২৩. ঘৃণার উদ্রেক না করে কীভাবে সমালোচনা করবেন

ডেল কার্নেগি

ত্রয়োবিংশ পরিচ্ছেদ
ঘৃণার উদ্রেক না করে কীভাবে সমালোচনা করবেন

চার্লস্ শোয়াব একবার তার ইস্পাতের মিল ঘুরে দেখার সময় লক্ষ্য করলেন কিছু কর্মী ধূমপান করছে। তাদের ঠিক মাথার উপরেই লেখা ছিলো ‘ধূমপান নিষেধ’। শোয়ব কি লেখাটা দেখিয়ে বললেন ‘তোমরা পড়তে জানো?’ ‘ওহ্ না, শোয়ব এরকম ছিলেন না।‘ তিনি কর্মচারিদের কাছে এগিয়ে গেলেন আর প্রত্যেকের হাতে একটা করে চুরুট দিলেন আর বললেন, ‘তোমরা এগুলো বাইরে গিয়ে খেলে ভালো হয়।‘ তারা জানতো শোয়ব বুঝেছেন কাজটা তারা অন্যায় করেছে-তা সত্ত্বেও তারা তাকে প্রশংসা করলো কারণ তিনি দোষটার জন্য কিছুই বলেন নি আর তাদের অহমিকায় আঘাত দেননি! এরকম লোককে আপনি ভালো না বেসে পারবেন না। নয় কি?

জন ওয়ানামেকারও একই পদ্ধতি নিয়েছিলেন। তিনি ফিলাডেলফিয়ায় তার বিরাট দোকানে প্রায় রোজই ঘুরে দেখতেন। একদিন দেখলেন একটি মেয়ে কোন কাউন্টারে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ বিক্রেতারা কেউ কোথাও নেই। তারা একপাশে জটলা করে কথাবার্তা আর হাসিঠাট্টায় ব্যস্ত। ওয়ানামেকার একটাও কথা বললেন না। নিঃশব্দে কাউন্টারের পিছনে গিয়ে তিনি মেয়েটির যা দরকার এনে দিয়ে কর্মচারিদের প্যাকিং করতে দিয়ে গেলেন।

১৮৮৭ সালের ৮ই মার্চ সুন্দর বক্তা হেনরি ওয়ার্ড রীচার মারা যান, বা জাপানীদের কথায় নতুন জগতে যান। পরের রবিবার লিম্যান অ্যাবেটকে তাঁর সম্বন্ধে কিছু বলার জন্য আবেদন জানানো হয়। সব সেরা কথিকা বানাবার জন্য লিম্যান ফ্লবেয়ারের মতই ঘসামাজা করে দারুণ একটা বক্তৃতা লিখে তার স্ত্রীকে পড়ে শোনালেন। বক্তৃতাটা মোটেও ভালো হয়নি ঠিক যেমন বক্তৃতা লেখা হয়। তার স্ত্রীর যদি বুদ্ধি কম থাকতো তিনি বলতেন, ‘লিম্যান, একদম বাজে হয়েছে, এটা চলবে না। শ্রোতারা এটা শুনে ঘুমিয়ে পড়বে। এটা একেবারে বিশ্বকোষের মত হয়েছে। সাধারণ জিনিস লেখ, এসব পড়লে তোমার দর কমে যাবে।’

এটাই হয়তো তিনি বলতেন। আর বললে কি হত নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। তার স্ত্রীও তা জানতেন। তাই তিনি কেবল বললেন যে লেখাটা নর্থ আমেরিকান রিভিউ’র জন্যে চমৎকার হয়েছে। তিনি বেশ প্রশংসা করে নরম করে বললেন লেখাটা বক্তৃতার মত হয়নি। লিম্যান অ্যাবেট ব্যাপারটা বুঝলেন আর যত্ন করে লেখা বক্তৃতাটা ছিঁড়ে ফেললেন আর কিছু না লিখেই টানা বক্তৃতা দিয়ে গেলেন।

অতএব আপত্তি না জানিয়ে বা দোষ না ধরিয়ে মানুষকে বদলাতে ২নং নিয়ম হল : মানুষের দোষ, ঘোরানো পথই দেখান।

সকল অধ্যায়

১. ০১. অন্যের সমালোচনা করবেন না
২. ০২. জনগণের সঙ্গে ব্যবহারের রহস্য
৩. ০৩. অন্যকে আপনার সঙ্গী করুন–নয় তো একলা চলতে হবে
৪. ০৪. একাজ করুন সবাই আপনাকে চাইবে
৫. ০৫. ভালো লাগানোর সহজ পথ
৬. ০৬. এ রকম না করলে ঝামেলায় পড়বেন
৭. ০৭. ভালো বক্তা হওয়া যায় কী করে
৮. ০৮. অন্যদের কীভাবে উৎসাহী করা যায়
৯. ০৯. চট করে ভালো লাগানোর পথ
১০. ১০. আপনি তর্কে জিততে পারবেন না
১১. ১১. শত্রুতা এড়ানোর উপায়
১২. ১২. ভুল করে থাকলে তা স্বীকার করুন
১৩. ১৩. শুভবুদ্ধির পথ ধরে
১৪. ১৪. সক্রেটিসের রহস্য
১৫. ১৫. অভিযোগের সাবধানতা
১৬. ১৬. সহযোগিতা পাওয়ার উপায়
১৭. ১৭. অবাক করার কিছু নিয়ম
১৮. ১৮. যা সবাই আশা করে
১৯. ১৯. সকলের পছন্দসই আবেদন
২০. ২০. চলচ্চিত্র এটা করে, রেডিও যা করে আপনিও করেন না কেন
২১. ২১. যখন অন্য কিছুতে কাজ হয় না, এটা চেষ্টা করুন
২২. ২২. অন্যের দোষ ধরতে হলে এইভাবে শুরু করুন
২৩. ২৩. ঘৃণার উদ্রেক না করে কীভাবে সমালোচনা করবেন
২৪. ২৪. আগে নিজের ভুলের কথা বলুন
২৫. ২৫. কেউই হুকুম পছন্দ করে না
২৬. ২৬. অপরকে মুখ রক্ষা করতে দিন
২৭. ২৭. মানুষকে সাফল্যের পথে নেওয়া
২৮. ২৮. প্রশংসা করুন
২৯. ২৯. ভুল সংশোধন সহজ করুন
৩০. ৩০. আনন্দে যা চান অন্যকে দিয়ে তাই করার পথ
৩১. ৩১. যে চিঠিতে জাদু জাগে
৩২. ৩২. গৃহজীবনে সুখী হওয়ার সাতটি পথ
৩৩. ৩৩. ভালোবাসুন ও বাঁচতে দিন
৩৪. ৩৪. সমালোচনা করবেন না
৩৫. ৩৫. সকলকে সুখী করার উপায়
৩৬. ৩৬. মেয়েরা যা ভালোবাসে
৩৭. ৩৭. সুখী হতে হলে এটা অবহেলা করবেন না

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন