৪. কিছু একটা পেয়েছি

নিক পিরোগ

অধ্যায় ১০

“আমি মনে হয় কিছু একটা পেয়েছি,” ন্যাটালি বললেন।

রেডের অন্য ক্রেডিট কার্ডটার স্টেটমেন্ট পেতে দু-ঘন্টার মত সময় লাগে। ন্যাটালি এরপর থেকে সেটার লেনদেনগুলো যাচাই করে দেখছেন।

ইনগ্রিড দৌড়ে গেলো, তার পেছনে কুপার এবং রিভস।

“এই খরচগুলো দেখুন,” ন্যাটালি বললেন, “এয়ার বিএনবি’র উদ্দেশ্যে করা হয়েছে এগুলো।”

কুপার বিভ্রান্ত ভঙ্গিতে তাকালে ইনগ্রিড তাকে বোঝালো, “এয়ার বিএনবি হচ্ছে এয়ার বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট না কী যেন একটা। মূল কথা এটার মাধ্যমে লোকজন তাদের বাসা অপরিচিত লোকদের ভাড়া দিতে পারে।”

তিনি মাথা নাড়লেন।

ন্যাটালি বললেন, “ফেব্রুয়ারির সতের তারিখে সাত হাজার পাঁচশ ডলার পরিশোধ করা হয়েছে।”

“অনেকগুলো টাকা,” কুপা বললেন।

“কোন জায়গার জন্যে এই লেনদেন করা হয়েছে সেটা জানা যাবে?”

এয়ার বিএনবি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা আছে ইনগ্রিডের। হেনরির সাথে আলাস্কার ফেয়ারব্যাঙ্কসে ঘুরতে যাবার আগে অনেকগুলো বাসার খোঁজ নিয়েছিল ওরা এখান থেকে। ও জানে যে শুধু আমেরিকাকাতেই সীমাবদ্ধ না

এয়ার বিএনবি’র কার্যক্রম। পৃথিবীর যে কোন জায়গায় বাসার জন্যে টাকা পাঠাতে পারে রেড।

ন্যাটালি ডেস্কের ওপর রাখা তার ফোনের দিকে নির্দেশ করে বললেন, “সুরটা শুনতে পারছেন আপনারা?”

ফোনের স্পিকার থেকে ভেসে আসা মৃদু সুরটা কানে লাগলো ইনগ্রিডের।

ন্যাটালি খুলে বললেন যে এয়ার বিএনবি’র হটলাইনে ফোন দিয়ে একজনের সাথে কথা বলেছেন তিনি। কিন্তু সে কোন প্রকার তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর ন্যাটালিকে হোল্ডে রেখে উর্ধস্তন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে যায়। সেটাও প্রায় দশ মিনিট আগের কথা।

ইনগ্রিড ঘড়ির দিকে তাকালো।

তিনটা সাতাশ বাজছে।

আর তেত্রিশ মিনিট।

“তুমি কি তাদের বলেছো যে কেন তথ্যটা দরকার আমাদের?” কুপার জিজ্ঞেস করলেন।

“হ্যাঁ। জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে এই বাক্যটাও ব্যবহার করেছি।” রিভস জিজ্ঞেস করলেন, “ওর সার্চ হিস্টোরি দেখেছো?”

ন্যাটালিকে দেখে মনে হলো মজা করা হচ্ছে তার সাথে, “অবশ্যই! সবার প্রথমে সেটাই করি আমি। কিন্তু কিছু পাইনি এয়ার বিএনবি সম্পর্কে।

“তা বুঝলাম। কিন্তু সে তো এখনও ঐ অ্যাকাউন্টে লগইন করা অবস্থায় থাকতে পারে। অনেকেই এরকম করে থাকে। তার ব্রাউজার দিয়ে এয়ার বিএনবি’র পেজে ঢুকে দেখো।”

ন্যাটালি মাথা নিচু করে কাজে লেগে পড়লো। ইনগ্রিড দেখলো মহিলার গাল লাল হয়ে গেছে। তবে কিছু না বলে চুপচাপ এয়ার বিএনবি’র ওয়েব সাইটে ঢুকে পড়লেন তিনি।

রেডের ইউজার নেইম দেখা যাচ্ছে সেখানে, কিন্তু পাসওয়ার্ডের ঘর ফাঁকা।

ধুর!

কুপার ন্যাটালির ফোনটা নিয়ে একই নম্বরে ডায়াল করে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। ঠিকানাটা বের করার চেষ্টা করবেন।

ইনগ্রিড পাসওয়ার্ড বক্সটার দিকে তাকালো। রেডের সাথে খুব কমই কথা হয়েছে ওর। আর প্রতিবারই ওদের পছন্দের খেলার দল রেডস্কিনসদের নিয়ে। এই রেডস্কিনস প্রীতিই রেডের এমন ডাকনামের মূল কারণ।

আর ইনগ্রিডের সকল পাসওয়ার্ড রেডনিসের সাথে কোন না কোন ভাবে যুক্ত।

রেডের ক্ষেত্রেও কি একই কথা প্রযোজ্য?

“রেডস্কিনস চেষ্টা করে দেখুন তো,” ইনগ্রিড বললো।

ন্যাটালি আর রিভস দু-জনই ওর দিকে কৌতূহলি চোখে তাকালেন। ন্যাটালি শব্দটা টাইপ করলেন পাসওয়ার্ড বক্সে। কিন্তু এরপর এন্টার না চেপে অন্য একটা ট্যাব খুলে এয়ার বিএনবি এর পেজে ঢুকে নতুন একটা অ্যাকাউন্ট খোলা শুরু করলেন। ইনগ্রিড প্রথমে বুঝলো না কি করছেন তিনি। কিছুক্ষণ পর বললেন ন্যাটালি, “নুন্যতম একটা সংখ্যা দরকার পাসওয়ার্ডের জন্যে।”

লম্বা একটা শ্বাস নিলো ইনগ্রিড।

একটা সংখ্যা।

“রেডস্কিনস ৭ চেষ্টা করে দেখুন,” ইনগ্রিড বললো। “জো থেইসম্যানের জার্সি নম্বর।”

ন্যাটালি মাথা নাড়লেন, যদিও তাকে দেখে মনে হচ্ছে না জো থেইসম্যান নামের কাউকে চেনেন তিনি। টাইপ করে এন্টার চেপে মাথা নেড়ে না করে দিলেন। ভুল পাসওয়ার্ড।

“আমাকে ঝুলিয়ে রাখবেন না,” কুপারের গলার স্বর কানে আসলো।

ইনগ্রিডের হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয়ে গেছে।

ঘড়ির দিকে তাকালো।

তিনটা একত্রিশ।

উনত্রিশ মিনিট।

রেডের সাথে ওর কথোপকথনের বিষয়ে চিন্তা করতে লাগলো। তিনি বলেছিলেন, জো থেইসম্যান তার প্রিয় খেলোয়াড়।

এছাড়া আর কি বলেছিলেন?

দু-বছর আগে একবার রেডস্কিনস দলের নাম নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিলো পত্র পত্রিকায়। অনেকের মতে রেডস্কিনস নামটা ন্যাটিভ আমেরিকাকানদের জন্যে অপমানজনক। তারা দলটার নাম দিয়েছিলো ‘ওয়াশিংটন ফুটবল টিম। রেডের সাথে যতবার কথা হয়েছে প্রতিবারই দলটাকে ‘ওয়াশিংটন বলেই উল্লেখ করেছিলেন তিনি। ব্যাপারটা একটু অদ্ভুত ঠেকেছিলো ইনগ্রিডের কাছে।

ন্যাটালির উদ্দেশ্যে ঝুঁকে ইনগ্রিড বললো, “ওয়াশিংটন ৭ দিয়ে দেখুন।”

ন্যাটালি টাইপ করার সময় সেদিকে তাকিয়ে থাকলো ও।

ওর দিকে তাকালেন তিনি।

মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো ইনগ্রিড।

“হয়ে গেছে,” উল্লাসে ফেটে পড়লেন।

“সাব্বাশ,” ইনগ্রিডের পিঠ চাপড়ে বললেন রিভস।

ন্যাটালি দ্রুত দেখতে লাগলো রেডের অ্যাকাউন্ট থেকে কোন ঠিকানার জন্যে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

একবার রিফ্রেশ হলো পেজটা।

ঠিকানাটার দিকে তাকিয়ে চোয়াল ঝুলে গেলো ইনগ্রিডের।

“কুপার!” জোরে ডেকে উঠলেন রিভস, “এখানে আসো, দ্রুত!”

হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ঢুকলেন কুপার।

“ঠিকানাটা পেয়ে গেছি আমরা।”

ওর শ্বশুড়ের এলাকার ঠিকানা ওটা।

.

বিলি ওর সামনে থাকা ভিডিও ক্যামেরাটার দিকে তাকালো। একজন অপহরণকারি সবকিছু ঠিকঠাক করছে ওটার। গতবারের চেয়ে এবারের ভিডিওটা ভিন্ন ধরণের হতে যাচ্ছে। এবার নিশ্চয়ই বন্দুকগুলোকে কাজে লাগানো হবে। লাখ লাখ লোক দেখবে যে ওকে মেরে ফেলা হচ্ছে। কোটিও হতে পারে সংখ্যাটা।

প্রেসিডেন্ট ওর উল্টোদিকের দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছেন। ক্যামেরার পেছনের আলোয় তার চেহারাটা পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। গত তিন দিনে বিশ বছর বয়স বেড়ে গেছে তার।

সুলিভানের চেহারা জায়গায় জায়গায় ফুলে গেছে। ডান চোখটা প্রায় বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। সাদা শার্ট রক্তাক্ত। ভালো চোখটা দিয়ে বিলির দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি।

বিলি তার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে মাথা নাড়ার চেষ্টা করলো একবার। বোঝানোর চেষ্টা করলো, চুপচাপ বসে থাকবে না ও। মনে মনে একটা বার্তা পৌঁছুনোর চেষ্টা করলো প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্যে :

‘আট ঘন্টার চেষ্টার পর টেপটা কব্জি থেকে খুলে ফেলতে সক্ষম হই আমি। এরপর টেপের বান্ডিলটা তুলে নিয়ে আবার বেঁধে ফেলি হাত। তবে এবার অনেক ঢিলে করে। যেকোন মুহূর্তে ওগুলো ছিঁড়ে ফেলতে পারবো আমি। শুধু সুযোগের অপেক্ষা।

প্রেসিডেন্টের মাথা নিচু হয়ে গেলো।

কিছু বুঝতে পেরেছেন তিনি?

না, অবশ্যই না।

বিলি দরজার কাছে বসে থাকা অপহরণকারির দিকে তাকালো। বন্দুকটা পায়ের ওপর রাখা তার, এ মুহূর্তে ওর চেয়ে বারো ফিট দূরে সে। বিলি দৌড়ে তার কাছে যাবার আগেই বন্দুক হাতে তুলে নেবার সুযোগ আছে তার। আর ক্যামেরার পেছনের লোকটাকে ইচ্ছে করলে এ মুহূর্তেই ধাক্কা মেরে ফেলে দিতে পারে ও। কিন্তু কোন বন্দুক চোখে পড়ছে না লোকটার কাছে। একে আক্রমন করে নিজেকে আর প্রেসিডেন্টকে বাঁচাতে পারবে ও?

সন্দেহ আছে সে ব্যাপারে।

তবুও সুযোগটা নেবে ভাবছে বিলি।

এ সময় তৃতীয় অপহরণকারি ভেতরে ঢুকলো।

বেশি দেরি হয়ে গেছে।

.

“এই বাসাটায় তো খোঁজ নিয়েছিলাম আমরা, তাই না?” কুপার জিজ্ঞেস করলেন।

“হ্যাঁ,” রিভস বললেন, “কিন্তু কেউ দরজা খোলেনি।”

“তাহলে আশেপাশের প্রতিবেশিদের কিছু জিজ্ঞেস করিনি কেন আমরা? অন্তত সেখানকার বাসিন্দাদের ফোন করে তাদের অবস্থান বের করার চেষ্টা তো করতে পারতাম।”

“কারণ আমাদের মাথায় এটা আসেনি, ওরকম একটা বাসাতে তাদের আটকে রাখা হতে পারে। আমরা শুধু কারও চোখে কিছু পড়েছিল কিনা সেটা সম্পর্কে খোঁজ নেবার জন্যে কড়া নেড়েছিলাম। তাছাড়া শুধু ঐ বাসাটাতেই কেউ দরজা খোলেনি এমন নয়। বিশটা বাসার মধ্যে পাঁচটা বাসা পুরোপুরি ফাঁকা ছিল, কারও আওয়াজ পাওয়া যায়নি। আমরা ভেবে নিয়েছিলাম ঝড়ের জন্য অন্য কোথাও আটকা পড়েছে তারা।”

“এর পরদিন অথবা তার পর দিন খোঁজ নেয়া উচিৎ ছিল আমাদের। বোকার মত ভুল হয়ে গেছে।”

“চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে,” ন্যাটালি খোঁচা মারার স্বরে বললেন। ঠিকই বলেছেন রিভস। ওদের কারও মাথাতেই আসেনি যে ওরকম একটা জায়গায় প্রেসিডেন্টকে লুকিয়ে রাখতে পারে অপহরণকারিরা। অন্তত ওর মনে হয়নি।

কিন্তু হওয়া উচিৎ ছিল।

.

“কত দূর?” কুপার জিজ্ঞেস করলেন।

“বারো মিনিট,” ড্রাইভারের পাশের সিট থেকে বললেন রিভস।

ইনগ্রিড ঘড়ির দিকে তাকালো।

তিনটা একচল্লিশ।

“আরো দ্রুত চালাতে হবে তোমাকে,” রিভস বললেন কুপারের উদ্দেশ্যে।

কুপার চাপ বাড়ালেন গ্যাস প্যাডেলে। শব্দ করে সামনে এগিয়ে গেলো ফোর্ড এক্সপ্লোরারটা। সাত ফুট উঁচু বরফের স্তূপের মধ্য দিয়ে।

“আমরা নিজেরা মারা গেলে কিন্তু ওদের কোন লাভ হবে না,” ন্যাটালি বললেন। ইনগ্রিডের সাথে পেছনের সিটে বসেছেন তিনি। “ফেয়ারফ্যাক্স পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে ফোন করছি না কেন আমরা?”।

কুপার মাথা নেড়ে না করে দিলেন, “তাহলে রাশিয়ানদের সম্পৃক্ততার কথা ফাঁস হয়ে যাবে। কালকের সব খবরের কাগজের প্রধান শিরোনাম হবে ওটা।”

“তাতে কি?” ইনগ্রিড চিল্লিয়ে উঠলো, “বিলি আর সুলিভানকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া এর চেয়ে ভালো?”

“সেটার কারণে যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে রক্ষা করা যায় পৃথিবীকে তাহলে, হ্যাঁ, সেটাই ভালো।”

“ফালতু কথা।”

“যা খুশি বলতে পারো তুমি, কিন্তু আমেরিকাকার বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করতে হবে আমাদের। আর সেখানে তাদের খুঁজে পাবার সম্ভাবনা কতটুকু? পাঁচ ভাগ? দশ? হয়তো তোমার শ্বশুড়ের বাসার ওপর নজর রাখার জন্যে বাসাটা ভাড়া করা হয়েছিল। তাছাড়া আসলেই যদি সেখানে থেকে থাকে তারা, তাহলে আমরাই পুলিশের চেয়ে বেশি সাহায্য করতে পিরবো। একটা সোয়াট দল পাঠাবে ওরা। তখন দেখা যাবে ক্রস ফায়ারে প্রাণ হারিয়েছে বিলি আর প্রেসিডেন্ট সুলিভান।”

কুপারের কথায় যুক্তি আছে। তবুও রাগ কমলো না ইনগ্রিডের।

কুপারের ফোন বেজে উঠলে সেটা রিভসের দিকে ছুঁড়ে দিলেন তিনি।

“ধরো ফোনটা,” বরফ আচ্ছাদিত রাস্তা থেকে চোখ না সরিয়ে বললেন।

রিভস ধরলেন ওটা।

দুই সেকেন্ড ফোনটা কান থেকে নামিয়ে ফেলে বললেন, “বিলি আর সুলিভানকে সরাসরি দেখানো শুরু হয়েছে।” এরপর ন্যাটালিকে ওয়েবসাইটটার ঠিকানা জানালেন তিনি। কয়েক সেকেন্ড পর ন্যাটালির হাতের ট্যাবটাতে ভেসে উঠলো ওয়েবসাইটটার হোম পেজ।

ইনগ্রিড তাকালো সেদিকে। বিলি আর সুলিভান পিঠে দেয়াল ঠেকিয়ে বসে আছেন। বিলিকে কিছুটা ক্লান্ত মনে হলেও অন্য কোন সমস্যা আছে বলে মনে হলো না। কিন্তু প্রেসিডেন্টকে দেখে মনে হচ্ছে চলন্ত বাসের সামনে ছেড়ে দেয়া হয়েছিলো তাকে।

ঘড়ির দিকে তাকালো ইনগ্রিড।

তিনটা চুয়াল্লিশ।

“আর কতদূর?” কুপার জিজ্ঞেস করলেন।

“আট মিনিট,” জবাব দিলেন রিভস, এরপর যোগ করলেন, “ধুর।”

“কি?”

“নেটওয়ার্ক চলে গেছে ফোনের।”

ইনগ্রিড নিজের ফোন বের করে দেখলো।

নেটওয়ার্ক নেই।

“বিদ্যুৎ স্বল্পতার কারণে অনেকগুলো ফোন টাওয়ার বন্ধ হয়ে গেছে, ন্যাটালি বললেন।

ইনগ্রিড ট্যাবটার দিকে তাকিয়ে বললো, “তাহলে ভিডিওটা চলছে কেন?”

ন্যাটালি ওর দিকে তাকিয়ে বললেন, “গাড়িটার নিজস্ব ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা আছে।”

কুপার এসময় বামে মোড় নিলে ইনগ্রিড জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।

ওর কাছে মনে হচ্ছিল যে বেশি জোরে চলছে গাড়ি।

বরফে পিছলিয়ে সামনে এগোনো শুরু করলো ওটা।

“ধরে বসো সবাই,” কুপার চেঁচিয়ে উঠলেন।

গাড়িটা পিছলিয়ে এগোতেই লাগলো, এরপর সামনে রাখা একটা বরফের ঢিবির সাথে ধাক্কা খেলো।

কাত হয়ে গেলো এক পাশে।

তিনটা আটচল্লিশ বাজছে।

*

এগার

আমি আর বাবা রাস্তায় নেমে এসেছি।

বাসাটা দেখা যাচ্ছে, একশ কদম দূরে।

“কয়টা বাজছে?” বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম।

থেমে ঘড়ির দিকে তাকালেন তিনি।

তিনটা উনপঞ্চাশ।

এগারো মিনিট।

তিরিশ সেকেন্ড পরে বাসাটার কাছে পৌঁছে গেলাম আমরা।

“ভেতরে প্রবেশ করবো কিভাবে?” বাবা জিজ্ঞেস করলেন।

সামনের দরজাটা চেষ্টা করে দেখলাম, যদি খুলে যায়। কিন্তু বন্ধ পেলাম সেটা।

“পেছনের দিকে চলুন,” ফিসফিসিয়ে বললাম।

বরফ মারিয়ে পেছনে চলে আসলাম, এরপর বেড়া ডিঙিয়ে পা রাখলাম ভেতরে।

পেছনের কাঁচের স্লাইডিং দরজাটা খুঁজে পেতে দুই মিনিট সময় লাগলো আমাদের।

ওটা ধরে টান দিলেন বাবা

খুলে গেলো এক পাশে।

বাবা প্রথমে ঢুকলেন ভেতরে, নেইল গানটা সামনে বাড়িয়ে রেখেছেন, গুলি চালাতে প্রস্তুত। আমি তার পেছনে, রেঞ্চটা উঁচু করে ধরে রেখেছি।

আমি নিশ্চিত আমাদের দেখতে দু-জন রাজমিস্ত্রির মত লাগছে, আমেরিকাকান বীর নয়।

ডাইনিং রুমের একটা চেয়ারে বেঝে গেলো বাবার পা। শব্দ করে উল্টিয়ে পড়লো ওটা।

শক্ত হয়ে গেলাম আমি।

অপেক্ষায় আছি বেজমেন্টের দরজা খুলে অপহরণকারিদের বন্দুক হাতে বেরিয়ে আসার।

কিন্তু সেরকম কিছু হলো না।

বন্দুক দেখা গেলো ওপরে ওঠার সিঁড়ি থেকে।

“শুয়ে পড়ো এখনি,” কেউ চিল্লিয়ে উঠলো।

লোকটার দিকে তাকালাম আমি।

শ্বেতাঙ্গ। পঞ্চাশের মত হবে বয়স। একটা গেঞ্জি আর শর্টস পরনে। হাতে পিস্তল।

বাবা আর আমি একে অপরের দিকে তাকালাম।

“শুয়ে পড়ো মাটিতে,” আবারো বললেন তিনি।

ওপর তলায় কারও পায়ের আওয়াজ শুনলাম।

“কি হয়েছে জন?” একজন মহিলা জিজ্ঞেস করলেন।

বাবা নেইল গানটা নামিয়ে রেখে চোখ পিটপিট করে তাকালেন। “জন? জন আরভিন?”

লোকটার দৃষ্টি স্থির হলো বাবার ওপর।

“রিচার্ড?” তিনি জিজ্ঞেস করলেন।

বন্দুক নামিয়ে ফেললেন জন।

“আমি ভেবেছিলাম তোমরা চলে গেছো এখান থেকে,” বাবা বললেন, “গত বছরের শেষ দিকে।”

“বাসাটা বিক্রি করতে পারিনি আমরা, তাছাড়া আমার অফিসে-” এটুকু বলে মাথা নাড়লেন তিনি, “এত রাতে চোরের মতো আমার বাসায় ঢুকেছো কেনো তোমরা?”

বাবা যত দ্রুত সম্ভব খুলে বললেন তাকে।

“তোমাদের ধারণা ছিল আমার বাসার বেজমেন্টে আটকে রাখা হয়েছে প্রেসিডেন্টকে?” জিজ্ঞেস করলেন তিনি।

আমি তাকে ছাদ থেকে বরফের চাই পড়ে শব্দ হবার কথা আর মারডকের ভয় পেয়ে ডেকে ওঠার কথা বুঝিয়ে বললাম।

“মনে আছে আমার। তিনরাত আগের কথা, আমার স্ত্রীও ভয় পেয়েছিলো ভীষণ। ওকে বলেছিলেম যে বরফের চাই ভেঙে পড়েছে ছাদ থেকে।”

“কুকুরের ডাক শোনেননি আপনি?”

“আমি ভেবেছিলাম যে প্রতিবেশিদের কুকুরটা ডেকে উঠেছে ভয়ে।”

ভ্রূ উঁচু হয়ে গেলো আমার।

প্রতিবেশি!

বরফের চাইটা জনের বাসার ছাদ থেকে পাশের বাসার সামনে খালি জায়গাটাতে পড়েছিল। দুটো বাসার মধ্যবর্তি দূরত্ব খুব অল্প হওয়াতে ওখান থেকেও নিশ্চয়ই একই পরিমাণ শব্দ শোনা গিয়েছিল।

“আপনার প্রতিবেশি,” পুর্ব দিকে দেখিয়ে বললাম, “তাদের শেষ কবে দেখেছিলেন আপনি?”

“নববর্ষের ছুটির আগে। ছুটিটা সাধারণত ফ্লোরিডাতে কাটায় তারা।”

“ওখানে অন্য কাউকে দেখেছিলেন?”

“এয়ার বিএনবি’র দায়িত্বে বাসাটা দিয়ে গিয়েছিলো তারা। জানুয়ারির প্রথম দু’সপ্তাহে এক দম্পতি ছিল। এরপর দু-জন লোককে দেখেছি কয়েক সপ্তাহ আগে। তোমাদের কি ধারণা? তারাই?”

মাথা নেড়ে সায় জানালাম আমি।

এরপর তার বন্দুকটা চাইলাম।

.

জনের কাছে পাশের বাসার একটা বাড়তি চাবি আছে। ওটার মালিক হেন্ডারসনদের সাথে ভালো খাতির তাদের।

যাওয়ার আগে তাকে জিজ্ঞেস করলাম ফোন কাজ করছে নাকি। মাথা নেড়ে না করে দিলেন তিনি। বললেন, “আমার ছেলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ফোন করতে পারে।”

তাকে ৯১১-এ ফোন দিতে বললাম আমি।

বাবা আর আমি হেন্ডারসনদের ড্রাইভওয়ে ধরে সামনের দরজার কাছে এগিয়ে গেলাম।

তিনটা ছাপ্পান্ন বাজছে।

চার মিনিট আছে আমাদের হাতে।

বিলি আর সুলিভানকে উদ্ধার করার জন্যে।

আর এর মধ্যেই আমাকে একটা ঘুমোনোর জায়গা খুঁজে বের করতে হবে।

ঘটনাটার পরিণতি ভালো হতে যাচ্ছে বলে মনে হয় না।

চাবিটা দরজায় ঢুকিয়ে মোচড় দিলাম।

খুলে গেলো ওটা।

.

গাড়িটা আপনা আপনি সোজা হয়ে গেলো, কিন্তু চার ফিট বরফের মধ্যে আটকে গেছে ওটা।

কুপার গত পাঁচ মিনিট কাটিয়েছেন ইঞ্জিন চালুর চেষ্টা করে। ন্যাটালিকে ড্রাইভারের সিটে বসিয়ে পেছন থেকে ঠেলেছে ওরা তিনজন। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। এক ইঞ্চিও নড়েনি ওটা।

এখানে ভালোমতোই আটকে গিয়েছে ওরা।

একটা ট্যাবের পর্দায় বিলি আর সুলিভানের মৃত্যু দেখতে হবে এখন।

সেখানে দেখা যাচ্ছে, হাটু গেঁড়ে বসে আছে বিলি আর প্রেসিডেন্ট সুলিভান। তাদের মাথায় বন্দুক ধরে রেখেছে অপহরণকারিরা।

আগেরবার যে কথা বলেছিল সেই লোকটাই কথা বলতে শুরু করলো ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে। ওয়েডস এবার নেই আরবি থেকে ইংরেজিতে রূপান্তর করে শোনানোর জন্যে। কিন্তু কথাগুলোর অর্থ বুঝতে বেগ পেতে হলো না ওদের।

সময় শেষ।

.

ইনগ্রিড আমাকে দেখিয়েছিলো কিভাবে বন্দুক ধরতে হয়। যদিও আগে কখনো ব্যবহার করিনি তবুও আমার হাতে অপরিচিত ঠেকলো না ওটার স্বাদ। সেফটি বন্ধ করা আছে কিনা দেখে নিলাম, এরপর সামনের দরজা ঠেলে ঢুকে পড়লাম ভেতরে।

বাবার বাসার চেয়ে খুব বেশি ভিন্ন না এটার নকশা। বেজমেন্টে যাওয়ার দরজার নিচ দিয়ে আলো বের হতে দেখলাম।

ঘাড় ঘুরিয়ে বাবার দিকে তাকালাম।

মাথা নাড়লেন তিনি।

ধীরে ধীরে বেজমেন্টের দরজার হাতল ধরে খুলতে লাগলাম দরজাটা।

.

ঠান্ডা বন্দুকের নল মাথার পেছনে অনুভব করতে পারছে বিলি।

ওর পেছনে একজন অপহরণকারি আর প্রেসিডেন্টের পেছনে। আরেকজন। তৃতীয়জন ভিডিও ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে কথা বলছে জোরে জোরে।

এখন নয়তো কখনোই নয়।

ওর পেছনে দাঁড়ানো লোকটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো ও। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো লোকটার ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়লো সে।

ডিগবাজি খেয়ে সামনে এগিয়ে হাত বাঁধন মুক্ত করে ফেললো। এরপর ধাক্কা দিলো প্রেসিডেন্টের পেছনে দাঁড়ানো অপহরণকারিকে। ঘটনার আকস্মিকতায় বিমূঢ় হয়ে গিয়েছে সে।

.

বেজমেন্টে মৃদু আলো জ্বলছে।

কিন্তু বাবারটার মতো অসম্পূর্ণ না এটা। সবদিকে কংক্রিট চোখে পড়লো।

সিঁড়ি বেয়ে অর্ধেকটা নামার পর কোথাও থেকে গলার স্বর কানে আসলো আমাদের। অপরিচিত ঠেকলো ভাষাটা। কিছুক্ষণ পরে বুঝলাম আরবিতে বলা হচ্ছে। তারমানে বিলি আর সুলিভান নিশ্চিতভাবেই এখানে কোথাও আছে। ভিডিওতে দেখে মনে হয়েছিল কোন বাঙ্কার কিংবা গুহাতে আটকে রাখা হয়েছে তাদের।

যখন নিচে পৌঁছলাম আমরা ঠিক তখনই বন্ধ হয়ে গেলো কথা বলার শব্দ। হুটোপুটির আওয়াজ কানে আসলো আমাদের। মনে হচ্ছে মেঝেতে পড়ে গেছে কেউ।

বন্দুকটা দুই হাতে ধরে সামনে এগিয়ে গেলাম।

শেষ প্রান্তে একটা দরজা দেখা যাচ্ছে।

“এখানেই থাকুন আপনি,” বাবার উদ্দেশ্যে ফিসফিসিয়ে বললাম।

ধাক্কা দিয়ে দরজাটা খুলে ফেললাম আমি। এরপর গুলি চালালাম।

.

“হেনরি!” ইনগ্রিডের গলার স্বর প্রতিধ্বনিত হলো গাড়ির ভেতরে।

বিলির পেছনে লাফিয়ে পড়ার সময় চমকে উঠেছিলো ও। আরও চমকে উঠেছিল যখন উঠে দাঁড়িয়ে এক ঝটকায় হাত খুলে ফেলে সে। কিন্তু এখন…

ওর হেনরি একটা বন্দুক হাতে ভেতরে ঢুকে পড়েছে আর মনে হচ্ছে একজন অপহরণকারিকে গুলিও করেছে।

*

গুলির আওয়াজটা কানে গেলো বিলির। কোথাও নিশ্চয়ই বিঁধেছে ওটা। এরকম আগেও শুনেছে ও যে যুদ্ধের ময়দানে উত্তেজনার বশে অনেকে বুঝতেও পারে না তাদের গায়ে গুলি লেগেছে, কিন্তু পড়ে দেখা যায় গুলি এফোঁড় ওফোঁড় করে বেরিয়ে গেছে।

অপহরণকারির হাতে একটা ছুরি বেরিয়ে এসেছে। ওটা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করতে লাগলো ও। ওর ডানদিকে প্রেসিডেন্ট এখনও হাত পা বাঁধা অবস্থায় হাঁটু গেড়ে বসে আছেন।

লোকটার পায়ের মাঝ বরাবর হাঁটু চালালো বিলি। ছুরিটা পড়ে গেলো মাটিতে। ও সেটা তুলে নিয়ে বসিয়ে দিলো লোকটার গায়ে।

.

চোখের এক পাশ দিয়ে বিলিকে ওর সামনে দাঁড়ানো অহরণকারির গায়ে ছুরি বসিয়ে দিতে দেখলাম।

আমার ছোঁড়া গুলিটা আরেক অপহরণকারির গলায় বিঁধেছে। ওখানটা হাত দিয়ে চেপে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে লোকটা।

তৃতীয় লোকটার দিকে তাকালাম। দাড়িওয়ালা।

তার কাছে কোন অস্ত্র নেই।

“মুখোশ খুলে ফেললো,” চিল্লিয়ে উঠলাম।

আমি সবাইকে দেখাতে চাই যে আসলে কারা আছে এই অপহরণের পেছনে।

বিলি ঘুরে তাকালো আমার দিকে। এখনও মুখ বাঁধা ওর। সেটা খুলে ফেললো ও এক হাত দিয়ে। মাথা এদিক ওদিক ঝাঁকাতে লাগলো অবিশ্বাসে।

ওর কোন দোষ নেই, বেচারা নিশ্চয়ই ভেবেছিলো, ওদের মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। অথচ ওর ধারণাই ছিল না আমার বাবার বাসা থেকে দশটা বাসা দূরে আটিজে রাখা হয়েছে ওদের।

সুলিভানের চেহারাতেও একই ভাবভঙ্গি।

“হেনরি?” বিলি জিজ্ঞেস করলো।

“ঠিক আছে তো?”

আবার অপহরণকারির দিকে দৃষ্টি ফেরালাম আমি।

“মুখোশ খুলে ফেলল,” পুনরায় বললাম।

কথা শুনলো না লোকটা।

ওর কাঁধের ওপর দিয়ে গুলি চালালাম। দরজায় গিয়ে বাঁধলো ওটা।

“খুলতে বললাম না মুখোশ!”

খুলে ফেললো সে।

মুখের দাড়ি সত্ত্বেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে আরবিয় নয় লোকটা।

বরং শ্বেতাঙ্গ মনে হচ্ছে।

“এরা আরবিয় না,” বিলির উদ্দেশ্যে বললাম, “রাশিয়ান!”

বিস্ময় ফুটে উঠলো বিলির চোখেমুখে। কিন্তু প্রেসিডেন্টের মুখভঙ্গির তুলোনায় সেটা কিছুই নয়।

“ওনার মুখের বাঁধন খুলে দাও,” বিলিকে বললাম।

এ সময় দেখলাম রাশিয়ান লোকটা তার হাত পেছনের দিকে নিচ্ছে। ঝটকা মেরে সামনে নিয়ে আসলো সেটা পরক্ষণেই। ধাতব কিছু চকচক করছে সেখানে।

এসময় রাজ্যের অন্ধকার নেমে আসলো আমার চোখে।

চারটা বাজছে।

আমার সময় শেষ।

.

হেনরিকে হাঁটু ভেঙে পড়ে যেতে দেখলো ইনগ্রিড। বন্দুকটা ছিটকে গেলো হাত থেকে।

“ওহ্ ঈশ্বর,” চেঁচিয়ে উঠলেন ন্যাটালি।

“কি হলো?” রিভস জিজ্ঞেস করলেন। “গুলি লেগেছে নাকি?”

না।

ওর সময় শেষ।

“থামো!” বিলির উদ্দেশ্যে বললো রাশিয়ান লোকটা। হাতে বেরিয়ে এসেছে বন্দুক।

কিছুক্ষণের জন্যে থেমে গেলো বিলি। হেনরির দিকে একবার তাকিয়ে আবার লোকটার দিকে তাকালো। ইনগ্রিড জানে কি ভাবছে বিলি-যদি দু সেকেন্ড আগে ট্রিগার টেনে দিতো হেনরি!

“তুমি রাশিয়ান?” বিলি জিজ্ঞেস করলো।

দাড়িওয়ালা অপহরণকারি মুচকি হাসতে লাগলো।

“পুতিন একটা বেজন্মা!”

ইনগ্রিডের বুঝতে কিছুটা সময় লাগলো, বিলি বলেনি কথাটা।

সুলিভান বলেছেন।

বিলি তার মুখ থেকে টেপ খুলে ফেলতে সক্ষম হয়েছিল।

সামনের সিট থেকে কুপার একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, “তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।”

ঠিকই বলেছেন তিনি। প্রায় এক কোটি লোক সরাসরি দেখছিল ভিডিওটা। আর এর পরের দু’দিনে পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ দেখবে ওটা।

পুতিন একটা বেজন্ম।

তিনটা শব্দ যেগুলো আবার স্নায়ুযুদ্ধের নিভে আসা আগুনে ঘি ঢেলে দিলো।

রাশিয়ান লোকটা সুলিভানের বুক বরাবর বন্দুক তাক করে গুলি চালিয়ে দিলো। লুটিয়ে পড়লেন তিনি।

চিৎকার করে উঠলেন ন্যাটালি।

.

একজনের ছায়া দেখা গেলো পর্দায়।

“এটা কে?” রিভস জিজ্ঞেস করলেন।

কষ্টে হাসি চাপলো ইনগ্রিড।

রিচার্ড।

ওর শ্বশুর।

হাতে কিছু একটা ধরে রেখেছেন তিনি।

একটা বিশাল বন্দুক।

“ওটা কি একটা নেইল গান নাকি?” কুপার জিজ্ঞেস করলেন।

তার ধারণা ঠিক।

ওটা অপহরণকারির দিকে তাক করে রেখেছেন তিনি।

“বন্দুক ফেলে দাও,” বললেন রিচার্ড।

লোকটা হেসে উঠলো।

সে বোধহয় জানে যে ওটা আসল বন্দুক নয়।

“আমি গুলি করবো কিন্তু!” ওর শ্বশুর চিল্লিয়ে উঠলেন।

আসলেও তাই করলেন তিনি।

অপহরণকারি লোকটা এক হাতে চেপে ধরলো তার চেহারা।

এক চোখে পেরেক গেঁথে গেছে।

এরপর আরেকটা বিধে গেলো তার গায়ে।

আরেকটা।

বিলি লাফিয়ে পড়ে হেনরির বন্দুকটা তুলে নিয়ে গুলি চালালো লোকটার কপাল বরাবর।

*

বারো

“আরেকবার,” ইনগ্রিডকে বললাম।

দুই মিনিট পিছিয়ে দিলো ও।

ভিডিওটা তিন কোটি বারের বেশি দেখা হয়েছে।

গ্যাংনাম স্টাইলকে ছাড়িয়ে গেছে।

প্লে বাটনে চাপ দিলো ইনগ্রিড।

দেখলাম মেঝেতে লুটিয়ে পড়োছি আমি।

আটচল্লিশ ঘন্টা পরেও ঘাড়ে ব্যথা করছে আমার।

অবশ্য সেটার খুব একটা অসুবিধে হয়নি আমার আর ইনগ্রিডের। এখনও বিছানাতেই আমরা। জড়াজড়ি করে শুয়ে আছি। ল্যাপটপটা আমার পেটের ওপর রাখা। পর্দায় দেখলাম বিলি আর সুলিভানের দিকে তাকিয়ে আছে রাশিয়ান লোকটা। এরপরেই বিখ্যাত শব্দ তিনটা বললেন সুলিভান। যে শব্দ তিনটা আলোড়ন তুলেছে বিশ্ব জুড়ে।

পুতিন অবশ্য সুলিভানের অপহরণের সাথে সম্পৃক্ততার সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অনেকেই অপহরণকারি তিনজনকে তার লোক বলে আখ্যায়িত করছেন। তবে সেটা আমলেই নিচ্ছেন না তিনি। কিন্তু সুলিভানের বাক্যটা যে বিচলিত করেছে তাকে সেটা বোঝা গেছে স্পষ্ট। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু না হলেও সেটার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।

পর্দায় লুটিয়ে পড়লেন সুলিভান।

তার বুকে বিঁধেছিল গুলিটা। ডান ফুসফুসে।

সৌভাগ্যবশত জন আরভিনের ছেলে পুলিশকে ফোন দিতে পেরেছিলো। এক মিনিট পরেই হাজির হয় তারা। সুলিভানকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জরুরি অস্ত্রোপচার চালানো হয় বুকে। এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থা প্রেসিডেন্টের।

যদি বেঁচে যান তাহলে আসন্ন নভেম্বরের নির্বাচনে জিততে কোন সমস্যাই হবে না তার। অপহরণ, ঐ তিনটা শব্দ আর মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসার কারণে বেসরকারি পোল গুলোতে তার রেটিং বেড়ে গেছে বিয়াল্লিশ শতাংশ।

বাবাকে পর্দায় দেখা গেলো এ সময়। মুখ আপনা আপনি হাসি হাসি হয়ে উঠলো আমার।

“কি একটা জিনিস ধরে আছেন তিনি!” ইনগ্রিড মাথা ঝাঁকিয়ে বললো।

নেইল গানটা দুহাত দিয়ে ধরে সামনে বাড়িয়ে রেখেছেন বাবা।

“কি? তোমাদের একাডেমিতে এভাবে বন্দুক ধরা শেখায় না?”

হেসে উঠলো ইনগ্রিড।

পর্দায় চোখ চেপে ধরলো অপহরণকারি।

“একদম চোখের মধ্যেখানে,” বললাম।

আরো তিনবার গুলি চালিয়ছিলেন বাবা। গুলি না তো, পেরেক।

তখনই বন্দুকটা তুলে নেয় বিলি।

দুই সেকেন্ড পরে শেষ হয়ে যায় ভিডিওটা।

“আবার?” জিজ্ঞেস করলো ইনগ্রিড।

বিছানার পাশের টেবিলের ওপর রাখা ঘড়িটার দিকে তাকালাম।

তিনটা তেইশ।

আমি মাথা নেড়ে না করে দিলে ল্যাপটপটা বন্ধ করে রাখলো ইনগ্রিড।

আমার অ্যাপার্টমেন্টে এটা প্রথম রাত আমাদের। আগের রাতটা বনির ওখানে কাটিয়েছিলাম আমরা। মাত্র দু’মিনিট খুব কষ্ট করে চোখ খোলা রাখতে পেরেছিল ইনগ্রিড। টানা চার দিন অল্প ঘুমানোর কারণে প্রভাব পড়েছে শরীরে।

অবশ্য ঘুমোনোর আগে আমাকে জানিয়েছিল, কিভাবে ওরা ধরতে পারে যে, রেড ফাঁস করেছিলো প্রেসিডেন্টের অবস্থান। এরপর এয়ার বিএনবি’র অ্যাকাউন্টে ঢুকে ঠিকানা জানতে পারে। সেখানে যাওয়ার পথে গাড়ি উল্টে যায় ওদের। বিলি আর সুলিভানের সাথে পর্দায় আমাকে দেখে চমকে উঠেছিলো ভীষণ।

বাকি ঘটনা তো আপনারা জানেনই।

আমার এখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, রেড অমন একটা কাজ করেছে।

কিন্তু তিনি ছাড়া অন্য কারো তো জানার কথা নয়, আমার বিয়েতে আসছেন প্রেসিডেন্ট।

এটা থেকে ব্যাখা পাওয়া যায় কেন আমাকে কিছু করেনি লোকগুলো। রেড নিশ্চয়ই আমার অবস্থার কথা তাদের জানিয়েছিল আগেই। আমাকে হুমকি মনে হয়নি তাদের। কিন্তু রেডের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তারা। আমার সাথেও অমন কিছু হতে পারতো।

“আমাকে অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে এসেছে কে?” জিজ্ঞেস করলাম।

“বিলি।”

মাথা নেড়ে বললাম, “ওর কি অবস্থা?”

“প্রথম দিকে বেশ নাজুক অবস্থায় ছিল। কিন্তু বাসায় গিয়ে গোসল সেরে পরিবারের সবার সাথে কথা বলে আবার ঘটনাস্থলে ফিরে আসে ও। তারপর খুলে বলে সব।”

“ঐ আসল বীর।”

“হ্যাঁ, বেশ শক্ত ছেলেটা। তোমাকে ওর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাতে বলেছে জীবন বাঁচানোর জন্যে।”

হেসে উঠলাম, “বাবাকে ধন্যবাদ জানাতে বলো।” ক্যাপ্টেন নেইল গান।

“সেটা করবে ও। তোমার বাবাকে নতুন কার্পেট লাগাতে সাহায্য করবে কিছুদিনের মধ্যেই।”

বিছানা থেকে উঠে পড়লো ইনগ্রিড।

মুগ্ধ নয়নে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম আমি।

তাড়াতাড়ি একটা গাউন গায়ে চাপিয়ে নিলো ও, এরপর আমার দিকে ভ্রূ কুঁচকে তাকালো।

“বলতো কি করিনি আমরা?” জিজ্ঞেস করলো।

খাওয়া দাওয়া করিনি। বাথরুমে যাইনি, ব্রাশও করিনি।

“জানি না।”

“বিয়ের উপহারগুলো খোলা হয়নি!” উল্লাসের সাথে বলে উঠলো ও। এরপর দরজা খুলে বের হয়ে গেলো ঘর থেকে।

মাথা নেড়ে হেসে উঠলাম।

“কি খবর তোদের?” ওর চিকন গলার আওয়াজ ভেসে আসলো বাইরে থেকে। ল্যাসি আর আর্চির সাথে এভাবেই কথা বলে ও। “দুঃখিত, তোদের ঘরে ঢুকতে দেইনি। বাবা মার একটু একান্ত সময় দরকার ছিল।”

“একান্ত সময়!” হেসে উঠলাম।

কিছু পরে ল্যাসি লাফিয়ে উঠে পড়লো বিছানায়।

ওর ঠিক পেছনে আর্চি।

দু-জনেই আমার বুকের ওপর উঠে গেলো।

আর্চি আমার গাল চেটে দিতে শুরু করলো।

“হয়েছে হয়েছে। বুঝেছি, আমার কথা অনেক মনে পড়েছে তোর।”

ল্যাসি আমার মুখের কাছে এসে বসলো। মিয়াও।

“দেখবি?”

মিয়াও।

“না, এর পরের বার কিছু দেখতে পারবি না তুই।” ওর চোখের সামনে হাত নিয়ে গেলাম, এটা একদমই পছন্দ না ব্যাটার। আমার হাতে থাবা দিয়ে আস্তে করে কামড় বসালো।

আর্চিও আক্রমন করলো আমাকে।

এরকম আরো কিছুক্ষণ হুটোপুটি করি আমরা। ইনগ্রিড ফেরত আসলো এই সময়। এক হাতে উপহারের ব্যাগ আরেক হাতে নাচোসের প্লেট।

“নাচোস?” জিজ্ঞেস করলাম।

“অন্য কিছু খাওয়ার মত খুঁজে পেলাম না,” হাসিমুখে বললো ও। “তোমারও দোকানে যাওয়া উচিৎ মাঝে মাঝে।”

“আমার স্ত্রীই দোকানে যায়।”

“তোমার স্ত্রী দুটো দোকানে গিয়েছিল গতকাল কিন্তু বন্ধ ছিল ওগুলো। তৃতীয়টাতে এত ভিড় ছিল যে গুলি ছুঁড়তে ইচ্ছে হয়েছিল তার।”

তুষার ঝড়ের পর প্রায় ছয় দিন অতিক্রান্ত হয়েছে। এতদিনে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে সবকিছু।

“ইসাবেল ইমেইলে জানিয়েছে যে কালকে থেকে কাজে ফিরবে সে,” বললাম।

“যাক,” একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো ইনগ্রিড। এরপর ব্যাগটা নিচে নামিয়ে রেখে আমার মুখে একটা নাচোস তুলে দিলো। ওড় হাতের দিকে তাকিয়ে থাকলাম, একটা বড় আঙটি শোভা পাচ্ছে সেখানে।

সবার হারানো জিনিসপত্র খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল বাসাটা থেকে। ফোনগুলো একটা বালতিতে পানির ভেতর চুবানো ছিলো।

ও বিছানায় বসলে ল্যাসি ওর কোলে উঠে গেলো।

“ও জানতে চেয়েছে, পরেরবার দেখতে পারবে কি না,” ওকে বললাম আমি।

“তুই একটা,” ল্যাসির দিকে আঙুল তুলে হেসে ফেললো ইনগ্রিড।

ওটা চেটে দিলো ল্যাসি। পরের পাঁচ মিনিট খাওয়া দাওয়া করলাম সবাই।

আর্চি নাচোসের প্লেটের দিকে প্রথমে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো। ছোট একটা কামড় দেয় শুরুতে, এরপরে আগ্রহ নিয়ে খাওয়া শুরু করে।

“ঠিক আছে তাহলে, দেখা যাক কি কি উপহার পেয়েছি আমরা,” এই বলে উপহারের ব্যাগটা উপুড় করে ধরলো ইনগ্রিড। চারটা বড় গিফট আর অন্য সবগুলো খাম।

ইসাবেল একটা বড় ব্লেন্ডার সেট দিয়েছে আমাদের। বনি দিয়েছে। কোহল’স এর গিফট কার্ড।

“ওখান থেকে রান্নাঘরের জিনিস পত্র কিনতে পারি আমরা, ইনগ্রিড বললো।

“তুমি তো রান্না পারো না।”

“শিখে নেবো। তখন আর ইসাবেলকে দরকার হবে না তোমার।”

হেসে উঠলাম দু-জনেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইসাবেলকে আমার চেয়ে বেশি দরকার হয় ইনগ্রিডের। এতটাই যে ওর বেতন চল্লিশ শতাংশ বাড়াতে হয়েছে আমাকে।

আর্চি ঝাঁপিয়ে পড়েছে ব্লেন্ডার সেটটার প্যাকেটের ওপর। ওর নতুন হদূর্গ।

আমার গালে একবার চুমু খেয়ে আবার উপহারের দিকে মনোযোগ দিলো ইনগ্রিড।

ওর বাবা-মা নগদ টাকা দিয়েছেন আর বোন দিয়েছে একটা টোস্টার।

বিলি কিছু উদ্ভট সসেজ আর পনির দিয়েছে আমাদের। ওর বান্ধবিরা দিয়েছে দু-জনের বাথরোবের সেট।

একটা গায়ে চাপালাম আমি।

“এটা থেকে বের হবো বলে মনে হয় না, আরও আগেই বাথরোব কেনা উচিৎ ছিল আমার।

এসময় একটা কার্ড তুলে নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ইনগ্রিড।

ওটা যে ওর ক্যাপ্টেন দিয়েছেন সেটা না দেখেও বুঝতে পারলাম।

“আর দুদিন পরে তার শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান,” চোখ মুছে বললো ও।

“আমার পক্ষ থেকে সমবেদনা জানিয়ে তার পরিবারকে।”

মাথা নেড়ে ঘড়ির দিকে তাকালো ও।

তিনটা তেতাল্লিশ বাজছে।

আমি জানি কি ভাবছে ও। সারাদিন পড়ে আছে ওর দুঃখ করার জন্যে। এই সময়টুকু একান্তই আমাদের।

“মন খারাপ করো না,” বললাম।

ওর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। শেষ উপহারটা তুলে নিলো।

“এটায় শুধু তোমার নাম লেখা,” বললো ও।

ওটা নিলাম ওর হাত থেকে। ছোট বাক্সটা, আয়তাকার। অনেকটা কলমের বাক্সের মত।

“কে দিয়েছে এটা?” জিজ্ঞেস করলাম।

কাঁধ নাচালো ও।

র‍্যাপিং পেপারটা ছিঁড়ে ফেললাম।

ছোট্ট সাদা বাক্সটার ঢাকনা খুলে ভেতরে উঁকি দিলাম। দুই সেকেন্ড তাকিয়ে থাকলাম ভেতরের জিনিসগুলোর দিকে।

এরপর চোখ বড় করে ইনগ্রিডের দিকে তাকালাম।

মাথা নেড়ে সায় জানালো ও।

বাক্সটার ভেতরে একটা প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট।

“আমরা বাবা-মা হতে চলেছি,” বললো ও।

.

দরজার সামনে গিয়ে ডাকা শুরু করলো মারডক।

“চুপ কর, কলিংবেলের শব্দ আগে শুনিসনি নাকি?” রিচার্ড বিনস বললেন।

ঘড়ির দিকে তাকালেন তিনি।

সকাল দশটা পঁয়তাল্লিশ।

বিলি বলেছিল যে দুপুরের দিকে আসবে। হয়তো তাড়াতাড়িই এসে পড়েছে ছেলেটা।

দরজাটা খুলে ফেললেন রিচার্ড।

একজন পুরুষ আর একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন সিঁড়িতে।

গত দু-দিন যাবত সংবাদ চ্যানেলের ভ্যানে ছেয়ে গেছে সামনের রাস্তাটা। আমেরিকাকার সব চ্যানেল প্রেসিডেন্টকে যেখানে বন্দি করে রাখা হয়েছিল সেটা সরাসরি দেখাতে চায়।

“যদি সাক্ষাৎকারের জন্যে এসে থাকেন,” রিচার্ড বললেন, “তাহলে হতাশ হতে হবে আপনাদের।”

মহিলাটা মাথা নেড়ে না করে দিয়ে বললো, “আমরা রিপোর্টার না।”

একটা ব্যাজ বের করলেন তিনি।

সেটা দেখলেন রিচার্ড।

ইউনাইটেড স্টেটস আর্মি ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন কমান্ড।

জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন রিচার্ড, “প্রেসিডেন্টের অপহরণের ব্যাপারে যে আপনাদের আগ্রহ আছে সেটা জানতাম না।”

“সে ব্যাপারে আগ্রহ নেই আমাদের,” লোকটা বললো।

রিচার্ডের আগেই বোঝা উচিৎ ছিল।

লোকটার দাঁড়ানোর ভঙ্গি। ছোট করে ছাটা চুল।

“আপনি জানেন কেন এসেছি আমরা,” মহিলাটা বললো।

তিনি জানেন।

এই দিনটার জন্যে গত চল্লিশ বছর ধরে অপেক্ষা করছেন তিনি।

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, “আমাকে কিভাবে খুঁজে পেলেন আপনারা?”

একে অপরের দিকে তাকালো সামনে দাঁড়ানো দু-জন।

“সেটা জরুরি না,” লোকটা বললো।

কিন্তু রিচার্ড জানেন। হাতের ছাপ দিতে হয়েছিলো তাকে প্রেসিডেন্ট অপহৃত হবার পর।

“আমাদের সাথে আসতে হবে আপনাকে,” মহিলাটা বললো তার উদ্দেশ্যে।

“ঠিক আছে।”

ঘুরে দাঁড়ালেন তিনি।

মারডক বসে আছে তার পেছনে।

চোখ বড় বড় হয়ে আছে ওর। বুঝতে পেরেছে, কোন সমস্যা হয়েছে।

“সমস্যা হবে না কোন। বনি খেয়াল রাখবে তোর। এরপর ল্যাসি আর আর্চির সাথে গিয়ে থাকতে পারবি।”

একবার লেজ নাড়লো মারডক জবাবে।

রিচার্ড ঘুরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কি অভিযোগ আনা হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে?”

“দেশদ্রোহিতা, কঠোর স্বরে জবাব দিলো লোকটা, “আর খুন।”

অধ্যায় ৪ / ৪

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন