গ্যেটে
কবিতাগুচ্ছ
Wie herlick leucher mir die Natur
দেখ দেখ, প্রকৃতি কেমন নববধুর মতো
নবসাজে সজ্জিত হয়েছে শুধু আমারই জন্য;
দেখ দেখ, কেমন সূর্যের আলো হাসি হয়ে
ঝরে পড়ছে কুয়াশা ভেজা মাঠে মাঠে।
ফুল ফুটে উঠেছে প্রতিটি গাছের ডালে ডালে
হাজার কণ্ঠে ফেটে পড়ছে অরণ্যের নীরব আত্মা।
হে পৃথিবী, হে সূর্য, হে সুখ, তোমরাও
ফুটে ওঠ মানুষের বুকে বুকে;
হে আমার প্রেম, সবুজ পাহাড়ের উপর ঝুলতে থাকা
সোনালী মেঘের মতো ঝুলতে থাকো আমার অন্তরের আকাশে।
ফুলে ফলে সমৃদ্ধ হয়ে উঠুক আমার জীবনের শূন্য প্রান্তর।
হে আমার প্রিয়তমা, আমার গভীর ভালোবাসা
কত সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে তোমার মদির চোখের
নীল তারার গভীরে; আমি তোমাকে ভালোবাসি
ঠিক যেমন উড়ন্ত চিল ভালোবাসে নীল আকাশকে,
ঠিক যেমন সকালের ফুল ভালোবাসে আকাশের সোনালী গন্ধকে।
তুমি আমাকে দিয়েছ যৌবনের আনন্দ, তাইতো
আমি তোমাকে ভালোবাসি আমার রক্তের সমস্ত উত্তাপ দিয়ে।
আমার সুখে আমার ভালোবাসার সুখে চিরসুখী হও প্রিয়তমা।
Sah ein knub ein Koslein Stehn
পথের ধারে ফুটে ওঠা এক রক্ত গোলাপ দেখে
একটি ছেলে ছুটে গেল তার দিকে।
আহা কি সুন্দর গোলাপ, তাজা রক্তের মতো টকটকে লাল।
ছেলেটি বলল, ‘গোলাপ, আমি তোমায় তুলব।’
গোলাপ বলল, ‘আমাকে তুললে আমি তোমাকে।
কাঁটা দিয়ে বিধব যাতে আমার কথা চিরকাল মনে থাকে।’
দুষ্টু ছেলেটা সত্যি সত্যিই গোলাপটাকে তুলে ফেলল।
বৃন্ত থেকে আর গোলাপটাও তাকে বিধতে লাগল
কাঁটা দিয়ে; চিৎকার বা অভিযোগ অনুযোগে কোনও ফল হলো না।
অবশেষে গোলাপকে হার মানতে হলো
ছেলেটার দুষ্টুমির কাছে, সহ্য করতে হলো তার অশালীন ঔদ্ধতের রঙিন উচ্ছ্বাসকে।
Es Schling Meain Hez
আমি ঘোড়ায় চাপতেই আমার মনের আগেই
আমার অন্তরটা দ্রুত স্পন্দিত হতে হতে চলে গেল সেখানে।
রাত্রির কোলে প্রথমে ঢুকে গেল পৃথিবী আর তার পাহাড়গুলো।
কুয়াশায় গা ঢেকে বিশাল দেহী ওকগাছগুলো রইল দাঁড়িয়ে
আর ঝোঁপঝাড়ের ভিতর থেকে অন্ধকার
উঁকি মারতে লাগল অসংখ্য ভীরু কালো চোখ মেলে।
এমন সময় মেঘের পাহাড় থেকে বেরিয়ে এল চাঁদ;
বাতাস আমার কানের পাশ দিয়ে চলে গেল পাখা মেলে।
রাত্রির পেট থেকে বেরিয়ে আসা দানবগুলো
আমাকে ভয় দেখাতে লাগল বিভিন্নভাবে,
কিন্তু আমার সাহস আর সংকল্পের কাছে হার মানল তারা।
আমার রক্তে ছিল এক ভয়ঙ্কর উত্তাপ, চোখে ছিল দুঃসাহসী আলো।
তোমাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে তোমার চোখ থেকে
বেরিয়ে এল এক উদার আলোর ঝলকানি, তোমার মুখের
আনন্দকে ঘিরে ছিল এক উজ্জ্বল বসন্তের সমারোহ।
আমার নিশ্বাস দ্রুত হয়ে উঠল আনন্দে।
হে ঈশ্বর, আমি এতখানি আশা করিনি, আমি এর যোগ্য নই।
কিন্তু হায়, সকলের সূর্য সরে যেতেই বিষাদ নেমে এল অন্তরে;
তোমার চুম্বনে যে আনন্দ পেয়েছিলাম সে আনন্দ
দুরন্ত বেদনা হয়ে নেমে এল তোমায় চোখের কম্পমান পাতায়।
আমি বিদায় নিলাম তোমার কাছ থেকে তুমি তাকিয়ে রইলে
আমার পথপানে তাকিয়ে রইলে সজল চোখে।
তবু ভালোবেসে ও ভালোবাসা পেয়ে যে সুখ পেয়েছি
সে ঈশ্বর, কেন তার কোনও তুলনা নেই? কেন, কেন?
Wie in Morgeglanz
হে আমার প্রিয় বসন্ত, সকালের আলোয় কত উজ্জ্বল দেখাচ্ছে তোমায়
তোমার প্রেমের উত্তাপ আমার বুকে নিয়ে আসছে
অফুরন্ত সৌন্দর্য আর আনন্দের রঙিন সমারোহ।
আমি যদি তোমায় বুক ভরে আলিঙ্গন করতে পারতাম!
আমি যখন তোমার বুকে শুয়ে থাকি তোমার ফুল তোমার ঘাস
এসে বাধা বাঁধে আমার বুকের মাঝে।
তোমার দেহগ্রাত্রের বাতাস শীতল করে দেয় আমার বুকের
জলন্ত কামনাকে, কালের বাতাস হাত বুলিয়ে দেয় আমার গায়ে?
কুয়াশাঘেরা উপত্যকার ওপর থেকে নাইটিঙ্গেলরা আমায় ডাকে।
‘যাচ্ছি’ বলে ছুটে যাই আমি, ক্রমাগত উঠতে থাকি ওপরে।
মেঘেরা নেমে আসে। আমি চিৎকার করে বলি, হে পিতা,
তোমার বুকে স্থান দাও, আমাকে আলিঙ্গন করো।
থেল দেশে এক রাজা ছিলেন।
তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুকালে এক সোনার কাপ দিয়ে যান রাজাকে।
রাজা জীবনে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন সেই কাপটিকে,
যতবার তিনি মদপান করতেন সেই কাপ থেকে,
যতবার ভোজসভায় সেটিকে ব্যবহার করতেন ততবারই
চোখ থেকে জল ঝরে পড়ত তাঁর।
মৃত্যুকালে রাজা গোটা রাজ্যে ও রাজ্যের সব কিছু
নিঃশেষে দিয়ে গেলেন তাঁর উত্তরাধিকারীদের।
কিন্তু সেই কাপটি কাউকে দিলেন না।
তারপর এক শেষ ভোজসভায় শেষবারের মতো সেই কাপ থেকে
মদপান করে জানালা দিয়ে কাপটিকে ফেলে দিলেন।
প্রাসাদের পাশে বয়ে যাওয়া সমুদ্রের জলে।
স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন রাজা পতনশীল
সেই কাপটির দিকে, তাকে ডুবে যেতে দেখলেন ধীরে ধীরে
তারপর চক্ষু দুটি মুদ্রিত হয়ে এল আপনা থেকে
জীবনের সব মদ পান করা হয়ে গেছে তার।
হে জিয়াস, তোমার মেঘাস্ত্র দ্বারা সমস্ত স্বর্গলোক
সমস্ত অন্তরীক্ষ ছেয়ে দাও, পাহাড়ে পর্বতে
কাঁটাগাছ উপড়ে ফেলতে থাকো অর্বাচীন বালকের মতো
তোমার শক্তির পরিচয় করো ইচ্ছামতো।
অনেক কষ্টে গড়ে তোলা আমার পৃথিবী
তুমি ভেঙে দাও, যে ঘর তুমি কোনওদিন নিজে বাঁধনি
যে ঘরের শান্তির আস্বাদ নিজে কখনও পাওনি,
আমার সেই কত সাধের ঘরের শান্তি পুড়িয়ে ছারখার করে দাও।
হে স্বর্গস্থ দেবতাবৃন্দ, এটা খুবই দুঃখের বিষয় যে
তোমাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া মানুষের উৎসর্গ আর অঞ্জলির উপর
বেঁচে থাকতে হয় তোমাদের; ভিক্ষুক আর শিশুর মতো নির্বোধ
আশাবাদী ঐ সব মর্ত মানুষগুলো না থাকলে অনশন করতে
হতো তোমাদের, শুকিয়ে মরতে হতো স্বর্গের সমস্ত দেবতাদের।
যখন আমি শিশু ছিলাম এবং এবং কোনও ব্যাপারে হতবুদ্ধি হয়ে পড়তাম,
তখন সূর্যের দিকে বিহ্বল দৃষ্টি তুলে কাতর প্রার্থনা জানাতাম
অলক্ষ্য দেবতাদের উদ্দেশ্যে, ভাবতাম তারা শুনতে পাবে আমার কথা।
কিন্তু উদ্ধত অত্যাচারী টিটানদের হাত থেকে কে আমায় রক্ষা করেছে?
কে আমায় রক্ষা করেছে নিশ্চিত মৃত্যু আর দাসত্বের নিষ্ঠুর কবল থেকে?
হে আমার উজ্জ্বল অন্তরাত্মা, তুমি কি নিজেকে নিজে উদ্ধার করনি?
অথচ নিজেকে নিজে উদ্ধার করে সে উদ্ধার জন্য শৈশবসূলভ
অজ্ঞতাহেতু ধন্যবাদ দিয়েছ সেই সব উদাসীন দেবতাদের।
কেন আমি তোমার সম্মান করব জিয়াস? কি কারণে?
তুমি কি কখনও আমার ভারাক্রান্ত হৃদয়ের ব্যথাভার দূর করেছ?
তুমি কি কখনও আমার ত্রাসক্লিষ্ট দুচোখের অশ্রু মুছিয়ে দিয়েছ?
সর্বশক্তিমান কাল আর শাশ্বত নিয়তি কি তোমার আমার
দুজনেরই অবিসম্বাদিত প্রভু নয় যারা আমায় সামান্য মানুষের পরিণত করেছে?
তুমি কি মনে ভাব আমার অপুষ্পিত স্বপ্নগুলো প্রস্ফুটিত হয়ে উঠতে
পারেনি বলেই আমি জীবনকে ঘৃণা করতে থাকব, চলে যাব দূর অরণ্যে?
কিন্তু জেনে রেখো আমি এখানে এই পৃথিবীর বুকেই বসে আছি এবং থাকব,
মানবজাতিকে গড়ে তুলব আমার মনের মতো করে।
তারা হয়ে উঠবে আমারই মতো পৌরুষে অপরাজেয়, সুখে-দুঃখে অবিচলিত
তারা দুঃখ ভোগ করবে, কাঁদবে, আনন্দে উদ্বেল হবে।
আর আমারই মতো তোমার মতো যত সব দেবতাদের উপেক্ষার চোখে দেখবে।
Mein Ruh ist hin
আমার জীবনের সব শান্তি চলে গেছে, নীরব ব্যথাভারে
ভারী হয়ে উঠেছে আমার অন্তর, সে শান্তি ফিরে পাব না আর কখনও
না, আর কখনই না।
যে সব জায়গায় সে নেই সে সব জায়গা এক একটা আস্ত কবর
বলে মনে হয় আমার কাছে, সমস্ত জগৎটা হয়ে ওঠে দুঃসহভাবে তিক্ত
আমার মাথা ঘুরে গেছে, মন হয়ে গেছে ছিন্নভিন্ন।
আমার জীবনের সব শান্তি চলে গেছে, অন্তর হয়ে উঠেছে ভারী
এ শান্তি আর কখনও ফিরে পাব না জীবনে।
আমি আমার ঘরের জানালা দিয়ে কখনও তাকালে
শুধু তারই খোঁজ করি, ঘরের বাইরে গেলে যেন এগিয়ে যাই তারই দিকে।
তার সুন্দর চেহারা, মুখের হাসি, চোখের দৃষ্টি, কথা বলার ভঙ্গিমা,
হাতের মৃদু চাপ আর চুম্বন–না না আমি কখনও ভুলব না।
আজ আমার অন্তর একান্তভাবে চাইছে শুধু তার অন্তরকে
আর দেহ চাইছে তার দেহকে প্রাণভরে আলিঙ্গন ও চুম্বন করতে,
চাইছে তার চুম্বনের দুরন্তমধুর চাপে সমস্ত চেতনা হারিয়ে ফেলতে।
und frische Nahrung, neus blut
আমি এখন এই মুহূর্তে বিরাজ করছি উদার প্রকৃতির বুকের উপর।
সহস্রধারার উৎসারিত বুকে তার বুকের রক্ত পান করছি আমি।
আর অফুরন্ত প্রাণবায়ু শোষণ করে নিচ্ছি আমি
আমার শুষ্ক নিশ্বাসের মধ্যে দিয়ে।
এইভাবে সজীব ও সতেজ হয়ে উঠছি আমি, ফেটে পড়ছি
অদম্য প্রাণশক্তির অমিত উচ্ছ্বাসে।
ঢেউ-এর তালে তালে আমাদের নৌকোটা দুলছে
অভ্রলেহী পাহাড়গুলো প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে আছে আমাদের পথের দু’পাশে।
হে আমার আয়ত উদার চক্ষু, কিসের ভারে অবনত হচ্ছ তুমি?
সোনালী স্বপ্নগুলো আবার ফিরে এসেছে? কিন্তু আমি তো
বিদায় দিয়েছি তাদের। চলে যাও হে সুবর্ণ স্বপ্নরাজি, কোনও প্রয়োজন নেই
এখানে তোমাদের, কারণ এখানে আছে জীবন, আছে প্রেম।
তরঙ্গায়িত এ হ্রদের জলে সোনার মতো কাঁপতে থাকে
আকাশের অসংখ্য তারার প্রতিফলন, দু পাশের নুয়ে পড়া গাছের
পরিণত ফলেরা প্রতিবিম্বিত হয়ে উঠে সে জলে।
আর ঠিক তখনি পলাতক নরম কুয়াশার দল দিগন্তের বুকে
ঘন হয়ে পান করতে থাকে আশ্চর্য এক আলোর নির্যাস।
Fetter grine, du lamb
আমার জানালার ধারে বেড়ে ওঠা হে আঙ্গুরলতার
পাতাগুলো, তোমরা আরও সবুজ হয়ে ওঠ।
হে জাম ফলের দল, তোমরা বড় হও, পরিণত
ও পূর্ণাবয়ব হয়ে ওঠ আরও তাড়াতাড়ি।
সূর্যমাতার শেষ দৃষ্টির রশ্মি মমতার তাপ দান করেছে তোমাদের
উদার আকাশ থেকে ঝরে পড়েছে নীল স্নেহের পশরা
চাঁদের মিষ্টি নিশ্বাস শীতল করেছে তোমাদের দেহগাত্রকে।
সবচেয়ে বড় কথা, আমার সজীব প্রেমের তপ্ত অশ্রুর দ্বারা।
সিক্ত হচ্ছ তোমরা।
Der du wib dem Himmel bist
তুমি স্বর্গ থেকে নেমে এসে আমার দুঃখ-বেদনার
সব আবেগকে স্তব্ধ করে দাও। আবার আমাদের মতো
যারা হতভাগ্য তাদের অন্তর পূর্ণ করে দাও দ্বিগুণ সান্ত্বনা দিয়ে।
কিন্তু এই সব আনন্দ-বেদনার অর্থ কি? আমার এসব ভালো লাগে না।
হে মধুর শান্তি, আমার বুকে এস, বুকে এস আমার
আর আমি কিছুই চাই না।
২
সমস্ত পাহাড় আর গাছের মাথাগুলো শান্ত, আশ্চর্যভাবে শান্ত
চারদিকে এত শান্ত যে কারও নিশ্বাস পর্যন্ত শোনা যায় না।
অনবরত কিচমিচ করতে থাকা ছোট ছোট পাখিগুলো
বনের গভীরে চলে গেছে। একটু থামো,
সব বিক্ষোভের ঢেউ পেরিয়ে শান্ত ও স্তব্ধ হয়ে উঠবে
তোমারও অন্তরাত্মা।
ওদের মতো তুমিও শান্ত হয়ে উঠবে, নীরব হয়ে উঠবে।
Fullest wieder Bisch and Tal
আবার তুমি সমস্ত অরণ্য আর উপত্যকাকে তোমার
কুহেলিকাময় ঐশ্বয়ের প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দিয়েছ।
অবশেষে আমার আত্মাকে মুক্তি দিয়েছ তুমি।
পরম বন্ধুর মতো তুমি তোমার স্নিগ্ধ দৃষ্টির আলো
ছড়িয়ে দিচ্ছ তোমার প্রতিটি ঊষর প্রান্তরে।
অতীতের সুখ-দুঃখের প্রতিটি শব্দ ধ্বনিত
প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠছে আমার শূন্য অন্তরে।
একা একা আনমনে পথ হেঁটে চলেছি আমি, আমার পথের দু’ধারে
কত আনন্দ-বেদনার ফুল ফুটে আছে, অথচ তাদের দিকে
আমি ফিরেও তাকাই না, শুধু এগিয়ে চলি আমি এক একা।
হে নদী, সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গর্জন করতে করতে
ছুটে চল তুমি, আমি জানি সব হাসি সব চুম্বন মিথ্যা।
আজকের এই মূল্যবান রত্নটি একদিন লাভ করেছিলাম
আমি, একথা আজ ভুলে যেতে চাই আমি।
পাহাড় আর উপত্যকার মধ্য দিয়ে অশান্ত বেগে ছুটে চলো নদী।
শীতের রাতে বা মুক্তোর মতো বসন্তের সকালে
সমানভাবে তুমি বয়ে চলো, গর্জন করতে করতে ছুটে চলো।
কোনও রাগ দুঃখ না করে সে সব আসক্তিকে ঝেড়ে ফেলে
সরে যেতে পারে জগৎ থেকে সেই সুখী। সেই একমাত্র সুখী।
হায়, অন্তহীন রাত্রির অন্ধকারে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ও অবজ্ঞাত অবস্থায়
এক একা অন্তরের গোলকধাঁধায় ঘুরে বেড়ানো সত্যিই কি ভয়ঙ্কর ব্যাপার!
Des menchen Seele
মানুষের আত্মা ঠিক জলের মতন, জল যেমন
আকাশ থেকে পড়ে আকাশেই উঠে যায়; আবার
পৃথিবীতেই ফিরে আসে তেমনি মানুষের আত্মাও
স্বর্গ থেকে আসে, স্বৰ্গকামনায় উন্মুখ থাকে সারাজীবন
অবশেষে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে।
পাহাড়, পর্বত হতে যে স্বচ্ছ জলধারা বেড়ে ঝরে পড়ে
পৃথিবীর সমতলে সেই জল বাষ্পীভূত হয়ে পরিণত হয়
ঘন মেঘে, যে মেঘ বৃষ্টির স্বচ্ছ রূপালি জল
হয়ে ঝরে পড়ে মাটির পৃথিবীতে।
সমতলভূমি এ জলের গতি যেখানে অব্যাহত অপ্রতিহত
সেখানে সে শান্ত স্বচ্ছ, সেখানে সে মাথার আকাশ
দু’পাশের পাহাড় আর গাছপালার প্রতিফলন স্বচ্ছন্দে
ধারণ করে তার শান্ত বুকে।
কিন্তু বন্ধুর পার্বত্য অঞ্চল যেখানে পদে পদে গতি তার
ব্যাহত ও প্রতিহত সেখানে উচ্ছল প্রতিবাদে সে ফেনায়িত।
বাতাস জলকে দেখতে ভালোবাসে, ভালোবাসে তার তরঙ্গমালাকে।
তাই জলও বাতাসকে দেখে ফুলে ওঠে আনন্দে, আবেগে উচ্ছ্বাসে।
হে মানবাত্মা, তুমি কত জলের মতো, তোমার ভাগ্য
বাতাসের মতোই কতই না অস্থির, কতই না চঞ্চল।
Wenn der uralte
আমাদের প্রাচীনতম পরম পিতা যখন শান্ত হাতে
কৃষ্ণকুটিল মেঘমালা হতে বিদ্যুদ্দাম বিচ্ছুরিত করেন
তখন সেটাকে তার উজ্জ্বল পোশাকের অংশ ভেবে
চুম্বন করি, সঙ্গে সঙ্গে শিশুসুলভ এক বিকম্পনে
আলোড়িত হয়ে ওঠে আমার বুক।
কোনও মানুষ কখনও দেবতাদের সমান মহত্ত্ব অর্জন
করতে পারে না, কারণ যদি সে কোনও রকমে
তার উদ্ধত অহঙ্কারী মাথাটাকে নক্ষত্রদের রাজ্যে তুলে
নিয়ে যেতে পারে কখনও তাহলে সে কোথাও পাবে না
তার পা রাখার জায়গা, তখন সে হয়ে উঠবে
মেঘ আর বাতাসের হাতে অসহায় এক খেলার পাত্র।
যদি সে এই পৃথিবীর শক্ত মাটির উপর মাথা তুলে দাঁড়ায়
তাহলে তার সে মাথার উদ্ধত উচ্চতা এমন কি কোনও
ওক বা আঙ্গুর গাছের মাথার সমানও হতে পারবে না,
দেবতা তো দূরের কথা।
তাহলে দেবতা ও মানুষের মাঝে পার্থক্য কোথায়?
দুজনের মধ্যে অনন্তকাল থেকে বয়ে চলেছে
অসংখ্য তরঙ্গে তরঙ্গায়িত শাশ্বত এক ব্যবধানের নদী।
সে নদীর তরঙ্গ মাঝে মাঝে আমাদের উপরে তুলে দেয়।
কখনও বা আমাদের গ্রাস করে, আমাদের ভাসিয়ে বা ডুবিয়ে নিয়ে যায়।
এক সঙ্কীর্ণ আংটা দিয়ে ঘেরা আমাদের জীবনের অস্তিত্ব।
এইভাবে পাশাপাশি আমাদের অসংখ্য জীবনাস্তিত্বের
আংটা যুক্ত হয়ে অবিচ্ছিন্ন ও অব্যাহত করে তুলছে
আমাদের জীবনধারা ও বংশপরম্পর্যকে।
We reitel so spat durch Neceht and Wind
কে এত রাত্রিতে এই উত্তাল বাতাসের মধ্য দিয়ে
ঘোড়ায় চেপে যাচ্ছে জনমানবহীন পথের উপর দিয়ে?
কোনও এক শিশুপুত্রসহ পিতা যাচ্ছে, বনের মধ্যে
শিশুপুত্রটিকে চেপে ধরে কনকনে বাতাসের কামড় থেকে
রক্ষা করছে তাকে।
পিতা বলল পুত্রকে, হে আমার পুত্র, কেন তুমি মুখটাকে
ঢেকে রাখছ? পুত্র বলল, পিতা, দেখছ না উজ্জ্বল
পোশাক পরিহিত সোনার মুকুট মাথায় মেঘের রাজাকে?
পিতা বলল, ওটা আসলে রাজা নয়, মেঘের সৃষ্ট এক অলীক অবয়ব।
‘হে আমার প্রিয় শিশু, আমার সঙ্গে এস, আমি তোমার সঙ্গে
কত মজার মজার খেলা খেলব, নদীর ধারে কত ভালো ভালো ফুল আছে।
কত উজ্জ্বল চকচকে জমকালো পোশাক আছে আমার মার কাছে।’
পিতা, পিতা, শুনতে পাচ্ছ না, মেঘের রাজা কি বলছে আমার কানে কানে
‘চুপ করো পুত্র, ও হচ্ছে শুকনো পাতায় লাগা বাতাসের শব্দ।’
‘শোনো শোনো হে শিশু, তুমি আমার কাছে আসবে? আমার মেয়ে
তোমার দেখাশোনা করবে, রোজ রাতে সে নাচবে, তোমায় ঘুম পাড়াবে।’
শোনো, শোনো পিতা, মেঘের রাজার কন্যাকে দেখতে পাচ্ছ না?
‘আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমার সুন্দর চেহারা মুগ্ধ করেছে
আমাকে, যদি তুমি আমার কাছে না আস তাহলে জোর করে
তোমায় ধরে আনব আমি, জোর করে টেনে আনব তোমায়।
পিতা পিতা, দেখতে পাচ্ছ না, মেঘের রাজা আমায় ধরে
নিয়ে যাচ্ছে, আমায় আঘাত করেছে। হা হা, মেঘের রাজা–
ভীত সন্ত্রস্ত্র পিতা তাই ঘোড়ায় চেপে তার আহত পুত্রকে নিয়ে
পালিয়ে যাচ্ছে অজানার পথে। কোনও রকমে একটা গ্রাম খামারে
তাকে পৌঁছতে হবে। কিন্তু হায়, ছেলেটা তার পিতার কোলেই মারা গেল।
Wer nie sein Brot mit Trunen
যার কষ্টার্জিত রুটির উপরে চোখের জল ঝরে পড়েনি,
যে কখনও সারারাত বিছানায় বসে কেঁদে কাটায়নি,
সে কখনও ঈশ্বরের মহিমাকে জানতে পারেনি।
হে ঈশ্বর, তুমিই আমাদের জীবন দান করো,
দরিদ্রদের অন্তরকে দোষ দিয়ে কলুষিত করো তুমিই।
তারপর দুঃখের সীমাহীন যন্ত্রণায় তুমিই তাদের ফেলে দাও।
Kennest du das land
তুমি কি জান সে দেশের ঠিকানা যেখানে লেমন ফুল ফোটে
থোকা থোকা, যেখানে সোনারবরণ কমলালেবু চকচক করতে থাকে
ঘন শ্যামল পাতার ফাঁকে ফাঁকে, যেখানে সবুজ বাতাস
ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসে নীল আকাশ থেকে আর
মার্বেল গাছগুলো খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো?
সে দেশের ঠিকানা তুমি জান কি? আমি তোমাকে নিয়ে যাব সেই দেশেই।
সেখানকার বাড়িটা তোমার জানা আছে যার বিরাট ছাদটা
দাঁড়িয়ে আছে কতকগুলো স্তম্ভের উপর, যার সুসজ্জিত হলঘর
আর উজ্জ্বল প্রকোষ্ঠগুলো নির্জনতায় স্তব্ধ হয়ে আছে আর
মর্মর প্রান্তরের প্রতিমূর্তিগুলো তোমারই পথ চেয়ে তাকিয়ে আছে?
তোমাকে সঙ্গে নিয়ে আমি সেখানেই যাব, সেই দেশেই যাব।
সে দেশের পথ তুমি জান কি?
চারদিকের বড় বড় পাহাড়গুলোর মাঝখান দিয়ে কুয়াশাঘেরা পথগুলো
এঁকেবেঁকে চলে গেছে, যেসব পাহাড়ের গুহায় প্রাচীন ড্রাগন
বাস করে, কত ঝর্না ঝাঁপিয়ে পড়ে যাদের মাথা থেকে।
সেই পাহাড়ি পথ দিয়ে আমরা সেখানে সেই দেশেই যাব প্রিয়তমা।
Es furchte die Gotter
মানব সন্তানদের অবশ্যই ভয় করে চলতে হবে দেবতাদের।
কারণ দেবতাদের শ্বাশত হাতেই আছে আইনকানুনের
যত সব অনুশাসন যা তারা ইচ্ছামতো প্রয়োগ করতে পারেন।
যে সব মানুষকে দেবতারা তুলে দেন উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে।
সেই সব মানুষরা থাকে আরও ভয়ে ভয়ে, কারণ
সেই শিখরের উপর যেখানে দেবতাদের ভোজসভা বসে সেখানে
আছে বড় বড় মেঘের খাড়াই পাহাড় আর তার মাঝে মাঝে আছে
সীমাহীন শূন্যতা যেখানে একটু কোনও ত্রুটিবিচ্যুতি ঘটলেই
মানুষকে পড়ে যেতে হবে তলিয়ে যেতে হবে সীমাহীন অন্ধকার
আর শূন্যতার মাঝে।
অথচ দেবতারা অবলীলাক্রমে এক মেঘের পাহাড় থেকে
আর এক পাহাড়ে যাওয়া-আসা করেন, সোনার টেবিলে
অনন্তকাল ধরে চলে তাদের ভোজসভা।
এইসব দেবতারা কোনও মানুষকে ভালোবাসলেও তার
বংশধরদের পরে চিনতে পারেন না, ভালোবাসেন না।
এ কথা নিয়তির, নিয়তির এ গান ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত
হয়ে চলেছে পাহাড়ে-পর্বতে আবহমান কাল হতে।
Froh empfind cih mich nun
চিরায়ত সাহিত্যের এই উদার পটভূমিতেই সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ বোধ করি আমি,
সবচেয়ে আনন্দ পাই, অতীত ও বর্তমান একযোগে কথা কয় যেন।
হোরেসের কথামতো এ গ্রন্থের পাতা উল্টে যাই আমি রোজ,
পাই নূতন নূতন আস্বাদন। কিন্তু সারারাত আমাকে কাটাতে হয়
আমার প্রিয়তমার নিবিড়তম সাহচর্যে, যে সঙ্গসুখে হয়ত কোনও
উপদেশ বা জ্ঞান অর্জন করি না, কিন্তু তাতে দ্বিগুণীকৃত হয়
আমার আনন্দের আবেগ। আমি যখন আমার প্রিয়তমার
মর্মরপ্রস্তুরসন্নিভ সুন্দর বক্ষস্থল আর নিতম্বের উপর হাত বুলিয়ে দেখি
তখনও আমি অনেক কিছু শিক্ষা পাই, অতীতের অসংখ্য সুন্দরী
নারীর সঙ্গে তাকে তুলনা করি, তার অঙ্গলাবণ্যের মেদুর স্পর্শে
আমি পাই এক অগ্রপ্রসারী অনুভবের ব্যাপকতা।
আমি তার আলিঙ্গনের নিবিড়তার মাঝে কবিতা লিখি,
আমার কবিতা সুন্দর হয়ে ওঠে তার দেহসৌন্দর্যের ছোঁয়ায়।
কখনও বা ঘুমিয়ে পড়ি তার বুকের উপর মাথা রেখে।
দিনের বেলায় আমার প্রিয়তমার সময় না হলেও সারাটি রাত
এইভাবে সঙ্গ ও সেবা দান করে চলে আমাকে সে।
দেখতে দেখতে গম্ভীর হয়ে আসে নিশীথ রাত্রি, ম্লান হয়ে আসে
আমার বাতির আলো, আর সেই রহস্যময় নৈশ অবকাশে
আমার মন চলে যায় প্রাচীন রোমের সুদূরে আর তখনি
সহসা মনে হয় আমার এই কালাত্তীর্ণ সুন্দর প্রিয়তমাই হয়ত বা
প্রাচীন রোমের সেই কর্মক্লান্ত ত্রয়ীশাসকদেরও সঙ্গ বা সেবা দান করত ঠিক এইভাবে।
Herbstilick lenchtet die Flamame
এই সাক্ষ্য আগুনের কাঠগুলো পুড়ে পুড়ে ছাই হয়ে যাবার আগেই
এসে হাজির হবে আমার প্রিয়তমা, বৎসরের অফুরাণ আনন্দের
উত্তাপে উত্তপ্ত ও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে আমাদের সেই নৈশ মিলনকাল।
আমাদের সেই মিলনশয্যা ছেড়ে পরদিন সকালেই চলে যাবে।
আমার প্রিয়তমা, কিন্তু তার যাবার সময় নির্বাপিত অগ্নির
ভগ্নস্তূপে জ্বলে উঠবে আবার নতুন এক অগ্নিশিখা,
নির্বাপিতপ্রায় আনন্দাগ্নির প্রায়ান্ধ শীতলতায়
আবার জেগে উঠবে প্রাণমাতানো আনন্দের উত্তাপ আর উজ্জ্বলতা।
Zunde min Eicht an knabe
বাতিটা জ্বালিয়ে দাও হে বালক, অবশ্য এখনও
দিনের আলো আছে, সন্ধে হতে এখনও আধঘণ্টা বাকি আছে,
বাড়িগুলোর ওধারে সূর্য ঢাকা পড়লেও পাহাড়গুলোর মাথা থেকে
এখনও সরে যায়নি সূর্যরশ্মি।
না না, জানালার কপাটগুলো এখনি বন্ধ করো না, শুধু
বাতিটা জ্বালিয়ে দাও, এখনি এই মুহূর্তে বাতি জ্বালাও
আমার প্রিয়তমা সন্ধে হলেই আজ এসে পড়বে।
হ্যাঁ, ঠিক সে আসবে, ইতিমধ্যে সে আমার বাতি,
রাত্রির উজ্জ্বল দূত, সে না আসা পর্যন্ত আমাকে সান্ত্বনা দেবে তুমি।
Ich denke deirm
সূর্যের আলো যখন চকচক করতে থাকে সমুদ্রের ঢেউ-এর উপর
তখন তোমার কথা মনে পড়ে, যখন ঝর্নার জলাধারায়
প্রতিবিম্বিত হয়ে ওঠে চাঁদের আলো, তখনও মনে পড়ে তোমার কথা।
ধূসর ধূলিজালে সমাচ্ছন্ন হয়ে ওঠে যখন সুদূরের পথরেখা
তখন তার মধ্যে আমি তোমাকেই দেখি, আমি তোমায় দেখি
যখন গভীর নিশীথে সংকীর্ণ কোনও সাঁকোর উপর
কাঁপতে থাকে কোনও চলমান পথিক।
ক্ষুব্ধ গর্জনে যখন ফেটে পড়ে কোনও উত্তাল ঢেউ তখন
যত দূরেই থাকো না তুমি মনে হয় আমি তোমার কাছেই আছি,
মনে হয় আমি শুনতে পাচ্ছি তোমার কথা।
মাঝে মাঝে আমি চলে যাই নির্জন পথে, আর সুনিবিড় সুপ্রাচীন
স্তব্ধতার মাঝে আমি শুনতে পাই কত না-বলা কথা।
তুমি যত দূরেই থাকো না, আমি তোমার কাছে কাছেই থাকি,
তুমিও আমার কাছে কাছেই থাকো।
এখন সূর্য অস্ত যাচ্ছে, একটু পরে তারা উঠবে আকাশে,
তারারা কিরণ দেবে আমাকে, যদি তুমি এখন এই মুহূর্তে
নেমে আসতে আমার কাছে, থাকতে আমার কাছেই।
Hiel ta diesen fruhemn Segen
হায়, মাত্র আর একটা ঘণ্টা যদি বাঁচিয়ে রাখতে
এই সৌন্দর্যের সজীব সমারোহকে। কিন্তু হায়,
নিদাঘের উত্তপ্ত ঝড় মুহূর্তে ঝরিয়ে দেবে সব ফুলগুলোকে।
ফুল ঝরে গেলেও গাছের যে সবুজ পাতাগুলো ছায়া দান
করবে আমার সেই সব পাতাদের দেখেও কিছু আনন্দ পাব আমি।
শরতে যখন এই সব পাতারাও বিবর্ণ হয়ে উঠবে তখন
আবার কোনও ঝড় এসে ঝরিয়ে দেবে ওদের।
যদি তুমি ফল পেতে চাও গাছ থেকে তাহলে দেরি করবে না।
তাড়াতাড়ি করো, কারণ এ ফল বেশিদিন থাকবে না,
পেকে গেলেই ঝরে পড়বে, আবার জন্মাবে নূতন ফল।
এ বন এ বাগান ক্রমাগত বদলে যাচ্ছে ঋতুতে ঋতুতে।
এই সব গাছ স্নিগ্ধশ্যাম এক নূতন শ্রী নূতন শোভা ধারণ করে প্রতিটি বর্ষায়।
যেমন ক্রমাগত বদলে যাচ্ছে নদীর জল, একই নদীতে
তুমি কখনই সাঁতার কাটতে পার না দুবার। শুধু নদী কেন,
তুমি নিজেও তো বদলে যাচ্ছ, যে সব সৌধ যে সব প্রাসাদ
একদিন পাহাড়ের মতোই অটল মনে হতো, তাদের রূপ আজ
বদলে যাচ্ছে তোমার পরিবর্তনশীল চোখের দৃষ্টিতে।
তোমার যে ওষ্ঠাধর একদিন চুম্বন স্পর্শে প্রাণবন্ত হয়ে উঠত,
তোমার যে পা একদিন পাহাড়ের উপর অটল
সাহসে ভর করে দাঁড়িয়ে থাকত তারা আজ নেই।
যে হাত তোমার একদিন পরের কত উপকার করত।
মঙ্গল সাধন করত অকাতরে তা আজ নেই, এমন কি
তোমার দেহাবয়বও বদলে গেলে অনেকখানি।
এখন যেন তুমি সম্পূর্ণ অন্য মানুষ, অন্য দেহ, অন্য মন।
এখন তোমার শুরু আর শেষ সব একাকার হয়ে যাক,
তুমি খুব দ্রুত, এইভাবে বদলে যাও, তবে কাব্যকলার
অধিষ্ঠাত্রী দেবীকে ধন্যবাদ দাও। এই পরিবর্তনমান জগৎ ও জীবনের
মাঝে যা কিছু অপরিবর্তনীয়, যা কিছু অক্ষয় থাকে তুলে ধরে রাখেন তিনি
চিরসুন্দর করে রাখেন তিনি যুগ যুগ ধরে তোমার অন্তরাত্মাকে আনন্দ দান করার জন্য।
Ict ging on walde
নির্জন বনভূমির মাঝে একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম আমি
অথচ কোনও কারণ ছিল না, বিশেষ কোনও কিছু চাইছিলাম না।
একটা ছায়াঘেরা কুঞ্জে ছোট্ট ফুল দেখছিলাম আমি,
সন্ধ্যাতারার মতো জ্বল জ্বল করছিল ফুলটা, যেন
একজোড়া সুন্দর চোখ চেয়ে আছে আমাদের পানে উজ্জ্বলতম দৃষ্টিতে।
ফুলটা আমি ছিঁড়তে গেলে ফুলটা বলল আমায়,
আমাকে তুমি ছিঁড়ে ফেললেই তো শুকিয়ে যাব আমি।
আমি তখন শিকড় সমেত গোটা ফুল গাছটাকে উপড়ে
আমার সুন্দর বাগানে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিতাম।
সে জায়গাটাও বেশ নির্জন এবং গাছটাতে এখন ফুল ফোটে।
Sagt es niemad, nur dine weisen
একথা একমাত্র বিজ্ঞ ছাড়া আর কাউকে বলো না,
কারণ সাধারণ মানুষ একথা শুনলে বিদ্রূপ করবে,
বিদ্রূপ করবে আমাকে যদি বলি আমি শুধু তাদেরই প্রশংসা করি।
যারা জ্বলন্ত আগুনে ঝাঁপ দিয়ে মরতে চায়।
মিটমিটে বাতিজুলা প্রেমঘন যে নিশীথে তোমার জন্ম হয়
যে নিশীথে তুমি জন্মদান করো তোমার সন্তানকে সেই নিশীথে
স্বল্পায়িত দীপালোকে কত আশঙ্কা ভিড় করে আসে আজ তোমার মনে।
তুমি কিন্তু এই নিশীথ রাত্রির ছায়ান্ধকারে বসে থাকতে চাও না,
তুমি চাও আরও উপরে উঠতে, তুমি চাও আরও উন্নত মিলন।
কোনও দূরত্ব অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারে না তোমার পথে,
মোহমুগ্ধ উদভ্রান্তপ্রাণ পতঙ্গের মতো তুমি উড়ে যাও,
উড়ে যাও শুধু জ্বলে পুড়ে মরার জন্য।
আসল সত্যটা শেষ পর্যন্ত না জানা পর্যন্ত তোমার কোনও
রূপান্তর হয় না, কোনও পরিবর্তন হয় না,
এক বাঞ্ছিত অতিথির মতো ঘুরে বেড়াও এই অপরিচিত পৃথিবীতে।
Mag der Grieche Seinen ton
কোনও এক গ্রীক শিল্পীকে কাদামাটি দিয়ে একটি মূর্তি গড়তে দাও,
তার সেই শিল্পকর্ম থেকে যত খুশি আনন্দ পেতে দাও তাকে।
কিন্তু আমি যে আনন্দ পেতে চাই না, আমি ইউফ্রেতিস নদীতে
হাত ডুবিয়ে এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়িয়ে লাভ করব যত সব ক্ষণভঙ্গুর আনন্দ।
এইভাবে যখন শীতল হয়ে উঠবে আমার অন্তরাত্মার উত্তাপ
তখন আপনা থেকে গান বেরিয়ে আসবে আমার কণ্ঠ থেকে
সে গান কোনও কবির হাতে পড়লে নিরাবয়ব জলও হয়ে উঠবে মূর্ত।
ঐ দেখো প্রিয়তমা, ঐ দেখো সবুজ গাছের শাখায় কত ফল ঝুলছে,
ঝুলছে কত দিন ধরে আর যে শাখাগুলো তাদের কোলে আশ্রয় দিয়েছে
ফলগুলোকে সেই সব শাখারা শুধু হাওয়ায় দুলছে।
সকলের অলক্ষ্যে অগোচরে আমরা বাদামী অন্তরটা ঐ সব ফলের মতোই
ফুলে উঠেছে পেকে উঠেছে ভিতরে ভিতরে
সে অন্তর আমার বাতাসের স্পর্শ চায়, তার স্বর্গের মুখ দেখতে।
Wie the dem Tag
নিয়তি
যেদিন তুমি প্রথম এই পৃথিবীতে এসেছিলে তখন গ্রহনক্ষত্ররা
যেভাবে দাঁড়িয়ে সূর্যকে অভিবাদন জানিয়েছিল সেইভাবেই জীবন
শুরু হয়েছে তোমার। সেই সব গ্রহনক্ষত্রদের অবস্থানজনিত
আইনের দ্বারা অনুশাসিত হচ্ছে তোমার জীবন।
সিবিন ও প্রাচীন ভবিষ্যদ্বক্তারা বলেছেন নিয়তির এই
অনুশাসন থেকে মুক্তির কোনও উপায় নেই। কোনও কাল কোনও শক্তি
তোমার জন্মদিনে গড়ে ওঠা ভাগ্যের কোনও পরিবর্তন করতে পারবে না।
দৈব
তথাপি এক পরিবর্তনশীল শক্তি আমাদের কাছে কাছে থেকে
নিয়তির কঠোর বিচার ও অনুশাসনকে আনন্দে পরিণত করে তোলে
আমাদের। হে দৈব, তুমি একা থাকো না, মানুষের সমাজে থেকে
তুমি খাপ খাইয়ে নাও সবার সঙ্গে। জীবনে আমাদের
কোনও কোনও ঘটনা হয় অনুকূল, কোনও কোনও ঘটনা হয় প্রতিকূল।
আমরা কেউ কেউ ঘটনা নিয়ে পুতুলের মতো খেলা করি।
হে দৈব, তুমি হচ্ছ সেই আলোক শিখা যার পথ চেয়ে
বসে আছে আমাদের অসহায় জীবনের বাতিগুলো।
প্রেম
এই প্রেম কখনও মরে না, স্তব্ধ হয় না একেবারে।
মনে হয় এ প্রেম পাখির মতো ডানা মেলে উড়ে যাবে আকাশ থেকে,
সমস্ত বসন্ত দিন জুড়ে আমাদের বুক ও মাথার চারদিকে উড়তে থাকে।
কখনও কখনও সে প্রেম জানিয়ে যায়, আমাদের দুঃখ দেয়,
কিন্তু একেবারে পালায় না, আবার ফিরে আসে আর তখন সকল বেদনার
অবসানে অফুরন্ত আনন্দের চঞ্চল আবেগে নিকম্পিত হয়ে ওঠে
আমাদের অন্তর। অনেক অন্তর অনেককে বিলিয়ে দেয় নিজেদের
কিন্তু যারা মহান তারা হয় এককেন্দ্রিকতায় অবিচল।
প্রয়োজন
আবার কেউ গ্রহনক্ষত্রের বিধান, নিয়তির অনুশাসন আর নিয়ন্ত্রণ।
আমাদের ইচ্ছারাও নিয়তির দাস, তারা যন্ত্রবৎ নিয়ন্ত্রিত হয়
নিয়তিজনিত প্রয়োজনের দ্বারা আমাদের স্বাধীন ইচ্ছার কোনও মূল্য নেই।
ফলে যা আমাদের অতি আকাক্ষিত, যা আমরা অন্তর দিয়ে
ভালোবাসি তাদের আমাদের অন্তরই প্রত্যাখ্যান
করতে বাধ্য হয় অবস্থার চাপে। তার ফল এই হয় যে
আমরা যারা নিজেদের স্বাধীন বলে মনে করি এবং সেই মতো চলি
তাদের অবস্থা হয়ে ওঠে আরও খারাপ, আরও দুঃখজনক।
আশা
আমাদের চারদিকে ঘিরে থাকা পিতলের নিচ্ছিদ্র দেওয়ালে
যে কঠিন দরজা আছে সে দরজার তালা খোলা যেতে পারে।
সুদুর প্রাচীনকাল হতে পাহাড়ের মতো অচল অটল
হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঐ দেওয়াল আর দরজা
তার উপর সচল এক সত্তা অবাধে ঘুরে বেড়ায়।
মেঘ বৃষ্টি আর কুয়াশার মধ্য দিয়ে আমাদের তুলে নেয় অনেক উপরে।
আমাদের উড়ে চলার পাখা দেয়।
শুভ্র সমুজ্জ্বল পদ্মের মতো শান্ত দীপালোক বা দূরাগত
নক্ষত্রালোকের মতো হৃদয় হতে বেরিয়ে আসে প্রেমের আলো।
প্রাচীন নার্সিসাস ফুল ফুটে ওঠে বাগানে। একমাত্র
এই ফুলই হয়ত জানে সে কার জন্য ফুটছে।
ক্রমে ধীরে ধীরে পদক্ষেপে নেমে আসছে সন্ধ্যার অন্ধকারে।
শান্ত আলোকচ্ছটা বিকীরণ করে সন্ধ্যাতারা ফুঠে উঠছে নির্জন আকাশে।
অন্ধকার আর সন্ধ্যা কুয়াশার বিলীন হয়ে যাচ্ছে অথবা
অস্পষ্ট দেখাচ্ছে সব কিছু। লেকের কালো জল অন্ধকারে
কালো হয়ে উঠছে আরও।
এবার দূর আকাশে চাঁদের আলো দেখতে পাচ্ছি
জলের ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা ছিপছিপে চেহারার
উইলো গাছের শাখাগুলো উড়ন্ত কুস্তলচূর্ণের মতো বাতাসে উড়ছে।
আর তাতে চাঁদের আলোটা কাঁপছে আর কম্পমান
সেই আলোছায়ায় খেলা দেখতে দেখতে অন্তরে এক
প্রশান্তি নেমে আসছে আবার যা আগে অনুভব করিনি কখনও।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন