জবরদখল – ৭

সাত

মানিকের স্বপ্ন তবে সফল হলো। আকাশের তারার সঙ্গে এক ট্যাকসিতে চড়ে পাড়ি দিচ্ছে।

কিন্তু আকাশের তারা, না ধারালো ছোরা?

এই মেয়ের সঙ্গে ভালবাসার সাধ?

তবু কী ভীষণ আকর্ষণ! কী ভাল—লাগা।

মানিকের মনে হচ্ছে সে বুঝি মরে যাবে। হাতটা যেখানে চেপে ধরেছিল, সেখানটায় যেন আগুনের দাহ।…বিজু সুকুমার এদের কি বিশ্বাস করানো যাবে…?

কোনদিকে চলেছেন খেয়াল রাখছেন?

মানিক সামনে, টিসু পিছনে।

হঠাৎ এই ধমকে চমকে উঠে ঘাড় ফিরিয়েই মানিক বলে বসল, সেটা তো আপনারই দেখার কথা। ভুলিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছি কিনা—

হুঁ। রাগ আছে বিলক্ষণ।

ভ্যাগাবণ্ডের আবার রাগ। তবে অবাক হচ্ছিলাম বটে।

অবাক কেন?

কতো সহজে মানুষকে কতো অপমান করতে পারেন। নিজের মাকে পর্যন্ত ছাড়েন না। কী শক্ত শক্ত কথা।

মাকে? মাকে আরো অনেক শক্ত কথা বলা যেত। তাড়া ছিল তাই—

মানিক নিঃশ্বাস ফেলে বলে, বাইরে থেকে মানুষকে কতো অন্যরকম ভাবা হয়। আপনাকে দেখে দেখে মনে হতো পৃথিবীর সেরা সুখী।…কিন্তু দেখছি একেবারে উল্টো। বাবা নেই, দাদু পঙ্গু, মার সঙ্গে আদায়—কাঁচকলায়—আর এক দাদু—

থাক, আর করুণা দেখাতে হবে না।

বলেই বলে ওঠে টিসু, ‘আর দাদু’ কী বলছেন?

বলছি, জানি না তিনি কী রকমের দাদু। তবে দাদু বলছেন তাই বলছি—আর এক দাদু বিশ্বাসঘাতক।

টিসু অন্যমনস্কভাবে বলে, ব্যাপারটা কিন্তু আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। ভবদাদু সম্বন্ধে অঙ্কটা এক্ষুণি কষে ফেলতে পারছি না।…কথাটা বুঝতে পারছেন? লেখাপড়া করেছিলেন কিছু? না শুধুই মস্তানি করে বেড়িয়েছেন?

মানিক যেন ক্রমশই চমকাচ্ছে।

এদের বাড়ি ঢোকা অবধি মানিক সমানেই খুব সাবধানে কথা চালিয়ে আসছে। পাছে নিজেদের পরিভাষাগুলো মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়, তাই এই সাবধানতা।

সাবধানেই বলল, যাকে যা ইচ্ছে অপমান করবার একটা আশ্চর্য বাহাদুরী আছে আপনার।

সত্যি কথা শুনলেই অপমান মনে হয়, এই হচ্ছে মানুষের দোষ।

গাড়ি গন্তব্যস্থলের কাছাকাছি এসে পড়েছে। মানিক বলল, এতোক্ষণে আশা করি আমায় বিশ্বাস করতে পারছেন।

টিসু ভুরু তুলে বলল, এতোক্ষণে? এর আগে করা হয়নি?

কিছু সন্দেহ ছিল নিশ্চয়।

সিকি ইঞ্চি থাকলেও, গাড়িতে আপনাকে নিতাম?

মানিক আবার চমকে টিসুর টানটান মাজা মাজা দৃপ্ত মুখটার দিকে তাকায়। তারপর একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে, কিন্তু আমি তো সত্যিই ভাল নই। আমি সত্যিই মিথ্যেবাদী, ধাপ্পাবাজ, জোচ্চোর।

আর কোনো ভাল ভাল বিশেষণ জানা নেই বুঝি?

টিসু বলল, আর চারটি মুখস্থ করে রাখবেন। যাক আপনার সেই বন্ধুর নাম কি?

অ্যাঁ, কী বলছেন?

আচ্ছা কেবল কেবল অমন চমকাচ্ছেন কেন বলুন তো? কোনো অসুখ আছে না কি? বলছি, যে বন্ধুটি হাসপাতালে আটকে বসে আছেন, তাঁর নাম কি?

ওঃ। মানস বোস।…এই যে, নামুন।’

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন