স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ৪

কেইগো হিগাশিনো

অধ্যায় ৪

পরিচিতি পর্ব শেষে প্রথমেই আয়ানে মাশিবা জিজ্ঞেস করল যে তার স্বামীর মৃতদেহ বর্তমানে কোথায় আছে।

“স্থানীয় আদালত ময়নাতদন্তের অনুমতি দিয়েছে,” কুসানাগি ব্যাখ্যার স্বরে বলল, “আমি ঠিক বলতে পারবো না যে এই মুহূর্তে কোথায় আছে মৃতদেহ, কিন্তু শিঘ্রই জেনে আপনাকে জানাবো।“

“তাহলে তাকে শেষবারের মতন দেখতেও পাবো না,” আয়ানে বলল। চোখজোড়া কোটরে ঢুকে গেছে তার; চুল উসকোখুসকো। খুব কষ্ট করে কান্না চেপে রেখেছে।

ফোনটা পাওয়ার পর থেকে নিশ্চয়ই এক মুহূর্তের জন্যেও ঘুমায়নি। “ময়নাতদন্ত শেষে যত দ্রুত সম্ভব মৃতদেহ হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা হবে,” কুসানাগির নিজের কানেই কথাগুলো বড় ঠুনকো শোনালো। ভিক্টিমের পরিবারের সাথে কথা বলতে সবসময়ই ভীষণ অস্বস্তিবোধ হয় তার, কিন্তু এবার সেই অস্বস্তির পরিমাণ কেন যেন অনেক বেশি।

“ধন্যবাদ,” জবাবে বলল আয়ানে।

গতানুগতিক নারীদের তুলনায় মহিলার গলা একটু অন্যরম ঠেকলো কুসানাগির কাছে। সম্মোহনী একটা ভাব আছে।

“মাগুরো সিটি পুলিশ স্টেশনে আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই আমরা, যদি আপনার কোন সমস্যা না থেকে থাকে।”

“হ্যাঁ, এ ব্যাপারে আমাকে আগেই ফোনে জানানো হয়েছে।”

“বেশ, চলুন তাহলে। বাইরে গাড়ি পার্ক করে রেখেছি আমরা।”

উতসুমির পাজেরোর পেছনের সিটের দরজা খুলে আয়ানেকে ভেতরে প্রবেশে সহায়তা করল কুসানাগি। এরপর চালকের পাশের আসনে উঠে বসলো।

“গতকাল রাতে আপনার সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছিলো না। কিভাবে জানলেন সবকিছু?” পেছনে ঘুরে জিজ্ঞেস করল কুসানাগি।

“আমার বাড়ির কাছেই একটা হট স্প্রিং রিসোর্ট আছে। এক বন্ধুর সাথে সেখানে গিয়েছিলাম। ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছিলাম, তাই পাননি

বোধহয় আপনারা। ঘুমোতে যাবার আগ দিয়ে মেসেজ দেখার জন্যে ফোন চালু করতেই দেখি অনেকগুলো ভয়েস মেসেজ এসে জমা হয়েছে,” বলে লম্বা একটা শ্বাস ছাড়লো আয়ানে। “প্রথমে ভেবেছিলাম কেউ হয়তো ঠাট্টা করছে আমার সাথে। পুলিশ বার্তা পাঠাবে এটা কে আশা করে বলুন?”

“এরকম ঘটনা কোনরকম পূর্বাভাস ছাড়াই ঘটে যায়,” কুসানাগি একমত প্রকাশ করে বলল।

“কিরকম ঘটনা! আমাকে পরিস্কার করে কেউ কিছুই বলেনি, শুধু বলেছে যে ও…” কেঁপে উঠল আয়ানের কন্ঠ। ভেতরে ভেতরে কুঁকড়ে গেল কুসানাগি। আয়ানে আসলে নির্দিষ্ট একটা প্রশ্নের উত্তর চায়, কিন্তু সেই প্রশ্নটা কোনভাবেই মুখে আনতে পারছে না।

“ফোনে আপনাকে কি বলা হয়েছে?”

“বলেছে যে আমার স্বামী মারা গেছে। মৃত্যুর কারণ নিয়ে কিছু ‘ধোঁয়াশা’ সৃষ্টি হয়েছে, তাই পুলিশি তদন্ত হবে। আর কিছু না।“

এটুকুই বলা হবে জানা ছিল কুসানাগির। খবরটা শোনার পর আয়ানের মনের অবস্থা কি হয়েছিল ভাবতেই গলা শুকিয়ে গেল তার। সকালে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত এসে প্লেনে উঠেছে কিভাবে? “আপনার স্বামী বাসাতেই মারা গিয়েছেন,” মহিলাকে বলল সে। “মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তবে তার শরীরে দৃশ্যমান কোন ক্ষত ছিল না। হিরোমি ওয়াকাইয়ামা তাকে লিভিং রুমে মৃত অবস্থায় আবিষ্কার করে।”

“হিরোমি…” আয়ানে যে ‘যারপরনাই’ অবাক হয়েছে সেটা তার দিকে না তাকিয়েই বুঝতে পারলো কুসানাগি।

একবার উতসুমির সাথে চোখাচোখি হলো তার।

দু’জনে একই জিনিস ভাবছি, মনে মনে বলল কুসানাগি। হিরোমি ওয়াকাইয়ামা আর ইয়োশিতাকা মাশিবার সম্পর্ক নিয়ে তারা কথা বলেছে বারো ঘন্টাও হয়নি। মিস ওয়াকাইয়ামা হচ্ছে আয়ানের সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষার্থী। তাদের বাসাতেও নিশ্চয়ই নিয়মিত যাতায়ত ছিল হিরোমির। আর যদি আয়ানের স্বামীর সাথে তার সম্পর্ক থেকে থাকে তাহলে কেসটা একদমই গতানুগতিক হয়ে যাবে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে আয়ানে কতটুকু জানে। হিরোমির সাথে সম্পর্ক নিশ্চয়ই ভালো ছিল তার। কুসানাগির অভিজ্ঞতায় বলে যে খুব বেশি ঘনিষ্ঠ লোকেরা একে অপরের কাছ থেকে অনেক কিছুই লুকায়।

“আপনার স্বামীর কোন প্রকার শারীরিক অসুস্থতা ছিল?” জিজ্ঞেস করল সে।

জবাবে মাথা ঝাঁকালো আয়ানে। “না, নিয়মিত চেক-আপ করাই আমরা। কখনো কোন কিছু ধরা পড়েনি। খুব বেশি ড্রিঙ্কও করতো না ও।”

“কখনো অজ্ঞান হয়ে যাননি অকস্মাৎ?”

“নাহ, ওরকম কিছু হয়নি কখনো। আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না, কিভাবে হলো এটা?” কপালে হাত দিয়ে বলল আয়ানে। দেখে মনে হচ্ছে প্রচণ্ড মাথাব্যথা করছে তার।

এখনই বিষের ব্যাপারে কোন বক্তব্য করা ঠিক হবে না। বরং ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট হাতে না পাওয়া অবধি আত্মহত্যা বা খুনের ব্যাপারেও কিছু বলবে না বলে ঠিক করল কুসানাগি।

“আসলে আমরা প্রাথমিকভাবে কোন প্রকার সিদ্ধান্তে আসছি না এখনই। তবে আপনার স্বামী যেহেতু মৃত্যুর সময় একা ছিলেন বাসায়, তাই সবকিছুই পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে হচ্ছে। গতকাল মিস হিরোমির সাথে কথাও বলেছি। এখন যেহেতু আপনি এসে পড়েছেন, আমাদের জন্যে আরো ভালো হলো।”

“হ্যাঁ, সেটা আমাকে ফোনেও জানানো হয়েছে।”

“আপনি কি স্যাপোরোতে প্রায়ই যান?”

মাথা ঝাঁকিয়ে না করে দিল আয়ানে। “বিয়ের পরে এবারই প্রথম গিয়েছিলাম।”

“আপনার বাবা-মা তো ওখানে থাকেন? সবকিছু ঠিক আছে সেখানে?”

“ফোনে আমাকে বলা হয়েছিল যে বাবার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। কিন্তু ওখানে গিয়ে দেখি খুব একটা খারাপ অবস্থা নয় তার, যতটা আমাকে বলা হয়েছিল। তার জন্যেই গিয়েছিলাম স্যাপোরোতে।”

মাথা নাড়লো কুসানাগি। “মিস ওয়াকাইয়ামার কাছে চাবি রেখে গিয়েছিলেন কেন?”

“আমি দূরে থাকা অবস্থায় বাসায় যদি কোন জরুরি দরকার পড়ে, সেই ভেবেই রেখে গিয়েছিলাম। আমার অনেক কাজে সাহায্য করে ও। আর আমি সেলাইয়ের কাপড়সহ অনেক কিছুই বাসায় মজুদ রাখি। ক্লাসে সেগুলোর দরকার হলে হিরোমি বাসা থেকে নিয়ে আসতে পারতো।”

“মিস ওয়াকাইয়ামা বলছিলেন যে আপনার স্বামীর জন্যে চিন্তা হচ্ছিল তার। তাই ফোন না ধরায় বাসায় গিয়েছেন। আমি ভাবছিলাম…” সাবধানে পরের কথাগুলো বলল কুসানাগি, “আপনি কি তাকে এ ব্যাপারে কিছু বলে গিয়েছিলেন কি না।“

ভ্রুজোড়া মৃদু কুঁচকে গেল আয়ানের। “সরাসরি ওরকম কিছু বলিনি। কিন্তু আমার হাবভাবে ও হয়তো ধরে নিয়েছে। সবসময়ই অন্যদের নিয়ে ভাবে মেয়েটা। তাছাড়া বিয়ের পর এই প্রথম ইয়োশিতাকাকে একা রেখে কোথাও গিয়েছিলাম আমি…তাই হয়তো…” এক মুহূর্তের জন্যে থমকে গেল সে, “কেন, চাবি রেখে গিয়ে কি কোন ভুল করেছি?”

“না না ওরকম কিছু না। আমি শুধু মিস ওয়াকাইয়ামা গতকাল আমাদের যা বলেছেন সেটা যাচাই করছিলাম।”

দু’হাতে মুখ ঢাকলো আয়ানে। “আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। একদম সুস্থ ছিল ও। শুক্রবারেও আমাদের দুইজন বন্ধু দাওয়াতে এসেছিল বাসায়। তাদের সাথে হাসিমুখে কথা বলেছে ও,” কাঁপছে আয়ানের কন্ঠস্বর।

“আমি বুঝতে পারছি আপনার অবস্থা,” শান্তস্বরে বলল কুসানাগি। “আমি দুঃখিত যে এরকম পরিস্থিতিতেও প্রশ্ন করতে হচ্ছে আমাকে। শুক্রবারে কারা এসেছিল আপনাদের বাসায়?”

“আমার স্বামীর কলেজের এক বন্ধু আর তার স্ত্রী,” তাতসুহিকো আর ইউকিকো ইকাইয়ের নাম বলল আয়ানে। “আমার একটা অনুরোধ আছে,’ হঠাৎই চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল তার।

“নির্দ্বিধায় বলুন,” কুসানাগি বলল।

“আমাদের কি সরাসরি পুলিশ স্টেশনে যেতে হবে?”

“আপনার কি কোন কাজ আছে এ মুহূর্তে?”

“আমি আগে বাসায় যেতে চাই, যদি সম্ভব হয়। আমি জানতে চাই যে কোথায় মারা গেছে ও… কিভাবে মারা গেছে। কোন সমস্যা হবে?”

আবারো উতসুমির দিকে তাকালো কুসানাগি। তবে এবার চোখাচোখি হলো না তাদের। একাগ্রচিত্তে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে জুনিয়র ডিটেক্টিভ।

“আমাকে চিফ ডিটেক্টিভের সাথে কথা বলতে হবে আগে,” বলে পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করল কুসানাগি।

মামিয়া ফোন ধরলে তাকে আয়ানের অনুরোধের ব্যাপারে জানালো কুসানাগি। গুঙিয়ে উঠল লিড ডিটেক্টিভ, এরপর বলল, “ঠিক আছে…তবে পরিস্থিতি খানিকটা বদলে গেছে। তার সাথে বাসাতে কথা বললেই বরং ভালো হবে এখন। আসো তোমরা।”

“বদলে গেছে মানে?” জিজ্ঞেস করল কুসানাগি।

“এসো, তারপর বলছি।”

“ঠিক আছে,” বলে কলটা কেটে দিল কুসানাগি। “আপনার বাসাতেই যাবো আমরা,” আয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল।

“ধন্যবাদ,” নিচু স্বরে বলল আয়ানে।

আবারো সামনের রাস্তায় চোখ দিল কুসানাগি।

পেছনে বসা আয়ানে মোবাইল বের করে একটা নম্বরে ডায়াল করল। “হ্যালো…হিরোমি?”

খানিকটা উদ্বিগ্ন বোধ করল কুসানাগি। সে ভাবেনি গাড়ি থেকে কাউকে ফোন করবে আয়ানে। বিশেষ করে হিরোমিকে। কিন্তু এখন তো মানা করাও সম্ভব নয়।

“আমি জানি,” আয়ানে বলছে ফোনে। “এখন দু’জন ডিটেক্টিভের সাথেই আছি আমি। বাসার দিকে যাচ্ছি। তোমার ওপর দিয়ে যে কি গেছে সেটা ভেবেই খারাপ লাগছে আমার।

হৃৎস্পন্দন ক্রমশই দ্রুততর হচ্ছে কুসানাগির। মাথায় চিন্তার ঝড়। ওপাশে হিরোমি ওয়াকাইয়ামা কি বলছে কে জানে। প্রেমিকের মৃত্যুতে আবেগের বশবর্তী হয়ে সবকিছু খুলে না বললেই হয়। অবশ্য সেরকমটা ঘটলে আয়ানের চেহারা দেখেই বোঝা যাবে।

“…সেটাই বলেছে আমাকে। তুমি ঠিক আছো? খাওয়া-দাওয়া বন্ধ কোরো না দয়া করে…আচ্ছা। যদি খুব বেশি সমস্যা না হয়, আসতে পারবে এখন? কারো সাথে কথা বলতে পারলে ভালো লাগবে আমার।”

কুসানাগি আশা করেনি যে হিরোমিকে বাসায় আসতে বলবে আয়ানে। এ পাশের কথোপকথন শুনে মনে হলো ওদের সাথে যেভাবে কথা বলেছে মিস ওয়াকাইয়ামা, আয়ানের সাথেও একই ভঙ্গিতে কথা বলেছে।

“তুমি আসলেই ঠিক আছো তো? আচ্ছা, তাহলে দেখা হচ্ছে। সাবধানে এসো।” ফোন কেটে দিল আয়ানে। পেছনের সিট থেকে তার ফোঁপানোর শব্দ কানে এলো কুসানাগির।

“মিস ওয়াকাইয়ামাও কি আসছেন?”

“হ্যাঁ। ওহহো! সে আসাতে কোন সমস্যা হবে না তো?”

“নাহ। তিনিই তো মি. মাশিবার মৃতদেহ আবিষ্কার করেছিলেন প্রথমে। তার কাছ থেকেই সব শুনলে ভালো হবে আপনার জন্যে,” কুসানাগি বলল ঘাড় না ঘুরিয়েই, ভেতরে ভেতরে একটু উত্তেজিত বোধ করছে সে। প্রেমিকের স্ত্রীর কাছে প্রেমিকের মৃত্যু সংবাদ কিভাবে খুলে বলবে হিরোমি তা শিঘ্রই দেখতে পাবে ওরা, উত্তেজনার কারণ সেটাই। এছাড়া তখন আয়ানেকে ঠিকমতো খেয়াল করলে হয়তো এটাও বোঝা যেতে পারে যে স্বামীর পরকীয়ার ব্যাপারে পূর্ব ধারণা ছিল কি না তার।

মাশিবাদের বাসার কাছাকাছি এসে হাইওয়ে থেকে মফস্বলের রাস্তায় প্রবেশ করল ওরা। উতসুমির মুখস্থ হয়ে গেছে ঠিকানাটা। কোন সমস্যা হচ্ছে না তার।

চিফ মামিয়া অপেক্ষা করছিল ওদের জন্যে। কিশিতানিকে সাথে নিয়ে গেটের বাইরে তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো ওরা। গাড়ি থেকে নেমে তাদের দিকে হেঁটে গেল কুসানাগি। পেছনে উতসুমি আর আয়ানে। মামিয়ার সাথে আয়ানের পরিচয় করিয়ে দিল সে।

“এরকম একটা পরিস্থিতিতে আমাদের পরিচয় হলো, ব্যাপারটা দুঃখজনক,” মামিয়া বলল আয়ানের উদ্দেশ্যে। এরপর কুসানাগির দিকে তাকালো। “তাকে বলেছো সবকিছু?”

“মোটামুটি।”

সমবেদনার দৃষ্টিতে আয়ানের দিকে তাকালো মামিয়া। “আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে কর্তব্যের খাতিরে আমাদের কিছু প্রশ্ন করতেই হবে। বাসায় ফেরা মাত্র আপনাকে এরকম পরিস্থিতিতে ফেলার জন্যে আমরা দুঃখিত।”

“সমস্যা নেই।”

“চলুন ভেতরে যাওয়া যাক। চাবি বের করো কিশিতানি।“

পকেট থেকে বাসার চাবিটা বের করে আয়ানের দিকে এগিয়ে দিল কিশিতানি। শান্ত ভঙ্গিতে ওটা হাতে নিল সে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো ভ্রু কুঁচকে, এরপর সামনে এগিয়ে গেল। চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে পা রাখলো সদ্য বিধবা মহিলা, অন্য সবাই অনুসরণ করল তাকে। কুসানাগির হাতে তার স্যুটকেস।

“কোথায় পেয়েছিলেন ওকে?” জিজ্ঞেস করল আয়ানে।

“এদিকে,” বলে হলওয়ে ধরে সামনে এগোলো মামিয়া।

লিভিং রুমের একপাশে এখনও হলুদ টেপ লাগানো। মেঝেতে ইয়োশিতাকার মৃতদেহের প্রতিকৃতি আঁকা হয়েছে। সেদিকে তাকিয়েই মুখে হাত দিল আয়ানে।

একবার কেঁপে উঠে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো সে। কান্নার দমকে কাঁপছে পুরো শরীর। কিছুক্ষণ পর একটু ধাতস্থ হয়ে জিজ্ঞেস করল, “এভাবে কখন পেয়েছিলেন ওকে?”

“আমরা তো পাইনি। মিস ওয়াকাইয়ামা আটটার দিকে এখানে আসেন, তিনিই খবর দেন তখন।”

“আটটা…এ সময় কি করছিল ও?” নিজেকেই প্রশ্ন করল আয়ানে।

“কফি খাচ্ছিলেন। আমাদের লোকেরা পরিস্কার করেছে জায়গাটা। মৃতদেহের পাশে একটা কফি কাপ পাওয়া গিয়েছে। মেঝেতেও কফি ছিটিয়ে ছিল।”

“কফি…” মাথা উঁচু করে বলল আয়ানে, “নিজেই বানিয়েছিল?”

“জি?” কুসানাগি বলল।

মাথা ঝাঁকালো আয়ানে। “আসলে…ও কখনো নিজে কফি বানায় না।” মামিয়ার মুখভঙ্গি বদলে যেতে দেখলো কুসানাগি। “কখনো কফি বানাতেন না তিনি?”

“আমাদের বিয়ের আগে বানাতো। তখন ওর কফিমেকার ছিল।”

“এখন নেই?”

“না, দরকার হয় না তাই আমি ফেলে দিয়েছি। সিঙ্গেল-কাপ ড্রিপার ব্যবহার করি আমি।”

“ম্যাম, এ মুহূর্তে নিশ্চিত হয়ে কিছু বলা সম্ভব নয় আমার পক্ষে, দ্বিধান্বিত স্বরে বলল মামিয়া, “কিন্তু খুব সম্ভবত বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে আপনার স্বামীর।“

ক্ষণিকের জন্যে বিহ্বলতা ভর করল আয়ানের চোখে মুখে। “বিষ? মা- মানে! ফুড পয়জনিং এর কথা বলছেন?”

“না। আমাদের ল্যাব টেকনিশিয়ানরা কফিতে বিষাক্ত কিছুর অস্তিত্ব পেয়েছে। তবে কোন ধরণের বিষ তা এখনও জানা সম্ভব হয়নি। এটা নিশ্চিত করে বলা যেতে পারে, কোন প্রকার শারীরিক অসুস্থতার কারণে মৃত্যু হয়নি আপনার স্বামীর।”

“কিন্তু ও কেন…এটা কিভাবে হলো?”

“সেটা জানার জন্যেই আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলাম।” এজন্যেই মামিয়া ফোনে বলেছিল যে পরিস্থিতি বদলে গেছে। স্টেশন থেকে এখানে কেন এসেছে সে তা-ও বুঝতে পারলো কুসানাগি।

কপাল চেপে ধরে সোফায় বসে পড়লো আয়ানে। “আমি কিছুই বলতে পারবো না এ ব্যাপারে।”

“আপনার সাথে মি. মাশিবার শেষ কথা হয়েছিল কখন?” মামিয়া জিজ্ঞেস করল।

শনিবার সকালে। একসাথেই বাসা থেকে বের হয়েছিলাম আমরা।”

“সেদিন কি তার ব্যবহারে কোন ভিন্নতা চোখে পড়েছিল আপনার? মানে সচরাচর যেটা দেখা যায় না। এসব ক্ষেত্রে একদম ছোটখাটো তথ্যও তদন্তে কাজে দেয়।”

চুপচাপ কিছুক্ষণ ভাবলো আয়ানে, এরপর মাথা ঝাঁকিয়ে না করে দিলো। “না। সেরকম কিছু মনে পড়ছে না।“

মনে না পড়াই স্বাভাবিক, ভাবলো কুসানাগি। একে তো স্বামীর মৃত্যুর দুঃসংবাদ শুনতে হয়েছে আগে, তার ওপর এখন মামিয়া জানালো যে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে মি. মাশিবার। সবারই ভেঙে পড়ার কথা।

“একটু বিশ্রাম দরকার ওনার, চিফ,” মামিয়ার উদ্দেশ্যে বলল কুসানাগি। “এত দূর থেকে এসেছেন, নিশ্চয়ই ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।

“হ্যাঁ, ঠিক বলেছো তুমি।”

“না, আমি ঠিক আছি,” পিঠ সোজা করে বলল আয়ানে। “তবে কাপড় বদলাতে পারলে ভালো হতো। কালকে রাত থেকে এই জামা-কাপড় পরে আছি।”

“কালকে রাত থেকে?”

“হ্যাঁ। তৈরি হয়েই টোকিওতে ফেরার টিকেট খোঁজা শুরু করেছিলাম আমি, যাতে সময় নষ্ট না হয়।“

“তাহলে তো ঘুমোতেই পারেননি।”

“চেষ্টা করলেও ঘুম আসতো না।”

“এরকম করলে চলবে না,” মামিয়া বলল এবারে, “বিশ্রাম নিন এখন, আমরা পরে নাহয় প্রশ্ন করবো আপনাকে।“

“না, আমি আসলেই ঠিক আছি। কাপড় বদলিয়ে নিচে নেমে আসবো,” বলে উঠে দাঁড়ালো আয়ানে।

তাকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে দেখলো কুসানাগি, এরপর মামিয়ার দিকে ঘুরে বলল, “বিষের ব্যাপারে কি জানতে পেরেছি আমরা?”

“কফিতে আর্সেনাস এসিড পাওয়া গেছে,” মামিয়া মাথা নেড়ে বলল। “আর্সেনাস এসিড?” চোখ বড় হয়ে গেল কুসানাগির। “স্কুলের ঘটনাটার মতো?”

“ফরেনসিকের ওদের ধারণা সোডিয়াম আর্সেনাইট ব্যবহার করা হয়েছে এই ক্ষেত্রে। সহনীয় মাত্রার অনেক বেশি পরিমাণই খেয়ে ফেলেছিলেন মি. মাশিবা। লিথাল ডোজেরও বেশি। বিকেলে ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেলে নিশ্চিত হয়ে বলা যাবে। মৃতদেহটা যে অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে, আর্সেনিক পয়জনিংয়ের সম্ভাবনাই বেশি।”

একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো কুসানাগি। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সম্ভাবনা ক্রমশই ক্ষীণ হয়ে আসছে।

“কিন্তু এটা যদি সত্য হয় যে, মি. মাশিবা কখনো নিজে কফি বানান না, তাহলে এক্ষেত্রে কফি বানিয়েছিল কে?” নিজেকেই যেন জিজ্ঞেস করল মামিয়া।

“নিজেই বানিয়েছিলেন তিনি,” হঠাৎ বলে উঠল উতসুমি।

“তুমি কিভাবে জানলে সেটা?” মামিয়া জিজ্ঞেস করল।

“একজন প্রত্যক্ষদর্শী সেটা বলেছে,” বলে কুসানাগির দিকে তাকালো উতসুমি। “মিস ওয়াকাইয়ামা।”

“ওহ হ্যাঁ, কি যেন বলছিলেন তিনি কফির ব্যাপারে?” আগের দিনের কথোপকথন মনে করার চেষ্টা করল কুসানাগি।

“আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কফি খাবার সময় পিরিচ ব্যবহার করেন কি না মি. মাশিবা। মিস ওয়াকাইয়ামা তখন বলেছিলেন, এবং থাকলে বোধহয় পিরিচ ব্যবহার করেন না তিনি।”

“ 

ওহ, আমিও তো পাশেই ছিলাম তখন,” মামিয়া মাথা নেড়ে বলল। “ধরে নিলাম মিস ওয়াকাইয়ামা সত্য কথা বলছেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে মি. মাশিবার স্ত্রী যেটা জানেন না সেটা তিনি কিভাবে জানলেন?”

“আপনাকে একটা কথা আগেই বলতে চেয়েছিলাম,” বলে মামিয়ার দিকে ঝুঁকে নিচু স্বরে হিরোমি ওয়াকাইয়ামা আর ইয়োশিতাকা মাশিবার সম্পর্কের ব্যাপারে তার ধারণার কথা খুলে বলল কুসানাগি।

পালা করে উতসুমি আর কুসানাগির দিকে তাকালো মামিয়া। ‘তোমাদের দু’জনেরও এই ধারণা?”

“কেন, আপনিও এই সন্দেহ করেছিলেন না কি চিফ?” ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করল কুসানাগি।

“আমার মত দীর্ঘ সময় ধরে এই কাজ করলে অনেক কিছুই চোখে পড়ে। আমি গতকালই ধারণা করেছিলাম যে কোন একটা সমস্যা আছে,” মাথায় হাত বোলালো মামিয়া।

“কি ঘটছে কেউ আমাকে বলবেন দয়া করে?” কিশিতানি জিজ্ঞেস করল।

“পরে,” মামিয়া বলল। “আপাতত মিসেস মাশিবার সামনে কেউ কিছু বলবে না, ঠিক আছে?”

মাথা নাড়লো কুসানাগি আর উতসুমি।

“মেঝেতে যে কফি পড়ে ছিল সেখানে বিষের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে তাহলে?” জিজ্ঞেস করল কুসানাগি।

“আরেকটা জায়গাতেও পাওয়া গেছে।”

“কোথায়?”

“ড্রিপারে পেপার ফিল্টারটা পেয়েছি আমরা। সেখানে ব্যবহৃত কফির গুঁড়োতেও বিষের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

“তাহলে কফি বানানোর সময়েই বিষ মেশানো হয়েছিল?” জিজ্ঞেস করল কিশিতানি।

“সেটা একটা সম্ভাবনা। তবে আরেকটা সম্ভাবনাও আছে,” এক আঙুল উঁচু করে বলল মামিয়া।

“কফি বিনের সাথে আগেই মিশিয়ে রাখা হয়েছিল বিষ,” উতসুমি বলল পাশ থেকে।

উজ্জ্বল হয়ে উঠল মামিয়ার চেহারা। “ঠিক বলেছো। কফি বিনগুলো ফ্রিজে রাখা ছিল। ব্যাগে অবশ্য ফরেনসিকের লোকেরা বিষের অস্তিত্ব পায়নি। তবে তার মানে এটা নয় যে বিষ ছিল না। হয়তো শুধু ওপরের দিকে ছড়িয়ে রাখা হয়েছিল।”

“তাহলে কফিতে বিষ কখন মেশানো হয়েছে?” কুসানাগি জিজ্ঞেস করল।

“সেটা জানা সম্ভব হয়নি। ফরেনসিকের লোকেরা ডাস্টবিন থেকে অনেগুলো ব্যবহৃত ফিল্টার উদ্ধার করেছে। ওগুলোতে বিষের অস্তিত্ব নেই। অবশ্য থাকবে সেটা আশাও করিনি। কারণ ফিল্টারে বিষ মেশানো হলে মি. মাশিবার পাশাপাশি অন্য কারো মৃতদেহও পাওয়া যেত।”

“একটা অধোয়া কফির কাপ রাখা ছিল সিঙ্কে,” উতসুমি বলল। “আমি জানতে চাই সেই কফিটা কে খেয়েছিল আর কখন খেয়েছিল।”

নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো মামিয়া। “সেটা জানতে পেরেছি আমরা। দু’জন ব্যক্তির হাতের ছাপ পাওয়া গেছে কাপটায়। একটা হচ্ছে ইয়োশিতাকা মাশিবার। অন্যটা তোমরা যার কথা ভাবছো, তার।”

একবার দৃষ্টি বিনিময় করল উতসুমি আর কুসানাগি। ওদের ধারণার সপক্ষে এখন প্রমাণও পাচ্ছে।

“ওহ চিফ, আপনাকে বলার সুযোগ পাইনি। গাড়ি থেকে মিস ওয়াকাইয়ামাকে ফোন দিয়েছিলেন আয়ানে,” গোটা ঘটনা মামিয়াকে খুলে বলল কুসানাগি।

“তিনি আসলে তো আমাদের জন্যে ভালোই হয়,” কপালে ভাঁজের সংখ্যা বাড়লো মামিয়ার। “তুমি তাকে জিজ্ঞেস করতে পারবে যে কখন একসাথে কফি খেয়েছিল তারা।”

“ঠিক আছে,” কুসানাগি বলল।

এসময় ওপরের সিঁড়ি থেকে পায়ের শব্দ ভেসে আসায় চুপ করে গেল ওরা।

“দুঃখিত, আপনাদের বসিয়ে রাখলাম,” লিভিং রুমে এসে বলল আয়ানে। একটা নীল শার্ট আর কালো রঙের ট্রাউজার তার পরনে। এয়ারপোর্ট থেকে বেরুনোর পর যেরকম ফ্যাকাসে লাগছিল তাকে, এখন তার চেয়ে ভালো লাগছে। কিছুটা রঙ ফিরেছে চেহারায়। অবশ্য এটা মেক-আপের কারণেও হতে পারে।

“আপনি যদি আসলেও খুব বেশি ক্লান্ত না হন, তাহলে আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই আমরা,” মামিয়া বলল।

“নিশ্চয়ই।”

“বসুন,” সোফার দিকে নির্দেশ করল চিফ।

সোফায় বসে কাচের দরজা দিয়ে বাইরে বাগানের দিকে একবার তাকালো আয়ানে। “সবগুলো গাছ দেখি শুকিয়ে গেছে। ওকে বলে গিয়েছিলাম পানি দেয়ার কথা। কিন্তু ফুলগাছের প্রতি কখনোই আগ্রহ দেখায়নি।”

তার দৃষ্টি অনুসরণ করে বাইরে তাকালো কুসানাগি। রঙ বেরঙের বিভিন্ন ফুলের সমারোহ বাগানে।

“আপনারা যদি কিছু না মনে করেন,” আয়ানে বলল। “আমি কি গাছগুলোয় পানি দিতে পারি প্রথমে? না-হলে অন্য কিছুতে মন বসবে না।” এরকম কিছু আশা করেনি মামিয়া। “অবশ্যই,” কিছুক্ষণ পর বলল সে, “কোন তাড়া নেই আমাদের।”

উঠে দাঁড়িয়ে কাচের দরজাটার বদলে রান্নাঘরের দিকে এগোলো আয়ানে। সেদিকে তাকিয়ে কুসানাগি দেখলো যে বড় একটা বালতিতে পানি ভরছে সে।

“পাইপ নেই?” জিজ্ঞেস করল কুসানাগি।

“এটা দোতলার বারান্দার গাছগুলোর জন্যে,” মৃদু হেসে বলল আয়ানে। “ওখানে সিঙ্ক নেই কোন।”

“ওহ আচ্ছা,” এর আগের দিন উতসুমিকে ওপরতলার গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছিল কুসানাগি।

বালতিটা বেশ বড়। কুসানাগি উঠে দাঁড়িয়ে ওটা হাতে নিতে চাইলে মানা করে দিল আয়ানে। “সমস্যা নেই, অভ্যাস আছে আমার,” বলল সে।

“আরে না, দিন আমাকে,” কুসানাগি এক রকম জোর করে বালতিটা নিল তার হাত থেকে।

“ধন্যবাদ,” ক্ষীণ কণ্ঠে বলল আয়ানে।

মাস্টার বেডরুমটা নিচতলার লিভিংরুমের মতন বড় না, তবে একদম ছোটও না। বিছানার ওপরে একটা সুন্দর ট্যাপেস্ট্রি ঝুলছে। রঙধনুর সবগুলো রঙ খেলা করছে সেখানটায়। মুগ্ধ চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো কুসানাগি।

“আপনার নিজের কাজ এটা?”

“হ্যাঁ, অনেক আগের।

“খুবই সুন্দর। মাফ করবেন, কিন্তু আমি যখন প্রথম ‘সেলাইয়ের কাজ’ কথাটা শুনেছিলাম তখন এরকম কোন কিছু কথা কল্পনা করিনি। ভেবেছিলাম এমব্রয়ডারির কাজ হবে হয়তো। কিন্তু এটা তো রীতিমত একটা শিল্প।”

“আমার কাছে এটা আসলেও একটা শিল্প। খুব সাধারণ একটা কাপড়ও সুন্দর নকশার সেলাইয়ের জন্যে অনন্য হয়ে উঠতে পারে। ফলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনও হয়ে ওঠে আরেকটু রঙিন।”

“আপনার হাতের কাজ খুব সুন্দর। আর এ ধরণের নকশা করা যে কারো পক্ষে সম্ভব নয়, খাটনিও বেশি নিশ্চয়ই।”

“হ্যাঁ, লম্বা সময়ের প্রয়োজন, আর ধৈর্য্য। কাজটা উপভোগ করতে হবে, না-হলে সেলাই শেষে যে জিনিসটা পাওয়া যাবে ওটাও সুন্দর হবে না।”

মাথা নাড়লো কুসানাগি, আরেকবার তাকালো দেয়ালে ঝোলানো শিল্পকর্মটার দিকে। সুতোর বুননে শিল্পীর মনোভাব স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। অজান্তেই একটা হাসি ফুটলো তার চেহারায়।

ব্যালকনিটা বেশ চওড়া। পুরো জায়গা জুড়েই নানা আকৃতির গাছের টব।

কোণা থেকে একটা অ্যালুমিনিয়ামের ক্যান তুলে নিল আয়ানে। “কাজের না জিনিসটা?” বলে কুসানাগির দিকে ওটা বাড়িয়ে ধরলো সে।

ক্যানের তলায় ছোট ছোট অনেকগুলো ছিদ্র। বালতি থেকে পানি তুলে টবগুলোর ওপর ক্যানটা ধরলো আয়ানে। ঝর্ণার মত পানি ঝরছে ওটা থেকে।

“বাহ! বাসায় বানানো ঝাঁঝরি।”

“হ্যাঁ। এটা না থাকলে বালতি থেকে পানি তুলে আবার গাছে ঢালা খুব ঝামেলা হতো। লম্বা সুঁই দিয়ে তাই একদিন ক্যানটা ছিদ্র করে নিয়েছিলাম।”

“ভাল বুদ্ধি।”

“তাই না? অবশ্য ও কখনো বুঝতে পারেনি যে কেন এখানে গাছ লাগিয়েছিলাম আমি,” বলে কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে পড়লো আয়ানে। তার পায়ের ওপর পড়তে লাগলো ক্যানের পানি।

“মিসেস মাশিবা,” পাশ থেকে ডাক দিল কুসানাগি।

“আমি দুঃখিত। আসলে…এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে ও আর পৃথিবীতে নেই।”

“সেটাই স্বাভাবিক।”

“আমাদের বিবাহিত জীবন মাত্র এক বছরের। এক বছর! কেবলই গুছিয়ে উঠছিল আমাদের সংসার। একে অপরকে ভালো করে জানছিলাম। কোন খাবারটা ওর প্রিয়, কোথায় যেতে ভালো লাগে…কত পরিকল্পনা।”

কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো কুসানাগি। আয়ানেকে দেখছে একদৃষ্টিতে। এক গালে হাত দিয়ে স্মৃতিচারণে ব্যস্ত মহিলা। আশপাশের রঙিন ফুলগুলো হঠাৎই মলিন হয়ে গেল যেন।

“দুঃখিত,” আবারও বলল আয়ানে। “আমি জানি যে এভাবে আপনাদের খুব একটা সাহায্য করতে পারবো না। আমাকে আরো শক্ত হতে হবে।”

“আমরা পরেও আসতে পারি,” কুসানাগি বলে উঠল কিছু না ভেবেই মামিয়া অবশ্য ওর সাথে একমত হবে কি না সন্দেহ।

“না, তার দরকার নেই। এখন কথা বলতে সমস্যা হবে না আমার। এখানে এসে আসলে বুঝতে চেয়েছিলাম যে কিভাবে ঘটলো ঘটনাটা। ও কেন বিষ খেতে যাবে…?’

কলিংবেলের শব্দ ভেসে আসায় কথা শেষ করতে পারলো না আয়ানে। ব্যালকনির রেলিঙের কাছে গিয়ে নিচে উঁকি দিল সে।

“হিরোমি!” বলে ডাক দিয়ে একবার হাত নাড়লো।

“মিস ওয়াকাইয়ামা এসেছেন?” জিজ্ঞেস করল কুসানাগি।

মাথা নাড়লো আয়ানে। নিচ তলায় নেমে এলো ওরা। উতসুমি দরজা খোলার জন্যে উঠে দাঁড়িয়েছে। “মিস ওয়াকাইয়ামা,” ফিসফিসিয়ে তার উদ্দেশ্যে বলল কুসানাগি।

কিন্তু উতসুমি সামনে এগোনোর আগেই আয়ানে ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দিল। বাইরে দাঁড়িয়ে আছে হিরোমি ওয়াকাইয়ামা।

“ভেতরে এসো, হিরোমি,” আয়ানে বলল। গলা ধরে আসছে তার। “আপনি ঠিক আছেন, মিসেস মাশিবা?”

“হ্যাঁ…” বলে সামনে এগিয়ে হিরোমিকে জড়িয়ে ধরলো আয়ানে। অঝোরে কাঁদতে শুরু করল এরপর।

সকল অধ্যায়

১. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ১
২. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ২
৩. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ৩
৪. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ৪
৫. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ৫
৬. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ৬
৭. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ৭
৮. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ৮
৯. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ৯
১০. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ১০
১১. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ১১
১২. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ১২
১৩. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ১৩
১৪. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ১৪
১৫. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ১৫
১৬. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ১৬
১৭. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ১৭
১৮. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ১৮
১৯. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ১৯
২০. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ২০
২১. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ২১
২২. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ২২
২৩. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ২৩
২৪. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ২৪
২৫. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ২৫
২৬. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ২৬
২৭. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ২৭
২৮. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ২৮
২৯. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ২৯
৩০. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ৩০
৩১. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ৩১
৩২. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ৩২
৩৩. স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ৩৩

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন