ভাস
(বিদূষকের প্রবেশ)
বিদূষক—(সহর্ষে) বৎসরাজের বিবাহোৎসব, খুবই রমণীয় ব্যাপার সন্দেহ নেই। সৌভাগ্যের কথা, সেই উৎসবে যোগদান করে সময়টা বেশ ভালোই কেটেছে! সঙ্কটের ঘূর্ণিজলে ডুবতে বসেছিলাম, কে জানত যে আবার উপরে ভেসে উঠতে পারব! এখন প্রাসাদে বাস করি, অন্তঃপুরের দিঘিতে স্নান করি আর মিষ্টদ্রব্য ভোজন করি—সেই মিষ্টি, বলব কী, খুবই মধুর আর কোমল! এ যেন শান্তিময় স্বর্গবাস—শুধু অপ্সরাই নেই! কিন্তু একটি বিরাট ত্রুটি দেখা যাচ্ছে; আমার খাদ্যটা ঠিক হজম হচ্ছে না! বিছানায় সুন্দর আচ্ছাদন! কিন্তু তার উপর শুয়েও ঘুম আসে না—চারদিকে দেখছি বাতরক্তের বিভীষিকা! রোগে কাবু হয়ে পড়ব এদিকে প্রাতভোজনটাও বাদ যাবে, ব্যাপারটা মোটেই সুখকর নয়!
(চেটীর প্রবেশ)
চেটী—আর্য বসন্তক কোথায়? (অগ্রসর হয়ে) এই যে আর্য বসন্তক! (কাছে এসে) আর্য বসন্তক! কতক্ষণ আপনাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি!
বিদূষক—ভদ্রে! কিসের জন্য এত খোঁজাখুঁজি?
চেটী—আমাদের রানিমা জিগ্যেস করলেন, জামাতা স্নান করেছেন কি?
বিদূষক—ভদ্রে! তিনি কেন জিগ্যেস করছেন, জানতে পারি?
চেটী—কেন আবার? পুষ্প, গন্ধদ্রব্য এসব নিয়ে আসতে হবে না?
বিদূষক—জামাতা স্নান করেছেন। ভদ্রে, খাদ্য বাদে সবকিছুই নিয়ে এস।
চেটী—খাদ্য নিষিদ্ধ হল যে!
বিদূষক—আমি হতভাগ্য! উদরের মধ্যে গোলযোগ শুরু হয়ে গেছে।
চেটী—তাহলে আপনি এইভাবেই থাকুন।
বিদূষক—তুমি যাও, আমিও মহারাজের কাছে যাচ্ছি।
(উভয়ের প্রস্থান)
প্রবেশক সমাপ্ত
(এরপর প্রবেশ করলেন পরিজনসহ পদ্মাবতী এবং আবন্তিকা বেশধারিণী বাসবদত্তা)
চেটী—রাজপুত্রী! প্রমোদবনে কেন এলেন?
পদ্মাবতী—শেফালিকাগুচ্ছে ফুল ফুটেছে কিনা তাই দেখতে?
চেটী—ফুটেছে; দেখে মনে হবে যেন প্রবালখচিত মুক্তামালায় ছেয়ে গেছে।
পদ্মাবতী—তাই যদি হয় তবে আর দেরি কিসের?
চেটী—তাহলে আপনি এই শিলার উপর কিছুক্ষণ বসুন, আমি তুলে আনছি।
পদ্মাবতী—আর্যে, এইখানেই বসা যাক।
বাসবদত্তা—তাই হোক।
(দুইজনে বসলেন)
চেটী―(ফুল তুলতে তুলতে) দেখুন, শেফালি ফুলে আমার অঞ্জলি ভরে গেছে!
পদ্মাবতী—(দেখে) কী বিচিত্র ফুল। চেয়ে দেখুন।
বাসবদত্তা—সত্যি কী সুন্দর ফুল!
চেটী—আর তুলব কি?
পদ্মাবতী—না, আর তুলে কাজ নেই।
বাসবদত্তা—তুলতে বারণ করছ কেন?
পদ্মাবতী—আর্যপুত্র এখানে এসে এই ফুলের সমারোহ দেখবেন, তাই আমারই গৌরব বাড়বে।
বাসবদত্তা—সখি, স্বামী তোমার প্রিয় হয়েছেন তো?
পদ্মাবতী—জানি না; তবে তাঁর বিরহে ব্যাকুল হয়ে উঠি।
বাসবদত্তা—(স্বগত) স্বামীর বিরহে থেকে আমি নিশ্চয়ই কঠিন কর্মে ব্রতী হয়েছি, এও তো এই কথাই বলছে!
চেটী—রাজপুত্রী ঠিকই বলেছেন—‘স্বামী আমার প্রিয়’
পদ্মাবতী—কিন্তু একটি বিষয়ে আমার সন্দেহ জাগছে!
বাসবদত্তা—সন্দেহ কিসে?
পদ্মাবতী—আর্যপুত্র আমার কাছে যেমন প্রিয়—আর্যা বাসবদত্তার কাছেও সেইরকমই ছিলেন কিনা—
বাসবদত্তা–তার চেয়েও বেশি!
পদ্মাবতী—কিসে জানলেন?
বাসবদত্তা—(স্বগত) তাইতো, আর্যপুত্রের প্রতি পক্ষপাত আছে বলেই একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি। এখন একটু ঘুরিয়ে বলি! (প্রকাশ্যে) তাঁর ভালোবাসা যদি অল্পই হত তাহলে তিনি কখনও স্বজন ত্যাগ করতেন না।
পদ্মাবতী—তা হয়তো সম্ভব।
চেটী—রাজপুত্রী! স্বামীকে ভালো করে বলুন, আমিও বীণা শিখব।
পদ্মাবতী—বলেছিলাম ওঁকে।
বাসবদত্তা—তিনি কী বললেন?
পদ্মাবতী—কিছু বলেননি তো! দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে শুধু চুপ করে রইলেন।
বাসবদত্তা—তাতে তুমি কী ভাবলে?
পদ্মাবতী—ভাবলাম, নিশ্চয়ই ওঁর বাসবদত্তার গুণাবলির কথা মনে পড়েছে, তাই নীরব রইলেন; শুধু দেখতে খারাপ হবে বলেই যেন চোখের জল ফেলেননি।
বাসবদত্তা—(স্বগত) যদি তাই সত্য হয়, তবে আমি ধন্যা।
(রাজা ও বিদূষকের প্রবেশ)
বিদূষক—কী সুন্দর! চয়নের পরে এখানে-ওখানে ছড়িয়ে আছে ‘বন্ধুক’ ফুল! তাতে প্রমোদবনটি চমৎকার দেখাচ্ছে। এদিকে আসুন মহারাজ!
রাজা—সখে বসন্তক, আমি আসছি! যখন আমি উজ্জয়িনীতে অবন্তী-রাজকুমারী বাসবদত্তাকে দেখে এক অনির্বচনীয় অবস্থার মধ্যে পড়েছিলাম তখন পঞ্চশর মদন তার পাঁচটি শরই নিক্ষেপ করেছিলেন, সেই শর কয়টি আজও হৃদয়ে বিঁধে আছে! পদ্মাবতীকে বিবাহ করে আর এক নতুন সমস্যার সম্মুখীন হলাম। মদন যখন পঞ্চশর, তখন এই ষষ্ঠ শরটি কেমন করে নিক্ষিপ্ত হল?
বিদূষক—দেবী পদ্মাবতী কোথায় গেলেন? বোধহয় লতামণ্ডপে গিয়েছেন কিংবা ‘পর্বততিলক’ নামক সেই শিলাখণ্ডে ‘অসন’ কুসমে ব্যাপ্ত বলেই যাকে মনে হয় ব্যাঘ্রচর্মে আচ্ছাদিত! কিংবা তাঁর গন্তব্যস্থান প্রবল কটু গন্ধে ভরা ‘সপ্তপর্ণবন’ অথবা বিচিত্র মৃগপক্ষীপূর্ণ ‘দারু পর্বত’? (ঊর্ধ্বে দৃষ্টিপাত করে কী অপরূপ! শরতের নির্মল আকাশে বনদেবের প্রসারিত বাহুর মতো রমণীয় সুশ্রী সারসশ্রেণি দলবদ্ধভাবে উড়ে যাচ্ছে! দেখুন একবার!
রাজা—দেখছি বই কি সখা! কখনো সরল ও প্রসারিত, কখনো বিচ্ছিন্ন, কখনও উপরে উড়ে যাচ্ছে, কখনো আবার নিচে নেমে আসছে! খোলস ছেড়ে দিলে সাপের উদর যেমন নির্মল দেখায় তেমনি নির্মল ওই আকাশ, সপ্তর্ষিমণ্ডলের ন্যায় কুটিল এই সারসশ্রেণি যেন ওই আকাশকে দুই ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছে।
চেটী—রাজপুত্রী দেখুন, দেখুন! শ্বেতপদ্মমালার মতো পাণ্ডুবর্ণ অথচ সুন্দর ওই সারসশ্রেণি কেমন দলবেঁধে উড়ে যাচ্ছে! এই যে প্রভু!
পদ্মাবতী—তাইতো! আর্যপুত্র যে! আর্যে, আপনার জন্যই আমার স্বামীকে আমি দর্শন দেব না। চলুন, আমরা মাধবীমণ্ডপে যাই।
বাসবদত্তা—তাই হোক!
(দুইজনে মাধবীলতা কুঞ্জে প্রবেশ করলেন)
বিদূষক—দেবী পদ্মাবতী এখানে এসে চলে গেছেন।
রাজা—বুঝলে কী করে?
বিদূষক—এই দেখুন না, শেফালিকাকুঞ্জ থেকে ফুল তোলা হয়েছে।
রাজা—বসন্তক! সত্যি ফুলের কী বৈচিত্র্য!
বাসবদত্তা—(স্বগত) ‘বসন্তক’ কথাটি শুনে আমার মনে হচ্ছে যেন আমি উজ্জয়িনীতেই আছি!
রাজা- তাহলে এস বসন্তক! আমরা এই শিলাতলে বসে পদ্মাবতীর জন্য অপেক্ষা করি।
বিদূষক—তাই হোক্! (বসেই উঠে পড়ল) উহ্ শরতের তীক্ষ্ণ রোদ একেবারে অসহ্য! চলুন, মাধবীমণ্ডপে প্রবেশ করি!
রাজা—বেশ, তুমি আগে চল।
বিদূষক—তাই হোক।
(দুজনে অগ্রসর হলেন)
পদ্মাবতী—সব পণ্ড করতে আসছেন আর্য বসন্তক! এখন কী করি?
চেটী—রাজপুত্রী! এই লতায় কত ভ্রমর এসে বসেছে, লতাটিকে কাঁপিয়ে দিই প্রভুকে ওরাই বারণ করবে।
পদ্মাবতী—তবে তাই কর।
(চেটী নির্দেশমতো কাজ শুরু করল)
বিদূষক—কী বিপদ, কী বিপদ—দাঁড়ান, দাঁড়ান।
রাজা—কেন?
বিদূষক—দুর্বিনীত ভ্রমরের দল আমাকে আক্রমণ করেছে!
রাজা—না না, তুমি ও কথা বল না। ভ্রমরগুলোকে তুমি ভয় দেখিও না! ওই দেখ ফুলের মধু পান করে অস্ফুট গুঞ্জনকারী ভ্রমরের দল কামার্তা প্রিয়ার আলিঙ্গনে আবদ্ধ! আমাদের পাদক্ষেপে পীড়িত হলে আমার মতোই ওরা প্রিয়ার বিচ্ছেদে কষ্ট পাবে! তার চেয়ে এস, আমরা এইখানেই বসি।
বিদূষক—বেশ, তবে তাই কর।
(দুজনে উপবেশন করলেন)
চেটী—রাজপুত্রী! এইবার আমরা কারারুদ্ধ হলাম!
পদ্মাবতী—ভাগ্যের কথা, আর্যপুত্র বসে পড়েছেন!
বাসবদত্তা—আমার ভাগ্য, আর্যপুত্র সুস্থই আছেন।
চেটী—রাজপুত্রী! আর্যার চোখে জল!
বাসবদত্তা—না, না, মধুকরের উৎপাতে কাশফুলের রেণু চোখে এসে পড়েছে, তাই!
পদ্মাবতী—তা হতে পারে!
বিদূষক—প্রমোদবন তো শূন্য দেখতে পাচ্ছি। কিছু জিজ্ঞাসা আছে।
রাজা—স্বচ্ছন্দে বল।
বিধূষক—কে আপনার প্রিয়তমা? তখনকার দেবী বাসবদত্তা? না এখনকার পদ্মাবতী?
রাজা—তুমি তো দেখছি আমাকে এক জটিল প্রেমসঙ্কটে ফেলে দিলে!
পদ্মাবতী—সত্যি, আর্যপুত্র কী বিষম সঙ্কটেই না পড়েছেন!
বাসবদত্তা—(স্বগত) আর, হতভাগিনী আমিও সঙ্কটে পড়েছি বই কি
বিদূষক—আপনি স্বচ্ছন্দে বলুন। একজন তো মরেই গেছেন আর একজন কাছে নেই!
রাজা—আমি বলব না। তুমি বড্ড মুখর!
পদ্মাবতী—এতে তো সবই বলা হয়ে গেল!
বিদূষক—আমি শপথ করছি, কাউকে বলব না। এই জিভ্ কাটলাম।
রাজা—সখে, বলতে আমার উৎসাহ নেই।
পদ্মাবতী—কী নির্বোধ! এতেও আর্যপুত্রের মন বুঝতে পারল না?
বিদূষক—কী, আমাকে বলবেন না? তাহলে এই শিলাখণ্ড থেকে এক পা-ও নড়তে পারবেন না। এই আপনাকে বন্দি করলাম!
রাজা- জোর করে?
বিদূষক—হ্যাঁ, জোর করে।
রাজা—তাহলে দেখা যাক্।
বিদূষক—প্রসন্ন হউন, প্রসন্ন হউন। আমি বয়স্যভাবেই ও-কথা বলেছি। আমার দিব্যি, আমাকে সত্য কথা বলুন।
রাজা—না বলে আর উপায় কী! তবে শোনো, পদ্মাবতী যদিও রূপে শীলে ও মাধুর্যে আমার আদরের পাত্রী, তবু বাসবদত্তায় আবদ্ধ আমার মনটি তিনি হরণ করতে পারেননি।
বাসবদত্তা—(স্বগত) আমার সকল দুঃখের পুরস্কার আজ পেলাম, আজ মনে হচ্ছে এই অজ্ঞাতবাসও কত মধুর!
চেটী—রাজপুত্রী! আপনার স্বামী নিষ্ঠুর!
পদ্মাবতী—ও কথা বল না। আমার আর্যপুত্র করুণাময়! আর্যা বাসবদত্তার গুণ তিনি এখনো ভুলতে পারেননি।
বাসবদত্তা—ভদ্রে, তুমি যা বললে তা তোমার উচ্চ বংশেরই যোগ্য।
রাজা—আচ্ছা, আমি তো বললাম। এখন তুমি বল, কে তোমার প্রিয়, পূর্বের বাসবদত্তা না বর্তমানের পদ্মাবতী?
বিদূষক—প্রলাপে কাজ নেই, দুজনেই আমার সম্মানের পাত্রী।
রাজা—মূর্খ! আমার কাছ থেকে জোর করে শুনে নিয়ে এখন নিজে চুপ করে আছ? বিদূষক—তাহলে কি আমার কাছ থেকেও জোর করে শুনবেন?
রাজা—হ্যাঁ, জোর করে।
বিদূষক—তাহলে শুনতে পাবেন না।
রাজা—হে মহাব্রাহ্মণ! প্রসন্ন হও, প্রসন্ন হও! স্বচ্ছন্দে বল।
বিদূষক—এখন তবে শুনুন। বাসবদত্তা আমার সম্মানের পাত্রী আর পদ্মাবতীও তরুণী, সুন্দরী ও করুণাময়ী—কোনো রাগ নেই, অহঙ্কারও নেই! কিন্তু বাসবদত্তার একটি মহৎ গুণ ছিল—তিনি মধুর খাদ্যসম্ভার নিয়ে আমাকে অভ্যর্থনা জানাতেন এই বলে—‘আর্য বসন্তক কোথায় গেলেন’?
বাসবদত্তা—(স্বগত) বসন্তক! এখন তাহলে এইটুকুই মনে রেখ! রাজা—বেশ বেশ বসন্তক, দেবী বাসবদত্তাকে আমি সব কথাই বলব।
বিদূষক—হায় বাসবদত্তা! বাসবদত্তা কোথায়? অনেকদিন আগেই তো তার মৃত্যু হয়েছে।
রাজা—হ্যাঁ, বাসবদত্তা তো জীবিত নেই! পরিহাসের প্রসঙ্গে আমার মন চঞ্চল হয়ে উঠেছিল, তাই আগের অভ্যাসমতোই কথাগুলো বলে ফেলেছি!
পদ্মাবতী—সুন্দর কথা চলছিল, এই নিষ্ঠুর লোকটিই বাধা দিল!
বাসবদত্তা—(স্বগত) এখন আমি আশ্বস্ত হলাম; এমন কথা আড়াল থেকে শোনাই ভালো!
বিদূষক—আপনি ধৈর্য ধরুন। দৈবকে অতিক্রম করা যায় না, যা ঘটবার তা এইভাবে ঘটেছে।
রাজা—বয়স্য, আমার অবস্থা তুমি বুঝতে পারছ না। কেননা, গভীর অনুরাগ ত্যাগ করা কঠিন, বারবার স্মরণ করলে দুঃখ নতুন হয়ে ওঠে। এমন অবস্থায় বুদ্ধি চায় অশ্রুবিসর্জনে ঋণমুক্ত হতে, মুক্তির পর প্রসন্নতা লাভ করতে!
বিদূষক—চোখের জলে আপনার মুখ সিক্ত হচ্ছে, আমি মুখধোবার জল নিয়ে আসছি।
(প্রস্থান)
পদ্মাবতী—আর্যে, আর্যপুত্রের মুখ অশ্রুসিক্ত! চলুন, আমরা বেরিয়ে যাই!
বাসবদত্তা—তাই ভালো। কিংবা তুমিই থাক, উৎকণ্ঠিত স্বামীকে ছেড়ে যাওয়া ঠিক হবে না। আমিই যাই।
চেটী—আর্যা ঠিক বলেছেন। প্রভুপত্নীর স্বামীর কাছে যাওয়াই ভালো।
পদ্মাবতী—আমি কি তাহলে প্রবেশ করব?
বাসবদত্তা—যাও সখি, প্রবেশ কর।
(প্রস্থান)
(এরপর প্রবেশ করলেন বিদূষক ও পদ্মাবতী—বিদূষকের হাতে পদ্মের পাতায় জল)
বিদূষক—এই যে দেবী পদ্মাবতী!
পদ্মাবতী—আর্য বসন্তক! এটা কী?
বিদূষক–(বিমূঢ় কণ্ঠে) এটা—মানে, মানে ওটা–
পদ্মাবতী—বলুন আর্য, বলুন।
বিদূষক—বাতাসে কাশফুলের রেণু মহারাজের চক্ষে এসে পড়েছে, মুখ ভেসেছে চোখের জলে। এই মুখ ধোবার জল; তা আপনিই গ্রহণ করুন।
পদ্মাবতী—(স্বগত) প্রভুর যেমন দাক্ষিণ্য, ওর পরিজনের তাই। (কাছে গিয়ে) আর্যপুত্রের জয় হোক। এই যে মুখ ধোবার জল!
রাজা—এই যে পদ্মাবতী (জনান্তিকে) বসন্তক এ কী ব্যাপার?
বিদূষক—(রাজার কানে কানে) ব্যাপারটা এই।
রাজা—সাধু বসন্তক, সাধু। (আচমন করে) বস পদ্মাবতী।
পদ্মাবতী—আর্যপুত্রের যেমন আদেশ।
(বসলেন)
রাজা—পদ্মাবতী। শরৎকালের চাঁদের মতো সাদা কাশফুলের রেণু বাতাসে উড়ে এসে পড়ল চোখে, তাই মুখে নামল চোখের ধারা। (স্বগত) নতুন বিবাহিতা এই বালিকা হয়তো সত্য কথা শুনে ব্যথা পাবে। এর স্বভাব ধীর কিন্তু স্ত্রীজাতি স্বভাবতই অধীর!
বিদূষক—সখে, আজ অপরাহ্ণে মগধরাজ আপনাকে সঙ্গে নিয়ে বন্ধুপরিজনদের সঙ্গে দেখা করবেন। সৎকারের বিনিময়ে সৎকার হলে প্রীতির বন্ধন দৃঢ় হয়। সুতরাং এখন উঠুন।
রাজা—বেশ ভালো কথা। (আসন ত্যাগ করলেন) বিশাল গুণরাশির অধিকারী কিংবা বিপুল সৎকারের কর্তা সুলভ কিন্তু বোদ্ধাই দুর্লভ।
[চতুর্থ অঙ্ক সমাপ্ত]
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন