২০. আমার নাম ফজলু

হুমায়ূন আহমেদ

শওকত সাহেব অবাক হয়ে বললেন, আপনাকে তো চিনতে পারলাম না।

আমার নাম ফজলু। ফজলুর রহমান।

আমি আপনাদের পাশেই থাকি। ঐ যে লাল দালানটা। লোহার গেট। গেটের পেছনে কামিনি ফুলের গাছ আছে। আমি আগেও কয়েকবার এসেছি আপনার বাসায়।

শওকত সাহেব খুব লজ্জা পেলেন। একই পাড়ায় পাশাপাশি থেকে চিনতে না পারাটা লজ্জার ব্যাপার। এক সময় সবার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। এখন একেবারেই নেই। অফিসে যান। অফিস থেকে ফিরে এসে বারান্দায় বসে থাকেন। এ রকম হয়ে যাচ্ছেন্ন কেন?

আমার স্ত্রীর সঙ্গে বকুলের খুব ভাব। ওরা প্রায়ই গল্পগুজব করে। আমার স্ত্রীর নাম হচ্ছে টিনা।

ও আচ্ছা। বসুন্ন ভাই বসুন। বয়স হয়ে গেছে কিছু মনে থাকে না।

আমাকে নাম ধরে ডাকবেন। বকুল আমার স্ত্রীকে টিনা ভাবী ডাকে। আমি বলতে গেলে আপনার ছেলের মত। বকুলের সঙ্গে আমার ভাই সম্পর্ক।

তাই নাকি?

জি। কাজেই আপনিও যদি ভাই ডাকেন তাহলে ঝামেলা হয়ে যাবে। সম্পর্কটা ঠিক থাকা দরকার।

ফজলু উঁচু গলায় হাসতে লাগল। শওকত সাহেব অস্বস্তি বোধ করতে লাগলেন। কি কথাবার্তা চালাবেন? কথা বলতে ইচ্ছাও হচ্ছে না। ক্লান্তি লাগছে। শরীর ভাল না, শুয়ে থাকতে ইচ্ছা হচ্ছে। তার আবার মনে হল বয়স হয়ে গেছে। তিনি দ্রুত বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন।

আপনি বসুন আমি বকুলকে ডেকে দিচ্ছি।

ওকে ডাকার দরকার নেই। আমি আপনার সঙ্গেই কথা বলতে এসেছি। দরকারে এসেছি।

একটা দরকারি কথা বলব।

বলুন।

তার আগে এক কাপ চা খাব। বাসা থেকে চা না খেয়ে বেরিয়েছি। টিনা বলল, তুমি চাচার সঙ্গে কথাটা সেরে এসেই চা খাও। আমি ভাবলাম মন্দ কি!

শওকত সাহেব চিন্তিত মুখে চায়ের কথা বলে এলেন। তার সাথে এমন কি কথা থাকতে পারে? পাড়ার কোনো ব্যাপার কি? হতে পারে। মাঝে মাঝে হঠাৎ দু’একজন মানুষ এসে পাড়া দরদী হয়ে যায়। ক্লাবট্রিাব করে। একবার কি একটা পরিচ্ছন্ন কমিটি হল। তিনি হলেন সেই কমিটির মেম্বার। সপ্তাহখানিক এর-ওর বাড়িতে চা খাওয়া ছাড়া সেই কমিটি কিছু করেনি। একদিনের জন্যে একজন মেথর ভাড়া করে এনেছিল সে ঘণ্টা তিনেক কোদাল দিয়ে নর্দমা নাড়াচাড়া করে কুড়ি টাকা নিয়ে ভোগে গেল। পরিচ্ছন্ন কমিটিরও সমাপ্তি।

আমি বকুলের বিয়ের একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।

শওকত সাহেব নড়েচড়ে বসলেন। ইতস্তত করে বললেন, বকুলের বিয়ে? আমি তো ঠিক…

আগে সবটা শুনে নিন। তারপর আপনার যা বলার বলবেন। আমি এবং আমার স্ত্রী দু’জনই বকুলকে খুব পছন্দ করি। আমি ওকে দেখি নিজের বোনের মত। ওর যাতে ভাল হয় তাই আমরা দেখব–এ ব্যাপারে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।

ফজলু থামল। কারণ রকুল চা নিয়ে ঢুকেছে। অবাক হয়ে তাকাচ্ছে তার দিকে। বকুলের চোখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ।

বকুল, কেমন আছ?

জি ভাল।

তোমার ভাবী জলপাইয়ের একটা আচার বানিয়েছে, একবার গিয়ে চোখে আসবে। নিজ দায়িত্বে রাখবে। হাহা হা।

বকুল হাসিতে যোগ দিল না। কাপ নামিয়ে চলে এল। তার বুক ঢ়িপঢ়িপ করছে। আজই কি সেই দিন? হয়ত বা। টিনা ভাবী বলেছিল। সে নিজেই আজকালের মধ্যে প্রস্তাব নিয়ে আসবে। তা না করে কী ফজলু ভাইকে পাঠিয়েছে? ফজলু ভাই কি গুছিয়ে কিছু বলতে পারবে? সে নিশ্চয়ই সব এলেবেলে করে দেবে। কি বলতে কী বলবে। তাছাড়া আগেই বাবার সঙ্গে কথা বলছে কেন? আগে মুনা আপার সঙ্গে কথা বলা দরকার–মুনা আপা যদি প্রথমেই বলে না। তাহলে তো এ নিয়ে আগানোই যাবে না। যদি কোন কারণে হ্যাঁ বলে ফেলে তবেই শুধু বাবার সঙ্গে কথা বলা উচিত। তার আগে নয়।

বকুল দরজার পাশে দাঁড়িয়ে রইল। কথাবার্তা তেমন কিছু শোনা যাচ্ছে না। ফজলু ভাইয়ের কথা দু’একটা শোনা গেলেও বাবার কথা কিছুই কানে যাচ্ছে না। বাবু তার ঘর থেকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে পড়ছে। এমন চেঁচিয়ে পড়লে কিছু শোনা যায়? বকুলের ইচ্ছে করছে বাবুকে গিয়ে বলে–এত চেঁচিয়ে পড়ছিস কেন? মনে মনে পড়তে পাড়িস না। কিন্তু বাবুকে এসব কিছুই বলা যাবে না। সে একশটিা কথা বলবে, চেঁচিয়ে পড়লে কি হয়? তোমার তো কোন অসুবিধা হচ্ছে না। হয়ত একটা ঝগড়াই বাঁধিয়ে বসবে। বাবু এখন কথায় কথায় তার সঙ্গে ঝগড়া বাঁধাচ্ছে।

বকুল!

বকুল চমকে উঠল। মুনা আপা বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে আছে। সরু চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কী সর্বনাশ।

কি করছিস এখানে?

কিছু না আপা।

বকুল এগিয়ে এল ভয়ে ভয়ে। তার মুখ শুকিয়ে গেছে। বুক ধ্বক ধ্বক করছে। মুনা। আপা নিৰ্যাৎ জেরা করতে শুরু করবে।

বসার ঘরে কে কথা বলছে?

ফজলু ভাই।

ফজলু ভাইটা কে?

টিনা ভাবীর হাসবেন্ড।

তুই কি আড়ি পেতে কথাবার্তা শুনবার চেষ্টা করছিলি?

না আপা।

না। আপা মানে? আমি তো বেশ খানিকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছি তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস। কি করছিলি?

চা দিতে গিয়েছিলাম আপা।

চোখ-মুখ এমন লাল হয়ে আছে কেন? ব্যাপারটা কি?

কিছু না আপা।

তোর বিয়েটিয়ে নিয়ে কোনো কথা?

আমি জানি না।

বকুল এই শীতেও ঘামতে লাগল। বড় লজ্জার ব্যাপার হয়ে গেল। তার ইচ্ছে করছে মুনা আপার সামনে থেকে ছুটে পালিয়ে যেতে। কিন্তু পা দু’টি হয়ে আছে পাথরের মত। বকুল খুব সহজ ভাবে হাসতে চেষ্টা করল পারল না। মুনা আপা এখনো তাকিয়ে আছে তার দিকে। তার মুখ থমথম করছে। কেন যে দরজার পাশে দাঁড়াতে গিয়েছিল।

ছেলে ডাক্তার। ছেলের বাবা নেত্রকোনা শহরের নামকরা উকিল ছিলেন–আবদুস সোবহান সাহেব। রাজাকাররা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মেরে ফেলেছে। নেত্রকোনা শহরে ওদের বিরাট বাড়ি আছে। সেই বাড়িতে ছেলের মা এবং ছোট ভাই ছাড়া আর কেউ থাকে না। ঢাকাতে মোহাম্মদপুরে ওদের একটা দোতলা বাড়ি আছে। তিন হাজার টাকা ভাড়া আসে বাড়ি থেকে।

ছেলে দেখতে কেমন?

আমার কাছে তো ভালই মনে হয়। আপনি নিজেও তো দেখেছেন। এই বাড়িতে তো সে আসে। মানে অসুখ-বিসুখ হলে তাকে আনা হয়। ডাক্তার জহির।

শওকত সাহেব অবাকই হলেন। ছেলেটিকে তার পছন্দ। ভদ্র ছেলে। বয়সও কমই মনে হয়। ফজলু হাসিমুখে বলল, ছেলে কেমন কি তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে, আপনার মেয়ের ছেলেকে খুব পছন্দ।

কি বলছেন এসব?

ঠিকই বলছি। আমার স্ত্রীর সঙ্গে বকুলের কথা হয়েছে। আপনি বকুলকে ডেকে জিজ্ঞেসও করতে পারেন।

আরে না। আমি এসব জিজ্ঞেস করব কেন?

জিজ্ঞেস করে নেয়াটা ভাল। তাছাড়া আজকালকার যুগে ছেলেমেয়ের নিজেদের পছন্দে বিয়ে হওয়াটাই ভাল। তাতে সমস্যা কমে যায়।

বকুল বাচ্চা মেয়ে সে আবার…।

বাচ্চা মেয়েদের তো পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে। পারে না?

শওকত সাহেব ইতস্তত করে বললেন, আমি মুনার সঙ্গে আলাপ করে দেখি। মুনা রাজি হবে না।

দেখুন কথা বলে। আমার স্ত্রীও উনার সঙ্গে কথা বলবেন। আমারও মনে হয় বিয়েটা বকুলের জন্য ভালই হবে। আমি উঠি এখন।

আরে না বসুন। আরেক কাপ চা খান। বকুল, বকুল।

ফজলু উঠে দাঁড়াল। হাসিমুখে বলল, এখন আর চা খাব না। বাসায় গিয়ে গোসল করব। আমি আবার অফিস থেকে ফিরেই গোসল করি। অনেক দিনের অভ্যাস।

দরজা পর্যন্ত গিয়ে ফজলু আবার ফিরে এল।

একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। ছেলের মা এখন ঢাকায় আছেন। কয়েক দিন ঢাকায় থাকবেন। সম্ভব হলে এর মধ্যে বকুলকে দেখিয়ে দিন।

শওকত সাহেব মুখ কালো করে বললেন, মুনা কিছুতেই রাজি হবে না। ওর ইচ্ছা বকুলের পড়াশোনা আগে শেষ হোক।

রাজি না হলে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রাজি করাতে হবে। দিনকাল খারাপ। মেয়ে বিয়ে দেয়া এখন মহাসমস্যা। ছেলে পাওয়া যায় না। বিয়ের যুগ্যি ছেলেদের কোন চাকরি-বাকরি নেই। বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছে।

তা ঠিক।

এই আমাকেই দেখুন না, সামান্য চাকরি তবু ডিসট্রিক্ট জজের মেয়ের প্রস্তাবও এসেছিল।

ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার ছেলেদের তো গায়েই হাত দেয়া যায় না। ঠিক বলছি না?

জি ঠিকই বলছেন।

মেয়ের বিয়ে দিয়ে ঝামেলা চুকিয়ে দিন।

দেখি মুনার সঙ্গে কথা বলে।

শওকত সাহেব রাত দশটার সময় মুনাকে নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে গেলেন। অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা বলতে লাগলেন। শীত খুব বেশি পড়েছে। তার অফিসের কে যেন বলছিল শ্ৰীমঙ্গলে বরফ পড়েছে। আবহাওয়া বদলে যাচ্ছে। এ রকম শীত কখনও পড়ত না। বুড়ো মরা শীত একেই বলে। ইত্যাদি।

মুনা বেশ খানিকক্ষণ মন দিয়ে মামার কথা শুনল। তারপর হাসতে হাসতে বলল, এই ভদ্রলোক তোমাকে কি বললেন সেটা বল, শুনে চলে যাই। কেন শুধু শুধু দেরি করছ? শওকত সাহেব গম্ভীর হয়ে গেলেন।

উনি কি বকুলের বিয়ের কথা বলতে এসেছিলেন?

বুঝলি কি করে?

আন্দাজ করলাম। ডাক্তার ছেলে?

হুঁ।

তুমি কি বললে?

আমি না-ই করে দিয়েছি। বলেছি মেয়ের বয়স খুবই কম। পড়াশোনা করছে। এখন তুই ভেবে দেখ। তুই যা বলবি তাই। আসল গার্জেন হলি তুই।

মুনা হাই তুলে বলল, বিয়ে দিয়ে দাও।

শওকত সাহেব বুঝতে পারলেন না এটা কি সে ঠাট্টা করে বলছে না। সত্যি সত্যি বলছে। তিনি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলেন।

বিয়ে হয়ে যাওয়াটাই ভাল।

কেন? ভাল কেন?

বকুল হচ্ছে বউ টাইপ মেয়ে। বিয়ের জন্যে মনে মনে সে তৈরি হয়েছে।

কি বলছিস তুই!

ঠিকই বলছি। ছেলেটাও ভাল। দেখি তো প্রায়ই।

তুই ভালমত চিন্তা করে তারপর বল। ফন্ট করে হ্যাঁ বলার দরকার কি? এমন কোন তাড়া তো নেই।

চিন্তা করেই বলছি। ওরা নিজেরা আগ্রহ করে আসছে সেটা দেখা দরকার। এ রকম আগ্রহ নিয়ে বকুলের জন্যে খুব বেশি ছেলে আসবে না।

আসবে না বেন? বকুল কী দেখতে খারাপ?

খারাপ হবে কেন? বকুলের মতো রূপসী মেয়ে কমই আছে। কিন্তু বিয়ে-টিয়ের ব্যাপার শুধু মেয়েটাকে কেউ দেখে না। সব কিছু মিলিয়ে দেখে। বিয়ে কোন আলাপ হলেই সবাই জানাবে তুমি চুরির দায়ে এক সময় জেলে গিয়েছিলে। চোরের মেয়েদের ভাল বিয়ে হয় না।

শওকত সাহেব মুখ কালো করে ফেললেন। এ রকম কঠিন একটা কথা মুনা এমন স্বাভাবিক ভাবে বলল? মুখে এতটুকু আটকাল না।

বিয়ে দিয়ে দাও মামা; বকুলের ঐ ছেলেকে খুবই পছন্দ।

ওর পছন্দের কথাটা আসছে কেন?

আসবে না কেন? নিশ্চয়ই আসবে। বিয়েটা তো সেই করছে।

পছন্দ করবার জন্যে ছেলেকে সে পেল কোথায়?

পেয়েছে যে ভাবেই হোক। সেটা আমাদের দেখার ব্যাপার না। মামা, আমি উঠলাম।

বোস, আরেকটু বোস।

না মামা, আমার শরীরটা ভাল লাগছে না।

 

বকুল আড়চোখে মুনার দিকে তাকিয়ে আবার নিজের বইপত্র নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। যেন পৃথিবীর কোনো দিকে তার দৃষ্টি নেই। বাবু বসেছে তার উল্টো দিকে। সে পড়ছে চেঁচিয়ে। মুনা শুয়ে পড়ল। বাবু বলল, আপা আমরা বসার ঘরে গিয়ে পড়ব? বাতি নিভিয়ে দেব এ ঘরের?

এত সকাল সকাল শুয়ে পড়লে যে আপা?

এমনি, ভাল লাগছে না।

মাথায় হাত বুলিয়ে দেব?

না লাগবে না।

বকুল এবং বাবু বাতি নিভিয়ে বসার ঘরে চলে গেল এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আবার এ ঘরে চলে এল। ঘর অন্ধকার। বারান্দা থেকে আলো এসে তেরছা ভাবে মুনার গায়ে পড়েছে। সেই আলোর জন্যেই হোক বা অন্য যে কোনো কারণেই হোক মুনাকে খুব অসহায় লাগছে। বকুল ক্ষীণ স্বরে বলল, আপা ঘুমিয়ে পড়েছ?

না।

বসি একটু তোমার পাশে?

বোস।

বকুল মাথার কাছে বসল। বেশ কিছু সময় দুজনের কেউ কোনো সাড়াশব্দ করল না। এক সময় বাবু এসে উঁকি দিল।

আপা তোমরা এমন চুপচাপ বসে আছ কেন?

মুনা হালকা গলায় বলল, ইচ্ছে করলে তুইও এসে বোস। বাবু এল না। চলে গেল এবং আবার চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান পড়তে লাগল। মুনা বলল–হঠাৎ এমন চেঁচিয়ে পড়া ধরেছে কেন বল তো? এ রকম মাইক লাগিয়ে কেউ পড়ে? বুকল হেসে ফেলল। মুনার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল, ওদের কোন স্যার নাকি চেঁচিয়ে পড়তে বলেছেন। এতে নাকি পড়া তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়।

তোর পড়া কেমন হচ্ছে রে বকুল?

হচ্ছে।

ভালমত পড়। বিয়ে যদি হয় তারপরও পড়াশোনা চালিয়ে যাবি।

বিয়ের কথা উঠল। কেন?

ভাল করেই জানিস কেন উঠল। তুই তো আড়ি পেতে শুনছিলি।

বকুল চুপ করে গেল। মুনা হালকা গলায় বলল, অল্প বয়সে বিয়েটা খারাপ না। মন কোমল থাকে। সংসারের খারাপ দিকগুলি চোখে পড়ে না।

তুমি হঠাৎ এমন কথা বলছ কেন আপা? আগে তো এ রকম বলতে না।

মানুষ তো সব সময় এক রকম থাকে না।

তুমি বদলে যাচ্ছ আপা।

হ্যাঁ বদলে যাচ্ছি। বয়স হচ্ছে। খুঁজে দেখলে দু’একটা পাকা চুলও বোধ হয় পাবি।

বকুল নিচু গলায় বলল, আপা তুমি কাঁদছ?

কি বলছিস পাগলের মত? কাঁদব কেন শুধু শুধু?

তোমার গলাটা অন্য রকম শুনাল।

অন্য রকম মানে?

কেমন যেন ভারী ভারী। কান্না চেপে রাখলে যেমন লাগে।

মনে হচ্ছে খুব কান্না বিশারদ হয়ে গেছিস।

মুনা নিচু গলায় হাসল। বকুলও হেসে ফেলল।

বকুল এক কাপ চা বানিয়ে আন তো। মাথা ধরেছে। আদা থাকলে আদা দিস। না থাকলে লিকার চা। আর দরজাটা ভিড়িয়ে দিয়ে যা। আলো চোখে লাগছে।

বকুল চা বানিয়ে ফিরে এসে, একটি অদ্ভুত দৃশ্য দেখল। মুনা ব্যাকুল হয়ে কাঁদছে। কান্নার দমকে সে বারবার কেঁপে উঠছে। মুখে শাড়ির আঁচল গুঁজে সে কান্না চেপে রাখবার প্রাণপণ চেষ্টা করছে। বকুল হতভম্ব হয়ে দরজার পাশেই দাঁড়িয়েই রইল। একবার শুধু বলল, চা এনেছি আপা। মুনা কিছুই বলল না। বকুল নিজেও তার চোখ মুছতে লাগল। কাউকে কাঁদতে দেখলেই তার কান্না পায়। সে ভাঙা গলায় ডাকল, আপা।

কি?

তোমার কি হয়েছে আমাকে বলবে? কিছুই হয়নি। তুই এ ঘর থেকে যা। চায়ের কাপ টেবিলের উপরে রেখে চলে যা।

সকল অধ্যায়

১. ০১. মুনা ঘড়ি দেখতে চেষ্টা করল
২. ০২. মুনার দেখা নেই
৩. ০৩. মুনার মনে হল তার জ্বর আসছে
৪. ০৪. পাল বাবু অবাক হয়ে বললেন
৫. ০৫. টেলিগ্রামে লেখা ছিল
৬. ০৬. বাকের ভাই পা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে আছেন
৭. ০৭. মামুন বলল কি কেমন দেখছ
৮. ০৮. জলিল মিয়ার চায়ের দোকানে
৯. ০৯. বকুলের বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে
১০. ১০. শওকত সাহেব
১১. ১১. স্কুল টিচারদের বাড়ি যে রকম থাকে
১২. ১২. উকিল খুব ব্যস্ত
১৩. ১৩. শেষ পর্যন্ত টিকে ছিল ইয়াদ
১৪. ১৪. লতিফা ছটফট করছিলেন
১৫. ১৫. বাইরে হাঁটাহাঁটির পরিমাণ
১৬. ১৬. টিনা বিরক্ত হয়ে বলল
১৭. ১৭. পরপর তিন কাপ চা
১৮. ১৮. মামুনের মন খারাপ হয়ে গেল
১৯. ১৯. মামুন এসেছিল
২০. ২০. আমার নাম ফজলু
২১. ২১. বাকের একটা মোটর সাইকেল জোগাড় করেছে
২২. ২২. বকুলকে আজ তার শাশুড়ি দেখতে আসবেন
২৩. ২৩. বাকেরের বড় ভাই হাসান সাহেব
২৪. ২৪. বাড়ি পৌঁছেই তোমাকে চিঠি দেব
২৫. ২৫. হাসান সাহেব শুনলেন
২৬. ২৬. যাদের নাম ক দিয়ে শুরু হয়
২৭. ২৭. বকুলের গায়ে হলুদ
২৮. ২৮. বকুলের বিয়ে হয়ে গেল
২৯. ২৯. এক সপ্তাহ অনেক লম্বা সময় নয়
৩০. ৩০. পুলিশের হাঙ্গামায় বাকের
৩১. ৩১. জাহানারা অবাক হয়ে বলল
৩২. ৩২. শওকত সাহেব চোখ মেললেন
৩৩. ৩৩. ঝাঁ ঝাঁ রোদ উঠেছে
৩৪. ৩৪. ভদ্রলোক সরু চোখে তাকিয়ে রইলেন
৩৫. ৩৫. শওকত সাহেবের জ্বর
৩৬. ৩৬. বাকেরের চেহারায় আজ বিরাট পরিবর্তন
৩৭. ৩৭. শ্রাবণ মাসের গোড়াতে
৩৮. ৩৮. চার মাস হাজতবাসের পর
৩৯. ৩৯. ক’দিন ধরেই অসহ্য গরম
৪০. ৪০. জহিরের চিঠি
৪১. ৪১. বাকের নেত্রকোনা স্টেশনে নেমেছে
৪২. ৪২. সিদ্দিক সাহেবকে আজ একটু বিমর্ষ দেখাচ্ছে
৪৩. ৪৩. স্যার আমার নাম বাকের
৪৪. ৪৪. মামুন জাহানারাদের বাসায় এসে উঠল
৪৫. ৪৫. সোনালি ডানার চিল চক্রাকারে ওড়ে

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন