৩. প্রতিরোধ সংগ্রাম রূপ নেয় স্বাধীনতা সংগ্রামে এবং পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রতিক্রিয়া

তৃতীয় অধ্যায় – প্রতিরোধ সংগ্রাম রূপ নেয় স্বাধীনতা সংগ্রামে এবং পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রতিক্রিয়া

২৫-২৬শে মার্চ কালোরাত্রির বর্বরোচিত পাশবিক সামরিক অভিযান।

একটি স্ফুলিঙ্গ লেলিহান শিখার জন্ম দেয়।

মেজর জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণার পর বিক্ষিপ্ত প্রতিরোধ সংগ্রাম রূপ নেয়

সশস্ত্র স্বাধীনতার সংগ্রামে।

স্বাধীনতার ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করার অপচেষ্টায় আষাঢ়ে গল্প।

নজীরবিহীন শ্বেত সন্ত্রাস সম্পর্কে বিদেশী প্রচার মাধ্যমগুলোতে ছাপিত

কয়েকটি লোমহর্ষক প্ৰতিবেদন।

পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত সামরিক বাহিনীর বাঙ্গালীদের উৎকণ্ঠা।

হাজার মাইল দূরত্বে অবস্থান করলেও স্বাধীনতা সংগ্রামের ঢেউ উদ্দেলিত করেছিল অনেককেই।

মুক্তিপাগল হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রাখার জন্য উন্মুখ হয়ে উঠেছিলাম। অন্যদিকে অনেকেরই বাঙ্গালীত্বের ভন্ডামীর মুখোশ উন্মোচিত হয়ে পরেছিল জাতির ক্রান্তিলগ্নে।

যা দেখেছি,  যা বুঝেছি, যা করেছি ৮৫

এরপর নেমে আসে ২৫-২৬শে মার্চের সেই কালোরাত্রি। পাকিস্তান সেনা বাহিনী নির্মমভাবে ঝাপিয়ে পড়ে বাঙ্গালী জাতিকে শায়েস্তা করার জন্য। ২৫শে মার্চের বর্বরতা আধুনিককালের সব নজীরকেই ছাড়িয়ে যায়। হাজার হাজার নারী, পুরুষ, শিশুকে হত্যা করা হয় নির্বিচারে। সামরিক বাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বাঙ্গালী সদস্যগণও রেহাই পাননি শ্বেত সন্ত্রাসের হত্যাযজ্ঞ থেকে। ঢাকা, চিটাগাং এবং খুলনাসহ পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্রই অভিযান চালানো হয়। নিষ্ঠুর অভিযান I প্রতিরোধ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে বাধ্য হয় বাঙ্গালী জাতি। জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে অনেক অনুরোধ ও আকুতি জানানো হয় শেখ মুজিবকে সশস্ত্র জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্ব দেবার জন্য। কিন্তু সব অনুরোধ উপেক্ষা করে জাতিকে মৃত্যু ও অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়ে কাপুরুষের মতই তিনি কারাবরণ করে চলে যান পশ্চিম পাকিস্তানে। আত্মরক্ষার জন্য অনন্যোপায় হয়েই শান্তিপ্রিয় বাঙ্গালী অস্ত্র হাতে তুলে নিতে বাধ্য হয়। প্রতিরোধ সংগ্রামে নেতৃত্ব দানে অসম্মত শেখ মুজিব বলেছিলেন, “আমি গণতন্ত্রের রাজনীতি সারাজিবন করেছি, অস্ত্রের রাজনীতিতে আমি বিশ্বাস করি না।”

এ কি পরিহাস। সমগ্র বাঙ্গালী জাতি যার কথায় বিশ্বাস করে অকাতরে প্রাণ দিয়েছে, তাকে মেনে নিয়েছে একমাত্র নেতা হিসাবে; দীর্ঘ সংগ্রামে চরম ত্যাগ স্বীকার করেছে নির্দ্বিধায়; সে নেতাই ক্রান্তিলগ্নে জাতিকে পিছে ফেলে রেখে খোঁড়া যুক্তি তুলে বহাল তবিয়তে পশ্চিম পাকিস্তানে পাড়ি জমালেন। ক্ষনিকের জন্য স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল বাঙ্গালী জাতি। মুজিবের সুবিধাবাদী আচরনে হতাশায় ভেঙ্গে পড়েছিল মুক্তিকামী জনতা। কিন্তু সে ক্ষণিকের জন্য মাত্র। আওয়ামী লীগের নেতারাও সব যার যার মত গা ঢাকা দিলেন প্রাণ বাচাবার প্রচেষ্টায়। মুজিব গ্রেফতার হওয়ার সাথে তারাও পালিয়ে হাফ্ ছেড়ে বাচঁলেন। এ অবস্থায় জনগণকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে প্রতিরোধ সংগ্রামের দায়িত্ব নিজেদের হাতেই তুলে নিতে হয়ছিল। গড়ে উঠে বিচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশের সর্বত্র প্রতিরোধ সংগ্রাম। গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে পুরো বাংলাদেশে। এ অবস্থায় ২৬শে মার্চ রাতে চিটাগাং এ অবস্থিত অষ্টম ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের এক অখ্যাত তরুণ মেজর জিয়াউর রহমান তার তরুণ বাঙ্গালী সহকর্মীদের পরামর্শ ও সহচার্যে তীব্র জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বেতার মাধ্যমে জাতির প্রতি আহ্বান জানান স্বাধীনতা সংগ্রামের। তার আহ্বানে আশার আলো দেখতে পেয়েছিল জাতি তারই পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তিকালে স্বাধীনতার লক্ষ্যে শুরু হয় মহান রক্তক্ষয়ী মুক্তি

সংগ্রাম।

কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ভেসে আসে মেজর জিয়াউর রহমানের ক্ষীন কন্ঠ, “Under circumstances however. I hereby declare myself as the Provisional Head of the Swadhin Bangla Liberation

যা দেখেছি,  যা বুঝেছি, যা করেছি ৮৬

Government.” অবশ্য পরবর্তী ঘোষণায় এর সাথে যোগ করা হয়, “Under guidance of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman.” স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে সেই সময় চুলচেরা বিশ্লেষন করার ফুসরৎ কারও ছিল না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭১ সালে ২৬শে মার্চ কালুরঘাট থেকে প্রচারিত স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে সরকার ও আওয়ামী লীগের তরফ থেকে পর্যায়ক্রমে কয়েকটি কাহিনী প্রচার

করা হয়।

প্রথম গল্পটি ছিল: ২৫শে মার্চ দিবাগত রাতে গ্রেফতারের পূর্বক্ষণে চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরীকে টেলিফোনে শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা বাণীটি পাঠিয়ে ছিলেন কিন্তু সামরিক অভিযানের প্রাক্কালে সকল প্রকার টেলিফোন যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। অতএব ঐ গল্প ধোপে টিকেনি। পরে

দ্বিতীয় গল্পে বলা হয়: ওয়্যারলেসের মাধ্যমে (?) চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থানরত একটি অস্ট্রেলিয় জাহাজের ক্যাপ্টেনকে স্বাধীনতার ঘোষণা জানানো হয়। ঐ ক্যাপ্টেন নাকি জনাব জহুর আহমদকে শেখ মুজিবের সেই ঘোষণা বাণী পৌঁছে দিয়েছিলেন। চট্টগ্রামের কোন লঙ্গর করা জাহাজের সাথে ঢাকায় বসে ওয়্যারলেস সংযোগ প্রতিষ্ঠা করা কোনভাবেই তখন সম্ভব ছিল না। কারণ ঐ সময় চট্টগ্রাম বন্দরে ইপিআর ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙ্গালী সৈনিকদের সাথে পাক বাহিনীর লড়াই চলছিল। তাছাড়া ঢাকার ওয়্যারলেস সেন্টারসহ সবগুলো যোগাযোগ কেন্দ্র তখন পুরো মাত্রায় খানসেনাদের অধিনে। সুতরাং এ গল্পও সারহীন প্রমাণিত হয়।

শেষ গল্পে বলা হয়: চট্টগ্রাম ইপিআর-কে জানানো হয়েছিল সারা দেশে স্বাধীনতার ঘোষণা বা বাণী প্রচারের জন্য। ‘স্বাধীনতার যুদ্ধের ইতিহাস’ নামক প্রকাশনায় এই কাহিনীটিই নথিবদ্ধ করা হয়েছে।

কিন্তু একটুখানি যুক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ করলেই বুঝা যায় এ কাহিনীটিও আষাঢ়ে গল্প

মাত্র।

প্রথমত: ঢাকার সাথে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ মাধ্যমগুলো যথা:- টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, ঢাকা বেতার, ওয়্যারলেস সমস্তই তখন সম্পূর্ণরূপে পাক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। এবার দেখা যাক ঢাকা ইপিআর এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম ইপিআর-কে নির্দেশ পাঠানোর প্রশ্নটি। ঢাকা ইপিআর যদি শেখ মুজিবের নির্দেশে স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রাম পৌঁছাতে পারে তাহলে ঢাকা ইপিআর-কেইতো বলা যেত ঢাকা থেকেই সারা বাংলাদেশে ঐ ঘোষণা প্রচার করার জন্য। তাছাড়া সবারই জানা ছিল ঢাকা ইপিআর-এর হেডকোয়টার্স এবং পিলখানা সিগন্যাল সেন্টার ২৩শে মার্চেই আমি দখল করে নিয়েছিল। তারপরও কথা থাকে। চট্টগ্রামের ইপিআর-এর দায়িত্বে ছিলেন তখন বাঙ্গালী তরুণ অফিসার ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম। যে সমস্ত বাঙ্গালী

যা দেখেছি,  যা বুঝেছি, যা করেছি ৮৭

অফিসারদের সাথে একত্র হয়ে মেজর জিয়াউর রহমান ২৬শে মার্চ রাতে স্বাধীনতার

ঘোষণা দেন কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তাদের মধ্যে ক্যাপ্টেন রফিক ছিলেন অন্যতম। পরবর্তী পর্যায়ে ১নং সেক্টরে তিনি যুদ্ধ করেন। স্বাধীনতার পর তাকে হঠাৎ করে সেনা বাহিনী থেকে অবসর দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের উপর ক্যাপ্টেন রফিক একাধিক গ্রন্থ লিখেছেন। কিন্তু কোথাও তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা বাণী ঢাকা থেকে পাবার ব্যাপারে কিছু লেখেননি। কেন? সর্বোপরি স্বাধীনতার ঘোষণা সত্যিই যদি ঢাকা থেকে পাঠানো হয়ে থাকত সেই ক্ষেত্রে মেজর জিয়া তার প্রথম ভাষণে নিজেকে অস্থায়ী সরকার প্রধান হিসাবে ঘোষণা দিয়েছিলেন কোন যুক্তিতে? তারপরও প্রশ্ন থাকে। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের তৎকালীন আরেক নেতা আবদুল হান্নান যিনি ৩০ মার্চ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে একাধিকবার বক্তব্য প্রচার করেছেন, তিনিই বা কেন তার প্রচারণায় একবারও উল্লেখ করলেন না স্বাধীনতার ঘোষণা বাণী ঢাকা থেকে পাবার কথা? অতএব, ২৬শে মার্চ মেজর জিয়াই যে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে সর্বপ্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এই ধ্রুব সত্যকে শত চেষ্টা করেও কোন যুক্তি দিয়েই খন্ডানো সম্ভব নয়।

২৫শে মার্চের কালোরাত্রির শ্বেত সন্ত্রাস এবং নৃশংস হত্যাযজ্ঞের লোমহর্ষক কাহিনী ও চাক্ষুস বিবরণ আজঅব্দি অনেক ছাপা হয়েছে। ভুট্টোর আমলের সেনা প্রধান ১৯৭১ সালের জল্লাদ’ জেনারেল টিক্কা খান প্রখ্যাত মিশরীয় সাংবাদিক জনাব হাইকেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তার আমলে পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “আমি যখন মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে পূর্ব পাকিস্তানে যাই তখন পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রস্তুতি ছিল অতি দুর্বল। সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি সঠিক তথ্য পরিবেশন করতে অপারগ ছিল। তাদের সাথে জনগণ কোনরূপই সহাযোগিতা করছিল না। গোয়েন্দা বিভাগসমূহের বাঙ্গালী কর্মচারীবৃন্দের আন্তরিকায়ও যথেষ্ট অভাব লক্ষ্য করি। এর আগে এমন পরিস্থিতি কখনও হয়নি। সেনা বাহিনীর পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরাই ছিল আমাদের খবরা-খবরের একমাত্র নির্ভরযোগ্য সূত্র। বেঈমান মুজিবের কারসাজিতে সমগ্র বাঙ্গালী জাতিই তখন বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে। তারা সেনা বাহিনীকে রীতিমত বয়কট করেছে।” জনাব হাইকেলের মতে জেনারেল টিক্কা বুঝতে পারেননি তিনি একটি জাতীয় বিপ্লবের মোকাবেলা করছিলেন। তিনি জানতেন না এ বিপ্লবের শিকড় প্রথিত ছিল তীব্র জাতীয়তাবাদী চেতনায়। বাঙ্গালীর স্বাধীকারের দাবির পেছনে যুক্তিও ছিল প্রচুর। এরপর ঢাকা আলোচনা কিভাবে ব্যর্থ হয়ে গেল সে কথা বলতে গিয়ে জেনারেল টিক্কা খান জনাব হাইকেলকে বলেন, “ঢাকা আলোচনা ব্যর্থ হয়ে যাবার পর রাষ্ট্রপতি আমাকে আদেশ দেন, ২৫শে মার্চ রাতে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে বাঙ্গালী বিদ্রোহ দমন করে পূর্ব পাকিস্তানে আইন-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য।” জনাব হাইকেল এর বর্ণনায়,

যা দেখেছি,  যা বুঝেছি, যা করেছি ৮৮

“২৫শে মার্চের মধ্যরাত্রি প্রায় ১১টা ৩০ মিনিটে পাক বাহিনী ঘুমন্ত বাঙ্গালী জাতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। গুলির আওয়াজে ভীত-সন্ত্রস্ত বাঙ্গালীরা জেগে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চল, পুলিশের হেডকোয়টার্স মতিঝিল এবং ইপিআর এর সদর দফতর পিলখানায় মূল আঘাত হানা হয়। অবিশ্রান্তভাবে গোলাগুলি চলতে থাকে, মেশিনগান, রকেট, এমনকি ট্যাঙ্ক ফায়ারিং এর আওয়াজও শোনা যায়। সাথে মুমূর্ষ ব্যক্তিদের মরন চিৎকার। রাতের আকাশ আলোকিত হয়ে উঠে ফ্লেয়ার ফায়ারিং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল এবং জগন্নাথ হলকে রেকয়েলেস রাইফেল এবং মর্টার ফায়ারে ধূলিসাৎ করে দেয়া হয়। মারা যায় অসংখ্য ছাত্র। ঘুমন্ত অবস্থায় প্রাণ হারায় অগনিত লোক : “ তার প্রতিবেদনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পাক বাহিনীর আক্রমণের বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়। তিনি লেখেন, “মাঝরাতের পরপরই পাকিস্তান আর্মির সাঁজোয়া বাহিনীর একটি কলাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ক্ষিপ্ত গতিতে ছুটে যায়। সেনা বাহিনী বৃটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরী দখল করে সেটাকে ফায়ার বেস করে ছাত্রাবাসগুলির উপর আক্রমণ চালায়। ঘুমন্ত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ইকবাল হলের দুইশতেরও বেশি ছাত্র প্রাণ হারায়। বিদ্রোহী ছাত্রদের একটি কেন্দ্র ছিল ইকবাল হল। দু’দিন যাবত অসংখ্য লাশ ছড়িয়ে ছিল মাঠে, পথে, হলগুলির চত্বরে এবং কক্ষগুলিতে। দু’দিন পরই সৈনিকরা হলগুলির প্রাঙ্গনে গর্ত খুড়ে মৃতদেহগুলিকে মাটি চাপা দেয়। গণ কবরগুলি খুড়তে বড় বড় বুলডোজার ব্যবহার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় এবং শহরের বিভিন্ন এলাকায় বস্তিগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়।”

জনাব হেনড্রিক ভানডার হেইজডেন, আন্তর্জাতিক ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সে সময় ঢাকায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি দি নিউইয়র্ক টাইমস-এ এক প্রতিবেদন ছাপান। সেটা ১৪ই জুলাই লন্ডনের দি টাইমস এ প্রকাশিত হয়। তার উপর ভিত্তি করে একই দিনে দি টাইমস-এ একটি সম্পাদকীয়ও ছাপা হয়। পাক বাহিনীর পাশবিক আচরনের বিবরণ তাতে বিস্তারিতভাবে লেখা হয়। সেই প্রতিবেদন পড়ে বিশ্ববাসী স্তম্ভিত হয়ে যান। বিশ্ব পরিসরে বাঙ্গালীদের প্রতি সহানুভূতি জাগিয়ে তুলতে জনাব হেনড্রিকের প্রতিবেদন ও দি টাইমস এর সম্পাদকীয় বিশেষ অবদান রাখে। ২৭শে মার্চ সকাল ৯টার সময় কারফিউ উঠিয়ে নেয়া হয় দুপুর পর্যন্ত। হাজার হাজার ভীত-সন্ত্রস্ত নর- নারী প্রাণভয়ে গ্রামের দিকে যাত্রা করে। পথে পাক বাহিনীর সৈন্যরা তাদের উপর ও গুলিবর্ষন করে। অনেক নিরীহ ব্যক্তি এতে প্রাণ হারায়। উড়ন্ত হেলিকপ্টার থেকেও পলায়মান নিরস্ত্র জনগণের উপর গুলি চালানো হয়। এভাবে জনগণের মনে ভীতি সন্ত্রাস সৃষ্টি করার চেষ্টা চালানো হয়। সেনা ছাউনিতে আচমকা আক্রমণের ফলে শত শত নিরস্ত্র পুলিশ এবং ইপিআরের সৈনিকরা প্রাণ হারান। যারা বেঁচে যান তারা অস্ত্রাগার লুট করে শহরের জায়গায় জায়গায় সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু বিপুল আক্রমণের মুখে তাদের অসংগঠিত প্রতিরোধ ক্রমশঃ দুর্বল হয়ে

যা দেখেছি,  যা বুঝেছি, যা করেছি ৮১

পড়ে। সশস্ত্র বাহিনীর লোকেরা ছড়িয়ে পরেন গ্রামে-গঞ্জে। পাক বাহিনী নৃশংস হিংস্রতায় তাদের ধাওয়া করতে থাকে।

সেনা বাহিনীর জেনারেল ফজলে মুকিম খান পাকিস্তান সেনা বাহিনীর ২৫শে মার্চ দিবাগত রাতের নিষ্ঠুর আগ্রাসনের তারিফ করে বলেন, “প্রয়োজনের খাতিরে পাকিস্তান সেনা বাহিনীকে বিদ্রোহ দমন করার জন্য মর্টার, রেকয়েলেস রাইফেল, মেশিনগান, এমনকি ট্যাঙ্কও ব্যবহার করতে হয়েছিল। সে রাতে মারণাস্ত্রসমূহের শব্দ থেকে মনে হচ্ছিল সমস্ত ঢাকা শহরই একটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।”

ঢাকায় অবস্থানরত সব বিদেশী সাংবাদিকদের জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যাওয়া হয় সেনা নিবাসে। সেখান থেকে তাদের সোজা এয়ারপোর্ট নিয়ে গিয়ে বিশেষ প্লেনে তুলে দিয়ে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। সে রাতে বন্দী অবস্থায় তাদের সাথে সেনা বহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করে। সেনা বাহিনীর হাত থেকে মাত্র তিনজন বিদেশী সাংবাদিক রেহাই পান। এরা গোপনে ঢাকায় লুকিয়ে থেকে সেনা বাহিনীর চোখে ধুলো দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তারা ছিলেন জনাব আরণন্ড জেইথলিন, জনাব মিসেল লরেন্ট এবং সাইমন ড্রিংগ। তাদের মাধ্যমেই পরে বিশ্ববাসী ২৫-২৬শে মার্চ রাত্রের ঘটনাবলী এবং সেনা বাহিনীর নৃশংস হত্যাকান্ড সম্পর্কে জানতে পারে। জনাব সাইমন ড্রিংগ ডেইলি টেলিগ্রাফ-এ এক বিবরণীতে লেখেন, “পাকিস্তানের ঐক্যের জন্য ঢাকাকে চরম খেসারত দিতে হয়েছিল।’

মার্চের ৩০ তারিখে আমরা বিবিসি, ভয়েস অফ আমেরিকা, অল ইন্ডিয়া রেডিও, রেডিও অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি ষ্টেশনগুলো থেকে প্রচারিত নিবন্ধ থেকে পূর্ব পাকিস্তানে ২৫ – ২৬শে মার্চ রাতের ঘটা ঘটনা ও পরবর্তী দিনগুলোর ঘটনাবলী সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারি। বাংলাদেশে ফেলে আসা আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজনদের অবস্থা ভেবে ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে মন। পাকিস্তান সরকার ও সেনা বাহিনীর ন্যাক্কারজনক আচরণে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠি। সেই সেনা বাহিনীতেই চাকুরী করছি বলে নিজের প্রতি আত্মধিক্কার জাগে মনে। ভাবি, এ অবস্থায় প্রবাসে বসে আমাদের কি কিছুই করণীয় নেই? বাঙ্গালীদের ঘোষিত স্বাধীনতা সংগ্রামে আমাদের কি কোন দায়িত্বই নেই? সমগ্র বাঙ্গালী জাতির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রাখার জন্য আকুল হয়ে উঠে মন। অস্বস্তিকর পরিবেশে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় সময় কাটতে থাকে আমাদের।

ইতিমধ্যে আমাদের কোর্সও প্রায় শেষ হচ্ছে। কোর্সে আগত বাঙ্গালী অফিসারদের মধ্যে ক্যাপ্টেন তাহের, সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট নূর চৌধুরী এবং লেফটেন্যান্ট মতির

যা দেখেছি,  যা বুঝেছি, যা করেছি ১০

সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা হয়। চিন্তা-ভাবনার মিলই ছিল আমাদের এই ঘনিষ্ঠতার প্রধান কারণ। আমি লোকাল অফিসার। এরা প্রায়ই আমার মেসে আসত। দল বেধে আনন্দ-ফূর্তি করে আমরা অবসর কাটাতাম। একসাথে খাওয়া, বেড়াতে যাওয়া, সিনেমা দেখা, ক্লাবে আড্ডা মারা ছিল আমাদের বিনোদনের উপায়। লেফটেন্যান্ট সুমিও প্রায়ই আমাদের সাথে যোগ দিত। আমরা একত্রিত হয়ে আনন্দ-ফূর্তি করতাম ঠিকই কিন্তু তার ফাঁকে আলোচনা চলত বাংলাদেশ নিয়ে। সবারই একই চিন্তা। আমাদের কিছু একটা করা উচিত। মুখ বুজে সব অত্যাচার সহ্য করে নির্বিকার হয়ে বসে থাকলে চলবে না। জাতীয় সংগ্রামে আমাদের সাধ্যমত অবদান রাখতে হবে। কিন্তু কি করা সম্ভব। ইতিমধ্যে জানতে পারলাম আমাদের ১৬ ডিভিশনকে পূর্ব পাকিস্তানে পাঠানো হবে। অত্যন্ত সুখবর। ডিভিশন গেলে আমিও ইউনিটের সাথে পূর্ব পকিস্তানে যেতে পারব। খবরটা পেয়ে তাহের, নূর, মতি এবং সুমি সবাই খুশি। কোর্স শেষ হল। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ আদেশ জারি করলেন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত কোন অফিসারকে তাদের ইউনিটে ফেরত পাঠানো হবে না। তাদের সবাইকে পশ্চিম পাকিস্তানে বিভিন্ন ইউনিটে পোষ্টিং দেয়া হবে। এ কি ব্যাপার। এমনটি তো হবার কথা নয়। আমরা সবাই বিভ্রান্ত হয়ে পরলাম। কোর্স শেষে ইউনিটে ফিরে যাওয়াইতো নিয়ম তাহলে এ ধরণের আদেশের উদ্দেশ্য কি? তাহের, নূর, মতি সবার ইউনিটই পূর্ব পাকিস্তানে। তারা সবাই আটকা পড়ে গেল। আর আমি ফিরে এলাম ইউনিটে। কিন্তু ইউনিটে যোগদান করেই বুঝতে পারলাম অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। পরিবেশও অনেক বদলে গেছে। ইতিমধ্যে দেশে ইমারজেন্সী ঘোষিত হল। একদিন আমার কমান্ডিং অফিসার কর্নেল মিয়া হাফিজ আমাকে তলব করে পাঠালেন। তার অফিসে যাওয়ার পর তিনি কিছুটা বিব্রতভাবেই বললেন, “শরীফ ব্যাটারি কমান্ডারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে আমি তোমাকে এ্যাডজুটেন্ট পদে বহাল করতে চাই। দেশের এই নাজুক পরিস্থিতিতে আমার ষ্টাফ অফিসার হিসাবে তোমাকেই আমি মনোনীত করেছি।”

তার কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। আমার সাথে কর্নেল হাফিজের সম্পর্ক ছিল খুবই ভাল। ব্যাচেলার হ্যাপিগোলাকি টাইপ কমান্ডো কর্নেল হাফিজ আমাকে খুবই পছন্দ করতেন। আমি তাই সরাসরি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, “স্যার আমি ইউনিটে সিনিয়র অফিসারদের মধ্যে একজন। সে ক্ষেত্রে আমাকে ব্যাটারি কমান্ডারের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নিয়ে জুনিয়র পদে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন? বেচারা কর্নেল হাফিজ মুখ কাচুমাচু করে বললেন, “দেখ, জিএইচকিউ থেকে অর্ডার এসেছে কোন বাঙ্গালী অফিসারকে দায়িত্বপূর্ণ কোন পদে রাখা যাবে না। তাছাড়া বর্তমান অবস্থায় সব বাঙ্গালীদের উপর নজর রাখার নির্দেশও জারি করা হয়েছে। তোমার শুভাকাঙ্খী হিসাবে এই গোপনীয় নির্দেশের কথা তোমাকে বিশ্বাস করে বললাম। আমার অনুরোধ

যা দেখেছি,  যা বুঝেছি, যা করেছি ৯১

সব বুঝে তুমি চোখ-কান খোলা রেখে সতর্কতার সাথে চলবে। তোমার কোন কিছু হলে ব্যক্তিগতভাবে আমি কষ্ট পাব বোঝার চেষ্টা কর, নেহায়েত অপারগ হয়েই আমি এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।

তার সিদ্ধান্তে কষ্ট পেলেও তার আন্তরিক স্বীকারোক্তি শুনে তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার অফিস থেকে বেরিয়ে এলাম। তার সতর্কবাণী সবাইকে জানাবার জন্য ছুটে গেলাম ক্যাপ্টেন তাহেরের মেসে। সেখানে ডেকে পাঠালাম নূর এবং মতিকে। সব শুনে সবাই ঠিক করলাম আমাদের সবকিছুই করতে হবে অতি সাবধানে। পশ্চিমারা আমাদের সব বাঙ্গালীকেই অবিশ্বাসের চোখে দেখছে। তাই এতটুকু অসতর্ক হলে আর রক্ষা নাই। মহাবিপদে পড়তে হতে পারে। সিদ্ধান্ত নিলাম স্বাভাবিকতা বজিয়ে চলতে হবে আমাদেরকে। অত্যন্ত সতর্কতার সাথে গোপনে মিলিত হব আমরা। বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বস্ত লোক ছাড়া অন্য কারো সাথে আলোচনা করা ঠিক হবে না। কর্নেল মিয়া হাফিজের সাথে আলাপের পর ঠিক বুঝতে পারলাম ইউনিটের সাথে আমার আর বাংলাদেশে যাওয়া হবে না। ঘটনা প্রবাহ এগিয়ে চলল অতি দ্রুতগতিতে। হঠাৎ করে ডিভিশন হেডকোয়াটার্সের জিওয়ান বাঙ্গালী অফিসার কর্নেল দস্তগীরকে বদলি করে দেয়া হল জিওয়ান মুজাহিদ কোর হেডকোয়টার্স লাহোর। তার এ বদলিতে আশ্চর্য হয়ে গেল কোয়েটাতে অবস্থিত সব বাঙ্গালী। আমাদের কাছে ব্যাপারটা স্বাভাবিক ছিল কিন্তু অন্যান্য বাঙ্গালীরা অবাক হয়ে গেল তার এ অস্বাভাবিক পোস্টিং এ। ডিভিশনের বাঙ্গালীরা যারা বাংলাদেশে যাবার আশায় উম্মুখ হয়ে ছিলেন তাদের গুড়ে পড়ল বালি। আমি ও নূর একদিন গেলাম কর্নেল দস্তগীরের বাসায়। তার পরিবার তখন বাংলাদেশে। তাকে বললাম,

—স্যার এরপরও কি আমাদের চুপচাপ বসে থাকা যুক্তিসঙ্গত?

—কি করতে চাও? পাল্টা প্রশ্ন করলেন তিনি। আমি বললাম,

—দেশের সংগ্রামে অবদান রাখার চেষ্টা করতে হবে যেভাবেই হোক।

—পাগল হয়েছ? দেড় হাজার মাইল দূরে বসে কি করতে পার তোমরা?

—পালিয়ে গিয়ে যোগদান করতে পারি স্বাধীনতা সংগ্রামে। নয়ত বেলেলির এ্যামুনিশন ডিপো উড়িয়ে দিতে পারি। এতে করে সমস্ত সামরিক বাহিনীর সেকেন্ড লাইন এ্যামুনিশন ধ্বংস হয়ে যাবে। অপূরনীয় ক্ষতি হবে সামরিক জান্তার। যুদ্ধ করার ক্ষমতাও কমে যাবে অনেকাংশে।

—পাগল নাকি? কি সব অদ্ভুত কথা ভাবছ? ইমোশনাল হয়ে এ ধরণের পদক্ষেপ নিলে তোমরা তোমাদের জন্যই শুধু বিপদ ডেকে আনবে না, বিপদ ডেকে আনবে পশ্চিম

যা দেখেছি,  যা বুঝেছি, যা করেছি ১২

পাকিস্তানের সব বাঙ্গালীর জন্য। আবাস্তব চিন্তাধারা। তিনি আমাদের স্মরন করিয়ে দিলেন,

—পাসিং আউট করার দিন শপথ নিয়েছিলে, “To remain loal to the constitution. So be faithful and Prove your integrity.” পরিশেষে তিনি বললেন, তার উপর কড়া নজর আছে; তাই সার্বিক মঙ্গলের জন্য এভাবে যখন তখন তার সাথে যেন দেখা না করি। কি আশ্চর্য্য। এই দস্তগীর সাহেবকে জানতাম ভীষণভাবে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ একজন সাচ্চা দেশপ্রেমিক হিসাবে। তাকে শ্রদ্ধাও করতাম সে কারণে। কিন্তু একি। আজ তার মুখ থেকে একি শুনছি। মুহূর্তে মনটা বিষিয়ে উঠল, নূরকে বললাম,

—চলো যাওয়া যাক। বেরিয়ে আসছিলাম। তিনি বললেন,

—Don’t be so sentimental. Even if Bangladesh becomes a reality. Preserve yourself, Bangladesh can’t go without you and me. তার সুবিধাবাদী উক্তি শুনে গাটা ঘিন ঘিন করে উঠল। এ সংসারে সত্যিই মানুষ চেনা দায়। বিক্ষুব্ধ মন নিয়ে আমি ও নূর ফিরে এলাম। এরপর যেদিন তিনি লাহোরের পথে যাত্রা করছিলেন সেদিনও তাকে আকুল মিনতি জানিয়েছিলাম, “স্যার এখনও সময় আছে। আপনার মত বিচক্ষণ সিনিয়র অফিসারের প্রয়োজন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের। আপনি রাজি থাকলে আমরা বুকের রক্ত বাজি রেখে আপনাকে সাথে করে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করতে পারি।” তিনি রাজি হলেন না। রওনা হয়ে গেলেন লাহোরের পথে। ফিরে এলাম হতাশ হয়ে।

সকল অধ্যায়

১. ১. পাকিস্তান : রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল
২. ২. ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে অনিশ্চয়তা ও পরিণতি
৩. ৩. প্রতিরোধ সংগ্রাম রূপ নেয় স্বাধীনতা সংগ্রামে এবং পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রতিক্রিয়া
৪. ৪. দুঃসাহসিক পলায়ন এবং দিল্লীর অভিজ্ঞতা
৫. ৫. বৈদ্যনাথ তলায় গঠিত প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের পিঠস্থান কোলকাতা। কর্নেল ওসমানীর সাথে আলোচনা
৬. ৬. ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত এবং গ্রেন্ড কনফারেন্স
৭. ৭. মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্ব
৮. ৮. আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীন কোন্দল ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা
৯. ৯. যুদ্ধকালীন সময়ে লুটপাট এবং দুর্নীতির ইতিহাস
১০. ১০. দ্বিতীয়বার আহত হলাম এবং স্মরণীয় বিয়ে
১১. ১১. মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় পর্ব এবং ভারত সরকারের স্বীকৃতির প্রেক্ষাপট
১২. ১২. পাকিস্তানের আচ্‌মকা বিমান হামলা, মুক্তিযুদ্ধের শেষ অধ্যায়
১৩. ১৩. স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ ও আদর্শিক কারণে আওয়ামী লীগে ভাঙ্গন
১৪. ১৪. মিত্র বাহিনীর নজীরবিহীন লুটপাট ও আওয়ামী দুঃশাসন
১৫. ১৫. বাকশালী স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ
১৬. ১৬. বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ইতিহাস এবং বৈশিষ্ট্য
১৭. ১৭. সেনা পরিষদ এবং সেনা বাহিনীর স্বৈরশাসনের বিরোধিতা
১৮. ১৮. সামরিক বাহিনীকে দলীয়করণের প্রচেষ্টা
১৯. ১৯. চাকুরি হারাবার পর অন্য জীবনে
২০. ২০. একদলীয় নিষ্পেষনের জাতাকলে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা এবং সেনা পরিষদ
২১. ২১. সফল অভ্যুত্থান এবং বিপ্লবত্তোর পরিস্থিতি
২২. ২২. বিভিন্নমুখী চক্রান্তের জাল
২৩. ২৩. ৩রা নভেম্বরের প্রতিবিপ্লবী ক্যু’দাতা এবং ৭ই নভেম্বরের সিপাহী-জনতার পাল্টা অভ্যুত্থান

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন