পরমতত্ত্ব
কী ছুরত বানাইলে খোদা রূপ মিশায়ে আপনার,
এই ছুরত দোজখে যাবে, যে বলে সে গোনাগার ॥
মানব-সুরতের মাঝে, তুমিই আছ তোমার কাজে,
আদম বানাইলে কি বলে তুমি, লীলা বোঝা হল ভার ॥
মানব-দেহেতে খোদা, দম থাকতে না হবে জুদা,
কেবা আদম, কেবা খোদা, কে করিবে কার বিচার?
দেখিলাম দুনিয়া ঘুরে, দুই সুরত এক মিল না পড়ে,
লক্ষ-কোটি আকার ধরে, সাজিলে তুই নিরাকার
এত রূপ যে ধরতে পারে, তোমরা কী বলগো তারে
হয় কি না-হয় এই আকারে, বেহদ্ রূপে আপনার ॥
যে ডুবছে ঐ রূপের শানে, কালির লেখা আর কি মানে
জালাল উদ্দীন এ-জীবনে, সার বুঝেছে এক-আকার ॥
আমায় তুমি দোষী বল তুমি কি আর বড় গুণী?
তুমি আমায় বেশি চিন, আমিও হয়ত কিছু জানি।।
বলছ আমায় পাপ করতেছি, কই রাখব তোর লিপিখানি
ভাল মন্দ যা করে যাই, আমি কই তোমার করণী॥
তুমি চোরকে চুরি করতে কয়ে, গৃহস্থেরে দেও জাগাইয়ে
শেষে বস হাকিম হয়ে, তুমিই চোরের শিরোমণি।।
আমি তোমার হাতের বাঁশি, তুমি বাজাও আমি দোষী
আমি তোমায় এই জিজ্ঞাসি, ফুঁক না দিলেও হয় কি ধ্বনি?
ভালবাসার ভাব জন্মায়ে, ফাঁদ পাতলে সাঁই মহাজনি
লাভের হার কমতি পড়লেই, রাঙা কর চোখ দুখানি ॥
বলতে পার সৃষ্ট হয়ে তুমি স্রষ্টার প্রতি বদ্গোমানি
যতই বল তুমি আমায়, এই পর্যন্ত বেশি মানি।।
মিটাইতে তোমার ত্রাসনা, ফুরায় না মোর ধানা-পানা
জালালে কয় আর সহে না, তোমার মরা আমি টানি।।
আমাকে আর দোষ দিও না, তুমি-যে সব কর্ম কারণ;
উচিত বিচার করতে গেলে, অপরাধী তুই নিরঞ্জন ॥
আমি নহি কাজের কাজি, তোমারই সব ভোজের বাজি
পুতুল খেলার পুতুল সাজি, নাচাও নাচি যেমনি-তেমন ॥
যখন শুধু একা ছিলে, কী জানি তুই মনে করলে
কেন আমায় পাঠাইলে, নিজেই সব-জান বিবরণ ॥
আমি তোমার নামে নামী, থেকে সদা অন্তর্যামী
বেঁধে ধরে দেও আসামি, পাঁচ আইনের পুলিশ যেমন ॥
তোমারই ইচ্ছা মতে, কখন চলে যাই কু-পথে
সারথি হয়েছ বলে, বেঁধে রাখতে হয় কতক্ষণ;
তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে, কে বলে আমাকে যাইতে
জালাল উদ্দীন এ জগতে, করেছে আত্মসমৰ্পণ ॥
ছি-ছি-ছি লাজে মরি, বিধি তোমার কাজ দেখে,
সোনা-রূপায় থাকতে চাওনা, স্থান লয়েছ বিষ্ঠাতে ॥
ভোমর তোর কোন কাজ করে, এত দয়া তার উপরে
মধু খায় সে জীবন ভরে, নূতন নূতন ফুল দেখে ॥
পড়লে কেন তুই এত ভ্রমে, ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতমে
বিচার নাই তোর বেশি কমে, ভেল্কি খেলাও গোপন থেকে ॥
কাল রং কোকিলের গায়, মধুর স্বরে কত না গায়
তুচ্ছ প্রজাপতির পাখায়, কত রং দিয়েছ মেখে;
যে যারে চায় তারে পায় না, করে কতই আরাধনা
সাগরে তো মানিক চায় না, পরশ দিলে পাষাণের বুকে ॥
জালালে কয় বলব কত, তোর মতো নাই বুদ্ধিহত
(তুমি) চোর মাতালের অনুগত, সাধু জনে পেতে ডাকে ॥
রূপের ঘরে ডুব দিয়ে দেখ ‘স্বরূপ’ ছাড়া নাই সাধন
স্বরূপ তোমার সেই রূপ বটে, ঘটে ঘটেই নিরঞ্জন ॥
স্বরূপে রূপ মিশে যাহার, হয়ে যায় একই আকার
কাষ্ঠ লোহা পুড়ে অঙ্গার, আগুনেতে হয় যেমন ॥
খোদার প্রেমে হয় আশেক, মনসুরে কয় “আন্তাল হক”
অবশেষে “আইনল-হক” –আমিই আমার নিরঞ্জন ॥
বুঝে দেখ ভাবের ঘরে, খেলছে খেলা চার রং ধরে
আলেফ-হে-মিম-দাল অক্ষরে যুগে যুগে হয় মিলন ॥
মোহাম্মদে আলেফ নাই, স্বরূপে মিশিলেন সাঁই
এক মিমে ঘেরিল তাই, আহাম্মদের গুলবদন॥
আউয়ালে আহাদ ইছিম, আহাম্মদে পাইল জিছিম
কালেব লইয়া মিম, আলাপেতেই হয় গোপন ॥
আদমের “হে” উঠাইয়া নিল, হাওয়াতে মিশায়ে দিল
ধরা মানুষ অধর হইল, জালালে কয় পাই না এখন ॥
জীবন ভরিয়ে কত না করিয়ে
খোদাকে হল না চিনা, সে বা কেমন জন ॥
মানুষের ঘরে মানুষ হয়ে ঘোরে
অন্তরে বসতি করে, ছায়াটি যেমন;
যে-যেমন সে-তেমন পশুতে পশুর মতন
নিরাকার নিরঞ্জন, আকারেই গঠন ॥
চোরের খোদা চোর জ্ঞানীর খোদা চতুর
রোগীর ভাণ্ডে রোগী হয়ে, থাকে নিরঞ্জন,
জোয়ান বুড়া বর্তমান শিশুর খোদা অজ্ঞান
ভাবের ভাবুক হইয়ে, করে যোগ মিলন ॥
এক আত্মা এক প্রাণী জীবেতে পরম জানি
বলে যত তত্ত্বজ্ঞানী, মহাপুরুষগণ,
নব অনুরাগে সবের মধ্যে জাগে
তারে চিনিবার আগে চিনতে হয় আপন
হলে তার পরিচয় আমিত্ব কিছুই নয়
এ পৃথিবী মায়াময় হেঁয়ালি স্বপন,
ভাবিয়ে জালাল কয় ঘুচিবে সংশয়
একই সূর্য বিশ্বময় দিতেছে কিরণ।।
গোলকধাঁধা গোলে বাঁধা, গোল নিয়ে মোর বাজল গোল
এই পারে গোল সেই পারে গোল, গোলের নাহি আছে কূল;
প্রকৃতির স্বভাব গোল, চন্দ্ৰ সূর্য গ্ৰহ গোল
আকাশ পাতাল যে করছে গোল, তারে নিয়া মহা গোল ॥
গোল বিন্দুতে সৃষ্টি সবার, গর্ভে থাকতে সব গোলাকার
গোলের দুগ্ধ খেয়ে আবার, গোলের লাগি হয় ব্যাকুল;
গোল কড়িতে গোল বড়িতে, দেহ রাজ্যে গোল মিটাইতে
কূল না পেয়ে শেষ কালেতে গোল গুটিতে দিতে হয় গুল॥
গোল বাসনে অন্ন খেয়ে, বিষম গোলে দিন কাটাইয়ে
সদাই ব্যস্ত যে-গোল নিয়ে, সকল গোলের হয় সে মূল ॥
ছেড়ে দেও লম্বা-বাঁটি, এ জগতে গোলই খাঁটি
গোলের জন্য লাঠালাঠি, যত দেখ সূক্ষ্ম স্থূল ॥
জালাল উদ্দীন ভেবে কয়, সকলি গোল বিশ্বময়
গোল ভাঙলে হয় গোল-পরিচয়, গুলবাগিচায় ফুটবে গুল্ ।।
দিলের খবর জানে খোদা, জানে রুহু ইনছানি;
কেউরে করাও ধরম করম, আমায় করাও শয়তানি।।
কাল্বে-রুহু গায়েবে-খোদা, মোকাম মঞ্জিল মাহমুদা
ধ্যানে দিদার নূরুল হুদা, জাল্লে জালাল নূরানি।।
সেই দেশেতে কর দাখিল, চাই না তোর দরবেশি হাসিল
খুলে দাও কপাটের খিল, ফুল ফুটায়ে আসমানি।।
নীল আকাশে থরে থরে, মেঘ ছুটে যায় বায়ুভরে
তজল্লি-শান তার উপরে, আরশে-আলা রব্বানি।।
বেহেশতখানায় যাব না আর, পুল-সেরাত না হব পার
চাই তোমারি হুব্বে দিদার, একে মৌলার দেওয়ানি।।
যে পিরিতে দেওয়ান হাফেজ, গৌছল আজম শামছ-তব্রেজ
শরাতে হয় মনসুর খারেজ, শূলেতে যার কোরবানি ॥
সেই বাতাস লাগাওহে অঙ্গে, জালাল উদ্দীন তোমার সঙ্গে
নাচিয়ে গাইত প্রেম তরঙ্গে, যেখানে পির জিলানি।।
রূপ থাকলে কি পালায়ে থাকে!
এ-জীবনে কতজনে কত ভাবেই তারে ডাকে;
এ-জগতে রূপ যার আছে, ভয় কি তাহার আসতে কাছে
এই চোরাটা পালিয়ে বাঁচে, শ্রীহীন কালা অঙ্গ ঢেকে॥
কালো প্যাচা কুশ্রী বলে, লুকায়ে রয় ঘোর জঙ্গলে
রূপের গোমর যাবে খুলে, যদি হঠাৎ লোকে দেখে।।
কত যুগ-যুগান্তরে, ফকির সাধু আর পয়গম্বরে
গেছে কতই সাধন করে, বলে কেউ কি দেখছে তা কে?
কত রাজায় রাজ্য ছাড়ি, হইয়া পথের ভিখারি
অ-পাওয়া রূপ তালাশ করি, শেষে হারায় আপনাকে ॥
আছে কেবল বাহাদুরি, জগৎ জোড়া নামটি জারি
হইত যদি রূপের নূরী, এমন রূপ কি গোপন থাকে?
বৌ থাকে চুলার পারে, খসম তারে শাসন করে
যাইতে দেয় না ঘরের বাইরে, কিন্তু লোকে তারেও দেখে ॥
(যার) হাতের খাইনি সেই রাঁধুনি, গান শুনিনি গায়ক তিনি
(যার) রূপ দেখিনি সেই মোহিনী, ভুল ভেঙ্গে যায় দেখলে ওকে
ছিল খোদা এখন আর নাই, আগুন লেগে পোড়ে ছাই
জালালে কয় কেঁদে বেড়াই, থাকলে কি দেখে না চোখে ॥
প্রভু তুমি আছ কোথায়, আমি কি তার খবর জানি
থাকতে নাহি পেলেম সন্ধান, দিলে কতই পেরেশানি ॥
যত শাস্ত্র প্রমাণে কয়, আছ তুমি বিশ্বময়
সৃষ্টি আর স্থিতি-লয়, সকল কর্মে তুই করণী ॥
ধরিয়ে অসংখ্য আকার, নাম ধরেছ সাঁই নিরাকার
কইব কি মহিমা তোমার, কখন আগুন কখন পানি ॥
মাটির দেহ মরলে পরে, মাটি হইয়ে যায় কবরে
আমি তুমি থাকব পরে হইয়ে রুহু ইনছানি ॥
এখনও রয়েছি তেমন, উপরে একজন নিচে একজন
ব্যাকুল হয়ে সারা জীবন, দমের ঘরে টানাটানি ॥
জালালে কয় বিচার করে, প্রভেদ নাহি পরস্পরে
কার বিচার কে বা করে, যা হতেছে সব এখনি।।
প্রকাশে মানব ছবি, গুপ্ত নিরঞ্জন
খোদা তুই গোপনের গোপন ॥
রয়েছ কৌশল করে, ফেলিয়া ভুলের ফেরে
যোগী-ঋষি সাধন করে, পায়না নিশ্চয় নিরূপণ ॥
মিছরির মধ্যে মিঠা থাকে, জানে সব জগতের লোকে
মিছরি সবেই চক্ষে দেখে, মিঠার হয়না দরশন;
বৃক্ষে যখন ফল ধরে, বিচি থাকে তার ভিতরে
অঙ্কুরে আকৃতি লয়ে, গাছের আগায় বৃক্ষ সৃজন ॥
জীব সমষ্টি তেমনি মায়ায়, হাসে কাঁদে নাচে গায়
বিকাশিতে মাতাপিতায় হয়েছিল প্রেমাকর্ষণ ॥
তোমার লীলা বোঝা যায় না, আমি নাহি তুমি বিনা
সকলই তোমার বাহানা, আমি কেবল কথার কথন ॥
ধরাতে অধরা হয়ে, খেলছ সদাই আমায় লয়ে
জালাল উদ্দীন গেল কয়ে, তুমি নিদ্ৰা আমি স্বপন ॥
ভালো-মন্দ বুঝিসনে আর, খুঁজে নে তোর মন-মানুষ;
সারা জীবন দুয়ে যখন বসত করে যাও আপোষে;
আকাশ পাতাল যার মহিমায়, যার নামটি লতায়-পাতায়,
সেইতো বসে দ্বীপ-দরিয়ায়, রাখিতেছে হুঁশ-বেহুঁশে ॥
জীব তুমি নামে নামী, থাকিয়া সে অন্তর্যামী;
করিয়া বিপথগামী, কপাল মাখে পাপ-কলুষে ॥
সে করে যায় নিদ্রা আহার, ভুক্তভোগী নামটি তোমার;
পরম যিনি প্রাণের আধার, রক্ত বীর্য খায় যে চুষে॥
পরমে প্রাণ মিশাইলে, খেলা করে প্রেম সলিলে;
দেখা দেয় না খুঁজতে গেলে, মুগ্ধ মায়া ভাব-দোষে;
দুগ্ধে যেমনি আছে মাখন, তোমাতে সেই প্ৰভু তেমন;
ভিন্ন নাহি হবে কখন, বলছি কথা খুবই রোষে;
ধর্মাধর্ম ন্যায়-অন্যায়, জালালে কয় এ দুনিয়ায়;
নামাজ রোজা বেতের আশায়, করে যত কাপুরুষে॥
আমি যারে ভালবাসি, সে-যে রূপের পূর্ণশশী
কাজ নাই আমার গয়া কাশী, ভাগ্যে যদি মিলে তারে;
তপ-লোকের দক্ষিণ ধারে, জন-লোকের শেষ–
সত্য-লোকের সন্নিকটে, সুন্দর আমার বঁধুয়ার দেশ ॥
সদা যারে পাইবার আশায়, পাগল হয়ে রূপের নেশায়
দিন কাটাইলাম প্রবঞ্চনায়, দম থাকতে আর ঘটল নারে॥
প্রেম সাগরের উপকূলে, রূপের নদীর মোহনা–
তটে কল্পতরুমূলে, সাধু করে সাধনা ॥
ভাব-তরঙ্গ উজান মুখে, ধেয়ে চলে প্রাণের বুকে
ছুটাছুটি করছে সুখে, রসিক বিনে জানে নারে ॥
পারে থেকে ঢেউ গনিয়ে, হইল কত সন্ন্যাসী-
ঝাঁপ দিয়ে তার অগাধ জলে, অনেক মরা গেছে ভাসি ॥
কান্নাকাটির কোলাহলে, কান ফেটে যায় ভূমণ্ডলে
ভেবে জালাল উদ্দীন বলে, এদেশ থেকে নেও আমারে ॥
আচানক এক পাখি এসে, বসে গাছে
ডিম পাড়িয়ে উড়ে গেল।।
দেখিতে মোহন কায়া, মধুর মায়া
অন্ধকার করেছে আলো-
জানিনা কি শক্তি ধরে, এই ব্রহ্ম-অণ্ডে ঘুরে
কেউ না তারে চিনতে পারল।।
বেঁধে বাসা মধ্যস্থলে, কি কৌশলে
হাওয়াতে মিশিয়ে গেল—
কেউ বলে সে উজ্জ্বল-সাদা লাল জরদা
কেউ বলে সে নিরেট কাল…
ডিম্বেতে পাখির ছায়, ঐ শোনা যায়
মধুর শব্দ করছে ভালো-
ব্রহ্ম-অণ্ড ফুটবে যেদিন, উড়বে সে দিন
কেমনে তারে দেখবে ব…।
যে-জন গিয়ে গাছের তলে, খুব নীরলে
এক ধ্যানেতে চেয়ে রইল-
যাবার কালে দেখছে তারে, এ সংসারে
জালাল উদ্দীন কানেই শুনল।।
বিশ্ব ব্যাপিয়া তোমার ছবি, রেখেছ যদি আঁকিয়ে,
তবে কেন তাহার কালিমা রাশি, রয় না মম গায় মাখিয়ে॥
খুঁজি কণ্টক জঙ্গলে, পত্র-পুষ্প-ফলে, স্বর্ণ-পিতলে-লোহায়
মৃদুল সমীরে, জাহ্নবী তীরে
পয়োধি-নীরে হিমানী গুহায়;
ধুলায় গড়াগড়ি যাই-
কীটে পতঙ্গে যদি পাই
কিছু দেখি নাই তবু, পাই না যে কভু
মিছে ম’লেম শুধু ডাকিয়ে।।
চন্দ্র-তপনে, তারকায় গগনে, কুয়াশার সনে মেঘমালায়
বাইবেল-কোরানে, বেদ-পুরাণে
গায়কের গানে ঐ শোনা যায়;
কিন্তু কেউ না কিছু জানে—
লুকিয়ে রয়েছে কোন স্থানে
জালাল উদ্দীন কিসে, পাইবে গো দিশে
এত পাপের দেশে থাকিয়ে ॥
আঁধারের মাঝে ঘুরিয়ে বেড়াই, নেও না মোরে তালাশিয়ে,
নূরানি জ্যোতি পন্থ দেখায়ে দেও না একবার আসিয়ে ॥
রহমত কুদরতে, পারি কোনও মতে, বুঝিতে কিছু মেহেরবানি
না মিলে দিদার খুঁজিলে সংসার
লা-শরিক লান্তারানি;
রাখ মার যা কর তুমি-
তোয়াক্কা দিয়েছি আমি,
আপন ছিফতে, ইছমে-জাতে
আগেই উঠেছ ফুটিয়ে।।
সেই ফোটা ধ্বনি জাগিছে আপনি, আগুন-মাটি-জল-পবনে
স্বর্ণ লতিকায় বিহঙ্গের গায়
মলয় হাওয়ায় গগনে;
নামটি লিখেছে অন্তহীন-
শানে-জাল্লো রব্বেল-আলামিন
আপন স্বভাবে জালাল উদ্দীন ভাবে
ওঠ না একবার হাসিয়ে।।
আছেরে তার নামে মধু, খেয়ে সাধু
পার হয়ে যায় অকূল জলে
যে-নাম হৃদয়পুরে, হাওয়ায় ঘুরে
আপনি আপন কথা বলে;
সেই নাম সঞ্জীবনী সুধা, রয় না ক্ষুধা
এক দম সোদা না হইলে-
আপনি বাঁশি বাজিল যার, টুল আঁধার
ভয় কি তাহার ভূমণ্ডলে?
আঁধার গেলে চন্দ্র ওঠে, ফুলটি ফোটে
সাধু জনের হৃদকমলে-
মানুষেতে লইলে স্মরণ, জন্ম-মরণ
জরা ব্যাধি সব দূরে চলে ॥
অন্তরে যার পরশমণি, অষ্ট ফণি
নিশ্বাসেতে আগুন জ্বলে-
জালালে কয় দেহের ভিতর প্রেম-সরোবর
চিনে না বেহুঁশের দলে॥
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন