০৮. মনুসংহিতা – অষ্টম অধ্যায়

সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

মনুসংহিতা – অষ্টম অধ্যায়

১। ব্যবহারান্ দিদৃক্ষুস্তু ব্রাহ্মণৈঃ সহ পার্থিবঃ।

মন্ত্রজ্ঞৈর্মন্ত্রিভিশ্চৈব বিনীতঃ প্রবিশেং সভাম্ ॥

বিচারকার্য দর্শনকামী রাজা মন্ত্রজ্ঞ মন্ত্রী ও ব্রাহ্মণগণ সহ সভায় প্রবেশ করবেন।

২। তত্রাসীনঃ স্থিতো বাপি পাণিমুদ্যম্য দক্ষিণম্।

বিনীতবেশাভরণঃ পশ্যেৎ কার্যাণি কার্যিণাম্ ॥

সেখানে বসে বা দাঁড়িয়ে ডান হাত তুলে বিনীত বেশ ও অলংকার পরিহিত হয়ে বিচারপ্রার্থীদের কার্য দেখবেন।

৩। প্রত্যহং দেশদৃষ্টেশ্চ শাস্ত্ৰদৃষ্টেশ্চ হেতুভিঃ।

অষ্টাদশসু মার্গেষু নিবন্ধানি পৃথক্‌ পৃথক্‌॥

প্রতিদিন দেশাচার ও শাস্ত্রীয় (সাক্ষী লেখ্যাদি) প্রমাণ দ্বারা অষ্টাদশ বিবাদ বিষয়ে পঠিত (ঋণদানাদি) কার্যসমূহ পৃথক্‌ পৃথক্‌ বিচার করবেন।

৪- তেষামাদ্যমৃণাদানং নিক্ষেপোহস্বামিবিক্রয়ঃ।

৭। সম্ভুয় চ সমুত্থানং দত্তস্যানপকর্ম চ ॥

বেতনস্যৈব চাদানং সংবিদশ্চ ব্যতিক্রমঃ।

ক্রয়বিক্রয়ানুশয়ো বিবাদঃ স্বামিপালয়োঃ॥

সীমাবিবাদধর্মশ্চ পারুষ্যে দণ্ডবাচিকে।

স্তেয়ঞ্চ সাহসঞ্চৈব স্ত্রীসংগ্ৰহণমেব চ ॥

স্ত্রীপুংধর্মো বিভাগশ্চ দ্যূতমাহ্বয় এব চ।

পদানাষ্টাদশৈতানি ব্যবহারস্থিতাবিহ ॥

ঐগুলির মধ্যে প্রথম ঋণাদান, তারপর নিক্ষেপ (গচ্ছিত দ্রব্য), অস্বামিবিক্রয়, সম্ভুয়সমুত্থান (যৌথ ব্যবসায়), দত্তানপকর্ম (দত্ত ধনের অযোগ্য পাত্র বিবেচনায় বা ক্রোধভরে ফিরিয়ে নেওয়া), বেতন না দেওয়া, চুক্তিভঙ্গ, ক্রয়বিক্রয় (ক্রয় বিক্রয় করে অনুতাপ), পশুস্বামী ও পশুপালকের বিবাদ, সীমাবিবাদ, দণ্ডপারুষ্য, বাক্‌পারুষ্য, চৌর্য, সাহস, স্ত্রীলোকের পরপুরুষসম্পর্ক, পুরুষ ও স্ত্রীর ধর্ম, পৈতৃকধনবিভাগ, পণপূর্বক অক্ষক্রীড়া, পক্ষিমেষাদি প্রাণীর যুদ্ধ—এই আঠারটি ব্যবহারপদ (বিচার্য বিষয়)।

৮। এষু স্থানেষু ভুয়িষ্ঠং বিবাদং চরতাং নৃণাম্।

ধর্মং শাশ্বতমাশ্ৰিত্য কুর্যাৎ কার্যবিনির্ণয় ॥

রাজা সনাতন ধর্ম অবলম্বন করে এই সকল বিষয়ে অতিমাত্রায় বিবাদরত মানুষের কার্য নির্ণয় করবেন।

৯। যদা স্বয়ং ন কু্র্যাৎ তু নৃপতিঃ কার্যদর্শনম্।

তদা নিযুজ্যাদ্বিদ্বাংসং ব্রাহ্মণং কার্যদর্শনে ॥

যখন রাজা নিজে কার্যদর্শন করবেন না, তখন এই জন বিদ্বান্ ব্রাহ্মণকে নিযুক্ত করবেন।

১০। সোহস্য কার্যাণি সম্পশ্যেৎ সভ্যৈরেব ত্রিভিৰ্বৃতঃ।

সভামেব প্রবিশ্যাগ্র্যামাসীনঃ স্থিত এব বা ॥

তিনি তিনজন সভ্য সহ সভায় প্রবেশ করে বসে বা দাঁড়িয়ে রাজার কার্য দেখবেন।

১১। যস্মিন্ দেশে নিষীদন্তি বিপ্রা বেদবিদস্ত্রয়ঃ।

রাজ্ঞশ্চাধিকৃতো বিদ্বান্ ব্ৰহ্মণস্তাং সভাং বিদুঃ॥

যেখানে তিনজন বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ এবং রাজার নিযুক্ত বিদ্বান্ ব্রাহ্মণ থাকেন, তাকে ব্রহ্মের সভা বলা হয়।

১২। ধর্মে বিদ্ধস্ত্বধর্মেণ সভাং যত্ৰোপতিষ্ঠতে।

শল্যঞ্চাস্য ন কৃন্তন্তি বিদ্ধাস্তত্র সভাসদঃ ॥

যে সভায় অধর্ম দ্বারা ধর্ম বিদ্ধ হয় (মিথ্যাভাষণরূপ অধর্ম দ্বারা সত্যভাষণজনিত ধর্ম বিদ্ধ হয়) এবং (সভাসদগণ শল্য রূপ ঐ বিদ্ধ ধর্মকে সুবিচার দ্বারা) উদ্ধার করেন না, সেখানে তাঁরা (ও সেই অধর্ম শল্য) দ্বারা বিদ্ধ হন।

১৩। সভাং বা ন প্রবেষ্টব্যং বক্তব্যং বা সমঞ্জসম্।

অব্ৰুবন্ বিব্রুবন্ বাপি নরো ভবতি কিল্বিষী ॥

হয় সভায় প্রবেশ করা উচিত নয়, নয় (যেখানে গিয়ে) সত্য কথা বলা কর্তব্য। কিছু না বলে বা মিথ্যা বলে মানুষ পাপী হয়।

১৪। যত্র ধর্মো হ্যধর্মেন সত্যং যত্ৰানৃতেন চ।

হন্যতে প্রেক্ষমাণানাং হতাস্তত্র সভাসদঃ ॥

যেখানে সভাসদগণকে উপেক্ষা করে অধর্ম দ্বারা ধর্ম ও মিথ্যা দ্বারা সত্য হত হয়, সেখানে সভাসদগণ (পাপ) হত হন।

১৫। ধর্ম এব হতো হন্তি ধর্মো রক্ষতি রক্ষিতঃ॥

তস্মাদ্ধর্মো ন হন্তব্যো মা নো ধর্মো হতোহবধীৎ ॥

ধর্ম হত হলে (লোককে) নিহত করে, রক্ষিত হলে রক্ষা করে। সুতরাং ধর্ম হন্তব্য নয় ; ধর্ম হত হয়ে যেন (অপরকে) বধ না করে।

১৬। বৃষো হি ভগবান্ ধর্মস্তস্য যঃ কুরুতে হ্যলম্।

বৃষলং তং বিদুর্দেবাস্তস্মাদ্ধর্মং ন লোপয়েৎ ॥

ভগবান্ ধর্ম বৃষ। তাঁকে যে বারণ করে তাকে প্রাজ্ঞ ব্যক্তিগণ বৃষল বলেন; সুতরাং, ধর্ম লুপ্ত করবে না।

১৭। এক এব সুহৃদ্ধর্মো নিধনেহপ্যনুযাতি যঃ।

শরীরেণ সমং নাশং সর্বমন্যদ্ধি গচ্ছতি ॥

ধর্মই একমাত্র বন্ধু যে মৃত্যুতেও (লোকের) অনুগমন করে। অন্য সব কিছু শরীরের সঙ্গে নষ্ট হয়।

১৮। পাদোধর্মস্য কর্তারং পাদঃ সাক্ষিণমৃচ্ছতি।

পাদঃ সভাসদঃ সর্বান্ পাদো রাজানমৃচ্ছতি ॥

অধর্মের কর্তাকে (অধর্মের) এক চতুর্থাংশ, সাক্ষীকে এক চতুর্থাংশ, সকল সভাসদকে এক চতুর্থাংশ ও রাজাকে এক চতুর্থাংশ প্রাপ্ত হয়।

১৯। রাজা ভবত্যনেনাস্তু মুচ্যন্তে চ সভাসদঃ।

এনো গচ্ছতি কর্তারং নিন্দার্হো যত্র নিন্দ্যতে ॥

যেখানে নিন্দনীয় ব্যক্তি নিন্দিত হয়, সেখানে রাজা নিস্পাপ হন, সভাসদগণ (পাপ) মুক্ত হন এবং পাপ পাপীর কাছে যায়।

২০। জাতিমাত্রোপজীবী বা কামং সান্ ব্রাহ্মণব্রুবঃ।

ধর্মপ্রবক্তা নৃপতে র্ন তু শূদ্রঃ কথঞ্চন ॥

(রাজার অসামর্থ পক্ষে) জাতিমাত্রে ব্রাহ্মণ যে নিজেকে ব্রাহ্মণ বলে (কিন্তু, ব্রাহ্মণের গুণসম্পন্ন নয়, তিনি রাজার পক্ষে) ধর্মপ্রবক্তা হবেন, শূদ্র কখনও হবে না।

২১। যস্য শূদ্ৰস্তু কুরুতে রাজ্ঞো ধর্মবিবেচনম্।

তস্য সীদতি তদ্ৰাষ্ট্রং পঙ্কে গৌরিব পশ্যতঃ ॥

শূদ্ৰ যে রাজার ধর্মবিষয়ক বিচার করে, তাঁর রাজ্য তাঁর চোখের সামনে পঙ্কে গাভীর ন্যায় অবসন্ন হয়।

২২। যদ্রাষ্ট্রং শুদ্ৰভুয়িষ্ঠং নাস্তিকাক্ৰান্তমদ্বিজম্।

বিনশত্যাশু তৎ কৃৎস্নং দুর্ভিক্ষব্যাধিপীড়িতম্ ॥

যে রাজ্য শূদ্রবহুল, নাস্তিকাকীর্ণ ও দ্বিজহীন, সেই সমগ্র রাজ্য দুর্ভিক্ষ ও রোগক্লিষ্ট হয়ে শীঘ্র বিনষ্ট হয়।

২৩। ধর্মাসনমধিষ্ঠায় সংবীতাঙ্গঃ সমাহিত।

প্রণম্য লোকপালেভ্যঃ কার্যদর্শনমারভেৎ ॥

বিচাবারাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে আচ্ছাদিত দেহে সমাহিত চিত্তে লোকপালগণকে প্রণাম করে বিচারকার্য দর্শন আরম্ভ করবেন।

২৪। অর্থানথাবুভৌ বুদ্ধ্বা ধর্মাধর্মৌ চ কেবলৌ।

বর্ণক্রমেণ সর্বাণি পশ্যেৎ কার্যাণি কার্যিণাম ॥

অর্থ, অনর্থ, শুধু ধর্ম অধর্ম জেনে বর্ণক্রমানুসারে বিচারপ্রার্থীদের সব বিচার কার্য দেখবেন।

২৫। বাহ্যৈর্বিভাবয়েল্লিঙ্গৈভাবমন্তর্গতং নৃণাম্।

স্বরবর্ণেঙ্গিতাকারৈশ্চক্ষুষ চেষ্টিতেন চ ॥

মানুষের বাহ্যিক লক্ষণ, কণ্ঠস্বর, বর্ণ, ইঙ্গিত, আকার, চক্ষু ও (হস্তাস্কালনাদি) চেষ্টা দ্বারা মনোগত ভাব নির্ধারণ করবেন।

২৬। আকারৈরিঙ্গিতৈর্গত্যা চেষ্টয়া ভাষিতেন চ।

নেত্রবক্‌ত্রবিকারৈশ্চ গৃহ্যতেহন্তর্গন্তং মনঃ ॥

আকার, ইঙ্গিত, গতি, চেষ্টা, কথা, চক্ষু ও মুখের বিকৃতি দ্বারা মনোগত ভাব বোঝা যায়।

২৭। বালদায়াদিকং রিক্‌থং তাবদ্রাজানুপালয়েৎ।

যাবৎ স স্যাৎ সমাবৃত্তো যাবচ্চাতীতশৈশবঃ ॥

(পিতৃমাতৃহীন অনাথ) বালকের ধন, রাজা ততক্ষণ পর্যন্ত রক্ষা করবেন যতক্ষণ সে সমাবৃত্ত না হয় ও শৈশব অতিক্রান্ত না হয়।

২৮। বশাহপুত্ৰাসু চৈবং স্যাদ্রক্ষণং নিষ্কুলাসু চ।

পতিব্রতাসু চ স্ত্রীষু বিধবাস্বাতুরাসু চ॥

বন্ধ্যা অপুত্র সপিণ্ডরহিতা পতিব্রতা, বিধবা ও রোগিণী স্ত্রীর ধন (অনাথ বালকের ধনের ন্যায় রাজা কর্তৃক) রক্ষণীয়।

২৯। জীবন্তীনান্তু তাসাং যে তদ্ধরেয়ুঃ স্ববান্ধবাঃ।

তাঞ্ছিষ্যাচ্চৌরদণ্ডেন ধার্মিক পৃথিবীপতিঃ ॥

তাদের যে সপিণ্ডগণ তাদের জীবদ্দশায় উক্তধন গ্রহণ করে, তাদের ধার্মিক রাজা চোরের দণ্ডে দণ্ডিত করবেন।

৩০। প্রনষ্টস্বামিকং রিক্‌থং রাজা ত্রাব্দং নিধাপয়েৎ।

অর্বাক্ ত্রাব্দাদ্ধরেৎ স্বামী পরেণ নৃপতির্হরেৎ ॥

উত্তরাধিকার সূত্রে আগত যে ধনের মালিক অজ্ঞাত, রাজা তিন বৎসর সেই ধন রক্ষা করবেন। তিন বৎসরের মধ্যে মালিক (এলে) তা নিবে, না এলে রাজা তা নিবেন।

৩১। মমেদমিতি যো ব্রুয়াৎ সোহনুযোজ্যো যথাবিধি।

সংবাদ্য রূপসংখ্যাদীন্ স্বামী তদ্রব্যমর্হতি॥

‘এটা আমার’ এই কথা যে বলবে, তাকে যথাবিধি জিজ্ঞাসা করতে হবে। ঐ দ্রব্যের রূপ সংখ্যাদি ঠিক বলতে পারলে মালিক তা পাবে।

৩২। অবেদয়ানো নষ্টস্য দেশং কালঞ্চ তত্ত্বতঃ।

বর্ণং রূপং প্রমাণঞ্চ তৎসমং দণ্ডমর্হতি॥

হারান দ্রব্যের দেশ, কাল, বর্ণ, রূপ ও প্রমাণ ঠিকমত বলতে না পারলে সেই ব্যক্তি ঐ দ্রব্যের সমান দণ্ডভাগী হবে।

৩৩। আদদীথষড্‌ভাগং প্রনষ্টাধিগতান্নৃপঃ।

দশমং দ্বাদশং বাপি সতাং ধর্মমনুস্মরন্ ॥

সজ্জনের ধর্মানুসারী রাজা হারান দ্রব্য পাওয়া গেলে তার ষষ্ঠ, দশম বা দ্বাদশ ভাগ গ্রহণ করবেন।

৩৪। প্রনষ্টাধিগতং দ্রব্যং তিষ্ঠেদ্‌যুক্তৈরধিষ্ঠিতম্।

যাংস্তত্র চৌরান্ গৃহ্নীয়াৎ তান্ রাজেভেন ঘাতয়েৎ ॥

হারান দ্রব্য পাওয়া গেলে উপযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক রক্ষিত হবে। যাদের এই দ্রব্যের চোর বলে ধরা হবে, তাদের রাজার হস্তী দ্বারা নিহত করান হবে।

৩৫। মমায়মিতি যো ব্রয়ান্নিধিং সত্যেন মানবঃ।

তস্যাদদীত ষড্‌ভাগং রাজা দ্বাদশমেব বা ॥

যে এই নিধি আমার বলে সত্য কথা বলবে, রাজা সেই নিধির ষষ্ঠ বা দ্বাদশ ভাগ গ্রহণ করবেন।

৩৬। অনৃতন্তু বদ দণ্ড্যঃ স্ববিত্তস্যাংশমষ্টম্।

তস্যৈব বা নিধানস্য সংখ্যায়াল্পীয়সীং কলাম্ ॥

মিথ্যাবাদী (গুণী হলে) নিজের ধানের অষ্টম অংশ, নির্গুণ হলে সেই নিধির সামান্য অংশ দণ্ডনীয় হবে।

৩৭। বিদ্বাংস্তু ব্রাহ্মণো দৃষ্ট্বা পূর্বোপনিহিতং নিধি।

অশেষতোহপ্যাদদীত সর্বস্যাধিপতির্হি সঃ ॥

বিদ্বান্ ব্রাহ্মণ পূর্বপুরুষ কর্তৃক স্থাপিত নিধি পেয়ে সবটাই গ্রহণ করবেন। কারণ, তিনি সকলের অধিপতি।

৩৮। যন্ত পশ্যেন্নিধিং রাজা পুরাণং নিহিতং ক্ষিতৌ।

তস্মাদ্‌দ্ধিজেভ্যো দত্ত্বার্ধমর্ধং কোষে প্রবেশয়েৎ ॥

রাজা যে পুরাতন ভূমিপ্রোথিত নিধি পাবেন, তার অর্ধেক দ্বিজগণকে দিয়ে অর্ধেক রাজকোষে রাখবেন।

৩৯। নিধীনাস্তু পুরাণানাং ধাতুনামেব চ ক্ষিতৌ।

অর্ধভাগ্ রক্ষণাদ্ৰাজা ভূমেরধিপতির্হি সঃ ॥

ভূপ্রোথিত পুরাতন (অব্রাহ্মণ কর্তৃক প্রাপ্ত) নিধির ও (স্বর্ণাদি) ধাতুর অর্ধভাগ রাজা নিবেন ; তিনি ভূমির রক্ষণ হেতু অধিপতি।

৪০। দাতব্যং সর্ববর্ণেভ্যো রাজ্ঞা চৌরৈর্হৃতং ধনম্।

রাজা তদূপযুঞ্জানশ্চৌরস্যাপ্নোতি কিল্বিষম্ ॥

চোর কর্তৃক অপহৃত ধন রাজা সকল বর্ণকে দিবেন (অর্থাৎ যে বর্ণের ধন সেই বর্ণকে); রাজা নিজে তা ভোগ করে চোরের পাপভাগী হন।

৪১। জাতিজানপদান্ ধৰ্মান্ শ্রেণীধর্মাংশ্চ ধর্মবিৎ।

সমীক্ষ্য কুলধর্মাংশ্চ স্বধর্মং প্রতিপাদয়েৎ ॥

ধর্মজ্ঞ রাজা জাতিনিষ্ঠ ধর্ম, দেশধর্ম, শ্রেণীধর্ম ও কুলধর্ম বিচার করে (লোকের) স্বধর্মের ব্যবস্থা করবেন।

৪২। স্বানি কর্মাণি কুর্বাণা দূরে সন্তোহপি মানবাঃ।

প্রিয়া ভবন্তি লোকস্য স্বে স্বে কর্মণ্যবস্থিতাঃ ॥

যে সকল লোক দূরে থেকেও নিজ নিজ কর্ম করে, নিজ নিজ কর্মে অবস্থিত সেই সকল লোক মানুষের প্রিয় হয়।

৪৩। নোৎপাদয়েৎ স্বয়ং কার্যং রাজা নাপ্যস্য পুরুষঃ।

ন চ প্রাপিতমন্যেন গ্রসেদর্থং কথঞ্চন ॥

রাজা নিজে বা তাঁর নিযুক্ত লোক (যারা বিচারার্থী নয় লোভবশে তাদের ঋণাদানাদি) বিবাদ উত্থাপন করবেন না। এবং অন্য লোকের উপস্থাপিত বিষয় (ধনলাভে) উপেক্ষা করবেন না।

৪৪। যথা নয়ত্যসৃক্‌পাতৈর্মৃগস্য মৃগয়ুঃ পদম্।

নয়েৎ তথানুমানেন ধর্মস্য নৃপতিঃ ধর্মস্য পদম্ ॥

যেমন ব্যাধ (বাণবিদ্ধ পলায়মান) মৃগের স্থান রক্তপাত দ্বারা অবগত হয়, তেমনই অনুমান দ্বারা রাজা ধর্মের পদ (অর্থাৎ যথার্থ বিষয়) নির্ধারণ করবেন।

৪৫। সত্যমর্থঞ্চ সম্পশ্যেদাত্মানমথ সাক্ষিণঃ।

দেশং রূপঞ্চ কালঞ্চ ব্যবহারবিধৌ স্থিতঃ ॥

বিচার বিষয়ে স্থিত (রাজা) সত্য, অর্থ১, নিজেকে২, সাক্ষীকে, দেশ, রূপ ও কালের বিচার করবেন।

৪৬। সদ্ভিরাচরিতং যৎ স্যাদ্ধাৰ্মিকৈশ্চ দ্বিজাতিভিঃ।

তাদ্দেশকুলজাতীনামবিরুদ্ধং প্রকল্পযেৎ ॥

সজ্জন ও ধার্মিক দ্বিজগণ কর্তৃক আচরিত যে ধর্ম, তা দেশ, কুল, জাতির বিরুদ্ধ না হলে (তার দ্বারা) বিচারকার্য করবেন।

৪৭। অধমর্ণার্থসিদ্ধার্থমুত্তমর্ণেন চোদিতঃ।

দাপয়েদ্ধনিকস্যার্থমধমর্ণাদ্বিভাবিতম্ ॥

অধমর্ণের কাছ থেকে ধন পাওয়ার জন্য উত্তমর্ণ কর্তৃক উক্ত হয়ে (রাজা) প্রমাণিত (পরিমাণ) অর্থ অধমর্ণের থেকে নিয়ে উত্তমর্ণকে দেওয়াবেন।

৪৮। যৈর্যৈরূপায়ৈরর্থং স্বং প্রাপ্নুয়াদুমর্ণিক।

তৈস্তৈরুপায়ৈঃ সংগৃহ্য দাপয়েদধমর্ণিকম্॥

যে যে উপায়ে উত্তমর্ণ নিজের অর্থ (অধমর্ণ থেকে) পান, সেই সেই উপায় দ্বারা (রাজা) অধমর্ণকে বশে এনে তাকে দিয়ে উত্তমর্ণকে অর্থ দেওয়াবেন।

৪৯। ধর্মেণ ব্যবহারেণ চ্ছলেনাচরিতেন চ।

প্রযুক্তং সাধয়েদর্থং পঞ্চমেন বলেন চ ॥

ধর্ম (সদুপদেশ), ব্যবহার (সাক্ষী, দলিল ইত্যাদি), ছল (যথা—ছলে অধমর্ণ থেকে কোন বস্তু আনিয়ে উত্তমর্ণকে দেওয়া), আচরিত (যেমন অধমর্ণের যাতায়াতের দ্বার অববোধ করে) অথবা পঞ্চম বল দ্বারা প্রযুক্ত অর্থ প্রমাণ করবেন (আদায় করবেন)।

৫০। যঃ স্বয়ং সাধয়েদর্থমুক্তমণেহিমর্ণিকাৎ।

ন স রাজ্ঞাভিযোক্তব্যঃ স্বকং সংসাধ্য ধনম্ ॥

যে উত্তমর্ণ অধমর্ণ থেকে নিজেই আদায় করে, নিজের ধন আদায়কারী সেই উত্তমর্ণ রাজা কর্তৃক নিষিদ্ধ হবে না।

৫১। অর্থেহপব্যয়মানন্তু করণেন বিভাবিতম্।

দাপয়েদ্ধনিকস্যার্থং দণ্ডলেশঞ্চ শক্তিতঃ ॥

(ধার করা) ধন অস্বীকার করলে (সাক্ষী দলিলাদি দিয়ে) তা প্রমাণিত হলে রাজা উত্তমর্ণকে তার ধন দেওয়াবেন এবং (অধমর্ণকে) তার শক্তি অনুসারে সামান্য দণ্ড দেওয়াবেন।

৫২। অপহ্নবেহধমর্ণস্য দেহত্যুক্তস্য সংসদি।

অভিযোক্তা দিশেদ্‌দেশ্যং করণং বান্যদুদ্দিশেৎ॥

সভায় ‘দাও’ বলে উক্ত হয়ে অধমর্ণ অস্বীকার করলে বাদী ঋণ দান স্থানের নিকটবর্তী সাক্ষী নির্দেশ করবেন অথবা অন্য (দলিলাদি প্রমাণ) দিবেন।

৫৩- অদেশ্যং যশ্চ দিশতি নিৰ্দিশ্যপহ্নুতে চ যঃ।

৫৬। যশ্চাধরোত্তরানর্থান্ বিগীতান্ নাববুধ্যতে ॥

অপদিশ্যাপদেশ্যঞ্চ পুনর্যস্ত্বধাবতি।

সম্যক্ প্রণিহিতঞ্চার্থং পৃষ্টঃ সন্নভিনন্দতি॥

অসংভাষ্যে সাক্ষিভিশ্চ দেশে সম্ভাষতে মিথঃ।

নিরুচ্যমানং প্রশ্চঞ্চ নেচ্ছেদ্যশ্চাপি নিষ্পতেৎ॥

বৃহীত্যুক্তশ্চ ন ব্ৰয়াদুক্তঞ্চ ন বিভাবয়েৎ ॥

ন চ পূর্বাপরং বিদ্যাৎ তস্মাদর্থাৎ স হীয়তে ॥

যেখানে ঋণগ্রহণকালে অধমর্ণের থাকা সম্ভব নয় এবং উত্তমর্ণ অধমর্ণের ঋণ গ্রহণের দেশ কাল প্রথমে নির্দেশ করে পরে অস্বীকার করে এবং পূর্বাপর বিরুদ্ধ কথা বলে, বিচারক কর্তৃক জিজ্ঞাসিত হয়ে সদুত্তর দেয় না, অস্থানে সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে, বিচারকের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বিচারালয় থেকে পলায়ন করে, বিবাদের বিষয় সম্বন্ধে পৃষ্ট হয়ে নিজের উপস্থাপিত বিষয় প্রমাণ করে না এবং অসম্ভাব্য বিষয় প্রতিপন্ন করতে চায়, তার অভিযোগ অগ্রাহ্য।

৫৭। সাক্ষিণঃ সত্তি মেত্যুক্ত্ব দিশেত্যুক্তো দিশেন্ন যঃ।

ধর্মস্হঃকারণৈরেতৈহিনং তমপি নির্দিশেৎ ॥

‘আমার সাক্ষী আছে’ এই কথা বলে ‘নির্দেশকর’ এইরূপ উক্ত হওয়ার পরে যে নির্দেশ করে না, বিচারক তাকে এই (উক্ত) কারণ, হেতু পরাজিত করবেন।

৫৮। অভিযোক্তা ন চেদ্‌ব্রূয়াদ্ধর্মং দণ্ড্যশ্চ ধর্মতঃ।

ন চেৎ ত্রিপক্ষাং প্রব্রুয়াদ্ধর্মং প্রতিপরাজিতঃ ॥

বাদী (আবেদন করে পরে) কিছু না বললে (অপরাধের গুরুত্ব লঘুত্ব বিবেচনায়) সে বধ্য বা দণ্ডনীয় হবে।

৫৯। যে যাবন্নিবীতার্থং মিথ্যা যাবতি বা বদেৎ ॥

তৌ নৃপেণ হ্যধর্মজ্ঞৌ দাপ্যৌ তদ্দ্বিগুণং দমম্ ॥

যে বিবাদী (বাদীর) যে সংখ্যক ধন অস্বীকার করে অথবা বাদী যে সংখ্যক ধন সম্বন্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে সেই অধার্মিক ব্যক্তিদ্বয়কে তার দ্বিগুণ অর্থ দণ্ড দেওয়াবেন।

৬০। পৃষ্টোহপব্যয়মানস্তু কৃতাবস্হো ধনৈষিণা।

ত্রববৈঃ সাক্ষিভির্ভাব্যো নৃপ-ব্রাহ্মণসন্নিবৌ ॥

রাজপুরুষ দিয়ে অধমর্ণ আনীত হলে (বিচারক কর্তৃক) জিজ্ঞাসিত হয়েও যদি সে অস্বীকার করে, তা হলে ধনার্থী উত্তমর্ণ রাজা ও ব্রাহ্মণের সমীপে অন্যন তিন জন সাক্ষী দ্বারা প্রমাণ করাবে।

৬১। যাদৃশা ধনিভিঃ কার্যা ব্যবহারেষু সাক্ষিণঃ।

তাদৃশান্ সম্প্রবক্ষ্যামি যথা বাচ্যমৃতঞ্চ তৈঃ ॥

উত্তমর্ণ বিচারে যেমন সাক্ষী করবেন তেমন সাক্ষীদের সম্বন্ধে এবং তাদের যেমন সত্য কথা বলা উচিত তা বলব।

৬২। গৃহিণঃ পুত্রিণো মৌলাঃ ক্ষত্রবিট্‌শূদ্রযোনয়ঃ।

অর্থ্যুক্তাঃ সাক্ষ্যমর্হন্তি ন যে কেচিদনাপদি॥

পুত্রবান্ গৃহস্থ, তদ্দেশবাসী ক্ষত্রিয়, বৈশ্য বা শূদ্র, বাদী কর্তৃক নির্দেশিত হলে, সাক্ষ্যদানের যোগ্য, আপদকাল ভিন্ন যে কেউ (সাক্ষী হতে পারে না)।

৬৩। আপ্তাঃ সর্বেষু বর্ণেষু কার্যাঃ কার্যেষু সাক্ষিণঃ।

সর্বধর্মবিদোহলুব্ধা বিপরীতাংস্তু বর্জয়েৎ।

সকল বর্ণের মধ্যে যারা সত্যবাদী, সর্বধর্মজ্ঞ ও নির্লোভ, তারা বিচার্য বিষয়ে সাক্ষী রূপে নিয়োগের যোগ্য। এর বিপরীত ব্যক্তিগণকে বর্জন করবেন।

৬৪। নাৰ্থসম্বন্ধিনো নাপ্তা ন সহায়া ন বৈরিণঃ।

ন দৃষ্টদোষাঃ কর্তব্যা ন ব্যাধ্যার্তা ন দূষিতাঃ ॥

ঋণাদি অর্থসম্বন্ধযুক্ত ব্যক্তি, মিত্র, পরিচারক, শত্রু, যার কুটসাক্ষিত্ব প্রমাণিত, রোগার্ত, (মহাপাতকাদি) দোষযুক্ত ব্যক্তিগণকে সাক্ষী করা উচিত নয়।

৬৫- ন সাক্ষী নৃপতিঃ কার্যো ন কারুককুশীলবৌ।

৬৭। ন শ্রোত্রিয়ো ন লিঙ্গস্হো ন সঙ্গেভ্যো বিনির্গতঃ ॥

নাধ্যধীনো ন বক্তব্যো ন দস্যু ন বিকর্মকৃৎ।

ন বৃদ্ধো ন শিশুর্নৈকো নাস্ত্যো ন বিকলেন্দ্রিয়ঃ॥

নার্তো ন মত্তো নোন্মত্তো ন ক্ষুত্তৃষ্ণোপপীড়িতঃ।

ন শ্ৰমার্তো ন কামার্তো ন ক্রুদ্ধো নাপি তস্করঃ ॥

রাজা, (পাচকাদি) কারুক, নট, বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ, ব্রহ্মচারী, পরিব্রাজক, অত্যন্ত পরাধীন (দাসাদি), দস্যু, নিষিদ্ধকৰ্মকারী, বৃদ্ধ, শিশু, একজন, চণ্ডাল, (অন্ধাদি) বিকলেন্দ্রিয়, (বন্ধুবিনাশাদি হেতু) আর্ত, মত্ত, উন্মত্ত, ক্ষুধাতৃষ্ণাপীড়িত, ক্লান্ত, কামুক, ক্রুদ্ধ, চোর—এদের সাক্ষী করা উচিত নয়।

৬৮। স্ত্রীণাং সাক্ষ্যং স্ক্রিয়ঃ কুযুর্দ্বিজানাং সদৃশা দ্বিজাঃ।

শূদ্রাশ্চ সন্তঃ শূদ্রাণামন্ত্যানামন্ত্যযোনয়ঃ ॥

স্ত্রীলোকের সাক্ষ্য স্ত্রীলোক দিবে, দ্বিজের সাক্ষী হবে তত্তুল্য দ্বিজ, সৎশূদ্র শূদ্রদের, চণ্ডাল চণ্ডালের সাক্ষী হবে।

৬৯। অনুভাবী তু যঃ কশ্চিৎ কুর্যাৎ সাক্ষ্যং বিবাদিনাম্।

অন্তর্বেশ্মন্যরণ্যে বা শরীরস্যাপি চাত্যয়ে ॥

গৃহে বা বনাদিতে (চোরাদিকৃত উপদ্রবে) এবং (আততায়িকৃত) প্রাণহত্যাস্থলে উক্ত বিষয় যে জানে এমন লোক সাক্ষী হতে পারে।

৭০। স্ক্রিয়াপ্যসম্ভবে কার্যং বালেন স্থবিরেণ বা।

শিষ্যেণ বন্ধুনা বাপি দাসেন ভৃতকেন বা ॥

(উক্তরূপ সাক্ষীর অভাবে) স্ত্রীলোক, বালক, বৃদ্ধ, শিষ্য, বন্ধু, দাস বা পরিচারকও সাক্ষ্য দান করতে পারে।

৭১। বালবৃদ্ধাতুরাণঞ্চ সাক্ষ্যেষু বদতাং মৃষা।

জানীয়াদস্হিরাং বাচমুৎসিক্তমনসাং তথা ॥

বালক, বৃদ্ধ ও রোগাৰ্ত, মত্ত, উন্মত্তাদির সাক্ষ্যে মিথ্যা ভাষণে বাক্য অস্থির হয়, (অনুমান দ্বারা) সাক্ষ্যের যথার্থতা জানতে হবে।

৭২। সাহসেষু চ সর্বেষু স্তেয়সংগ্রহণেষু চ।

বাগ্‌দণ্ডয়োশ্চ পারুষ্যে ন পরীক্ষেত সাক্ষিণঃ ॥

(গৃহদাহাদি দ্বারা প্রাণিহিংসা রূপ) সকল প্রকার সাহসে, চৌর্য, ও (আচার্য) স্ত্রীর সঙ্গে. ব্যভিচার, বাক্‌পারুষ্য ও দণ্ডপারুষ্যে সাক্ষিগণকে পরীক্ষা করবে না।

৭৩। বহুত্বং পরিগৃহ্নীয়াৎ সাক্ষিদ্বৈধে নরাধিপঃ॥

সমেষু তু গুণোৎকৃষ্টান্ গুণিদ্বৈধে দ্বিজোত্তমান্ ॥

সাক্ষীদের মধ্যে মতদ্বৈধ হলে রাজা অধিক সংখ্যক সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন। সমসংখ্যক সাক্ষীদের মতদ্বৈধ হলে যারা গুণে উৎকৃষ্ট তাদের সাক্ষ্য গ্রহণীয়। (সমসংখ্যক) গুণী সাক্ষীদের মধ্যে মতদ্বৈধ হলে ব্রাক্ষণদের সাক্ষ্য গ্রাহ্য।

৭৪। সমক্ষদর্শনাৎ সাক্ষ্যং শ্রবণাচ্চৈব সিধ্যতি।

তত্র সত্যং ব্রুবন্ সাক্ষী ধর্মার্থাভ্যাং ন হীয়তে॥

সমক্ষদর্শন হেতু সাক্ষ্য (সিদ্ধ) হয়, শ্রবণ হেতুও সিদ্ধ হয়। তাতে সত্য কথা বললে সাক্ষীর ধর্ম ও অর্থেব হানি হয় না।

৭৫। সাক্ষী দৃষ্টশ্রুতাদন্যদ্বিব্রুবন্নার্যসংসদি।

অবাঙ্নরকমভ্যেতি প্ৰেত্য স্বর্গাচ্চ হীয়তে॥

সাক্ষী দৃষ্ট ও শ্রুত ব্যাপারকে সভাতে বিকৃত করে বললে অধোমুখ হয়ে নরকগামী হয় এবং পরলোকে স্বর্গচ্যুত হয়।

৭৬। যত্ৰানিবদ্ধোহপীক্ষেত শৃণুয়াদ্বাপি কিঞ্চন।

পৃষ্টস্তত্রাপি তদব্রয়াদ যথাদৃষ্টং যথাশ্রুতম্ ॥

সাক্ষিরূপে মানিত না হয়েও কিছু দেখলে বা শুনলে জিজ্ঞাসিত হয়ে যেমন দেখেছেন বা শুনেছেন তেমনই বলবেন।

৭৭। একোহলুব্ধস্তু সাক্ষী স্যাদ্বহ্ব্যঃ শুচ্যোহপি ন স্ত্রিয়ঃ।

স্ত্রীবুদ্ধেরস্থিরত্বাৎ তু দোযৈশ্চান্যেহপি যে বৃতাঃ ॥

নির্লোভ হলে একজন সাক্ষী হতে পারে, অনেক স্ত্রীলোক শুচি হলেও বুদ্ধির অস্থিরতা হেতু (সাক্ষী হতে পারে না) ; (চৌর্যাদি) দোষযুক্ত অন্যলোকও (সাক্ষী হতে পারে না)।

৭৮। স্বভাবেনৈব যদ্‌ব্রূয়ুর্ধর্মার্থং ব্যবহারিকম্।

অতো যদন্যদ্বিব্রূয়ুর্ধর্মার্থং তদপার্থকম ॥

(সাক্ষিগণ ভয়াদি শূন্য হয়ে) স্বাভাবিক ভাবে যা বলবেন, তা বিচারে নির্ণয়ার্থে গ্রাহ্য। এর থেকে অন্য যা বিকৃত ভাবে বলবেন, তা ধর্মবিষয়ে নিরর্থক।

৭৯। সভান্তঃ সাক্ষিণঃ প্রাপ্তানৰ্থিপ্রত্যর্থিসন্নিধৌ।

প্রাড্‌বিকোহনুযুঞ্জীত বিধিনানেন সান্ত্বয়ন্॥

সভামধ্যে প্রবিষ্ট সাক্ষিগণকে বাদী বিবাদীর সমক্ষে বিচারক এই নিয়মে প্রিয়বাক্যে বলবেন।

৮০। যদ্‌দ্বয়োরনমর্বেত্থ কার্যেহস্মিংশ্চেষ্টিতং মিথঃ।

তদ্‌ব্রত সর্বং সত্যেন যুষ্মাকং হ্যত্র সাক্ষিতা ॥

এই বিষয়ে এই দুইজনের পরস্পরের যে ক্রিয়াকলাপ জান, তা সব সত্য করে বল ; এই বিষয়ে তোমাদেব সাক্ষিত্ব হয়েছে।

৮১। সত্যং সাক্ষ্যে ব্রুবন্ সাক্ষী লোকানাপ্নোতি পুষ্কুলান্।

ইহ চানুত্তমাং কীর্তিং বাগেষা ব্ৰহ্মপূজিতা॥

সাক্ষী সাক্ষ্যে সত্যকথা বলে পরলোকে উৎকৃষ্ট গতি, ইহলোকে শ্রেষ্ঠ কীর্তি লাভ করে এই কথা ব্রহ্মা কর্তৃক পূজিত।

৮২। সাক্ষ্যেহনৃতং বদন্ পাশৈ বর্ধতে বারুণৈর্ভুশম্।

বিবশঃ শতমাজাতীস্তস্মাৎ সাক্ষ্যং বদেদৃতম্ ॥

সাক্ষ্যে মিথ্যা বলে বরুণের পাশে দৃঢ়ভাবে বদ্ধ হয়, শত জন্ম পরাধীন থাকে ; সুতরাং, সত্য সাক্ষ্য বলবে॥

৮৩। সত্যেন পূয়তে সাক্ষী ধর্মঃ সত্যেন বর্ধতে।

তস্মাৎ সত্যং হি বক্তব্যং সর্ববর্ণেষু সাক্ষিভিঃ ॥

সত্য দ্বারা সাক্ষী পবিত্র হয়, ধর্ম সত্য দ্বারা বর্ধিত হয় ; সুতরাং, সকল বর্ণে সাক্ষিগণ সত্য কথা বলবে।

৮৪। আত্মৈব হ্যাত্মনঃ সাক্ষী গতিরাত্মা তথাত্মনঃ।

মাবমংস্থাঃ স্বমাত্মানং নৃণাং সাক্ষিণমুত্তমমম্॥

আত্মাই আত্মার সাক্ষী, আত্মার গতি আত্মা। মানুষের শ্রেষ্ঠ সাক্ষী রূপ নিজের আত্মকে অবমাননা করবে না।

৮৫। মনস্তে বৈ পাপকৃতো ন কশ্চিৎ পশ্যতীতি নঃ।

তাংস্তু দেবাঃ প্রপশ্যন্তি স্বস্যৈবান্তরপুরুষঃ ॥

পাপাচরণকারীরা মনে করে ‘কেউ আমাদের দেখে না’। কিন্তু তাদের দেবগণ ও নিজের দেহস্থিত আত্মা দেখেন।

৮৬। দৌর্ভুমিরাপো হৃদয়ং চন্দ্রাকাগ্নির্যমানিলাঃ।

রাত্রিঃ সন্ধ্যে চ ধর্মশ্চ বৃত্তজ্ঞাঃ সর্বেদেহিনাম্ ॥

স্বর্গ, মর্ত্য, জল, হৃদয়, চন্দ্র, সূর্য, অগ্নি, যম, বায়ু, রাত্রি, উভয় সন্ধিক্ষণ ও ধর্ম সকল দেহধারীর আচরণ জানে।

৮৭। দেবুব্রাহ্মণসাংনিধ্যে সাক্ষ্যং পৃচ্ছেদৃতং দ্বিজান্।

উদঙ্খুখান্ প্রাক্মুখান্ বা পূর্বাহ্নে বৈ শুচিঃ শুচীন্॥

দেবতা ও ব্রাহ্মণের সন্নিধানে উত্তরমুখ বা পূর্বমুখ, (স্নানাদি দ্বারা) পবিত্র দ্বিজগণকে পবিত্র (বিচারক) প্রাতে সত্যসাক্ষ্য জিজ্ঞাসা করবেন।

৮৮। ব্ৰূহীতি ব্রাহ্মণং পৃচ্ছেৎ সত্যং ব্রূহীতি পার্থিবম্।

গোবীজকাঞ্চনৈর্বৈশ্যং শূদ্রং সর্বৈস্তু পাতকৈঃ॥

ব্রাহ্মণকে ‘বলুন’, ক্ষত্রিয়কে ‘সত্য বলুন’, বৈশ্যকে ‘গাভী, ধান্যাদি বীজ ও স্বর্ণচৌর্যে যে পাপ হয়, যদি মিথ্যা বলেন তাহলে আপনার সেই পাপ হবে’ এই কথা, শূদ্রকে মিথ্যা বললে সকল পাপ তোমার হবে, এইরূপ বলবেন।

৮৯। ব্ৰহ্মঘ্নো যে স্মৃতা লোক যে চ স্ত্রীবালঘাতিনঃ।

মিত্রদ্রুহঃ কৃতঘ্নস্য তে তে স্যু ব্রুবতো মৃষা॥

ব্রাহ্মণহন্তা, স্ত্রীঘাতী, বালকহন্তা, মিত্রের অনিষ্টকারী এবং কৃতঘ্নের যে যে লোক শাস্ত্রে অভিহিত হয়েছে (সাক্ষ্যে) মিথ্যাবাদীর ঐ সকল লোক লব্ধ হয়।

৯০। জন্ম প্রভৃতি যৎকিঞ্চিৎ পুণ্যং ভদ্র ত্বয়া কৃতম্।

তৎ তে সর্বং শুনো গচ্ছেদ্ যদি ব্ৰূয়াস্ত্বমন্যথা ॥

হে ভদ্র, জন্ম থেকে তুমি যা কিছু পুণ্য করেছ, তোমার সেই সব পুণ্য, তুমি মিথ্যা বললে, কুকুরের কাছে যাবে।

৯১। একোহহমস্মীত্যাত্মানং যৎ ত্বং কল্যাণ মন্যসে।

নিত্যং স্থিতস্তে হৃদ্যেষ পুণ্যপাপেক্ষিতা মুনিঃ ॥

হে ভদ্র, তুমি যে নিজেকে একাকী মনে কর (তা ঠিক নয়)। পুণ্য পাপের দ্রষ্টা মুনি এই (পরমাত্মা) সর্বদা তোমার হৃদয়ে আছেন।

৯২। যমো বৈবস্বতে দেবো যস্তবৈষ হৃদি স্থিতঃ।

তেন চেদবিবাদস্তে মা গঙ্গাং মা কুরূন্ গমঃ ॥

এই যে বৈবস্বত যম দেব তোমার হৃদয়ে আছেন, তাঁর সঙ্গে তোমার বিবাদ না থাকলে (মিথ্যা সাক্ষ্যজনিত পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য) গঙ্গায় ও কুরুক্ষেত্রে যেওনা।

৯৩। নাগ্নো মুণ্ডঃ কপালেন ভিক্ষার্থী ক্ষুৎপিপাসিতঃ।

অন্ধঃ শত্রুকুলং গচ্ছেদ্ যঃ সাক্ষ্যমন্তং বদেৎ॥

যে মিথ্যাসাক্ষ্য দেয়, সে (পরলোকে) উলঙ্গ, মুণ্ডিতমস্তক, কপাল (খর্পর) হস্তে ভিক্ষার্থী, ক্ষুধা পিপাসার্ত ও অন্ধ হয়ে শত্রুকুলে গমন করে।

৯৪। অবাকশিরাস্তস্যন্ধে কিল্বিষী নরকং ব্ৰজেৎ।

যঃ প্রশ্নং বিতথং ব্রয়াং পৃষ্টঃ সন্ ধর্মনিশ্চয়ে॥

সত্যনির্ধারণ ব্যাপারে প্রশ্ন জিজ্ঞাসিত হয়ে যে মিথ্যা বলে, সে অবধামুখে ঘোর অন্ধকারে পাপযুক্ত হয়ে নরকে গমন করে।

৯৫। অন্ধো মৎস্যানিবাশ্নাতি স নরঃ কন্টকৈঃ সহ।

যো ভাষতেহর্থবৈকল্যমপ্রত্যক্ষং সভাং গতঃ॥

যে সভায় উপস্থিত হয়ে মিথ্যা কথা বলে সে অন্ধের মৎস্যভক্ষণের ন্যায় কাঁটা সহ অন্ন ভক্ষণ করে।

৯৬। যস্য বিদ্বান্ হি বদতঃ ক্ষেত্ৰজ্ঞো নাভিশঙ্কতে।

তস্মান্ন দেবাঃ শ্রেয়াংসং লোকেন্যং পুরুষং বিদুঃ॥

যার হৃদয়স্থিত অন্তর্যামী, সে মিথ্যা বলছে বলে আশঙ্কা করেন না, দেবগণ পৃথিবীতে সেই ব্যক্তি অপেক্ষা অন্য লোককে শ্রেষ্ঠ বলেন না।

৯৭। যাবতো বান্ধবান্ যস্মিন হস্তি সাক্ষ্যেহনৃতং বদন্।

তাবতঃ সংখ্যয়া তস্মিন্ শৃণু সৌম্যানুপুর্বশঃ॥

হে সৌম্য, যে সাক্ষ্যে মিথ্যা বলে যত সংখ্যক পিত্রাদি বান্ধবগণকে নিহত করে, তাতে তত সংখ্যক লোক বলছি, ক্রমে শোন।

৯৮। পৃঞ্চ পষতে হন্তি দশ হন্তি গবানৃতে।

শতমশ্বানৃতে হস্তি সহস্রং পুরুষাতে॥

পশুসম্বন্ধে মিথ্যা ভাষণে (পিত্রাদি) পাঁচ পুরুষ, গাভী বিষয়ে মিথ্যা কথায় দশ পুরুষ, অশ্ব সম্বন্ধে মিথ্যা ভাষণে এক শত, মানুষ সম্বন্ধে মিথ্যা কথনে সহস্র পুরুষকে নিহত করে।

৯৯। হস্তি জাতানজাংশ্চ হিরণ্যার্থেহনৃতং বদন্।

সর্বং ভূম্যনৃতে হস্তি মাস্ম ভূম্যনৃতং বদীঃ॥

সোনার জন্য মিথ্যা বলে (পূর্ব) জাত (পিত্রাদিকে) এবং অজাত (পুত্ৰাদিকে), ভূমিসম্বন্ধে মিথ্যা কথায় সকলকে নিহত করে ; ভূমিবিষয়ে মিথ্যা বলবে না।

১০০। অপ্সু ভূমিবদিত্যাহুঃ স্ত্রীণাং ভোগে চ মৈথুনে।

অব্জেষু চৈব রত্নেষু সর্বেস্বশ্ময়েষু চ॥

জল, স্ত্রীসম্ভোগ, জলজরত্ন ও সকল প্রস্তর নির্মিত দ্রব্য বিষয়ে মিথ্যা কথায়, ভূমি বিষয়ে মিথ্যা কথায় যে পাপ হয়, তাই হয়।

১০১। এতান্ দোষানবেক্ষ্য ত্বং সর্বাননৃতভাষণে।

যথাশ্রুতং যথাদৃষ্টং সর্বমেবাঞ্জসা বদ॥

মিথ্যাভাষণে এই সকল দোষ লক্ষ্য করে যেমন শুনেছ যেমন দেখেছ তা সব সত্য করে বল।

১০২। গোরক্ষকান্ বাণিজ্ঞিকাংস্তথা কারুকুশীলবান্।

প্রেষ্যান্ বার্ধুষিকাংশ্চৈব বিপ্রান্ শূদ্ৰবাচরেৎ॥

গোপালক্, বণিক্, (পাচকাদি) কারু, নটকর্ম ও নৃত্যগীতাদিজীবী, দাসকর্মজীবী, কুসীদজীবী (সুদখোব) ব্রাহ্মণের প্রতি শূদ্রের ন্যায় ব্যবহার করবে।

১০৩। তদ্বদন্ ধর্মতোহের্থেযষু জানন্নপ্যন্যথা নরঃ।

ন স্বর্গাচ্চবতে লোকাদ্দৈবীংবাচং বদন্তি তাম্॥

বিচার্য বিষয়ে (ঠিক) জেনেও দয়াদি হেতু অন্য প্রকার বললে স্বর্গলোক থেকে ভ্রষ্ট হয় না ; সেই বাক্যকে দৈব বলা হয়।

১০৪। শূদ্ৰবিট্‌ক্ষর্বিপ্রাণাং যত্ৰর্তোক্তৌ ভবেদ্বধঃ।

তত্র বত্তুবামনৃতং তদ্ধি সত্যাদ্দিশিষ্যতে॥

যেখানে সত্যভাষণে শূদ্র, বৈশ্য, ক্ষত্রিয় বা ব্রাহ্মণের বধ হতে পারে, সেখানে মিথ্যা বক্তব্য ; তা সত্য অপেক্ষা শ্রেয়।

১০৫। বাগ্‌দৈবত্যৈশ্চ চরুভির্যজেরংস্তে সরস্বতীম্।

অনৃতস্যৈনসস্তস্য কুর্বাণা নিষ্কৃতিং পরাম্॥

সেই মিথ্যাজনিত পাপ থেকে উত্তমরূপে মুক্তিকামী ব্যক্তি, যার দেবতা বাগ্‌দেবী সেই চরুদ্বারা সরস্বতীর উদ্দেশ্যে যাগ করবে।

১০৬। কুদ্মাণ্ডৈর্বাপি জুহুয়াদ্ ঘৃতমগ্নেী যথাবিধি।

উদিত্যৃচা বা বারুণ্যা তৃচেনাবন্দৈব তেন বা॥

অথবা নিয়মানুসারে কুদ্মাণ্ডমন্ত্র দ্বারা অগ্নিস্থাপনপূর্বক অগ্নিতে ঘৃতদ্বারা হোম করবে অথবা উদুত্যম্ ইত্যাদি বরুণদেবতার মন্ত্র বা (আপোহিষ্ঠা ইত্যাদি) তিনটি ঋক্‌ উচ্চারণ করে (অগ্নিতে ঘৃত দ্বারা হোম করবে।)

১০৭। ত্রিপক্ষাদব্রুবন্ সাক্ষ্যমৃণাদিষু নরোহগদঃ।

তদৃণং প্রাপ্নুয়াৎ সর্বং দশবন্ধঞ্চ সর্বতঃ।

অরোগী লোক ঋণাদি বিষয়ে তিন পক্ষের মধ্যে সাক্ষ্য না দিলে সেই ঋণের জন্য দায়ী হবে এবং তার দশ ভাগের একভাগ দণ্ড দিবে।

১০৮। যস্য দৃশ্যেতে সপ্তাহাবাক্যস্য সাক্ষিণঃ।

রোগোহগ্নিজ্ঞাতিমরণমৃণং দাপ্যো দমঞ্চ সঃ॥

যে সাক্ষীর সাক্ষ্যদানের সপ্তাহ মধ্যে রোগ, গৃহদাহ (বা) জ্ঞাতিমরণ হয়, তাকে ঋণ ও দণ্ড দিতে হবে।

১০৯। অসাক্ষিকেষু ত্বর্থেষু মিথো বিবদমানয়োঃ।

অবিন্দংস্তত্ত্বতঃ সত্যং শপথেনাপি লম্ভয়েৎ॥

পরস্পর বিবদমান দুই ব্যক্তির সাক্ষীহীন বিষয়ে সত্য নির্ধারণ করতে না পারলে শপথ দ্বারাও সত্যনির্ণয় করবেন।

১১০। মহর্ষিভিশ্চ দেবৈশ্চ কার্যার্থং শপথাঃ কূতাঃ।

বশিষ্ঠশ্চাপি শপথং শেপে পৈজবনে নৃপে॥

মহর্ষি এবং দেবগণও সন্দিগ্ধ কার্যনির্ণয়ার্থে শপথ করেছিলেন। বশিষ্ঠও পৈজবন রাজার নিকট শপথ করেছিলেন।

১১১। ন বৃথা শপথং কুর্যাৎ স্বল্পেহপ্যর্থে নরো বুধঃ।

বৃথা হি শপথং কুর্বন্ প্ৰেত্য চেহ চ নশ্যতি॥

প্রাজ্ঞ ব্যক্তি সামান্য বিষয়েও বৃথা শপথ করবেন না। বৃথা শপথ করে ইহলোকে ও পরলোকে (মানুষ) বিনাশপ্রাপ্ত হয়।

১১২। কামিনীষু বিবাহেষু গৰাং ভক্ষ্যে তথেন্ধনে।

ব্রাহ্মণাভ্যুপপত্তৌ চ শপথে নাস্তি পাতকম্॥

কামিনী (তুমিই আমার প্রেয়সী এইরূপ), বিবাহে (আমি অন্য মেয়ে বিবাহ করব না এইরূপ), গাভীর ঘাস প্রভৃতি আহরণ বিষয়ে, হোমার্থে কাষ্ঠাদি আহরণে এবং ব্রাহ্মণরক্ষার্থে (প্রতিশ্রুত ধনাদি বিষয়ে বৃথা) শপথে পাপ নেই।

১১৩। সত্যেন শাপয়েদ্বিপ্রং ক্ষত্রিয়ং বাহনায়ুধৈঃ।

গো-বীজ-কাঞ্চনৈবৈশ্যং শূদ্রং সর্বৈস্ত পাতকৈঃ॥

‘সত্য বল’ এই বলে ব্রাহ্মণকে, (হস্তী অশ্বদি) বাহন ও অস্ত্র (আমার যেন বিফল হয় এই বলে) ক্ষত্রিয়কে, (গবাদি পশু ও ধান্যাদি বীজ যেন আমার নিষ্ফল হয় এই বলে) বৈশ্যকে, (সকল পাপ যেন আমার হয় এই বলে) শূদ্রকে শপথ করাবেন।

১১৪। অগ্নিং বা হারয়েদেনমস্পু চৈনং নিমজ্জয়েৎ।

পুত্ৰদারস্য বাপ্যেনং শিরাংসি স্পর্শয়েৎ পৃথক্॥

অথবা শূদ্রকে অগ্নিপরীক্ষা বা জল পরীক্ষা করাবেন বা তার পুত্র বা স্ত্রীর মাথায় হাত দিয়ে (শপথ করাবেন)।

১১৫। যমিদ্ধো ন দহত্যগ্নিরাপো নোন্মজ্জয়ন্তি চ।

ন চার্তিমৃচ্ছতি ক্ষিপ্রং স জ্ঞেয়ঃ শপথে শুচিঃ॥

যাকে প্রজ্বলিত অগ্নি দগ্ধ করে না, জল নিমজ্জিত করে না, যে শীঘ্র (স্ত্রী পুত্রাদির মস্তকস্পর্শেও) দুর্গতি প্রাপ্ত হয় না, সে শপথে পবিত্র বলে জ্ঞেয়।

১১৬। বংসস্য হ্যভিশস্তস্য পুরা ভ্রাতা যবীয়সা।

নাগ্নির্দদাহ রোমাপি সত্যেন জগতঃ স্পশঃ॥

প্রাচীনকালে (তুমি ব্রাহ্মণ নও, শূদ্রার পুত্র এইরূপে) কনিষ্ঠ ভ্রাতা কর্তৃক অভিশপ্ত বংস (ঋষি আত্মশুদ্ধির জন্য যখন অগ্নিপরীক্ষা করেন তখন) জগতের (শুভাশুভ কর্তব্যে) চররূপ সত্যতা হেতু তাঁর একটি লোমও অগ্নি দগ্ধ করেনি।

১১৭। যস্মিন্ যস্মিন্ বিবাদে তু কৌটসাক্ষ্যং কৃতংভবেৎ।

তত্তৎকার্যং নিবৰ্তেত কৃতঞ্চাপ্যকৃতং ভবেৎ॥

যে যে বিবাদে কূটসাক্ষ্য নির্ধারিত করা হয়, সেই সেই কার্য সেই সেই অসমাপ্ত বিষয় (বিচারক) পুনরায় বিচার করবেন। এমন বিচার কৃত হলেও অকৃত হয়।

১১৮। লোভান্মোহাদ্ভয়ান্মৈএাৎ কামাৎ ক্রোধাওথৈব চ।

অজ্ঞানাদ্বালভাবাচ্চ সাক্ষ্যং বিতথমুচ্যতে॥

লোভ, মোহ, ভয়, বন্ধুভাব, কাম, ক্রোধ, অজ্ঞতা ও বালকভাব হেতু সাক্ষ্য মিথ্যা বলে উক্ত হয়।

১১৯। এষামন্যতমে স্থানে যঃ সাক্ষ্যমনৃতং বদেৎ।

তস্য দণ্ডবিশেষাংস্তু প্রবক্ষ্যাম্যনুপূর্বশঃ॥

এদের মধ্যে কোন কারণে যে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়, তার বিশেষ দণ্ড সম্বন্ধে ক্ৰমে বলব।

১২০। লোভাৎ সহস্রং দণ্ড্যস্ত মোহাৎ পূর্বন্তু সাহসম্।

ভয়াদ্দৌ মধ্যমৌ দণ্ডৌ মৈত্রাৎ পূর্বং চতুর্গুণম্॥

লোভ হেতু সহস্র, মোহ হেতু প্রথম সাহস৩, ভয় হেতু দুইটি মধ্যম সাহস, বন্ধুত্ব হেতু প্রথম সাহসের চতুর্গুণ দণ্ড বিধেয়।

১২১। কামাদ্দশগুণং পূর্বং ক্রোধাৎ তু ত্রিগুণং পরম্।

অজ্ঞানাদ্দে শতে পূর্ণে বালিশ্যাচ্ছতমেব তু॥

কাম হেতু প্রথম সাহসের দশগুণ, ক্রোধ হেতু মধ্যম সাহসের তিনগুণ, অজ্ঞতা হেতু দুই শত, অনবধান হেতু এক শত (পণ দণ্ড বিহিত)।

১২২। এতানাহুঃ কৌটসাক্ষ্যে প্রোত্তান্ দণ্ডান্‌মনীষিভিঃ।

ধর্মস্যাব্যভিচারার্থমধর্মনিয়মায় চ॥

কূটসাক্ষ্যে ধর্ম লঙ্ঘন যাতে না হয় এবং অধর্ম নিবারণের জন্য এই দণ্ডগুলি মনীষিগণ বলেছেন।

১২৩। কৌটসাক্ষ্যণ্ড কুর্বাণাংস্ত্রী বর্ণান্ ধার্মিকো নৃপঃ।

প্রবাসয়েদ্দণ্ডয়িত্বা ব্রাহ্মণস্তু বিবাসয়ে॥

ধার্মিক রাজা কূটসাক্ষ্যদানকারী তিন বর্ণকে দণ্ডদান করে নির্বাসিত করবেন, ব্রাহ্মণকে কিন্তু (ধনদণ্ড ব্যতিরেকে) নিজ রাজ্য থেকে বহিষ্কৃত করবেন৪।

১২৪। দশ স্থানানি দণ্ডস্য মনুঃ স্বায়ম্ভুবোহব্রবীৎ।

ত্ৰিযু বর্ণেষু যানি স্যুরক্ষতো ব্রাহ্মণো ব্ৰজেং॥

(মহাপরাধে) স্বায়ংভুব মনু শারীরিক দণ্ড বিধানের দশটি স্থান বলেছেন: এইগুলি ক্ষত্রিয়াদি তিন বর্ণে প্রযোজ্য ; ব্রাহ্মণ অক্ষত দেহে দেশ থেকে বহির্গত হন।

১২৫। উপস্থমূদরং জিহ্বা হস্তৌ পাদৌ চ পঞ্চমম্‌।

চক্ষুর্নাসা চ কর্ণেী চ ধনং দেহস্তথৈব চ॥

পুরুষাঙ্গ, উদর, জিহ্বা, হস্ত ও পঞ্চম পদ, চক্ষু, নাক, কর্ণ, ধন ও দেহ (এইগুলির মধ্যে যে যে অঙ্গে অপরাধ করে, সেই সেই অঙ্গে দণ্ডবিধান করবেন ; কেবল মহাপাতক স্থলে দেহদণ্ড বিধেয়, অন্যাপরাধে নয়)।

১২৬। অনুবন্ধং পরিজ্ঞায় দেশকালৌ চ তত্ত্বতঃ।

সারাপরাধৌ চালোক্য দণ্ডং দণ্ড্যেষু পাতয়েৎ॥

(পুনঃ পুনঃ অপরাধের ইচ্ছা) এবং দেশ কাল যথাযথরূপে নির্ধারণ করে (অপরাধীর ধনশরীরাদি) সামর্থ্য ও (গুরু লঘু) অপরাধ বিবেচনা করে দণ্ডনীয় ব্যক্তিকে দণ্ডিত করবেন।

১২৭। অধর্মদণ্ডনং লোকে যশোঘ্নং কীর্তিনাশনম্।

অস্বর্গ্যঞ্চ পরত্রাপি তস্মাৎ তৎ পরিবর্জয়েৎ॥

অন্যায় ভাবে দণ্ডদান পৃথিবীতে যশ ও কীর্তিনাশক, পরলোকে স্বর্গলাভের প্রতিকূল ; সুতরাং, তা বর্জন করবেন।

১২৮। অদণ্ড্যান্ দণ্ডয়ন্ রাজা দণ্ড্যাংশ্চৈবাপ্যদণ্ডয়ন্।

অযশো মহদাপ্নোতি নরকঞ্চৈব গচ্ছতি॥

অদণ্ডনীয়কে দণ্ড দিলে, দণ্ডনীয়কে দণ্ড না দিলে রাজা মহা অযশ প্রাপ্ত হন এবং নরকগমন করেন।

১২৯। বাগ্‌দণ্ডং প্রথমং কুর্যাদ্‌দিধিগ্‌দণ্ডং তদনন্তরম্।

তৃতীয়ং ধনদণ্ডত্ত বধদণ্ডমতঃপরম্॥

প্রথমে বাগ্‌দণ্ড (বাক্য দ্বারা তিরস্কার), তারপর ধিক্ দণ্ড (তুমি মন্দ লোক, তোমাকে ধিক্ এইরূপ), তৃতীয় ধনদণ্ড, তৎপর বধদণ্ড৫ (বিহিত)।

১৩০। বধেনাপি যদা ত্বেতান্ নিগ্রহীতুং ন শক্লুয়াৎ।

তদৈষু সর্বমপ্যেতং প্রযুঞ্জীত চতুষ্টয়ম্॥

তাড়নাদি দ্বারাও যখন এই অপরাধিগণকে শাসন করতে পারা যায় না, তখন এদের প্রতি এই চারটির সবই প্রয়োগ করবে।

১৩১। লোকসংব্যবহারার্থং যাঃ সংজ্ঞাঃ প্রথিতা ভুবি।

তাম্রররূপ্যসুর্ণানাং তাঃ প্রবক্ষ্যাম্যশেষতঃ॥

(ক্রয়বিক্রয়াদি) লোকব্যবহারের জন্য পৃথিবীতে তামা, রূপা ও সোনার যে সকল সংজ্ঞা প্রসিদ্ধ, সেইগুলি সম্পূর্ণরূপে বলব।

১৩২। জালান্তরগতে ভানৌ যৎ সূক্ষ্মং দৃশ্যতে রজঃ।

প্রথমং তৎ প্রমাণানাং ত্রসরেণুং প্রচক্ষতে॥

জানালা দিয়ে যে সূর্যকিরণ আসে, তাতে যে সুক্ষ্ম ধূলিকণা দৃষ্ট হয়, পরিমাণ সমূহের মধ্যে প্রথম সেই পদার্থ এসরেণু বলে কথিত।

১৩৩। ত্রসরেণবোহষ্টৌ বিজ্ঞেয়া লিক্ষৈকা পরিমাণতঃ।

তা রাজসর্ষপস্তিস্রস্তে এয়ো গৌরসর্ষপঃ॥

আট ত্রসরেণুতে এক লিক্ষা পরিমাণ জ্ঞেয়, তিন লিক্ষাতে এক রাজসর্ষপ ও তিন রাজসৰ্ষপে এক গৌরসর্ষপ হয়।

১৩৪। সর্যপাঃ ষড্‌যবো মধ্যসিযবংবত্বেককৃষ্ণলম্।

পঞ্চকৃষ্ণলকো মাষস্তে সুবর্ণস্তু যোড়শ॥

ছয় সর্ষৰ্পে এক যব, তিন যবে এক কৃষ্ণল, পাঁচ কৃষ্ণলে এক মাষ, এর ষোলগুণ এক সুবর্ণ (ভরি) হয়।

১৩৫। পলং সুবর্ণাশ্চত্বারঃ পলানি ধরণং দশ।

দ্বে কৃষ্ণলে সমধৃতে বিজ্ঞেয়ো রৌপ্যমাষকঃ॥

চার সুবর্ণে এক পল, দশ পলে এক ধরণ, দুই কুঁচে এক রূপার মাষ হয়।

১৩৬। তে ষোড়শ স্যাদ্ধরণং পুরাণশ্চৈব রাজতঃ।

কার্যাপণস্তু বিজ্ঞেয়স্তান্ত্রিকঃ কার্ষিকঃ পণঃ॥

ষোড়শ রূপার মায়ায় এক ধরণ হয় এবং রূপার পুরাণও হয়, (শাস্ত্রীয় পলের চতুর্থভাগ পরিমাণ) তামার কার্ষিক বা কার্ষাপণকেও পণ বলা যায়।

১৩৭। ধরণানি দশ জ্ঞেয়াঃ শতমানস্তু রাজতঃ।

চতুঃসৌবর্ণিকো নিষ্কো বিজ্ঞেয়স্ত প্রমাণতঃ॥

দশ ধরণে এক রূপার শতমান হয়, চার সুবর্ণে এক নিষ্ক জ্ঞেয়।

১৩৮। পাণানাং দ্বে শতে সাদ্ধে প্রথমঃ সাহসঃ স্মৃতঃ।

মধ্যমঃ পঞ্চ বিজ্ঞেয়ঃ সহস্রন্তেব চোত্তমঃ॥

আড়াই শ’ পণে হয় প্রথম সাহস, পাঁচ শ’ পণে মধ্যম ও সহস্র পণে উত্তম সাহস হয়।

১৩৯। ঋণে দেয়ে প্রতিজ্ঞাতে পঞ্চকং শতমর্হতি।

অপহ্নবে তদ্বিগুণং তন্মনোরনুশাসনম্॥

দেয় ঋণ দিতে প্রতিজ্ঞা করে না দিলে শতকরা পাঁচপণ, (ঋণ করে) অস্বীকার করলে তার দ্বিগুণ (দণ্ড) বিধেয়—মনুর এই বিধান।

১৪০। বশিষ্ঠবিহিতা বৃদ্ধিং সূজেদ্বিত্তবিবর্ধিনীম্।

অশীতিভাগং গৃহ্নীয়ান্মাসাদ্বার্ধুষিকঃ শতে॥

(সুদজীবী উত্তমর্ণ) অর্থবৃদ্ধির জন্য বশিষ্ঠ কর্তৃক বিহিত (হারে অর্থাৎ) মাসে শতকরা অশীতি ভাগ সুদ নিবেন।

১৪১। দ্বিকং শতং বা গৃহ্নীয়াৎ সতাং ধর্মমনুস্মরন্।

দ্বিকং শতং হি গৃহ্নানো ন ভব্যর্থকিন্বিষী॥

অথবা সজ্জনের ধর্ম অনুসরণ করে শতকরা দুই (পণ সুদহিসাবে গ্রহণ করবেন ; শতকরা দুই (পণ) গ্রহণ করে (উত্তমর্ণ) ধন বিষয়ে পাপী হয় না।

১৪২। দ্বিকং ত্ৰিকং চতুকঞ্চ পঞ্চকঞ্চ শতং সমম্।

মাসস্য বৃদ্ধিং গৃহ্নীয়াদ্বার্ণানামনুপূর্বশঃ॥

(চার) বর্ণ থেকে ক্রমে মাসিক শতকরা দুই, তিন, চার বা পাঁচ (পণের) সমান পরিমাণ সুদ গ্রহণীয়।

১৪৩। ন ত্বেবেধৌ সোপকারে কৌসীদীং বৃদ্ধিমাপ্নুয়াৎ।

নচাধেঃ কালসংরোধান্নিসর্গোহস্তি ন বিক্রয়ঃ॥

ভোগ্য আধিতে৬ সুদ (উত্তমর্ণ পাবে না)। দীর্ঘকাল যাবৎ আধি থাকলে (মূলধন দ্বিগুণ হলেও) আধির নিসর্গ (অন্যকে দান) বা (অন্যের নিকট) বিক্রয় (বিহিত) নয়।৭

১৪৪। ন ভোক্তব্যো বলাদাধিভুঁঞ্জানো বৃদ্ধিমুৎসূজেৎ।

মুল্যেন তোষয়েচ্চৈনমাধিস্তেনোহন্যথা ভবেৎ॥

(গোপ্য) আধি (উত্তমর্ণ বলপূর্বক) ভোগ করবেন না, করলে সুদ ছাড়তে হবে এবং পূর্বের মূল্যের সমান মূল্য অধমর্ণকে দিতে হবে ; নচেৎ আধি-অপহারক হবে।

১৪৫। আধিশ্চোপনিধিশ্চোভৌ কালাত্যয়মহতঃ।

অবহার্যৌ ভবেতাং তো দীর্ঘকালমবস্থিতৌ॥

আধি ও উপনিধি৮ এই দুইটিই দীর্ঘকাল থাকলেও কালাতিক্রমের যোগ্য নয় ; (তাদের স্বত্বাধিকারী চাওয়ামাত্রই) প্রত্যর্পণীয়।

১৪৬। সম্প্রীত্যা ভুজমানানি ন নশ্যন্তি কদাচন।

ধেনুরুষ্ট্রো বহন্নশ্বো যশ্চ দম্যঃ প্রযুজ্যতে॥

সম্প্রীতিবশতঃ (অন্যের) গাভী, উষ্ট্র, ভারবাহী৯ অশ্ব ও দমনার্থেপ্রযুক্ত বৃষাদি উপভোগ করলে কখনও নষ্ট হয় নয়া(অর্থাৎ ঐগুলির উপরে মালিকের স্বত্ব নষ্ট হয় না)।

১৪৭। যৎকিঞ্চিদ্দশবর্ষাণি সন্নিধৌ প্রেক্ষতে ধনী।

ভুজ্যমানং পরৈস্তূষ্ণীং ন স তল্লন্ধুমর্হতি॥

কোন দ্রব্যস্বামী তার সমক্ষে সেই দ্রব্য অপর কর্তৃক উপভুক্ত দেখে দশ বৎসর নীরব থাকলে সে তা পাওয়ার যোগ্য হয় না (উপভোক্তারই ঐ দ্রব্যের উপরে স্বত্ব জন্মে)।

১৪৮। অজড়শ্চেদপোগণ্ডো বিষয়ে চাস্য ভুজ্যতে।

ভগ্নং তদ্ব্যবহারেণ ভোক্তা তদ্‌দ্রব্যমর্হতি॥

দ্রব্যস্মামী জড়বুদ্ধি বা আপোগণ্ড (যোল বৎসরের কমবয়স্ক) না হলে তার চোখের সামনে ঐ দ্রব্য উপভুক্ত হলে স্বামীর ব্যবহারে তা ভন্ন হয় (অর্থাৎ তার উপরে স্বামীর অধিকার নষ্ট হয়) ; সেই দ্রব্য ভোক্তার হয়।

১৪৯। আধিঃ সীমা বালধনং নিক্ষেপোপনিধী স্ত্রিয়ঃ।

রাজস্বং শ্রোত্রিয়স্বঞ্চ ন ভোগেন প্রণশ্যতি॥

আধি, সীমা, বালকের ধন, নিক্ষেপ, উপনিধি, স্ত্রীলোক, রাজস্ব ও বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ (দশ বৎসর অপব কর্তৃক ভোগে) নষ্ট হয় না (অর্থাৎ আধি প্রভৃতির মালিকের স্বত্ব নষ্ট হয় না)।

১৫০। যঃ স্বামিনাননুজ্ঞাতমাধিং ভুঙ্‌ক্তেশ্ববিচক্ষণঃ।

তেনার্ধবৃদ্ধির্মোক্তব্যা তস্য ভোগস্য নিষ্কৃতিঃ॥

যে মুর্খ মালিকের অনুমতি ব্যতিরেকে আধি ভোগ করে, সে ভোগের নিষ্কৃতি স্বরূপ (নিয়মিত) বৃদ্ধির অর্ধেক ত্যাগ করবে।

১৫১। কুলীদবৃদ্ধির্দৈবৰ্গুণ্যং নাত্যেতি সকৃদাহৃতা।

ধান্যে সদে লবে বাহ্যে নাতিক্ৰামতি পঞ্চতাম্॥

যে সুদ একবার গৃহীত হয়েছে তা (মূল সুদে) দ্বিগুণের বেশী হয় না ; ধান, ফল, পশম, ভারবাহী বৃষাদি প্রযুক্ত হলে (মূলে সুদে) পাঁচগুণের অধিক হয় না।

১৫২। কৃতানুসারাধিকা ব্যতিরিক্তা ন সিধ্যতি।

কুসীদপথমাস্তং পঞ্চকং শহুমর্হতি॥

(শাস্ত্রানুসারে) নির্ধারিত সুদ থেকে অধিক সুদ সিদ্ধ হয় না। (নির্দিষ্ট হার থেকে অধিক সুদ গ্রহণকে) কুসীদপথ বলা হয়েছে; এতে (শূদ্র অধমর্ণের ক্ষেত্রে বিহিত) শতকরা পাঁচ (দ্বিজ থেকেও গৃহীত হয়)।

১৫৩। নাতিসাংবৎসরীং বৃদ্ধিং ন চাদৃষ্টাং পুনৰ্হরেৎ।

চক্রবৃদ্ধিঃ কালবৃদ্ধিঃ কারিতা কায়িকা চ যা॥

এক বৎসরের জন্য নির্দিষ্ট সুদ, শাস্ত্রে অবিহিত সুদ, চক্রবৃদ্ধি, কালিকা১০ কারিতা১১ ও কায়িকা১২ বৃদ্ধি গ্রহণ করবেন না।

১৫৪। ঋণং দাতুমশক্তো যঃ কর্তুমিচ্ছেৎ পুনঃ ক্রিয়াম্।

স দত্ত্বা নির্জিতাং বৃদ্ধিং করণং পরিবর্তয়েৎ॥

যে ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পুনরায় দলিল দিতে ইচ্ছা করে, সে যে সুদ স্বীকার করেছে তা দিয়ে দলিল পরিবর্তন করতে পারে।

১৫৫। অদর্শয়িত্বা তত্রৈব হিরণ্যং পরিবর্তয়েৎ।

যাবতী সম্ভবেদ্‌বৃদ্ধিস্তাবতীং দাতুমর্হতি॥

সমগ্র সুদ দিতে না পারলে অবশিষ্ট সুদ ও মূল একত্রে যা হবে সেই পরিমাণ অর্থের দলিল হবে।

১৫৬। চক্রবৃদ্ধিং সমারূঢ়ো দেশকালব্যবস্থিতঃ।

অতিক্রামন্ দেশকালৌ ন তত্ফলমবাপ্লুয়াৎ॥

যে (উত্তমর্ণ) চক্রবৃদ্ধি সুদ গ্রহণ করে এবং দেশকাল ব্যবস্থিত১৩ হয় অথচ দেশ কাল অতিক্রম করে সে সকল লাভরূপ ফল পায় না।

১৫৭। সমুদ্রযানকুশলা দেশকালার্থদর্শিনঃ।

স্থাপয়ন্তি তু যা বৃদ্ধিং সা তত্রাধিগমং প্রতি॥

সেখানে স্থল ও জলপথে গমনকুশল ব্যক্তি, যারা দেশ কালের লাভজ্ঞ, তারা ঐ অপূরিত কার্যের যে ভাড়া নির্ধারণ করবে তাই উক্ত শকটস্বামী পাবে।

১৫৮। যো যস্য প্রতিভূস্তিষ্ঠেদ্দর্শনায়েহ মানবঃ।

অদৰ্শয়ন্ স তং তস্য প্রযচ্ছেৎ স্বধনাদৃণম্॥

যে তার দর্শনপ্রতিভূ (অধমর্ণকে উপস্থাপিত করার দায়িত্ব যে নেয়) হয় সে তাকে উপস্থিত করতে না পারলে নিজের ধন থেকে উত্তমর্ণের ঋণ শোধ করবে।

১৫৯। প্রাতিভাব্যং বৃথাদানমাক্ষিকং সৌরিকঞ্চ যৎ।

দণ্ডশুল্কাবশেষঞ্চ ন পুত্রো দাতুমর্হতি॥

পিতার প্রতিভূদেয় ধন, বৃথাদান১৪, পাশাখেলা নিমিত্ত দেয়, সুরাপান নিমিত্ত দেয়, দণ্ডরূপে দেয় শুল্কের অবশিষ্ট অংশ পিতার পক্ষে পুত্রের দেয় নয়।

১৬০। দর্শনপ্রাতিভাব্যে তু বিধিঃ স্যাৎ পূর্বচোদিতঃ।

দানপ্রতিভুবি প্রেতে দায়াদানপি দাপয়েৎ॥

পূর্বোক্ত নিয়ম দর্শনপ্রতিভূদেয় বিষয়ে প্রযোজ্য। দানপ্রতিভূ মৃত হলে তার উত্তরাধিকারীদেরও (প্রতিশ্রুত) অর্থ দেওয়াবে।

১৬১- অদাতরি পুনর্দাতা বিজ্ঞাতপ্রকৃতাবৃণম্।

১৬২। পশ্চাৎ প্রতিভুবি প্রেতে পরীস্পেৎ কেন হেতুনা॥

নিরাদিষ্টধনশ্চেৎ তু প্রতিভুঃ স্যালংঘনঃ।

স্বধনাদেব তদ্দদ্যানিদিষ্ট ইতি স্থিতিঃ॥

প্রতিভূ উত্তমর্ণের ঋণ পরিশোধের যোগ্য ধন নিয়ে মৃত হলে তার পুত্র কেন ঐ ঋণ দিবে—এই প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়—যদি প্রতিভূ অধমর্ণের নিকট থেকে ঋণ শোধের যোগ্য ধন গ্রহণ করে শোধ না করে মরে তবে তার পুত্র ঐ ধন থেকে উত্তমর্ণের ঋণ শোধ করবে।

১৬৩। মত্তান্মত্তর্তাধ্যধীনৈবালেন স্থবিরেণ বা।

অসম্বন্ধকৃতশ্চৈব ব্যবহারো ন সিধ্যতি॥

মত্ত, উন্মত্ত, রোগগ্রস্ত, অতিপরাধীন দাসাদি, নাবালক, স্থবির (আশী বৎসর বা তদূর্ধববয়স্ক), (পিতা বা ভ্রাতাকর্তৃক) অনিযুক্ত—এই সকল লোকের (ঋণাদানাদি) ব্যবহার সিদ্ধ হয় না।

১৬৪। সত্যা ন ভাষা ভবতি যদ্যপি স্যাৎ প্রতিষ্ঠিত।

বহিশ্চেদ্‌ভাষ্যতে ধর্মন্নিয়তাদ্ব্যাবহারিকাৎ॥

‘আমি এ কাজ করব’ এই কথা যদি দলিলাদি দ্বারা স্থির হয়, (কিন্তু) তা যদি শাস্ত্র বা ব্যবহারবিরুদ্ধ হয় তাহলে তা সত্য হবে না।

১৬৫। যোগাধমনবিক্রীতং যোগদানপ্রতিগ্ৰহম্।

যত্র বাপ্যুধিং পশ্যেৎ তৎ সর্বং বিনিবর্তয়েৎ॥

ছলে কৃত বন্ধক, বিক্রয়, দান বা প্রতিগ্রহ অথবা যাতে ছল দেখা যায় সেই সব বাতিল হয়।

১৬৬। গ্রহীতা যদি নষ্টঃ স্যাৎ কুটুম্বার্থে কৃতো ব্যয়ঃ।

দাতব্যং বান্ধবৈস্তৎ স্যাৎ প্রবিভক্তৈরপি স্বতঃ॥

ঋণগ্রহণকারী পরিবারের জন্য ঋণ করে মৃত হলে তার (ভ্রাতাদি) বান্ধবগণ বিভক্ত (পৃথগন্ন) হলেও নিজেদের ধন থেকে তা পরিশোধ করবেন।

১৬৭। কুটুম্বার্থেহধ্যধীনোহপি ব্যবহারং যমাচরেৎ।

স্বদেশে বা বিদেশে বা তং জায়ান্ন বিচালয়েৎ॥

কর্তা স্বদেশে বা বিদেশে থাকাকালে পরিবারের জন্য দাসও যে ঋণাদি করে, তা কর্তা অস্বীকার করবেন না।

১৬৮। বলাদ্দত্তং বলাদ্ভূক্তং বলা যচ্চাপি লেখিতম্।

সর্বান্ বলকৃতানর্থানকৃতান্ মনুরব্রবীৎ॥

বলপূর্বক যা দত্ত, উপভুক্ত বা লিখিত হয়, সেই সব বলপূর্বক কৃত বিষয় অসিদ্ধ—মনু এই কথা বলেছেন।

১৬৯। এয়ঃ পরার্থে ক্লিশ্যন্তি সাক্ষিণঃ প্রতিভূঃ কুলম্।

চত্বারস্তূপচীয়ন্তে বিপ্র আঢ্যো বণিঙ্ নৃপঃ॥

সাক্ষী, প্রতিভূ (জামিন), মধ্যস্থ—এই তিনজন পরের জন্য কষ্টভোগ করে। ব্রাহ্মণ, ধনী, বণিক, রাজা—এই চারজন (পর থেকে) উন্নতি প্রাপ্ত হন।

১৭০। অনাদেয়ং নাদাদীত পরিক্ষীণোহপি পার্থিবঃ।

ন চাদেয়ং সমৃদ্ধোহপি সূক্ষ্মমপ্যর্থমুৎসৃজেৎ॥

রাজা অল্পধন হলেও যা গ্রহণের অযোগ্য তা গ্রহণ করবেন না। সমৃদ্ধ হলেও (গ্রাহ) অতি সামান্য বস্তুও ত্যাগ করবেন না।

১৭১। অনাদেয়স্য চাদানাদায়েস্য চ বর্জনা।

দৌর্বল্যং খ্যাপ্যতে রাজ্ঞঃ স প্রেত্যেহ চ নশ্যতি॥

অগ্রাহ্য দ্রব্যের গ্রহণ ও গ্রাহ্য দ্রব্যের বর্জন হেতু রাজার দুর্বলতা ঘোষিত হয়, তিনি ইহলোকে ও পলোকে বিনষ্ট হন।

১৭২। দানাদ্বর্ণসংসর্গাৎ ত্ববলানাঞ্চ রক্ষণাৎ।

বলং সঞ্জায়তে রাজ্ঞঃ স প্রেত্যেহ চ বর্ধতে॥

ন্যায্যধনের গ্রহণ, ব্রাহ্মণাদিবর্ণের সবর্ণের সঙ্গে বিবাহাদি সম্বন্ধ এবং দুর্বলের রক্ষা হেতু রাজার বল জন্মে ; তিনি ইহলোক ও পরলোকে উন্নতি লাভ করেন।

১৭৩। তস্মাদ্ যম ইব স্বামী স্বয়ং হিত্বা প্রিয়াপ্রিয়ে।

বর্তেত যাম্যয়া বৃত্ত্যা জিতক্রোধো জিতেন্দ্রিয়ঃ॥

সুতরাং, রাজা যমের ন্যায় ক্রোধ ও ইন্দ্রিয় জয়পূর্বক নিজের প্রিয় অপ্রিয় পরিত্যাগ করে যমের বৃত্তি অবলম্বন করবেন।

১৭৪। যত্ত্বধর্মেণ কার্যাণি মোহাৎ কুর্যান্নরাধিপঃ।

অচিরাৎ তং দুরাত্মানং বশে কুর্বন্তি শত্ৰবঃ॥

যে রাজা মোহবশতঃ অন্যায়ভাবে কার্য করেন, শীঘ্রই সেই দুরাত্মাকে শত্রুগণ বশীভূত করে।

১৭৫। কামক্রোধৌ তু সংযম্য যোহর্থান্ ধর্মেণ পশ্যতি।

প্রজাস্তমনুবর্তন্তে সমুদ্রমিব সিন্ধবঃ॥

কামক্রোধ নিয়ন্ত্রিত করে যিনি ধর্মানুসারে কার্য পরিদর্শন করেন, প্রজাগণ তাঁর অনুগামী হয়, যেমন নদীসমূহ সমুদ্রকে অনুগমন করে।

১৭৬। যঃ সাধয়ন্তং ছন্দেন বেয়েদ্ধনিকং নৃপে।

স রাজ্ঞা তচ্চতর্ভাগং দাপ্যস্তস্য চ তদ্ধনম্॥

ইচ্ছামত ধন আদায়কারী উত্তমর্ণ সম্বন্ধে যে (অধমর্ণ) রাজাকে জানায়, তাকে রাজা ঐ ঋণের চতুর্থভাগ (দণ্ড) ও সেই ঋণ দেওয়াবেন।

১৭৭। কর্মণাপি সমং কুর্যাদ্ধিনিকায়াধমর্ণিকঃ।

সমোহবকৃষ্টজাতিস্তু দদ্যাচ্ছেয়াংন্তু তচ্ছনৈঃ॥

ব্রাহ্মণভিন্ন সমান বা অপকৃষ্ট জাতির অধমর্ণ ঋণপরিশোধে অক্ষম হলে স্বজাতির যোগ্য কর্ম করে ঋণমুক্ত হবে, উৎকৃষ্ট জাতির অধমর্ণ আয় অনুসারে ক্রমে ঋণ শোধ করবে।

১৭৮। অনেন বিধিনা রাজা মিথো বিবদতাং নৃণাম্।

সাক্ষিপ্রত্যয়সিদ্ধানি কার্যাণি সমতাং নয়েৎ॥

এই নিয়মে রাজা পরস্পর বিবদমান লোকের সাক্ষ্যপ্রমাণ সিদ্ধ কার্য নিষ্পত্তি করবেন।

১৭৯। কুলজে বৃত্তসম্পন্নে ধর্মজ্ঞে সত্যবাদিনি।

মহাপক্ষে ধনিন্যার্যে নিক্ষেপং নিক্ষিপেদ্ধুধঃ॥

পণ্ডিত ব্যক্তি সকুলজাত, সদাচারী, ধার্মিক, সত্যবাদী, বৃহৎপরিবারভুক্ত ধনবান্ ও সরলপ্রকৃতি লোকের নিকট দ্রব্য নিক্ষেপ১৫ করবেন।

১৮০। যো যথা নিক্ষিপেস্তে যমর্থং যস্য মানবঃ।

স তথৈব গ্রহীতব্যো যথা দায়স্তথা গ্রহঃ॥

মানুষ যেভাবে কারও হাতে যে দ্রব্য নিক্ষেপ করে, সেই দ্রব্য সেই ভাবেই গ্রহণীয় ; যেমন ভাবে সমর্পণ তেমন ভাবেই গ্রহণ।

১৮১। যো নিক্ষেপং যাচ্যমানো নিক্ষেপ্তুর্ন প্রযচ্ছতি।

স যাচ্যঃ প্রাড্‌বিবাকেন তন্নিক্ষেপুরসন্নিধৌ॥

নিক্ষেপের জন্য যাচিত হয়ে যে নিক্ষেপকারীকে তা দেয় না, সে বিচারক কর্তৃক নিক্ষেপকারীর অগোচরে যাচিত হবে।

১৮২। সাক্ষভাবে প্রাণিধিভির্বয়োরূপসমন্বিতৈঃ।

অপদেশৈশ্চ সন্নস্য হিরণ্যং তস্য তত্ত্বতঃ॥

সাক্ষীর অভাবে আপনার চর, প্রাপ্তবয়স্ক ও রূপবান্ পুরুষ দ্বারা এই দ্রব্য না রাখলে রাজা অপহরণ করবেন, এই রূপ বলে সোনা তার নিকট নিক্ষেপ করিয়ে (নিক্ষেপধারণকারীর নিকট চাইবেন)।

১৮৩। স যদি প্রতিপদ্যেত যথানান্তং যথাকৃতম্।

ন তত্র বিদ্যতে কিঞ্চি যৎ পরৈরভিযুজ্যতে॥

সে যদি যেভাবে নিক্ষিপ্ত ও যে দ্রব্য গচ্ছিত ছিল তা স্বীকার করে, তাহলে তার সম্বন্ধে যা অভিযোগ তা অলীক।

১৮৪। তেষাং ন দদ্যাদ্ যদি তু তদ্ধিরণ্যং যথাবিধি।

উভৌ নিগৃহ্য দাপ্যঃ স্যাদিতি ধর্মস্য ধারণা॥

তাদের সেই সোনা যদি নিয়মানুসারে না দেয়, তবে ঐ দুই নিক্ষেপ তাকে নিগৃহীত করে দেওয়াতে হয়—এইরূপ ধর্মের সিদ্ধান্ত।

১৮৫। নিক্ষেপোপনিধী নিত্যং ন দেয়ে প্রত্যনন্তরে।

নশ্যতো বিনিপাতে তাবনিপাতে ত্বনাশিনৌ॥

নিক্ষেপ ও উপনিধি সর্বদা (দ্রব্যস্বামীর জীবৎকালে তার) পুত্ৰাদিকে দেয় নয় ; (দ্রব্যস্বামীকে দেওয়ার পূর্বে) পুত্রাদির বিনাশে দ্রব্য নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা, পুত্রাদি ও পিতার বিনাশ না হলে সমর্পণে কখনও অবিনষ্ট হতে পারে (সুতরাং অনর্থসন্দেহে পুত্ৰাদিকে দেয় নয়)।

১৮৬। স্বয়মেব তু যে দদ্যান্মৃতস্য প্রত্যনন্তরে।

ন স রাজ্ঞা নিযোক্তব্যো ন নিক্ষেপ্তশ্চ বন্ধুভিঃ॥

যে (নিক্ষেপধারী) নিজেই মৃত নিক্ষেপ্তার পুত্ৰাদিকে নিক্ষিপ্ত দ্রব্য দেয়, তার বিরুদ্ধে রাজা বা নিক্ষেপ্তার (পুত্ৰাদি) বন্ধু (অন্য নিক্ষিপ্ত দ্রব্যও তোমার কাছে আছে এইরূপ) অভিযোগ করতে পারবে না।

১৮৭। অচ্ছলেনৈব চাম্বিচ্ছেৎ তমর্থং প্রীতিপূর্বকম্।

বিচার্য তস্য বা বৃত্তং সাম্নৈব পরিসাধয়েৎ॥

(যদি কোনপ্রকারে ভ্রান্তি হয় তাহলে) ছল ব্যতিরেকে প্রীতিপূর্বক সেই অর্থ ইচ্ছা করবে অথবা তার আচরণ বিচার করে সান্ত্বনাবাক্যে ঐ দ্রব্য নির্ধারণ করবে।

১৮৮। নিক্ষেপেম্বেষু সর্বেষু বিধিঃ স্যাৎ পরিসাধনে।

সমুদ্রে নাপ্নুয়াৎ কিঞ্চিদ্ যদি তস্মান্ন সংহরেৎ॥

এই সব নিক্ষেপের ক্ষেত্রে প্রমাণ বিষয়ে (উক্ত) বিধি প্রযোজ্য। মুদ্রিত (sealed) নিক্ষেপে (নিক্ষেপধারী প্রতিমুদ্রাদি দ্বারা) কিছু অপহরণ না করলে তাতে কোন দোষ প্রাপ্ত হবে না।

১৮৯। চৌরেহৃতং জলেনোঢ়মগ্নিনা দগ্ধমেব বা।

ন দদ্যাৎ যদি তস্মাৎ স ন সংহরতি কিঞ্চন॥

চোর কর্তৃক অপহৃত, জলে ভেসে যাওয়া বা অগ্নিদগ্ধ (নিক্ষেপ নিক্ষেপকারী) দিবে না, যদি তা থেকে কিছু সে না নিয়ে থাকে।

১৯০। নিক্ষেপস্যাপহর্তারমনিক্ষেপ্তারমেব চ।

সর্বৈরুপায়ৈরন্থিচ্ছেৎ শপথৈশ্চৈব বৈদিকৈঃ॥

নিক্ষেপ-অপহারীকে এবং নিক্ষেপ না করে নিক্ষেপপ্রার্থীকে (রাজা) (সামাদি) সকল উপায়ে এবং বৈদিক শপথদ্বারা নিরূপণ করবেন।

১৯১। যা নিক্ষেপং নার্পয়তি যশ্চানিক্ষিপ্য যাচতে।

তাবুভৌ চৌরবচ্ছাস্যৌ দাপ্যৌ বা তৎসমং দমম্॥

যে নিক্ষেপ দেয় না এবং যে নিক্ষেপ না করে তা চায়, সেই উভয় ব্যক্তি চোরের ন্যায় শাসনযোগ্য অথবা নিক্ষেপের সমান দণ্ড দাপ্য।

১৯২। নিক্ষেপস্যাপহর্তারং তৎসমং দাপযেদ্দমম্।

তথোপনিধিহার্তারমবিশেষেণ পার্থিবঃ॥

নিক্ষেপ ও উপনিধির অপহারককে রাজা (নিক্ষেপ বা উপনিধির) সমান দণ্ড দেওয়াবেন।

১৯৩। উপধাভিশ্চ যঃ কশ্চিৎ পরদ্রব্যং হরেন্নরঃ।

সসহায়ঃ স হন্তব্য প্রকাশং বিবিধৈর্বধৈঃ॥

যে কেউ ছলে পরদ্রব্য হরণ করে, সে সহায়কসহ প্রকাশ্যে (হস্তপদাদি ছেদনপূর্বক) নানাপ্রকার আঘাতের দ্বারা বধ্য।

১৯৪। নিক্ষেপো যঃ কৃতো যেন যাবাংশ্চ কুলসন্নিধৌ।

তাবানেব স বিজ্ঞেয়ো বিব্ৰুবন্ দণ্ডমর্হতি॥

যে দ্রব্য যতটুকু সাক্ষিসকাশে নিক্ষেপ করা হয়েছে, তা সেই পরিমাণেই জ্ঞেয় ; অন্যপ্রকার বললে দণ্ডনীয় হয়।

১৯৫। মিথো দায়ঃ কৃতো যেন গৃহীতে মিথ এব বা।

মিথ এব প্রদাতব্যো যথা দায়স্তথা গ্রহঃ॥

যে নিক্ষেপ নির্জনে দেওয়া হয়েছে, নির্জনেই যা গৃহীত হয়েছে তা নির্জনেই প্রদেয় ; যেমন (নিক্ষেপ) দান হয়, তেমনই (তার) গ্রহণ হয়।

১৯৬। নিক্ষিপ্তস্য ধনস্যৈবং প্রত্যোপনিহিতস্য চ।

রাজা বিনির্ণয়ং কুর্যাদক্ষিন্নন্ ন্যাসধারিণম্॥

নিক্ষিপ্ত ও প্রীতিপূর্বক উপনিহিত ধনের নির্ণয় রাজা গচ্ছিতদ্রব্যধারীকে পীড়া না দিয়ে করবেন।

১৯৭। বিক্রীণীতে পরস্য স্বং যোহস্বামী স্বাম্যসম্মতঃ।

ন তং নয়েত সাক্ষ্যন্তু স্তেনমস্তেনমানিনম॥

যে পরের ধন স্বামীর অনুমতি ব্যতিরেকে বিক্রয় করে, সে নিজেকে চোর মনে না করলেও চোর, তাকে সাক্ষী করবে না।

১৯৮। অবহার্যো ভবেচ্চৈব সাম্বয়ঃ ষট্‌শতং দমম্।

নিরম্বয়োহনপসরঃ প্রাপ্তঃ স্যাচ্চৌরকিল্বিষম্॥

ঐ ব্যক্তি দ্রব্যস্বামীর বংশজাত হলে তাকে ছয় শত পণ দণ্ড দেওয়াবে ; বংশজাত না হলে এবং প্রতিগ্ৰহক্রয়াদি দ্বারা তার কাছ থেকে ধন অপসৃত না হলে সে চোরের পাপ প্রাপ্ত হয়।

১৯৯। অস্বামিনা কৃতো যস্ত দায়গা বিক্রয় এব বা।

অকৃতঃ স তু বিজ্ঞেয়ো ব্যবহারে যথা স্থিতিঃ॥

যে দ্রব্যস্বামী নয়, তৎকর্তৃক দান বা বিক্রয় ব্যবহারে অসিদ্ধ—এই নিয়ম।

২০০। সম্ভোগো দৃশ্যতে যত্ৰ ন দৃশ্যেতাগমঃ কচিৎ।

আগমঃ কারণং তত্র ন সম্ভোগ ইতি স্থিতিঃ॥

যেখানে (সম্পত্তির) ভোগ দেখা যায়, অর্জনের উপায় কোথাও দেখা যায় না, সেখানে (সঙ্গত উপায়ে) অর্জন (স্বত্বের) কারণ, ভোগ নয়—এই নিয়ম।

২০১। বিক্রয়াদ্ যো ধনং কিঞ্চিদ্‌গৃহ্নীয়াৎ কুলসন্নিধৌ।

ক্রয়েণ স বিশুদ্ধং হি ন্যায়ভো লভতে ধনম্॥

বিক্রয়যোগ্য স্থানে অনেকের সমক্ষে যে (স্বামী ভিন্ন অন্যের হস্ত থেকে) কোন দ্রব্য ক্রয় করে, সে ক্রয়ের দ্বারা শুদ্ধ ধন ন্যায্যভাবে লাভ করে (অতএব দণ্ডনীয় হয় না)।

২০২। অথ মূলমনাহার্যং প্রকাশক্রয়শোধিতঃ।

অদণ্ড্যো মুচ্যতে রাজ্ঞা নাষ্টিকো লভতে ধনম্॥

(মরণ ও দেশান্তর গমন হেতু) অস্বামী বিক্রেতাকে ক্রেতা যদি দেখাতে না পারে, তাহলে প্রকাশ্য ক্রয়দ্বারা শুদ্ধ (ক্রেতা) দণ্ডনীয় হবে না, রাজাকর্তৃক মুক্ত হবে, দ্রব্যস্বামী (নিজের ধনের কথা জ্ঞাপন করে তা) প্রাপ্ত হন।

২০৩। নান্যদন্যেন সংসৃষ্টরূপং বিক্রয়মৰ্হতি।

ন চাসারং ন চ ন্যূনং ন দূরেণ তিরোহিতম্॥

অন্য দ্রব্যের সঙ্গে মিশ্রিত কোন দ্রব্য, অসার বস্তু (সার বলে ঘোষণা করে), ওজনে কম দ্রব্য, দুবস্থিত দ্রব্য, রাগাদি দ্বারা যার রূপ প্রচ্ছন্ন এই সকল দ্রব্য বিক্রয়যোগ্য নয়।

২০৪। অন্যাং চেদ্দর্শয়িত্বান্যা বোঢ়ুঃ কন্যা প্রদীয়তে।

উভে তে একশুল্কেন বহেদিত্যব্রবীন্মনুঃ॥

এক কন্যা বরকে দেখিয়ে অন্য কন্যা দান করলে (যে কন্যাকে দেখান হয়েছিল তাকে প্রদত্ত) এক শুক্ষের দ্বারা উভয় কন্যাকে বিবাহ করবে—মনু এই কথা বলেছেন।

২০৫। নোন্মত্তায়া ন কুষ্ঠিন্যা ন চ যা স্পষ্টমৈথুনা।

পূর্বং দোষানভিখ্যাপ্য প্রদাতা দণ্ডমর্হতি॥

উন্মত্ত, কুষ্ঠরোগগ্রস্ত ও (বিবাহের পূর্বে) পুরুষসম্পর্কযুক্ত কন্যার সম্বন্ধে পূর্বে দোষগুলি না বলে (বিবাহ দিলে) কন্যাদাতা দণ্ডনীয় হয়।

২০৬। ঋত্বিগ্ যদি বৃতে যজ্ঞে স্বকর্ম পরিহাপয়েৎ।

তস্য কর্মানুরূপেণ দেয়োহংশঃ সহকর্তৃভিঃ॥

ঋত্বিক্ যদি যজ্ঞে বৃত হয়ে (রোগাদিহেতু) নিজকর্ম ত্যাগ করেন, তাহলে তাঁর (আরব্ধ) কর্ম অনুসারে (অন্য) পুরোহিতগণ সহ তাঁকে প্রাপ্য দক্ষিণার অংশ দেয়।

২০৭। দক্ষিণাসু চ দত্তাসু স্বকর্ম পরিহাপয়ন্।

কৃৎস্নমেব লভেতাংশমন্যেনৈব চ কারয়েৎ॥

দক্ষিণা দেওয়ার পরে নিজকর্ম ত্যাগ করে (ঋত্বিক্) সম্পূর্ণ দক্ষিণা পাবেন এবং অন্য লোক দিয়ে কাজ করাবেন।

২০৮। যস্মিন্ কর্মণি যা স্যুরুক্তাঃ প্রত্যঙ্গদক্ষিণাঃ।

স এব তা আদদীত ভজেরন্ সর্ব এব বা॥

যে কর্মে যে দক্ষিণা বিহিত হয়েছে সেই কর্মকারীই সেই দক্ষিণা পাবেন অথবা সকলে ভাগ করে দক্ষিণাংশ গ্রহণ করবেন (এই প্রশ্ন)।

২০৯। রথং হরেত চাধ্বর্যুর্ব্রহ্মাধানে চ বাজিনম্।

হোতা বাপি হরেশ্বমুদ্‌গাতা চাপ্যনঃ ক্রয়ে॥

আধানকর্মে অধ্বর্যু রথ, ব্রহ্মা (বেগবান) অশ্ব, হোতা (সাধারণ) অশ্ব ও উদ্‌গাতা সোমএুয়ে শকট পাবেন।

২১০। সর্বেষামর্ধিনো মুখ্যাস্তদর্ধেনার্ধিনোহপরে।

তৃতীয়িনস্তৃতীয়াংশাশ্চতুথাংশাশ্চ পাদিনঃ॥

সকল (ষোলজন) ঋত্বিকের মধ্যে যাঁরা প্রধান তাঁরা (সমগ্রদক্ষিণার) অর্ধেক পাবেন। অপর ঋত্বিক্গণ (মুখ্য ঋত্বিকের) অর্ধেক পাবেন। (কতক ঋত্বিক্) মুখ্য ঋত্বিকের তৃতীয় ভাগী হবেন। (এতদ্ভিন্ন অন্য ঋত্বিক্গণ) মুখ্য ঋত্বিকের চতুর্থভাগী হবেন।

২১১। সম্ভূয় স্বানি কর্মাণি কুর্বদ্ভিরিহ মানবৈঃ।

অনেন বিধিযোগেন কর্তব্যাংশপ্রকল্পনা॥

অনেকে যৌথভাবে কাজ করলে এই নিয়মে তাদের অংশবিভাগ হবে।

২১২। ধর্মার্থং যেন দত্তং স্যাৎ কস্মৈচিদ্যাচতে ধনম্।

পশ্চাচ্চ ন তথা তং স্যান্ন দেয়ং তস্য তদ্ভবেৎ॥

ধর্মকার্যের জন্য যে কোন যাচককে ধনদান করে বা প্রতিশ্রুতি দেয় (অথচ যাচক) সেই ভাবে ঐ কাজ করে না, সে ঐ ধন ঐ যাচককে (প্রতিশ্রুতি অনুসারে) দিবে না (অথবা দেওয়া হলে তা ফেরৎ নেওয়া হবে)।

২১৩। যদি সংসাধয়েত্তং তু দর্পাল্লোভেন বা পুনঃ।

রাজ্ঞা দাপাঃ সুবর্ণং স্যাং তস্য স্তেয়স্য নিষ্কৃতিঃ॥

যদি (যাচক) দর্প বা লোভবশতঃ প্রদত্তধন প্রত্যর্পণ না করে (বা প্রতিশ্রত দ্রব্য বলপূর্বক গ্রহণ কবে) তাহলে রাজা তাকে ঐ চৌর্যের (অপরাধের) নিষ্কৃতিস্বরূপ এক সুবর্ণ (দণ্ড) দেওয়াবেন।

২১৪। দত্তস্যৈষোদিতা ধর্ম্যা যথাবদনপক্রিয়া।

অত ঊৰ্ব্বং প্রবক্ষ্যামি বেতনস্যানক্রিয়াম্।

দত্তানপকর্ম (রূপ) বিবাদপদের নিয়ম বলা হল। এরপরে বেতনাদান সম্বন্ধে বলব।

২১৫। ভৃত্যে নার্তো ন কুর্যাদ দর্পাৎ কর্ম যথোদিতম্।

স দণ্ড্যঃ কৃষ্ণলান্যশষ্টৌ ন দেযঞ্চাস্য বেতনম্।

যে ভৃত্য রোগার্ত না হয়ে দর্পবশতঃ যথানিরূপিত কর্ম করে না সে আট কৃষ্ণল দণ্ডনীয় ; একে বেতন দেয় নয়।

২১৬। আার্তস্ত কুর্যাৎ স্বস্থঃ সন্ যথা ভাষিতমাদিতঃ।

স দীর্ঘস্যাপি কালসা তল্লভেতৈব বেতনম্॥

রোগার্ত (ভৃত্য) সুস্থ হয়ে পূর্বের কথানুসারে কাজ করলে দীর্ঘকালের বেতনও পাবে।

২১৭। যথোক্তমার্তঃ স্বস্থো বা যস্তৎ কর্ম ন কাবুয়েৎ।

ন তস্য বেতনং দেয়মপ্পোনস্যাপি কর্মণঃ॥

রোগাৰ্ত (ভৃত্য) সুস্থ হয়ে কথামত কাজ না করলে অল্পাবশিষ্ট কাজেরও বেতন পাবে না।

২১৮। এষ ধর্মোহখিলেননাক্তো বেতনাদানকর্মণঃ।

অত ঊৰ্ব্বং প্রবক্ষ্যামি ধর্মং সময়ভেদিনাম্॥

বেতনাদান সম্বন্ধে এই নিয়ম সম্পূর্ণভাবে বলা হল। এরপরে চুক্তিভঙ্গকারিদের নিয়ম বলব।

২১৯। যো গ্রামদেশসঙঘানাং কৃত্ব্য সত্যেন সংবিদম্।

বিসংবদন্নরো লোভাং তং রাষ্ট্রাদ্বিপ্রিবাসয়েৎ॥

যে গ্রাম, দেশ বা সংঘের জন্য কাজের শপথ করে লোভবশতঃ চুক্তিভঙ্গ করে, তাকে রাজ্য থেকে নির্বাসন করবেন।

২২০। নিগৃহ্য দাপয়েচ্চৈনং সময়ব্যভিচারিণম্।

চতুঃসুবর্ণান্ যণ্‌নিকাংশুমানঞ্চ রাজতম্॥

এই চুক্তিভঙ্গকারীকে শাস্তি দিয়ে চার সুবর্ণ অথবা ছয় নিষ্ক এবং রূপার শতমান দণ্ড (রাজা) দেওয়াবেন।

২২১। এতং দণ্ডবিধিং কুর্যাদ্ধার্মিকঃ পৃথিবীপতিঃ।

গ্রাম-জাতিসমূহেষু সময়ব্যভিচারিণাম্॥

ধার্মিক রাজা গ্রাম, জাতিসমূহ সম্বন্ধে চুক্তিভঙ্গকারীর প্রতি এই দণ্ডবিধি প্রয়োগ করবেন।

২২২। এুীত্বা বিক্রয় বা কিঞ্চিদ্ যস্যেহাশয়ো ভবেৎ।

সোহন্তর্দশাহাত্তদ্‌দ্রব্যং দদ্যাচ্চৈবাদদাত বা॥

কিছু কিনে বা বেচে যার অনুতাপ হয়, সে দশ দিনের মধ্যে সেই দ্রব্য (ফেরৎ) দিবে বা (ফেরৎ) নিবে।

২২৩। পরেণত তু দশাহস্য ন দদ্যান্নাপি দাপয়েৎ।

আদদানো দদচ্চৈবে রাজ্ঞা দণ্ড্যঃ শতানি ষট্।

দশ দিনের পরে ক্রীত দ্রব্য ফেরৎ দিবে না, বলপূর্বক দেওয়াবেও না। (দশ দিনের পরে) দ্রব্য গ্রহণ করলে বা দিলে রাজা কর্তৃক ছয় শত পণ দণ্ডনীয় হবে।

২২৪। যস্ত দোষবতীং কন্যামন্যখ্যায় প্রযচ্ছতি।

তস্য কুর্যান্নৃপো দণ্ডং স্বয়ং ষন্নবতিং পণান্॥

যে দৃষিত কন্যাকে না বলে দান করে, রাজা তাকে ছিয়ানব্বই পণ দণ্ড দিবেন।

২২৫। অকন্যেতি তু যঃ কন্যাং ব্রুযাদ্বেষেণ মানবঃ।

স শতঃ প্রাপ্নুয়াদ্দন্ডং তস্যা দোষমদর্শয়ন্॥

যে দ্বেষহেতু এই নারী ক্ষতযোনি, (কুমারী) নয় এই কথা বলে (অথচ সেই কন্যার দোষ প্রমাণ করে না, সে একশত পণ দণ্ডভোগ করবে।

২২৬। পাণিগ্রহণিকা মস্ত্রাঃ কন্যাস্বেব প্রতিষ্ঠিতঃ।

নাকন্যাসু ক্কচিন্‌নৃণাং লুপ্তধর্মক্রিয়া হি তঃ॥

পাণিগ্রহণের মন্ত্রাঃ কনার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, কখনও (ক্ষতযোনি) অকন্যার ক্ষেত্রে নয় ; ক্ষতযোনি নারীগণ মন্ত্রদ্বারা সংস্কৃত হলেও তাদের ধর্মকার্য লুপ্ত হয় (অর্থাৎ তাদের বিবাহ ধর্মর্সম্মত নয়)।

২২৭। পাণিগ্রহণকা মন্ত্রা নিয়তং দারলক্ষণম্।

তেষাং নিষ্ঠা তু বিজ্ঞেয়া বিদ্ধদ্ভিঃ সপ্তমে পদে॥

পাণিগ্রহণের মন্ত্ৰসমূহ নিশ্চিতভাবে ভার্যাত্বসম্পাদক ; তাদের সমাপ্তি হয় সপ্তপদীগমনে।

২২৮। যস্মিন্ যস্মিন্ কৃতে কার্যে যস্যেহানুশয়ো ভবেৎ।

তমনেন বিধানেন ধর্ম্যে পথি নিবেশয়েৎ॥

যে যে কৃত কর্মে যার অনুতাপ হয়, তাকে এই ব্যবস্থায় ধর্মপথে স্থাপন করবেন।

২২৯। পশুষু স্বামিনাঞ্চৈব পালানাঞ্চ ব্যতিক্রমে।

বিবাদং সম্প্রবক্ষ্যামি যখাবদ্ধর্মতত্ত্বতঃ॥

পশুর ব্যাপারে স্বামী ও পালকের নিয়ম-ব্যতিক্রম হলে যে বিবাদ হয়, তা যথাযথভাবে ধর্মতত্ত্ব অনুসারে বলব।

২৩০। দিবা বক্তব্যতা পালে রাত্রৌ স্বামিনি তদ্‌গৃহে।

যোগক্ষেমেহনাথা চেত্তু পালো বক্তব্যতামিয়াৎ॥

দিনে (পালকের হস্তে ন্যস্ত) পশুর রক্ষণবিষয়ে দোষ হলে পালকের দোষ। রাত্রিবেলা স্বামীর গৃহে (কোন দোষ হলে তা) স্বামীর দোষ। দিবারাত্রি রক্ষণাদি কার্যে পালক নিযুক্ত হলে (রাত্রিবেলা দোষের জন্যও) পালক দোষভাগী হবে।

২৩১। গোপঃ ক্ষীরভূতো যত্ত স দুহ্যাদ্দশতো বরাম্।

গোস্বাম্যনুমতে ভূত্যঃ সা স্যাৎপালেহভৃতে ভৃতিঃ॥

দুগ্ধদ্বারা পালিত (অন্নদ্বারা নয়) দশটি গোপালকের বার্ষিক বেতন একটি দুগ্ধবতী গাভী।

২৩২। নষ্টং বিনষ্টং কৃমিভিঃ শ্বহতং বিষমে মৃতম্।

হীনং পুরুষকারেণ প্রদল্যাং পাল এব তূ॥

গাভী হারিয়ে গেলে, কীটদ্বারা নষ্ট, কুকুর কর্তৃক নিহত, উচ্চনীচস্থানে পতনে মৃত হলে, গোপালকের রক্ষী পুরুষ রহিত হয়ে গবাদির ক্ষতি হলে গোপালকই পশুস্বামীকে সেই গাভীর ক্ষতিপূরণ দিবে।

২৩৩। বিঘুষ্য তু হৃতং চৌরৈর্ন পালো দাতুমর্হতি।

যদি দেশে চ কালে চ স্বামিনঃ স্বস্য শংসতি॥

চোর কর্তৃক (ঢাকাদিবাদ্যে) ঘোষণাপূর্বক হৃত গাভী গোপালক কর্তৃক দেয় নয় যদি সে এই সংবাদ নিকটস্থ স্বামীকে হরণের পরে জানায়।

২৩৪। কর্ণো চর্ম চু বালাংশ্চ বস্তিংস্নায়ুঞ্চ রোচনাম্।

পশুষু স্বামিনাং দদ্যান্মৃতেস্বস্কানি দর্শয়েৎ॥

গোচারণভূমিতে (রোগাদিতে স্বয়ংমৃত পশুর) কর্ণ, চর্ম, লোম, বস্তি, স্নায়ু, রোচনা (যাতে মরণ সম্বন্ধে বিশ্বাস হয় এমন যে কোন) অঙ্গ পালক (দোষক্ষালনার্থে) স্বামীকে দেখবে।

২৩৫। অজাবিকে তু সংরুদ্ধে বৃকৈঃ পালে ত্বনায়তি।

যাং প্রসহ্য বৃকো হন্যাৎ পালে তৎকিল্বিম্বযং ভবেৎ॥

পালকের অনুপস্থিতিতে নেকড়ে বাঘ বলপূর্বক অবরুদ্ধ পাঁঠা ভেড়াকে নিহত করলে পালক সেই হত্যাপরাধী হবে।

২৩৬। তাসাং চেদবরুদ্ধানাং চরস্তীনাং মিথ্যে বনে।

যামুৎপ্লুত্য বৃকো হান্যান্ন পালস্তত্র কিল্বিষী॥

ঐ অবরুদ্ধ পশুগুলি মিলিত হয়ে বনে বিচরণ করতে থাকলে নেকড়ে বাঘ লাফিয়ে একটিকে হত্যা করলে পালক সেই হত্যাপরাধী হবে না।

২৩৭। ধনুঃশতং পরীহারো গ্রামস্য স্যাৎ সমত্ততঃ।

শম্যাপাতাস্ত্রয়ো বাপি ত্রিগুণা নগরস্য তু॥

গ্রামের চারদিকে চারশত হাত জমি গবাদিচারণাৰ্থ থাকবে অথবা যষ্টিত্রয় পরিমিত ভূমি থাকবে। নগরে এর তিনগুণ স্থান থাকবে।

২৩৮। তএাপবিবৃতং ধান্যং বিহিংস্যুঃ পশবো যদি।

ন তত্র প্রণয়েদ্দণ্ডং নৃপতিঃ পশুরক্ষিণাম্॥

সেখানে প্রাচীরাদি দ্বারা অপরিবেষ্টিত ধান পশুরা নষ্ট করলে তার জন্য রাজা পশুপালকের দণ্ডবিধান করবেন না।

২৩৯। বৃতিং তত্র প্রকুর্বীত যামুট্টোষ্ট্রো ন বিলোকয়েৎ।

ছিদ্রঞ্চ বারয়েৎ সর্বং শ্ব-শূকরমুখানুগম্॥

(গোচারণ ভূমিতে) এমন বেড়া দেওয়া হবে যার উপর দিয়ে উট দেখতে না পায় এবং (এমন ঘন করা হবে) যাতে কুকুর বা শূকর মুখ প্রবেশ করাতে না পারে।

২৪০। পথি ক্ষেত্রে পরিবৃতে গ্রামান্তীয়েহথবা পুনঃ।

সপালঃ শতদণ্ডার্হো বিপালান্‌বারয়েৎ পশূন্॥

পথের কাছে বা গ্রামের কাছে পরিবেষ্টিত গোচারণভূমিতে জাত শস্য পালক রক্ষিত পশু ভক্ষণ করলে ঐ পালক একশত পণ দণ্ডনীয় হবে, পালকরহিত পশুকে (ক্ষেত্রস্বামী) বারণ করবেন।

২৪১। ক্ষেত্রেস্বধন্যেষু তু পশুঃ সপাদং পণমৰ্হতি।

সর্বত্র তু সদো দেয়ঃ ক্ষেত্ৰিকস্যতি ধারণা॥

অনা ক্ষেত্রে পশু (দোষ করলে পালক) ১১/৪পণ দণ্ডনীয় হবে। সর্বক্ষেত্রেই ক্ষেত্রস্বামীকে পশুভক্ষিত ফল পশুপালক বা পশুস্বামী কর্তৃক অপরাধ অনুসারে দেয়—এই ব্যবস্থা।

২৪২। অনির্দশাহাং গাং সুতাং বৃষান দেবপশূংস্তথা।

সপালান্ বা বিপালান্ বা ন দণ্ড্যান্ মনুরব্রবীৎ॥

প্রসবের দশ দিনের মধ্যে গাভী, বৃষ, দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত পশু, সপালক বা অপালক অবস্থায় (শস্যভক্ষণ করলে) দণ্ডনীয় নয়—মনু এই কথা বলেছেন।

২৪৩। ক্ষত্রিয়স্যাত্যয়ে দণ্ডো ভাগাদ্দশগুণো ভবেৎ।

ততোহর্ধদণ্ডে ভূত্যানামজ্ঞানাৎ ক্ষেত্রিকস্য তু॥

ক্ষেত্ৰকৰ্যকের অপরাধে (অর্থাৎ নিজের পশু শস্যভক্ষণ করলে বা অসময়ে বপনাদির ফলে) রাজার প্রাপ্য অংশের যত ক্ষতি হবে তার দশগুণ [কর্ষর্কের] দণ্ড হবে। ক্ষেত্ৰস্বামীর অজ্ঞাতসারে ভৃত্যদের (উক্ত অপরাধে) তার অর্ধেক দণ্ড হবে।

২৪৪। এতদ্বিধানমাতিষ্ঠেদ্ধার্মিকঃ পৃথিবীপতিঃ।

স্বামিনাঞ্চ পশুনাঞ্চ পালনাঞ্চ ব্যতিক্রমে॥

পশুর মালিক, পশু ও পশুপালকের অপরাধে ধার্মিক রাজা এই ব্যবস্থা অবলম্বন করবেন।

২৪৫। সীমাং প্রতি সমুৎপন্নে বিবাদে গ্রাময়োর্দ্ধয়োঃ।

জ্যেষ্ঠে মাসি নয়েৎ সীমাং সুপ্রকাশেষু সেতুষু॥

দুই গ্রামের সীমানা নিয়ে বিবাদ হলে জ্যৈষ্ঠ মাসে (সূর্যকিরণে শুষ্ক তৃণাদিদ্বারা) সীমা নির্ধারণ করবেন।

২৪৬। সীমাবৃক্ষাংশ্চ কুর্বীত ন্যগ্রোধাশ্বখকিংশুকান্।

শাল্মলীসালতালাংশ্চ ক্ষীরিণশ্চৈব পাদপান্॥

নাগ্রোধ (বট), অশ্বথ, কিংশুক (পলাশ), শাল্মলি, শাল, তাল ও ক্ষীরবান্ বৃক্ষসমূহকে সীমানির্দেশক বৃক্ষ করবেন।

২৪৭। ওম্মান্ বেণূংশ্চ বিবিধান্ শমীবল্লীস্থলানি চ।

শরান্ কুব্জকগুল্মংশ্চ তথা সীমা ন নশ্যতি॥

গুল্ম (যে সকল লতার কাণ্ড নেই), নানারকমের বাঁশ, শমী, বল্লী, কৃত্রিম উন্নত ভূমি, শর, কুব্জক প্রভৃতিকে সীমা চিহ্ন করবে; এরূপ সীমা নষ্ট হয় না।

২৪৮। তড়াগান্যুদপাননি বাপ্যঃ প্রস্রবণানি চ।

সীমাসন্ধিসু কার্যাণি দেবতায়তননানি চ॥

সীমাদ্বয়ের সন্ধিস্থলে জলাশয়, কুপ, দীঘি, প্রস্রবণ ও দেবমন্দির স্থাপনীয়।

২৪৯। উপচ্ছন্নানি চান্যানি সীমালিঙ্গানি কারয়েৎ।

সীমাজ্ঞানে নৃণাং বীক্ষ্য নিত্যং লোকে বিপর্যয়ম্॥

সীমানির্ণয়ে সর্বদাই লোকের মধ্যে বিভ্রম লক্ষ্য করে অন্য প্রচ্ছন্ন সীমাচিহ্ন করবেন।

২৫০- তাশ্মানোহস্থীনি গোবালাংস্তুষান্ ভস্মকপালিকাঃ।

২৫১। কবীষমিষ্টকাঙ্গারাঞ্ছর্কবা বালুকাস্তথা॥

যানি চৈবস্প্রকরাণি কালাদ্ভূমির্ন ভক্ষয়ং।

তানি সন্ধিযু সীমায়ামপ্ৰকাশানি কারেৎ॥

পাথর, হাত, গাভর লোম, তুষ, ভস্ম, মাটির ভাঙে টুকরো, শুকনো গোবর, ইট, অঙ্গার, খোয়া ও বালি প্রভৃতি এইরূপ যে সকল বস্তু কালক্রমে ভূমি নষ্ট করে না, সেই দ্রব্য সীমাসন্ধিতে প্রচ্ছন্নভাবে রাখবেন।

২৫২। এতৈর্লৈঙ্গের্নয়েৎ সীমাং রাজা বিবদমানযোঃ।

পূর্বভুক্ত্যা চ সততমুদকস্যাগমেন চ॥

বিবান গ্রামদ্ধয়ের সীমা রাজা এই চিহ্নগুলি দ্বারা এবং অবিচ্ছিন্ন ভোগের দ্বারা ও জলপ্রবাহ দ্বারা নির্ধারণ করবেন।

২৫৩। যদি সংশয় এক সাল্লিঙ্গানামপি দর্শনে।

সাক্ষিপ্রত্যয় এব স্যাৎ সীমাবাদবিনির্ণয়ঃ॥

চিহ্নদর্শনেও বনি সন্দেহ থাকে, তাহলে সাক্ষীদ্বারা সীমা বিবাদে সিদ্ধান্ত করা হবে।

২৫৪। গ্রামীয়ককুলানাঞ্চ সমক্ষং সীম্নি সাক্ষিণঃ।

প্রষ্টব্যাঃ সীমলিঙ্গানি তয়োশ্চৈব বিবাদিনোঃ॥

গ্রামস্থ লোকের ও বাদী বিবাদীর সমক্ষে সীমা বিষয়ক সন্দেহে সাক্ষীদের জিজ্ঞাসা করা হবে।

২৫৫। তে পৃষ্টাস্ত যথা ব্রূয়ুঃ সমস্তাঃ সীম্নি নিশ্চয়ম্।

নিবধীয়াওথা সীমাং সর্বাংস্তাংশ্চৈব নামতঃ॥

জিজ্ঞাসিত হয়ে তারা সীমাবিষয়ে যা স্থির করবে, সেইভাবে সীমা দলিলে লিখতে হবে এবং সেই সকল সাক্ষীর নামও লিখতে হবে।

২৫৬। শিরোভিস্তে গৃহীত্বেবাং স্রগ্নিণো রক্তবাসসঃ।

সুকৃতৈঃ শাপিতাঃ স্বৈঃ স্বৈর্নয়েয়ুস্তে সমঞ্জসম্॥

তারা রক্তবস্ত্র পরে, (রক্তপুষ্প) মালা ধারণ করে মস্তকে মৃত্তিকা খণ্ড রেখে ‘আমাদের অর্জিত পুণ্য যেন নষ্ট হয়’ এইভাবে দিব্য করে ন্যায্যভাবে সীমানির্ণয় করবে।

২৫৭। যথোক্তেন নয়ন্ততস্তে পূয়ন্তে সত্যসাক্ষিণঃ।

বিপরীতং নমস্তস্তু দাপ্যাঃ স্যুর্দিশতং দমম্॥

সত্যবাদী সাক্ষিগণ উক্তপ্রকারে সীমানির্ণয় করে পবিত্র হয় ; বিপরীতভাবে নির্ণয় করলে তাদের দুই শত পণ দণ্ড হবে।

২৫৮। সাক্ষ্যভাবে তু চত্বরো গ্রামাঃ সামন্তবাসিনঃ।

সীমাবিনির্ণয়ং কুর্যুঃ প্ৰয়তা রাজসন্নিধৌ॥

সাক্ষীর অভাবে প্রতিবেশী চার গ্রামের লোক রাজার সমক্ষে অবহিত হয়ে সীমানির্ণয় করবে।

২৫৯। সামস্তানামভাবে তু মৌলানাং সীম্নি সাক্ষিণাম।

ইমানপ্যনুযুঞ্জীত পুরুষান্ বনগোচরান্॥

উক্ত প্রতিবেশী গ্রামস্থ সাক্ষীদের অভাবে যারা গ্রামের সৃষ্টি থেকে পুরুষানুক্রমে সেই গ্রামে বাস করছে তাদের দ্বারা সীমানির্ণয় করবেন, তদভাবে এই (বক্ষ্যমাণ) বনচর লোকদের জিজ্ঞাসা করবেন।

২৬০। ব্যাধাঞ্ছাকুনিকন গোপান্ কৈবর্তান্মূলখানকান্।

ব্যালগ্ৰাহানুঞ্ছবৃত্তীনন্যাংশ্চ বনচারিণঃ॥

ব্যাধ, পক্ষিলধজীবী, গোপালক, মৎস্যজীবী, ওষধিমূলোৎপাটনজীবী, সাপুড়ে ও উঞ্ছবৃত্তিজীবী অন্য বনচরদের জিজ্ঞাসা করবেন।

২৬১। তে পৃষ্টস্ত যথা ব্রূয়ুঃ সীমাসন্ধিষু লক্ষণম্।

তৎ তথা স্থাপযেদ্রাজা ধর্মেণ গ্রামর্যোদ্বয়োঃ॥

জিজ্ঞাসিত হয়ে তারা সীমাসন্ধিতে চিহ্নসম্বন্ধে যেমন বলবে, তেমন চিহ্ন রাজা গ্রামদ্বয়ের মাধো স্থাপন করবেন।

২৬২। ক্ষেত্র-কূপ-তড়াগনামারামস্য গৃহস্য চ।

সামন্তপ্রত্যয়ো জ্ঞেয়ঃ সীমা-সেতুবিনির্ণয়ঃ॥

ক্ষেত্র, কূপ, জলাশয়, উদ্যান ও গৃহের সীমানির্ণয় প্রতিবেশী গ্রামের লোকের সাক্ষ্যদ্বারা করণীয় (ব্যাধাদিদ্বারা নয়)।

২৬৩। নামাশ্চেন্মৃযা ব্রুয়ুঃ সেতৌ বিবদতাং নৃণাম্।

সর্বে পৃথক পৃথাগদণ্ড্যা রাজ্ঞা মধ্যমসহসম্॥

সীমা বিষয়ে বিবদমান লোকের কাছে প্রতিবেশী গ্রামবাসী মিথ্যা কথা বললে তারা সকলে পৃথকভাবে রাজা কর্তৃক মধ্যমসাহস দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

২৬৪। গৃহং তড়াগমারামং ক্ষেত্রং বা ভীষয়া হরন্।

শতানি পঞ্চদণ্ড্যঃ স্যাদজ্ঞানাদ্দিৃশিতো দমঃ॥

গৃহ, জলাশয়, উদ্যান বা ক্ষেত্র ভয় দেখিয়ে হরণ করলে পাঁচ শত পণ দণ্ডনীয় হবে ; অজ্ঞাতসারে (হরণ করলে) দণ্ড দুই শত পণ।

২৬৫। সীমায়ামবিষহ্যায়াং স্বয়ং রাজৈব ধর্মবিৎ।

প্রদিশেদ্ভূমিমেতেষামুপকারাদিতি স্থিতিঃ॥

(চিহ্ন সাক্ষী প্রভৃতির অভাবে) সীমানির্ণয় সম্ভবপর না হলে ধর্মজ্ঞ রাজা নিজের গ্রামদ্বয় মধ্যবর্তী বিবাদের বিষয়ীভূত ভূমি যে গ্রামবাসীদের অধিক উপকার হবে তাদের দিবেন।

২৬৬। এষোহখিলেনাভিহিতো ধর্মঃ সীমাবিনির্ণয়ে।

অত ঊৰ্ব্বং প্রবক্ষ্যামি বাক্‌পারুষ্যবিনির্ণয়ম্॥

সীমানির্ণয়ে এই সমগ্র ব্যবস্থা বলা হল। এরপর বাক্‌পারুষ্য সম্বন্ধে ব্যবস্থা বলব।

২৬৭। শতং ব্রাহ্মণমাএুশ্য ক্ষত্রিয়ো দণ্ডমর্তুতি।

বৈশ্যোহপ্যর্ধশতং দ্বে বা শূদ্রস্ত বধমর্হতি॥

ব্রাহ্মণকে (চোর বলে) গাল দিলে ক্ষত্রিয় দণ্ডনীয় হয়, বৈশ্য (এরূপ ক্ষেত্রে) দেড়শত বা দুইশত পণ (দণ্ডনীয় হবে), শূদ্র কিন্তু বধ্য হবে।

২৬৮। পঞ্চাশদ্‌ব্রাহ্মণো দণ্ড্যঃ ক্ষত্রিয়স্যাভিশংসনে।

বৈশ্যে স্যাদর্ধপঞ্চাশচ্ছুদ্রে দ্বাদশকো দমঃ॥

ক্ষত্রিয়কে গাল দিলে ব্রাহ্মণের দণ্ড পঞ্চাশ পণ, বৈশ্যের ক্ষেত্রে পঁচিশ ও শূদ্রের বার।

২৬৯। সমবর্ণে দ্বিজাতীনাং দ্বাদশৈব ব্যতিক্রমে।

বাদেস্ববচনীয়েষু তদেব দ্বিগুণং ভবেৎ॥

দ্বিজগণের সমানবর্ণের লোককে গাল দিলে বার পণ, (মা বোন তুলে) অবাচ্য বাক্য বললে তার দ্বিগুণ দণ্ড হবে।

২৭০। একজাতিদ্বিজাতীংস্ত বাচা দারুণয়া ক্ষিপন্।

জিহ্বায়াঃ প্রাপ্নুযাচ্ছেদং জঘন্যপ্ৰভবো হি সঃ॥

শূদ দ্বিজগণকে (পাপভিযোগসূচক) কর্কশ বাক্য দ্বারা গাল দিলে তার জিহ্বচ্ছেদন হবে ; কারণ (ব্রহ্মর পদরূপ) জঘন্য স্থান থেকে তার জন্ম।

২৭১। নামজাতিগ্ৰহন্তেষামভিদ্রোহেণ কুর্বতঃ।

নিক্ষেপ্যোহয়োময়ঃ শঙ্কুর্জ্বলন্নাস্যে দশাঙ্গুলঃ॥

(শূদ্র) দ্বিজগণের নাম জাতি উল্লেখ করে গাল দিলে তার মুখে জ্বলন্ত দশাঙ্গুল প্রমাণ লৌহশঙ্কু নিক্ষেপ্য।

২৭২। ধর্মোপদেশং দর্পেণ বিপ্রাণামস্য কুর্বতঃ।

তপ্তমাসেচয়েড় তৈলং বক্‌ত্রে শ্রোত্রে চ পার্থিবঃ॥

(শূদ্র) দর্পভরে ব্রাহ্মণকে ধর্মোপদেশ দিলে রাজা তার মুখে ও কানে উত্তপ্ত তৈল সিঞ্চন করাবেন।

২৭৩। শ্রুতং দেশঞ্চ জাতিঞ্চ কর্ম শারীরমেব চ।

বিতথেন ব্রুবন্ দর্পাদ্দাপ্য স্যাদ্দিশতং দমম্॥

দর্পহেতু কেউ আপরের শোনা কথা, দেশ, জাতি ও শারীরিক ক্রিয়া১৬ সম্বন্ধে মিথ্যা কথা বললে তাকে দুইশত পণ দণ্ড দেওয়াতে হবে।

২৭৪। কাণং বাপ্যথবা খঞ্জমন্যং বাপি তথাবিধম্।

তথ্যেনাপি ব্রুবন্ দাপ্যো দণ্ডং কার্যাপণাবরম্॥

কাণা, খোঁড়া বা ঐরূপ অন্য ব্যক্তিকে সত্যরূপেও কাণা খোঁড়া বললে এক কার্যাপণ দণ্ড দেয়।

২৭৫। মাতরং পিতরং জায়াং ভ্রাতরং তনয়। গুরুম্।

আক্ষারয়ঞ্ছতং দাপ্যঃ পন্থানঞ্চাদদ্‌গুরোঃ॥

মাতা, পিতা, স্ত্রী, ভ্রাতা, পুত্র ও গুরুকে (পাপাদি দ্বাৰা) অভিশাপ১৭ দিলে এবং গুরুকে পথ ছেড়ে না দিলে একশত পণ দণ্ড দেয়।

২৭৬। ব্রাহ্মণক্ষত্রিযাভ্যান্তু দণ্ডঃ কার্যো বিজানতা।

ব্রাহ্মণে সাহসঃ পূর্ব ক্ষত্রিয়ে ত্বেব মধ্যমঃ॥

ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় (পৰম্পর পাতিত্যজনক গাল দিলে) বিজ্ঞ রাজা তাদের এই দণ্ড দিবেন—ব্রাহ্মণকে প্রথম সাহস ও ক্ষত্রিয়ের মধ্যম সাহস।

২৭৭। বিট্‌শূদ্ৰয়োরেবমেব স্বজাতিং প্রতি তত্ত্বতঃ।

ছেদবর্জং প্রণয়নং দণ্ডাস্যেতি বিনিশ্চয়ঃ॥

বৈশ্য শূদ্র স্বজাতিকে গাল দিলে (পূর্বোক্ত জিহ্বচ্ছেদ ছাড়া) এইরূপই দণ্ড প্রণয়ন হবে—এই সিদ্ধান্ত।

২৭৮। এষ দণ্ডবিধিঃ প্রোক্তো বাক্‌পারুষ্যস্য তত্ত্বতঃ।

অত উর্ধ্বং প্রবক্ষ্যানি দণ্ডপারুষ্যনির্ণয়ম্॥

বাক্‌পারুষ্য সম্বন্ধে এই প্রকৃত দণ্ডবিধি উক্ত হল। এরপরে দণ্ডপারুষ্য নির্ণয় বলব।

২৭৯। যেন কেনচিদঙ্গেন হিংস্যাম্ফেচ্চেচ্ছ্রেষ্ঠমন্ত্যজঃ।

ছেত্তব্যং তত্তদেবাস্য তন্মনোরনুশাসনম্॥

শূদ্র যে কোন অঙ্গ দ্বারা উচ্চ জাতিকে প্রহার করলে তার সেই অঙ্গ ছেদনীয়—মনূর এই অনুশাসন।

২৮০। পাণিমুদ্যম্য দণ্ডং বা পাণিচ্ছেদনমর্হতি।

পাদেন প্রহরন্‌ কোপাৎ পাদচ্ছেদনমর্হতি॥

(প্রহারের জন্য) হাত বা লাঠি উঠালে তার হস্তচ্ছেদন হওয়া উচিত। ক্রোধবশে পা দিয়ে প্রহার করলে পদচ্ছেদন হওয়া উচিত।

২৮১। সহাসনমভিপ্রেপ্সুরুৎকৃষ্টস্যাপকৃষ্টজঃ।

কট্যাং কৃতাঙ্কো নির্বাস্যঃ স্ফিচং বাস্যাবকর্তয়েৎ॥

(শূদ্র) ব্রাহ্মণের সঙ্গে একাসনে বসতে চাইলে তার কটিদেশে (তপ্ত লৌহ শলাকা দ্বারা) চিহ্নাঙ্কনপূর্বক তার নির্বাসন হওয়া উচিত অথবা (যেন মৃত্যু না হয় এমন ভাবে তার) পশ্চাদ্দেশ কাটা হবে।

২৮২। অবনিষ্ঠীবতো দর্পাদ্দ্বাবোষ্ঠৌ চ্ছেদয়েন্নৃপঃ।

অবমূত্ৰয়তো মেঢ্রমবশর্ধয়তো গুদম্॥

দর্পভরে (শূদ্র) ব্রাহ্মণের গায়ে শ্লেষ্মা দিলে রাজা তার ওষ্ঠদ্বয় ছেদন করাবেন, মূত্র নিক্ষেপ করলে লিঙ্গ চ্ছেদন, অধোবায়ু ত্যাগ করলে গুহ্যদেশ ছেদন করাবেন।

২৮৩। কেশেষু গৃহ্নতো হস্তৌ চ্ছেদয়েদবিচারয়ন্‌।

পাদয়োর্দাঢ়িকায়াঞ্চ গ্রীবায়াং বৃষণেষু চ॥

হিংসাবশে (শূদ্র) ব্রাহ্মণের চুলে, চিবুকে, পায়ে, দাড়িতে, ঘাড়ে বা অণ্ডকোষে হাত দিলে নির্বিচারে তার হাত দুইটি কাটিয়ে দিবেন।

২৮৪। ত্বগ্‌ভেদকঃ শতং দণ্ড্যো লোহিতস্য চ দর্শকঃ।

মাংসভেত্তা তু ষণ্ণিষ্কান্‌ প্রবাস্যস্ত্বস্থিভেদকঃ॥

(সমান জাতীয় লোকের) চর্ম ভেদ করলে বা রক্তপাত করলে এক শত পণ দণ্ডনীয় হয়। যে মাংসভেদ করে সে ছয় নিষ্ক দণ্ডনীয় হবে, অস্থিভেদক নির্বাসনীয় হবে।

২৮৫। বনস্পতীনাং সর্বেষামুপভোগো যথা যথা।

তথা তথা দমঃ কার্যো হিংসায়ামিতি ধারণা॥

সকল বনস্পতির যখন যেমন উপভোগ হয় তেমন তেমন হিংসার ক্ষেত্রে (উত্তম সাহসাদি) দণ্ড করণীয়—এই ব্যবস্থা।

২৮৬। মনুষ্যাণাং পশুনাঞ্চ দুঃখায় প্রহৃতে সতি।

যথা যথা মহদ্দুঃখং দণ্ডং কুর্যাৎ তথা তথা॥

মানুষ বা পশুকে কষ্ট দেওয়ার জন্য প্রহার করলে তাদের কষ্টের আধিক্য অনুসারে দণ্ড করণীয়।

২৮৭। অঙ্গাবপীড়নায়াঞ্চ ব্রণশোণিতয়োস্তথা।

সমুত্থানবায়ং দাপ্যঃ সর্বদণ্ডমথাপি বা॥

অঙ্গভেদ, ক্ষত বা রক্তপাত করলে আহত ব্যক্তির সুস্থ হওয়ার জন্য (ওষুধ পথ্যাদির) ব্যয় (না দিলে) সেই খরচ এবং দণ্ড দেয়।

২৮৮। দ্রব্যাণি হিংস্যাদ্‌ যো যস্য জ্ঞানতোহজ্ঞানতোহপি বা।

স তস্যোৎপাদয়েত্তুষ্টিং রাজ্ঞো দদ্যাচ্চ তৎসমম্॥

যে যার দ্রব্য জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে নষ্ট করে, সে (দ্রব্যান্তরদানে) তাকে সন্তুষ্ট করবে এবং রাজাকে ঐ দ্রব্যের সমান (দণ্ড) দিবে।

২৮৯। চর্ম-চার্মিকভাণ্ডেষু কাষ্ঠ-লোষ্টময়েষু চ।

মূল্যাৎ পঞ্চগুণো দণ্ডঃ পুষ্প-মূল-ফলেষু চ॥

চর্ম, চর্মপাত্র, কাষ্ঠ, মৃন্ময় ভাণ্ড, পুষ্প, মূল ও ফল (নষ্ট করলে) দ্রব্যমূল্যের পাঁচগুণ দণ্ড হবে।

২৯০। যানস্য চৈব যাতুশ্চ যানস্বামিন এব চ।

দশাতিবর্তনান্যাহুঃ শেষে দণ্ডো বিধীয়তে॥

যান, তার সারথি ও যানস্বামীর ছিন্ননাস্যাদি দশটি ব্যাপার ছাড়া অন্য অপরাধে দণ্ড বিহিত।

২৯১- ছিন্ননাস্যে ভগ্নযুগে তির্যক্‌প্রতিমুখাগতে।

২৯২। অক্ষভঙ্গে চ যানস্য চক্রভাঙ্গে তথৈব চ॥

ছেদনে চৈব যন্ত্রাণাং যোক্‌ত্ররশ্ম্যোস্তথৈব চ।

আক্রন্দে চাপ্যপেহীতি ন দণ্ডং মনুরব্রবীৎ॥

(চালকের অনবধানতা ব্যতিরেকে) বৃষাদির নাসালগ্ন রজ্জু ছিন্ন হলে, রথাদির যুগকাষ্ঠ ও (ভূমির উচ্চনীচতাহেতু) বক্রগমনে চক্ৰমধ্যস্থ কাষ্ঠ ও চক্র ভগ্ন হলে রথাদিযানের চর্মবন্ধন, পশুর মুখবন্ধনরজ্জু ও বল্গা (লাগাম) ছিন্ন হলে সরে যাও বলে সারথির চীৎকার সত্ত্বেও (যানদ্বারা কারও মরণাদি হলে) দণ্ড হবে না বলে মনু বলেছেন।

২৯৩। যত্রাপবর্ততে যুগ্যং বৈগুণ্যাৎ প্রাজকস্য তু।

তত্র স্বামী ভবেদ্দণ্ড্যো হিংসায়াং দ্বিশতং দমম্॥

যেখানে সারথির দোষে যান বিপথে চলে সেখানে যানস্বামী দণ্ডনীয় হবে, প্রাণিবধ হলে দুই শত পণ দণ্ড হয়।

২৯৪। প্রাজকশ্চেদ্ভবেদাপ্তঃ প্রাজকো দণ্ডমৰ্হতি।

যুগ্যস্থাঃ প্রাজকেহনাপ্তে সর্বে দণ্ড্যাঃ শতং শতম্॥

চালক কুশলী হলে সে-ই দণ্ডনীয় হবে, সে অকুশলী হলে (যানস্বামী ব্যতিরেকেও) যানারূঢ় ব্যক্তিগণের প্রত্যেকেই একশত পণ করে দণ্ডনীয় হবে।

২৯৫। স চেত্তু পথি সংরুদ্ধঃ পশুভির্বা রথেন বা।

প্রমাপয়েৎ প্রাণভৃতস্তত্র দণ্ডোহবিচারিতঃ॥

চালক যদি পথে পশু বা রথের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে (রথাদি চালায় এবং তাতে) প্রাণিবধ করে তাহলে নির্বিচারে সে দণ্ডনীয় হবে।

২৯৬। মনুষ্যমারণে ক্ষিপ্রং চৌরবৎ কিল্বিষং ভবেৎ।

প্রাণভৃৎসু মহৎস্বর্ধং গোগজোষ্ট্রহয়াদিষু॥

মানুষ মারলে শীঘ্র চোরের ন্যায় দণ্ড হয়, গো, গজ, উষ্ট্র, অশ্বাদি বৃহৎ প্রাণিবধে অর্ধেক দণ্ড বিধেয়।

২৯৭। ক্ষুদ্রকাণাং পশূনান্তু হিংসায়াঃ দ্বিশতো দমঃ।

পঞ্চাশত্তূ ভবেদ্দণ্ডঃ শুভেষু মৃগপক্ষিষু॥

ক্ষুদ্রপশুবধে দুইশত পণ দণ্ড, (আকৃতি ও লক্ষণে) শুভ (রুরু প্রভৃতি) পশু এবং (শুক

হংসাদি) পক্ষীর বধে পঞ্চাশ পণ দণ্ড হবে।

২৯৮। গর্দভাজাবিকানান্তু দণ্ডঃ স্যাৎ পঞ্চমাষিকঃ।

মাষিকস্তু ভবেদ্দণ্ডঃ শ্ব-শূকরনিপাতনে॥

গর্দভ, অজ ও মেষ বধে দণ্ড হয় পাঁচ মাষা। কুকুর ও শূকরবধে এক মাষা দণ্ড।

২৯৯। ভার্যা পুত্ৰশ্চ দাসশ্চ প্রেষ্যো ভ্রাতা চ সোদরঃ।

প্রাপ্তাপরাধাস্তাড্যাঃ স্যূ রজ্জ্বা বেণুদলেন বা॥

স্ত্রী, পুত্র, দাস, শিষ্য, সহোদর ভ্রাতা অপরাধ করলে রজ্জু বা বংশখণ্ড দ্বারা তাদের আঘাত করতে হবে।

৩০০। পৃষ্ঠতস্তু শরীরস্য নোত্তমাঙ্গে কথঞ্চন।

অতোহন্যথা তু প্রহরন্‌ প্রাপ্তঃ স্যাচ্চৌরকিল্বিষম্॥

শরীরের পেছনে আঘাত করতে হয়, মাথায় কখনও নয়। এ ছাড়া অন্য প্রকারে প্রহার করলে চোর দণ্ড হয়।

৩০১। এষোহখিলেনাভিহিতো দণ্ডপারুষ্যনির্ণয়ঃ।

স্তেনস্যাতঃ প্রবক্ষ্যামি বিধিং দণ্ডবিনির্ণয়ে॥

দণ্ডপারুষ্য সম্বন্ধে এই ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বলা হল। তারপর চোরের দণ্ডবিধি বলব।

৩০২। পরমং যত্নমাতিষ্ঠেৎ স্তেনানাং নিগ্রহে নৃপঃ।

স্তেনানাং নিগ্রহাদস্য যশো রাষ্ট্রঞ্চ বর্ধতে॥

চোরদের শাস্তিবিধানে রাজা অতি যত্ন অবলম্বন করবেন। চোরের শাস্তি হেতু তাঁর যশবৃদ্ধি ও রাজ্যের উন্নতি হয়।

৩০৩। অভয়স্য হি যো দাতা স পূজ্যঃ সততং নৃপঃ।

সত্রং হি বর্ধতে তস্য সদৈবাভয়দক্ষিণম্॥

অভয়দাতা রাজা সর্বদা পূজনীয়। তাঁর অভয়রূপ দক্ষিণাযুক্ত যজ্ঞ সর্বদা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়।

৩০৪। সর্বতো ধর্মষড্‌ভাগো রাজ্ঞো ভবতি রক্ষতঃ।

অধর্মাদপি ষড্‌ভাগো ভবত্যস্য হ্যরক্ষতঃ॥

যে রাজা রক্ষা করেন, তিনি সকল স্থান থেকে ধর্মের ষষ্ঠভাগ পান। যিনি রক্ষা করেন না তিনি অধর্মেরও ষষ্ঠ ভাগ পান।

৩০৫। যদধীতে যদ্‌যজতে যদ্দদাতি যদর্চতি।

তস্য ষড্‌ভাগভাগ্ৰাজা সম্যগ্‌ভবতি রক্ষণাৎ॥

উপযুক্তরূপে রক্ষা হেতু প্রজাগণ যা অধ্যয়ন করে, যে যজ্ঞ করে, যা দান করে, যে পূজা করে রাজা তার ষষ্ঠভাগভাগী হন।

৩০৬। রক্ষন্ ধর্মেণ ভূতানি রাজা বধ্যাংশ্চ ঘাতয়ন্।

যজতেহহরহর্যজ্ঞৈঃ সহস্ৰশতদক্ষিণৈঃ॥

জীবগণকে ধর্মসহকারে রক্ষা করে এবং বধ্য লোকদের হত্যা করে (রাজা) প্রত্যহ লক্ষ গোদক্ষিণাসহ যজ্ঞ করেন (অর্থাৎ যজ্ঞের ফল ভোগ করেন)।

৩০৭। যোহরক্ষন্ বলিমাদত্তে করং শুল্কঞ্চ পার্থিবঃ।

প্রতিভাগঞ্চ দণ্ডঞ্চ স সদ্যো নরকং ব্ৰজেৎ॥

যে রাজা রক্ষা না করে (শস্যাদির) ষড্‌ভাগাদি বলি, রাজস্ব, শুল্ক, (শাকাদি) উপঢৌকন ও দণ্ড গ্রহণ করেন, তিনি সদ্য নরক গমন করেন।

৩০৮। অরক্ষিতারং রাজানং বলিষড্‌ভাগহারিণম্।

তমাহুঃ সর্বলোকস্য সমগ্রমলহারকম্‌॥

যে রাজা রক্ষা করেন না (অথচ) (শস্যাদির) যষ্ঠ ভাগ গ্রহণ করেন, তাঁকে সকল লোকের সকল পাপহারী বলা হয়।

৩০৯। অনপেক্ষিতমর্যাদং নাস্তিকং বিপ্রলুম্পকম্।

অরক্ষিতারমত্তারং নৃপং বিদ্যাদধোগতিম্॥

অরক্ষক রাজা, যে রাজা শাস্ত্রীয় নিয়ম মানেন না, নাস্তিক, (অনুচিত দণ্ডাদি দ্বারা) পরধনাপহারক (অথচ) রাজস্ব ভোগ করেন তাঁকে নরকগামী বলে জানবে।

৩১০। অধার্মিকং ত্রিভির্ন্যায়ৈর্নিগৃহ্নীয়াৎ প্রযত্নতঃ।

নিরোধনেন বন্ধেন বিবিধেন বধেন চ॥

অধার্মিক ব্যক্তিকে তিনটি উপায়ে যত্ন সহকারে শাস্তি দিতে হবে—নিরোধ (আটক রাখা), বন্ধন ও বিবিধ বধ (নানা প্রকার তাড়ন)।

৩১১। নিগ্রহেণ হি পাপানাং সাধূনাং সংগ্রহেণ চ।

দ্বিজাতয় ইবেজ্যাভিঃ পূয়ন্তে সততং নৃপাঃ॥

দ্বিজ যেমন যজ্ঞের দ্বারা পবিত্র হন, তেমন পাপীদের শাস্তি ও সজ্জনদের রক্ষা দ্বারা রাজা সর্বদা পবিত্র হন।

৩১২। ক্ষন্তব্যং প্রভুণা নিত্যং ক্ষিপতাং কার্যিণাং নৃণাম্‌।

বালবৃদ্ধাতুরাণাঞ্চ কুর্বতা হিতমাত্মনঃ॥

বাদী বিবাদীরা (দুঃখবশতঃ) আক্ষেপ করলে তাদের এবং বালক, বৃদ্ধ ও রোগাৰ্তকে নিজের হিতকারী রাজা সর্বদা ক্ষমা করবেন।

৩১৩। যঃ ক্ষিপ্তো মর্ষয়ত্যার্তৈস্তেন স্বর্গে মহীয়তে।

যস্ত্বৈশ্বর্যান্ন ক্ষমতে নরকং তেন গচ্ছতি॥

যে রাজা দুঃখিত ব্যক্তি কর্তৃক আক্ষিপ্ত হয়ে ক্ষমা করেন, তিনি সেই পুণ্যে স্বর্গে পূজিত হন। যিনি ঐশ্বর্য হেতু ক্ষমা না করেন, তিনি সেই দোষে নরকে গমন করেন।

৩১৪- রাজা স্তেনেন গন্তব্যো মুক্তকেশেন ধাবতা।

৩১৫। আচক্ষাণেন তৎ স্তেয়মেবংকর্মাস্মি শাধি মাম্‌॥

স্কন্ধেনাদায় মূসলং লগুড়ং বাপি খাদিরম্‌।

শক্তিঞ্চোভয়তস্ত্রীক্ষ্ণামায়সং দণ্ডমেব বা॥

(ব্রাহ্মণের স্বর্ণের) অপহারক আলুলায়িত কেশে সেই চৌর্য ঘোষণা করে আমি এই কাজ করেছি, আমায় শাস্তি দিন এই বলে কাঁধে মুষল, খদির কাঠের লগুড়, উভয় দিকে ধারাল শক্তি নামক অস্ত্র বা লৌহদণ্ড নিয়ে রাজার কাছে ধাবিত হবে।

৩১৬। শাসনাদ্বা বিমোক্ষাদ্বা স্তেনঃ স্তেয়াদ্বিমুচ্যতে।

অশাসিত্বা তু তং রাজা স্তেনস্যাপ্নোতি কিল্বিষম্॥

(মুষলাদিদ্বারা) শাসন হেতু (মৃত হলে) অথবা (মৃতকল্প চোর জীবিত থাকলেও তাকে) ছেড়ে দিলে সে চৌর্য (অর্থাৎ তজ্জনিত দোষ) থেকে মুক্ত হয়। তাকে শাসন না করে রাজা চোরের পাপভাগী হন।

৩১৭। অন্নাদে ভ্রূণহা মাষ্টি পত্যৌ ভার্যাপচারিণী।

গুরৌ শিষ্যশ্চ যাজ্যশ্চ স্তেনো রাজনি কিল্বিষম্॥

যে ব্রহ্মহত্যাকারীর অন্ন ভক্ষণ করে, তাতে ঐ পাপ সংক্রামিত হয়, ব্যভিচারিণী স্ত্রীর পাপ ক্ষমাকারী পতিতে সংক্রামিত হয়, (কর্তব্যভ্রষ্ট) শিষ্যের পাপ ক্ষমাকারী গুরুতে, যে যজমান নিয়মপালন করে না তার পাপ ক্ষমাকারী যাজকে, (ব্রাহ্মণস্বর্ণের) অপহারকের শাস্তি না দিলে তার পাপ রাজাতে সংক্রামিত হয়।

৩১৮। রাজভিঃ কৃতদণ্ডাস্তু কৃত্বা পাপানি মানবাঃ।

নির্মলাঃ স্বর্গমায়ান্তি সন্তঃ সুকৃতিনো যথা॥

রাজা কতৃক দণ্ডিত পাপাচারী নিষ্পাপ হয়ে পুণ্যবান্ সজ্জনের ন্যায় স্বর্গে গমন করে।

৩১৯। যস্ত রজ্জুং ঘটং কূপাদ্ধরেদ্ভিন্দ্যাচ্চ যঃ প্রপাম্।

স দণ্ডং প্রাপ্নুয়ান্মাষং তঞ্চ তস্মিন্ সমাহরেৎ॥

যে কূপ থেকে রজ্জু বা ঘট হরণ করে বা প্রপা (জলদানের ঘর) ভেঙ্গে দেয়, সে এক মাষা দণ্ড প্রাপ্ত হবে এবং ঐ রজ্জু বা ঘট সেই কূপে রাখবে।

৩২০। ধানাং দশভ্যঃ কুম্ভেভ্যো হরতোহভ্যধিকং বধঃ।

শেষেহপ্যেকাদশগুণং দাপ্যস্তস্য চ তদ্ধনম্‌॥

দশকুম্ভের১৮ অধিক পরিমিত ধান যে হরণ করে, তার বধদণ্ড হয়। শেষে (অর্থাৎ এক থেকে দশ কুম্ভ পর্যন্ত পরিমিত ধান হরণ করলে) এগার গুণ দণ্ড এবং ঐ (অপহৃত) ধান মালিককে দেয়।

৩২১। তথা ধরিমমেয়ানাং শতাদভ্যধিকে বধঃ।

সুবৰ্ণরজতাদীনামুত্তমানাঞ্চ বাসসাম্॥

তুলাদণ্ডে মাপা যায় এমন সোনা রূপাদি ও উৎকৃষ্ট পট্টবস্ত্রাদির এক শত পলের অধিক পরিমাণ অপহরণ করলে বধদণ্ড হবে।

৩২২। পঞ্চাশতস্ত্বভ্যধিকে হস্তচ্ছেদনমিষ্যতে।

শেষে ত্বেকাদশগুণং মূল্যাাদ্দণ্ডং প্রকল্পয়েৎ॥

পঞ্চাশের বেশী (শত পর্যন্ত উক্ত দ্রব্য অপহরণে) হস্তচ্ছেদন দণ্ড অভিপ্রেত। অবশিষ্ট ক্ষেত্রে একপল থেকে পঞ্চাশ পল পর্যন্ত অপহরণে দ্রব্যমূল্যের একাদশ গুণ দণ্ডের ব্যবস্থা করবেন।

৩২৩। পুরুষাণাং কুলীনানাং নারীণাঞ্চ বিশেষতঃ।

মুখ্যানাঞ্চৈব রত্নানাং হরণে বধমর্হতি॥

উচ্চকুলজাত পুরুষ, বিশেষত নারী ও শ্রেষ্ঠ রত্নের অপহরণে (অপরাধী) বধের যোগ্য।

৩২৪। মহাপশূনাং হরণে শস্ত্রাণামৌষধস্য চ।

কালমাসাদ্য কার্যঞ্চ দণ্ডং রাজাা প্রকল্পয়েৎ॥

বৃহৎ পশু, অস্ত্র, ওষুধ চুরি করলে (দুর্ভিক্ষাদি) কাল ও (সদসৎ বিনিয়োগে রূপ) কার্য নিরূপণ করে রাজা (তাড়ন, অঙ্গচ্ছেদ বা বধ রূপ) দণ্ড বিধান করবেন।

৩২৫। গোষু ব্রাহ্মণসংস্থাসু ছূরিকায়াশ্চ ভেদনে।

পশূনাং হরণে চৈব সদ্যঃ কার্যোহর্ধপাদিকঃ॥

ব্রাহ্মণের গাভী (অপহরণে), বাহনার্থে বন্ধ্যা গরুর নাসাচ্ছেদনে এবং (যাগাদির উদ্দেশ্যে রক্ষিত অজ, মেষ প্রভৃতি) পশুর অপহরণে সঙ্গে সঙ্গে অর্ধ পদচ্ছেদন বিধেয়।

৩২৬- সূত্রকার্পাসকিণ্বানাং গোময়স্য গুড়স্য চ।

৩২৯। দধ্নঃ ক্ষীরসা তক্রসা পানীয়সা তৃণস্য চ॥

বেণুবৈদলভাণ্ডানাং লবণানাং তথৈব চ।

মৃন্ময়ানাঞ্চ হরণে মৃদো ভস্মন এব চ॥

মৎস্যানাং পক্ষিণাঞ্চৈব তৈলস্য চ ঘৃতস্য চ।

মাংসস্য মধুনশ্চৈব যচ্চান্যৎ পশুসম্ভবম্‌॥

অন্যেষাঞ্চৈবমাদীনাং মদ্যানামোদনসা চ।

পক্বান্নানাঞ্চ সর্বেষাং তন্মূল্যাদ্দ্বিগুণো দমঃ॥

(উর্ণাদি)সূত্র, কার্পাসসূত্র, সুরাবীজদ্রব্য, গোময়, গুড়, দধি, ক্ষীর, ঘোল, (অন্য পানীয় দ্রব্য), তৃণ, সূক্ষ্ম বংশখণ্ডনির্মিত জলাহরণ ভাণ্ড, লবণ, মৃন্ময় ভাণ্ড, মৃম্ভস্ম, মৎস্য, পক্ষী, তৈল, ঘৃত, মাংস, মধু, অন্য (মৃগচর্ম, খড়্গ, শৃঙ্গাদি) পশুজাতদ্রব্য, এইরূপ অন্য (অসার প্রায় মনঃশিলাদির), মদ, অন্ন, সকল পক্বান্ন (দ্রব্যের অপহরণে) তাদের মূল্যের দ্বিগুণ দণ্ড দেয়।

৩৩০। পুস্পেষু হরিতে ধানো গুল্ম-বল্লী-নগেষু চ।

অন্যেষপরিপূতেযু দণ্ডঃ স্যাৎ পঞ্চকৃষ্ণলঃ॥

পুষ্প, ক্ষেত্ৰস্থ ধান্য, গুল্ম, বল্লী, বৃক্ষ এবং অন্য যে শস্যের তৃণাদি ছাড়ান হয়নি (তাদের অপহুরণে) পাঁচ কৃষ্ণল দণ্ড হবে।

৩৩১। পরিপূতেষু ধান্যেষু শাাক-মূল-ফলেষু চ।

নিরন্বয়ে শতং দণ্ডঃ সান্বইয়েহর্ধশতং দমঃ॥

যে ধান্যের তৃণ প্রভৃতি অপসারিত হয়েছে তা, শাক, মূল ও ফলের (অপহরণে) অপহারক শস্যস্বামীর সঙ্গে এক গ্রামবাসাদি সম্বন্ধশূন্য হলে একশত পণ দণ্ড হবে, অপহরক সম্বন্ধযুক্ত হলে অর্ধশত দণ্ড হবে।

৩৩২। স্যাৎ সাহসং ত্বন্বয়বৎ প্রসভং কর্ম যৎ কৃতম্।

নিরন্বয়ং ভবেৎ স্তেয়ং হৃত্বাপহ্নৃয়তে চ যৎ॥

(ধান্যাদি দ্রব্যের) স্বামিসমক্ষে বলপূর্বক হরণ করাকে সাহস বলে। অসমক্ষে হলে হয় স্তেয়। হরণ করে অস্বীকার করলেও (চৌর্য হয়)।

৩৩৩। যস্ত্বেতান্যূপক্‌প্তানি দ্রব্যাণি স্তেনয়েন্নরঃ।

তমাদ্যং দণ্ডয়েদ্ৰাজ্য যশ্চাগ্নিং চোরয়েদ্‌গৃহাৎ॥

স্বামী কর্তৃক ভোগার্থে পরিষ্কৃত এই সকল দ্রব্য যে চুরি করে এবং (সাগ্নিকের) গৃহ থেকে যে (সংস্কৃত) অগ্নি চুরি করে, তাকে রাজা প্রথম সাহস দণ্ড দিবেন।

৩৩৪। যেন যেন যথাঙ্গেন স্তেনো নৃযু বিচেষ্টতে।

তত্তদেব হবেৎ তস্য প্রত্যাদেশায় পার্থিবঃ॥

যে যে অঙ্গদ্বারা চোর পরধন অপহরণের চেষ্টা করে, রাজা তার সেই সেই অঙ্গছেদন করবেন, যেন সে এই কার্যের পুনরাবৃত্তি না করতে পারে।

৩৩৫। পিতাচার্যঃ সুহৃন্মাতা ভার্যা পুত্রঃ পুরোহিতঃ।

নাদণ্ড্যো নাম রাজ্ঞোহস্তি যঃ স্বধর্মে ন তিষ্ঠতি॥

স্বধর্মে না থাকলে রাজার পিতা, আচার্য, বন্ধু, মাতা, স্ত্রী, পুত্র ও পুরোহিত অদণ্ডনীয় নয়।

৩৩৬। কার্ষাপণং ভবেদ্দণ্ডো যত্ৰান্যঃ প্রাকৃতো জনঃ।

তত্র রাজা ভবেদণ্ড্যঃ সহস্রমিতি ধারণা॥

যেখানে অন্য সাধারণ লোকের এক কার্ষাপণ দণ্ড হয়, সেখানে রাজার এক হাজার পণ দণ্ড হবে—এই সিদ্ধান্ত।১৯

৩৩৭- অষ্টাপাদ্যন্তু শূদ্রস্য স্তেয়ে ভবতি কিল্বিষম্‌।

৩৩৮। ষোড়শৈব তু বৈশ্যস্য দ্বাত্রিংশৎ ক্ষত্রিয়স্য চ॥

ব্রাহ্মণস্য চতুঃষষ্টিঃ পূর্ণং বাপি শতং ভবেৎ।

দ্বিগুণা বা চতুঃষষ্টিস্তদ্দোষগুণবিদ্ধি সঃ॥

চৌর্যের জন্য চোর্যের গুণদোষজ্ঞ২০ শূদ্রের (যে বস্তুর চুরিতে যে দণ্ড বিহিত তার) আট গুণ, বৈশ্যের ষোল গুণ, ক্ষত্রিয়ের ছত্রিশ গুণ, ব্রাহ্মণের চৌষট্টি গুণ অথবা অতিশয় গুনবান্‌ ব্রাহ্মণের শতগুণ, তদপেক্ষা গুণবান্‌ ব্রাহ্মণের একশত আটাশ গুণ দণ্ড হবে।

৩৩৯। বানম্পত্যং মূলফলং দাৰ্বগ্ন্যর্থং তথৈব চ।

তৃণঞ্চ গোভ্যো গ্রাসার্থমস্তেয়ং মনুরব্রবীৎ॥

(অপরিবৃত) বনস্পতিব মূল, ফল, হোমের জন্য কাঠ, গাভীর খাদ্যের জন্য তৃণের আহরণকে মনু অচৌর্য বলেছেন।

৩৪০। যোহদত্তাদায়িনো হস্তাল্লিপ্সেত ব্রাহ্মণো ধনম্‌।

যাজনাধ্যাপনেনাপি যথা স্তেনস্তথৈব সঃ॥

যে ব্রাহ্মণ যাজন বা অধ্যাপনাদ্বারাও যে অদত্ত দ্রব্য নিয়েছে (অর্থাৎ চোরের) হাত থেকে ধন পেতে ইচ্ছা করেন, তিনি চোরের ন্যায়।

৩৪১। দ্বিজোহধ্বগঃ ক্ষীণবৃত্তির্দ্বাবিক্ষূ দ্বে চ মূলকে।

আদদানঃ পরক্ষেত্ৰান্ন দণ্ডং দাতুমর্হতি॥

যে পথিক দ্বিজের পাথেয় শেষ হয়ে গিয়েছে, তিনি অপরের ক্ষেত্র থেকে দুইটি ইক্ষু ও দুইটি মূলো (ক্ষেত্রস্বামীর পরোক্ষে) নেন তাহলে তিনি দণ্ডনীয় নন।

৩৪২। অসন্দিতানাং সন্দাতা সন্দিতানাঞ্চ মোক্ষকঃ।

দাসাশ্বরথহর্তা চ প্রাপ্তঃ স্যাচ্চৌরকিল্বিষম্॥

আবদ্ধ অশ্বাদির বন্ধনকারী, বদ্ধ অশ্বাদির মোচনকারী এবং (অপরের) দাস, অশ্ব ও রথের অপহরণকারী চোরদণ্ড প্রাপ্ত হবে।

৩৪৩। অনেন বিধিনা বাজা কুর্বাণঃ স্তেননিগ্রহম্‌।

যশোহস্মিন্ প্রাপ্নুয়াল্লোকে প্ৰেত্য চানুত্তমং সুখম্॥

এই নিয়মে চোরের শাস্তি দিলে রাজা পৃথিবীতে যশ ও পরলোকে শ্রেষ্ঠ সুখ লাভ করেন।

৩৪৪। ঐন্দ্ৰং স্থানমভিপ্রেপ্সুর্যশশ্চাক্ষয়মব্যয়ম্‌।

নোপেক্ষেত ক্ষণমপি রাজা সাহসিকং নরম্‌॥

ইন্দ্রত্ব ও অবিনশ্বর যশকামী রাজা মুহূর্তকালও সাহসকারী লোককে উপেক্ষা করবেন না।

৩৪৫। বাগ্‌দুষ্টাৎ তস্করাচ্চৈব দণ্ডেনৈব চ হিঃসতঃ।

সাহসস্য নরঃ কর্তা বিজ্ঞেয়ঃ পাপকৃত্তমঃ॥

বাক্‌পারুষ্যকারী, চোর ও দণ্ডপারুষ্যকারী—এদের অপেক্ষা সাহসকারী অধিকতর পাপিষ্ঠ।

৩৪৬। সাহসে বতমানংতুস্তু যো মর্ষয়তি পার্থিবঃ।

স বিনাশং ব্রজত্যাশু বিদ্বেষঞ্চাধিগচ্ছতি॥

যে রাজা সাহসকারী লোককে ক্ষমা করেন, তিনি শীঘ্র বিনষ্ট হন এবং (লোকের) বিদ্বেষভাজন হন।

৩৪৭। ন মিত্ৰকারণাদ্রাজা বিপুলাদ্বা ধনাগমাৎ।

সমুৎসৃজেৎ সাহসিকান্ সর্বভূতভয়াবহান্॥

বন্ধুর কথায় বা বহুধনলোভে সকল জীবের ভয়োৎপাদক সাহসকারীকে (রাজা) ছেড়ে দিবেন না।

৩৪৮- শস্ত্রং দ্বিজাতিভির্গ্রাহ্যং ধর্মো যত্রোপরুধ্যতে।

৩৪৯। দ্বিজাতীনাঞ্চ বর্ণানাং বিপ্লবে কালকারিতে॥

আত্মনশ্চ পরিত্রাণে দক্ষিণানাঞ্চ সঙ্গরে।

স্ত্রীবিপ্রাভ্যূপপৰ্ত্তেী চ ধর্মেণ ঘ্নন্ ন দুষ্যতি॥

যেখানে ধর্ম বাধিত হয়, সেখানে (অরাজক রাষ্ট্রে পরচক্রা-গমনাদি কালজনিত) বিপ্লবে, আত্মরক্ষার্থে, দক্ষিণাধনের অপহরণে, স্ত্রীলোক ও ব্রাহ্মণের রক্ষার্থে দ্বিজগণ কর্তৃক অস্ত্র গ্রহণীয়, ন্যায্যভাবে হত্যা করলে দোষ হয় না।

৩৫০। গুরুং বা বালবৃদ্ধৌ বা ব্রাহ্মণং বা বহুশ্রুতম্‌।

আততায়িনমায়ান্তং হন্যাদেবাবিচারয়ন্‌॥

আততায়ী গুরু, বালক, বৃদ্ধ বা বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ, যেই হোক তাকে (বধার্থে) আসতে দেখে নির্বিচারেই হত্যা করবেন।

৩৫১। নাততায়িবধে দোষো হন্তুৰ্ভবতি কশ্চন।

প্রকাশং বাপ্রকাশংবা মন্যুস্তংমন্যুমৃচ্ছতি॥

প্রকাশ্যে বা গোপনে (বধোদ্যত) আততায়ীর বধে হত্যাকারীর কোন দোষ হয় না; হত্যাকারীর ক্রোধ (ক্রোধাভিমানিনী দেবতা, যাকে হত্যা করা হয় তার) ক্রোধ নিবৃত্ত করে।

৩৫২। পরদারাভিমর্শেষু প্রবৃত্তান্ নৄন্ মহীপতিঃ।

উদ্বেজনকরৈর্দণ্ডৈশ্চিহ্নয়িত্বা প্রবাসয়েৎ॥

পরস্ত্রী ধর্ষণে প্রবৃত্ত ব্যক্তিকে রাজা (নাসা ওষ্ঠ কর্ণাদি) উদ্বেগজনক দণ্ড দ্বারা চিহ্নিত করে নির্বাসিত করবেন।

৩৫৩। তৎসমুত্থো হি লোকস্য জায়তে বর্ণসঙ্করঃ।

যেন মূলহরোহধর্মঃ সর্বনাশায় কল্পতে॥

কারণ, তা থেকে লোকের বর্ণসংকর হয়, যাতে মূলনাশক অধর্ম সর্বনাশের কারণ হয়।

৩৫৪। পরস্য পত্ন্যা পুরুষঃ সম্ভাষাং যোজয়ন্‌ রহঃ।

পূর্বমাক্ষারিতো দোষৈঃ প্রাপ্নুয়াৎ পূর্বসাহসম্॥

যে লোক কোন পরস্ত্রী প্রার্থনার দোষে পূর্বে দোষী ছিল, সে ঐ পরস্ত্রীর সঙ্গে নির্জনে কথা বললে প্রথম সাহস দণ্ড প্রাপ্ত হবে।

৩৫৫। যস্ত্বনাক্ষারিতঃ পূর্বমভিভাষেত কারণাৎ।

ন দোষং প্রাপ্নুয়াৎ কিঞ্চিন্নহি তস্য ব্যতিক্রমঃ॥

যে উক্ত দোষে দোষী ছিল না, সে (সঙ্গত) কারণবশতঃ (পরস্ত্রীর সঙ্গে) কথা বললে দোষী

হবে না; কারণ, তার কোন অপরাধ হয় না।

৩৫৬। পরস্ত্রিয়ং যোহভিবদেৎ তীর্থেহরণ্যে বনেহপি বা।

নদীনাং বাপি সম্ভেদে স সংগ্ৰহণমাপ্নুয়াৎ॥

যে তীর্থে, (গ্রামের বাইরে গুল্মলতাকীর্ণ) অরণ্যে, (বহুবৃক্ষ পূর্ণ) বনে বা নদীসঙ্গমে পরস্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে, সে স্ত্রীসংগ্রহণের দণ্ড ভোগ করবে।

৩৫৭। উপচারক্রিয়া কেলিঃ স্পর্শো ভূষণবাসসাম্‌।

সহ খট্বাসনঞ্চৈব সর্বং সংগ্ৰহণং স্মৃতম্॥

(মালা, গন্ধদ্রব্যাদি প্রেরণরূপ) উপচার ক্রিয়া, (পরিহাসালিঙ্গনাদি) কেলি, অলংকার ও বস্ত্রের স্পর্শ এবং এক খাটে বসা—এই সব স্ত্রীসংগ্ৰহণ রূপে গণ্য।

৩৫৮। স্ত্রিয়ং স্পৃশেদদেশে যঃ স্পৃষ্টো বা মর্ষয়েৎ তথা।

পরস্পরস্যানুমতে সর্বং সংগ্ৰহণং স্মৃতম্॥

স্ত্রীলোকের (স্তন জঘনাদি) স্পর্শের অযোগ্য স্থানে যে (পরপুরুষ) স্পর্শ করে, (পরস্ত্রী) কর্তৃক পুরুষ (পুরুষাঙ্গাদিতে) স্পৃষ্ট হয়ে যদি ক্ষমা করে তবে পরস্পরের অনুমতিক্রমে ঘটিত এই সব ব্যাপার স্ত্রীসংগ্ৰহণ বলে কথিত হয়।

৩৫৯। অব্রাহ্মণঃ সংগ্রহণে প্রাণান্তং দণ্ডমর্হতি।

চতুর্ণামিপি বর্ণানাং দারা রক্ষ্যতমাঃ সদা॥

(ব্রাহ্মণ) স্ত্রীসংগ্রহণে অব্রাহ্মণ মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য হয়; চার বর্ণের স্ত্রীই সর্বদা (সংগ্ৰহণ থেকে) বিশেষভাবে রক্ষণীয়।

৩৬০। ভিক্ষুকা বন্দিনশ্চৈব দীক্ষিতাঃ কারবস্তথা।

সম্ভাষণং সহ স্ত্রীভিঃ কুর্যুরপ্রতিবারিতাঃ॥

ভিক্ষুক, স্তুতিপাঠক, যজ্ঞার্থে দীক্ষিত (ঋত্বিক্‌) (পাচকাদি) কারুক অবাধে গৃহস্থের স্ত্রীর সঙ্গে)কথা বলবে।

৩৬১। ন সম্ভাষাং পরস্ত্রীভিঃ প্রতিষিদ্ধঃ সমাচরেৎ।

নিষিদ্ধো ভাষমণস্তু সুবর্ণং দণ্ডমর্হতি॥

(স্বামী কর্তৃক) নিষিদ্ধ হয়ে পরস্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবে না। নিষিদ্ধ ব্যক্তি কথা বলে এক সুবর্ণ দণ্ডনীয় হবে।

৩৬২। নৈষ চারণদারেষু বিধির্নাত্মোপজীবিষু।

সজ্জয়ন্তি হি তে নারীর্নিগূঢ়াশ্চারয়ন্তি চ॥

চারণের স্ত্রী ও (নট নর্তকাদি) যারা স্বস্ত্রীকে পরপুরুষের সঙ্গে মিলিত করে জীবিকার্জন করে, তাদের স্ত্রী সম্বন্ধে এই নিয়ম নয়; কারণ, তারা গোপনে পরপুরুষের সঙ্গে স্ত্রীকে মিলিত করে।

৩৬৩। কিঞ্চিদেব তু দাপ্যঃ স্যাৎ সম্ভাষাং তাভিরাচরন্‌।

প্ৰৈষ্যাসু চৈকভক্তাসু রহঃ প্রব্রজিতাসু চ॥

ঐ স্ত্রীলোকদের, দাসী, একভক্তা (অবরুদ্ধা) ও বৌদ্ধাদি ব্রহ্মচারিণীর সঙ্গে নির্জনে সম্ভাষণকারী সামান্য দণ্ডযোগ্য হবে।

৩৬৪। যোহকামাং দূষয়েৎ কন্যাং স সদ্যো বধমর্হতি।

সকামাং দূষয়ংস্তুল্যো ন বধং প্রাপ্নুয়ান্নরঃ॥

যে অনিচ্ছুক স্বজাতি কন্যাগমন করে, সে সদ্য বধের যোগ্য। ইচ্ছুক (স্বজাতি) কন্যাগমনে বধদণ্ড হয় না।

৩৬৫। কন্যাং ভজন্তীমুৎকৃষ্টং ন কিঞ্চিদপি দাপয়েৎ।

জঘন্যং সেবমানান্তু সংযতাং বাসয়েদ্‌ গৃহে॥

কন্যা উচ্চতর বর্ণের লোককে (সম্ভোগার্থ) ভজনা করলে তাকে কোন দণ্ড দিতে হবে না। নিম্নবর্ণের লোককে ভজনা করলে তাকে গৃহে অবরুদ্ধ করে রাখবে।

৩৬৬। উত্তমাং সেবমান জঘন্যো বধমর্হতি।

শুল্কং দদ্যাৎ সেবমানঃ সমামিচ্ছেৎপিতা যদি॥

নিম্নবর্ণের লোক উচ্চবর্ণের (সকামা বা অকামা) কন্যাগমন করলে বধ্য হবে। সমবর্ণের (সকামা) কন্যাগমনে (বধদণ্ড হবে না কিন্তু কন্যার) পিতা চাইলে ঐ ব্যক্তিকে শুল্ক দিতে হবে।

৩৬৭। অভিষহ্য তু যঃ কন্যাং কুর্যাদ্দর্পেণ মানবঃ।

তস্যাশু কর্ত্যে অঙ্গুল্যৌ দণ্ডঞ্চাৰ্হতি ষট্‌শতম্॥

যে বলাৎকার না করে দর্পভরে (সমানজাতীয়) স্ত্রীযোনিতে অঙ্গুলিপ্রক্ষেপ করে, শীঘ্র তার দুইটি অঙ্গুলি কর্তনীয় এবং সে ছয় শত পণ দণ্ডনীয়।

৩৬৮। সকামাং দূষয়ংস্তুল্যো নাঙ্গুলিচ্ছেদমাপ্নুয়াৎ।

দ্বিশতন্তু দমং দাপ্যঃ প্রসঙ্গবিনিবৃত্তয়ে॥

সকামা (স্বজাতীয়) কন্যাকে (অঙ্গুলি প্রক্ষেপ দ্বারা) দৃষিত করলে (অপরাধীর) অঙ্গুলিছেদন হবে না, এই কার্যের পুনরাবৃত্তি বারণের জন্য তাকে দুইশত পণ দণ্ড দিতে হবে।

৩৬৯। কন্যৈব কন্যাং যা কুর্যাৎ তস্যাঃ স্যাদ্দ্বিশতো দমঃ।

শুল্কঞ্চ দ্বিগুণং দদ্যাচ্ছিফাশ্চৈবাপ্নুয়াদ্দশ॥

কন্যাই যদি (অপর) কন্যাকে (অঙ্গুলিপ্রক্ষেপে) দূষিত করে, তাহলে তার দুইশত পণ দণ্ড হবে; সে দ্বিগুণ (কন্যা) শুল্ক (তার পিতাকে) দিবে এবং দশ বেত্রাঘাত পাবে।

৩৭০। যা তু কন্যাং প্রকুর্যাৎ স্ত্রী সা সদ্যো মৌণ্ড্যমৰ্হতি।

অঙ্গুল্যোরেব চ চ্ছেদং খরেণোদ্বহনং তথা॥

যে স্ত্রীলোক কন্যাকে (অঙ্গুলি প্রক্ষেপে) নষ্ট করে, তৎক্ষণাৎ তার মাথা মুড়ান হবে এবং তার দুইটি অঙ্গুলি কর্তন করতে হবে এবং তাকে গাধায় চড়িয়ে ঘোরান হবে।

৩৭১। ভর্তারং লঙঘয়েদ্‌ যা তু স্ত্রী জ্ঞাতিগুণদর্পিতা।

তাং শ্বভিঃ খাদয়েদ্রাজা সংস্থানে বহুসংস্থিতে॥

যে স্ত্রীলোক ধনী পিত্রাদির গর্বে এবং নিজ সৌন্দর্যদৰ্পে স্বামীকে ত্যাগ করে, তাকে রাজা বহুজনসমক্ষে কুকুর দিয়ে খাওয়াবেন।

৩৭২। পুমাংসং দাহয়েৎ পাপং শয়নে তপ্তআয়সে।

অভ্যাদধ্যুশ্চ কাষ্ঠানি তত্র দহ্যেত পাপকৃৎ॥

(উক্ত) পাপাচারী (জার) পুরুষকে উত্তপ্ত লৌহশয্যায় দগ্ধ করবেন; যতক্ষণ পাপী দগ্ধ না হয়, ততক্ষণ (বধ্যঘাতীরা অগ্নিতে) কাষ্ঠ নিক্ষেপ করবেন।

৩৭৩। সংবৎসরাভিশস্তস্য দুষ্টস্য দ্বিগুণো দমঃ।

ব্রাত্যয়া সহ সংবাসে চাণ্ডাল্যা তাবদেব তু॥

পরস্ত্রীগমনে দণ্ডিত দূষিত ব্যক্তি এক বৎসর পরে পুনরায় ঐ স্ত্রী গমন করলে তার দ্বিগুণ দণ্ড হবে; ব্রাত্য নারী ও চণ্ডালীর সঙ্গে সহবাসে ঐ দণ্ড বিহিত।

৩৭৪। শূদ্রো গুপ্তমগুপ্তং বা দ্বৈজাতং বর্ণমাবসন্।

অগুপ্তমঙ্গসর্বস্বৈর্গুপ্তং সর্বেণ হীয়তে॥

দ্বিজের রক্ষিত ভার্যা গমন করলে শূদ্রের বধ ও সর্বস্বহরণ রূপ দণ্ড হবে, অরক্ষিত ভার্যাগমনে তার লিঙ্গচ্ছেদ হবে।

৩৭৫। বৈশ্যঃ সর্বস্বদণ্ডঃ স্যাৎ সংবৎসরনিরোধতঃ।

সহস্রং ক্ষত্রিয়ো দণ্ড্যো মৌণ্ড্যং মূত্রেণ চার্হতি।

(ব্রাহ্মণের রক্ষিতা স্ত্রী গমনে) বৈশ্যের সর্বস্বহরণ দণ্ড এবং একবৎসর কারারোধ হয়, ক্ষত্রিয়ের সহস্র পণ দণ্ড হবে এবং (গর্দভ) মূত্রদ্বারা তার মস্তক মুণ্ডন করাবে।

৩৭৬। ব্রাহ্মণীং যদ্যগুপ্তান্তু গচ্ছেতাং বৈশ্যপার্থিবৌ।

বৈশ্যং পঞ্চশতং কুর্যাৎ ক্ষত্রিয়ন্তু সহস্রিণম্॥

অরক্ষিতা ব্রাহ্মণস্ত্রীগমনে বৈশ্যের পাঁচশত পণ ও ক্ষত্রিয়ের সহস্র পণ দণ্ড হবে।

৩৭৭। উভাবপি তু তাবেব ব্রাহ্মণ্যা গুপ্তয়া সহ।

বিপ্লুতৌ শূদ্রবদ্দণ্ড্যৌ দগ্ধব্যৌ বা কটাগ্নিনা॥

গুণবতী রক্ষিতা ব্রাহ্মণ স্ত্রী গমনে ঐ উভয়ই (অর্থাৎ ক্ষত্রিয়, বৈশ্য) শূদ্রের ন্যায় (সর্বস্বহরণরূপ) দণ্ড প্রাপ্ত হবে অথবা কটাগ্নি২১ দ্বারা দগ্ধ হবে।

৩৭৮। সহস্রং ব্রাহ্মণো দণ্ড্যো গুপ্তাং বিপ্রাং বলাদ্‌ব্রজন্।

শতানি পঞ্চ দণ্ড্যঃ স্যাদিচ্ছন্ত্যা সহ সঙ্গতঃ॥

বলপূর্বক (স্বামী কর্তৃক) রক্ষিতা ব্রাহ্মণী গমনে ব্রাহ্মণ এক হাজার পণ দণ্ডনীয়, সেই নারী ইচ্ছুক হলে তার সঙ্গে সঙ্গম হেতু পাঁচশত পণ দণ্ডনীয়।

৩৭৯। মৌণ্ড্যং প্রাণান্তিকো দণ্ডো ব্রাহ্মণস্য বিধীয়তে।

ইতরেষান্তু বর্ণানাং দণ্ডঃ প্রাণান্তিকো ভবেৎ॥

ব্রাহ্মণের পক্ষে মৃত্যুদণ্ড স্থলে মস্তকমুণ্ডন, অন্য বর্ণগুলির ক্ষেত্রে এই দণ্ড প্রাণান্তিক।

৩৮০। ন জাতু ব্রাহ্মণং হন্যাৎ সর্বপাপেষ্বপি স্থিতম্‌।

রাষ্ট্রাদেনং বহিষ্কুর্যাৎ সমগ্রধনমক্ষতম্॥

সকল অপরাধে অপরাধী হলেও ব্রাহ্মণকে কখনও হত্যা করবেন না, তাঁকে সমগ্র ধন সহ অক্ষত দেহে, রাজ্য থেকে বহিষ্কৃত করবেন।

৩৮১। ন ব্রাহ্মণবধাদ্‌ভূয়ানধর্মো বিদ্যতে ভুবি।

তস্মাদস্য বধং রাজা মনসাপি ন চিন্তয়েৎ॥

পৃথিবীতে ব্রাহ্মণবধ অপেক্ষা গুরুতর অধর্ম নেই। সুতরাং, রাজা তাঁর বধ চিন্তাই করবেন না।

৩৮২। বৈশ্যশ্চেৎ ক্ষত্রিয়াং গুপ্তাং বৈশ্যাং বা ক্ষত্রিয়ো ব্ৰজেৎ।

যো ব্রাহ্মণ্যামগুপ্তায়াং তবুভৌ দণ্ডমর্হতঃ॥

স্বামী কর্তৃক রক্ষিতা ক্ষত্রিয়াগমনে বৈশ্যের অথবা বৈশ্যাগমনে ক্ষত্রিয়ের অরক্ষিতা ব্রাহ্মণ স্ত্রী গমনে যে দণ্ড, তাই হবে।

৩৮৩। সহস্রং ব্রাহ্মণো দণ্ডং দাপ্যো গুপ্তে তু তে ব্রজন্।

শূদ্রায়াং ক্ষত্রিয়বিশোঃ সাহম্রো বৈ ভবেদ্দমঃ॥

(স্বামী কর্তৃক) রক্ষিতা (ক্ষত্রিয়া বা বৈশ্যা) গমনে ব্রাহ্মণের সহস্র পণ দণ্ড হবে। রক্ষিতা শূদ্র স্ত্রী গমনে ক্ষত্রিয় বৈশ্য ঐ দণ্ড প্রাপ্ত হবে।

৩৮৪। ক্ষত্রিয়ায়ামগুপ্তায়াং বৈশ্যে পঞ্চশতং দমঃ।

মূত্রেণ মৌণ্ড্যমিচ্ছেত্তু ক্ষত্রিয়ো দণ্ডমেব বা॥

অরক্ষিতা ক্ষত্রিয়া গমনে বৈশ্যের পাঁচশত পণ দণ্ড হবে। ক্ষত্রিয় ঐ রূপ স্ত্রী গমন করলে (গর্দভ) মূত্র দ্বারা তার মস্তকমুণ্ডন হবে অথবা পাঁচশত পণ দণ্ড প্রাপ্ত হবে।

৩৮৫। অগুপ্তে ক্ষত্রিয়াবৈশ্যে শূদ্ৰাং বা ব্রাহ্মণো ব্ৰজন্‌।

শতানি পঞ্চ দণ্ড্যঃ স্যাৎ সহস্রন্ত্বন্ত্যজস্ত্রিয়ম্॥

অরক্ষিতা ক্ষত্রিয়া বৈশ্যা বা শূদ্ৰা গমনে ব্রাহ্মণ পাঁচশত পণ দণ্ডনীয় হবেন, চণ্ডালীগমনে এক হাজার গুণ দণ্ড হবে।

৩৮৬। যস্য স্তেনঃ পুরে নাস্তি নান্যস্ত্রীগো ন দুষ্টবাক্‌।

ন সাহসিকদণ্ডঘ্নৌ স রাজা শক্ৰলোকভাক্॥

যাঁর রাজ্যে চোর, পরদারগামী, বাক্‌পারুষ্যকারী, সাহসকারী ও দণ্ডপারুষ্যকারী নেই, তিনি (পরলোকে) ইন্দ্রলোকভাগী হন।

৩৮৭। এতেষাং নিগ্রহো রাজ্ঞঃ পঞ্চানাং বিষয়ে স্বকে।

সাম্রাজ্যকৃৎ সজাত্যেষু লোকে চৈব যশস্করঃ॥

রাজা নিজরাজ্যে এই পাঁচজনের নিগ্রহ করলে রাজসমাজে সাম্রাজ্যভাগী হন ও জনসমাজে যশ লাভ করেন।

৩৮৮। ঋত্বিজং যস্ত্যজেদ্‌যাজ্যো যাজ্যঞ্চর্ত্বিক্‌ ত্যজেদ্‌ যদি।

শক্তং কর্মণ্যদুষ্টঞ্চ তয়োর্দণ্ডঃ শতং শতম্॥

যে যজমান (যজ্ঞাদি) কর্ম সম্পাদনে সক্ষম ঋত্বিক্‌কে এবং ঋত্বিক্‌ (পাতকাদি) দোষে অদূষিত যজমানকে ত্যাগ করে, তাদের একশত পণ করে দণ্ড হয়।

৩৮৯। ন মাতা ন পিতা ন স্ত্রী নপুত্রস্ত্যাগমর্হতি।

ত্যজন্নপতিতানেতান্ রাজ্ঞা দণ্ড্যঃ শতানি ষট্‌॥

মাতা, পিতা, স্ত্রী ও পুত্র ত্যাগের যোগ্য নয়। এরা পতিত না হলে এদের ত্যাগ করে (ত্যাগকারী) রাজা কর্তৃক ছয়শত পণ দণ্ডনীয় হয়।

৩৯০। আশ্রমেষু দ্বিজাতীনাং কার্যে বিবদতাং মিথঃ।

ন বিব্রূয়ান্নৃপো ধর্মং চিকীর্ষন্‌ হিতমাত্মনঃ॥

দ্বিজগণের (গার্হস্থ্যাদি) আশ্রমঘটিত ব্যাপারে (এ কাজ শাস্ত্রীয়, এ কাজ অশাস্ত্রীয় এইরূপ) বিবাদ হলে ধর্মেচ্ছু আত্মহিতকামী রাজা (হঠাৎ) বিশেষ ভাবে (এটা সঙ্গত, এটা সঙ্গত নয় এইরূপ) বলবেন না।

৩৯১। যথার্হমেতানভ্যর্চ্য ব্রাহ্মণৈঃ সহ পার্থিবঃ।

সান্ত্বেন প্রশময্যাদৌ স্বধর্মং প্রতিপাদয়েৎ॥

এঁদের যথাযোগ্য সম্মান করে রাজা প্রথমে (অন্য) ব্রাহ্মণগণসহ এঁদের (কোপনিবারক) বাক্যে শান্ত করে নিজধর্ম বুঝিয়ে দিবেন।

৩৯২। প্রাতিবেশ্যানুবেশ্যৌ চ কল্যাণে বিংশতিদ্বিজে।

অর্হাবভোজয়ন্ বিপ্রো দণ্ডমর্হতি মাষকম্॥

যে মঙ্গলকার্যে কুড়ি জন ব্রাহ্মণ ভোজন করাতে হয়, সে স্থলে যদি যোগ্য প্রতিবেশ্য২২ অনুবেশ্যকে২৩ ভোজন না করান, তাহলে ব্রাহ্মণ (গৃহস্থ) এক মাষা দণ্ডভোগী হবেন।

৩৯৩। শ্রোত্রিয়ঃ শ্ৰোত্ৰিয়ং সাধুং ভুতিকৃত্যেষ্বভোজয়ন্‌।

তদন্নং দ্বিগুণং দাপ্যো হিরণ্যঞ্চৈব মাষকম্॥

উন্নতিজনক অনুষ্ঠানে বেদজ্ঞব্রাহ্মণ (প্রতিবেশী বা অনুবেশী) বেদজ্ঞব্রাহ্মণকে ভোজন না করালে (অভুক্ত ব্যক্তির ভোগের) দ্বিগুণ অন্ন এবং এক মাষা সোনা দিতে হবে।

৩৯৪। অন্ধো জড়ঃ পীঠসর্পী সপ্তত্যা স্থবিরশ্চ যঃ।

শ্রোত্রিইয়েষূপকুর্বংশ্চ ন দাপ্যাঃ কেনচিৎ করম্॥

যে অন্ধ, জড়বুদ্ধি, পঙ্গু বা সত্তর বৎসরের বৃদ্ধ ব্যক্তি (ধন ধান্যাদিদ্বারা) বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণদের উপকার করে, তাদের কাছ থেকে কর গ্রহণীয় নয়।

৩৯৫। শ্ৰোত্ৰিয়ং ব্যাধিতাতৌ চ বালবৃদ্ধাবকিঞ্চনম্‌।

মহাকুলীনমার্যঞ্চ রাজা সম্পূজয়েৎ সদা॥

বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ, রোগী, (পুত্ৰবিয়োগাদি দুঃখে) কাতর, বালক, বৃদ্ধ, নিঃস্ব, উচ্চকুলজাত ও উদারচেতা ব্যক্তিগণকে রাজা সর্বদা সম্মান করবেন।

৩৯৬। শাল্মলীফলকে শ্লক্ষ্ণে নেনিজ্যান্নেজকঃ শনৈঃ।

ন চ বাসাংসি বাসোভির্নির্হরেন্ন চ বাসয়েৎ॥

শিমুল কাঠের কোমল ফলকে রজক ধীরে ধীরে বস্ত্র ক্ষালন করবে, একের বস্ত্রের সঙ্গে অপরের বস্ত্র মিশাবে না এবং একের বস্ত্র অন্যকে ভাড়া দিবে না।

৩৯৭। তন্তুবায়ো দশপলং দদ্যাদেকপলাধিকম্‌।

অতোহন্যথা বর্তমানো দাপ্যো দ্বাদশকং দমম্॥

তাঁতী (বস্ত্রনির্মাণার্থে) দশ পল সূত্র (কারও কাছ থেকে নিয়ে তাতে পিষ্টভক্তাদি মিশ্রণ হেতু) এগার পল (ফেরৎ দিবে), অন্যথা দ্বাদশ পণ দণ্ড দিবে।

৩৯৮। শুল্কস্থানেষু কুশলাঃ সর্বপণ্যবিচক্ষণাঃ।

কুর্যুরর্ঘং যথাপণ্যং ততো বিংশং নৃপো হরেৎ॥

কার্যদক্ষ ও সকল পণ্যদ্রব্য সম্বন্ধে অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণ শুল্কস্থানে পণ্যদ্রব্যের (গুণ দোষ বিচার করে সেই অনুসারে) মূল্যনির্ধারণ করবে; তারপর (লাভের) কুড়ি ভাগের এক ভাগ রাজা (শুল্ক রূপে) গ্রহণ করবেন।

৩৯৯। রাজ্ঞঃ প্রখ্যাতভাণ্ডানি প্রতিষিদ্ধানি যানি চ।

তানি নিৰ্হরতো লোভাৎ সর্বহারং হরেন্নৃপঃ॥

রাজার নিকট বিক্রয়যোগ্য (স্বরাজ্যোদ্ভূত হস্তী অশ্ব প্রভৃতি) এবং যেগুলি (রাজা) বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন সেইগুলি লোভহেতু দেশান্তরে নিলে রাজা বাণিজ্যকারীর সর্বস্ব নিবেন।

৪০০। শুল্কস্থানং পরিহরন্নকালে ক্রয়বিক্রয়ী।

মিথ্যাবাদী চ সংখ্যানে দাপ্যোহষ্টগুণমত্যয়ম্॥

যে (শুল্ক এড়াবার জন্য) শুল্ক স্থান পরিহার করে (অপথে যায়), রাত্রি প্রভৃতি অসময়ে ক্রয় বিক্রয় করে, (শুল্ক কমাবার জন্য) পণ্যদ্রব্যের সংখ্যা সম্বন্ধে মিথ্যা কথা বলে (অর্থাৎ কম করে বলে), সে যা গোপন করে তার আটগুণ দণ্ড দিবে।

৪০১। আগমং নির্গমং স্থানং তথা বৃদ্ধিক্ষয়াবুভৌ।

বিচার্য সর্বপণ্যানাং কারয়েৎ ক্রয়বিক্রয়ৌ॥

কত দূর থেকে এসেছে, কত দূব নেওয়া হবে, কতকাল রাখলে কি মূল্য হবে, (এখন) কত বৃদ্ধি, ব্যয় কত বিচার করে যাতে ক্রেতা বিক্রেতার উৎপীড়ন না হয়, এইরূপে সকল পণ্যের (মূল্য নির্ধারণ) করবে।

৪০২। পঞ্চরাত্রে পঞ্চরাত্রে পক্ষে পক্ষেহথবা গতে।

কুর্বীত চৈষাং প্রত্যক্ষমৰ্ঘসংস্থাপনং নৃপঃ॥

(যে সকল বস্তুর মূল্য পরিবর্তনশীল সেইগুলির) পাঁচ দিন পরপর এবং (যে সকল বস্তুর মূল্য স্থিতিশীল সেইগুলির) পনের দিন পর পর (মূল্যজ্ঞ বণিক্‌দের) সমক্ষে রাজা (বিশ্বস্ত লোক দিয়ে) মূল্যনির্ণয় করবেন।

৪০৩। তুলামানং প্রতিমানং সর্বঞ্চ স্যাৎ সুলক্ষিতম্।

ষট্‌সু ষট্‌সু চ মাসেষু পূনরেব পরীক্ষয়েৎ॥

(সোনা প্রভৃতির ওজনের জন্য নির্ণীত) তুলামান এবং (ধান্যাদির প্রস্থ দ্রোণাদি) প্রতিমান ছয় মাস পর পর পুনরায় পরীক্ষা করাবে।

৪০৪। পণং যানং তরে দাপ্যং পৌরুষোহর্দ্ধপণং তরে।

পাদং পশুশ্চ যোষিচ্চ পাদার্ধং রিক্তকঃ পুমান্॥

শূন্য যান, একটি লোকের বহনযোগ্য ভার, পশু ও নারী এবং ভারশূন্য মানুষ পার করতে যথাক্রমে শুষ্ক হবে একপণ, অর্ধপণ, একপণের চতুর্থভাগ ও অর্ধপাদ।

৪০৫। ভাণ্ডপূর্ণানি যানানি তার্যং দাপ্যানি সারতঃ।

রিক্তভাণ্ডানি যৎকিঞ্চিৎ পুমাংসশ্চাপরিচ্ছদাঃ॥

পণ্যদ্রব্যপূর্ণ যানের ক্ষেত্রে দ্রব্যের উৎকর্ষ অপকর্ষ অনুসারে পার করার শুল্ক দেয়। শূন্যদ্রব্যের জন্য যৎসামান্য শুল্ক দেয়, দরিদ্র পুরুষের ক্ষেত্রে (উক্ত পণপাদ অপেক্ষা যৎকিঞ্চিৎ) শুল্ক দেয়।

৪০৬। দীর্ঘাধ্বনি যথাদেশং যথাকালং তরৌ ভবেৎ।

নদীতীরেষু তদ্বিদ্যাৎ সমুদ্রে নাস্তি লক্ষণম্॥

দীর্ঘ (নদী) পথে শুল্ক হবে (নদীর প্রবলতা বা স্থিরতা প্রভৃতি যুক্ত দেশ ও (গ্রীষ্ম বর্ষাদি) কাল অনুসারে। নদীতীরে(ও) তাই হবে। সমুদ্রে (যেহেতু পোত বায়ুর অধীন এবং মানুষের স্বাধীনতা থাকে না সেইজন্য) কোন (শুল্ক বা পণ্যের তারতম্য জ্ঞাপক কোন) নিয়ম নেই।

৪০৭। গর্ভিণীতু দ্বিমাসাদিস্তথা প্রব্রজিতে মুনিঃ।

ব্রাহ্মণা লিঙ্গিনশ্চৈব ন দাপ্যাস্তারিকং তরে॥

দুই বা তদধিক মাসের গর্ভবতী নারী, সন্ন্যাসী, বানপ্রস্থ, ব্রাহ্মণ ও ব্রহ্মচারীর নদীপার হওয়ার শুল্ক দেয় নয়।

৪০৮। যন্নাবি কিঞ্চিদ্‌দাশানাং বিশীর্যেতাপরাধতঃ।

তদ্দাশৈরেব দাতব্যং সমাগম্য স্বতোহংশতঃ॥

(নৌকারোহী ব্যক্তির) কোন দ্রব্য মাঝিদের দোষে নষ্ট হলে মাঝিরাই একত্র হয়ে নিজ নিজ অংশ থেকে তা দিবে।

৪০৯। এষ নৌযায়িনামুক্তো ব্যবহারস্য নির্ণয়ঃ।

দাশাপরাধতস্তোয়ে দৈবিকে নাস্তি নিগ্রহঃ॥

নৌকারোহীদের ব্যবহারে এই সিদ্ধান্ত বললাম। জলে মাঝিদের অপরাধে (মাঝিদেরই তা দেয়); (ঝড় বাদল প্রভৃতি) দৈবদুর্বিপাকে (নৌকাতরঙ্গ প্রভৃতি হেতু আরোহীদের ক্ষতি হলে) মাঝিদের শাস্তি হয় না।

৪১০। বাণিজ্যং কারয়েদ্বৈশ্যং কুসীদং কৃষিমেব চ।

পশূনাং রক্ষণঞ্চৈব দাস্যং শূদ্রং দ্বিজম্মনাম্‌॥

বৈশাকে দিয়ে বাণিজ্য, সুদে ধনবিনিয়োগ, কৃষিকার্য ও পশুপালন করাবে, শূদ্রকে দিয়ে দ্বিজগণের দাসত্ব করাবে।

৪১১। ক্ষত্রিয়ঞ্চৈব বৈশ্যঞ্চ ব্রাহ্মণো বৃত্তিকর্ষিতৌ।

বিভৃয়াদানৃশংস্যেন স্বানি কর্মাণি কারয়ন্‌॥

জীবিকানির্বাহে অক্ষম ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যকে ব্রাহ্মণ দয়া করে নিজের২৪ (যজ্ঞকাষ্ঠ, কুশ, জলকলস প্রভৃতি সংক্রান্ত) কাজ করিয়ে পালন করবেন।

৪১২। দাস্যন্তু কারয়ন্‌ লোভাদ্‌ ব্রাহ্মণঃ সংস্কৃতান্‌ দ্বিজান্।

অনিচ্ছতঃ প্রাভবত্যাদ্‌ রাজ্ঞা দণ্ড্যঃ শতানি ষট্‌॥

ব্রাহ্মণ প্রভুত্ব হেতু বা লোভবশতঃ উপনীত অনিচ্ছুক দ্বিজকে দাসত্বে নিযুক্ত করে ছয়শত পণ দণ্ডনীয় হবেন।

৪১৩। শূদ্ৰন্তু কারয়েদ্দাস্যং ক্রীতমক্রীতমেব বা।

দাস্যায়ৈব হি সৃষ্টোহসৌ ব্রাহ্মণস্য স্বয়ম্ভুবা॥

শূদ্র (ভাত কাপড় দিয়ে) ক্ৰীত (প্রতিপালিত) বা অক্রীত (অপ্রতিপালিত) হোক, তাকে দাসত্ব করাবেন, সে ব্রাহ্মণের দাসত্বের জন্যই ব্রহ্মাকর্তৃক সৃষ্ট হয়েছে।

৪১৪। ন স্বামিনা নিসৃষ্টোহপি শূদ্রো দাস্যাদ্বিমুচ্যতে।

নিসর্গজং হি তৎ তস্য কস্তস্মাৎ তদপোহতি॥

প্রভু কর্তৃক (ধ্বজাহৃত প্রভৃতি দাস) মুক্ত হলেও শূদ্র দাসত্ব থেকে মুক্ত হয় না। দাসত্ব তার স্বভাবজাত; কে তাকে তার থেকে মুক্ত করতে পারে?

৪১৫। ধ্বজাহৃতো ভক্তদাসো গৃহজঃ ক্রীতদত্রিমৌ।

পৈতৃকো দণ্ডদাসশ্চ সপ্তৈতে দাসযোনয়ঃ॥

ধ্বজাহৃত,২৫ ভক্তদাস,২৬ গৃহজ,২৭ ক্রীত,২৮ দাত্রিম,২৯ পৈতৃক,৩০ দণ্ডদাস৩১—এই সাত জন দাস।

৪১৬। ভার্যা পুত্ৰশ্চ দাসশ্চ ত্রয় এবাধনাঃ স্মৃতাঃ।

যৎ তে সমধিগচ্ছন্তি যস্য তে তস্য তদ্ধনম্‌॥

স্ত্রী, পুত্র ও দাস—এই তিনজনই ধনহীন। তারা যা উপার্জন করে, তা তাদের যে মালিক তারই হয়।

৪১৭। বিস্রব্ধং ব্রাহ্মণঃ শূদ্ৰাদ্‌ দ্রব্যোপাদানমাচরেৎ।

ন হি তস্যাস্তি কিঞ্চিৎ স্বং ভর্তৃহার্যধননা হি সঃ॥

শূদ্রদাস থেকে ব্রাহ্মণ নিঃশঙ্কভাবে ধন গ্রহণ করতে পারেন; কারণ, তার নিজস্ব কিছুই

নেই, তার ধন প্রভুকর্তৃক গ্রহণীয়।

৪১৮। বৈশ্যশূদ্রৌ প্রযত্নেন স্বানি কর্মাণি কারয়েৎ।

তৌ হি চ্যুতৌ স্বকর্মভ্যঃ ক্ষোভয়েতামিদং জগৎ॥

(রাজা) সযত্নে বৈশ্য ও শূদ্রকে নিজ নিজ কর্ম করাবেন; তারা স্বকর্মভ্রষ্ট হলে এই পৃথিবীকে বিক্ষুব্ধ করতে পারে।

৪১৯। অহন্যহন্যবেক্ষেত কর্মান্তান্‌ বাহনানি চ।

আয়ব্যায়ৌ চ নিয়তাবাকরান্‌ কোষমেব চ॥

(রাজা) প্রত্যহ আরব্ধ কর্মের নিষ্পত্তি,৩২ (হস্তী অশ্বাদি) বাহন, স্থায়ী আয়, ব্যয়, (সোনা রূপাদির) খনি এবং কোষাগার পর্যবেক্ষণ করবেন।

৪২০। এবং সর্বানিমান্‌ রাজা ব্যবহারান্‌ সমাপয়ন্‌।

ব্যপোহ্য কিল্বিষং সর্বং প্রাপ্নোতি পরমাং গতিম্॥

এইভাবে সকল (ঋণাদানাদি) ব্যবহার সমাপ্ত করে সকল পাপমুক্ত হয়ে রাজা পরম (স্বর্গাদি) গতি প্রাপ্ত হন।

মানবধর্মশাস্ত্রে ভৃগুপ্ৰোক্ত সংহিতায় অষ্টম অধ্যায় সমাপ্ত।

পাদটীকা

১গাভী স্বর্ণাদি বিষয়। কিন্তু, ‘অমুক আমাকে কটাক্ষ করে উপহাস করেছে’ এমন তুচ্ছ বিষয় নয়।

২যথার্থ বিচার করলে পরলোকে স্বর্গলাভ করব, অন্যথা নরকবাস হবে এইরূপে নিজেকে বিচার করবেন।

৩দ্র ৭। ১৩৮

৪মূলে আছে বিবাসয়েৎ। গোবিন্দরাজের মতে, ব্রাহ্মণকে পূর্ব দণ্ডে দণ্ডিত করে বস্ত্রহীন করবে। মেধাতিথির মতে, ব্রাহ্মণের বস্ত্রহরণ বা গৃহভঙ্গ বিহিত।

৫বধ শব্দেও বোঝায় প্রহার, অঙ্গচ্ছেদ প্রভৃতি।

৬আধি অর্থাৎ বন্ধক। আধি দুই প্রকার, গোপ্য বা যা উত্তমর্ণ রক্ষা করবে, নিজে ভোগ করবে না; ভোগ্য আধি উত্তমর্ণ ভোগ করতে পারে। কোন জমি ভোগ্য আধি হলে উত্তমর্ণ তার ফসল ভোগ করবে।

৭মেধাতিথি ও গোবিন্দরাজের মতে, আধি দীর্ঘকাল থাকলেও তাকে অন্যত্র বন্ধক দেওয়া যায় না।

৮প্রীতি সহকারে ভোগাৰ্থ গচ্ছিত দ্রব্য।

৯মূলে আছে বহন্‌। এই শব্দকে কেউ অশ্বের বিশেষণ হিসাবে ধরেন। কেউ কেউ এই শব্দে গর্দভ ও অশ্বতর বুঝেছেন।

১০দ্বিগুণের অধিক বৃদ্ধি।

১১অধমর্ণ আপদকালে উত্তমর্ণকে পীড়া দিয়ে যে সুদ স্বয়ং নির্দিষ্ট করে।

১২অতিশয় বাহন দোহনাদি দ্বারা যা হয়।

১৩অমুক দেশ পর্যন্ত গাড়ি দিয়ে তোমার লবণাদি বহন করব। এত ভাড়া দিবে অধমর্ণ কর্তৃক এইরূপ দেশব্যবস্থা। এক মাস পর্যন্ত গাড়ি চালাব। এতটাকা দিতে হবে এইরূপ কালব্যবস্থা।

১৪পরিহাসের জন্য ভণ্ডাদিকে দিবেন বলে পিতা অঙ্গীকার করলে।

১৫গচ্ছিত রাখবেন।

১৬তুমি এ কথা শোননি, তুমি এদেশের লোক নও, তোমার এ জাত নয়, তোমার উপনয়ন সংস্কার হয়নি ইত্যাদি রূপ।

১৭আক্ষারয়ন্‌—আক্ষারণ শব্দের অর্থ, মেধাতিথিমতে, ভেদন; অর্থাৎ মিথ্যা কথা বলে মা ছেলে প্রভৃতির মধ্যে ভেদ সৃষ্টি; যেমন—তোমার মা তোমাকে ভালোবাসে না, তোমার ভাইকে গোপনে সোনার আংটি দিয়েছে।

১৮দুই শত পলে এক দ্রোণ, বিশ দ্রোণে এক কুম্ভ।

১৯রাজার দণ্ড জলে নিক্ষেপা বা ব্রাহ্মণকে দেয়।

২০এই বিশেষণ সর্ব বর্ণেই প্রযোজ্য।

২১এক প্রকার তৃণ।

২২স্বগৃহের অব্যবহিত পরের গৃহের অধিবাসী।

২৩প্রতিবেশীর গৃহের পরবর্তী গৃহবাসী।

২৪কুল্লূকের মতে, এই নিয়ম বিত্তবান্‌ ব্রাহ্মণের পক্ষে প্রযোজ্য। নচেৎ ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের নিজ নিজ কর্ম করিয়ে এই অর্থ বুঝতে হবে; যেমন, ক্ষত্রিয়কে গ্রামরক্ষার কাজে, বৈশ্যকে কৃষি পশুপালন কাজে নিযুক্ত করবেন।

২৫যুদ্ধ জয়ে প্রাপ্ত।

২৬অন্নের জন্য যে দাস হয়।

২৭নিজের দাসীপুত্র।

২৮দাম দিয়ে কেনা।

২৯প্রতিগ্রহে লব্ধ।

৩০পিত্রাদিপুরুষানুক্রমে প্রাপ্ত।

৩১রাজকৃত দণ্ডশুদ্ধির জন্য যে দাসত্ব স্বীকার করে।

৩২মূলে আছে কর্মান্ত। এই শব্দে ইক্ষু প্রভৃতির উৎপত্তি স্থানকেও বোঝান হয়। এখানে উক্ত অর্থ কুল্লূকসম্মত।

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন