রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
যারা আমার সাঁঝ – সকালের গানের দীপে জ্বালিয়ে দিলে আলো
 আপন হিয়ার পরশ দিয়ে ; এই জীবনের সকল সাদা কালো
 যাদের আলোক-ছায়ার লীলা ; মনের মানুষ বাইরে বেড়ায় যারা
 তাদের প্রাণের ঝর্ না-স্রোতে আমার পরান হয়ে হাজার ধারা
 চলছে বয়ে চতুর্দিকে । নয় তো কেবল কালের যোগে আয়ু ,
 নয় সে কেবল দিনরজনীর সাতনলি হার , নয় সে নিশাস-বায়ু ।
 নানান প্রাণের প্রীতির মিলন নিবিড় হয়ে স্বজন – বন্ধুজনে
 পরমায়ুর পাত্রখানি জীবন – সুধায় ভরছে ক্ষণে ক্ষণে ।
 একের বাঁচন সবার বাঁচার বন্যাবেগে আপন সীমা হারায়
 বহু দূরে ; নিমেষগুলির ফলের গুচ্ছ ভরে রসের ধারায় ।
 অতীত হয়ে তবুও তারা বর্তমানের বৃন্তদোলায় দোলে —
 গর্ভ-বাঁধন কাটিয়ে শিশু তবু যেমন মায়ের বক্ষে কোলে
 বন্দী থাকে নিবিড় প্রেমের গ্র ন্থি দিয়ে । তাই তো যখন শেষে
 একে একে আপন জনে সূর্য-আলোর অন্তরালের দেশে
 আঁখির নাগাল এড়িয়ে পালায় , তখন রিক্ত শুষ্ক জীবন মম
 শীর্ণ রেখায় মিলিয়ে আসে বর্ষাশেষের নির্ঝরিণী – সম
 শূন্য বালুর একটি প্রান্তে ক্লান্ত সলিল স্রস্ত অবহেলায় ।
 তাই যারা আজ রইল পাশে এই জীবনের সূর্য-ডোবার বেলায়
 তাদের হাতে হাত দিয়ে তুই গান গেয়ে নে থাকতে দিনের আলো —
 ব ‘ লে নে ভাই , এই যে দেখা এই যে ছোঁওয়া , এই ভালো এই ভালো ।
 এই ভালো আজ এ সংগমে কান্নাহাসির গঙ্গাযমুনায়
 ঢেউ খেয়েছি , ডুব দিয়েছি , ঘট ভরেছি , নিয়েছি বিদায় ।
 এই ভালো রে ফুলের সঙ্গে আলোয় জাগা , গান গাওয়া এই ভাষায় ;
 তারার সাথে নিশীথ – রাতে ঘুমিয়ে পড়া নূতন প্রাণের আশায় ।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন