ড্যান ব্রাউন
উইলিয়াম পিকারিং গয়ার ডেকে দাঁড়িয়ে হতবিহ্বল হয়ে চারপাশের ভীতিকর দৃশ্যটা দেখতে পাচ্ছে। একটা ঘূর্ণির মাঝখানে গয়া। সেই ঘূর্ণির বিস্তৃতি হবে প্রায় কয়েকশ গজ। সেটা দ্রুতই বাড়ছেই। তার চারপাশটা এখন আস্তে আস্তে নিচে নেমে যাচ্ছে যেনো। পিকারিং তার চারপাশে বিরাট গহ্বরটা দেখে বিমূঢ় হয়ে রইলো। যেনো গহ্বরটা কোনো মহাকাব্যের ক্ষুধার্ত দেবতা, বলির জন্য হা করেছে।
আমি স্বপ্ন দেখছি, পিকারিং ভাবলো।
আচমকা, বিস্ফোরণের মতো সেই গর্তটার কেন্দ্র থেকে আকাশের দিকে উৎক্ষিপ্ত হলো একটা প্রস্রবন-ঝর্ণা।
সঙ্গে সঙ্গে, কুণ্ডলীটার দেয়াল একেবারে খাড়া হয়ে গেলো। বৃত্তটা এবার খুব দ্রুত বাড়তে লাগলো। চারপাশের পানি টেনে আনতে লাগলো যেনো। গয়া টালমাটাল হলে পিকারিং ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যর্থ হলো। হাটু গেড়ে বসে পড়লো সে। যেনো ঈশ্বরের সামনে সে একটি বাচ্চা ছেলে। নিচের বাড়ন্ত গহ্বরটার দিকে তাকালো পিকারিং।
তার শেষ চিন্তাটি ছিলো তার মেয়ে ডায়নাকে নিয়ে। সে প্রার্থনা করলো তার মেয়ে যেনো মৃত্যুর সময় এ রকম ভীতিকর কিছু দেখে না থাকে।
সমুদ্রের ঘূর্ণির বাস্পের চোটে হেলিকপ্টারটা দুলে উঠলে টোল্যান্ড রাচেল একে অন্যকে জড়িয়ে ধরলো। পাইলট কোনোভাবে কপ্টারটা নিয়ন্ত্রণে নেবার চেষ্টা করছে। সে কপ্টারটা ডুবন্ত গয়ার ওপর স্থির রাখার চেষ্টা করলো। বাইরে তাকিয়ে তারা দেখতে পেলো উইলিয়াম পিকারি-পাতি হাঁস-কালো কোট পরে হাটু গেড়ে বসে আছে ডুবন্ত গয়ার ডেকের ওপর।
গয়ার নোঙরটা একটা হ্যাঁচকা টান খেয়ে ছিঁড়ে গেলে জাহাজটা পাক খেয়ে কুণ্ডলীর। ভেতরে চলে গেলো। সমুদ্রের নিচে চলে যাওয়ার সময়ও সেটার বাতিগুলো জ্বলছিলো।
ওয়াশিংটনের সকালটা পরিষ্কার আর নির্মল।
একটা দমকা বাতাস ওয়াশিংটন মনুমেন্টের শুকনো পাতাগুলো উড়িয়ে দিলো। বিশ্বের সবচাইতে বড় অবিলিস্কটা তার নিচের পুলের পানিতে প্রতিফলিত হয়। কিন্তু আজকের সকালটা, একদল রিপোর্টারের হৈ-হল্লার জন্য হট্টগোলের সৃষ্টি হলো। সবাই মনুমেন্টের নিচে জড়ো হয়েছে।
নিজেকে ওয়াশিংটনের চেয়েও বড় মনে করছে সিনেটর সেক্সটন। তিনি লিমোজিন থেকে সিংহের মতো নেমে তার জন্যে অপেক্ষায় থাকা মনুমেন্টের নিচে জড়ো হওয়া সাংবাদিকদের কাছে গেলেন। দেশের সবচাইতে বড় দশটি নিউজ মিডিয়া নেটওয়ার্ককে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এই বলে যে, তাদের জন্যে যুগ সেরা কেলেংকারী হাজির করবেন তিনি।
মৃতের গন্ধ পেলে যেমন শকুনের দল ছুটে আসে, সেক্সটন ভাবলেন।
সেক্সটনের হাতে সাদা এনভেলপগুলো। প্রতিটাতে মনোগ্রামের সিল দেয়া আছে। তথ্য যদি শক্তি হয়, তবে সেক্সটন এখন পারমাণবিক বোমা বহন করছেন।
সেক্সটন পোডিয়ামের সামনে এসে দাঁড়ালেন। রিপোর্টাররা দ্রুত তাদের ফোল্ডিং চেয়ারে বসে পড়লো। পূর্ব দিকে, সূর্যটা এইমাত্র ক্যাপিটল হিলের ওপরে উদিত হয়েছে। সেক্সটনের ওপর একটা গোলাপী আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে সেটা, যেনো স্বর্গ থেকে আসছে।
পৃথিবীর সবচাইতে ক্ষমতার ব্যক্তি হয়ে ওঠার জন্য চমৎকার একটি দিন।
“শুভ সকাল, লেভিস এ্যান্ড জেন্টেলমেন,” সেক্সটন বললেন। তার সামনের ডায়াসে এনভেলপগুলো রেখে দিয়ে। “আমি এটা যতোটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত করবো। আপনাদের কাছে যে তথ্যটা এখন উপস্থাপন করব সেটা সত্যি বলতে কি খুবই ভয়াবহ। এইসব এনভেলপে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের একটি জালিয়াতির প্রমাণ রয়েছে। আমি এটা বলতে লজ্জিত হচ্ছি যে, আজ সকালে প্রেসিডেন্ট আমাকে ফোন করে ভিক্ষা চেয়েছেন-হ্যাঁ, ভিক্ষাই চেয়েছেন-এসব প্রমাণ নিয়ে যেনো আমি জনসম্মুখে না যাই।” তিনি একটু মাথা ঝাঁকালেন। “তারপরও, আমি হলাম এমন একজন মানুষ, যে সত্যে বিশ্বাস করে। সেটা যতো বেদনাদায়কই হোক না কেন।
প্রেসিডেন্ট সেক্সটনকে আধঘণ্টা আগে ফোন করে সব খুলে বলেছিলেন। হার্নি রাচেলের সঙ্গে কথা বলেছেন, সে এখন কোথাও একটা নিরাপদ বিমানে আছে। অবিশ্বাস্য ব্যাপার যে, এই ঘটনায় নাসা এবং প্রেসিডেন্ট কেবল নির্দোষ দর্শক মাত্র। এই ষড়যন্ত্রটির মূল পরিকল্পনাকারী হলো উইলিয়াম পিকারিং।
সেটাতে কিছু যায় আসে না, সেক্সটন ভাবলেন। এতে করেও জাখ হার্নির পতন হবে।
সেক্সটনের ইচ্ছে হলো সে যদি উড়ে হোয়াইট হাউজে গিয়ে এখন প্রেসিডেন্টের মুখটা দেখতে পেত। সেক্সটন এখনই হার্নির সাথে হোয়াইট হাউজে গিয়ে দেখা করতে রাজি হয়েছিলেন, কীভাবে জাতিকে উল্কাখণ্ডের ব্যাপারে অবহিত করা যায়। হার্নির হয়তো ইতিমধ্যে টিভির সামনে দাঁড়িয়ে সব খুলে বলছেন, কিন্তু তাতে করেও দুর্ভাগ্যটা এড়ান যাবে না।
বন্ধুরা আমার, সেক্সটন বললেন, সবার দিকে তাকিয়ে। “আমি এটা খুব ভালোমতোই বিচার করে দেখেছি। আমি প্রেসিডেন্টকে সম্মান জানিয়ে তথ্যটা গোপন রাখার কথা বিবেচনা করেছিলাম। কিন্তু আমার হাতে এখন যা আছে সেটা আমি করবই।” সেক্সটন দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। “সত্য, সত্যই। আমি এই সব তথ্য সম্পর্কে নিজের মতামতের কোনো রঙ লাগাবো না। আমি এটা আপনাদের কাছেই দিয়ে দিচ্ছি।”
দূরে সেক্সটন একটা হেলিকপ্টারের শব্দ শুনতে পেলেন। তার কিছুক্ষণের জন্য মনে হয়েছিল প্রেসিডেন্ট হয়তো হোয়াইট হাউজ থেকে ভীত হয়ে উড়ে চলে এসেছেন এই সংবাদ সম্মেলনটা স্থগিত করার আশায়। সেটা হবে আরো খারাপ, সেক্সটন ভাবলেন। তাহলে হার্নি কতো বেশি অপরাধী হয়ে দেখা দেবেন?
“আমি এটা আনন্দের সাথে করছি না।” সেক্সটন বলতে শুরু করলেন। কিন্তু আমি এটা আমার দায়িত্ব বলে মনে করি যে, আমেরিকানদের সাথে যে মিথ্যাচার করা হয়েছে সেটা তাদের জানার অধিকার রয়েছে।”
তাদের ঠিক ডানে, এসপ্লানেডের ওপর হেলিকপ্টারটা নেমে এলো। সেক্সটন যখন তাকিয়ে দেখলেন, অবাক হলেন, সেটা প্রেসিডেন্টের নয়, বরং কোস্ট গার্ডদের একটা হেলিকপ্টার।
হতবাক হয়ে সেক্সটন দেখলেন দরজা খুলে কমলা রঙের কোস্টগার্ড জ্যাকেট পরে একটি মেয়েটি নেমে আসছে, যেনো সে যুদ্ধে আছে। প্রেস এরিয়ার দিকেই আসছে সে। কিছুক্ষণের জন্য সেক্সটন তাকে চিনতে পারলেন না। তারপরই চিনতে পারলেন।
রাচেল? তিনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। সে এখানে কি করতে এসেছে?
জনসমাগমে একটা ফিসফাস্ শুরু হয়ে গেলো।
মুখে একটা চওড়া হাসি এনে সেক্সটন প্রেস এরিয়ার দিকে আবার ফিরলেন। ক্ষমা প্রার্থনাসূচক হাত ওঠালেন। “আমাকে এক মিনিট সময় কি দেবেন? আমি খুবই দুঃখিত!” তিনি একটা আনন্দের হাসি মুখে আঁটলেন।”পরিবার সবার আগে।”
কয়েকজন রিপোর্টার হাসলো।
তার মেয়ে যেভাবে সামনের দিকে এগিয়ে আসছে তাতে করে সেক্সটন মনে করলেন বাবা মেয়ের এই পূর্ণমিলনিটা একান্তই হওয়া জরুরি। দুঃখের বিষয় এখানে একান্তে কথা বলার ব্যাপারটি একটু কষ্টকরই। সেক্সটনের চোখ তার ডান দিকের পার্টিশানটার দিকে গেলো।
মুখে হাসি এঁটে সেক্সটন তার মেয়ের দিকে হাত নেড়ে সামনের দিকে এগিয়ে এসে রাচেলকে পার্টিশানের আড়ালে নিয়ে গেলেন।
“হানি?” রাচেলকে দু’হাত বাড়িয়ে হাসি মুখে বললেন। “খুবই অবাক হয়েছি!”
রাচেল সামনে এসে কষে তার গালে একটা চড় মারলো।
পার্টিশানের আড়ালে রাচেল ঘৃণার দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। সে তাকে চড় মারলেও সেক্সটন সেটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। নিজেকে তিনি কোনোরকম নিয়ন্ত্রনে রেখে তার দিকে স্থির চেয়ে রইলেন।
তাঁর কণ্ঠটা শয়তানের মত কোনোলো, “তোমার এখানে আসা উচিত হয়নি।”
রাচেল তার চোখে প্রচণ্ড ক্রোধ দেখতে পেলেও এই প্রথমবার সে ভীত হলো না। “আমি তোমার কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম, আর তুমি কিনা আমাকে ফিরিয়ে দিলে! আমি প্রায় মরতে যাচ্ছিলাম!”
“তুমি অবশ্যই ভালো ছিলে,” তাঁর কণ্ঠটাতে নিরাবেগ।
“নাসা নির্দোষ!” সে বললো। “প্রেসিডেন্ট তোমাকে সেটা বলেছেন! তুমি এখানে কী করতে এসেছো?” রাচেল এখানে আসার আগে প্রেসিডেন্ট তার বাবা এমনকি ভেঙে পড়া গ্যাব্রিয়েল এ্যাশের সাথেও ফোনে কথা বলেছে। “তুমি জাখ হার্নিকে কথা দিয়েছে, তুমি হোয়াইট হাউজে যাবে!”
“যাবোই তো,” তিনি শয়তানী হাসি দিয়ে বললেন। “নির্বাচনের দিন।”
এ লোকটা রাচেলের বাবা হয় সেই কথাটা ভাবতেও রাচেলের ঘেন্না হলো। “তুমি যা করছে সেটা পাগলামী।”
“ওহ” সেক্সটন ভুরু তুললো। তিনি পোডিয়ামের দিকে তাকিয়ে সেখানে রাখা এনভেলপগুলোর দিকে তাকালেন। “এসব এনভেলেপের তথ্য কি তুমিই আমার কাছে পাঠিয়েছে, রাচেল। তুমি। প্রেসিডেন্টের রক্ত তোমার হাতে লেগে আছে।”
“যখন আমার তোমার সাহায্যের দরকার ছিলো তখন ওগুলো আমি ফ্যাক্স করেছি। তখন আমি ভেবেছি প্রেসিডেন্ট এবং নাসা অপরাধী!”
“এইসব প্রমাণপত্রেও কিন্তু দেখা যায় নাসা-ই অপরাধী।”
“কিন্তু তারা তো অপরাধী নয়! তারা নিজেদের ভুল স্বীকার করার আশা করতেই পারে। তুমি ইতিমধ্যেই নির্বাচনে জিতে গেছ। জাখ হার্নি শেষ হয়ে গেছেন! তুমি সেটা জানো। লোকটাকে মর্যাদাপূর্ণভাবে যেতে দাও।”
সেক্সটন আর্তনাদ করে উঠলেন। “কী ছেলেমানুষীরে বাবা! এটা নির্বাচনে জেতার ব্যাপার নয়, রাচেল। এটা ক্ষমতার ব্যাপার। প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিয়ে ওয়াশিংটনের নিয়ন্ত্রণে নেয়া, যাতে তুমি কিছু করতে পারো।”
“কিসের বিনিময়ে?”
“এতোটা নিরপেক্ষ হয়ো না। আমি ধু প্রমাণগুলো উপস্থাপন করছি। জণগণই সিদ্ধান্ত নেবে, কে দায়ী।”
“তুমি জানো, এটা কেমন দেখাবে।”
তিনি কাঁধ ঝাঁকালেন। “হয়তো নাসার সময় এসে গেছে।”
সেক্সটন টের পেলো প্রেস এরিয়াতে সবাই অস্থির হয়ে উঠেছে।
“আমি সেখানে যাচ্ছি,” তিনি বললেন। “আমাকে সংবাদ সম্মেলন করতে হবে।”
“আমি তোমাকে তোমার মেয়ে হিসেবে জিজ্ঞেস করছি,” রাচেল অনুনয় করলো। এটা করো না। তুমি কি করছে সেটা একবার ভাবো, এর চেয়েও ভালো রাস্তা রয়েছে।”
“আমার জন্যে নয়।”
প্রেস এরিয়া থেকে তর্জন গর্জন কোনো গেলো। সেক্সটন চেয়ে দেখলো একজন মহিলা রিপোর্টার দেরি করে এসেছে, সে পোডিয়ামের কাছে এসে মাইক্রোফোন লাগাচ্ছে।
এই সব গর্দভরা সময় মতো কেন আসতে পারে না? সেক্সটন ক্ষেপে গিয়ে মনে মনে বললেন।
পোডিয়ামে মাইক্রোফোন লাগাতে গিয়ে মহিলা রিপোর্টার ডায়াসে রাখা এনভেলপগুলো ফেলে দিলো মাটিতে।
ধ্যাততারিকা! সেক্সটন ওখানে ছুটে গেলেন। তিনি যখন পৌঁছালেন তখন মেয়েটা হাঁটু গেঁড়ে এনভেলপগুলো মাটি থেকে তুলছে। সেক্সটন তার মুখটা দেখতে পায়নি। কিন্তু সে অবশ্যই কোনো নেটওয়ার্কেরই হবে-তার গলায় এবিসি’র একটা প্রেস-পাস ঝোলানো আছে।
গর্দভ কুত্তি, সেক্সটন ভাবলো। “আমি নিচ্ছি,” তিনি মেয়েটার হাত থেকে এনভেলপগুলো ছো মেরে নিয়ে নিলেন।
“দুঃখিত…” মেয়েটা বললো। তারপর লজ্জিত হয়ে নিজের আসনে ফিরে গেলো।
সেক্সটন এনভেলপগুলো গুণে দেখলো দশটিই আছে। তিনি সেগুলো হাতে তুলে নিয়ে মুচকি হেসে বললেন। “কেউ আঘাত পাবার আগে, মনে হয় এগুলো আমার কাছেই থাকা ভালো।”
সবাই হেসে ফেললো।
সেক্সটন টের পেলো তার মেয়ে তার কাছেই দাঁড়িয়ে আছে।
“এটা করো না।” রাচেল তাকে আবারো বললো। “তুমি পস্তাবে।”
সেক্সটন তার কথা পাত্তাই দিলেন না।
“আমাকে বিশ্বাস করো,” রাচেল বললো। “এটা ভুল হচ্ছে।”
সেক্সটন নির্বিকার রইলেন।
“বাবা,” করুণভাবে মিনতি জানালো সে। “সঠিক কাজ করার এটা তোমার শেষ সুযোগ।”
শীসের সঠিক? সেক্সটন মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে গলাটা পরিস্কার করে নিয়ে মেয়ের দিকে তিক্তভাবে তাকালেন। “তুমি ঠিক তোমার মায়ের মতো-আদর্শবাদী এবং অতি নগন্য। মেয়েরা আসলে ক্ষমতার সত্যিকারের রূপটি বুঝতে পারে না।”
সেজউইক সেক্সটন মিডিয়ার দিকে তাকিয়ে ভুলেই গেলেন নিজের মেয়ের কথা। তিনি মাথা উঁচু করে সামনে বসে থাকা সাংবাদিকদের কাছে এসে এনভেলপগুলো বিলি করলেন। তিনি দেখতে পেলেন এনভেলপগুলো সাংবাদিকরা ছড়াহুড়ি করে নিচ্ছে। সেগুলোর খোলার শব্দ তিনি পেলেন, যেনো ক্রিসমাসের কোনো উপহার তারা খুলছে।
আচমকাই জনসমাগম থেকে একটা ফিসফাস কোনো গেলো। নিরবে সেক্সটন তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা মূহুর্তের প্রতিধ্বণি শুনতে পেলেন।
উল্কাখণ্ডটি ভূয়া। আর আমিই সেই লোক যে ওটা প্রকাশ করলাম।
সেক্সটন জানে প্রেসকে ব্যাপারটা বুঝতে কিছুক্ষন সময় লাগবে, কী জিনিস তারা দেখছে বরফের নিচে পাথর প্রবেশ করার জিপিএস এর একটা ছবি; নাসা’র ফসিলের মতো দেখতে একটি জীবিত সামুদ্রিক প্রাণী; পৃথিবীতে কন্ড্রুইল হবার প্রমান। সবটাই এক শোচনীয় সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য করবে।
“স্যার?” একজন রিপোর্টার বিস্মিত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো। “এটা কি সত্যি?”
সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। “হ্যাঁ, আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি এটা খুবই সত্য।” জনসমাগমের মধ্যে একটা গুঞ্জন শুরু হয়ে গেলো।
“এই ছবিটার দিকে আমি সবাইকে একটু তাকাতে বলছি,” সেক্সটন বললেন, “তার পরে আমি আপনাদের কাছ থেকে প্রশ্ন আশা করছি যাতে বিষয়টা পরিষ্কার করে বোঝাতে পারি।”
“সিনেটর?” আরেকজন রিপোর্টার জিজ্ঞেস করলো, তাকে পুরোপুরি হতবাক মনে হচ্ছে। “এই সব ছবি কি বিশ্বাসযোগ্য?… মানে বানোয়াট নয় তো?”
“একশত ভাগ,” সিনেটর বললেন, তাঁর কথা এখন খুবই দৃঢ় কোনোচ্ছে। “তা না হলে আমি এইসব প্রমাণ আপনদের সামনে হাজির করতাম না।”
জনসমাগমের মধ্যে দ্বিধাগ্রস্ততা বেড়ে গেলো, এমনকি সেক্সটন তাদের কাউকে কাউকে হাসতেও দেখলেন-এটা নয় যে, সব প্রতিক্রিয়াই তাঁর প্রত্যাশিত ছিলো। তাঁর এখন ভয় হতে শুরু করলো, কোনো কোনো মিডিয়া হয়তো তার সাথে বৈরি আচরণ করবে। কেমন জানি অদ্ভুত আচরণ করছে প্রেসের লোকজন।
“উম, সিনেটর?” কেউ তাঁকে বললো, তার কথা শুনে মনে হলো সে খুব আমোদে আছে। “সবার জ্ঞাতার্থে বলছি, আপনি এইসব ছবির বিশ্বাসযোগ্যতার সপক্ষে আছেন তো?”
সেক্সটন খুব পেরেশানিতে পড়ে গেলেন। “বন্ধুরা আমার, আমি শেষবারের মতো বলছি, আপনাদের হাতে থাকা এই সব প্রমাণ-পত্র একেবারে বিশ্বাযযাগ্য। আর কেউ যদি এটা ভুল প্রমান করতে পারে তবে আমি আমার টুপি খাববা!”
সেক্সটন একটা হাসির রোলের জন্য অপেক্ষা করলেন, কিন্তু সেটা আর হলো না। একেবারে পিন-পতন নিরবতা। ফাঁকা চাহনি কেবল।
যে রিপোর্টার এই মাত্র সেক্সটনের সঙ্গে কথা বললো সে উঠে এসে তাঁর সামনে চলে এলো, তার হাতে থাকা ফটোকপিগুলো নাড়িয়ে বললো, “আপনি ঠিকই বলেছেন, সিনেটর। এটা খুবই কেলেংকারীর একটা তথ্য।” রির্পোটার থেমে মাথা চুলকালো, “তো, আমরা বুঝতে পারছি না, এরকম জিনিস আপনি আমাদেরকে কেন দেখাচ্ছেন, কারণ এর আগে তো আপনি এই খবরটা খুবই জোড়ালোভাবে অস্বীকার করেছিলেন।”
সেক্সটনের কোনো ধারণাই নেই লোকটা বলছে কী। রিপোর্টার তাঁর কাছে ফটোকপিগুলো দিয়ে দিলো। সেক্সটন পৃষ্ঠাগুলোর দিকে তাকালেন-মুহূর্তেই তাঁর মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো।
কোনো শব্দ বের হলো না।
তিনি অপিরচিত কিছু ছবির দিকে চেয়ে আছেন। সাদা-কালো ছবি। দু’জন মানুষের। বিবস্ত্র। হাত-পা জড়িয়ে আছে। সেক্সটন বুঝতেই পারলেন না কী দেখছেন। তার পরই তাঁর কাছে ব্যাপারটা পরিস্কার হলো। মাথায় যেনো কামানের গোলা আঘাত করলো।
প্রচণ্ড ভয়ে সেক্সটন তাঁর সামনে থাকা মানুষগুলোর দিকে তাকালেন। তারা সবাই হাসছে এখন। তাদের অর্ধেক ইতিমধ্যেই ফোনে নিউজ ডেস্কে খবরটা জানিয়ে দিতে শুরু করেছে।
সেক্সটনের মনে হলো তাঁর কাধ দুটো ভারি হয়ে আছে।
একটা ঘোরের মধ্যে তিনি ঘুরে দাঁড়ালেন।
রাচেল পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। “আমরা তোমাকে থামাতে চেষ্টা করেছি, সে বললো। “আমরা তোমাকে প্রতিটি সুযোগ দিয়েছিলাম। একজন মেয়ে এসে তার পাশে দাঁড়ালো।
সেক্সটন মেয়েটাকে চিনতে পারলেন। গলায় এবিসি’র প্রেস-পাস ঝোলানো সেই রিপোর্টার, যেকিনা এনভেলপগুলো ফেলে দিয়েছিলো। মেয়েটার চেহারা দেখতেই রক্ত হিম শীতল হয়ে গেলো সেক্সটনের।
গ্যাব্রিয়েলের ডান হাতে সেই এনভেলপগুলো, যেগুলো সিনেটর নিয়ে এসেছিলেন। তার চোখ সিনেটরকে যেনো বিদ্ধ করে ফেলছে। গ্যাব্রিয়েল তার দিকে তাকিয়ে রইলো।
ওভাল অফিসটা অন্ধকার হয়ে আছে, কেবল একটা পিতলের ল্যাম্পের আলো জ্বলছে হানির টেবিলে।
গ্যাব্রিয়েল অ্যাশ মাথা উঁচু করে প্রেসিডেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বাইরে সন্ধ্যা নামতে শুরু করেছে এখন।
“আমি শুনলাম তুমি আমাদেরকে ছেড়ে চলে যাচ্ছো,” হার্নি বললেন, তাঁর কথা শুনে মনে হচ্ছে আশাহত হয়েছেন।
গ্যাব্রিয়েল মাথা নেড়ে সায় দিলো। যদিও প্রেসিডেন্ট তাকে হোয়াইট হাউজের ভেতরে একটা নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছেন যাতে প্রেসের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করা যায়, কি তবুও সে মনে করছে এভাবে লুকিয়ে থাকাটা ঠিক হবে না। সে যতদূর সম্ভব দূরে কোথাও চলে যেতে চায়। নিদেনপক্ষে, কিছুদিনের জন্য।
হার্নি তার দিকে তাকালেন। “আজ সকালে তুমি যে কাজটি করেছে গ্যাব্রিয়েল…” তিনি থামলেন। যেনো শব্দ হারিয়ে ফেলেছেন। তার চোখ খুবই পরিষ্কার আর সহজ। সেজউইক সেক্সটনের সাথে তার কোনো তুলনাই চলে না। তারপরও এতো ক্ষমতাবান লোকটির চোখে গ্যাব্রিয়েল সত্যিকারের মমতাই দেখতে পেলো। আত্মসম্মান আর মহত্ত্ব। যা খুব সহজে ভুলতে পারবে না সে।
“আমি এটা আমার জন্যও করেছি,”অবশেষে গ্যাব্রিয়েল বললো।
হার্নি সায় দিলেন। “আমিও সব কিছুর জন্য তোমার কাছে ঋণী।” তিনি উঠে দাঁড়িয়ে। তাকে তার সাথে আসতে বললেন। “আমি আসলে আশা করছিলাম তুমি আরো কিছুদিন এখানে থাকবে, যাতে আমি তোমাকে আমার বাজেট স্টাফ পদে একটা প্রস্তাব দিতে পারি।”
গ্যাব্রিয়েল তার দিকে চেয়ে একটু ঠাট্টার ভান করলো। খরচ করা থামান, নির্মাণ করা শুরু করুন?”
তিনি মুচকি হেসে বললেন, “অনেকটা সেরকমই।”
“আমার মনে হয়, আমরা দুজনেই জানি স্যার, আমি আপনার জন্য সম্পদ না হয়ে বরং বোঝা হয়েই দেখা দেবো এই মুহূর্তে।”
হার্নি কাঁধ ঝাঁকালেন। কয়েকটা মাস যেতে দাও। সব ঠিক হয়ে যাবে। অনেক বিখ্যাত নারী পুরুষই এ ধরণের পরিস্থিতিতে পড়ে সেটা কাটিয়ে উঠে মহান হয়েছেন। তিনি চোখ টিপলেন। “তাদের অনেকেই আবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।”
গ্যাব্রিয়েল জানে তিনি ঠিকই বলছেন। গ্যাব্রিয়েল কেবল কয়েক ঘন্টার জন্যই বেকার ছিলো। ইতিমধ্যে সে দু দুটো চাকরির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে-ইয়োলান্ডার কাছ থেকে এবিসির একটা প্রস্তাব, অন্যটা সেন্ট মার্টিন প্রেসের। তারা প্রস্তাব করেছে সেক্সটনের সাথে ঘটে যাওয়া যৌন কেলেংকারী নিয়ে সে যেনো একটা জীবনী লেখে। কোনো দরকার নেই, ধন্যবাদ।
প্রেসিডেন্টের সাথে হলওয়ে দিয়ে একসাথে নেমে যেতে যেতে আজকের ঘটনাগুলোর কথা স্মরণ করলো গ্যাব্রিয়েল। সে ইয়োলান্ডার কাছ থেকে এবিসির প্রেস পাসটা ধার করে ছবিগুলো নিয়ে সেক্সটনের অফিসে ফিরে গিয়েছিলো। সেখানে তার এনভেলপগুলো নিয়ে সেগুলোর ভেতরের ছবি আর ঘুষ গ্রহণের কাগজপত্রগুলো কপি করে নিয়েছিলো। তারপর সিনেটরের সঙ্গে দেখা করে তাকে একটা প্রস্তাব দিয়েছিলো। প্রেসিডেন্টকে উল্কাখণ্ডের ব্যাপারে ভুল স্বীকার করার একটা সুযোগ দাও, তানা হলে এই ঘুষ গ্রহণের কাগজগুলো জনসম্মুখে প্রকাশ করে দেবো।
এখন গ্যাব্রিয়েল আর প্রেসিডেন্ট বৃফিং রুমের পেছনে এসে শুনতে পেলো হৈ হট্টগোল। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিতীয়বার, পৃথিবী প্রেসিডেন্টের ভাষণ কোনোর জন্য জড়ো হয়েছে।
“আপনি কী বলবেন?” গ্যাব্রিয়েল জিজ্ঞেস করলো।
হার্নি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তাকে অসম্ভব শান্ত দেখাচ্ছে। বিগত কয়েক বছর ধরে আমি একটা বিষয়ই বার বার শিখেছি…” তিনি তার কাঁধে একটা হাত রেখে হাসলেন। “সত্যের কোনো বিকল্প নেই।
গ্যাব্রিয়েলের মধ্যে এক ধরণের অপ্রত্যাশিত গর্ব বোধ হলো প্রেসিডেন্টকে স্টেজের দিকে। যেতে দেখে। জাখ হার্নি তাঁর জীবনের সব চাইতে বড় ভুলটা স্বীকার করতে যাচ্ছেন, আর অদ্ভুত ব্যাপার হলো, তাঁকে এর আগে এত বেশি প্রেসিডেন্টসুলভ বলে মনে হয়নি কখনও।
রাচেল যখন ঘুম থেকে উঠলো, ঘরটা তখন অন্ধকারে ঢেকে আছে।
একটা ঘড়িতে জ্বলজ্বল করছে। ১০টা ১৪ মিনিট দেখা যাচ্ছে। বিছানাটা তার নিজের নয়। কয়েক মুহূর্ত সে স্থির হয়ে পড়ে রইলো। ভাবতে লাগলো এখন কোথায় আছে সে। ধীরে ধীরে, সবকিছু তার মনে পড়ে গেলো…মেগাপ্লম…আজ সকালে ওয়াশিংটন মনুমেন্টে…হোয়াইট হাউজে থাকার জন্য প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে আমন্ত্রণ পাওয়া।
আমি হোয়াইট হাউজে আছি, রাচেল ভাবলো। আমি এখানে ঘুমিয়েছি সারাদিন।
কোস্টগার্ডের কপ্টারটা ক্লান্তশ্রান্ত মাইকেল টোল্যান্ড, কর্কি মারলিনসন আর রাচেলকে ওয়াশিংটন মনুমেন্ট থেকে এখানে নিয়ে এসেছে। তাদেরকে ডাক্তার দেখানো হয়েছে। নাস্তা খাওয়ানো হয়েছে। আর এই ভবনের চৌদ্দটা ঘরের মধ্যে একটা নিজেদের জন্য ঘর বেছে নিতে বলা হয়েছিলো।
রাচেল টেলিভিশনে প্রেসিডেন্ট হার্নিকে দেখে বিশ্বাসই করতে পারলো না, তিনি এতো তাড়াতাড়ি সংবাদসম্মেলনটা শেষ করতে পারলেন। রাচেল তাকে বলেছিলো সেও সংবাদ সম্মেলনে তার পাশে থাকবে, কেননা তারা সবাই ভুলটা করেছে। কিন্তু হার্নি রাজি হননি। সব দায়িত্ব তিনি একাই বহন করবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
দরজায় একটা নক্ হলে রাচেল টিভি থেকে মনোযোগ সরালো।
মাইকেল, সে আশা করলো। টিভিটা বন্ধ করে দিলো সে। নাস্তা খাওয়ার পর থেকে তাকে দেখেনি।
এবার দরজার সামনে গিয়ে আয়নার দিকে একটু তাকিয়ে দেখলো নিজেকে। কী হাস্যকরভাবে পোশাক পরে আছে দেখে তার হাসি পেলো। একটা ফুটবল খেলার পুরনো জার্সি ছাড়া সে পরার মতো আর কিছুই খুঁজে পায়নি এখানে। সেটা তার হাটু পর্যন্ত নেমে আছে।
রাচেল দরজা খুলে একজন মহিলা সেক্রেটারিকে দেখে হতাশ হলো। “মিস সেক্সটন, লিনকন বেড রুমের ভদ্রলোক আপনার টেলিভিশনের শব্দ শুনতে পেয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন আপনি যদি ঘুম থেকে উঠে থাকেন…” সে থেমে ভুরু তুলে মুচকি হাসলো।
রাচেলের চেহারাটা রক্তিম হয়ে গেলো। “ধন্যবাদ।”
এজেন্ট রাচেলকে একটা ঘরের দিকে নিয়ে গেলো সে।
“লিনকন বেডরুম,” সে বললো। “আর আমি সবসময়ই যা বলে থাকি, আরাম করে। ঘুমান আর ভূতের কাছ থেকে সাবধানে থাকুন।”
রাচেল সায় দিলো। লিনকন বেড রুমের ভূতের কিংবদন্তীটা সে জানে। চার্চিলও নাকি সেটা দেখতে পেয়েছিলেন।
তার আচমকাই বিব্রতবোধ হতে লাগলো। “এটা কি কোশার?” সে এজেন্টকে জিজ্ঞেস করলো, নিচু স্বরে। মানে, এটাই লিনকনের শোবার ঘর।”।
এজেন্ট চোখ টিপলো। “এই তলায় আমাদের পলিসি হলো ‘জিজ্ঞেস করবেন না, কিছু বলবেন না।”
রাচেল হাসলো। “ধন্যবাদ।” সে দরজার কাছে গিয়ে নক্ করতে গেলো।
“রাচেল!” হলওয়ের দিক থেকে একটা নাকি কণ্ঠ তাকে ডাকলো।
রাচেল আর এজেন্ট দুজনেই তাকালো সেদিকে। কর্কি মারলিনসন ক্রাচে করে তাদের দিকেই আসছে। তার পা-টা অবশেষে উপযুক্ত ব্যক্তিরা ব্যান্ডেজ করে বেঁধে দিয়েছে। “আমিও ঘুমাতে পারিনি!”
রাচেল বুঝতে পারলো তার রোমান্টিক আবহটা নষ্ট হতে যাচ্ছে।
কর্কি সুন্দরী সিক্রেটসার্ভিস এজেন্টের দিকে তাকিয়ে চওড়া একটা হাসি দিলো। “ইউনিফর্ম পরা মেয়েদেরকে আমার খুব ভালো লাগে।”
এজেন্ট তার ব্লেজারটা একটু সরিয়ে কোমরে রাখা অস্ত্রটা দেখালো তাকে।
কর্কি একটু পিছু হটে গেলো। “বুঝতে পেরেছি।” সে রাচেলের দিকে তাকালো। ‘মাইকও কি জেগেছে?” তুমি ভেতরে যাচ্ছো?” কর্কিও তাদের সাথে যোগ দিতে ব্য।
রাচেল যেনো আর্তনাদ করলো। “আসলে, কর্কি…”
“ডক্টর মারলিনসন,” এজেন্ট মেয়েটা বললো। ব্লেজার থেকে একটা নোট বের করে দেখালো সে, “এই নোটটা অনুসারে, মাইকেল টোল্যান্ড আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আপনাকে যাতে আমি নিচের কিচেনে নিয়ে গিয়ে আমাদের শেফকে বলি আপনি কী কী খেতে চান এবং কীভাবে আপনি রক্ষা পেলেন সেই গল্প বলতে।” এজেন্ট একটু ইতস্তত করে চোখ কুচ্কে বললো, “কীভাবে পেশাবের সাহায্যে আর কি?”
কর্কি সঙ্গে সঙ্গে ক্রাচটা ফেলে এজেন্টের কাঁধে হাত দিয়ে কথা বলতে বলতে চলে গেলো কিচেনের দিকে। “পেশাবটাই হলো আসল কথা, রাচেল শুনতে পেলো কর্কি বলছে, “কারণ ঐসব প্রাণীগুলোর নাক খুবই কড়, তারা সব কিছুর গন্ধ পায়!”
.
রাচেল যখন লিনকন বেড রুমে ঢুকলো, ঘরটা তখন অন্ধকারে ডুবেছে। সে বিছানায় কাউকে না দেখতে পেয়ে অবাক হলো। টোল্যান্ডকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। রাচেল জানালার কাছে গিয়ে উঁকি মারলো। ঘরের কোথাও সে নেই। সে যখন আশাহত হয়ে উঠেছে তখনই ক্রোসেট থেকে একটা ফিসফিসে কণ্ঠ কোনো গেলো।
“বিয়ে কর-বে–বে …”
“বিয়ে করবে আমা-কে-কে?” কণ্ঠটা আবারো বললো।
“এটা কি তুমি? … ম্যারি টোড লিনকন?”
রাচেল সঙ্গে সঙ্গে জানালা বন্ধ করে ক্লোসেটের কাছে গেলো। “মাইক আমি জানি, এটা তুমি।”
“না…”কটা বললো। “আমি মাইক নই..আমি…আব্রা…যম…এর ভূত…”
রাচেল কোমরে হাত রেখে বললো, “ওহ্, তাই নাকি? সত্যবাদী ভূত?”
একটা হাসি কোনো গেলো। “হা, অপেক্ষাকৃত সত্যবাদী ভূত…”
রাচেলও হেসে ফেললো।
“সাবধানে থেকো, ক্রোসেট থেকে কণ্ঠটা বললো। “খুব সাবধানে।”
“আমি ভয় পাইনি।”
“দয়া করে ভয় পাও…” কণ্ঠটা গোঙালো। “মানুষ প্রজাতির মধ্যে ভয়ের আবেগ আর যৌন তাড়না খুবই গভীরভাবে সংযুক্ত।”
রাচেল হাসিতে ফেটে পড়লো। “এজন্যেই ভয় দেখাচ্ছো বুঝি?”
“আমাকে ক্ষমা করো…” কণ্ঠটা গোঙালো। “অনেক বছর হলো নারীসঙ্গ থেকে আমি বঞ্চিত।”
“বোঝাই যাচ্ছে, সেটা,” বলেই রাচেল ক্রোসেটের দরজা খুলে দেখে টোল্যান্ড হাসিমুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নীল রঙের সাটিন পাজামা পরে আছে সে। তার শার্টের বুকে প্রেসিডেন্সিয়াল সিলটা দেখে রাচেল জিজ্ঞেস করলো।
“প্রেসিডেন্ট-এর পাজামা?”
সে কাঁধ ঝাঁকালো। “ড্রয়ারে এগুলোই কেবল ছিলো।”
“আর আমার কাছে কেবল এই ফুটবল টিমের জার্সিটা।”
“তোমার আসলে লিনকন বেডরুমটা বেছে নেয়া উচিত ছিলো।”
“তোমারই প্রস্তাবটা দেয়া উচিত ছিলো।”
“আমি শুনেছি ম্যাট্রেসটা নাকি বাজে। ঘোড়ার লোমে তৈরি।” টোল্যান্ড একটা মার্বেল টেবিলের ওপরে ছোট্ট একটা গিফটের প্যাকেটের দিকে ইঙ্গিত করলো। এটা তোমার জন্য।”
রাচেল অবাক হয়ে গেলো। “আমার জন্য?”
“প্রেসিডেন্টের একজন সহকারীকে দিয়ে আনিয়েছি। এটা ঝাঁকাবে না।”
সে খুব সাবধানে প্যাকেটটা খুলে দেখতে পেলো একটা ক্রিস্টালের বোলের মধ্যে দুটো কুসত কমলা রঙের গোল্ডফিশ সাঁতার কাটছে। রাচেল অবাক হলো, হতাশও হলো কিছুটা। “তুমি ঠাট্টা করছে, তাই না?”
“হেলেসটোমা টেমেনাকি,” টোল্যান্ড খুব গর্বিতভাবে বললো।
“তুমি আমার জন্য মাছ এনেছো?”
“বিরল প্রজাতির চায়নিজ কিসিং ফিশ। খুবই রোমান্টিক।”
“মাছেরা রোমান্টিক হয় না, মাইক।”
“সেটা ওদেরকে বলো, তারা ঘন্টার পর ঘণ্টা চুমু খায়।”
“এটাও কি কিছু বোঝানোর জন্য?”
“আমি রোমান্সের ব্যাপারে আনাড়ি। তুমি কি একটু সাহায্য করবে?”
“ভবিষ্যতের জন্য বলছি, মাইক, মাছ দিয়ে নয়, ফুল দিয়ে চেষ্টা করে দেখবে।”
টোল্যান্ড পেছন থেকে সাদা লিলি ফুলের একটা বাস্কেট বের করে আনলো। “আমি লাল গোলাপের খোঁজ করেছিলাম, সে বললো। “কিন্তু পাইনি।
.
টোল্যান্ড রাচেলের শরীরটা চেপে ধরতেই তার চুলগুলো নাকের কাছে এসে লাগলো। সে তাকে গভীরভাবে চুমু খেলো। টের পেলো রাচেলের শরীরটাও জাগছে। সাদা লিলি ফুলের বাস্কেটটা হাত থেকে মাটিতে পড়ে গেলো আর টোল্যান্ড সেটা পা দিয়ে যে মাড়ালো সেটা পর্যন্ত খেয়াল করলো না।
ভূতগুলো চলে গেছে।
সে টের পেলো রাচেল তাকে বিছানার দিকে নিয়ে যাচ্ছে, তার চাপা কণ্ঠ টোল্যান্ডের কানে বলছে, “তুমি আসলে মনে করো না মাছেরা রোমান্টিক, তাইনা?”
“আসলেই মনে করি।” সে বললো, তাকে আবারো চুমু খেলো। “তোমার জেলিফিশের সঙ্গম দেখা উচিত। অবিশ্বাস্যরকমেরই যৌনতাপূর্ণ।”
রাচেল তাকে চিৎ করে শুইয়ে দিয়ে তার ওপর চড়ে বসলো।
“আর সি-হর্সরা…” টোল্যান্ড বললো, রাচেলের স্পর্শে তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। “সি হর্স…ওরা অবিশ্বাস্যরকম ইন্দ্রিয়পূর্ণ নৃত্য করে ওটা করার সময়।”
“মাছের প্যাঁচাল অনেক হয়েছে,” টোল্যান্ডের পাজামার বোতাম খুলে ফেলতে ফেলতে সে ফিসফিস করে বললো। “উন্নত প্রজাতির সঙ্গম সম্পর্কে তুমি আমাকে কতোটুকু বলতে পারো?”
টোল্যান্ড দীর্ঘশ্বাস ফেললো, “সেটা তো আমার বিষয় নয়।”
রাচেল তার ফুটবল জার্সিটা খুলে ফেললো। “তো, ছোকরা, তুমি এটা খুব দ্রুতই শিখতে পারবে।”
নাসা’র বিমানটা আটলান্টিকের ওপর দিয়ে যাচ্ছে।
ভেতরে নাসা প্রধান বিশাল অঙ্গার পাথরটার দিকে শেষবারের মতো তাকালো। সমুদ্রে ফিরে যাও, সে ভাবলো। যেখানে তোমাকে খুঁজে পাওয়া গেছে।
এক্সট্রমের নির্দেশে পাইলট দরজা খুলে পাথরটা সমুদ্রে ফেলে দিলো।
বিশাল পাথরটা সমুদ্রে ডুবে গেলো নিমিষেই।
পানির নিচে এটা বারো মিনিট ধরে পড়তে থাকবে। তারপর হাজার হাজার ফুট নিচে সমুদ্রের তলদেশে সেটার ঠাই হবে। সমুদ্রের লক্ষ লক্ষ প্রজাতি সেটা দেখতে আসবে। কিন্তু, প্রাণীগুলো নতুন কিছু দেখতে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাবে।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন