২৯. টাকার দুশ্চিন্তা দূর করার উপায়

ডেল কার্নেগি

টাকার দুশ্চিন্তা দূর করার উপায়

সকলের অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা দূর করার উপায় যদি আমার জানা থাকত তাহলে এ বই লিখতাম না। আমি তাহলে বসে থাকতাম হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্টের পাশে। তবে একটা কাজ আমি করতে পারি : এ বিষয়ে যারা অভিজ্ঞ তাদের কিছু বক্তব্য উদ্ধৃত করতে পারি আর কিছু বইয়ের নাম করতে পারি।

লেডিস হোম জার্নালের করা এক সমীক্ষায় জানা গেছে আমাদের শতকরা সত্তর ভাগ দুশ্চিন্তাই অর্থনৈতিক । জর্জ গ্যালাপ বলেছেন যে সমীক্ষায় জানা যায় মানুষ ভাবে কিছু টাকা পয়সা হাতে এলেই আর তাদের সমস্যা থাকবে না–কেবল শতকরা দশ ভাগ আয় বাড়লেই হল। কোন কোন ক্ষেত্রে এটা হয় বটে, তবে আশ্চর্যের কথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা খাটে না। উদাহরণ হিসেবে বলি, বাজেট সম্বন্ধে অভিজ্ঞ একজন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, দরিদ্র কুলি, যার আয় বছরে হাজার ডলার তার থেকে শুরু করে একজন বড় চাকুরে যার আয় বার্ষিক একলাখ ডলার তারও বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি বলেছেন, আরও টাকা বাড়লেই মানুষের অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা যায় না। আমি বেশ লক্ষ করে দেখেছি টাকা পয়সা বেশি হাতে এলেই খরচ সেই অনুপাতে বাড়তে থাকে। এরকম হয় কেন? এর কারণ ওই সব মানুষ জানে না কীভাবে তাদের টাকা ব্যয় করতে হয়।

অনেক পাঠক হয়তো বলবেন, ওই কার্নেগি লোকটাকে তো আমার বিলের টাকা মেটাতে হয় না। আমার দায়িত্ব তো আর তাকে বহন করতে হয় না, আমার মাইনেতেও তাকে চালাতে হয় না। তা যদি হত তাহলে তিনি এমনভাবে কথা বলতে পারতেন না। তবে কথা হল আমারও অর্থকরী দুশ্চিন্তা ছিল। এককালে দশ ঘণ্টা ধরে কঠিন কায়িক পরিশ্রম করেছি মিসৌরির খামারে। পরিশ্রমের জন্য ক্লান্তিতে ভেঙে পড়েছি । আর ওই হাড়ভাঙা পরিশ্রমের বিনিময়ে কত পেয়েছি জানেন? ঘণ্টায় এক ডলার করেও নয়, পঞ্চাশ সেন্টও নয়–মাত্র পাঁচ সেন্ট।

আমি জানি স্নানের ঘর আর জল ছাড়া কোথাও বিশ বিশটা বছর কাটাতে কেমন লাগে। শূন্যের পনেরো ডিগ্রী নিচের তাপের কোন ঘরে শুয়ে থাকার যন্ত্রণা আমার জানা আছে। আমি এও জানি এক নিকেল (পাঁচ সেন্ট) বাঁচানোর জন্য মাইলের পর মাইল হাঁটতে কেমন লাগে, যখন জুতো বলে কিছু থাকে না। পা হয় ক্ষত বিক্ষত পেটে থাকে না দানা।

অথচ ওই অবস্থাতেও কয়েকটা করে ডাইম (দশ সেন্ট) বাচাতে পারতাম না–জমানোর কথা আমি ভাবতেই পারতাম না। আমি জানতাম বাচতে গেলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মতই করতে হবে, পরিকল্পনা করে খরচ করতে হবে। কিন্তু আমরা বেশিরভাগই তা করি না। লিও সিমকিন, একজন বিখাত পকাশন বলেছেন যে তার পরিচিত একজন এই রকমই করে। সে শুক্রবার মাইনে পাওয়ার পর কোনো দোকানে কিছু দেখলেই–যেমন একটা ওভারকোট কিনে ফেলে। তার মাথায় একদম খেলে না বিদ্যুতের বিল। বাড়িভাড়া ইত্যাদি দিতে হবে। তার মতো হল পকেটে যখন টাকা আছে তখন আর ভাবনা কী ।

এখন ভাবা দরকার টাকাটা যখন আপনার তখন খরচ করবার আগে পরিকল্পনাও আপনাকে করতে হবে বৈকি। কিন্তু কিভাবে পরিকল্পনা করবেন? নিচে আটটি নিয়মের কথা বলছি :

১. সব কিছু কাগজে লিখে ফেলুন।

পঞ্চাশ বছর আগে আর্নল্ড বেনেট লণ্ডনে একজন ঔপন্যাসিক হওয়ার বাসনায় যান, তিনি ছিলেন নিতান্তই গরীব। তাই তিনি তার প্রতিটি পয়সার হিসাব রাখতেন। টাকা কোথায় যাচ্ছে তিনি ভাবতেন? না, ব্যাপারটা তার ভালো লাগত। তাই বিরাট ধনী হওয়ার পরে বিখ্যাত হয়েও একাজ তিনি করে যান। তার নিজের একটা প্রমোদতরীও ছিল।

বড় জন ডি, রকফেলার একখানা লেজার বই রাখতেন। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় প্রার্থনার আগে তিনি প্রতিদিনের হিসাব নিকাশ করতেন।

আপনি আর আমিও তাই করতে পারি। সারা জীবন ধরে? না, তা বলতে চাই না। বাজেট বিশেষজ্ঞের মতামত অনুযায়ী আমরা যদি সমস্ত পাই পয়সার হিসাবপত্র প্রথম মাস থেকে কমপক্ষে তিনমাস পর্যন্ত রাখি, তাহলে টাকা কীভাবে খরচ হয় তা জানতে পারব । ও আচ্ছা আপনি তাহলে জানতে চান আপনার টাকা কোথায় গেল? ভালো কথা, তাই যদি আপনার মনে হয় তাহলে আপনি প্রতি এক হাজারের মধ্যে একজন। মিসেস স্টেপলেটন বলেছেন, বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে এরকম ঘটনা খুব স্বাভাবিক। সুতরাং তিনি ব্যয় সংক্রান্ত হিসেব নিকেশ একটা সাদা কাগজে লিখে রাখতে বলতেন। যখন তারা হিসেবটা দেখে তখন বিস্ময়ে বলে ওঠে : এভাবেই আমাদের টাকা পয়সাগুলো খরচ হয়? এই কঠিন সত্যকে তারা অনুভব করেছিল । আপনি কি এটা পছন্দ করেন? তাহলে এরকম করতে পারেন।

২. প্রয়োজন মনে রেখে পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলুন।

মিসেস স্টেপলেটন বলেছেন যে এমন দুটি পরিবার থাকতে পারে যাদের বাড়ি একই রকম, আয় এবং পরিবারের আকারও একই, তা সত্ত্বেও তাদের বাজেট একরকম না হতেও পারে। এর কারণ কি? এর কারণ হল মানুষ আলাদা। বাজেটকে তাই হতে হয় ব্যক্তিগত। বাজেট তৈরীর এই ধারণা আপনাকে মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করে নিরাপত্তামূলক আনন্দ দিতে পারে এবং প্রধানভাবে আবেগময় দুশ্চিন্তা থেকে মন স্বাধীন রাখতে সাহায্য করে।

কিন্তু এটা করা হবে কীভাবে? মিসেস স্টেপলেটন বলেছেন, যে সব মানুষ তাদের জীবনকে বাজেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছে তারা সব চাইতে সুখী। প্রথমত আপনাকে আপনার সব খরচের একটা তালিকা করতে হবে। এইভাবেই এগোতে হয়।

৩. বিজ্ঞভাবে খরচ করতে শিখুন।

কথাটার উদ্দেশ্য হল আপনার টাকা ষোল আনা উশুল করুন।

৪. আয় নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।

৫. সন্তানদের টাকা পয়সার প্রতি দায়িত্বশীল করে তুলুন।

৬. কোনোভাবেই কিছুতেই জুয়া খেলবেন না ।

আমি অবাক হয়ে লক্ষ করেছি মানুষ কী আশ্চর্যভাবে জুয়া খেলে বড়লোক হতে চায়। তাই জুয়া খেলার আগে ভালো করে ভেবে দেখুন ভাগ্য আপনার কতটা সহায় হতে পারে। এ বিষয়ে বহু বইও পাবেন।

৭. অসুস্থতা, অগ্নিকাণ্ড আর জরুরি খরচের ব্যবস্থা রাখবেন।

৮. নিজের আয় যদি বাড়াতে না পারেন, তাহলে দুশ্চিন্তা করবেন না। মনে রাখবেন আব্রাহাম লিঙ্কন আর জর্জ ওয়াশিংটনেরও অর্থাভাব ছিল।

সকল অধ্যায়

১. ০২. দুশ্চিন্তা কাটানোর ইন্দ্রজাল
২. ০১. আজকের জন্য বেঁচে থাকুন
৩. ০৩. দুশ্চিন্তা আপনার কতখানি ক্ষতি করতে পারে
৪. ০৪. দুশ্চিন্তা সমাধানের পথ
৫. ০৫. ব্যবসায় অর্ধেক দুশ্চিন্তা এড়ানোর উপায়
৬. ০৬. দুশ্চিন্তা দূর করার উপায়
৭. ০৭. দুশ্চিন্তার ভার বইবেন না
৮. ০৮. যে নীতিতে অনেক দুশ্চিন্তা দূর হয়
৯. ০৯. অবশ্যম্ভাবীকে মেনে চলুন
১০. ১০. বৃথা দুশ্চিন্তা বন্ধ করুন
১১. ১১. কাঠের গুড়ো করাত দিয়ে কাটতে চাইবেন না
১২. ১২. যে শব্দ কটি আপনার জীবনের মোড় ফেরাতে পারে
১৩. ১৩. হিংসা ও ঘৃণার পরিণতি
১৪. ১৪. এভাবে চললে অকৃতজ্ঞতা আপনাকে চিন্তায় ফেলবে না
১৫. ১৫. আপনার সম্পদ হাতবদল করবেন?
১৬. ১৬. নিজেকে আবিষ্কার করুন : আপনার মত আর কেউ নেই
১৭. ১৭. লেবু থাকলে সরবৎ তৈরি করুন
১৮. ১৮. দুই সপ্তাহে মন ভালো করুন
১৯. ১৯. আমার বাবা মা কীভাবে দুশ্চিন্তা দূর করেন
২০. ২০. মনে রাখবেন মরা কুকুরকে কেউ লাথি মারে না
২১. ২১. সমালোচনা আপনাকে স্পর্শ করবে না
২২. ২২. যে সব বোকামি করেছি
২৩. ২৩. অবসাদ দূর করার উপায়
২৪. ২৪. আপনার ক্লান্তির কারণ ও তার প্রতিকার
২৫. ২৫. গৃহকর্ত্রী কীভাবে অবসাদ দূর করবেন
২৬. ২৬. দুশ্চিন্তা ও ক্লান্তি দূর করার চারটি অভ্যাস
২৭. ২৭. একঘেয়েমি জনিত অবসাদ ও উদ্বেগ কাটানোর উপায়
২৮. ২৮. অনিদ্রার প্রতিকার
২৯. ২৯. টাকার দুশ্চিন্তা দূর করার উপায়
৩০. ৩০. কীভাবে আমি দুশ্চিন্তা জয় করি

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন