে সুজন হায় রে
মরণ কালে আল্লাহর নাম তার হইবে স্মরণ রে ॥
[…]
তোরা এয়ছা কহি আমি মাটির বয়ান
দিলের ভিতরে বাবা করিবে ধ্যান ॥
আব, আতশ, খাক, বাদ, বান্দার অজুদ
দশ নিয়ামতে আল্লাহ করিলা মৌজুদ ॥
পহেলা আবের কথা করি যে প্রচার
আবের খাছিয়ত বেশি অজুদে যাহার ॥
মোমের মতন হয় দিল যে তাহার
চোখেতে কান্দন আসে দুঃখে বেগানার ॥
আতশের খাছিয়ত যত বেশি আছে যাহার
হামেশা গরম রহে অজুদ তাহার ॥
কথাটুকু নাহি সয় তাহার গায়
তুরিতে উঠিয়া গোস্সা তুরিতে মিশায় ॥
খাকের খাছিয়ত বেশি আছে যাহার
ঘন ঘন না মাতিবে সঙ্গেতে কাহার ॥
ঠাণ্ডা অজুদ তাহার হামেশা সুস্থির
সহজে রাগিবে না তাহার শরীর ॥
মাটি হইয়া যেইজন করে এবাদত
আখেরে যাইয়া সে খাইবে জিয়াপত ॥
বাদের খাছিয়ত বেশি রাখে যেইজন
বাড়ি বাড়ি সেই করিয়া ভ্রমণ ॥
ঘন ঘন কথা কহে আফসোস না যায়
চলন পাতলা তাহার হাঁটিতে রাহায় ॥
সবচেয়ে মাটির গুণ জানিতে বেহেতর
মাটি হইয়া চলিবে যে পাইবে আখের ॥
অধীন ভানু আরজ করি মুমিনের সভায়
সহখাতা হইলে মাফ করিবে আমায় ॥
বিদ্যাহীন মূর্খ আমি লেখা জানি নাই
জবানি করিয়া শায়ের বড়ো কষ্ট পাই ॥
তোরা যাবে নি কেউ গো বন্ধুর দরশনে, সই
সজনী সইগো, আমারে নিও তোমরা সাথে ॥
ও আমার প্রাণের সখা দেও না দেখা
থাকে যে মোরই হৃদয় মন্দিরে ॥
জলের ছলে গেলাম ঘাটে বন্ধুরে হেরিতে
আমার ঢেউ লেগে চান্দ মিশিল জলেরই সাথে গো
আমার কর্ম ফলে মিশিল জলে, না পাইলাম তারে দেখিতে ॥
আমি দিন দুঃখিনী পাই নি মানিক গো
ও রূপের ভরা মাণিক্য যে, ডুবল সাগরে গো
আমি জলপরী মনে করি, ডুব খেলি তার সাথে গো ॥
অধীন শেখ ভানু বলে, দমের সঙ্গে সাধন করো যাতে
ওরে প্রাণসখা দিবে দেখা তাতে গো।
সজনী সই, আমায় নিও তোমরা সাথে ॥
দমের সঙ্গে না হইল মিলন, ওরে পাষাণ মন
আমার দম গেলে হবে না দিদার ॥
মন রে, যখন যমে বান্ধিয়া নিবে, রঙ্গ মন্দির কইরে উজাড়,
বড়োই মুশকিল দেখি ত্রিপিনিতে হইতে পার
মন রে, উড়িয়া যাবে সুয়া পাখি, দেহ হইবে শূন্যাকার,
কান্দবে রে তোর স্ত্রী-পুত্র, রাখতে পারে সাধ্য কার ॥
মন রে, অধীন শেখ ভানু বলে, ছাড়িয়া আঁখির ধার,
নিদানকালে নিবেন কোলে মোহাম্মদ রাসুল আমার ॥
দয়াল নবি আমি ডাকি অধম গোনাহগার
মোহাম্মদ আমি কি হালে হইমু পার নবিজি আমার ॥
একে তো জীর্ণতরি, পাপে বোঝাই ভারি
আমি না চিনি এ নদীর ধার ॥
উতরিলা দক্ষিণ বাও, আফালে মরিবে নাও,
আমার ভরসা চরণ তোমার, নবিজি আমার ॥
নদীতে তুফান ভারি, কেমনে ধরিমু পাড়ি
আমি না দেখি ঐ নদীর পার ॥
দাঁড় ছাড়িব চারজন দাঁড়ী, হাওয়াতে মিশব প্রহরী
মাঝি যাবে ছাড়িয়া কাণ্ডার, নবিজি আমার ॥
লোহার-কাষ্ঠ জাঙ্গা-দড়ি এইসব রইবে পড়ি,
মাঝি কান্দিব বইয়া নদীর কিনারায়, নবিজি আমায় ॥
ভাবিয়া শেখ ভানু বলে নবি না লইলে কোলে,
ও আমি কেমনে তরিমু এ গোনাগার ॥
দয়াল নবিজি তুমি শফিউল উম্মত
শফা মোরে করিও তুমি, রোজ কিয়ামত ॥
সবখানে বাখান তোমার, শুনি যত নচিহত
তুমি ছাড়া সিরাত পুলে, কেউ নাই দেখাইবার পথ ॥
কোরানের মাঝে তোমার আছে যে সিফত
তোমার উসিলায় আছে, মোস্তাকিম সিরাত
খেওয়া ঘাটে হাশরের মাঠে নফসি নফসি সুর সরারত
কেবল ফুটবে তোমার মুখে ইয়া উম্মতি ইয়া উম্মত
সয়ালের দয়াল তুমি শফিউল উম্মত
দয়া করে কমিনারে তরাইও সিরাতের পথ
তুমি যদি মোর উপরে না বারও দরাজ দস্ত
বেহিসাবে মারা যাইমু, পাগল আমি, আমি মস্ত
আলিম উলেমায় কত, করিলা নছিহত
মন গুমানে না ধরিলাম মোস্তাকিম পথ ॥
এ ভবে জনম বৃথা, যাইবার নাহি পথ
শেখ ভানুর দিলের আশা কেবল তোমার শাফায়ত ॥
দয়াল হে, গলে বস্ত্র করজোরে আমি অধম তোয় কই
লক্ষ দোষের দোষী আমি, আমি নির্দোষী কখনো নই।
চিন্তা করি দেখি মনে, বিরাজ করো সর্বখানে
চেষ্টা করলাম প্রাণপণে, সেই ঘাটে নাও বানলাম কই।
এ সংসারে পাপী যত, কেউ হবে না আমার মতো
হয় না ভাবে রত আমার মতো পাপী কই।
এ যে মন মোহন মন, সদাই করে কামিনীর ধ্যান
কিসে পাব শ্রীচরণ, আমি যে পাবার নই।
ভবসিন্ধু সাগরে আমি, কখন ডুবি কখন যে ভাসি
মন রইল রিপুর বসি, কেমনে তোমার নামটি লই।
কত হীরা লাল পরশমণি, পুঞ্জি দিয়া করলে ধনি
সেই ধনের মূল্য না জানি, অযত্নে ফেইল্যা থুই।
হইলাম আমি দিনের কানা, চিনলাম না সে রাঙ না সোনা
চুন ভাইবা ফেইল্যা দিলাম, খাইলাম না সে চাক্কা দই।
শেখ ভানু কান্দিয়া বলে, মুর্শিদের চরণ তলে
কান্না শুইনে নেও না কোলে, তুমি বিনে কান্দবই বা কই।
দুই নয়নের বহে ধারা মুছব কত আঞ্চলে প্রাণ জ্বলে
সে কি আর আসবে গো কলঙ্কিনী না মরিলে ॥
নিশাতে সাজাইলাম সই গো ফুলেরই বাসর
হায় রে দেখতে অতি মনোহর, হায় হায় রে ॥
আমি পন্থপানে চাইয়া রইলাম, দেখা ঘটল না মোর কপালে, প্রাণ জ্বলে
সেই আশা নৈরাশ হইল নিশি হইল ভোর
তবু না পাইলাম বন্ধুয়ার উদ্দেশ হায় হায় রে ॥
আমার ফুলের মালা হইল জ্বালা, পরাইতাম কাহার গলে
আগর চন্দন চুয়া গোলাব এর সহিত
অতি সুগন্ধ মোহিত, হায় হায় রে ॥
আমার নয়ন মণি প্রেম ধনি চাইলো না নয়ন তুইলে, প্রাণ জ্বলে
দিনে দিনে ইন্দ্ৰ সবি হইল মলিন
হইয়ে রিপুরও অধীন হায় হায় রে ॥
আমার আপন দোষে ভিন্ন ভাসে গো
আমি আউলাইয়া মাথার বেণী, ছিঁড়িব বসন
ভাঙিব হাতের কাঙ্কন, হায় হায় রে।
আমি ঝাঁপ দিমু সরোবরে প্রাণ তেজিমু অকূলে, প্রাণ জ্বলে
আর নহে তো নগরে যাইমু উদাসিনীর বেশে
করিয়া তাহার উদ্দেশ, হায় হায় রে ॥
ভানু বলে ভাবিয়া দিলে, সে বইসা থাকে নিরালে, প্রাণ জ্বলে
সে কি আর আসবে গো কলঙ্কিনী না মরিলে ॥
দ্যুতি গো আমার ভক্তি চিত্তে প্রেম রসে না হইল শৃংগার
কুঞ্জে তালা না গেল খোলা না হইল বিহার
বন্ধু বিনে অঙ্গ আমার অসার দ্যুতি গো আমার ॥
দ্যুতি গো আমার ঘরের মধ্যেতে ঘর তুলিয়ে
দুয়ার ফটিকের অট্টালিকা তাম্বু ভেলুয়ার ॥
অষ্ট চল্লিশ তাতে কোটারি গোলজার মেঘ না দিতে
বন্ধ তালা ছুরানী কলেমার ॥
দ্যুতি গো আমার ফটিকের ও দালানেতে ফটিকেরও ঝাড়
দক্ষিণে বরজখ মৌলার তজ্জলী বাহার ॥
ডাইনে থাকে বামে খেলে কোটারী গোলজার
প্রেমিকের সঙ্গে মিশে চান্দেরই প্রসার ॥
দ্যুতি গো আমার নিকুঞ্জ মন্দিরে ঘর বদ্ধ তালা তার
রাজ দুয়ারে সর্প রাজে ছাড়ে হুংকার
এক একটা ফটকা মারে মস্তকে তাহার ॥
খুলবে তালা দেখবে রূপ বিজলি সমাচার
দ্যুতি গো আমার অধম শেখ ভানু বলে জ্বলে বারেবার
প্রেমানলে অঙ্গ জ্বইলে হইলাম ছারখার
কলির যোগে দর্শনেতে করিও উদ্ধার ॥
নিশীথে যাইও ফুলবনে রে ভ্রমরা,
নিশীথে যাইও ফুলবনে ॥
নয় দরজা করি বন্ধ লইও ফুলের গন্ধ
অন্তরে জপিও বন্ধের নাম রে ভ্রমরা
নিশীথে যাইও ফুলবনে রে ভ্রমরা ॥
জ্বালাইয়া দিলের বাত্তি, ফুটিবে ফুল নানা জাতি
কত রঙ্গে ধরবে ফুলে কলি রে ভ্রমরা ॥
ডাল পাতা বৃক্ষ নাই, এমন ফুল ফুটাইছে সাঁই
ভাবুক ছাড়া বুঝবে না পণ্ডিতে রে ভ্রমরা ॥
অধীন শেখ ভানু বলে, ঢেউ খেলাইও আপন দিলে
পদ্ম যেমন ভাসে গঙ্গার জলেরে ভ্রমরা
নিশীথে যাইও ফুলবনে ॥
পড়ো কলেমা শাহাদৎ, শাহাদৎ কলেমার মাঝে তরাইবায় পথ
লা-শরীক মাবুদ যে, মনে মনে মানব
মুহাম্মদ রাসুল ঠিক জানি চলব আলবৎ
শাহাদাতে তরাইবা পথ।
যে জনের ইমান দৃঢ় সঠিক আলামত
সে পাইয়াছে মুস্তাকীম, সোজা সিধা পথ ॥
লা-শরীক মা’বুদ জানি, যে জন করে এবাদত
হাশরে নবিজি তারে করিবা শাফায়াত ॥
শাহাদৎ কলিমা চাবি জানিও আলবৎ
অধীন শেখ ভানু কয়, বেহেস্ত যাইবার পথ ॥
পার করো পার করো আমারে আসিয়া রাসুল
ডাকি আমি সন্ধ্যাকালে, কান্দি বইয়া খেওয়ার কূল ॥
দয়াল হে, একে আমার জীর্ণ তরি ভাব জানে না মন বেপারী
কেমনে ধরিলাম পারি, দেখা না যায় কূলা কূল ॥
সম্মুখে মায়ারই জাল, সঙ্গেতে বিজারা মাল
দাঁড়াইল হইয়া কাল, ডুবাইতে লাভে মূল
দয়াল হে, ভাসিয়াছি ভব সাগরে, এসে উদ্ধার করো মোরে
দীনহীন কাঙালের তরে, মনে যেন না পরে ভুল ॥
তুমি না তরাইলে মোরে, ডুবিমু অকূল সাগরে
রাসুল বলে ডাকমু কারে, কে দিব চরণের ধুল ॥
দয়াল হে, আমার কোনো পুণ্য নাই, পাপেতে ভরা
ঘাট তালাশে যাইবে ধরা, পায় যদি সে মাল বিজারা
তখন করবে কিন্তু গণ্ডগোল ॥
ভানু বলে মন বেপারী দিন থাকতে ধরো না পাড়ি
নিয়াসে দুর্বিন ধরি দয়াল নামের বাদাম তোল
পার করো পার করো আমারে আসিয়া রাসুল ॥
পাষাণের মন রে আমার, মিছা মায়ায় ভুইল্যা রইলে রে
আসিয়া ভবের মাজার, পাষাণ মন রে আমার ॥
তনের বলে ভুইল্যা রইলে রে মন বিষয়ে জড়িয়া
জন্মিলে মরিতে হবে যাইতে হবে দুনিয়া ছাড়িয়া ॥
যখন সুয়া পাখি উড়িয়া যাইব রে এ দেহ ছাড়িয়া
কান্দবে রে তোর স্ত্রী-পুত্র চৌদিকে ঘিরিয়া ॥
পাড়া-পড়শি কান্দবে রে, কান্দবে মা জননী
বইনের কান্দনে পাষাণ গইল্যা হইব পানি ॥
কহে শেখ ভানু, কেউ তো নয় আপনা
লাহুতে ডুবিয়া দেখো আখের দুনিয়া ফানা ॥
পিরিতি কি গাছে ধরে, পাইবায় নি রে কেউ
প্রেমের ধ্বনি চিন্তামণি, প্রেম সাগরে খেলছে ঢেউ ॥
কত লোকে সাধু বেশে ঘুরে বেড়ায় দেশ-বিদেশে
ও তার অঙ্গ ফুটা মাথায় জটা, ভুলায় কত কুলের বউ ॥
সত্য প্রেমের প্রেমিক যারা, ধরছে অধর ধরা
ও তার কর্ম ফলে অল্প জলে, ফুল বড়শীতে ঠেকায় রউ ॥
ভক্ত প্রেমের প্রেমিক যত গুবরিয়া পুকের মতো
অধীন ভানু বলে, প্রেম হইলে পান করে সে কমলের মৌ
প্রেম সাগরে খেলছে ঢেউ ॥
বানাইয়া রঙ্গের ঘর দেখিতে সুন্দর
ঘরের মানুষ ঘরে থুইয়া ঘর যাইব পুরান হইয়া
ও মন রে ঘুণে খাইয়া করবে জরজর ॥
চৌকুণা ছৈয়ারই ঘর রোয়া বহুতর
ঘরে মাঝখানে দেওয়ান খানা বিরাজ করে পঞ্চজনা
ও মন রে তাতে আইসে টেলির খবর ॥
ঘরের দুই দিকে দুই ফানুস বান্ধা জ্বলে রাত্র দিন
তারি মাধ্যে রঙ্গের খেলা, খেলনা মন ও চঞ্চলা
ও মন রে দিনে দিনে হইবে রে মলিন ॥
কার জায়গায় বসতি করো বানাইয়া ঘর
ঘুণে খাইয়া করবে জরজর ॥
তোর খাজনা বাকি থুইয়া বেভুলে রইয়াছ বইয়া
ও মন রে বান্ধিয়া নিবে রাখো নি খবর ॥
ঘরের ভিতরে আরঙ্গি পাখা হাওয়া আইছে টানে
অধীন শেখ ভানু বলে, সেই পাঙ্খা ছিঁড়িয়া গেলে
ও মন রে পড়িয়া মরিবে পরানে ॥
বিদেশির সঙ্গে মহব্বত করিও না
ও মন অন্তরে লাগিবে হীরার ধার রে ॥
খাও রে কাগা, খাও রে সারস
হাড্যি চুনি চুনি করিয়া যাইও রে
দুই চক্ষু বান্ধিয়া যাইও মুর্শিদ ধনের চরণ দেখিবা রে
ও মন রে, মানুষের কথায় কি যায় মানুষ ধরা ॥
ওরে কাগা নেও রে পত্র, নিয়া দিও ভিনদেশীর হাতে
দুঃখিনীর দুঃখ কহিও প্রাণবন্ধে রে আগে
ও মন রে, মানুষের কথায় কি যায় মানুষ ধরা ॥
বিসমিল্লার ফল পাইবায় রে একদিন সোনার আদম
বিসমিল্লার ফল পাইবায় একদিন ॥
আদম রে, নমাজ পড়ো রোজা রাখো শরিয়তকে চিনো
নমাজ তরাইয়া লইব হাশরের দিন ॥
আদম রে, কোরআনেতে ফরমাইছেন আল্লাহ হইব রে হাশর
সেই সময় তলাইয়া লইব নেকী-বদী তোর ॥
আদম রে, হাশরের ময়দানের কালে লাগব হুলাহুল
অধীন শেখ ভানু এর লাগিয়া কান্দিয়া আকুল ॥
ব্যর্থ বৈঠা বাইলাম রে
ও কাঙাল ফকিরের ঘাটে নাও নাই রে ॥
এক দাঁড়ে না বাইও রে, দুই দাঁড়ে না বাইও
পঞ্চ দাঁড়ে বাইও নাও, নিলক্ষীয়ার চরে রে
ও কাঙাল ফকিরের ঘাটে নাও নাই রে ॥
 নৌকা দিল, বৈঠা দিল আরো দিল মাঝি
নদীরও তরঙ্গ দেইখ্যা পলাইল মোর মাঝি রে
ও কাঙাল ফকিরের ঘাটে নাও নাই রে ॥
অধীন শেখ ভানু কান্দে, নদীর কোলে বইয়া
পার হইমু পার হইমু কইরা, দিন তো গেল গইয়া রে
ও কাঙাল ফকিরের ঘাটে নাও নাই রে ॥
ভুইল না রে মুর্শিদ রতন
আর না হইবে রে তোর মনুষ্য জীবন
ও মন ভুইল না রে ॥
ভুইল না ভুইল না ‘ইল্লাল্লাহু’ জিকির
এই যে দুনিয়া তোর না রইব স্থির রে ॥
এই ভব নদীর না দেখি তার কিনার
ঘাটে তোর ভাঙা তরি কেমনে হইবা পাড়ি রে
ও মন ভুইল না রে ॥
কহে হীন শেখ ভানু, ‘ইল্লাল্লাহু’ ভুইল না রে মন
ভুলবে যদি, ভব নদী তরাবে না কখন
ও মন ভুইল না রে ॥
ভেবে দেখো মন বলি শুনো, বলি যে তোমারে
সর্দারি দিয়াছেন আল্লাহ সবার উপরে।
অজুদ তরিতে তুমি, তুমি সবার প্রধান
তোমার হাতে হাইলকাটা দিয়াছে সোবহান ॥
মহাজনের পুঞ্জি নিয়া রইয়াছে বেপারী
ভব দরিয়াতে তুমি ধরিয়াছ পাড়ি।
বুঝিয়া চালাইও তরি চিনিয়া কানাল
হামেশা চাচর পানে রাখিও খেয়াল ॥
হরকাটি ধরিয়া লও পন্থেরও খবর
নহেত পরশ নিবে লুটিয়া লস্কর ॥
মন আমার কামিনী ফুলের মধুতে মাতাল
নিশার ঝুঁকে আপনা বুকে মাইরো না রে শেল ॥
মৌলানা-মৌলভী কত, এমএ বিএ শতে শত
জেনে তত্ত্ব, অভিমত্ত্ব নিতে যবে পরার মাল
মন আমার কামিনী ফুলের মধুতে মাতাল ॥
 শত সহস্ৰ লোকে সত্য পথে মাথা ঠুকে
কত ছেড়ে তত হয়ে বখ্ত রাখে পরকাল
স্ত্রী-পুত্র মাতা-পিতা ভগ্নি-ভ্রাতা কেহ কাহারো নয়
মরলে পরে এক ঘরে রবে চিরকাল
মন আমার কামিনী ফুলের মধুতে মাতাল ॥
অধীন শেখ ভানু বলে, ওরে মন মাতাল
শীঘ্র হইয়ে গুরুর চেলা শামা জ্বলে দেখো না জামাল
মন আমার কামিনী ফুলের মধুতে মাতাল ॥
মন আমার ভাবের ব্যারাম ভাইবে গেল এ জীবন
ওষুধ দিলো না প্রেমের গুরু মহাজন ॥
তনের গুরু মন হইল গুরু মন পবন
পবন গুরু পলক ভবে আছে নিরঞ্জন
তত্ত্ব বিনে মত্ত লইলে রে, সইতে হবে জ্বালাতন
ওষুধ দিলো না প্রেমের গুরু মহাজন ॥
একটি বস্তুর ছয়চল্লিশটি নাম
পঞ্চ কুড়ি ষোল জোড়া আছে নি গাবান
লাহুত ঘরে হাউল হইয়া রে চিনছে শুধু একজন
ওষুধ দিলো না প্রেমের গুরু মহাজন ॥
ভাইবে শেখ ভানু বলে, নয়ন জ্বলে বস্ত্র গলে করো উপাসন
তারে তারে তাল মিশাইলে, চিনতে পাবে সেই চরণ ॥
মন আমার ভুইলা রইলে বিদেশে আসিয়া
ও তর ভবের খেলা হলে ভঙ্গ, কোথায় রবে গিয়া রে ॥
ও তুই কোথায় ছিলে কেন আইলে কি ধন আইলে লইয়া
ও তর এসব কথা হয় না কি মনে রে
কামিনী যে রাখছে তরে ভুলাইয়া ॥
বিদেশেতে যাও যদি রে মন, স্ত্রীপুত্র থুইয়া
ওরে দিবানিশি ঐসব জ্বালায়
মন উঠবে রে রইয়া রইয়া ॥
যে ধন নিয়া আইলা ভবে তারে পাশরিয়া
ও তুই মহাজনরে ভয় করিস না কেন
ও মন তার আমানতদার হইয়া ॥
অধীন শেখ ভানু বলে, মনেতে ভাবিয়া
ও তুই খালি হাতে যাইতে হবে রে
ও মন আমানতদার হইয়া রে ॥
মন কই যাও রে কে নিল ধরিয়া
সোনার পিঞ্জিরা রইল জমিনে পড়িয়া ও মন কই যাও রে ॥
যাইও না যাইও না মন রে নিষ্ঠুর হইয়া
তোর মা জননী কানবে, পিঞ্জিরার পানে চাইয়া রে
ও মন কই যাও রে ॥
সোনার কটরা রইল খাইতায় বইয়া দানা
পালঙ্গে পইড়া রইল তোর ফুলেরই বিছানা
ও মন কই যাও রে ॥
সুন্দরী রমণী রইল আরো আত্মীয় বন্ধুগণ
কার ঠাঁই সঁপিয়া গেলায় রাজ্য সিংহাসন
ও মন কই যাও রে ॥
পুত্র হইল সুপণ্ডিত, তোর ভ্রাতা গুণবান
তোর লাগি কান্দিয়া কান্দিয়া গলাইব পাষাণ
অধীন শেখ ভানু বলে আফসোস হাজার
খালি হাতে যাইতে হবে ছাড়িয়া সংসার
ও মন কই যাও রে ॥
মন ঢেঁকি বাও রে, না করিলায় হুঁশ
এই দম বিফলে যায়, যেমন যার তুষ,
ও মন ঢেঁকি বাও রে ॥
ঢেঁকি বাও ঢেঁকি বাও এই তনের ভিতর
পাঁছআনে বাইলে ঢেঁকি তরিবায় হাশর।
আকাঠা কাষ্ঠের ঢেঁকি, ভিতের ভরা রুহু
উঠতে বলে সুবহান আল্লাহ, পড়তে বলে হুঁ ॥
অধীন শেখ ভানু বলে, মুই অধীন অধম
বে-কলেমা ছাইড় না বান্দা, থাকিতে আপন দম ॥
মন তুমি জপো না ইল্লাল্লা
ইল্লাল্লা জপিলে যাইব রে মন
তোর দিলের ভাবনা ॥
বৈশাখ মাসেতে মন রে ফোটে নানা ফুল
সুগন্ধে মোহিত হইয়া ভোমরা আকুল
নিশার সময়ে ভ্রমরা উড়িয়া বেড়ায়
ফুলে ফুলে বিরাজিয়া ফুলের মধু খায়।
যার যার মাশুক সনে হইলে মিলন
সুখেতে কাটায় নিশি হইয়া মগন।
মন তুমি ভুলিয়া রইলে মাশুক ছাড়িয়া
তুমি কার কে তোমার দেখলে না ভাবিয়া।
জ্যৈষ্ঠ না মাসেতে মন রে পাকে নানা ফল
মাশুক ধুড়িয়া ফিরে বুলবুল সকল।
বুলবুলের মাশুক মন রে আম কাঁঠাল কলা
খাইলে নিভিয়া যায় মন উদরের জ্বালা।
মন আমার মাশুক বিনে চঞ্চলের মতি
আন্ধাইর ঘরে কি দেখিবে, না জ্বালাইয়া বাতি ?
জ্ঞানের আগুইনে মন রে জ্বালাও মশাল
তবে তো দেখিতে পারো মাশুক জামাল।
আষাঢ় মাসেতে মনরে ছিল বিরণী খই
মাখাইলাম সুবণ্যের থালে বন্ধু রইল কই?
ভাবে বলে মনমোহিনী বলি তোর ঠাঁই
হৃদয় মন্দিরের মাঝে আরাইলাম কানাই।
হৃদয় মন্দিরে আছে কুচিন্তার বাজার
সদায় করে কলরব কঠিন ব্যাপার।
নীরব অইতে পারো বাজার ভাঙিয়া
জ্ঞানের চউখে চাও নিরখিয়া।
শাওন মাসেতে মন রে উথলে সাগর
অকূল সাগর দেখি অঙ্গ ঝরেঝর।
যে দেশে বন্ধুয়ার বাড়ি গুদারা
কেমনে অইমু পার, আমার মনুরা চঞ্চল।
না আছে খেওয়ার নাও না দেখি খেওয়ানী
কূলেতে বসিয়া ডাকি আমি অভাগিনী।
মরিয়া ভাসিমু আমি যমুনারই জলে
বন্ধু নি অভাগিনী দেখিবে সকলে।
ভাদ্র না মাসেতে মন রে গাছে পাকা তাল
গেল না গেল না মন তর দুঃখের কপাল।
কদম্বের তলে বন্ধের শুনি বাঁশির ধ্বনি
হৃদয় জ্বলিয়া উঠে যেন জ্বলন্ত আগুনী।
আশ্বিন মাসেতে মন রে গাঙ্গে দেয় চর
সাজাইয়া ফুলের শয্যা মন একাম্বর।
একে তো আন্দাইর রাইত চউখে ঝরে পানি
নিরলে বসিয়া কান্দি আমি অভাগিনী।
কার্তিক মাসেতে মন রে ভাটি দেয় জোয়ার
বন্ধের মিলন ভাইগ্যে না অইল আমার।
আহা রে জীবন গেল পন্থ পানে চাইয়া
পিরিতি বিচ্ছেদ জ্বালা উঠে রইয়া রইয়া।
আগন মাসেতে মন রে পাকে নানা ধান
দেখিয়া আনন্দ মন যতেক কিষান।
মন আমার আকুল অইল দিন কাটে খুন
জ্বলিয়া জ্বলিয়া উঠে দুঃখের আগুইন।
পৌষ মাসেতে মন রে আন্ধারিয়া রাতি
একেলা বসিয়া কান্দি কেউ নাই মোর সাথী।
ভাবিলে কি হবে মন রে কান্দিলে কি অবে?
জিতে যদি না পাইলে, মরিলে কি পাবে?
মাগ না মাসেতে মন রে অঙ্গ কাঁপে জাড়ে
তুই বন্ধের পিরিতে আমার পরানী বিদুরে
দিলের দরদী তুমি নয়নের জুতি
দমের দুলভ তুমি বিপদের সাথী।
ফাল্গুন মাসেতে মন রে বসন্তের জোর
নিশাতে বেভুল হইয়া নিশি কইলাম ভোর।
কোকিল ডাকে ডালে ডালে বসি কুউ কুউ রবে
চিনলে না মনমোহিনী মিছা আইলে ভবে।
কোকিল তো কোকিল নায় রে কোকিল বিনোদিয়া
কোকিল মোর কুলনাশিনী কে দিবে ধরিয়া।
আত নাই পাও নাই বিনা পাখে উড়ে
বলগো সই মনমোহিনী কেমনে ধরি তারে।
চৈত্র না মাসেতে মন রে বছরের শেষ
না পাইলাম প্রাণের বন্ধু করিয়া উদ্দেশ।
আশাতে জীবন গেল পড়িয়া গাফিলে
কাল ননদী না দেয় মোরে যাইতে কদম তলে।
কদমের তলে বন্ধে মুররী বাজায়
চক মেলার বাজারে বসি শব্দ শোনা যায়।
শাহ ভানু বলে মন রে মিছা আইলে ভবে
জিতে যাবে না পাইলে মইরলে কি পাবে ?
বারমাসের তের পদ অইল পূরণ
দুঃখের উপর দুঃখ না যায় সহন।
সুখ তেজি দুঃখ না যায় সহন।
সুখ তেজি দুঃখ যদি পারো হে সহিতে
তবে মিলিতে পারো মাশুকের সাথে ॥
মন তোর কাল কাটিল, কল করাতে
পড়বে রে মন শমনের হাতে ॥
কল করাতে তিনজন ধরা
হইতাছে তার তক্তা ফাড়া
ওরে মন ভুলে করাতে গুঁড়া উড়িতেছে হাওয়ার সাথে
পড়বে রে মন শমনের হাতে ॥
কল করাতে এমনি ধ্বনি
শব্দ হয় তার ছনছনি
তিন তারেতে টানাটানি মিশিয়া রিপুর সাথে
পড়বে রে মন শমনের হাতে ॥
কহে অধীন শেখ ভানু, কিড়ায় খাইব তর সোনার
তনু ধরলে না তুই মনের মানু, ভুইলা রইলে রিপুর সাথে
পড়বে রে মন শমনের হাতে ॥
মন তোর সুখের রাজ্য কইরে ত্যাজ্য
যাইতে হবে আন্ধাইর ঘরে।
মন তোর পঞ্চকামে বন্ধের নাম ভুইল নারে
মন তোর মুজলে নয়ন লুইট্যা-মাইরা খাইব পড়ে
যাইতে হবে আন্ধাইর ঘরে ॥
তোর স্ত্রী-পুত্র হইয়া শত্রু অঙ্গের বসন রাখবে কাইরে
দেখো না রে মন শাহ সেকান্দর বাদশা নামধার
নামজারি যার এ সংসারে
আবার সে ছাইড়ে তক্ত, গেল ফক্ত
কি নিল তার হাতে কইরে
যাইতে হবে অন্ধকার ঘরে ॥
দেখো না রে মন আইলে খালি, যাইবে হাত খালি কইরে
ভাইবা শেখ ভানু বলে, শমন আইলে
কান্দবে রে তুই ধূলায় পইড়ে ॥
মন রে দিন তো গইয়া যায়,
ডুব দে ডুব দে রে মন দিল দরিয়ায় মন রে,
দিল দরিয়ায় চৌদ্দ বাঁকে
আছে রে মন একখান দ্বার।
ওরে যে ডুবিল সে পাইল মুর্শিদেরও দিদার ॥
দিল দরিয়ায় চারি টিলা, সদায় উজান বয়
মুর্শিদ ভজিলে ভেদ পাইবে নিশ্চয় ॥
অধীন শেখ ভানু বলে, ডুবলে না রে মন
ডুবিলে পাইতে পারো অমূল্য রতন ॥
মনের মানুষ খুঁইজ্যা বেড়াই না পাইলাম অন্বেষণ
সেই জ্বালায় বাঁচে না মোর জীবন ॥
ধন দিলাম, প্রাণ দিলাম, দিলাম এ রূপ-যৌবন
মন রে, তবুও না পাইলাম অন্বেষণ ॥
আমি তোর প্রেমের ভিখারী, ও বন্ধু সইলাম কত জ্বালাতন
না পাইলাম বন্ধের দেখা সদায় জ্বলে সেই অনল
আমার মনের আশা, না জানি পুরাবে কখন
এই জ্বালায় বাঁচে না মোর জীবন
তবুও না পাইলাম অন্বেষণ ॥
অধীন শেখ ভানু বলে বৃথা গেল এ জীবন
বন্ধের আশায় আশায় দিন কাটাইলাম
কখন জানি আয় সমন
এই জ্বালায় বাঁচে না মোর জীবন
মন রে, তবুও না পাইলাম অন্বেষণ ॥
মাটির গড়া হাওয়ায় ভরা অগ্নি জ্বলে এক সমান
কি আশ্চর্য কুদরতের গান
আউয়ালে আসিলা আল্লাহ, দুয়ামে রাসুল আল্লাহ গো
হে বান্দা পেহেলে, এই চাইয়ে করো পাছান
কি আশ্চর্য কুদরতের গান ॥
অষ্ট কোঠা, বার বুরুজ তাতে ঘুরে চন্দ্র সুরুজ
হাওয়ার জুরে চরখি ঘুরে রাহু গ্রাসে চাঁদ
কাপ কলেতে কুঞ্জি মেরে টানছে নাছুতে ধরে গো
চতুরকলে আপনা বলে আল্লাহু নামে বাখান
কি আশ্চর্য কুদরতের গান ॥
মধ্যে যারা এশকে মরা ঐ স্থানে করে ধ্যান
মকদ্দস কুদরতি কলে শূন্যতে পাথর ঝুলে
ভাইবা দিলে ভানু বলে, ঐ খানে হবে মিজান
কি আশ্চর্য কুদরতের গান ॥
মাটির বাসন ভাঙিয়া যাইব হইব রে চূর্ণচুর
বুঝো নি রে মন তোমার পলকে জীবন, হাওয়ার উপর জুর ॥
মনা ভাই, ছাড়ো অহংকার পুত্র-পরিবার, কেহ নাই সঙ্গে কার
ওরে দুই চক্ষু মুজিয়া দেখো হকলতাই অন্ধকার ॥
হইলে ফানা যাইবে জানা, যাইতে হবে গোরের তল
আসলে শমন করবে দমন, বান্দিয়া নিব নিঝুমপুর ॥
সময় থাকতে ভাবো নিরঞ্জন, পুঞ্জি লও হাতে বেলা নাইরে দূর
সময় নাই সময় নাই রে আসলে ঝটকা, ভাঙবে মটকা
কেবা আটকে রাখবে তোর ॥
ভানু বলে ও মনা ভাই, বাসন থাকবে না রে আর
বুঝতে গেলে, বোঝা অতি নয় তো গুরুতর।
পিরের চরণ ধইরে বুঝো এর মাহিত্ম্যের মূর
মাটির বাসন ভাঙিয়া যাইব হইব রে চূর্ণচুর ॥
মানুষের কথায় কি যায় মানুষ ধরা
ও মন রে, মানুষের কথায় কি যায় মানুষ ধরা ॥
আগে তত্ত্ব জানিয়া মত্ত হও, বেহুঁশ হইও না কখনও
রিপু দমন করছে যারা, মরদুমের চরণ পাইছে তারা
ও মন রে, মানুষের কথায় কি যায় মানুষ ধরা ॥
সাপিনী-কামিনী ফুল হইয়া থাকো মরা
মুর্শিদের চরণ পাইলে ঠিক, ষোল আনা হবে সারা
ও মন রে, মানুষের কথায় কি যায় মানুষ ধরা ॥
অধীন শেখ ভানু বলে, কামিনী সাগরে ডুবছে যারা
ছাড়ো সঙ্গ করো ভঙ্গ, কামসাগরে খেলছ যারা
ধরতে পাবে অধর মানুষ, শেষে সে দিবে ধরা
ও মন রে, মানুষের কথায় কি যায় মানুষ ধরা ॥
মাবুদ রহিম রহমান রোজায় সাবুদ রাখো
না করো নাদান ॥
রোজা ধন, রোজা দৌলত, রোজ শান্ মান্
রোজায় দৌলত মিলবে হুর গেলমান ॥
রোজার দৌলত শফা, কবর, হাশর, মিজান
রোজায় তরাইয়া লইব তামাম নিদান ॥
রোজার বরকতে মিলব হাশরের তরান
রোজাতে সাবুদ রাখো, নিদানে আমান ॥
অধীন শেখ ভানু বলে, মাবুদ রহমান
সব ঠাঁই পানা মাংগি, যথায় নিদান ॥
মুখেতে মাখন মাখা অন্তরে গরল ছাই
এমন ঈমানের কার্য নাই।
সাধু ভাই, চৌদিকেতে দিয়া বেড়া
ক্ষেতে বুনলে শস্য লাই ॥
আপনা দোষে নাশ করিলে
ছাড়িয়া দিয়া ছয়টি গাই ॥
সাধু ভাই, রোজা রাখো নমাজ পড়ো
তাদিল আরকান ঠিক রাখা চাই ॥
মণিপুর লুটিয়া নিবে,
না জানলে দীনের লড়াই ॥
সাধু ভাই, অধীন শেখ ভানু বলে
মিছা ভবের আশা নাই
গুরুর পদে রাখলে মতি
অবশ্য তরাবে সাঁই ॥
মৌলার তারিফ কি কইমু ইমানওয়ালা
ত্রিভুবনে জোড়া নাহি যার,
জোড়া নাহি যার কথা বলিবার ॥
ও মনরে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ যখন কহিলেন মৌলা
সেই অবধি রাসুলুল্লাহ হইলেন তাহার ইয়ার
জোড়া নাহি যার কথা বলিবার ॥
মন রে, কেবা আল্লাহ, কেবা নবি, শিখাইলেন পির সবই
আরে কি কহিব কুদরতের কথা, বল্যা শেষ হয় না আর
জোড়া নাহি যার কথা বলিবার ॥
মন রে, যাহা আমার জানার ছিল, পির সবই জানাইয়া দিল
সেই অবধি চক্ষু চাইল দেখিতে তাঁহার দিদার
জোড়া নাহি যার কথা বলিবার
অধীন শেখ ভানু কয়, মুই বড়ো গোহানগার
হর হামেশা মাঙ্গে কেবল মৌলাজির দিদার
জোড়া নাহি যার কথা বলিবার ॥
যাইতে হবে পিঞ্জিরা ছাড়িয়া প্রাণ সুয়া রে
যাইতে হবে পিঞ্জিরা ছাড়িয়া ॥
প্রাণ সুয়া রে, না করিলায় হিসাবের কাম, না লইলায় মৌলাজির নাম
ভুলিয়া রইলে খাইয়া দুধ-কলা ॥
আজরাইল আসিলে রে পিঞ্জিরা ভাঙিব রে
ও তুই কোথায় লুকাইবে সেই বেলা ॥
প্রাণ সুয়া রে, তোর লাগি কলঙ্কের ডালি, লইলাম মাথায় তুলি
শুনলাম তোর চান মুখের বুলি
আমারে পাঁকি দিয়া যাইবে তো ছাড়িয়া
পিঞ্জিরা পড়িয়া রইব খালি ॥
প্রাণ সুয়া রে, স্ত্রী-পুত্র, মাতা-পিতা এই সব মমতায় গাঁথা
ভাইবা দেখি কেহ কারো নয় ॥
হুঁশম আসিলে রে তলবে যাইবে রে
ও ভবে মিছা রে তুই করিয়াছিস পরিচয় ॥
প্রাণ সুয়া রে, অধীন শেখ ভানু বলে সুয়া পাখি উড়িয়া গেলে
পিঞ্জিরা পড়িয়া রইব খালি
ফুলের মধু ফুলে থাকিব রে
বসিয়া উড়িয়া যাইব অলি প্রাণ সুয়া রে ॥
রহিম রহমান আল্লা পরওয়ার দেগার
তুমি না তরাইলে ভবে, নামেতে কলংক তোমার ॥
ও আল্লা আমি বান্দা আজিজ লাচার
অকূল সাগরে আমি দিয়াছি সাঁতার ॥
আপনি মেহের করি, মিলাইয়া দাও তরি
ও আল্লা ভব নদীর, না দেখি কিনার ॥
আসিয়া ভবের হাটে না করলাম বাজার ॥
অধীন শেখ ভানু বলে, ডাকি বইয়া সন্ধ্যা কালে,
ও মন রে, এ ভবনদী কিসে হইমু পার ॥
রাই গো—
সদাই আগুইন জ্বলে, কেউ তো না দেখে গো
দারুণ বন্ধুয়া নাই গো ঘরে, কেমনে নিবাই গো
সদাই আগুইন জ্বলে গো রাই ॥
রাই গো—
জংলাতে দিলে আগুইন রাইগো, দেখে সরব লোকে গো
আমি অভাগিনীর মনের আগুইন গুইয়া গুইয়া জ্বলে গো
রাই সদাই আগুইন জ্বলে গো রাই ॥
রাই গো—
বন্ধের বাড়ি আইতে রাইগো, আড়ু খাডু পানি রে,
আইতের বেলা রঙে ভঙে, যাইতের বেলায় টানাটানি গো
সদাই আগুইন জ্বলে গো রাই ॥
রাই গো—
এই জ্বালায় জ্বলে গো ভানু, আওয়া যাওয়া বেহুদা ভবে
জ্বলে জ্বলুক, পুইড়া পুইড়া হোক না ছাই গো
নিদানকালে বন্ধেরে নি দেখা পাই গো
সদাই আগুইন জ্বলে গো রাই ॥
রূপ দেইখা মন ভুইলে রইলে গৃহে যাওয়া হইল ভার
কি রূপ দেখিলাম চমৎকার ॥
মন রে, এক চন্দ্র এক সূর্য তারা যত শুমার
ওরে যে দেখছে পূর্ণ শশী, শমনে ভয় নাই গো তার
মন রে, চক্ষু মুদি দেখো না রে, রূপ উদয় হয় রঙ্গ বাজার
ওরে ভবের মায়া ধরবে ছায়া দেখবে না রূপ পরিষ্কার
কি রূপ দেখিলাম চমৎকার ॥
মন রে, অধীন শেখ ভানু বলে, যে দেখেছে রূপ আকার
সে যে আপনা রূপে আপনে মগ্ন, মিছা মায়া এ সংসার
কি রূপ দেখিলাম চমৎকার ॥
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বল রে সোনার ময়না
মন তুই লা ইলাহ ইল্লাল্লাহু বল ॥
লা ইলাহ যার গাছের গোড়ি
ইল্লাল্লাহ তার মূল
গাছের গোড়ায় পাতায় বলে ঐ আল্লাহ রাসুল
মন তুই লা ইলাহ ইল্লাল্লাহু বল।
নি চিন্তায় বইসাছো মন রে দরুণ পিঞ্জিরার ভিতর
শমনে বধিয়া নিব
কে হইবে তোর আপন রে
ও মন লা ইলাহ ইল্লাল্লাহু বল ॥
অধীন শেখ ভানু বলে
বেইল থাকতে নেনা ছবক
ছাইড়া দে কাল ননদীর ছল
ও মন লা ইলাহ ইল্লাল্লাহু বল ॥
লা-ইলাহা ইল্লাল্লা বলো রে সোনার ময়না,
আরে মন তুই ইল্লাল্লা বল।
ভুলিয়া রইয়াছি রে ময়না, পিঞ্জিরার ভিতর ॥
শমনে বান্ধিয়া নিলে কেউ না হইব রে তোর
শমনে বান্ধিয়া নিব কবরের ভিতর ॥
এক এক করটে যাইব হাজার বছর
কোরআনে কইছইন আল্লা হইব রে হাশর
সে দিন তৌলিয়া লইবা নেকি-বদি তোর ॥
চড়িতে হইবে রে ময়না পুলের উপর
চুলের হাকাম, ক্ষুরের ধার না লইব তোর ভর ॥
অধীন শেখ ভানু বলে, না রইও গাফিল
পিঞ্জিরা ভাঙিয়া ময়না, ধইরা নিবে আজরাইল ॥
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলো রে সোনার ময়না
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু জগতের ঘোষণা ॥
কলিমা কলের জুরে আশিকে-মাশুক ধরে গো
হাওয়ার জোরে চরকি ঘোরে, হিলাইছে তসবি দানা
আপনি সাঁই গুণমণি, জাহির করিতে বানীগো ॥
আদম সুরত সৃজন করে পুরাইতে মনবাসনা ॥
আদমে সৃজন করি, হুঁশুম করিল বারী গো
‘লা ফরকতু হেজাবু মিনহা’ হাদিসে বর্ণনা
অধীন শেখ ভানু বলে, নামের হার ঝুলাইয়া গলে
জবানে আলস্যি ভাঙিয়া করো নামের জপনা
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ জগতের ঘোষণা ॥
৮৮
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মদ রাসুল
এই কলিমা জপিলে যাইব মনের যত গণ্ডগোল।
আল্লাহ বিনে কেউ নাই সর্ব শক্তির মূল
নিজ গুণে বানাইলা মোহাম্মদ রাসুল।
আগে আল্লাহ মনেপ্রাণে করো হে কবুল।
তা অইলে পাইবে তুমি একূল-সেকূল।
অধীন শেখ ভানু বলে, মনে যত গণ্ডগোল
যার লাগি ভুলিয়াছি আল্লাহ ও রাসুল।
৮৯
শোনো হে আমার মন চিনিয়া পরম ধন
বান্ধিয়া লও গিঁঠে আপনার
খেওয়াতে লাগতে কড়ি, পার হইতে পাবে তরি
নহে তো তরিয়া যাওয়া ভার ॥
সেই যে পরম ধন চিনিয়া না চিনলে মন
কানে শুনো দেখতে না পাও
পঞ্চ লাল ত্রিশ মতি সেই তো সঙ্গের সাথী
না চিনিলে পিরের কাছে যাও ॥
চারিটি পরশ আছে পাইবে তাহার কাছে
আর পাবে ছয়টি গহর
তাহাকে চিনতে পাইলে রাখিও আপনা দিলে
সাফল্য জীবন হবে তর
এই সব নিয়ামত শোনো তার হকিকত
যে জন করিল উপার্জন
বেহেস্তে চলিয়া যাবে কবরে রৌশন হবে
কিন্তু তার আছে যে ছয়টি দুষমন ॥
এলেম শিখিয়া ভাই গুরুরী করিও না চাই
ইমানওয়ালা না করিও ঝুট
ছাঁখাওতী কাম করি, না করিও বাড়াবাড়ি
সবুরেতে না হও লালায়িত ॥
হাদিসেতে মানা আছে, রুহি যে সবার কাছে
পরের ধনে না হইও মত্ত আক্কেল যে আছে যার, গোম্বা দুষমন তার
বুঝে দেখো দিলে আপনার
হায়াতের সঙ্গে সঙ্গে মউত যে ফিরে রঙ্গে
ধরিয়া করিতে গ্রেপ্তার ॥
সেই ভাবনাতে মোর অজুদে না ছাড়ে জ্বর
তাহার বিচ্ছেদ হয় জ্বালা ॥
নিকটে তরিব নাই, জিজ্ঞাসিব করি ঠাঁই
চুপে চুপে ভানু কান্দে নিরালা একালায় ॥
শোনো হে আমার মন বলি যে তোমারে
ধন পাইয়া ভুইলাছ মাবুদ রে ॥
আল্লাহতায়ালা দেয় ধন লিয়া বুঝে মন
ইহার নিকাস লইবে মুদিলে নয়ন ॥
স্ত্রী-পুত্র মালমাত্তা জায়গা বাড়ি ঘর
সময়ে সঙ্গের সাথী অসময়ে সবই পর ॥
যেই ধন জমাইয়াছ মন ঘরেতে তোমার
এক কড়ি নাহি দাও নামেতে আল্লাহর ॥
ফকির মিসকিন লোকের না লও খবর
বখিলী খাতায় নাম লেখা হবে তোর ॥
খাইতে পাবে না বইলা ভয় করে মনে
কেমনে বাঁচিয়া আছে পশু-পক্ষীগণে ॥
আল্লাতায়ালা যাহা দেয় তা উঠাইয়া খায়
কিছু নাহি জমা রাখে আপনা বাসায় ॥
জীবজন্তু যা আছে তামাম জাহান
কারনা উপাস রাখে, খাইয়ে রাখে সেই তো সোবহান ॥
শোনো হে আমার মন করিয়া যে গওর
বড়ো এক আজদাহ ছিল পাহাড় উপর ॥
বড়ো মোটা কদ তার দরাজ অজুদ
একেলা পড়িয়া রইত হইয়া সজুদ ॥
দুই চক্ষু অন্ধ তার না ছিল জবান
সবুর করিয়া রইত আল্লাহর মুমিন ॥
এক মর্দ কাঠুরিয়া কাষ্ঠ আনিবারে
কুড়াল লইয়া গেল সেই তো পাহাড়ে ॥
যাইয়া উঠিল এক দরক্ত উপ
সেই তো সাপের উপরে পড়িল নজর ॥
দেখিতে দেখিতে এক হরিণ আসিয়া শু
ঙ্গিতে লাগিল সাপের মুখে মুখ দিয়া ॥
তাকে ধরিয়া সাপ করিল আহার
দেখো আমার মন কুদরত আল্লার ॥
আল্লার কুদরত মর্দ বুঝতে পারিয়া
আকুল হইয়া রয় কুড়ালী ছাড়িয়া ॥
গাছ হইতে উতরিল জমিন উপর
সবুরের রশি এক বান্ধিল কোমর ॥
তাওয়াক্কুলের তাজ দিল তুলিয়া মাথায়
ফকির হইয়া গেল আল্লাহর রাহায় ॥
কসম খাইল মর্দ দিলে আপনার
ফিকির করিয়া রুটি না খাইব আর ॥
আল্লাহ দেয় যদি তবে তো খাইব
নহে তো আল্লার রাহে মরিয়া যাইব ॥
মনে মনে মনকে বুঝায় আপনার
অরণ্য-জঙ্গলেতে হইল রাহাদার ॥
হাঁটিতে হাঁটিতে যে হইয়া গেল সাম
এক দক্তের তলে করিল মোকাম ॥
অধমে আরজ করি শোনো হে এয়ার
ত্রিপদীতে গাই এবার ছাড়িয়া পয়ার ॥
বসিয় তত্ত্বের তলে,      সেই মর্দ কান্দিয়া বলে
আয় আল্লাহ পরোয়ার দেগার
রাখো মারো যাহা করো,      সকলই করিতে পারো
মোর পানে চাও একবার ॥
এই রূপে সারা রাত,      কহিল অনেক বাত
দরগাতে সুপিয়া দিল জান
কুদরত কামাল সাঁই,      মাল মাত্তার কমি নাই
বখশীলেন মেওয়ার বাগান ॥
সেই বাগানের ফল,      রসে অতি টলমল
খাইতে বহুত মজাদার
সেই রঙ দিয়াছে তারে,      ছিদরিফ হইতে বারে
বিচি তার ভিতরে সোনার
ফল ধরে থরে থরে,     কোন ফল হইয়াছে চালি
কোন গাছে ফুল ধরা, যেমন আসমানের তারা ॥
কোন ফুল হইয়াছে কলি, কুদরতী হাওয়ার জুরে
আপনি ঝরিয়া পড়ে
সেই মর্দ বসিয়াছে তায়, দোগানা নমাজ পড়ি
আল্লার লগে দোস্ত জুরি, তুলিয়া তুলিয়া ফল খায় ॥
ভাবিয়া শেখ ভানু বলে      সবুরীতে মেওয়া ফলে
আয় মন জানিতে এছাই
সবুরের সেই বাণী,     মধ্যে গাঙ্গে টানাটানি
আখেরেতে হইবে তওয়াই ॥
শোনো হে আমার মন ভজো আল্লাহ নিরঞ্জন
নবির কলেমা করো সার।
এমন দয়াল নবি দীন দুনিয়া খুবি
আখেরে করিয়া নিবেন পাড় ॥
সাফায়েত করিবা যবে দত্ত মোবারকে নবি
পিলাইবেন সহদেব জাম।
বৃথা কাজে দিন গেল, কিছু না নিলয় হইল
আসিয়াছ যাইবে কোথায় ॥
এই দম ছাড়িয়া গেলে, যাইবে মাটির তলে
যাইয়া করিবে হায় হায়।
বাহির হইতে জান হবে বড়ো পেরেশান
কেলেশ হইবে অতিশয়।
যেমন করিবে কাম, পাইবে তেমনি দাম
মন তুমি জানিও নিশ্চয়।
শুনো হে অবুঝ মন, গেল গেল এ জীবন
সাধের তরি মারিয়াছে ভাটি।
না ধরিলে সুজন কাণ্ডারি
অধীন ভানু বলে, ধইরে পিরের করো
কান্দিয়া কান্দিয়া যাইব জীবন ভর ॥
সখি চল গো তরা,
শ্রীকুলাতে অধর যাবে ধরা
বাজে তার অনুষঙ্গী, জলতরঙ্গী, মোহন বাঁশি গো
ও সখি অধর যাবে ধরা, চল গো সখি তরা
সপ্ততালা রূপের খেলা, শ্রীকুলার বাজার
বসাইছে খেওয়া নদীর পাড়ে হায় গো
সেথায় নাসুত, মালকুত, লাহুত, জবরুত
সবই তৈরি বৈঠন করা
ও সখি অধর যাবে ধরা, চল গো সখি তরা ।।
আজব লীলা করছে সাঁই নিরঞ্জন
চল যাই পাইনি দরশন হায় গো
ও তার চরণ তলে, নয়ন জলে হাল বিহালে কান্দব মোরা
ও সখি অধর যাবে ধরা, চল গো সখি তরা ।।
শেখ ভানু বলে, শামা জ্বলে দেখগো সখি
হইয়া প্রেমেরই পতঙ্গ হায় রে
যেমন আকাশেতে চন্দ্ৰ উদয়,
চতুরদিকে লক্ষ তারা
ও সখি অধর যাবে ধরা, চল গো সখি তরা ।।
সদায় মন উচাটন, ভাবছো বইসে কি আশায়
প্রাণনাথ মোর বিরাজে কোথায় ॥
মন রে বারো জিলা, ছয়টি থানা
আছে এ চৌদ্দ পোয়ায়।
আঠার পরগনার মাঝে
তার অন্বেষণ কেবা পায় ॥
মন রে দিবানিশি বাজায় বাঁশি,
আসিয়া কদম্ব তলায় ॥
বসিলে ত্রিপিনির ঘাটে
দরশন পাবে তায় ॥
মন রে অধীন শেখ ভানু বলে,
বন্ধুর দেখা পাওয়া দায় ॥
পাইতে পারো, জিতে মরো
বিকাইয়া গুরুর পায় ॥
সুজন পিরিতি কভু ভুলিও না ভাই
রাখতে পারো তবে করো, নইলে কইর না তাই ॥
সত্য প্রেমের প্রেমিক যারা, প্রেম সাগরে ডুবছে তারা
ধইরাছে মাণিক্যের ভরা, আখেরাতের কামাই
যে যারে অন্তরে রাখে সে কভু না ভুলে তারে
না থাকে নফছের ফাঁকে, রাজি থাকেন সাঁই ॥
অধীন শেখ ভানু বলে, কু কাজেতে খুয়াইলে তনু
হারাইলে মনের মানু, কপালেতে ছাই
সুজন পিরিতি কভু ভুলিও না ভাই ।।
সোনা চৌহারি মদিনা
কত কোটি কোটি জ্বলছে শামা
কত রঙ্গের ঝাড়খানা ॥
দেখিতে এমন শোভা
কোটি চন্দ্ৰ যেন আভা গো
পূর্বে উদয় ভানু, হবে না তার তুলনা
কত রঙ্গের ঝাড়খানা
সোনার মদিনা পুড়ে বাদ্য বাজে নানা সুরে গো
পুছিলে মুর্শিদের কাছে জানা যাবে ঠিকানা
কত রঙ্গের ঝাড়খানা ।।
মদিনার চান্দুয়া তলে কত রঙ্গের ঝাড় বাতি জ্বলে গো
সিয়া, সফেদ, লাল, জরদ
দেখলে জিগর দেওয়ানা
কত রঙ্গের ঝাড়খানা ।।
অধীন শেখ ভানু বলে, শাহ মিরান যাহা বলে গো
দয়াল নবি দ্বীনের কুপি বিরাজ করে মদিনা
কত রঙ্গের ঝাড়খানা।
সোনা ভাই রে, তোর লাগিয়া সদায় মন ঝুরে
পিঞ্জিরা ছাড়িয়া যাইবায় রে সোনা ভাই
তোর লাগিয়া সদায় মন ঝুরে রে ॥
যে পথে আইছ ভাই রে সেই পথে যাইও
ও ভাই, সেই পথে যাইও।
হাতও নাই পাও নাই রে ভাই
ও ভাই জগতে বেড়াও
নয়টি বন্দরে ভাই রে করো বেচাকিনা
ও ভাই করো বেচাকিনা
কোথায় বসতি করো রে ভাই, না পাইলাম ঠিকানা রে ॥
না আছো পিঞ্জিরায় রে ভাই, না আছো বাহিরে
না জানিলে ইহার ভেদ, কি জানি হবে হাশরে রে
অধীন শেখ ভানু বলে ও ভাই, আমার বিদ্যা বুদ্ধি কিচ্ছু নাই
হাশরের ময়দানে কোন সন্ধানে তোমার দেখা পাই রে।।
সৈরত সাগরে সাধু ডুবলে পাবে কত ধন
হীরালাল পরশমণি কাঞ্চা সোনা লক্ষ মণ।
পাঁচ চিজেতে মুসলমানি, কোরআনে খবর শুনি
ওরে জিজ্ঞাসিলে তার মাইনি, শতে টিকে কতজন?
ষষ্ঠ কামে আরকান সার, রোজা নমাজ কলেমা পড়া
হজ যাকাত আদায় করা, যারে আল্লাহ দিছে ধন।
কুরমা পোলাও পঞ্চ অমৃত, খাবার জিনিস ঘরে কত
জন্মাবধি না খাও যদি ঘরে থাকা অকারণ।
শরিয়তে তরিকতে হকিকতে মারিফতে
যেজন করিল ফতে লাভ করিল নিরঞ্জন।
শরিফতের সিঁড়ি ছাড়া উপর তালায় যায় না ছড়া
তবে শুধু মারিফতি করা মানা করে শাহ মিরান।
ওজু গোসল ঠিক না করে পটকা পিরান তাহবন্দ পৈরে
বৃথা নমাজ রোজা কইরে ভানু বলে ভুলাও মন
সৈরত সাগরে সাধু ডুবলে পাবে কত ধন।।
হইল না হইল না মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হইল না রে
দেখিলাম ভ্রমণ করি কোন স্থানে পাই না তারে ॥
কদম্বেরই তলে আসি কেবা জানি বাজায় বাঁশি
মন লয় দেইখা আসি, কাল ননদী দেয় না মোরে ॥
বাজে হাউসের বাঁশি, কানায় কানায় কারিগরি
আহা আহা মরি মরি, দেখলে না মন পির ধরি ॥
পির দিবেন মহামন্ত্র, ঐ গুণে চিনবে যন্ত্র
লাগবে না আর তন্ত্র-মন্ত্র, হাইল ঘরে মিলবে তারে ॥
হাউসের বেচা কিনা ‘হিরা-লাল, পান্না-সোনা’
যে পাইল সে হইল দোনা, ডুব দিয়াছে প্রেম সাগরে ॥
ভানু বলে প্রেমিক যারা তার হাতে সে পড়বে ধরা
কাঙালের মাণিক্যে ভরা পাইলে দুঃখ যাবে দূরে ॥
হাটের গোলমালে গিয়াছি ভুলে, কিছু না পড়ে মনে।
কি কিনতে বইলা ছিল কে জানে ॥
ভবের বাজারেতে পাঠায় যে জনে,
একটি বস্তুর পাঁচটি নাম বিকায় কোনখানে,
ও তারে নিয়া যাব দেখাই বারে, আরে দেখিয়া তুষ্ট হবে সেই জন।।
কানা বেগুন খরিদ করিও না,
কাটতে সারতে সকলই যাবে, বস্তু রইবে না ॥
ও তারে নিয়া যাবে দেখাইবে রে, গোমড়া হইবে সেই জনা ॥
অধীন শেখ ভানু বলে, ভবের বাজার ভেঙে গেলে, কি হবে উপায় ॥
হারাইলে ধন মিলবে না, মন রে আরে ভাঙলে মাথা পাষাণে ॥
হেরি মাত্র প্রাণটি নিল মুই জানি আর সে জানে
ঐ বনে কি হেরিলাম গো আসিয়া ফুলবনে ।।
কি রূপ হেরিলাম সই গো হইয়া অজ্ঞান,
একটি ফুলের বাগান হু হু হু ॥
কোটি কোটি ফুল ফুটাইছে ভ্রমর আইসা গোপনে
একটি ফুলের চারটি রঙ সিয়া সফেদ লাল আর তাতে
একটি জরদ মিছাল হু হু হু ॥
এ ফুল ধরতে গেলে না দেয় ধরা, বাহিরে যায় আপনে
এই বাগানের অলি যদি ধরতে পারো মন
তোমার তবে সাফল্যের এ জীবন হু হু হু ॥
সত্য যারা ইশকে মরা, ধরছে ভ্রমর সাধনে
ভানু বলে মন ভুলা তোর দুঃখের কপাল
দুঃখ রইল তোরই চিরকাল হু হু হু
স্বপনে যেমন মানিক পাইয়া হারাইলাম জাগরণে
ঐ বনে কি হেরিলাম গো আসিয়া ফুল বনে ।।
***
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন