২০. সংস্কৃত কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

রামমাণিক্য বিদ্যালঙ্কার অকস্মাৎ পরলোকগমন করায় সংস্কৃত কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারির পদটি খালি হোল। এই পদের জন্য দাবিদার অনেক। কিন্তু সাহেবরা বুঝেছে যে বৃদ্ধ পণ্ডিত বা গ্রামের টুলো বামুনদের দিয়ে শিক্ষালয় পরিচালনার কাজ ভালো চলে না। এজন্য আধুনিক দৃষ্টিসম্পন্ন কোনো তেজস্বী ও উচ্চ শিক্ষিত যুবকের প্রয়োজন। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা বিভাগের সেরেস্তাদার ঈশ্বরচন্দ্ৰ বছর পাঁচেক ধরে বেশ যোগ্যতার সঙ্গে কাজ করে সুনাম অর্জন করেছে। সেইজন্য শিক্ষা বিভাগের সেক্রেটারি ময়েট সাহেব ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অধ্যক্ষ মার্সাল সাহেবকে অনুরোধ জানালেন ঈশ্বরকে ছেড়ে দেবার জন্য। মার্সাল সাহেব রাজি হলেন সানন্দে।

উভয় চাকরিরই বেতন একই, সেই পঞ্চাশ টাকা। তবুও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের চেয়ে সংস্কৃত কলেজে কাজ নেওয়ায় ঈশ্বরের বেশী আগ্রহ থাকাই স্বাভাবিক। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে পড়াতে হয় সাহেবদের, তারা বাংলা বা সংস্কৃত শেখে চাকরি রক্ষার কারণে। আর সংস্কৃত কলেজে পড়ানো হয় দেশীয় ছাত্রদের এবং সেটিই প্রকৃত বিদ্যাচচার স্থল। মার্সাল সাহেব ঈশ্বর পণ্ডিতের ওপর এমনই প্রীত ছিলেন যে ঈশ্বর ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ পরিত্যাগ করার পর তাঁর ভাই দীনবন্ধুকেই তিনি সে জায়গায় বসালেন।

সংস্কৃত কলেজের সেক্রেটারি রসময় দত্ত। ইনি নিজে সংস্কৃত তেমন কিছু জানেন না। কিন্তু ইংরেজি ভাষায় দক্ষ এবং সাহেবদের সঙ্গে উত্তমরূপে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেন বলে সংস্কৃত কলেজ পরিচালনার ভার পেয়েছেন। ঈশ্বরচন্দ্র হলেন তাঁর সহকারী। বাবু রসময় দত্তের আরও পাঁচ রকম কর্ম আছে, তা ছাড়া তিনি ছোট আদালতের সাব জজ, তিনি সর্বক্ষণ কলেজে থাকতে পারেন না, ঘণ্টা দু একের জন্য এসে ব্যবস্থাদি ঠিক মতন চলছে কিনা দেখে যান। ঈশ্বরচন্দ্র নিজে কলেজের পরিচালনা পদ্ধতি সম্পূর্ণ ঢেলে সাজাবার জন্য উঠে পড়ে লাগলেন।

সংস্কৃত কলেজের ছাত্ররা পাঠ শেষ করবার পর বিদ্যাভূষণ, বিদ্যালঙ্কার, বিদ্যারত্ন, বিদ্যাসাগর ইত্যাদি পদবী পায়। ঈশ্বরচন্দ্রের আগেও দু একজন বিদ্যাসাগর হয়েছেন, পরেও হয়েছেন। ঈশ্বরচন্দ্ৰ নিজের নাম লেখার সময় লেখেন ঈশ্বরচন্দ্ৰ শৰ্মাণ, কিন্তু লোকে তাঁকে বিদ্যাসাগর বলে ডাকতে শুরু হয়েছ কয়েক বছর আগে থেকেই সংস্কৃত কলেজে আসবার পর ঐ নামেই তিনি পরিচিত হয়ে উঠলেন।

নতুন চাকরি নেওয়ার পর একবার পিতামাতার সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন। ঈশ্বরচন্দ্র তাই ভাইদের নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। কলকাতার বাসা থেকে স্বগ্রাম মেদিনীপুরে পৌঁছোবার ব্যবস্থা অতি সরল, গাড়ি-ঘোড়ার কোনো বালাই নেই। বউবাজার থেকে বেরিয়ে পদব্রজে হাটখোলার গঙ্গার ধারে এসে ফেরি নৌকোয় পার হয়ে গিয়ে উঠলেন শালিখায়। তারপর বাঁধা রাস্তা ধরে হণ্টন। বৈশাখ মাস, যখন তখন ঝড় বৃষ্টির সম্ভাবনা, সে রকম হলে গাছতলায় বিশ্রাম। মসটি গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে রাস্তা ছেড়ে ঈশ্বরচন্দ্ৰ সদলবলে নেমে পড়লেন মাঠের মধ্যে। কোণাকুণি পশ্চিম মুখে গেলে দূরত্ব সংক্ষেপ হয়। বর্ষার সময় রাস্তা ও মাঠ প্রায় একাকার হয়ে যায়, কোথাও কোথাও হাঁটু সমান কাদা ঠেলে এগোতে হয়। এখন অবশ্য মাঠ ঘাট শূকনো। ওঁরা দিন শেষে পৌঁছেলেন রাজবলহাটে। এখানে দামোদর নদ পেরুতে হবে। সঙ্গে চিঁড়ে গুড় মুড়ি যা ছিল, তা দিয়ে আহার সেরে নেওয়া হলো।

দামোদর অতি ভয়ঙ্কর ও সুন্দর নদ। এখন গ্ৰীষ্মকাল, অধিকাংশ নদী নালারই তেজ মরে যায়, কিন্তু দামোদর এই সময়ও তপস্যারত যোগীর মতন কৃশকায় হলেও সমান তেজস্বী। ভরা বিষয়ি এই নদ করাল রূপ ধারণ করে, দু পার্থের চার-পাঁচ ক্রোশ জলমগ্ন হয়ে যায়। প্রতি বৎসরই বন্যা।

সে রাত্রে নৌকো পাওয়া গেল না বলে ফিরে আসতে হলো রাজবলহাটে। এই গ্রামে রাত্রি যাপনের জন্য সরাইখানা আছে। ধনী ব্যক্তিরা পথিকদের জন্য মধ্যে মধ্যে এ রকম সরাইখানা প্রতিষ্ঠা করে রেখেছেন, পথিকরা বিনা ব্যয়ে এখানে থেকে যান।

ভোরে উঠে দামোদর পেরিয়ে আবার পাঁচ ক্রোশ পথ হেঁটে এসে পৌঁছোলেন পাতুল গ্রামে। এখানে ঈশ্বরচন্দ্রের কিছু আত্মীয়স্বজন থাকেন, তাঁদের সঙ্গে দেখা করে আবার বেরিয়ে পড়লেন নিজের গ্রামের উদ্দেশ্যে। এখান থেকে বীরসিংহা গ্রাম মাত্র সাত ক্ৰোশ। দুপুরে দুই ঘটিকার মধ্যেই ওঁরা পৌঁছে গেলেন বাড়িতে।

আগে থেকে খবর দেওয়া ছিল না, অকস্মাৎ পুত্রদের উপস্থিত হতে দেখে বাড়িতে আনন্দের সমারোহ পড়ে গেল।

ঠাকুরদাস চাকুরি থেকে অবসর নিয়ে এখন গ্রামেই থাকেন। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে ঢোকার পরই ঈশ্বরচন্দ্ৰ প্ৰায় জোর করেই পিতাকে চাকুরি ছাড়িয়েছেন। ঠাকুরদাস তখন মাইনে পেতেন দশ টাকা। তাঁর সমন্বয়েসীরা অবশ্য পরামর্শ দিয়েছিলেন, কাঁচা বয়েসের ছেলের কথায় এমন হুট করে কাজ ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয়, ছেলে যদি পরে দুশ্চরিত্র হয়ে যায়, বাপ মাকে আর না দেখে, তখন ঠাকুরদাসকে আবার চাকরির খোঁজে দোরে দোরে ঘুরতে হবে। কিন্তু ঠাকুরদাস ততদিনে বুঝে গেছেন, এ ছেলে ঠাকুর দেবতাদের বিশেষ ভক্তি করে না বটে, কিন্তু পিতা মাতাই এর ঠাকুর দেবতা।

 

সাত ভাইয়ের মধ্যে ঈশ্বরচন্দ্ৰ সকলের জ্যেষ্ঠ। তিনি সবচেয়ে বেশী কৃতী হয়েছেন বলেই নয়, বাল্যকাল থেকেই তিনি জননীর বেশী প্ৰিয়। ঈশ্বর এসেছে বলে ভগবতী অত বেলাতেই আবার রান্নাবান্না নিয়ে মেতে উঠলেন। ঈশ্বরচন্দ্রের পত্নী দীনময়ীও রান্নাঘরে ঢুকে বসে রইলেন শাশুড়ীর সঙ্গে। স্বামী অনেকদিন পরে বাড়ি এসেছেন বটে, কিন্তু দিনের আলোয় স্বামীর সঙ্গে তাঁর দেখা হবে না। সে রকম নিয়ম নেই।

বাবা মায়ের সঙ্গে কুশল সংবাদ সেরে নিয়ে ঈশ্বরচন্দ্ৰ বেরুলেন পাড়া বেড়াতে। প্রথমেই গেলেন কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে। ইনি ঈশ্বরচন্দ্রের আদি শিক্ষক, প্ৰত্যেকবার বাড়ি আসবার সময় ঈশবরচন্দ্র এর জন্য নতুন বস্ত্ৰ কিনে আনেন। চট্টোপাধ্যায় মহাশয়ের স্বাস্থ্য ভগ্ন হয়েছে, দৃষ্টিশক্তিও ক্ষীণ, তবু তিনি একটি দৃশ্য দেখে চমকে উঠলেন। গৃহিণীকে ডেকে বললেন, ওগো, দেখে যাও, দেখে যাও পাগল ছেলের কাণ্ড!

 

অদূরের মাঠে ছেলেরা জল কাদার মধ্যে কপাটি খেলছিল, ঈশ্বরচন্দ্রও তাদের মধ্যে নেমে পড়ে লাফালাফি করছেন। গুরুমশাই ঈশ্বরকে ডাকাডাকি করতে লাগলেন, ঈশ্বর দূর থেকেই উত্তর দিলেন, দাঁড়ান, খেলাটি সেরে লই!

খানিক বাদে ঈশ্বরচন্দ্ৰ এলেন হাঁপাতে হাঁপাতে। গুরুমশাই বললেন, এ কি কাণ্ড দেখো! একেবারে বালকদের সঙ্গে মিশে বালক হয়ে গেলে!

ঈশ্বরচন্দ্র বললেন, কলকেতায় তো আর খেলাধূলার সুযোগ হয় না! গ্রামে এলেই আমার শরীর সুস্থ থাকে। নিয়মিত কপাটি খেললে উদরাময় হয় না।

গুরুমশাই তাঁর পত্নীকে বললেন, শোনো ছেলের কথা! এ এখন কী হয়েছে জানো! সংস্কৃত কলেজের সহকারী পরিচালক, দু বেলা সাহেবদের সঙ্গে কথা কইতে হয়, দেশের মাথা মাথা লোকেরা যেখানে ঠাঁই পায় না—

ঈশ্বরচন্দ্ৰ হাসতে লাগলেন।

গুরু-পত্নী বললেন, আমাদের সেদিনের সেই ঈশ্বর, এই তো এইটুকুন। গুটলিমতন চেহারা ছিল, কী দুষ্টামিই করতো! সে আজ এত বড়টি হয়েছে। অ ঈশ্বর, তোর বয়েস কত হলো?

ঈশ্বরচন্দ্র হিসেব কষে বললেন, এই ভো ছাব্বিশে পড়লাম।

তিনি বললেন, চেহারা দেখে কিন্তু বোঝা যায় না বাপু! সেই যেন ছোটটিই রইছিস। গুরুমশাই বললেন, হ্যাঁরে ঈশ্বর, সংস্কৃত কলেজের ছেলেরা তোকে মানে?

ডাল-ভাত খাওয়া ছেলেরা আমায় মানবে না?

কথায় কথায় একটু বাদে কালীকান্ত জিজ্ঞেস করলেন, ক্ষীরপাই যাবি নাকি? তা হলে চল আমিও তোর সাথেই যাই। পরশ্ব আমায় সে স্থলে যেতে হবে।

ক্ষীরপাই গ্রামে ঈশ্বরচন্দ্রের শ্বশুরালয়। তিনি কদাচিৎ সেখানে যান। এখন তাঁর স্ত্রী এখানেই রয়েছেন, সুতরাং যাবার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

ঈশ্বরচন্দ্র বললেন, আপনার শরীর তো দেখছি ভালো না। আপনি আবার অত দূর যাবেন কী জন্য?

কালীকান্ত বললেন, কী করি বল, আবার একটি বিবাহের সম্বন্ধ এসেছে, না করলেই নয়।

ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিস্মিত হয়ে বললেন, বিবাহের সম্বন্ধ? কার্য? আপনার?

কালীকান্ত বললেন, আর বলিস কেন! না করলে নয়, ওরাও ছাড়ে না।

ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিস্ফারিত চক্ষে তাকিয়ে রইলেন গুরুর দিকে। গুরু-পত্নী পাশেই বসা, তাঁর মুখেও কোনো ভাবান্তর নেই। কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায় ভঙ্গ কুলীন, বহু বিবাহে আলস্য নেই। ঈশ্বরচন্দ্র ছেলেবেলা থেকেই জানেন এ কথা। বাড়িতে এই একটিই স্ত্রী। অন্যান্য গ্রামে স্ত্রীদের কাছে বৎসরে একবার করে টাকা আদায় করতে যান। সেই সব স্ত্রীদের বৎসরে একবার তিনি সহবাস দিয়ে ধন্য করেন বলে তাদের পিতামাতাকে অর্থব্যয় করতে হয়। প্ৰত্যেকবার।

এসব জানা সত্ত্বেও ঈশ্বরচন্দ্র আজ যেন গুরুকে নতুনভাবে দেখলেন, তাঁর সমস্ত শরীরে সঞ্চারিত হয়ে গেল ঘৃণা, গুরু হিসেবে যাঁকে শ্রদ্ধা করেছেন, মানুষ হিসেবে তিনি এত অশ্রদ্ধেয়! ইদানীং ঈশ্বর অনুভব করছেন, খাঁটি মানুষ বড় দুর্লভ। লেখাপড়া তো শিখছে অনেকেই, কিন্তু তাদের মধ্যেই বা খাঁটি মানুষ কজন?

এই বৃদ্ধের তিনকাল গিয়ে এককালে ঠেকেছে, এখনো বিবাহ করার শখ? জেনেশুনে আবার একটি মেয়ের সর্বনাশ করবে?

ঈশ্বরচন্দ্রকে রুদ্ধবাক দেখে গুরুমশাই নিজেই বললেন, কী করি বল, পাঠশালাটি এখন ভালো চলে না, আমার এ পক্ষেই ছয়টি ছেলেমেয়ে, এত বড় সংসার চালানো কি সহজ কথা! পুরানো শ্বশুরবাটিগুলান থেকেও আদায়পত্তর আজকাল আর ভালো হয় না, রোজগারের একটা ব্যবস্থা করতে হবে তো!

ঈশ্বরচন্দ্র জিজ্ঞেস করলেন, সে মেয়েটির বয়েস কত?

গুরুমশাই বললেন, নয় পার হয়ে গেছে। এত বড় বয়স্থ কন্যা, তার পিতা অতি ব্যস্ত হয়ে আমার একেবারে হাতে পায়ে ধরেছে। টাকা পয়সাও এরা দেবে ভালো।

ঈশ্বরচন্দ্র কড়া গলায় বললেন, দুদিন পর আপনি চোখ বুজলে সে মেয়েটির যে কপাল পুড়বে?

–আর তার যদি বিবাহ না হয়, সমাজে তার বাপ মা পতিত হয়ে যাবে না?

—আপনার ছেলে শ্ৰীনাথ-সেও তো উপযুক্ত হয়েছে, তার সঙ্গেই এই কন্যার বিবাহ দিন না কেন?

—শ্ৰীনাথের আমি অন্যত্র বিবাহ ঠিক করিছি। তোকে বললুম না, টাকা পয়সার বড় টান যাচ্ছে।

গুরু-পত্নী স্বহস্তে প্ৰস্তুত চিঁড়ের মোয়া এনে দিলেন ঈশ্বরের জন্য। কিন্তু ঈশ্বর হাত জোড় করে বললেন, মাপ করুন, এ বাড়িতে আমি জলস্পর্শ করবো না।

তারপর কালীকান্তের পা ছুঁয়ে প্ৰণাম করে বললেন, গুরুমহাশয়, আপনার সহিত এই আমার শেষ দেখা। এ বাড়িতে আর আমি কোনোদিন আসবো না।

পিছন ফিরে হন হন করে হাঁটতে লাগলেন ঈশ্বরচন্দ্র। গুরুমশাই তাঁর ক্রোধের কারণ বুঝতে না পেরে বিস্মিতভাবে ডাকতে লাগলেন, অ ঈশ্বর, শোন, কী হলো, অ ঈশ্বর

ঈশ্বর আর দাঁড়ালেনও না, উত্তরও দিলেন না।

তারপর থেকে সর্বক্ষণ ঈশ্বরের মন চঞ্চল হয়ে রইলো। যাঁরা নমস্য, যাঁরা শ্ৰদ্ধেয় ব্যক্তি, তাঁরাও এই প্রকার অন্যায় করে, তবে সাধারণ অশিক্ষিত বা কুশিক্ষিত ব্যক্তিরা তো এ রকম করবেই। অথচ এর প্রতিবিধান করার কোনো ক্ষমতা তাঁর নেই, এ কথা চিন্তা করেই গায়ে যেন জ্বালা ধরে।

তাঁর মনে পড়লো, তাঁর ছাত্রাবস্থায় সংস্কৃত কলেজে তাঁর ব্যাকরণ শিক্ষক শম্ভুনাথ বাচস্পতি পত্নী বিয়োগের পর সেই বৃদ্ধ বয়েসেই আবার বিবাহ করতে উদ্যত হন। ঈশ্বরচন্দ্র তখন তাঁকে বলেছিলেন, এরূপ বয়সে মহাশয়ের বিবাহ করা পরামর্শ সিদ্ধ নয়। বাচস্পতি শুনলেন না, আবার এক বালিকাকে বিয়ে করে আনলেন। সেই থেকে ঈশ্বরচন্দ্র আর যেতেন না। শম্ভুনাথ বাচস্পতির গৃহে। বাপম্পতি মাঝে মাঝেই বলতেন, একটি দিনের জন্যও তোমার মাকে দেখতে গেলে না। পেড়াপীড়িতে শেষ পর্যন্ত একদিন গেলেন তিনি, কিন্তু মেয়েটিকে দেখা মাত্রই তাঁর চোখ ফেটে জল এলো, নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারেননি। কিছুদিনের মধ্যেই মেয়েটিকে অকুল পাথরে ভাসিয়ে বাচস্পতি প্ৰস্থান করলেন পরলোকে।

কালীকান্ত যে মেয়েটিকে বিবাহ করতে যাচ্ছেন, সে মেয়েটিকে চক্ষেও দেখেননি ঈশ্বরচন্দ্র, তবু সেই মেয়েটির কথা ভেবে তাঁর কান্না এসে গেল।

জননী ভগবতীও ঈশ্বরের ব্যবহার দেখে অবাক। এত যত্ন করে তিনি অন্ন ব্যঞ্জন প্ৰস্তুত করলেন, ঈশ্বরচন্দ্র তার কিছুই প্ৰায় খেতে চান না। জাল ফেলে পুকুর থেকে মাছ ধরা হয়েছে, বাড়ির গাভির দুধে রাঁধা হয়েছে পায়েসান্ন, পুত্র এতবড় সুসংবাদ বহন করে এনেছে, তারই জন্য এত আয়োজন। কিন্তু ঈশ্বর বললেন, মা, আমি শুধু দুটি ডাল ভাত খাবো, আর কিছু আমার মুখে রুচিবে না।

মা চোখ কপালে তুলে বললেন, ওমা, এ কী কথা? তুই খাবিনি কেন? তোর জন্য এত কল্লাম!

ঈশ্বরচন্দ্র বললেন, মা, এতকাল আমরা ডাল ভাত খেয়েই তো মানুষ হয়েছি, সেই ডাল ভাত খেয়েই তো কত আহ্লাদ করলাম। এখন হঠাৎ বড় মানুষী করার প্রয়োজন তো দেখি না। মা, দেশে অনেক দুঃখী, তাদের কথা চিন্তা করলে আমার মুখে ভালো খাদ্য রোচে না।

ভগবতী বললেন, তুই বড় কাজ পেয়েচিস, একদিন গরীব দুঃখীদেরও আমি পেট পুরে খাওয়াবো।

ঈশ্বরচন্দ্র বললেন, মা, তোমাদের আশীর্বাদে আমি আর দীনবন্ধু দু ভায়েই উপযুক্ত কাজ পেয়েছি, এখন আমাদের অবস্থা যদি কিছু ফেরে, তবে তা দিয়ে দেশ-গাঁয়ের কিছু উন্নতি ঘটাতে চাই।

—সে হবেখন। একদিন শখ করে রোধেছি, তুই খ তো এখন।

ঈশ্বর একটুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন, মা, আমাদের কলকেতার বাসাবাড়ির যাওয়া-আসার পথে আমি রোজ দেখি গোয়ালাদের দুধ দুইতে। বাছুরগুলানকে তারা দূরে বেঁধে রাখে, তারা করুণভাবে ম্যা ম্যা করে ডাকে, তবু তাদের একটু মাতৃস্তন্য পান করতে দেয় না। গোরুর সব দুধ মানুষে চুরি করে নেয়, অথচ গোবৎসদের জন্যই তো দুধ, তাদের আমরা বঞ্চিত করি। এইসব দেখেশুনে দুধের প্রতি আমার অভক্তি জন্মে গেছে। মাছ মাংস খেতেও আমার রুচি হয় না।

ভগবতী রীতিমতন ভয় পেয়ে বললেন, ও মা, এমন অলক্ষুণে কথা তো কখনো শুনিনি। দুধ, মাছ, মাংস না খেলে শরীর টিকবে? একেই তো তোদের কত খাটুনি।

এক টুকরো ভাজা মাছ ভগবতী নিজে পাত থেকে তুলে নিয়ে ঈশ্বরচন্দ্রের মুখের কাছে ধরে বললেন, খা। আমি বলছি, খা!

অন্য ভাইরা কৌতুক দেখার ভঙ্গিতে চেয়ে আছে। খাদ্য বিষয়ে দাদার এই নতুন বাতিকের কথা তারা জানে। দাদা দারুণ গোঁয়ার, একবার যা বলে সে কথা আর ফেরায় না। কিন্তু জননীর সঙ্গে কি দাদা জেদে পারবে?

ঈশ্বরচন্দ্ৰ মায়ের হাত থেকে মাছ ভাজাটি নিয়ে বললেন, মা, তুমি এত করে বলছে বলে এই আমি এক টুকরো মাছ মুখে দিলাম। কিন্তু পায়েস সরিয়ে নাও। দুধের জিনিস আর আমি কিছুতেই খেতে পারবো না।

ঠাকুরদাস কাছেই দাঁড়িয়ে হুঁকো টানতে টানতে শুনছিলেন সব। এবার তিনি বললেন, ও ঘাড়-বেঁকাকে তুমি আর বেশী সিধে করতে পারবে না, ব্ৰাহ্মণী! আর বেশী জোর করলে সব ফেলে উঠে যাবে!

কয়েকদিন গ্রামে থেকে ঈশ্বরচন্দ্ৰ আবার ফিরলেন। কলকাতার দিকে। এবারে তাঁর বড় মন খারাপ হয়ে গেছে। সেই নয়। বৎসর বয়েসে তিনি কলকাতায় চলে যান। তারপর থেকে প্ৰায় কলকাতাতেই থেকেছেন, মধ্যে মধ্যে ছুটিতে এসেছেন গ্রামে বেড়াতে। প্রত্যেকবারই গ্রামে এসে তাঁর মন প্ৰফুল্ল হয়ে গেছে, বালকের মতন ফুর্তিতে গায়ে মেখেছেন দেশের ধুলো মাটি। কিন্তু এবারে তাঁর মনে হলো, গ্রামের মানুষের মধ্যে দুঃখ দারিদ্র্য কুসংস্কার যেন দিন দিনই বাড়ছে। সামান্য স্বাৰ্থ নিয়ে সবাই ব্যাপৃত, সামান্য কারণে দলাদলি। এ-সব দূর করার উপায় কী? একমাত্র শিক্ষা বিস্তারেই কিছু সুফল পাওয়া যেতে পারে। উপযুক্ত শিক্ষা মানুষের সামনে একটি দর্পণ তুলে ধরে। মানুষ তাতে নিজেকে চিনতে শেখে।

 

কলকাতায় ফিরেই তিনি সংস্কৃত কলেজটির আমূল সংস্কার করার জন্য উঠেপড়ে লাগলেন। সংস্কৃত কলেজটি যেন হরিঘোষের গোয়াল হয়েছে। সরকার কলেজ খুলে দিয়েছে, যার যেমন খুশী কলেজকটিকে ব্যবহার করে। ছাত্রদের কোনো বেতন লাগে না, তাই পড়াশুনোর কর্মটিকেও তারা মনে করে যেন গোপাল ঠাকুরের ব্যাগার। যার যখন ইচ্ছা আসে যায়। যদিও পাকা ইষ্টকের ভবনে কলেজ বসে, তবু শিক্ষকগণ যেন সেই আগেকার গাছতলার টোলের ধারাটাই অক্ষুন্ন রাখতে চান। কোনো শিক্ষক ক্লাসের মধ্যে চেয়ারে পা তুলে বসে তাঁর কোনো প্রিয় ছাত্রকে ডেকে বলেন, বাপু হে, একটু বার্তাস করো তো, কিছুক্ষণ ঘুমায়ে লই!

কলেজে কোনো সাপ্তাহিক ছুটির দিন নির্দিষ্ট নেই। অষ্টমী ও প্রতিপদে সংস্কৃত অনুশীলন নিষেধ বলে ঐ দুই তিথিতে কলেজ বন্ধ থাকে। দ্বাদশী, ত্ৰয়োদশী, চতুর্দশী, অমাবস্যায় ও পূর্ণিমায় কোনো নতুন পাঠ শুরু করতে নেই, এমন রীতি কে স্থির করেছে তার ঠিক নেই, তবু চলে আসছে।

ঈশ্বরচন্দ্র এ-সব প্ৰথা বন্ধ করে দিলেন। প্রত্যেক রবিবার কলেজ বন্ধ থাকবে, বাকি দিনগুলিতে যথানিয়মে ক্লাস চলবে। শিক্ষক বা ছাত্র সকলকেই আসতে হবে সাড়ে দশটার মধ্যে। ক্লাসে কোনো শিক্ষক ঘুমোলে তিনি নিজে গিয়ে তাঁকে জাগিয়ে দেন, অতিশয় নিদ্রাতুর কোনো শিক্ষককে হেসে পরামর্শ দেন, এবার থেকে সঙ্গে নস্যর ডিপো রাখুন, ঘুম এলেই নাকে নস্য ঠাসে দেবেন!

কলেজ ভবনের পেছন দিকে মালির ঘরের পাশে শৌচাগার। ছাত্ররা সেখানে যাবার নাম করে দল বেঁধে একসঙ্গে এসে নানারকম রঙ্গ-রস করে। তাদের পাঠ্য রচনার মধ্যে আদি রসাত্মক শ্লোকের ছড়াছড়ি। সেগুলি আলোচনারও এটিই উপযুক্ত জায়গা। নতুন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিয়ম করলেন, একবারে একজনের বেশী ছাত্র শৌচাগারে যেতে পারবে না এবং যাবার সময় কাষ্ঠের পাস নিয়ে যেতে হবে সঙ্গে। শিক্ষক বা ছাত্র কেউই আবেদনপত্র না পাঠিয়ে দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকতে পারবে না। মাসে একবার প্রত্যেক ছাত্রকে পরীক্ষা দিতে হবে এবং শুধু সংস্কৃত নয়, ছাত্রদের প্রত্যেককেই বাধ্যতামূলকভাবে শিখতে হবে বাংলা, ইংরেজি ও অঙ্ক।

ছাত্রদের নিয়ে বেশী সমস্যা নেই, কিছু কিছু সমস্যা দেখা দিল অধ্যাপকদের নিয়ে। অধিকাংশ বৃদ্ধ অধ্যাপকের কাছে ঈশ্বরচন্দ্র নিজে পড়েছেন। তাঁরা তাঁর গুরুস্থানীয়। ঈশ্বরচন্দ্ৰ এখন তাঁদের ওপরে কত হয়ে বসায় তাঁরা সব নির্দেশ মানতে চান না। বিশেষত সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে কলেজে এসে পৌঁছোবার ব্যাপারটা বড়ই বাড়াবাড়ি মনে হয়।

গুরুস্থানীয় অধ্যাপকদের ঈশ্বরচন্দ্র মুখে কিছু বলতে পারেন না। ঠিক সাড়ে দশটার সময় তিনি দাঁড়িয়ে থাকেন কলেজের গেটে, হাতে একটা ঘড়ি। যে-সব অধ্যাপক অনেক বিলম্ব করে পৌঁছোন, তাঁরা দেখতে পান যে, ঈশ্বরচন্দ্র একবার তাঁদের মুখের দিকে আর একবার ঘড়ির দিকে চেয়ে মুচকি মুচকি হাসছেন। একজন পণ্ডিত একদিন বলেই ফেললেন, ঈশ্বর তুমি যে কিছু বলো না, টিপি টিপি হাসো, ওতেই বড় লজ্জা পাই। ঘাট মানছি বাপু, কাল থেকে ঠিক সময়ে আসবো।

 

মাঝখানে একটা ঘটনায় ঈশ্বরচন্দ্ৰ ছাত্র মহলে খুব জনপ্রিয় হয়ে গেলেন। হিন্দু কলেজ আর সংস্কৃত কলেজ সন্নিহিত ভবনে বসে। একদিন কোনো প্রয়োজনে ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগর গেলেন হিন্দু কলেজের প্রিন্সিপ্যাল কার সাহেবের ঘরে। চরকায় মায়ের হাতে বোনা মোটা সুতোর ধুতি ও চাদর পরা, মাথার সামনের দিক কামানো, পিছনে সুবৃহৎ শিখা। এমন চেহারার মনুষ্যকে দেখে কার সাহেব বসতে বললেন না, বরং নিজের পা দুখানি টেবিলের ওপর তুলে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, হ্যাঁ, পণ্ডিত, কী দরকার বলো?

অপমানিত ও ক্রুদ্ধ হয়ে ঈশ্বরচন্দ্র ফিরে এলেন সেদিন, কারুকে কিছু বললেন না। কয়েকদিন পরেই একটি সুযোগ পেয়ে গেলেন। পিঠোপিঠি দুই কলেজের পরিচালকদের প্রায়ই নানা কাজে কথাবার্তা বলতে হয়। সেদিন কার সাহেব এলেন সংস্কৃত কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারির সঙ্গে দেখা করতে। আগে থেকে খবর পেয়েই ঈশ্বরচন্দ্ৰ টেবিলের ওপর তাঁর চটি পরা পা দুখানি তুলে রাখলেন, তারপর কার সাহেবকে বসবার চেয়ার না দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হ্যাঁ, বলো সাহেব, কী তোমার প্রয়োজন?

রাগে ছটফটিয়ে ঘর থেকে তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে গেলেন কার সাহেব।

এই ঘটনাই নানাভাবে পল্লবিত হয়ে ছড়িয়ে পড়লো চতুর্দিকে। এমনকি ইংরেজ সমাজেরও কানে গেল। সংস্কৃত কলেজের ছাত্ররা এই কথা শুনিয়ে শুনিয়ে হিন্দু কলেজের ছাত্রদের দুয়ো দেয়। কার সাহেব ঘটনাটিকে রসিকতা হিসেবে না নিয়ে শিক্ষা বিভাগের প্রধানের কাছে নালিশ জানালেন। তিনি বললেন, আর কোনো ইউরোপীয় হলে এই অপমান কিছুতেই সহ্য করতো না।

শিক্ষা বিভাগের সেক্রেটারি ময়েট সাহেব এলেন তদন্তে। ঈশ্বরচন্দ্র নিরীহমুখে বললেন, আমি কিছু দোষ করেছি, তা তো জানতাম না। আমি তো ভেবেছিলাম, এটাই তোমাদের দেশের ভদ্রতা। কার সাহেবের মতন একজন মান্যগণ্য ব্যক্তি যদি টেবিলে চর্ম নির্মিত জুতো শুদ্ধ পা তুলে দিয়ে বসে থাকেন, তা হলে আমার পক্ষে টেবিল থেকে পা নামিয়ে বসা কি অভব্যতা হতো না?

ময়েট সাহেব হো হো করে হেসে উঠলেন। তারপর রিপোর্ট লিখলেন, পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগরের মতন সাহসী ও তেজস্বী পুরুষ আমি বাঙালীদের মধ্যে আর একজনও দেখি নাই।

সেবার চাকরি টিকে গেলেও মাত্ৰ এক বছর তিন মাস পরেই সংস্কৃত কলেজের চাকরিতে ইস্তফা দিলেন ঈশ্বরচন্দ্ৰ।

রসময় দত্ত ঈশ্বরচন্দ্রের গতিবিধি সুনজরে দেখছিলেন না। ঈশ্বরচন্দ্ৰ ছাত্রদের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন, কলেজের নানাবিধ সংস্কারের কারণে সাহেবগণ ঈশ্বরচন্দ্রের প্রশংসা করছেন। রসময় দত্ত মনে করলেন, সাহেবদের কাছে তাঁর নিজের সমাদর যেন কমে যাবে। এতে। ঈশ্বরচন্দ্র তাঁর অধস্তন কর্মচারী, সুতরাং ঈশ্বরচন্দ্ৰ খাটবেন, কৃতিত্বটা পাবেন তিনি, এরকমই সাধারণত হয়। কিন্তু এ যে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড় হয়ে যাচ্ছে। এবার রসময় দত্ত শক্ত হাতে হাল ধরলেন এবং ঈশ্বরচন্দ্রের সংস্কার প্রস্তাব বাতিল করে দিতে লাগলেন একটার পর একটা। কলেজটি আমূলভাবে ঢেলে সাজাবার একটি পরিকল্পনা রচনা করেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র। সেটি রসময় দত্ত কিছুতেই পাঠাতে রাজি হলেন না শিক্ষা বিভাগীয় বড় সাহেবদের কাছে।

বিরক্ত হয়ে ইস্তফাপত্র পেশ করলেন ঈশ্বরচন্দ্ৰ। সে কথা শুনে কলেজের কয়েকজন অধ্যাপক লিখিতভাবে রসময় দত্তকে অনুরোধ করলেন, এই কলেজের পক্ষে বিদ্যাসাগর মহা উপকারী, তাকে যেন যেতে না দেওয়া হয় কিছুতেই রসময় দত্ত সে-সব গ্রাহ্য করলেন না। তাঁর ধারণা, একটু চাপ দিলেই ঈশ্বরচন্দ্ৰকে নরম করা যাবে।

এক কথায় ঈশ্বরচন্দ্ৰ চাকরি ছেড়ে চলে এলেন।

বন্ধু ডাক্তার দুর্গাচরণ বাড়িতে এসে বললেন, ওহে ঈশ্বরচন্দ্ৰ, তোমার কাণ্ড দেখে যে সকলের তাক লেগে গেছে। এই বাজারে কেউ এত বড় চাকরি ছাড়ে? রসময় দত্ত কী বলছেন জানো? ছোঁকরা এক কথায় চাকরি ছাড়লো, এর পর খাবে কী?

ঈশ্বর হাসতে হাসতে উত্তর দিলেন, ওঁকে জানিয়ে দিও, দরকার হলে আলু-পটল বেচে খাবো, মুদির দোকান দেবো! তবু যে চাকরিতে মান থাকে না, সে চাকরি আর আমি কক্ষনো করতে যাবো না।

সকল অধ্যায়

১. ০১. শিশুর নাম রাখা হলো নবীনকুমার
২. ০২. দোকান বন্ধ হয়ে গেছে
৩. ০৩. নবীনকুমার
৪. ০৪. গঙ্গানারায়ণ
৫. ০৫. মধু এবং গৌর
৬. ০৭. বিন্দুবাসিনী
৭. ০৬. লুণ্ঠনপর্বের গোড়ার দিকে
৮. ০৮. শহরটি প্রায় স্পষ্ট দুভাগে ভাগ করা
৯. ০৯. থাকোমণি
১০. ১০. হেয়ার সাহেব
১১. ১১. রাইমোহন
১২. ১২. কিছু পুরোনো আমলের গালগল্প
১৩. ১৪. জোড়াসাঁকোর বাড়ির সম্মুখে
১৪. ১৩. গোরা সৈন্য ও সিপাহী
১৫. ১৫. সিংহদের অট্টালিকার নীচমহলের কর্তৃত্ব
১৬. ১৭. রাজনারায়ণ দত্তের শয্যাকণ্টকী
১৭. ১৬. দুই বিবাহের লগ্ন
১৮. ১৮. মানিকগঞ্জের জমিদার পূর্ণচন্দ্র রায়
১৯. ১৯. নবীনকুমারের হাতেখড়ি
২০. ২০. সংস্কৃত কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি
২১. ২১. স্বর্গের নন্দনকাননে
২২. ২২. দ্বারকানাথ আবার বিদেশে
২৩. ২৭. বাবু রামগোপাল ঘোষের গৃহে
২৪. ২৩. বাবু রামকমল সিংহ
২৫. ২৪. গুপী স্যাকরার বরাত
২৬. ২৫. রামকমল সিংহের উইল
২৭. ২৬. কমলাসুন্দরী
২৮. ২৮. হীরেমণির বাড়িতে
২৯. ২৯. বিধুশেখরের ঘুম
৩০. ৩০. কৃষ্ণনগর কম দূরের পথ নয়
৩১. ৩১. লাজুক স্বল্পভাষী কিশোরটি
৩২. ৩২. এলিয়ট ড্রিঙ্ক ওয়াটার বীট্‌ন
৩৩. ৩৩. সিংহবাড়িতে গণ্ডা গণ্ডা দাস-দাসী
৩৪. ৩৫. রাতের রোশনাই, দিনের ছাইগাদা
৩৫. ৩৪. বারাসতের বালিকা বিদ্যালয়
৩৬. ৩৬. সংস্কৃত কলেজের দ্বিতলের বারান্দা
৩৭. ৩৭. নবীনকুমারের গৃহ-শিক্ষক
৩৮. ৩৮. নবীনকুমারের বিবাহ
৩৯. ৩৯. সাহেবের কুঠি থেকে বেরিয়ে
৪০. ৪১. হিন্দু কলেজ
৪১. ৪০. অধ্যক্ষের ছুটি নেই
৪২. ৪২. ভূকৈলাশের রাজবাড়িতে
৪৩. ৪৩. আর একটি বালিকা
৪৪. ৪৪. কৃষ্ণভামিনীর মিতেনীর শ্বশুরালয়
৪৫. ৪৬. মোগলসরাই নামক স্থান
৪৬. ৪৫. চাকুরি উপলক্ষে রাধানাথ
৪৭. ৪৭. অনেকদিন পর বিধুশেখর
৪৮. ৪৮. রানী রাসমণি
৪৯. ৪৯. চন্দ্রনাথ
৫০. ৫০. নিরুদ্দেশের দিকে

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন