৭০. নৈবেদ্য

পঞ্চানন তর্করত্ন

সপ্ততিতম অধ্যায় – নৈবেদ্য

ভগবান বলিলেন;–প্রশস্ত এবং পবিত্র নিবেদনীয় বস্তুর নাম নৈবেদ্য। উহা ভক্ষ্য প্রভৃতি পাঁচ প্রকার। ১

ভক্ষ্য, ভোজ্য, লেহ্য, পেয় ও চোষ্য ঐ পাঁচ প্রকার নৈবেদ্যের মধ্যে যাহা দেবীর সর্বাপেক্ষা প্রিয়তম তাহাদিগের বিষয় বলিতেছি তোমরা দুজনে শ্রবণ কর। ২

ভক্ষ্যাদি পঞ্চবিং বস্তু প্রদত্ত হইলেই দেবী তুষ্ট হন। যথাবিধি দত্ত না হইলে উহা গ্রহণ করেন না। এই নিমিত্ত সকল বস্তুই নিবেদন করিবে। ৩।

নাগর, কপিত্থ দ্রাক্ষা, ক্রমুক, করক, বদর, কোল, কুষ্মাণ্ড, পনস, বকুল, মধূক, রসালাম্রতক, কেশর, আখোড় (আকরোট), পিণ্ডখর্জুর, করুণ, শ্রীফল, ডহু (ডাফল), ঔদুম্বর, পুন্নাগ, মাধব, কর্কটী ফল (কাঁকুড়), জাম্বব (জাম), বীজপুর, জম্বল, হরিতকী, আমলক, ছয়প্রকার নারঙ্গক (নারেঙ্গী), দেবক, মধুর, শীত, পটোল, ক্ষীরবৃক্ষজ (শশাআদি)। ৪-৭

পাটল, সালজ, বৃত্ত, অগ্নিজ, কদলীফল, তিন্দুক, কুসুম, পীত, কারবেল্ল, করূষজ, গর্ভাবৰ্ত্ত তাহার ফুল, ক্ষীরস্রাব, অনঙ্গজ, কুমুদ ও পঙ্কজের নানাবিধ ফল এবং সকল প্রকার বন্যফল দান করিয়া দেবীর পূজা করিবে। ৮-৯

শ্লেষ্মাতক, বিম্ব, শৈলক এবং বৈষ্ণব ফলজাতির মধ্যে এই কয়েকটি ফল ভিন্ন আর সকল ফলই দেবীর প্রিয়। ১০

হে ভৈরব! মাতুলুঙ্গ, নাগর, করমর্দ রসালক এইরূপ ফল কামাখ্যা দেবীকে দান করিবে। ত্রিপুরা এবং পীঠদেবীদিগকেও এই সকল ফল দান করিবে। ১১-১২

শৃঙ্গাটক, কশেরু (কেশূর), শালুক, মৃণাল, শৃঙ্গবের, কাঞ্চন, স্থূলকন্দ, কুমুন্দক এই সকল কন্দও দেবীকেও উৎসর্গ করিবে। ১৩

পরমান্ন, পিষ্টক যাবক, কৃশর, মোদক, পৃথুক (চিড়ে) এবং লাড়ু এই সকলও দেবীকে দান করিবে। ১৪

ঘৃত ও শর্করাযুক্ত শালিধান্যের উত্তম অন্ন এবং সকল প্রকার অন্ন মহাদেবীকে দান করিবে। ১৫

গো, মহিষ, অজা, আবিক এবং মৃগ ইহাদিগের ক্ষীরও দেবীকে দান করিবে। ১৬

সকল প্রকার মধু, গুড়ধানা (গুড়েমুড়কি), শর্করা, সর্ববিধ অন্ন, পান এবং মাংস ইহাও দেবীকে দান করিবে। ১৭

মধু আদি দ্রব্য সমুদয় গুড়ধানা এবং শর্করা প্রভৃতি অন্ন পান এবং ভক্ষ্য দেবীকে অপণ করিবে। ১৮

আমিক্ষা, পরমান্ন, শর্করার সহিত দধি ও ঘৃত এই সকল বস্তু মহাদেবীকে অর্পণ করিলে অশ্বমেধের ফললাভ হয়। ১৯

মিশ্রিত শর্করা, মধুসম্বলিত সুরা, ইহা দান করিলে বহুকাল দেবীলোকে বাস করিয়া পরে পৃথিবীতে রাজা হইয়া জন্মগ্রহণ করে। ২০

লাঙ্গল, ক্রমুক, রুচক, করমর্দক এই সকলের দান করিলে অতুল সৌভাগ্য প্রাপ্ত হইয়া দেবীলোকে পূজিত হয়। ২১

মাষ, মুগ, মসূর, তিল এবং ভঙ্গা (ভাং) এবং যব প্রভৃতি সকল প্রকার শস্য এই সকল যোগ্যতা অনুসারে দান করিবে। ২২।

যেরকম ভক্ষ্য বা দ্রব্য হউক না কেন, উহা বেশবারাদি দ্বারা সংস্কার করিয়া মহাদেবীকে নিবেদন করিবে। ২৩

মহাদেব, মুনি, ব্রাহ্মণ বা ইহাদের সামান্য লোক সকল, ইহারা যে বস্তু ভোজন করেন তাহারা যেরূপে হয়, সেইরূপ করিবে এবং ভক্তিসহকারে মহা দেবীকেও সেই সেইরূপে নিবেদন করিবে। ২৪

সংস্কাৰ্য্য বস্তুর যেমন সংস্কার করিতে হয়, সংস্কারক এবং সংস্কার যেরূপ হয়, সেই সকল বস্তু সেইরূপেই দান করিবে। ২৫

যাহা পূতিগন্ধসংযুক্ত, দগ্ধ এবং ভোজনের অযোগ্য তাহা শাস্ত্রে উক্ত হইলেও দেবীকে দান করিবে না। ২৬

গন্ধসংযুক্ত কর্পূরাদি দ্বারা অধিবাসিত তাম্বুল জলজ চূর্ণদ্বারা সংস্কৃত করিয়া দেবতাকে দান করিবে। ২৭

যে সকল মৃগ ও পক্ষী বলিদানে ছেদন করিবে তাহাদের মাংস, মৎস্যমাংস দেবতাকে দান করিবে। ২৮,

গণ্ডার, বার্ধ্রীণস, ছাগ এবং মৎস্য ইহাদের মাংস এক এক করিয়া পাক করিলে যে ব্যঞ্জন হয় উহা গন্ধ্যাঢ্য, সুবাসিত এবং মনোহর হয়। ২৯

ঐরূপ মাংস একবার মহাদেবীকে দান করিলে সার্বভৌম রাজা হয়। ৩০

মূলক এবং হরিণ মাংস এক করিয়া লৌহপাত্রে সংস্কৃত করিয়া যে সুগন্ধি ব্যঞ্জন উৎপন্ন হয় তাহা দান করিলে দেবী-লোক প্রাপ্ত হয়। ৩১

খর্জুর, পিণ্ডখর্জুর, সঘৃত যবচুর্ণ এই সকল বস্তু বৈষ্ণবীকে নিবেদন করিয়া রাজসূয় ফললাভ হয়। ২২

কৃশরান্ন প্রদান করিলে অতুল সৌভাগ্যের লাভ হয় এবং নারিকেলের, জল দান করিলে অগ্নিস্টোম যজ্ঞের ফললাভ হয়। ৩৩

জামুর, লবলী, ধাত্রী এবং শ্রীফল দান করিলে অগ্নিস্টোম যজ্ঞের ফল প্রাপ্ত হইয়া দেবীলোকে গমন করে। ৩৪

দ্রাক্ষা, শর্করা এবং নাগরঙ্গ ইহা মহাদেবীকে নিবেদন করিলে লক্ষ্মীবান্ এবং রূপবান্ হয়। ৩৫

ধান এবং পৃথুক দেবীকে দান করিলে লক্ষ্মীযুক্ত হয়। ৩৬

ইক্ষুদণ্ড, মুদ্গমণ্ড এবং নবনীত নিবেদন করিয়া অতুল সৌভাগ্যের সহিত দেবীলোক প্রাপ্ত হয়। ৩৭

নবনীতযুক্ত তিল দেবীকে দান করিয়া ইহলোকে সমস্ত অভিলাষ প্রাপ্ত হইয়া মরণান্তর মোক্ষ প্রাপ্ত হয়। ৩৮

যে মনুষ্য রত্নতোয় সমাযুক্ত নারিকেল জল, ক্ষীর, ঘৃত মধুমিশ্রিত এবং শর্করা ও দধিযুক্ত পেয় বস্তু তৈজস পাত্রে রাখিয়া দেবীকে দান করে, ভক্তি প্রবণ চিত্তে তাহার পূণ্য ফল শ্রবণ কর। ৩৯-৪০

সেই মনুষ্য শতাধিক সহস্র কোটিকল্প দেবীর সম্মুখে বাস করিয়া পরে পৃথিবীতে সার্বভৌম রাজা হয়। ৪১

তাহার পর চারিপ্রকার কৈবল্যের মধ্যে যেরূপ কৈবল্য ইচ্ছা করে তাহাই প্রাপ্ত হয়। নীবার ও কলায় দধির সহিত একত্র কুট্টিত করিয়া যদি মহাদেবীকে দান করে, আপনার অভীপ্সিত প্রাপ্ত হয়। ৪২

মরীচ, পিপ্পলী, কোষ, জীবক, তন্তুভ ইহাদের সংস্কার করিয়া মহাদেবীর সমক্ষে নিবেদন করিবে। খণ্ডযুক্ত তিন্তিড়ী ভক্তিসহকারে নিবেদন করিলে জ্যোতিষ্টোম যজ্ঞের ফল লাভ করিয়া দেবীলোক প্রাপ্ত হয়। ৪৩-৪৪।

রাজমাষ, মসূর, পা, পোতিকা, কালশাক, কলায়, ব্রাহ্মীশাক, মূলক, বাস্তূক, কলম্বী, চটুক, হিলমোচিকা, চুক্র, বিদ্রুমপত্র এবং নপুর্ণবা, যে মনুষ্য এই সকল শাক ভক্তিসহকারে দেবীকে প্রদান করে, সে অতুল লক্ষ্মী লাভ করিয়া আমার লোকে পূজ্য হয়। ৪৫-৪৭

শ্রদ্ধা, পরীষ্টি, সংস্কার, ভক্তি, দ্রব্য, অভিমন্ত্রণ এবং অনুরাগ ইহাদিগের যেমন যেমন আধিক্য হইবে, সেইরূপ সেইরূপ ফলের আধিক্য হইবে এবং ইহাদের হীনতা হইলে ফলেরও হীনতা হইবে। ৪৮

মন্ত্র এবং কালবিরুদ্ধ এবং গুরুভারসমন্বিত নৈবেদ্য কখনই দেবতাকে অর্পণ করিবে না। রজত, সৌবর্ণ এবং তাম্রপাত্রে অথবা প্রস্তরের কিম্বা মদ্যপাত্রে আমার প্রিয়ার প্রিয় নৈবেদ্য দান করিবে। ৪১-৫০

তৈজসপত্রের মধ্যে সৌবর্ণ অথবা তাম্রপাত্রে ভোজন অপাত্রের জন্য অর্পণ করিবে। ৫১

যজ্ঞ দারুময় পাত্র মধ্যম বলিয়া প্রসিদ্ধ এ সকল পাত্রের অলাভ হইলে আপনার হস্ত নির্মিত মৃন্ময় পাত্রের ব্যবহার করিবে। ৫২

হে পুত্রদ্বয়! বৈষ্ণবী কামাখ্যা ও ত্রিপুরার বিশেষ প্রিয় নৈবেদ্যের বিষয় তোমাদিগকে বলিলাম। এক্ষণে তোমরা দুজনে প্রদক্ষিণ ও নমস্কারের কথা শুন। ৫৩

সপ্ততিতম অধ্যায় সমাপ্ত। ৭০

সকল অধ্যায়

১. ০১. কামদেবের জন্ম
২. ০২. কাম-বিক্রম
৩. ০৩. রতিপরিণয়
৪. ০৪. মহাদেবকে কামবশ করিতে ব্রহ্মার উদ্যোগ
৫. ০৫. ব্রহ্মা কর্তৃক মহামায়ার স্তব
৬. ০৬. দেবীর আশ্বাস প্রদান
৭. ০৭. ব্রহ্মা ও কামের কথোপকথন
৮. ০৮. দক্ষের প্রতি দেবীর বরদান
৯. ০৯. দাক্ষায়ণীর ব্রত
১০. ১০. দাক্ষায়ণীকে শিবের বর প্রদান
১১. ১১. শিব-বিবাহ
১২. ১২. ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরের অভেদ
১৩. ১৩. ধ্যানযোগে মহাদেবের বিশ্বদর্শন
১৪. ১৪. শিব-বিহার
১৫. ১৫. শিব-দুর্গার হিমালয় পর্বতে বাস করিবার প্রস্তাব
১৬. ১৬. দক্ষ-যজ্ঞ
১৭. ১৭. দক্ষযজ্ঞ-ধ্বংস
১৮. ১৮. শিবস্তব
১৯. ১৯. শিপ্রানদীর উৎপত্তি-বিবরণ
২০. ২০. অরুন্ধতী-উপাখ্যান
২১. ২১. চন্দ্রের যক্ষ্মারোগমুক্তি
২২. ২২. অরুন্ধতীর জন্ম
২৩. ২৩. অরুন্ধতী-বিবাহ
২৪. ২৪. শিবের অন্তর হইতে মায়ার অপসারণ ও শিবের তপস্যা
২৫. ২৫. সৃষ্টি কথন
২৬. ২৬. প্রতিসর্গ বর্ণন
২৭. ২৭. দৈনন্দিন প্রলয় কথন
২৮. ২৮. জগতের অসারত্ব-কীর্তন
২৯. ২৯. বরাহের ক্রীড়া বর্ণন
৩০. ৩০. বরাহ-শরভসংগ্রাম
৩১. ৩১. বরাহের যজ্ঞরূপত্ব কীৰ্ত্তন
৩২. ৩২. মনু-কপিল-সংবাদ–প্রলয় কীর্তন
৩৩. ৩৩. মনু-মীন সংবাদ
৩৪. ৩৪. সৃষ্টি-বিস্তার
৩৫. ৩৫. শরভের দেহত্যাগ
৩৬. ৩৬. নরকাসুরের উপাখ্যান
৩৭. ৩৭. নরকাসুরের উৎপত্তি
৩৮. ৩৮. নরকের পিতৃ-দর্শন
৩৯. ৩৯. নরকের চরিত্র
৪০. ৪০. নরকের পুত্রোৎপত্তি
৪১. ৪১. পাৰ্বতীর জন্ম
৪২. ৪২. মদন-ভস্ম
৪৩. ৪৩. শিবের প্রসন্নতা
৪৪. ৪৪. শিব-বিবাহ
৪৫. ৪৫. কালীর গৌরীমূর্তি ও শিবের অর্ধাঙ্গতা প্রাপ্তি
৪৬. ৪৬. বেতাল-ভৈরবের উপাখ্যান
৪৭. ৪৭. ভৃঙ্গী ও মহাকালের শাপবিবরণ
৪৮. ৪৮. চন্দ্রশেখরের বিবাহ
৪৯. ৪৯. ঋষি-দর্শন
৫০. ৫০. নারদের উপদেশে চন্দ্রশেখরের আত্ম-সাক্ষাৎকার
৫১. ৫১. বেতাল ভৈরবের গণাধ্যক্ষতা
৫২. ৫২. মন্ত্রোপদেশ আরম্ভ
৫৩. ৫৩. মণ্ডল-নিৰ্মাণাদি
৫৪. ৫৪. পূজা-পারিপাট্য
৫৫. ৫৫. বলিদান
৫৬. ৫৬. মন্ত্র-কবচ
৫৭. ৫৭. অঙ্গ-মন্ত্র কথন
৫৮. ৫৮. দেবী-তন্ত্র
৫৯. ৫৯. অঙ্গমন্ত্রের বিশেষ বিবরণ
৬০. ৬০. কাত্যায়নীর আবির্ভাব
৬১. ৬১. দেবীপূজার কর্তব্যতা
৬২. ৬২. কামাখ্যা-বিবরণ
৬৩. ৬৩. পূজাপ্রকরণ–ত্রিপুরাতন্ত্র
৬৪. ৬৪. কামেশ্বরীতন্ত্র
৬৫. ৬৫. শারদাতন্ত্র
৬৬. ৬৬. নমস্কার ও মুদ্রাকথন
৬৭. ৬৭. বলিদান-বিধি
৬৮. ৬৮. ষড়োশোপচার–আসনাদি-উপচার ষটক বিধান
৬৯. ৬৯. বস্ত্রাদি উপচারাষ্টক
৭০. ৭০. নৈবেদ্য
৭১. ৭১. নমস্কার
৭২. ৭২. কামাখ্যা-কবচ
৭৩. ৭৩. মাতৃকা-ন্যাস
৭৪. ৭৪. অষ্টবিধ যোনিমুদ্রা ও মন্ত্ররহস্য
৭৫. ৭৫. ত্রিপুরার মন্ত্র রহস্য
৭৬. ৭৬. বেতাল-ভৈরবের সিদ্ধিলাভ
৭৭. ৭৭. কামরূপ প্রদর্শন–জল্পীশলিঙ্গমাহাত্ম্য
৭৮. ৭৮. নৈর্ঋতাদিভাগের নির্ণয়
৭৯. ৭৯. তীর্থ-প্রসঙ্গ
৮০. ৮০. নদী বিবরণের উপসংহার
৮১. ৮১. বসিষ্ঠ শাপ
৮২. ৮২. ব্ৰহ্মপুত্রের উৎপত্তিবিবরণ
৮৩. ৮৩. পরশুরামের উপাখ্যান
৮৪. ৮৪. রাজনীতি
৮৫. ৮৫. বিশেষ বিশেষ সদাচার কথন
৮৬. ৮৬. পুষ্যস্নানাদি
৮৭. ৮৭. শক্রোত্থান
৮৮. ৮৮. বিষ্ণুযজ্ঞ
৮৯. ৮৯. বেতাল-ভৈরব বংশকীৰ্ত্তন
৯০. ৯০. সমাপ্তি

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন