অধ্যায়-১৫ – যবনিকা
এই বইটিতে অতি দীর্ঘ সময় শেষে মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ এবং তার চূড়ান্ত পরিণতি কী হবে তার আনুমানিক রূপরেখা উপস্থাপন করা হয়েছে। পূর্ববর্তী অধ্যায়গুলো থেকে এটি স্পষ্ট যে, মহাবিশ্বের এই সমস্যাটি সম্পর্কে আরও অধিক বেশি জানা প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, পদার্থের অতি দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্বের প্রকৃতি কীরূপ? মহাবিশ্ব আবদ্ধ হলে এর চূড়ান্ত পতনের সঠিক ধাত কী হবে? আর একটি মুক্ত মহাবিশ্বে কী জীবন ও সভ্যতার অনির্দিষ্টভাবে টিকে থাকা সম্ভব? বুদ্ধিমান মানুষেরা সমাজের সামাজিক দ্বন্দ্বগুলো (বর্তমান সভ্যতার খুবই পরিচিত দ্বন্দ্ব) মোকাবিলা করতে পারবে? সবচেয়ে বেশি সুপ্ত সমস্যাগুলিল মধ্যে একটি হচ্ছে সময়ের সঠিক রূপকে অনুধাবন করা। বিশেষ করে মহাবিস্ফোরণ (বিগ ব্যাং), মহাসংকোচন (বিগ ক্রাঞ্চ) এবং একটি মুক্ত মহাবিশ্বের সাপেক্ষে সময়ের রূপকে বুঝতে পারা একটি প্রধান সুপ্ত সমস্যা। সময়ের সঠিক সংজ্ঞা নিরূপণ করা একটি পুরাতন সমস্যা। খ্রিস্টান দার্শনিক সেন্ট অগাস্টিন (৩৫৪-৪৩০) এই সমস্যার অতি উত্তম এক অভিব্যক্তি দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘সময় কী? যদি আমাকে কেউ এই প্রশ্নটি করে না তবে আমি জানি সময় কী। যদি আমি কারও কাছে ওই প্রশ্নের ব্যাখ্যা করতে চাই তখন আমি জানি না।’
সামগ্রিকভাবে মহাবিশ্বকে জানা একটি অনন্য উদ্যোগ। এক অর্থে একজন অন্ততপক্ষে বিষয়গুলোর সামগ্রিকতা বোঝার চেষ্টা করছেন। চিন্তাশীল প্রাণী হিসেবে নিউট্রন নক্ষত্র এবং শ্বেত বামনগুলোর মতই আমরাও মহাবিশ্বের অংশ। আমাদের নিয়তি ওই সব বস্তুর সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে আবদ্ধ। যদি আদর্শ মডেলটি সঠিক হয় তবে মহাবিশ্ব উচ্চ ঘনত্বের এবং উচ্চ তাপমাত্রার একটি অবস্থা থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। সমস্ত বস্তু এবং বিকিরণ একটি বিশাল অবিচ্ছিন্ন ভর সৃষ্টি করেছিল। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে এই অবিচ্ছিন্ন সুপের কিছু নির্দিষ্ট স্বকীয় বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত। এই বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত সুপ অবশেষে যথাসময়ে রূপ লাভ করে অসংখ্য ছায়াপথে বা গ্যালাক্সির। আর গ্যালাক্সিগুলোর কোনও একটি এরকম স্তম্ভিত জটিলতা, সূক্ষ্মতা, বৈচিত্র্য এবং অত্যাশ্চর্য সৌন্দর্যের সঙ্গে প্রাণের সৃষ্টি করে। এটি চিন্তাভাবনা ও অনুভূতিসম্পন্ন এমন প্রাণীরও সৃষ্টি করে যে আবার ঘুরে ফিরে মহাবিশ্বকে নিয়ে ভাবতে পারে। যার আছে ভালো লাগা, আছে ভালোবাসা ও ঘৃণার অনুভূতি। ব্রিটিশ গণিতবিদ, দার্শনিক বার্ট্রান্ড আর্থার উইলিয়াম রাসেল (১৮৭২- ১৯৭০) বলেন, ‘প্রকৃতি হল একটি আশ্চর্য রহস্য। এটি সর্বশক্তিমান, কিন্তু অন্ধ। এটি বহুযুগের বিষয়ী বিবর্তনে স্থানের অতলস্পর্শী গহ্বরের মধ্য দিয়ে আঘাত হানছে। অবশেষে প্রকৃতি একটি শিশুকে নিয়ে এসেছে যে তার শক্তির অধীন, কিন্তু দৃষ্টিশক্তি সমেত করেছে প্রতিভাশালী। তাকে এনেছে ভালো-মন্দের জ্ঞানসহ। দিয়েছে তাকে তার অচিন্তন জননীর সমস্ত কাজ বিচার করার ক্ষমতা।’
আমাদের গ্যালাক্সিতে বা অন্য কোনও গ্যালাক্সিতে কোনও রকমের প্রাণী আছে কি-না এ বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক। বিষয় হচ্ছে এখানে আমাদেরকে একটি ‘অস্তিত্ব প্রমাণ’ সরবরাহ করা হয়েছে। আমরা প্রকৃতির আকস্মিক ঘটনা বললে একটা নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু বাদ পড়ে যায়। প্রকৃতির বিধানসমূহ শাশ্বত ও নির্বিকার। এরা মধ্য-প্রবাহে পরিবর্তিত হয় না। কিন্তু পরিস্থিতি তৈরি হলে তারা একটি বেশ মনোরম খেলনা তৈরি করার ক্ষমতা অর্জন করে। ফ্রান্সের দার্শনিক ও গণিতবিদ রেইনি দেকার্ত (১৫৯৬-১৬৫০) বলেছিলেন, ‘Cogito ergo sum’ অর্থাৎ ইংরেজিতে ‘I think therefore I am.’ তাঁর সঙ্গে আমরা বলতে পারি, ‘আমি অস্তিত্বমান। সুতরাং আমি প্রকৃতির নিয়মের একটি অংশ।’
প্রশ্ন করার একটি অদম্য তাড়না থেকেই যায়—আমরা কি মহাবিশ্বের পরিকল্পনা ও স্থাপত্যের অত্যাবশ্যকীয় অংশ? এখানে কি মহাবিশ্বের কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে? অত্যাবশ্যকীয় ‘অংশ’ এবং ‘উদ্দেশ্য’ দ্বারা এখানে কী বোঝানো হয়েছে—এই জিজ্ঞাসার মাধ্যমে অবশ্যই অবিলম্বে কেউ এ জাতীয় প্রশ্নগুলোর পালটা দিতে পারেন। সম্ভবত এ রকম প্রশ্নগুলো অনুচিতভাবেই দাবি করা হয়েছে। কিন্তু অস্বীকার করা যায় না যে, মনের মাঝে এসব প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। ভিয়েনার বংশোদ্ভূত ক্যামব্রিজ দার্শনিক লুদভিগ ভিটগেনস্টাইন বলেছিলেন, ‘বিজ্ঞানসংক্রান্ত সমস্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়ার পরও আমরা অনুভব করি জীবনের সমস্যাগুলো অস্পষ্টই রয়ে যায়। মহাবিশ্ব সম্পর্কে সবচেয়ে জটিল বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে এটি অস্তিত্বমান এবং আমরা এর একটি অংশ। কিন্তু, কীভাবে? সম্ভবত বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ দ্বারা এর ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে এবং গবেষণা করতে সক্ষম। মহাবিশ্ব এমনই একটি অস্তিত্ব যা প্রতিনিয়ত মানবমনে এক বিস্ময়ের অনুভূতি সৃষ্টি করে। এই বিস্ময় থেকেই সৃষ্টি হয় নানাবিধ প্রশ্নের, কিন্তু সঠিক কোনও উত্তর আসে না। ভিটগেনস্টাইন বলেছিলেন, ‘বিশ্বে বিষয়বস্তুগুলো কীভাবে রয়েছে বুঝবার নয়, এটি বড়োই রহস্যময়। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে এটি অস্তিত্বমান।’
এটি সম্ভবত গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ্য করতে হয় যে, আমরা একটি ন্যায্য প্রাচীন সময়ে দৃশ্যে এসেছি। আমি বোঝাতে চাই যে, প্রকৃতি আমাদের সৃষ্টি করতে সময়ের যে পরিসর নিয়েছে তা মহাবিশ্বের বয়স বিস্তারের ক্রমপর্যায়ের সঙ্গে গুরুত্ব দিয়েই নিয়েছে। মহাবিশ্বের বয়স প্রায় ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন বছর এবং পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর। ধারণা করা হয় পৃথিবীতে প্রাণের সূচনা হয়েছিল প্রায় ৩ বিলিয়ন বছর পর্যন্ত প্রতিকূল অবস্থার জন্য প্রাণের উদ্ভব সম্ভব হয়ে ওঠেনি। সুতরাং মহাবিশ্ব আমাদের সৃষ্টি করার মত একটা অবস্থাতে পৌঁছার পরই আমরা সৃষ্টি হয়েছিলাম। মহাবিশ্বকে মুক্ত ধরে আরও একটি চমকপ্রদ প্রশ্নের সৃষ্টি হয় সম্পূর্ণরূপে নতুন ধরনের প্রাণ সৃষ্টিতে মহাবিশ্ব আর কত ‘কাল’ অব্যাহত রাখবে? এটি পরিষ্কার যে, মহাবিশ্ব যখন যথেষ্ট শীতল হবে তখন নতুনরূপে প্রাণের উত্থান আর সম্ভব হবে না।
নিশাচর প্রাণীরা যেমন দিনের আলোকে এড়িয়ে চলে, অতি দূর ভবিষ্যতের শীতল মহাবিশ্বের অজানা সচেতন প্রাণীরা তেমনই আমাদের উষ্ণ মহাবিশ্বকে আরামদায়ক মনে করবে না। কিন্তু, তাদের মধ্যে অধিক কল্পনাশক্তি সম্পন্ন কিছু প্রাণী ফিরে তাকাবে আমাদের বর্তমান মহাবিশ্বের দিকে। ফিরে তাকাবে আমাদের এই আদর্শ পৃথিবীর দিকে, ভাববে এ পৃথিবী এক সময় সূর্যকিরণোজ্জ্বল ছিল, ছিল বিলিয়ন বিলিয়ন বছরের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তি। এ স্বপ্নের পৃথিবী চলে গেছে যা আর কোনওদিন ফিরে আসবে না। কিন্তু বর্তমানে আমরা মানুষেরা এই আদর্শ স্বপ্নের পৃথিবীর সঙ্গে কী করে চলেছি? আমরা পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছি, পরস্পরকে অত্যাচার করছি! আমরা পরস্পরকে ধ্বংস করার জন্য সৃষ্টি করছি পারমাণবিক অস্ত্র আর লুণ্ঠন করে চলেছি এই পৃথিবীর সম্পদ।
ভবিষ্যতে সকল প্রাণী ও সভ্যতার হয়ত পরিসমাপ্তি ঘটবে। মানব সভ্যতার চূড়ান্ত অস্তিত্বের ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন ভিন্ন। কিছু সংখ্যক মানুষের কাছে জীবন ও সভ্যতার ধ্বংস দুঃখজনক হলেও মেনে নিতে হবে। কিন্তু তার আগে ভাববার বিষয় হচ্ছে যে, জীবদ্দশায় মানুষের মধ্যে একদিন নিষ্ঠুরতা বিরাজ করবে, মানুষকে পোহাতে হবে অনেক ভোগান্তি। আবার সময় ও স্থানের প্রতিও বিভিন্ন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন ভিন্ন। নিঃসন্দেহে মানুষের মনে স্পেসের সর্বত্র বিরাজ করার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। কিন্তু মনে হয় এর চেয়ে প্রবলতর আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে সর্বকালেই অস্তিত্বমান থাকা বা অন্ততপক্ষে ভবিষ্যৎ সময়ে।
সম্ভাব্য সত্য হচ্ছে এই যে, পরিণামস্বরূপ টিকে থাকার ক্ষেত্রে বুদ্ধিমান প্রাণীদের উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন। ডাইনোসোরসহ অন্যান্য প্রজাতিরা বিলুপ্ত হয়েছিল কারণ পরিবেশের পরিবর্তনের মধ্যে নিজেদেরকে খাপ খাওয়াতে পারেনি। অবশ্যই আরও অনেক প্রজাতি অনেক সংকটের মধ্যে জীবন ধারণ করেছে। কিন্তু মানুষ (বা কোনও বুদ্ধিমান প্রাণী) ছাড়া যে কোনও প্রজাতির টিকে থাকার বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ সূর্য লাল দানবে পরিণত হওয়ার পর এবং চূড়ান্তভাবে শীতল হয়ে যাওয়ার পর এদের টিকে থাকা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এদিকে নানাবিধ চরম সংকট অবস্থার মধ্যে প্রকৃতির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কী আমাদের মত বুদ্ধিমান প্রাণীদের আবির্ভাব ঘটবে?
এটি পরিষ্কার যে, মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের আরও অনেক কিছুই জানার বাকি আছে। অতি দূর ভবিষ্যতে মানুষের নৈতিক দিক কেমন হবে? কীরূপ থাকবে মানুষের ধর্মীয় মনোভাব? ভবিষ্যতের অন্তহীন যুগে কীরূপে এই মহাবিশ্ব বিকশিত হবে? সম্ভবত এই ধরনের অধিকাংশ প্রশ্নের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানী নিউটনের মত আমাদের সম্মুখে জ্ঞানের এক বিশাল মহাসাগর আর আমরা এ মহাসাগরের সৈকতে দাঁড়িয়ে। এটি লক্ষণীয় যে, জ্ঞান অধিগ্রহণের দুই শতাব্দীরও বেশি সময় পরেও বিজ্ঞানের বিশিষ্ট জনদের একই রকম অনুভূতি রয়েছে। ভিন্ন জন তাঁদের বিশ্বাস বা অবিশ্বাস থেকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ভবিষ্যৎকে প্রকাশ করেন। যেমনটি ডাইসন মনে করেন যে, গডেলের উপপাদ্য কেবল পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যাতেই ফলপ্রসূ নয় বরং জ্ঞানের অন্যান্য শাখায়ও সমভাবে প্রযোজ্য যাতে করে জ্ঞানের প্রতিটি শাখায় আবিষ্কৃত হতে পারে নিত্যনতুন জগৎ। মহাজ্ঞানী রাসেল বলেন, অস্তিত্বের পিছনে রয়েছে অফুরন্ত রহস্য’। জার্মান বংশোদ্ভূত প্রিন্সটনের গণিতবিদ ও পদার্থবিদ হেরম্যান ভেইল (১৮৮৫-১৯৫৫) তাঁর তথাকথিত ‘ভেইল স্বতঃসিদ্ধে’র মাধ্যমে সৃষ্টিতত্ত্বে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি বলেন : আমার বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আমি আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে যতদূর পরিচিত হয়েছি, দেখেছি গণিত ও পদার্থবিদ্যা বিশ্বকে অধিক থেকে অধিকতর উন্মুক্ত করে দিয়েছে, যেমনই বিশ্ব বদ্ধ নয় বরং আমাদেরকে ইশারা করে নিজের গণ্ডি ছাড়িয়ে বহুদূর দেখিয়ে দেয় অর্থাৎ দেখিয়ে দেয় এক উন্মুক্ত দিগন্ত (এখানে ভেইলের ব্যবহৃত মুক্ত ও বদ্ধ শব্দ দুটি বইটিতে ব্যবহৃত ‘বদ্ধ ও মুক্ত’ শব্দদ্বয় থেকে অবশ্যই ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে)। বিজ্ঞান সহসাই তার নিজস্ব প্রক্রিয়ার পার্থিব, ভৌত এবং গঠনমূলক গাণিতিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যায় এবং এই পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে বাধ্য হয়। কিন্তু এখানে আরও কিছু যোগ করার বাকি রয়ে যায় যে, বিজ্ঞান কখনও এই উন্মুক্ত দিগন্তের চেয়ে আর বেশি কিছু দেখাতে পারে না’। বিজ্ঞানী হাইজেনবার্গ প্রাসঙ্গিকভাবেই বলেছেন : ‘সুস্পষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রত্যয়সমূহের ক্ষেত্রে সৃষ্ট সংশয়বাদের অর্থ এই নয় যে, যুক্তিসংগত চিন্তা-ভাবনার সীমা থাকা উচিত। বরং কেউ বলতে পারেন মানুষের উপলব্ধির বা ধীশক্তির ক্ষমতা অসীম। কিন্তু বিজ্ঞানের রোমাঞ্চকর ধারণাগুলো কেবল বাস্তবতার সীমিত একটি অংশ অবধি পৌঁছতে পারে আর অসীম এক অংশ অজানাই রয়ে যায়। প্রকৃতি সম্পর্কে বিজ্ঞানী নিউটনের যে উপলব্ধি তা প্রকাশ করতে বলেছিলেন: ‘বিশ্ব আমাদের সম্মুখে এক অন্তহীন ধাঁধা’। অবশেষে বলতে হয়, নিউটন উত্তর সময়ে এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞানী আইনস্টাইনই সম্ভবত প্রকৃতির নিগূঢ়তার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রকাশক।
অবলোহিত বিকিরণ : তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গসমূহ যাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য হয় ০.০০০১ সেন্টিমিটার থেকে ০.০১ সেন্টিমিটার। বস্তু কক্ষ তাপমাত্রায় অবলোহিত বিকিরণ দেয়।
অতি বেগুনি রশ্মি : ১০^-৭ সেন্টিমিটার থেকে ২×১০^-৫ সেন্টিমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণ। দৃশ্যমান আলোয় বা রঞ্জ-রশ্মিতে অতি বেগুনি রশ্মি থাকে।
অনিশ্চযতার সূত্র : হাইজেনবার্গের মূলনীতি। এই নীতি অনুসারে একটি কণার বেগ ও অবস্থান একই সঙ্গে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। এমনকি কোনও অবস্থা খুব অল্প সময়ের জন্য অস্তিত্বমান হলে এর শক্তি সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায় না।
আলোর বেগ : বিশেষ আপেক্ষিকতার মৌলিক ধ্রুবক। এর মান ৩০০০০০ কিলোমিটার সেকেন্ড^-১। একে c দ্বারা প্রকাশ করা হয়। শূন্য ভরের যে কোনও কণা আলোর বেগে চলে। উদাহরণস্বরূপ, ফোটন, নিউট্রিনো এবং গ্যাডিটন আলোর বেগে চলে।
আলোকবর্ষ : আলো এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে। এক বছরে আলো প্রায় ৯.৫ মিলিয়ন কিলোমিটার অতিক্রম করে।
আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব : ১৯০৫ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন এই তত্ত্বটি দিয়েছিলেন যাকে বিশেষ আপেক্ষিকতাও বলা হয়। এই তত্ত্ব স্থান ও কাল সম্পর্কে নতুন ধারণা দিয়েছিল। এই তত্ত্ব অনুসারে সকল পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে আলোর বেগ একই হয়। এমনকি যদি বিভিন্ন পর্যবেক্ষকের বেগ পরস্পরের সাপেক্ষে বিভিন্ন হয় তখনও আলোর বেগ তাদের প্রত্যেকের কাছে একই থাকে।
আইসোটোপ : একই মৌলের ভিন্ন ভিন্ন পরমাণু যাদের প্রোটন সংখ্যা সমান। কিন্তু এদের কেন্দ্রীণে নিউট্রন সংখ্যা ভিন্ন। এদের ইলেকট্রন সংখ্যা আবার সমান। তাই এদের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য এক। কারণ এদের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যসমূহ নির্ভর করে ইলেকট্রন সংখ্যার ওপর। এই ইলেকট্রন সংখ্যা আবার প্রোটন
সংখ্যার সমান। এবার অন্যভাবে বললে পরমাণুর একটি আইসোটোপ হচ্ছে অন্য একটি পরমাণু আইসোটোপ : মহাবিশ্বের ধারণাগত বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্য অনুসারে একজন পর্যবেক্ষক মহাবিশ্বের যেখানেই অবস্থান করুক না কেন তার কাছে মহাবিশ্বকে প্রত্যেক দিকেই একই মনে হবে।
আৰ্গ : সেন্টিমিটার সাম সেকেন্ড ব্যবস্থায় শক্তির একক। এক গ্রাম ভর ১ সেন্টিমিটার সেকেন্ড^-১ বেগে চললে যে শক্তি উৎপন্ন তার পরিমাণ এক অধ আৰ্গ।
অ্যান্ড্রোমিডা নীহারিকা : আমাদের প্রতিবেশী গ্যালাক্সি। একটি বড়ো গ্যালাক্সি যেটি আমাদের গ্যালাক্সি থেকে প্রায় ২ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এই নীহারিকাটি M3। এবং NGC0224 নামেও পরিচিত।
ইলেকট্রন : সবচাইতে হালকা ভর বিশিষ্ট হিসেবে পরিচিত আধানযুক্ত কণা। ইলেকট্রনসমূহের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়তা এবং পারমাণবিক কেন্দ্রীণের সঙ্গে এদের মিথস্ক্রিয়তার ওপর নির্ভর করে সকল অণু ও পরমাণুর সব ধরনের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য। ইলেকট্রনের ভর প্রায় ৯×১০^-২৮ গ্রাম।
ইলেকট্রন ভোল্ট : পারমাণবিক পদার্থবিদ্যালয় ব্যবহৃত শক্তির একক। এক ভোল্ট বিভব পার্থক্যের মধ্য দিয়ে অতিক্রমের সময় একটি ইলেকট্রন যে পরিমাণ শক্তি অর্জন করে। এক ইলেকট্রন ভোল্ট (ev) সমান ১.৬×১০^-২৩ আৰ্গ।
এনিসোট্রপি : স্পেসের অসমসত্ত্ব বৈশিষ্ট্যকে বোঝায়।
এন.জি.সি : জন হার্শেলের মহাকর্ষীয় বস্তুর তালিকা “The General Catalogue of Nebulae’ কে ডেয়্যার আরও উন্নত করে নাম দিয়েছিলেন, ‘The New General Catalogue of Nebulae a-d Cluster of Star’ এই তালিকার নামের সংক্ষিপ্ত রূপ এন জি সি (N G C)। এনজিসি সংখ্যা দ্বারা বোঝানো হয় কোনও মহাকাশীয় বস্তু এই তালিকায় কততম স্থানে রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, অ্যান্ড্রোমিডা নীহারিকাকে ‘N G 224’ দ্বারা প্রকাশ করা। এই নীহারিকাটি এই তালিকার ২২৪ নম্বর স্থানে রয়েছে।
কোয়ান্টাম বলবিদ্যা : একটি মৌলিক তত্ত্ব যা বিংশ শতাব্দীর বিশ এর দশকে প্রতিষ্ঠিত হয়। আণুবীক্ষণিক বিষয়গুলো ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে এই তত্ত্ব চিরায়ত পদার্থবিদ্যায় কিছু বিষয় সংযোজন করেছিল। কোয়ান্টাম বিদ্যায় কণা এবং তরঙ্গ একই মূল সত্ত্বার দুটি রূপ।
কোয়ান্টাম ক্রোমোডিনামিক্স : একটি তত্ত্ব যেটি এখনও অসম্পূর্ণ। এটি গেজ (কোয়ার্ক ও গ্লুওন কণাদের রং বৈশিষ্ট্যের তত্ত্ব) তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে শক্তিশালী মিথস্ক্রিয়াগুলোকে ব্যাখ্যা করে।
কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্ব : কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ও বিশেষ আপেক্ষিকতার সমন্বিত রূপ। অতি পারমাণবিক কণাদের আচার-আচরণ ও একটি বল ক্ষেত্রের মাধ্যমে তাদের মিথস্ক্রিয়তার ব্যাখ্যা করে।
কোয়ার্ক : এরা হাইপোয়েটিক্যাল বা কল্পিত মৌলিক কণা। ধারণা করা হয় সকল হ্যাড্রন কণা কোয়ার্ক দিয়ে গঠিত। কোয়ার্কদের আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়নি। কিন্তু তাদের অস্তিত্বের বিশ্বাসের ব্যাপারে জোরালো অনেক তাত্ত্বিক কারণ রয়েছে। বিভিন্ন কোয়ার্কের রং ও ফ্লেভার বিভিন্ন কোয়ার্কদের আধান হয় ইলেকট্রনের আধানের ১/৩ অংশের সমান কিংবা প্রোটন আধানের ২/৩ অংশের সমান। প্রতি বা বিপরীত কোয়ার্কের আধান হয় মূল কোয়ার্কের বিপরীত এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যও হয় বিপরীত।
কোয়েসার : এক শ্রেণির নক্ষত্রসদৃশ মহাকাশীয় বস্তু। এদের রয়েছে দীর্ঘ লোহিত সরণ। এদেরকে গ্যালাক্সি বলেও মনে করা হয় যেগুলো আমাদের থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। এদের মধ্যে অনেক বিধ্বংসী ঘটনা ঘটে। কিন্তু এদের সঠিক প্রকৃতি নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে।
কৃষ্ণ বস্তুর বিকিরণ : কৃষ্ণ বস্তুর বিকিরণ বলতে সেই বিকিরণকেই বোঝায় যে বিকিরণ বস্তুর সঙ্গে সাম্যাবস্থায় থাকে অর্থাৎ বস্তু যে কোনও তরঙ্গদৈর্ঘ্যে সম পরিমাণ শক্তি বিকিরণ ও শোষণ করে। একটি পূর্ণশোষী উত্তপ্ত বস্তু হতে নির্গত বিকিরণের শক্তির ঘনত্ব যেকোনও তরঙ্গদৈর্ঘ্য একই হয়। অন্য কথায়, সবকটি তরঙ্গদৈর্ঘ্যে সমপরিমাণ শক্তি থাকে।
কম্পাঙ্ক : তরঙ্গের চূড়াগুলো যে হারে কোনও প্রদত্ত বিন্দু অতিক্রম সে হারকে কম্পাঙ্ক বলে। তরঙ্গ দুতিকে তরঙ্গদৈর্ঘ্য দ্বারা ভাগ করে কম্পাঙ্ক পাওয়া যায়।
কেলভিন : তাপমাত্রার স্কেল। একে k দ্বারা প্রকাশ করা হয়। 0 (শূন্য) k হচ্ছে পরম শূন্য তাপমাত্রা। এক বায়ুমণ্ডলীয় চাপে বরফের গলনাঙ্ক হচ্ছে ২৭৩.১৫ কেলভিন।
কেন্দ্ৰীণ :
একটি পরমাণুর ভারী কেন্দ্রীয় অংশ। কেন্দ্রীয়ণ প্রোটন ও নিউট্রনদের সমন্বয়ে গঠিত। কেন্দ্রীণের আয়তন প্রায় ১০^-১৩ সেন্টিমিটার যেখানে সম্পূর্ণ পরমাণুটির আয়তন ১০^-৮ সে.মি.।
কেন্দ্রীণ সংশ্লেষ : উচ্চ তাপমাত্রায় একটি হালকা কেন্দ্রীণ ভারী কেন্দ্রীণে পরিণত হয়। এই
প্রক্রিয়াকেই বলা হয় কেন্দ্ৰীণ সংশ্লেষ।
গ্যালাক্সি : প্রায় ১০^১১ নক্ষত্রের সমাবেশ। গ্যালাক্সিতে নক্ষত্রগুলো পরস্পরের সঙ্গে মহাকর্ষীয় বলে আবদ্ধ থাকে। আমাদের গ্যালাক্সিকে বলা হয় ছায়াপথ বা মিল্কি ওয়ে।
গোলাকার স্পেস : যে স্পেসে ইউক্লেডের জ্যামিতি চরিতার্থ নয়। বিশেষ করে r ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট গোলাকার স্থানের ক্ষেত্রফল হয় 4πr^2 এর চেয়ে কম এবং আয়তন (৪/৩)πr^3 ।
গেজ তত্ত্ব : যে তত্ত্ব তড়িৎ চুম্বকীয়, দুর্বল এবং শক্তিশালী মিথস্ক্রিয়ার ব্যাখ্যা দেয়। বর্তমানে এ তত্ত্বটি একটি সম্ভাবনাময় তত্ত্ব হিসেবে গভীরভাবে গবেষণাধীন। গেজ (gauge) শব্দটির অর্থ হচ্ছে পরিমাপ (measure)। শূন্য ভরের কণা।
গ্লুয়ন কণা বিনিময়ের মাধ্যমে কোয়ার্করা পরস্পরের ওপর ক্রিয়া করে। এখনও পর্যন্ত গুয়নকে পর্যবেক্ষণ করা যায়নি। কিন্তু এদের অস্তিত্বের বিশ্বাসের জন্য কিছু জোরালো তাত্ত্বিক কারণ আছে।
গ্র্যাভিটন : হাইপোথেটিক্যাল বা কল্পিত কণা। এরা মহাকর্ষীয় মিথস্ক্রিয়ায় মধ্যস্থিত হয়। গ্যাভিটনকে ভরহীন মনে করা হয়। গ্র্যাভিটনের স্পিন 2ħ।
গড় মুক্ত পথ : একটি কণা তার মাধ্যমের সঙ্গে সংঘর্ষের পর যে গড় দূরত্ব অতিক্রম করে।
ঘনত্ব : প্রতি একক আয়তনে ভরের পরিমাণ। কখনও কখনও প্রতি একক আয়তনে ভর এবং শক্তির পরিমাণকেও বোঝায়। এক্ষেত্রে একে ভর-শক্তি ঘনত্ব বলে নির্দেশ করা হয়।
চিরায়ত পদার্থবিদ্যা : নিউটনের মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত পদার্থবিদ্যাকে চিরায়ত পদার্থবিদ্যা বলা হয়। চিরায়ত পদার্থবিদ্যার আপেক্ষিকতার সাধারণ বা বিশেষ তত্ত্ব এবং কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ব্যবহৃত হয় না।
চাৰ্ম : কোয়ার্কের একটি ধরন। সব কণাতেই এই চার্ম (c-কোয়ার্ক) কোয়ার্ক বিদ্যমান।
ট্রিটিয়াম : হাইড্রোজেনের একটি অস্থায়ী আইসোটোপ। এর কেন্দ্রীণে আছে একটি প্রোটন ও দুটি নিউট্রন।
ডিউটেরিয়াম : হাইড্রোজেনের একটি আইসোটোপ। ডিউটেরিয়ামের কেন্দ্রীণে আছে একটি প্রোটন ও একটি নিউট্রন।
ডপলার প্রভাব : আলোক-সংকেত বা শব্দ সংকেতের কম্পাঙ্কের বা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পরিবর্তন। এই পরিবর্তন উৎস এবং গ্রাহকের গতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
তড়িৎ আধান : তড়িৎ আধানকে শুধু আধানও বলা হয়। এটি প্রত্যেক কণারই একটি স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্য কণার তড়িৎ চুম্বক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করে। আধান দুই প্রকার—ধনাত্মক আধান ও ঋণাত্মক আধান। উদাহরণস্বরূপ, ইলেকট্রনের আধান ঋণাত্মক এবং প্রোটনের আধান ধনাত্মক। আধানযুক্ত ইলেকট্রন কণাসমূহের প্রবাহই হচ্ছে বিদ্যুৎ।
তড়িৎ চুম্বকীয় বল : তড়িৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্র আহিত কণাদের ওপর যে বল প্রয়োগ করে। আধানযুক্ত কণা (যেমন—ইলেকট্রন ও প্রোটনের মিথস্ক্রিয়া)-গুলো পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার সময় এই বল অনুভব করে।
তরঙ্গদৈর্ঘ্য : যে কোনও তরঙ্গে সৃষ্ট তরঙ্গ চূড়াদের মধ্যবর্তী দূরত্বই হচ্ছে তরঙ্গদৈর্ঘ্য। এক্ষেত্রে পর পর দুটি তরঙ্গ চূড়ার মধ্যবর্তী দূরত্বকেই তরঙ্গদৈর্ঘ্য হিসেবে ধরা হয়।
থ্রি-সি. ক্যাটালগ : মহাকাশীয় রেডিও উৎসসমূহের ‘থার্ড ক্যামব্রিজ ক্যাটালগ’ সংক্ষেপে থ্রি-সি ক্যাটালগ নামে পরিচিত। মোলার্ড রেডিও অবজারভেটরি অব ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি এই তালিকা প্রস্তুত করেছে।
নিউট্রন : আধান নিরপেক্ষ মৌলিক কণা। এটি ইলেকট্রনের চেয়ে প্রায় ১৮৩৮ গুণ ভারী। এর স্পিন (১/২)ħ। তাই এটি ফার্মিয়ান। হাইড্রোজেনের কেন্দ্রীণ ছাড়া সকল পারমাণবিক কেন্দ্রীণের উপাদান এটি।
নিউট্রিনো : বৈদ্যুতিক আধান নিরপেক্ষ ভরহীন কণা। নিউট্রিনো কণারা দুর্বল মিথস্ক্রিয়া এবং মহাকর্ষীয় মিথস্ক্রিয়ায় অংশ নেয়। নিউট্রিনোকে ‘ν’ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। সম্ভাব্যরূপে এরা তিন ধরনের হতে পারে। যেমন— ইলেকট্রন
নিউট্রিনো (νe), মিউয়ন নিউট্রিনো (νμ) এবং টাউ নিউট্রিনো (ντ)। এদের স্পিন (১/২)ħ। এরা ফার্মিয়ান।
নিউটনের ধ্রুবক : একে নিউটনের মহাকর্ষীয় ধ্রুবকও বলা হয়। এই ধ্রুবক নিউটন ও আইনস্টাইনের মহাকর্ষীয় তত্ত্বের অপরিহার্য ধ্রুবক। একে G দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
নিউট্রন নক্ষত্র : মূলত নিউট্রন কণাদের সমন্বয়ে গঠিত নক্ষত্র। নিউট্রন নক্ষত্রের ঘনত্ব অনেক বেশি। কোনও নক্ষত্র মৃত্যুর পর এই পর্যায়ে পর্যবসিত হয়।
নীহারিকা : মেঘসদৃশ কিছু মহাকাশীয় বস্তু। কিছু নীহারিকা আবার গ্যালাক্সি। এদের কিছু সংখ্যক আবার আমাদের গ্যালাক্সির অভ্যন্তরে গ্যাস ও ধূলিকণার সত্যিকার মেঘ।
পাইয়ন : বিজ্ঞানী ইউকাও যার পূর্বাভাসিত কণা। এই কণাগুলো ১৯৪৬ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল। এদেরকে π মেসন (পাই মেস)ও বলা হয়। পাইয়ন কণা সবচেয়ে কম ভরের হ্যাড্রন। পাইয়ন তিন ধরনের হয়ে থাকে, যেমন ধনাত্মক আধানযুক্ত (π+) ঋণাত্মক আধানযুক্ত (π-) এবং আধান নিরপেক্ষ (π0)।
পূর্ণাঙ্গ মহাজাগতিক নীতি : এই নীতি অনুসারে মহাবিশ্ব সব সময় সর্বত্র সমরূপে প্রতীয়মান হয়। এই নীতি পরবর্তীকালে স্থির অবস্থার তত্ত্বের জন্ম দেয়।
পাউলির বর্জন নীতি : একই ধরনের দুটি কণা একই অবস্থায় ঠিক একইভাবে থাকতে পারে না। ফার্মিয়ান কণাগুলো এই নীতি মেনে চলে কিন্তু বোসনরা এই নীতি মানে না।
পারসেক : জ্যোতির্বিদ্যায় ব্যবহৃত দূরত্বের একক যা প্রায় ৩.২৬ আলোকবর্ষের সমান।
প্লাঙ্কের ধ্রুবক : কোয়ান্টাম বলবিদ্যার মৌলিক ধ্রুবক। এই ধ্রুবককে ‘ħ’ দ্বারা প্রকাশ করা হয়।” এই ধ্রুবকের মান প্রায় ৬.৬২৫×১০^-২৭ আর্গ সেকেন্ড। এর সম্পর্কযুক্ত ধ্রুবক হচ্ছে ħ (এইচ স্লাশ)। মূল ধ্রুবক ‘ħ’ কে 2π দ্বারা ভাগ করে যে মান আসে তাই ħ এর মান। এখানে n এর মান ২২/৭ এর কাছাকাছি!
পজিট্রন : ইলেকট্রনের বিপরীত কণা। এই কণার আধান ইলেকট্রন আধানের বিপরীত অর্থাৎ এটি ধনাত্মক আধানবিশিষ্ট। পজিট্রনকে ‘e+’ দ্বারা প্রকাশ হয়।
প্রোটন : ধনাত্মক আধানযুক্ত কণা। এই কণার ভর ইলেকট্রনের ভরের তুলনায় প্রায় ১৮৩৬ গুণ বেশি। এর স্পিন (১/২)ħ। এটি ব্যারিয়নের অন্তর্ভুক্ত এবং ফার্মি দিরাক পরিসংখ্যান মেনে চলে। প্রোটন কণা তড়িৎ চুম্বকীয়, দুর্বল এবং শক্তিশালী—এই তিনটি মিথস্ক্রিয়াতেই অংশ নেয়।
পালসার : ১৯৬৭ সালে আবিষ্কৃত এক ধরনের নক্ষত্র। এরা এক সেকেন্ড পর পর নিয়মিতভাবে স্পন্দন দেয়। ধারণা করা হয় এরা ঘূর্ণনশীল নিউট্রন নক্ষত্র।
পরম উজ্জ্বলতা : কোনও জ্যোতিষ্কমণ্ডলীয়/মহাকাশীয় বস্তু হতে প্রতি একক সময়ে মোট যে পরিমাণ বিকিরণ নির্গত হয়। পরম উজ্জ্বলতা নির্দেশ করে বস্তুটি অন্তর্নিহিতভাবে কতটুকু উজ্জ্বল।
ফোটন : আলোক তরঙ্গ বা তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গদের সঙ্গে যুক্ত কণা। একে ‘ν’ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এর ভর শূন্য এবং স্পিন পূর্ণ সাংখ্যিক। ফোটন কণা বোসন শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। ফোটন আধানযুক্ত কণাদের মিথস্ক্রিয়তায় মধ্যস্থতা করে।
ফার্মিয়ন : যে সব কণা ফার্মিদিরাক পরিসংখ্যান মেনে চলে। ফার্মিয়ন কণাদের স্পিন অর্ধ-পূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, ইলেকট্রন, নিউট্রন ও প্রোটন কণাগুলো ফার্মিয়ন গোত্রীয়। ফার্মিয়ন কণারা সংকোচনের বিরুদ্ধে বাধা সৃষ্টি করে যা বহিঃমুখী ফার্মিয়ন চাপ নামে পরিচিত
ফ্লেভার : কোয়ার্ক এবং পর্যবেক্ষণকৃত কণাদের দ্বারা প্রদর্শিত এক ধরনের বৈশিষ্ট্য।
ফ্রিদম্যান মডেল : মহাবিশ্বের একটি গাণিতিক মডেল। এই মডেল আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব এবং মহাজাগতিক মূলনীতি (মহাজাগতিব শর্ত ছাড়া)-র ওপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠিত।
ব্যারিয়ন : সবল মিথস্ক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী কণাদের একটি শ্রেণি। প্রোটন এবং নিউট্রন এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। প্রোটন ও নিউট্রন ছাড়া অধিকতর ভারী ব্যারিয়নদের আবার হাইপারনও বলা হয়। কোনও ব্যবস্থায় বিদ্যমান ব্যারিয়নের মোট সংখ্যা থেকে প্রতি বা এন্টিব্যারিয়নদের সংখ্যা বাদ দিলে ব্যারিয়ন সংখ্যা পাওয়া যায়।
বদ্ধ মহাবিশ্ব : মহাবিশ্বের একটি মডেল। এই মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ কোনও এক সময় থেমে যাবে এবং সংকোচন শুরু হবে। অবশেষে সর্বজনীন মহাসংকোচনের মাধ্যমে এই মহাবিশ্বের পতন ঘটবে।
বোসন : যে সব কণা বোস আইনস্টাইন পরিসংখ্যান মেনে চলে তাদের বলা হয় বোসন এদের স্পিন পূর্ণ সংখ্যক। উদাহরণস্বরূপ, ফোটন ও সকল মেসন বোসনের অন্তর্ভুক্ত।
বিটা ভাঙন : একটি কেন্দ্রীণের তেজস্ক্রিয় ক্ষয়। বিটা ভাঙনে কেন্দ্রীণ ইলেকট্রন ত্যাগ করে। একটি মুক্ত নিউট্রন কয়েক মিনিটে ভেঙে গিয়ে একটি ইলেকট্রন (e-), একটি প্রোটন (p) ও একটি ইলেকট্রন এন্টিনিউট্রিনো।
বিগ ব্যাং : প্রায় ১০ থেকে ২০ বিলিয়ন বছর পূর্বে আজকের মহাবিশ্ব অতি উচ্চ চাপ ও বেশি ঘনত্বের বস্তুতে পুঞ্জীভূত ছিল আর একটি মুহূর্ত এল ঘটল মহাবিস্ফোরণ। এই বিস্ফোরণটি একটি সর্বজনীন বিস্ফোরণ ছিল। বস্তু তখন প্রচণ্ড বেগে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিষয়টিই হচ্ছে ‘বিগ ব্যাং’।
বিগ ক্রাঞ্চ বা মহাসংকোচন : বিগ ব্যাং এর পুরো উলটো প্রক্রিয়া। মহাবিশ্ব বদ্ধ হলে ভবিষ্যতের কোনও এক সময় এর প্রসারণ থেমে গিয়ে শুরু হবে সংকোচন। অবশেষে ঘটবে মহাসংকোচন অর্থাৎ সকল বস্তুসমেত মহাবিশ্ব পুঞ্জীভূত হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। এই ঘটনাটিই হল বিগ ক্রাঞ্চ বা মহাসংকোচন।
ব্ল্যাক গোল বা কৃষ্ণগহ্বর : বস্তু স্বয়ং নিজের মহাকর্ষীয় বলের অধীনে কিংবা বাহিরের কোনও চাপের দরুন অতি ক্ষুদ্র আয়তনে সন্নিবিষ্ট হয়ে যায় আর তখন এর ভরের ঘনত্ব খুবই বেড়ে যায় অর্থাৎ আয়তনের তুলনায় ভর হয়ে যায় অত্যন্ত বেশি। বস্তুর ভরের অতি শক্তিশালী মহাকর্ষীয় বলের প্রভাবে কোনওকিছুই তার ভিতর থেকে বাহিরে আসতে দেয় না এমনকি আলোক সংকেতও না। এই অবস্থায় বস্তুকে ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর বলা হয়। বিশেষ করে সূর্য ভরের চেয়ে অধিকতর ভরবিশিষ্ট কোনও নক্ষত্র মৃত্যুর পর অবশেষে ব্ল্যাকহোলে পরিণত হয়।
বিপরীত কণা বা প্রতি কণা : কোনও কণার স্পিন ও ভরের সম স্পিন ও সম ভর বিশিষ্ট আরেকটি কণা। কিন্তু কণাটির আধান সমান, ধর্ম বিপরীত। উদাহরণস্বরূপ, ইলেকট্রনের (e) এর বিপরীত কণা হচ্ছে পজিট্রন (e+)। কিছু নিরপেক্ষ কণা স্বয়ং নিজেদের প্রতিকণা।
মৌলিক কণা : সকল পদার্থে মৌলিক উপাদানসমূহ। ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন কণাদের মৌলিক কণা বলা হয়। কিন্তু এটি একটি পরিবর্তনশীল ধারণা কারণ বর্তমানে মনে করা হয় প্রোটন এবং নিউট্রন কণাগুলো কোয়ার্ক নামক অন্য এক একার কণা দ্বারা গঠিত। কিন্তু এই বইয়ের ১৪.১ নম্বর সারণির সব কণাকেই মৌলিক কণা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মহাকর্ষীয় তরঙ্গ : ঠিক তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের মতই আধানযুক্ত কণাদের মিথস্ক্রিয়া থেকে সৃষ্টি হয়। সুতরাং সকল কণাদের মধ্যাকর্ষীয় মিথস্ক্রিয়া থেকে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। মহাকর্ষীয় তরঙ্গগুলো আলোর বেগে গমন করে। প্রতি সেকেন্ডে প্রায় তিন লক্ষ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে। এদেরকে পর্যবেক্ষণ করা না গেলেও আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব পরোক্ষভাবে এদের অস্তিত্বের প্রমাণ দেয়।
মহাজাগতিক পটভূমি বিকিরণ : বিশেষ কোথাও থেকে আসা বিকিরণ যার তাপমাত্রা প্রায় ৩ কেলভিন। ধারণা করা হয় এই বিকিরণ মহাবিশ্ব জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে।
মহাজাগতিক রশ্মি : বাইরে থেকে উচ্চ শক্তিসম্পন্ন কণা বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। এসব কণাদের একত্রিত রূপই হল মহাজাগতিক রশ্মি।
মাইক্রোওয়েভ (অণুতরঙ্গ) বিকিরণ—যে তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গসমূহের তরঙ্গদৈর্ঘ্য হয় ০.০১ সেন্টিমিটার থেকে ১০ সেন্টিমিটার। কয়েক ডিগ্রি কেলভিন তাপমাত্রায় বস্তু মাইক্রোওয়েভ আদলে বিকিরণ দেয়।
মেসন : এক শ্রেণির কণা যারা শক্তিশালী মিথস্ক্রিয়ায় অংশ নেয়। পাইয়ন, কাওয়ন এবং অন্যান্য কণা যাদের ব্যারিয়ন সংখ্যা শূন্য এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
মধ্যবর্তী ভেক্টর বোসন : এরা হাইপোথেটিক্যাল বা কল্পিত কণা। এসব কণা দুৰ্বল মিথস্ক্রিয়ায় মধ্যস্থিত হয়। এরা ডব্লিউ প্লাস (W+), ডব্লিউ মাইনাস (W-)
এবং জেড জিরো (Z°) নামে পরিচিত। এরা বোসন। কিন্তু এসব কণা এখনও পর্যন্ত শনাক্ত হয়নি।
মিউয়ন : ইলেকট্রনের মতই ঋণাত্মক আধানযুক্ত মৌলিক কণা। কিন্তু এর ভর ইলেকট্রনের ভরের চেয়ে প্রায় ২০৭ গুণ বেশি। এটি লেপ্টন শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। মিউয়নকে ‘M’ দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
মেসিয়রের সংখ্যা : চার্লস মেসিয়রের তালিকায় বিভিন্ন নীহারিকা এবং নক্ষত্র স্তবকের তালিকা সংখ্যা। সচরাচর এসব বস্তুদেরকে মেসিয়রের নামের আদ্য অক্ষর এম (M) দ্বারা সূচিত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, অ্যান্ড্রোমিডা নীহারিকাকে M31 বলা হয়।
মিল্কিওয়ে : আকাশ বরাবর আলোর যে পরিব্যাপন আমাদের গ্যালাক্সির সমতলকে চিহ্নিত করে। কখনও কখনও স্বয়ং আমাদের গ্যালাক্সি বা ছায়াপথকেই মিল্কিওয়ে বলা হয়।
মহাকাশীয় মাধ্যম : নক্ষত্রদের মধ্যবর্তী অঞ্চল। এসব অঞ্চলে রয়েছে গ্যাস, ধূলিকণা এবং বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ।
মুক্ত মহাবিশ্ব : মহাবিশ্বের একটি মডেল। এটি চিরকালই সম্প্রসারিত হবে। ফ্রিদম্যানের সাধারণ মডেলগুলিতে একটি মুক্ত মহাবিশ্বের স্থানের ব্যাপ্তি অসীম।
রং : কোয়ার্কদের এমন একটি সত্ত্ব যা প্রত্যেক কোয়ার্কের তিনটি বৈচিত্র্যের মধ্যে পার্থক্য পরিবেশন করে। এই রং দৃশ্যমান হয়। এটি গুওনদের আটটি বৈচিত্র্যকেও আলাদা করে। রঙিন কোয়ার্কদের সমন্বয়ে গঠিত সকল পর্যবেক্ষণকৃত কণাই আবার ‘বর্ণহীন’ বা ‘সাদা’।
লেপটন : এক শ্রেণির কণা যারা শক্তিশালী মিথস্ক্রিয়ায় অংশ নেয় না। ইলেকট্রন, মিউয়ন এবং নিউট্রিনোগুলো এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
লোহিত সরণ : কোনও উৎস হতে বিকিরণ বর্ণালির রেখাগুলো দীর্ঘতর (লাল) তরঙ্গদৈর্ঘ্যের দিকে সরে যায়। ডপলার প্রভাবের দরুন কোনও অপস্রিয়মাণ বস্তু হতে লোহিত সরণ সৃষ্টি হয়। কোনও উৎসের এই লোহিত সরণ থেকে এর সরণ বেগ নির্ধারণ করা সম্ভব।
শক্তিশালী মিথস্ক্রিয়া : মৌলিক বলসমূহের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বল দ্বারা কণাদের মধ্যে যে মিথস্ক্রিয়া তৈরি হয়। এই শক্তিশালী মিথস্ক্রিয়ার দরুন পরমাণুর কেন্দ্ৰীণে প্রোটন ও নিউট্রন একত্রে থাকে।
শোষণ রেখা বা অঞ্চল : আলোক বিকিরণকারী বস্তুর বর্ণালিতে যে সব অন্ধকার রেখা দেখা যায়। বস্তু থেকে নির্গত আলো চারপাশের মাধ্যম দ্বারা একটা নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যে শোষিত হলে এমন অন্ধকার রেখার সৃষ্টি হয়।
শ্বেত বামন : একটি আঁটসাঁট নক্ষত্র। কোনও নক্ষত্রের মৃত্যুর পরবর্তী দশা। শ্বেত বামনের ভর প্রায় সূর্য ভরের সমান কিন্তু এর আয়তন প্রায় পৃথিবীর আয়তনের সমান। এই নক্ষত্রের পদার্থসমূহের পরমাণু থেকে মধ্যাকর্ষীয় শক্তিশালী প্রবল চাপের দরুন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে ইলেকট্রনগুলো ‘পদার্থসমূহে মুক্তভাবে ঘোরাফেরা শুরু করে। আর ইলেকট্রনগুলো তখন তথাকথিত ‘ফার্মি চাপ’ সরবরাহ করে যে চাপ মধ্যাকর্ষণ বলের ভারসাম্য বজায় রাখে।
শূন্যস্থানের বিক্ষোভ (ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশন) : শূন্যস্থান অবাস্তব কণাদের অবিরাম সৃষ্টি ও ধ্বংসকে বোঝায়। শূন্যস্থানে কণা-প্রতিকণা জোড়ায় জোড়ায় অবিরাম সৃষ্টি ও ধ্বংস হয়।
সৃষ্টি তত্ত্ব : বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার (পদার্থবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞান) সমন্বিত ক্ষেত্র যেখানে মহাবিশ্বের বৃহৎ পরিসরের গঠন ও বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সংকট ঘনত্ব : মহাজাগতিক ভর-ঘনত্বের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণকে বোঝায়। মহাবিশ্বের বর্তমান গড় ঘনত্ব সংকট ঘনত্বের কম হলে মহাবিশ্ব চিরকালই সম্প্রসারিত হবে। পক্ষান্তরে মহাবিশ্বের গড় ঘনত্ব সংকট ঘনত্বের বেশি হলে মহাবিশ্ব ভবিষ্যৎ সময়ে প্রসারণ থামিয়ে সংকোচিত হতে থাকবে।
সেফেইড বিষম নক্ষত্র : এরা নক্ষত্র। তারা নির্দিষ্ট পর্যায়কাল শেষে তাদের উজ্জ্বলতা ভিন্নতা প্রদর্শন করে। এদের পর্যায়কাল পর্যবেক্ষণ করে নির্ণয় করা যায় এর অন্তর্নিহিতভাবে কতখানি উজ্জ্বল অর্থাৎ এদের পরম উজ্জ্বলা খুঁজে বের করা যায়।
সমসত্ত্বতা : মহাবিশ্বের একটি বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্য অনুসারে প্রদত্ত যে কোনও সময়ে মহাবিশ্বের সর্বত্র প্রদত্ত যে কোনও আয়তনে গড়পড়তায় একই পরিমাণ গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ রয়েছে।
স্পিন : মৌলিক কণাদের মৌলিক স্বকীয় ঘূর্ণন বৈশিষ্ট্য। প্লাঙ্কের ধ্রুবক ħ (এইচ স্লাশ) এর পূর্ণ একক বা অর্ধ একক সমূহে স্পিন পরিমাপ করা হয়। প্লাঙ্কের মূল ধ্রুবক ‘ħ’ কে 2π দ্বারা ভাগ করলে ħ এর মান পাওয়া যায়। কণাদের স্পিন হতে পারে oħ, ১ħ, ২ħ প্রভৃতি পূর্ণ সাংখ্যিক এবং (১/২)ħ, (৩/২)ħ, (৫/২) ħ ইত্যাদি বিজোড় অর্ধপূর্ণ সাংখ্যিক। যেসব কণার স্পিন পূর্ণ সংখ্যার তারা বোসন এবং যাদের স্পিন বিজোড় অর্ধপূর্ণ তাদেরকে বলা হয় ফার্মিয়ন।
সুপারনোভা : নির্দিষ্ট কিছু নক্ষত্রের প্রকাণ্ড বিস্ফোরণ। এই বিস্ফোরণের ফলে নক্ষত্রদের বাহিরের অংশ স্ফীত হয়ে যায় এবং অন্তঃস্থল সংকোচিত হয়ে পড়ে। সূর্য কয়েক এক বিলিয়ন বছরে যে পরিমাণ বিকিরণ দেয় সুপারনোভা ঠিক কয়েক দিনেই সমপরিমাণ বিকিরণ দেয়।
স্থির বা অবিচল অবস্থার তত্ত্ব : বন্দি, গোল্ড এবং হোয়েল কর্তৃক গড়ে ওঠা মহাজাগতিক তত্ত্ব। এই তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্বের সর্বত্রে বস্তুর পরিমাণ গড়পড়তায় সমান এবং সময়ের সঙ্গে কখনওই পরিবর্তিত হয় না। প্রতিনিয়ত বস্তুর সৃষ্টি হোক না কেন এ তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্বের প্রসারণ সর্বত্র বস্তুর ঘনত্ব একই অবস্থায় রেখে দেয়।
সুড়ঙ্গকরণ : একটি আণুবীক্ষণিক প্রক্রিয়া যে প্রক্রিয়ায় একটি কণা কোনও বৈদ্যুতিক বিভব বা অন্য কোনও প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে পারে। কোয়ান্টাম বিদ্যার নিয়মানুসারে এই প্রক্রিয়া সংঘটিত হয় তবে চিরায়ত পদার্থবিদ্যা এই সুড়ঙ্গকরণ প্রক্রিয়া মেনে নেয় না।
হিলিয়াম : দ্বিতীয় হালকাতম উপাদান। দুটি প্রোটন ও দুটি নিউট্রন দিয়ে হিলিয়াম কেন্দ্ৰীণ গঠিত। হিলিয়াম কেন্দ্রীণকে আলফা কণা বলা হয়। হিলিয়ামের হিলিয়াম-থ্রি নামক একটি আইসোটোপ রয়েছে। এই আইসোটোপটির কেন্দ্রীণে আছে দুটি প্রোটন ও ১টি নিউট্রন।
হাবলের সূত্র : যে সূত্র বলে গ্যালাক্সির সরণবেগ তার দূরত্বের সমানুপাতিক তাই হাবলের সূত্র। কিন্তু অতি দূরের বা অতি কাছের গ্যালাক্সির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
হাইড্রোজেন : সবচেয়ে হালকা উপাদান। হাইড্রোজেনের পরমাণুতে রয়েছে একটি ইলেকট্রন এবং একটি প্রোটন।
হাইপারবোলিক (অধিবৃত্তীয়) স্পেস : এই স্পেসে ইউক্লেডের জ্যামিতি চরিতার্থ নয়। বিশেষ করে r ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট একটি বৃত্তের ক্ষেত্রফল 4πr^2 এর চেয়ে বেশি হয় এবং এর আয়তন হয় (4/3)πr^2 এর চেয়ে বেশি।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন