শ্রীকান্ত – ৩য় পর্ব – ১৫ (শেষ)

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

পনর

সন্ন্যাসী বজ্রানন্দ তাহার ঔষধের বাক্স ও ক্যাম্বিসের ব্যাগ লইয়া যেদিন বাহির হইয়া গেল সেদিন শুধু যে সে এ বাড়ির সমস্ত আনন্দটুকুই ছাঁকিয়া লইয়া গেল তাই নয়, আমার মনে হইল যেন সে সেই শূন্য স্থানটুকু ছিদ্রহীন নিরানন্দ দিয়া ভরিয়া দিয়া গেল। ঘন শৈবাল-পরিব্যাপ্ত জলাশয়ের যে জলটুকু তাহার অবিশ্রান্ত চাঞ্চল্যের অভিঘাতে আবর্জনামুক্ত ছিল, সে যেন তাহার অন্তর্ধানের সঙ্গে সঙ্গেই লেপিয়া একাকার হইতে চলিল। তবুও ছয়-সাতদিন কাটিয়া গেল। রাজলক্ষ্মী প্রায় সারাদিনই বাড়ি থাকে না। কোথায় যায়, কি করে জানি না, জিজ্ঞাসাও করি না। দিনান্তে একবার যখন দেখা হয় তখন হয় সে অন্যমনস্ক, নাহয় বড় কুশারীঠাকুর সঙ্গে থাকেন, কাজের কথা চলে। একলা ঘরের মধ্যে, যে আনন্দ আমার কেহ নয়, তাকেই বার বার মনে পড়ে। মনে হয় হঠাৎ যদি সে আবার আসিয়া পড়ে! শুধু কেবল আমিই খুশি হই তাই নয়, ওই যে রাজলক্ষ্মী বারান্দার ওধারে বসিয়া প্রদীপের আলোকে কি একটা করিবার চেষ্টা করিতেছে, আমি জানি, সেও তেমনি খুশি হইয়া উঠে। এমনিই বটে! একদিন যাহাদের উন্মুখ যুগ্মহৃদয় বাহিরের সর্ববিধ সংস্রব পরিহার করিয়া একান্ত সম্মিলনের আকাঙ্ক্ষায় ব্যাকুল হইয়া থাকিত, আজ ভাঙ্গনের দিনে সেই বাহিরটাকেই আমাদের কত বড়ই না প্রয়োজন! মনে হয়, যে-কেহ হোক, একবার মাঝখানে আসিয়া দাঁড়াইলে যেন হাঁফ ফেলিয়া বাঁচি।

এম্‌নি করিয়া দিন যখন আর কাটিতে চাহে না, তখন হঠাৎ একসময়ে রতন আসিয়া সম্মুখে উপস্থিত হইল। মুখের হাসি সে আর চাপিতে পারে না। রাজলক্ষ্মী গৃহে ছিল না, অতএব তাহার ভীত হইবারও আবশ্যক ছিল না, তথাপি সে সাবধানে চারিদিকে দৃষ্টিপাত করিয়া আস্তে আস্তে বলিল, শোনেন নি বুঝি?

কহিলাম, না।

রতন বলিল, মা দুর্গা করুন মায়ের এই মতিটি যেন শেষ পর্যন্ত বজায় থাকে। আমরা যে দু-চারদিনেই যাচ্চি।

কোথায় যাচ্চি?

রতন আর একবার দ্বারের বাহিরে নিরীক্ষণ করিয়া লইয়া কহিল, সে খবরটা সঠিক এখনো পাইনি। হয় পাটনায়, নাহয় কাশীতে, নাহয়কিন্তু এ ছাড়া মার বাড়ি ত আর কোথাও নেই!

চুপ করিয়া রহিলাম। আমার এতবড় ব্যাপারেও নিরুৎসুকতা লক্ষ্য করিয়া বোধ হয় সে ভাবিল আমি তাহার কথা বিশ্বাস করিতে পারি নাই, তাই সে চাপা গলায় সমস্ত শক্তি নিয়োগ করিয়া বলিয়া উঠিল, আমি বলচি এ সত্যি। যাওয়া আমাদের হবেই। আঃবাঁচা যায় তাহলে, না?

বলিলাম, হাঁ।

রতন অত্যন্ত খুশি হইয়া বলিল, কষ্ট করে আর দু-চারদিন সবুর করুন, ব্যস্‌। বড়জোর হপ্তাখানেক, তার বেশি নয়। গঙ্গামাটির সমস্ত ব্যবস্থা মা কুশারীমশায়ের সঙ্গে শেষ করে ফেলেছেন, এখন বেঁধেছেঁদে নিয়ে একবার দুর্গা দুর্গা বলে পা বাড়াতে পারলে হয়। আমরা হলুম সব শহরের মানুষ, এখানে কি কখনো মন বসে? এই বলিয়া সে খুশির আবেগে উত্তরের জন্য প্রতীক্ষা না করিয়াই বাহির হইয়া গেল।

রতনের অজানা কিছুই নাই। তাহাদেরই মত আমিও যে একজন রাজলক্ষ্মীর অনুচরের মধ্যে, এবং ইহার অধিক কিছু নয় এ কথা সে জানে। সে জানে, কাহারও কোন মতামতেরই মূল্য নাই, সকলের সমস্ত ভাল লাগা-না-লাগা কর্ত্রীর ইচ্ছা ও অভিরুচির ‘পরেই নির্ভর করে।

যে আভাসটুকু রতন দিয়া গেল সে নিজে তাহার মর্ম বুঝে না, কিন্তু তাহার বাক্যের সেই নিহিত অর্থ দেখিতে দেখিতে আমার চিত্তপটে সর্বদিক দিয়া পরিস্ফুট হইয়া উঠিল। রাজলক্ষ্মীর শক্তির অবধি নাই, এই বিপুল শক্তি দিয়া পৃথিবীতে সে যেন কেবল নিজেকে লইয়াই খেলা করিয়া চলিয়াছে। একদিন এই খেলায় আমার প্রয়োজন হইয়াছিল, তাহার সেই একাগ্র বাসনার প্রচণ্ড আকর্ষণ প্রতিহত করিবার সাধ্য আমার ছিল না, হেঁট হইয়া আসিয়াছিলাম। আমাকে সে বড় করিয়া আনে নাই। ভাবিতাম, আমার জন্য সে অনেক স্বার্থ বিসর্জন দিয়াছে। কিন্তু আজ চোখে পড়িল ঠিক তাহাই নয়। রাজলক্ষ্মীর স্বার্থের কেন্দ্রটা এতকাল দেখি নাই বলিয়াই এরূপ ভাবিয়া আসিয়াছি। বিত্ত, অর্থ, ঐশ্বর্যঅনেক কিছুই সে ত্যাগ করিয়াছে, কিন্তু সে কি আমারই জন্য? আবর্জনাস্তুপের মত সে-সকল কি তাহার নিজের প্রয়োজনেরই পথ রোধ করে নাই? আমি এবং আমাকে লাভ করার মধ্যে যে রাজলক্ষ্মীর কতবড় প্রভেদ ছিল সেই সত্য আজ আমার কাছে প্রতিভাত হইল। আজ তাহার চিত্ত ইহলোকের সমস্ত পাওয়া তুচ্ছ করিয়া অগ্রসর হইতে উদ্যত হইয়াছে। তাহার সেই পথ জুড়িয়া দাঁড়াইবার স্থান আমার নাই। অতএব অন্যান্য আবর্জনার মত আমাকেও যে এখন পথের একধারে অনাদরে পড়িয়া থাকিতে হইবে, তাহা যত বেদনাই দিক, অস্বীকার করিবার পথ নাই। অস্বীকার করিও না কখনও।

পরদিন সকালেই জানিতে পারিলাম ধূর্ত রতন তথ্য যাহা সংগ্রহ করিয়াছিল তাহা ভ্রান্ত নহে। গঙ্গামাটি-সম্পর্কীয় যাবতীয় ব্যবস্থাই স্থির হইয়া গিয়াছিল। রাজলক্ষ্মীর নিজের মুখেই তাহা অবগত হইলাম। প্রভাতে নিয়মিত পূজা-আহ্নিক সমাধা করিয়া সে অপরাপর দিনের মত বাহির হইল না। ধীরে ধীরে আমার কাছে আসিয়া বসিল, কহিল, পরশু এমনি সময়ে যদি খাওয়া-দাওয়া শেষ ক’রে আমরা বার হয়ে যেতে পারি ত সাঁইথিয়ায় পশ্চিমের গাড়ি অনায়াসে ধরতে পারব, কি বল?

বলিলাম, পারবে।

রাজলক্ষ্মী কহিল, এখানকার বিলি-ব্যবস্থা ত একরকম শেষ করে ফেললাম। কুশারীমশাই যেমন দেখছিলেন শুনছিলেন, তেমনই করবেন।

কহিলাম, ভালই হ’ল।

রাজলক্ষ্মী ক্ষণকাল মৌন হইয়া রহিল। বোধ হয় প্রশ্নটা ঠিকমত আরম্ভ করিতে পারিতেছিল না বলিয়াই শেষে কহিল, বঙ্কুকে চিঠি লিখে দিয়েচি, সে একখানা গাড়ি রিজার্ভ করে স্টেশনেই উপস্থিত থাকবে। কিন্তু থাকে তবেই ত!

বলিলাম, নিশ্চয় থাকবে। সে তোমার আদেশ লঙ্ঘন করবে না।

রাজলক্ষ্মী কহিল, না, সাধ্যমত করবে না। তবুওআচ্ছা, তুমি কি আমাদের সঙ্গে যেতে পারবে না?

কোথায় যাইতে হইবে এ প্রশ্ন করিতে পারিলাম না। মুখে বাধিল। কেবল বলিলাম, যদি যাবার প্রয়োজন মনে কর ত যেতে পারি।

ইহার প্রত্যুত্তরে রাজলক্ষ্মীও কিছু বলিতে পারিল না। অনেকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া হঠাৎ একসময়ে ব্যস্ত হইয়া উঠিল, কৈ, তোমার চা এখনো ত আনলে না?

কহিলাম, না, বোধ হয় কাজে ব্যস্ত আছে।

বস্তুতঃ চা আনিবার সময় বহুক্ষণ উত্তীর্ণ হইয়া গিয়াছিল। পূর্বেকার দিনে ভৃত্যদের এতবড় অপরাধ সে কিছুতেই মার্জনা করিতে পারিত না, বকিয়া ঝকিয়া তুমুল কাণ্ড করিয়া তুলিত, কিন্তু এখন কি-একপ্রকারের লজ্জায় সে যেন মরিয়া গেল এবং একটা কথাও না কহিয়া দ্রুতপদে ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল।

নির্দিষ্ট দিনে যাত্রার পূর্বাহ্নে সকল প্রজারা আসিয়াই ঘেরিয়া দাঁড়াইল। ডোমেদের মালতী মেয়েটিকে আর একবার দেখিবার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু এ গ্রাম ত্যাগ করিয়া তাহারা অন্যত্র গিয়া সংসার পাতিয়াছিল, দেখা হইল না। খবর পাইলাম, সেখানে স্বামী লইয়া সে সুখে আছে। কুশারী-সহোদরযুগল রাত্রি থাকিতেই সপরিবারে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তাঁতিদের সম্পত্তি-ঘটিত বিবাদের সুমীমাংসা হওয়ায় তাঁহারা আবার এক হইয়াছিলেন। কি করিয়া যে রাজলক্ষ্মী কি করিল, সবিস্তারে জানিবার কৌতূহলও ছিল না, জানিও না। কেবল এইটুকু তাঁহাদের মুখের প্রতি চাহিয়া জানিতে পারিলাম যে, কলহের অবসান হইয়াছে, এবং পূর্বসঞ্চিত বিচ্ছেদের গ্লানি কোন পক্ষের মনেই আর বিদ্যমান নাই।

সুনন্দা আসিয়া তাহার ছেলেকে লইয়া আমাকে প্রণাম করিল; কহিল; আমাদের যে আপনি শীঘ্র ভুলে যাবেন না সে আমি জানি। এ বাহুল্য প্রার্থনা আপনার কাছে আমি করব না।

সহাস্যে কহিলাম, আমার কাছে আবার কি কাজের প্রার্থনা করবে দিদি?

আমার ছেলেকে আপনি আশীর্বাদ করুন।

কহিলাম, এই ত বাহুল্য প্রার্থনা, সুনন্দা। তোমার মত মায়ের ছেলেকে যে কোন্‌ আশীর্বাদ করা যায় সে ত আমিই জানিনে।

রাজলক্ষ্মী কি একটা প্রয়োজনে এই দিক দিয়া যাইতেছিল, কথাটা তাহার কানে যাইতেই ঘরের ভিতরে আসিয়া দাঁড়াইল। সুনন্দার হইয়া জবাব দিয়া কহিল, ওর ছেলেকে তুমি এই আশীর্বাদ করে যাও যেন বড় হয়ে ও তোমার মত মন পায়।

হাসিয়া কহিলাম, বেশ আশীর্বাদ! তোমার ছেলেকে বুঝি লক্ষ্মী তামাশা করতে চায়, সুনন্দা।

কথা আমার শেষ না হইতেই রাজলক্ষ্মী বলিয়া উঠিল, কি, তামাশা করতে চাই নিজের ছেলের সঙ্গে? এই যাবার সময়ে? এই বলিয়া সে একমুহূর্ত স্তব্ধ থাকিয়া কহিল, আমিও ত ওর মায়ের মত, আমি প্রার্থনা করি ভগবান যেন ওকে এই বরই দেন। তার চেয়ে বড় ত আমি কিছুই জানিনে।

সহসা চাহিয়া দেখিলাম, তাহার দুই চক্ষু জলে ভরিয়া উঠিয়াছে। আর একটি কথাও না কহিয়া সে ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল।

অতঃপর সবাই মিলিয়া গঙ্গামাটি হইতে চোখের জলে বিদায় গ্রহণ করিলাম। এমন কি রতন পর্যন্ত পুনঃপুনঃ চোখ মুছিতে লাগিল। যাহারা রহিল তাহাদের সনির্বন্ধ অনুরোধে সকলেই আবার আসিবার প্রতিশ্রুতি দিলেন, শুধু দিতে পারিলাম না আমি। আমিই কেবল নিশ্চয় বুঝিয়াছিলাম, এ জীবনে এখানে ফিরিয়া আসিবার আমার সম্ভাবনা নাই। তাই যাবার পথে এই ক্ষুদ্র গ্রামখানির প্রতি বার বার ফিরিয়া চাহিয়া কেবল ইহাই মনে হইতে লাগিল যেন অপরিমেয় মাধুর্য ও বেদনায় পরিপূর্ণ একখানি বিয়োগান্ত নাটকের এইমাত্র যবনিকা পড়িল; নাট্যশালার দীপ নিভিল—এইবার মানুষে মানুষে পরিপূর্ণ সংসারের সহস্রবিধ ভিড়ের মধ্যে আমাকে রাস্তায় বাহির হইতে হইবে।

কিন্তু জনতার মাঝখানে যে মনের অত্যন্ত সতর্কতায় পদক্ষেপ করিবার কথা, আমার সেই মন যেন নেশার ঘোরে একেবারে আচ্ছন্ন হইয়া রহিল।

সন্ধ্যার পরে আমরা সাঁইথিয়ায় আসিয়া পৌঁছিলাম। রাজলক্ষ্মীর আদেশ ও উপদেশের কোনটাই বঙ্কু অবহেলা করে নাই। সে সমস্ত বন্দোবস্ত ঠিক করিয়া নিজে আসিয়া স্টেশনের প্লাটফর্মে উপস্থিত ছিল, যথাসময়ে ট্রেন আসিলে মালপত্র বোঝাই দিয়া রতনকে চাকরদের কামরায় তুলিয়া দিয়া বিমাতাকে লইয়া গাড়িতে উঠিল। কিন্তু আমার সহিত সে বিশেষ কোনরূপ ঘনিষ্ঠতা করিবার চেষ্টা করিল না, কারণ, এখন তাহার দর বাড়িয়াছে ঘরবাড়ি, টাকাকড়ি লইয়া এখন সংসারে সে মানুষের মধ্যে একজন বলিয়া পরিগণিত হইয়াছে। বঙ্কু বিচক্ষণ ব্যক্তি। সকল অবস্থাকেই মানিয়া লইয়া চলিতে জানে। এ বিদ্যা যাহার অধিগত হইয়াছে পৃথিবীতে তাহাকে দুঃখভোগ করিতে হয় না।

গাড়ি ছাড়িতে তখনও মিনিট-পাঁচেক বাকী ছিল, কিন্তু আমার কলিকাতা যাইবার ট্রেন আসিবে প্রায় শেষ রাত্রে। একধারে স্থির হইয়া দাঁড়াইয়া ছিলাম, রাজলক্ষ্মী তাহার জানালা দিয়া মুখ বাড়াইয়া হাতের ইশারায় আমাকে আহ্বান করিল। নিকটে যাইতেই কহিল, একবার ভিতরে এস। ভিতরে আসিতে সে হাত ধরিয়া আমাকে পার্শ্বে বসাইয়া কহিল, তুমি কি খুব শীঘ্রই বর্মায় চলে যাবে? যাবার আগে আর একটিবার দেখা দিয়ে যাবে না?

কহিলাম, যদি প্রয়োজন মনে কর যেতে পারি।

রাজলক্ষ্মী চুপিচুপি উত্তর দিল, সংসারে যাকে প্রয়োজন বলে সে নেই। শুধু আর একবার দেখতে চাই, আসবে?

আসব।

কলকাতায় পৌঁছে চিঠি দেবে?

দেব।

বাহিরে গাড়ি ছাড়িবার শেষ ঘণ্টা বাজিয়া উঠিল, এবং গার্ডসাহেব তাঁহার সবুজ আলো বার বার নাড়িয়া এই আদেশই কায়েম করিলেন। রাজলক্ষ্মী হেঁট হইয়া আমার পায়ের ধূলা লইয়া আমার হাত ছাড়িয়া দিল। আমি নামিয়া দাঁড়াইয়া দ্বার রুদ্ধ করিয়া দিতেই গাড়ি চলিতে শুরু করিল। অন্ধকার রাত্রি, ভাল করিয়া কিছুই দেখা যায় না, কেবল স্টেশনপ্লাটফর্মের গোটাকতক কেরোসিনের আলো মন্থর-গতিশীল গাড়ির সেই খোলা জানালার একটি অস্পষ্ট নারীমূর্তির উপরে বার-কয়েক আলোকপাত করিল।

কলিকাতায় আসিয়া চিঠি দিলাম এবং জবাবও পাইলাম। এখানে কাজ বেশি ছিল না, যাহা ছিল তাহা দিন পনরর মধ্যে শেষ হইল। এইবার বিদেশে যাইবার আয়োজন করিতে হইবে। কিন্তু তাহার পূর্বে প্রতিশ্রুতিমত আর একবার রাজলক্ষ্মীকে দেখা দিতে হইবে। আরও সপ্তাহ-দুই এম্‌নিই কাটিয়া গেল। মনের মধ্যে একটা আশঙ্কা ছিল, এতদিনে কি জানি কি তাহার মতলব হইবে, হয়ত সহজে ছাড়িতে চাহিবে না, হয়ত অত দূরে যাওয়ার বিরুদ্ধে নানারূপ ওজর-আপত্তি তুলিয়া জিদ করিতে থাকিবে—কিছুই অসম্ভব নয়। এখন সে কাশীতে। তাহার বাসার ঠিকানাও জানি, ইতিমধ্যে দুই-তিনখানা পত্রও পাইয়াছি, এবং ইহাও বিশেষ করিয়া লক্ষ্য করিয়াছি যে, আমার প্রতিশ্রুতির বিষয় কোথাও সে ইঙ্গিতে স্মরণ করাইবার প্রয়াস করে নাই। না করিবারই কথা! মনে মনে বলিলাম, আপনাকে এতখানি ছোট করিয়া আমিও বোধ করি মুখ ফুটিয়া লিখিতে পারিতাম না, তুমি একবার আসিয়া আমাকে দেখা দিয়া যাও।

অকস্মাৎ দেখিতে দেখিতে কেমন যেন অধীর হইয়া উঠিলাম। এ জীবনে সে যে এতখানি জড়াইয়াছিল তাহা কেমন করিয়া যে এতদিন ভুলিয়া ছিলাম, ভাবিয়া আশ্চর্য হইলাম। ঘড়ি খুলিয়া দেখিলাম তখনও সময় আছে, তখনও গাড়ি ধরিতে পারি। বাসায় সমস্ত পড়িয়া রহিল, বাহির হইয়া পড়িলাম। ইতস্ততঃ-বিক্ষিপ্ত জিনিসগুলার প্রতি চাহিয়া মনে হইল, থাক এ-সকল পড়িয়া। আমার প্রয়োজনের কথা যে আমার চেয়েও বেশি করিয়া জানে তাহারই উদ্দেশে যাত্রা করিয়া আর প্রয়োজনের বোঝা বহিব না। রাত্রে ট্রেনের মধ্যে কিছুতেই ঘুম আসিল না, অলস তন্দ্রার ঝোঁকে মুদিত দুই চক্ষুর পাতার উপরে কত খেয়াল, কত কল্পনাই যে খেলা করিয়া বেড়াইতে লাগিল তাহার আদি-অন্ত নাই। হয়ত, অধিকাংশই এলোমেলো, কিন্তু সবটুকু যেন একেবারে মধু দিয়া ভরা। ক্রমশঃ সকাল হইল, বেলা বাড়িতে লাগিল, লোকজনের ওঠানামা, হাঁকাহাঁকি, দৌড়ঝাঁপের অবধি রহিল না, খর রৌদ্রতাপে চতুষ্পার্শ্বের কোথাও কোন কুহেলিকার চিহ্নমাত্র নাই, কিন্তু আমার চক্ষে সমস্তই একেবারে বাষ্পাচ্ছন্ন হইয়া রহিল।

পথে ট্রেনের বিলম্ব হওয়ায় রাজলক্ষ্মীর কাশীর বাটীতে গিয়া যখন পৌঁছিলাম তখন বেলা অধিক হইয়াছে। বাহিরে বসিবার ঘরের সম্মুখে একজন বৃদ্ধগোছের ব্রাহ্মণ বসিয়া ধূমপান করিতেছিলেন। মুখ তুলিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, কি চান?

কি চাই সহসা বলিতে পারিলাম না। তিনি পুনশ্চ প্রশ্ন করিলেন, কাকে খুঁজছেন?

কাহাকে খুঁজিতেছি ইহাও সহসা বলা কঠিন। একটু থামিয়া কহিলাম, রতন আছে?

না, সে বাজারে গেছে।

ব্রাহ্মণ সজ্জন ব্যক্তি। আমার ধূলিধূসর মলিন মুখের প্রতি চাহিয়া বোধ হয় অনুমান করিলেন যে, আমি দূর হইতে আসিতেছি। সদয়কণ্ঠে কহিলেন, আপনি বসুন, সে শীঘ্রই ফিরবে। আপনার কি তাকেই শুধু দরকার?

নিকটে একটা চৌকিতে বসিয়া পড়িলাম। তাঁহার প্রশ্নের ঠিক উত্তরটা না দিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, এখানে বঙ্কুবাবু, আছেন?

আছে বৈ কি। এই বলিয়া তিনি একজন নূতন চাকরকে ডাকিয়া বঙ্কুকে ডাকিয়া দিতে কহিলেন। বঙ্কু আসিয়া আমাকে দেখিয়া প্রথমে অত্যন্ত বিস্মিত হইল, পরে তাহার নিজের বসিবার ঘরে লইয়া গিয়া বসাইয়া কহিল, আমরা ভেবেছিলাম আপনি বুঝি বর্মায় চলে গেছেন।

এই আমরা যে কে কে, এ প্রশ্ন আমি আর জিজ্ঞাসা করিতে পারিলাম না। বঙ্কু কহিল, আপনার জিনিসপত্র বুঝি এখনো গাড়িতেই—

না, জিনিসপত্র আমি কিছুই সঙ্গে আনিনি।

আনেন নি? রাত্রের গাড়িতেই ফিরবেন বুঝি?

কহিলাম, সম্ভব হলে তাই ফিরব ভেবেচি।

বঙ্কু কহিল, তাহলে একটা বেলার জন্যে আর দরকারই বা কি?

ভৃত্য আসিয়া ধুতি-গামছা, হাত-মুখ ধোবার জল প্রভৃতি আবশ্যকীয় সমস্তই দিয়া গেল, কিন্তু আর কেহ আমার কাছে আসিল না।

খাবার ডাক পড়িল, গিয়া দেখিলাম, আমার ও বঙ্কুর ঠাঁই পাশাপাশি হইয়াছে। দক্ষিণের দরজা ঠেলিয়া রাজলক্ষ্মী প্রবেশ করিয়া আমাকে প্রণাম করিল। গোড়ায় বোধহয় তাহাকে চিনিতে পারি নাই। যখন পারিলাম, প্রথমটা চোখের সম্মুখে যেন সমস্ত কালো হইয়া উঠিল। এখানে কি আছে এবং কে আছে মনে পড়িল না। পরক্ষণেই মনে হইল নিজের মর্যাদা রাখিয়া, হাস্যকর কিছু একটা না করিয়া ফেলিয়া কেমন করিয়া এ বাড়ি হইতে আবার সহজ মানুষের মত বাহির হইতে পারিব।

রাজলক্ষ্মী জিজ্ঞাসা করিল, গাড়িতে কষ্ট হয়নি ত?

এ ছাড়া সে আর কি বলিতে পারে! ধীরে ধীরে আসনে বসিয়া পড়িয়া ক্ষণকাল স্তব্ধ হইয়া রহিলাম, বোধ হয় মুহূর্তকয়েকের বেশি নয়, তাহার পরে মুখ তুলিয়া কহিলাম, না, কষ্ট হয়নি।

এইবার ভাল করিয়া তাহার মুখের দিকে চাহিয়া দেখিলাম, সে যে শুধু থানকাপড় পরিয়া দেহের সমস্ত অলঙ্কার খুলিয়া ফেলিয়াছে তাই নয়, তাহার সেই মেঘের মত পিঠজোড়া সুদীর্ঘ চুলের রাশিও আর নাই। মাথার পরে ললাটের প্রান্ত পর্যন্ত আঁচলটানা, তথাপি তাহারই ফাঁক দিয়া কাটা-চুলের দুই-চারিগোছা অলক কণ্ঠের উভয় পার্শ্বে ছড়াইয়া পড়িয়াছে। উপবাস ও কঠোর আত্মনিগ্রহের এমনি একটা রুক্ষ শীর্ণতা মুখের ‘পরে ফুটিয়াছে যে হঠাৎ মনে হইল; এই একটা মাসেই বয়সেও সে যেন আমাকে দশ বৎসর অতিক্রম করিয়া গিয়াছে।

ভাতের গ্রাস আমার গলায় বাধিতেছিল, তবু জোর করিয়া গিলিতে লাগিলাম। কেবলই মনে হইতে লাগিল যেন চিরদিনের মত এই নারীর জীবন হইতে আমি মুছিয়া বিলুপ্ত হইতে পারি। এবং আজ, শুধু একটা দিনের জন্যও সে যেন আমার খাওয়ার স্বল্পতা লইয়া আর আলোচনা করিবার অবসর না পায়।

আহারের শেষে রাজলক্ষ্মী কহিল, বঙ্কু বলছিল তুমি নাকি আজ রাত্রের গাড়িতেই ফিরে যেতে চাও?

বলিলাম, হাঁ।

ইস্‌! আচ্ছা, কিন্তু তোমার জাহাজ ছাড়বে ত সেই রবিবারে।

তাহার এই ব্যক্ত ও অব্যক্ত উচ্ছ্বাসে বিস্মিত হইয়া মুখের প্রতি চাহিতেই সে হঠাৎ যেন লজ্জায় মরিয়া গেল। পরক্ষণে আপনাকে সামলাইয়া লইয়া আস্তে আস্তে বলিল, তার ত এখনও তিনদিন দেরি।

বলিলাম, হাঁ, আরও কাজ আছে।

পুনরায় রাজলক্ষ্মী কি একটা বলিতে গিয়াও চুপ করিয়া রহিল, বোধ হয়, আমার শ্রান্তি বা অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনার কথা মুখে আনিতে পারিল না। খানিকক্ষণ মৌন থাকিয়া কহিল, আমার গুরুদেব এসেচেন।

বুঝিলাম বাহিরে যে ব্যক্তির সহিত প্রথমেই সাক্ষাৎ হইয়াছিলতিনিই। ইঁহাকেই দেখাইবার জন্য সে আমাকে একবার এই কাশীতেই টানিয়া আনিয়াছিল। সন্ধ্যার পরে তাঁহার সহিত আলাপ হইল। আমার গাড়ি ছাড়িবে বারটার পরে। এখনও ঢের সময়। মানুষটি সত্যই ভাল। স্বধর্মে অবিচলিত নিষ্ঠাও আছে উদারতারও অভাব নাই। আমাদের সকল কথাই জানেন, কারণ গুরুর কাছে রাজলক্ষ্মী গোপন কিছুই করে নাই। অনেক কথাই বলিলেন, গল্পচ্ছলে উপদেশও কম দিলেন না, কিন্তু তাহা উগ্রও নয়, আঘাতও করে না। সমস্ত কথা মনে নাই, হয়ত মন দিয়াও শুনি নাই, তবে এটুকু স্মরণ আছে যে, একদিন রাজলক্ষ্মীর যে এরূপ পরিবর্তন ঘটিবে তিনি তাহা জানিতেন, তাই দীক্ষার সম্বন্ধেও তিনি প্রচলিত রীতি মানেন নাই। তাঁহার বিশ্বাস, যাহার পা পিছলাইয়াছে সদ্‌গুরুর প্রয়োজন তাহারই সর্বাপেক্ষা অধিক।

ইহার বিরুদ্ধে আর বলিবার কি আছে? তিনি আর একদফা শিষ্যার ভক্তি, নিষ্ঠা ও ধর্মশীলতার অজস্র প্রশংসা করিলেন; কহিলেন, এমন আর দেখি নাই। বস্তুতঃ, ইহাও সত্য এবং তাহা কাহারও অপেক্ষা আমি নিজেও কম জানি না। কিন্তু চুপ করিয়া রহিলাম।

সময় হইয়া আসিল, ঘোড়ার গাড়ি দ্বারের সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইল, গুরুদেবের নিকট বিদায় লইয়া আমি গাড়িতে গিয়া বসিলাম। রাজলক্ষ্মী পথে আসিয়া গাড়ির ভিতরে হাত বাড়াইয়া বার বার করিয়া আমার পায়ের ধূলা মাথায় দিল, কিন্তু কথা কহিল না। বোধ হয় সে শক্তি তাহার ছিল না। ভালই হইল যে, অন্ধকারে সে আমার মুখ দেখিতে পাইল না। আমি স্তব্ধ হইয়া রহিলাম, কি যে বলিব, খুঁজিয়া পাইলাম না। শেষ বিদায়ের পালাটা নিঃশব্দেই সাঙ্গ হইল। গাড়ি ছাড়িয়া দিলে দুই চোখ দিয়া আমার ঝরঝর করিয়া জল পড়িতে লাগিল। সর্বান্তঃকরণে কহিলাম, তুমি সুখী হও, শান্ত হও, তোমার লক্ষ্য ধ্রুব হোক, তোমাকে হিংসা করি না, কিন্তু যে দুর্ভাগা সমস্ত বিসর্জন দিয়া একই সাথে একদিন তরণী ভাসাইয়াছিল এ জীবনে তাহার আর কূল মিলিবে না। ঘর্‌ঘর্‌ ঝর্‌ঝর্‌ করিয়া গাড়ি চলিতে লাগিল, গঙ্গামাটির সকল স্মৃতি আলোড়িত হইয়া উঠিল। সেদিন বিদায়ের ক্ষণে যে-সকল কথা মনে আসিয়াছিল, আবার তাহাই জাগিয়া উঠিল। মনে হইল, এই যে এক জীবন-নাট্যের অত্যন্ত স্থূল এবং সাধু-উপসংহার হইল ইহার খ্যাতির আর অন্ত নাই। ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করিলে ইহার অম্লান দীপ্তি কোনদিন নিবিবে না, সশ্রদ্ধ বিস্ময়ে মাথা নত করিবার মত পাঠকেরও কোনদিন সংসারে অভাব ঘটিবে নাকিন্তু আমার নিজের কথা কাহাকেও বলিবার নহেআমি চলিলাম অন্যত্র,আমারই মত যে কলুষের পঙ্কে মগ্ন হইয়া আছে, ভাল হইবার আর পথ নাই, সেই অভয়ার আশ্রয়ে। মনে মনে রাজলক্ষ্মীকে উদ্দেশ করিয়া কহিলাম, তোমার পুণ্যজীবন উন্নত হইতে উন্নততর হোক, তোমার মধ্য দিয়া ধর্মের মহিমা উজ্জ্বল হইতে উজ্জ্বলতর হোক, আমি আর ক্ষোভ করিব না। অভয়ার চিঠি পাইয়াছি। স্নেহে, প্রেমে, করুণায় অটল অভয়া, ভগিনীর অধিক বিদ্রোহী অভয়া আমাকে সাদরে নিমন্ত্রণ করিয়াছে। বর্মা হইতে আসিবার কালে ক্ষুদ্র দ্বারপ্রান্তে তাহার সজল চক্ষু মনে পড়িল, মনে পড়িল তাহার সমস্ত অতীত ও বর্তমান ইতিহাস। চিত্তের শুচিতায়, বুদ্ধির নির্ভয়তায় ও আত্মার স্বাধীনতায় সে যেন আমার সমস্ত দুঃখ একনিমেষে আবৃত করিয়া উদ্ভাসিত হইয়া উঠিল।

সহসা গাড়ি থামিতে চকিত হইয়া দেখিলাম স্টেশনে পৌঁছিয়াছি। নামিয়া দাঁড়াইতে আর এক ব্যক্তি কোচবাক্স হইতে তাড়াতাড়ি নামিয়া আমার পায়ের কাছে গড় হইয়া প্রণাম করিল।

কে রে, রতন যে!

বাবু, বিদেশে চাকরের যদি অভাব হয় ত আমাকে একটু খবর দেবেন। যতদিন বাঁচব আপনার সেবার ত্রুটি হবে না।

গাড়ির লন্ঠনের আলো তাহার মুখের উপর পড়িয়াছিল, বিস্মিত হইয়া বলিলাম, তুই কাঁদচিস্‌ কেন বল্‌ ত?

রতন জবাব দিল না, হাত দিয়া চোখ মুছিয়া পায়ের কাছে আর একবার ঢিপ করিয়া নমস্কার করিয়াই দ্রুতবেগে অন্ধকারে অদৃশ্য হইয়া গেল।

আশ্চর্য, এই সেই রতন!

সকল অধ্যায়

১. শ্রীকান্ত – ১ম পর্ব – ০১
২. শ্রীকান্ত – ১ম পর্ব – ০২
৩. শ্রীকান্ত – ১ম পর্ব – ০৩
৪. শ্রীকান্ত – ১ম পর্ব – ০৪
৫. শ্রীকান্ত – ১ম পর্ব – ০৫
৬. শ্রীকান্ত – ১ম পর্ব – ০৬
৭. শ্রীকান্ত – ১ম পর্ব – ০৭
৮. শ্রীকান্ত – ১ম পর্ব – ০৮
৯. শ্রীকান্ত – ১ম পর্ব – ০৯
১০. শ্রীকান্ত – ১ম পর্ব – ১০
১১. শ্রীকান্ত – ১ম পর্ব – ১১
১২. শ্রীকান্ত – ১ম পর্ব – ১২ (শেষ)
১৩. শ্রীকান্ত – ২য় পর্ব – ০১
১৪. শ্রীকান্ত – ২য় পর্ব – ০২
১৫. শ্রীকান্ত – ২য় পর্ব – ০৩
১৬. শ্রীকান্ত – ২য় পর্ব – ০৪
১৭. শ্রীকান্ত – ২য় পর্ব – ০৫
১৮. শ্রীকান্ত – ২য় পর্ব – ০৬
১৯. শ্রীকান্ত – ২য় পর্ব – ০৭
২০. শ্রীকান্ত – ২য় পর্ব – ০৮
২১. শ্রীকান্ত – ২য় পর্ব – ০৯
২২. শ্রীকান্ত – ২য় পর্ব – ১০
২৩. শ্রীকান্ত – ২য় পর্ব – ১১
২৪. শ্রীকান্ত – ২য় পর্ব – ১২
২৫. শ্রীকান্ত – ২য় পর্ব – ১৩
২৬. শ্রীকান্ত – ২য় পর্ব – ১৪
২৭. শ্রীকান্ত – ২য় পর্ব – ১৫ (শেষ)
২৮. শ্রীকান্ত – ৩য় পর্ব – ০১
২৯. শ্রীকান্ত – ৩য় পর্ব – ০২
৩০. শ্রীকান্ত – ৩য় পর্ব – ০৩
৩১. শ্রীকান্ত – ৩য় পর্ব – ০৪
৩২. শ্রীকান্ত – ৩য় পর্ব – ০৫
৩৩. শ্রীকান্ত – ৩য় পর্ব – ০৬
৩৪. শ্রীকান্ত – ৩য় পর্ব – ০৭
৩৫. শ্রীকান্ত – ৩য় পর্ব – ০৮
৩৬. শ্রীকান্ত – ৩য় পর্ব – ০৯
৩৭. শ্রীকান্ত – ৩য় পর্ব – ১০
৩৮. শ্রীকান্ত – ৩য় পর্ব – ১১
৩৯. শ্রীকান্ত – ৩য় পর্ব – ১২
৪০. শ্রীকান্ত – ৩য় পর্ব – ১৩
৪১. শ্রীকান্ত – ৩য় পর্ব – ১৪
৪২. শ্রীকান্ত – ৩য় পর্ব – ১৫ (শেষ)
৪৩. শ্রীকান্ত – ৪র্থ পর্ব – ০২
৪৪. শ্রীকান্ত – ৪র্থ পর্ব – ০৩
৪৫. শ্রীকান্ত – ৪র্থ পর্ব – ০৪
৪৬. শ্রীকান্ত – ৪র্থ পর্ব – ০৫
৪৭. শ্রীকান্ত – ৪র্থ পর্ব – ০৬
৪৮. শ্রীকান্ত – ৪র্থ পর্ব – ০৭
৪৯. শ্রীকান্ত – ৪র্থ পর্ব – ০৮
৫০. শ্রীকান্ত – ৪র্থ পর্ব – ০৯
৫১. শ্রীকান্ত – ৪র্থ পর্ব – ১০
৫২. শ্রীকান্ত – ৪র্থ পর্ব – ১১
৫৩. শ্রীকান্ত – ৪র্থ পর্ব – ১২
৫৪. শ্রীকান্ত – ৪র্থ পর্ব – ১৩
৫৫. শ্রীকান্ত – ৪র্থ পর্ব – ১৪ (শেষ)

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন