১৩. স্বামীর কাজে প্রীতির বন্ধন গড়ে তুলুন

ডেল কার্নেগি

১৩. স্বামীর কাজে প্রীতির বন্ধন গড়ে তুলুন

বেশ কিছুদিন আগের কথা। হঠাৎই আমাদের এক পুরনো বন্ধু দেখা করতে এসেছিলেন। তাঁকে দেখে খুব ক্লান্ত বলে মনে হল। তাঁকে প্রশ্ন করতে তিনি বললেন, ‘খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েছি, কী করা উচিত ঠিক করতে পারছি না। কয়েক মাস ধরে ওভার টাইমে কাজ করছি, এর কারণ হল আমাদের প্রতিষ্ঠানের একটা নতুন শাখা খোলার চেষ্টা হচ্ছে। খুব বেশি পরিশ্রম হচ্ছে, বাড়ি ফিরতে খুবই রাত হয়। স্ত্রী খুবই রাগারাগি করে, রাত করে বাড়ি ফেরার জন্য। তার মত হল, বিকেলে সময় মতো ফিরতে না পারার জন্য আমার স্বাস্থের ক্ষতি হচ্ছে। অথচ এই নতুন শাখা খোলা আমাদের দুজনের পক্ষেই অত্যন্ত দরকারি। কিন্তু দুঃখের কথা হল আমার স্ত্রী হেলেনকে কিছুতেই কথাটা বোঝাতে পারছি না। স্ত্রীর কথা মনে করে আমি কিছুতেই নিজের কাজে মন দিতে পারছি না।’

এই বন্ধুটির মতো সমস্যা হয়তো আজ অনেকেরই। ঠিক এই রকম সমস্যার সম্মুখীন আমাকেও এক সময় হতে হয়েছিল, যখন আমার স্বামী একখানা বই লিখছিলেন। ওই সময় আমাদের দুজনের মধ্যে কার বেশি কষ্ট হয়েছিল সেটা প্রায় জানতেই পারি নি। যদিও আমার স্বামী বাড়িতে থেকেই তাঁর লেখার কাজ করতেন, তাহলেও দেখতাম লাইব্রেরীতে কিছু না লিখে তিনি শুধু চুপচাপ বসে চিন্তা করে চলেছেন। আর গভীর রাত অবধি তিনি সেটা করে যেতেন।

এই অবস্থার মধ্যে পড়ে আমরা একসঙ্গে কোনো সামাজিক কাজকর্মে বা অনুষ্ঠানে যেতে পারতাম। কোনো জায়গায় যাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমার কাছে সময়টা নির্জন বাস বলেই মনে হতো। তবে আমার একান্ত আপনজন ডেল কার্নেগীর খাওয়া-দাওয়া আর বিশ্রামের কোনো ব্যাঘাত না হয় সেদিকে আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখেছিলাম।

আমি অহঙ্কার করে বলতে চাই না তবে কথা ঠিক যে কোনো কাজ স্বামীর কাছে যতই চিত্তাকর্ষক বা প্রয়োজনীয় মনে হোক না কেন, কোনো স্ত্রীর পক্ষে সেটা অম্লানবদনে মেনে নেওয়া নেহাতই কঠিন কাজ।

তবুও একজন স্ত্রী হিসেবে এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হল, অসুবিধা যতই হোক যে কোনো স্ত্রীরই কর্তব্য হবে মুখ বন্ধ রেখেই নিঃশব্দে আমাদের স্বামীর দেহরক্ষী হয়ে তাদের নৈতিক ভাবধারা বজায় রাখায় সহায়তা করে যাওয়া, আর পাশে থাকা।

স্ত্রী হিসাবে আমাদের দেখতে হবে যে কীভাবে স্বামীদের কাজে সাহায্য করতে পারি যাতে স্বামীরা নির্বিঘ্নে তাদের কাজ করতে পারেন।

কয়েকটি সুন্দর মতবাদের আমরা উল্লেখ করবো যা, যে কোনো মানুষের পক্ষেই এগুলো প্রযোজ্য।

মতবাদগুলি হল :

১। যখন স্বামী কোনো কঠিন পরিশ্রমসাধ্য কাজে নিযুক্ত থাকবেন, তখন স্ত্রী হিসাবে আপনার কর্তব্য হবে তাকে উপযুক্ত খাদ্য দেওয়া। তাঁকে এই সময় একেবারে বেশি খাদ্য না দিয়ে অল্প খাবার কয়েকবার দিতে হবে। খাদ্য যেন সহজ পাচ্য হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। খাদ্য হিসাবে এই সময় সবচেয়ে ভালো হতে পারে টাটকা ফল, যেমন–আপেল, ফলের রস, আতাফল, স্যালাড, গাজরের তৈরি খাবার ইত্যাদি।

২। স্বামীর স্বাস্থ্য সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল থাকার সময় নিজের কথা ভুলে গেলে চলবে না। নিজের শরীরের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, নিজেকে সকলের কাছে প্রিয় করে তুলতে হবে। স্বামীর পরিচয়েই নিজেকে পরিচিত করে তুলতে চেষ্টা করতে হবে। অবসর সময়ে নিজেকে পড়াশুনা, গান-বাজনার মধ্যে ব্যস্ত রাখতে হবে।

৩। আপনার আত্মীয়-স্বজন আর বন্ধু-বান্ধবদের বুঝিয়ে বলতে হবে যে, কেন আপনার স্বামী বা আপনি মেলামেশায় অসুবিধা বোধ করছেন। এটা যে অল্প সময়ের জন্য সেটা তাদের বুঝিয়ে দিন। আর স্বামীর কাজে আপনার যে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে সেটা তাদের উপলব্ধি করান।

৪। আপনার স্বামীকেও বোঝাতে হবে যে, তাঁর পক্ষে আপনার সাহায্য ও সহযোগিতা কতখানি জরুরি। স্বামীকে উপলব্ধি করতে দিন যে আপনি সর্বদাই তাঁর পাশে আছেন। এবং পাশে থাকার প্রয়োজনীয়তাও আছে।

৫। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে সমস্ত ব্যাপারটাই সম্পূর্ণভাবে সাময়িক। আপনি যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, আপনি এই পরিস্থিতি বেশ আয়ত্তে আনতে পেরেছেন, তাহলে বুঝবেন এই বিরাট কর্মযজ্ঞে আপনি সফল হতে পেরেছেন। এখন আপনারা স্বামী-স্ত্রী এক নতুন জীবনে প্রবেশ করবেন।

সকল অধ্যায়

১. ০১. সাফল্যের প্রথম সিঁড়ি
২. ০২. এক কাজে সফল হলে আরেক কাজে নজর দিন
৩. ০৩. উদ্দীপনা আর স্ত্রীর দায়িত্ব
৪. ০৪. ছয়টি উদাহরণ
৫. ০৫. মানসিক ভাবধারা গঠনের কথা শুনুন
৬. ০৬. স্বামীর কাজে সহায়তা করুন
৭. ০৭. ব্যর্থ হয়েও সাফল্যের আশা ত্যাগ করবেন না
৮. ০৮. স্বামীর কাজে সহায়তা করুন ও জেনে নিন
৯. ০৯. স্বামীর সেক্রেটারির প্রতি কী ধরনের ব্যবহার করবেন
১০. ১০. স্বামীকে জ্ঞানার্জনে উৎসাহ দিন
১১. ১১. হঠাৎ দুর্যোগে মন শক্ত রাখুন
১২. ১২. নিজেকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলুন
১৩. ১৩. স্বামীর কাজে প্রীতির বন্ধন গড়ে তুলুন
১৪. ১৪. সাধারণ কাজে সমন্বয় কীভাবে করবেন
১৫. ১৫. স্বামীর কাজে বিরক্ত না হওয়ার উপায়
১৬. ১৬. আপনার কাজ কি স্বামী-স্বার্থ বা রুচি বিরোধী
১৭. ১৭. এক তরুণী স্ত্রী ও তার স্বামীর কাহিনী
১৮. ১৮. পুরুষেরা কেন গৃহত্যাগ করে
১৯. ১৯. স্বামীর কাজে মাথা গলাবেন না
২০. ২০. স্বামীর কাজে উৎসাহ দিন
২১. ২১. পরিবর্তনে ভয় পাবেন না
২২. ২২. স্বামীকে সুখী করার চেষ্টা করুন
২৩. ২৩. দাম্পত্য জীবনে একে অপরের সুখ-দুঃখের সাথী হোন
২৪. ২৪. স্বামীকে উৎসাহ দিন
২৫. ২৫. সমস্ত কাজে উৎসাহী হয়ে উঠুন
২৬. ২৬. কীভাবে স্বপ্নের নীড় গড়বেন
২৭. ২৭. ঘরের টান একান্তই মধুর
২৮. ২৮. অযথা সময় নষ্ট করবেন না
২৯. ২৯. যা বলার সংক্ষেপে বলুন
৩০. ৩০. স্বামীকে জনপ্রিয় করার কৌশল
৩১. ৩১. স্বামীর গুণ ও দোষ
৩২. ৩২. বত্রিশ স্বামীর স্বাস্থ্য ও সম্পদ রক্ষা করুন আয় বুঝে ব্যয় করুন
৩৩. ৩৩. স্বামীর জীবন আপনারই হাতে
৩৪. ৩৪. ভালোবাসার মান উন্নত করুন

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন