রশীদ করীম
সেলিনার সেদিনকার ব্যবহারের ঠিক কোন দিকটা আমাকে বিস্মিত আর মর্মাহত করেছিল তখুনি তার হদিস পাই নি। কিন্তু আজ মনে হয় সেলিনা সেই ছেলেটির সঙ্গে উঠে চলে গেল একমাত্র এইটেই তার কারণ নয়। তার জীবনের এক গোপন অধ্যায়ের সঙ্গে অপ্রত্যাশিতভাবে আমার পরিচয় ঘটে যাওয়ায় সেলিনা হঠাৎ যে আমার কাছে পরাভব স্বীকার করল, এইটেই আমার বেজেছিল সবচাইতে বেশি। একটি ফাউন্টেন পেন দিয়ে সে আমার জবান কিনে নিতে পারে, তার এই বিশ্বাসের পিছনে কতটা ধিক্কার, কতটা অশ্রদ্ধা ছিল তাও বুঝতে পারি। কিন্তু ঠিক সে কারণেও আমি হতবুদ্ধি হই নি। কেন সে বললে : “কিছু মনে করো না ভাই, কাউকে বলো না ভাই” তার এই দিন মিনতিই তাকে আমার চোখে ছোট করে দিল। সে যেন কর্নওয়ালিস স্কোয়ারে একা একটি যুবকের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়েই সম্পূর্ণ অধঃপাতে যায় নি; আমার হাত ধরে কাতর মিনতি করবার পরই যেন তার সত্যকার অধঃপতন ঘটল। এমনই মানুষের স্বার্থ! যাকে চিরটাকাল হেয় করে এসেছি, স্বার্থের জন্য তাঁর হাত ধরতেও মানুষের বাধে না।
সেলিনার রূপ, তার যৌবন, তার নির্মম আচরণ, তার নির্বোধ ক্রোধ সবকিছু মিলে তাকে এক অপার্থিব প্রাণী বলে মনে হতো। তার অহঙ্কার যতই দুর্বিনীত হোক, তার মধ্যেও এক স্পর্শাতীত সৌন্দর্য এক অপ্রতিরোধ্য মাধুর্য ছিল। কিন্তু একটি অপ্রত্যাশিত মুহূর্তের এক অসতর্ক কথায় সে আমার বড়ই কাছাকাছি নেবে এলো। তাকে ভয় করবার, সমীহ করবার, পৃথক মনে করবার যেন আর কোনো কারণই থাকল না।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন