৩১. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জন্ম

রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জন্ম

রাসূলুল্লাহ (সা) সোমবার দিন জন্মগ্রহণ করেন। ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ মুসলিমে আবু কাতাদা (র) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, এক বেদুইন জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সোমবার দিনের রোযা সম্পর্কে আপনি কী বলেন? জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন : ঐ দিনেই তো আমার জন্ম এবং ঐ দিনেই আমার প্রতি ওহী অবতীর্ণ হয়।

ইমাম আহমদ (র) ইব্‌ন আব্বাস (রা)-এর বরাতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) জন্মগ্রহণ করেছেন সোমবার দিন, নবুওত পেয়েছেন সোমবার দিন, মদীনা হিজরতের উদ্দেশ্যে মক্কা ত্যাগ করেছেন সোমবার দিন, মদীনায় পৌছেছেন সোমবার দিন, তার ওফাত হয়েছে সোমবার দিন এবং হাজরে আসওয়াদ স্থাপন করেছেন সোমবার দিন। অপর এক বর্ণনায় আছে, সূরা মায়িদার আয়াত :55, 21 3.1.241, 11 (আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম) এর অবতরণ এবং বদর যুদ্ধও এই সোমবার দিন সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু এই অভিমতটি সঠিক নয়। কারণ, ইব্‌ন আসাকিরের মতে নির্ভরযোগ্য অভিমত হলো, বদর যুদ্ধ ও আলোচ্য আয়াতের অবতরণ শুক্রবার দিন হয়েছে। তার অভিমতটিই যথার্থ। আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রা) ইব্‌ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) সোমবার দিন জন্মগ্রহণ করেছেন এবং সোমবার দিনই ইন্তিকাল করেছেন। এভাবে ভিন্ন সূত্রে ইব্‌নে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) সোমবার দিন জন্মগ্রহণ করেছেন এবং সোমবার দিনই ইন্তিকাল করেছেন। এভাবে ভিন্ন সূত্রে ইব্‌নে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) সোমবার দিন জন্ম গ্ৰহণ করেছেন, তার সোমবার দিন জন্মগ্রহণ করার ব্যাপারে কারও কোন দ্বিমত নেই। যিনি বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) রবিউল আউয়াল মাসের সতের তারিখ শুক্রবার দিন জন্মগ্রহণ করেছেন, তিনি মারাত্মক ভুল করেছেন। হাফিজ ইব্‌নে দিহইয়া জনৈক শিয়ার ইলামুর রাবী বি-ইলামিল হাদী নামক গ্রন্থ থেকে এরূপ একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করেন। তিনি একে যায়ীফ বলে মন্তব্য করেছেন। এটা আসলেও দুর্বল।

জমহুর আলিমগণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত যে, রাসূলুলাহ (সা) জন্মের মাসটি হলো রবিউল আউয়াল মাস। তারিখের ব্যাপারে নানা অভিমত রয়েছে। ইব্‌ন আবদুল বার তাঁর ইসতিয়াব গ্রন্থে রবিউল আউয়াল মাসের ২ তারিখের কথা উল্লেখ করেছেন। ওয়াকিদীও অনুরূপ বর্ণনা

হুমায়াদী ইব্‌ন হাযম থেকে ৮ তারিখের কথা উল্লেখ করেছেন। মালিক, আকীল ও ইউনুস ইব্‌ন ইয়াখীদ প্রমুখ যুহরী মুহাম্মদ ইব্‌ন জুবোয়র ইব্‌ন মুৎইম সূত্রে এই অভিমত বৰ্ণনা করেছেন। ইব্‌ন আবদুল বার বর্ণনা করেছেন যে, ঐতিহাসিকগণ এই অভিমতকে সঠিক বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। হাফিয মুহাম্মদ ইব্‌ন মূসা আল-খাওয়ারেযমী এই অভিমতটি অকাট্য বলে দাবি করেছেন। হাফিযী আবুল খাত্তাব ইব্‌ন দিহহঁয়া তাঁর আত তানভীর ফী মাওলিন্দিল বাশীরিন নায়ীর গ্রন্থে এই অভিমতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। কারও কারও মতে, রবিউল আউয়াল মাসের দশ তারিখ। ইব্‌ন দিহইয়া তাঁর কিতাবে এই অভিমত উদ্ধৃত করেছেন। ইব্‌ন আসাকির আবু জাফর আল-বাকির থেকে এবং মুজালিদ (র) শাবী থেকে এই অভিমত উদ্ধৃত করেছেন। কারও কারও মতে রবিউল আউয়াল মাসের বার তারিখ। ইব্‌ন ইসহাক এ অভিমতের পক্ষে সুস্পষ্ট বক্তব্য পেশ করেছেন।

ইব্‌ন আবু শায়াবা তাঁর মুসান্নাফ গ্রন্থে হযরত জাবির (রা) এবং ইব্‌ন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) হাতির ঘটনার ধন্থর রবিউল আউয়াল মাসের আঠার তারিখ সোমবারে জন্মগ্রহণ করেন। এই দিনেই তিনি নবুওত লাভ করেন। এই দিনেই তার মিরাজের ঘটনা সংঘটিত হয়, এই দিনেই তিনি হিজরত করেন এবং এই দিনেই তার ওফাত হয়। জমহুরের নিকট এই অভিমতই প্ৰসিদ্ধ। আল্লাহই সম্যক জ্ঞাত।

কারও কারও মতে, রবিউল আউয়ালের সতের তারিখ। ইব্‌ন দিহইয়া কোন কোন শিয়া আলিম থেকে এটি উদ্ধৃত করেছেন। কেউ কেউ বলেন, রবিউল আউয়ালের ৮ দিন বাকী থাকতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ইব্‌ন দিহইয়া ইব্‌ন হাযম থেকে এই অভিমত উদ্ধৃত করেছেন। তবে ইব্‌ন হাযম থেকে বিশুদ্ধভাবে বর্ণিত দুটি মতের বিশুদ্ধতর প্রথমটি হচ্ছে নবী করীম (সা)-এর জন্ম রবিউল আউয়ালের আট তারিখে। তা থেকে বর্ণিত দ্বিতীয় অভিমতটি হচ্ছে এই যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রমযান মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন। এটি অত্যন্ত গরীব পর্যায়ের বর্ণনা। এই অভিমতের ভিত্তি এই যে, যেহেতু সর্বসম্মত মতে কোনও এক রমযান মাসে নবী করীম (সা)-এর প্রতি প্রথম ওহী নাযিল হয়। আর তা ছিল তাঁর চল্লিশ বছর বয়সে, কাজেই তার জন্মও রমযান মাসেই হয়ে থাকবে। তবে এই অভিমতটিতে বিতর্কের অবকাশ রয়েছে।

খায়৷ছামা ইব্‌ন সুলায়মান….. ইব্‌ন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) রবিউল মাসে সোমবার দিন জন্মগ্রহণ করেন। রবিউল আউয়াল মাসের শুরুর দিকে সোমবার তিনি নবুওত লাভ করেন এবং ঐ মাসেরই সোমবার তার প্রতি সূরা বাকারা নাযিল হয়। ইব্‌ন আসাকিরের এ বর্ণনা অত্যন্ত গরীব পর্যায়ের। যুবোয়র ইব্‌ন বাজার বলেন, নবী করীম (সা)-কে তার মা আবী তালিবের গিরিসঙ্কটে দ্বিতীয় জামায়ার নিকটে আইয়ামে তাশদীকে গর্তে ধায়ণ করেন এবং রমযান মাসের বার তারিখে তিনি সেই রাস্ত্রীতেই ভূমিষ্ঠ হন, যা পরবর্তীতে হাজাজ

হাফিজ ইব্‌ন আসাকিয় বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা) মুহান্নয়ামের দশ তারিখে মায়েন্ন গর্তে আসেন এবং রমযান মাসের বায় তারিখ সোমবার জন্মগ্রহণ করেন। এটি ছিল হাতীয় ঘটনায় ২৩তম ৰােছয়ে। কথিত আছে যে, খলীফা হারুনুর রশীদ এর মা খায়জায়ান স্বখান হজে

 

Page 444 missing

 

করেন। এর পনের বছর পর অনুষ্ঠিত হয় উকায মেলা। পচিশ বছর পর কাবা পুনঃনির্মিত হয়। চল্লিশ বছরের মাথায় নবী করীম (সা) নবুওত লাভ করেন।

সারকথা, জামহুর-এর অভিমত অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ (সা) হস্তির ঘটনার বছর জন্মগ্রহণ করেছেন। কারও মতে হস্তির ঘটনার একমাস পরে। কারও মতে চল্লিশ দিন পরে, অপর কারও মতে পঞ্চাশ দিন পরে। পঞ্চাশ দিনের অভিমতই সর্বাধিক প্রসিদ্ধ।

আবু জাফর বাকের (র) থেকে বর্ণিত যে, হস্তি বাহিনীর আগমনের ঘটনা মুহাররমের মধ্য ভাগে ঘটেছিল আর রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জন্মের ঘটনা ঘটে তার পঞ্চান্ন দিন পরে। অন্যরা বলেন, না বরং হস্তির ঘটনা ঘটেছে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জন্মের দশ বছর আগে। ইব্‌ন আবদ্যা এরূপ বলেছেন। কারও কারও মতে, তেইশ বছর আগে। কেউ কেউ বলেছেন, ত্ৰিশ বছর পরে। মূসা ইব্‌ন উকবা যুহরী থেকে এই অভিমত ব্যক্ত করেন এবং তিনি ওই অভিমত সমর্থনও করেছেন। আবু যাকারিয়া আজলানী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জন্ম হস্তির ঘটনার চল্লিশ বছর পরের ঘটনা। ইব্‌ন আসাকিরের এই বর্ণনা অত্যন্ত গরীব পর্যায়ের। ইব্‌ন আব্বাস (রা) থেকে একটি বর্ণনা আছে যে, তিনি বলেছেন রাসূলুল্লাহ (সা) হস্তির ঘটনার পনের বছর আগে জন্মগ্রহণ করেন। তবে এই বর্ণনাটি গরীব, মুনকার ও দুর্বল। তবে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জন্ম হস্তির ঘটনার বছরে হওয়ার বিষয়টি প্রায় সর্বসম্মত।

সকল অধ্যায়

১. ০১. হযরত মূসা (আ)-এর পরবর্তী বনী-ইসরাঈলের নবীগণের বিবরণ
২. ০২. হিযকীল (আ)-এর বিবরণ
৩. ০৩. হযরত আল-য়াসা (আ)-এর বিবরণ
৪. ০৪. শামুয়েল নবীর বিবরণ
৫. ০৫. হযরত দাউদ (আ)-এর বিবরণ
৬. ০৬. হযরত সুলায়মান (আ)
৭. ০৭. হযরত দাউদ ও ইয়াহয়া (আ)-এর মধ্যবর্তী ইসরাঈল বংশীয় নবীগণের ইতিহাস
৮. ০৮. হযরত দানিয়াল (আ)-এর বিবরণ
৯. ০৯. হযরত উযায়র (আ)-এর বর্ণনা
১০. ১০. যাকারিয়া ও ইয়াহয়া (আ)
১১. ১১. হযরত ঈসা (আ)-এর বিবরণ
১২. ১২. সতী-সাধ্বী নারী হযরত মারয়ামের পুত্ৰ হযরত ঈসা (আ)-এর জন্মের বিবরণ
১৩. ১৩. আল্লাহ সন্তান গ্ৰহণ থেকে পবিত্ৰ
১৪. ১৪. হযরত ঈসা (আ)-এর জন্ম ও ওহীর সূচনা
১৫. ১৫. হযরত ঈসা (আ)-কে আসমানে উঠিয়ে নেয়ার বর্ণনা
১৬. ১৬. যুল-কারনায়ন
১৭. ১৭. ইয়াজুজ-মাজুজ ও তাদের প্রাচীরের বিবরণ
১৮. ১৮. আসহাবে কাহাফ-এর ঘটনা
১৯. ১৯. হযরত লুকমান (আ)-এর ঘটনা
২০. ২০. অগ্নিকুণ্ড অধিপতিদের ঘটনা
২১. ২১. বারসীসা-এর ঘটনা
২২. ২২. হিজাযী আরবদের ঊর্ধ্বতন পুরুষ আদনান-এর বৃত্তান্ত
২৩. ২৩. আদনান পর্যন্ত হিজাযের আরবদের ঊর্ধ্বতন বংশধারা
২৪. ২৪. সাবা মুআল্লাকার অন্যতম রচয়িতা ইমরুল কায়স ইব্‌ন হুজর আল-কনদী
২৫. ২৫. উমাইয়া ইব্‌ন আবুস সালত ছাকাফী
২৬. ২৬. যায়দ ইব্‌নে আমর ইব্‌ন নুফায়ল (রা)
২৭. ২৭. ঈসা (আ) ও রাসূলুল্লাহ (সা)-এর মধ্যবর্তী যুগের কয়েকটি ঘটনা
২৮. ২৮. আবদুল মুত্তালিবের পুত্ৰ যবেহ করার মানত
২৯. ২৯. আমিনা বিনতে ওহ্‌ব যুহরিয়ার সঙ্গে পুত্র আবদুল্লাহর বিবাহ
৩০. ৩০. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর পবিত্র জীবন-চরিত
৩১. ৩১. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জন্ম
৩২. ৩২. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জন্মের বিবরণ
৩৩. ৩৩. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জন্মের রাতে সংঘটিত অলৌকিক ঘটনাবলী
৩৪. ৩৪. চাচা আবু তালিবের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সিরিয়া সফর এরং পাদ্রী বাহীরার সঙ্গে সাক্ষাত প্ৰসঙ্গ
৩৫. ৩৫. সায়ফ ইব্‌ন যায়ী-ইয়াযান-এর বর্ণনা এবং নবী করীম (সা) সম্পর্কে তাঁর সুসংবাদ প্ৰদান
৩৬. ৩৬. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যৌবন প্ৰাপ্তি ও আল্লাহর আশ্রয়
৩৭. ৩৭. রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নবুওত লাভ এবং এতদসম্পর্কিত কয়েকটি পূর্বাভাস
৩৮. ৩৮. এ সম্পর্কিত আরও কয়েকটি আশ্চর্য ঘটনা
৩৯. ৩৯. আমর ইবনে মুররা আল জুহানীর কাহিনী

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন