ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৩৪

রবিন জামান খান

অধ্যায় চৌত্রিশ – সময় : ১৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
পৃথুরা বনভূমি, কন্নোর, ভারতবর্ষ

‘অন্ধকারের অবতারের ব্যাপারটা আসলে কি?’ খেতে খেতেই জানতে চাইল শামান।

মন্তলার হাট থেকে আসার পর এরই মধ্যে পরিচ্ছন্ন হয়ে বৈদ্যর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিয়েছে ওরা সবাই। তারপর খেতে বসেই চলছে বুদ্ধের অন্ধকার অবতারবিষয়ক আলোচনা। অন্যদিকে রাজা বিক্রমাদিত্যকেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখার পর থেকে সে এখন অনেকটাই সুস্থ। বৈদ্য বলেছে রাজার ক্ষতমুখে যেহেতু টান ধরেছে কাজেই প্রাথমিক বিপদ কেটে গেছে, এখন সে ঘুমাবে। আর এই ঘুমটা তার জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

রাজা তো শান্তিতে ঘুমাচ্ছে কিন্তু থারুদের রাজ্যে অন্য কারো মনে শান্তি নেই। বিশেষ করে বুদ্ধের অন্ধকারের অবতারকে পৃথিবীতে নামিয়ে আনা হবে শোনার পর থেকে চারপাশে একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ বিরাজ করছে। এ কারণেই শামান খেতে খেতেই সবাইকে নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে চাইছে। এখন রাজা মানরুর খাবার ঘরেই বসেছে আলোচনা।

রাজা মানরু একবার শংকরাদিত্যের দিকে তাকাল, তারপর নিজের লোকদের উদ্দেশ্যে বলে উঠল, ‘আমি বলার চেয়ে বরং শাক্যদের প্রতিনিধি হিসেবে শংকরাদিত্য বলাচাই বেশি সমীচীন হবে,’ রাজা মানরু কথা শেষ করার আগেই শংকরাদিত্য মাথা নেড়ে নিজের অপারগতা প্রকাশ করল।

রাজা মশাই আপনিই এখানে উপস্থিত সবার মাঝে সবচেয়ে বয়স্ক ও অভিজ্ঞ কাজেই আপনি বললেই ভালো। আর তা ছাড়া যেহেতু বিষয়টাও একদিকে গুরুত্বপূর্ণ আবার অন্যদিকে এতদিন সবার থেকে আড়াল করাই ছিল কাজেই এটা আপনার মতো কেউ বললেই অধিক গুরুত্ব পাবে,’ রাজা মানরুকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলেই শংকরাদিত্য বসে পড়ল।

রাজা মানরু কারো দিকে না তাকিয়ে আপন মনেই একবার মাথা নাড়ল। ঠিক আছে, বলতে যেহেতু হবেই কাজেই জলদি শুরু করাই শ্রেয়।’

‘হ্যাঁ, জলদিই শুরু করুন, শামান একটু বিরক্ত হয়ে বলল। এই ঠেলাঠেলি একেবারেই ভালো লাগছে না ওর। ‘কারণ এখানকার গল্প-গুজব শেষ করে আমাকে কাজে নামতে হবে। মন্তলার হাটে যা ঘটে গেল এরপরে ডুকপা লামা কী অবস্থায় আছে কে জানে,’ ডুকপা লামার কথা মনে হতেই মনের ভেতরটা কেমন জানি হাহাকার করে উঠল ওর। বাজে শঙ্কা হচ্ছে, হয়তো মন্তলার হাটের ঘটনার পর তাকে আর বাঁচিয়ে রাখা হবে না। ওদের কৃতকর্মের প্রতিক্রিয়া হয়তো ডুকপা লামাকে বহন করতে হবে।

‘একদম ঠিক বলেছে যোদ্ধা, কালন্তি বলে উঠল। তাকেও একটু বিরক্ত মনে হচ্ছে।

‘ঠিক আছে,’ বলে রাজা মানরু আপনমনে মাথা নাড়ল। ‘আমি সবাইকে আবারো বলে নিচ্ছি প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি পরিবার, প্রতিটি জাতিরই কিছু না কিছু গোপন ব্যাপার থাকে। আর সেই গোপন ব্যাপারগুলো যখন আবর্তিত হয় কোনো বিখ্যাত মানুষকে ঘিরে তখন সেটা অনেকটাই হয়ে পড়ে লোকনির্ভর। তখন মুখ থেকে মুখে বারবার প্রচলিত কথাগুলোর পট পরিবর্তন হতে থাকে, বদলে যেতে থাকে কাহিনির গভীরতা, চরিত্রের সংশ্লিষ্টতা সেইসঙ্গে অবশ্যই মূল ব্যাপারগুলো, বলে রাজা মানরু তার সামনে উপবিষ্ট সবাইকে এক ঝলক দেখে নিয়ে একবার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলতে লাগল। ‘কাজেই আমি এখন যা বলতে যাচ্ছি সেগুলোর সবই শোনা কথা, কোথাও লিপিবদ্ধ নেই, সেইসঙ্গে এই ঘটনাগুলোকে বুদ্ধের জীবনী থেকে যত্নের সঙ্গে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। তবে এত বছর পরে আবার এই ব্যাপারটা লোকসম্মুখে প্রচলিত হয়ে উঠবে, সেটা ভাবাই যায়নি। যাই হোক, মূল কথায় আসি।’

আজ থেকে দেড়শ বছর আগে মহান বুদ্ধ যখন এই ধরিত্রীর বুকে বিচরণ করতেন, তার অন্যতম একটা শখ ছিল ভ্রমণ। কখনো নিজের সতীর্থদের সান্নিধ্যে কখনো একা, আবার কখনো নিজের চাচাতো ভাই ও তার একান্ত কাছের বন্ধু আনন্দকে সঙ্গে নিয়ে সে ভ্রমণ করে বেড়াত দেশে-বিদেশে। গৌতম নির্বাণ লাভের বহু বছর পরের কথা। নিজের ভক্তকুলের সান্নিধ্যে বেশ লম্বা সময় কাটানোর পর হঠাৎ একদিন তার চাচাতো ভাই আনন্দকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন অজানা দেশের উদ্দেশ্যে। বুদ্ধ মাঝে মাঝে এরকম বেরিয়ে পড়তেন অজানার পানে। নতুন মানুষ নতুন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন। আবার কখনো কখনো এরকম অবস্থায় ঘুরে বেড়ানোর সময় নিজে থেকেই জড়িয়ে পড়তেন নানা ঘটনার সঙ্গে, সাহায্য করতেন বিভিন্ন শ্রেণির মানুষদের। এমনকি উনি কাঠের কাজ থেকে শুরু করে লোহার কাজ পর্যন্ত জানতেন। বিভিন্ন সময়ে এমনকি নানা ধরনের শল্য চিকিৎসার মাধ্যমেও সাহায্য করতেন প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষকে। এমনও ঘটনা জানা যায় বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের নিমন্ত্রণে উনি নাকি মহামারিরও দূর করেছিলেন।’

শামান অনেকক্ষণ ধরেই রাজা মানরুর এই নানা কাহিনির বর্ণনায় বিরক্ত বোধ করছিল। তাই খাওয়া শেষ করে নিজের বাঁশের ধূম্র-কাঠি জ্বালাতে জ্বালাতে সরাসরি রাজার কাছে প্রশ্ন করে উঠল, ‘মূল ঘটনাটা কি?’

শামানের প্রশ্ন শুনে রাজা মানরু সামান্য হেসে উঠল। ‘আমি জানি মূল ঘটনা বলার আগে অনেক বেশি আদিখ্যেতা করছি কিন্তু মূল ব্যাপারটা বুঝতে হলে এই ঘটনাগুলো জানাটা জরুরি। কারণ এই ঘটনাগুলো বুদ্ধের জীবনের লুকানো ব্যাপারগুলোর মধ্যে অন্যতম। যাই হোক, বুদ্ধ আর আনন্দ উত্তরের দিকে হাঁটতে হাঁটতে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে অজানা অচেনা এক দেশের বনাঞ্চলে গিয়ে থামল। চারপাশে পাহাড়ে ঘেরা চমৎকার এক বনাঞ্চল। বনে ফলমূল, খাবার-দাবার ইত্যাদির কোনো অভাব নেই। বুদ্ধ আর আনন্দ মিলে বনেই সময় কাটাতে লাগলেন। দুজনে খায়-দায়, ঘুরে বেড়ায়, জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করে। দুজনার সময় ভালোই কাটছিল, এমন সময় সেই বনে এসে হাজির হয় ওই এলাকার রাজার সৈনিকেরা, তাদের কাছে খবর আছে বনে দুজন আগন্তুক এসেছে। রাজার নির্দেশে তাদেরকে রাজ দরবারে হাজির করতে হবে।’

‘তাদেরকে কি ধরে নিয়ে যাওয়া হয় রাজ দরবারে?’ কালন্তি জানতে চাইল।

‘না, ঠিক ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বললে ভুল হবে তবে রাজার নির্দেশেই তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজ দরবারে। তো রাজ দরবার নিয়ে যাবার পর রাজা তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার এক পর্যায়ে যখন জানতে পারে স্বয়ং বুদ্ধ তাদের রাজ্যে পা রেখেছে সে তাদেরকে যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গে আদর-আপ্যায়ন করতে থাকে। রাজার আদর আপ্যায়নে মুগ্ধ হয়ে বুদ্ধ সেখানে কিছু সময় কাটানোর পর রাজাকে জানান তাদের আদর-আপ্যায়নে সে মুগ্ধ হয়েছে, চাইলে রাজাকে সে নিজ থেকে একটা উপহার দিতে চান।’

‘বাহ, ভালোই তো,’ মুখ দিয়ে গল গল করে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে খানিকটা টিটকিরির সুরে কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল শামান। কারণ রাজা মানৰু কড়া চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ‘দুঃখিত,’ নিজের একটা হাত তুলে ক্ষমা প্রার্থনা করল ও। ‘বলেন, এরপরে কী হলো।

‘অদ্ভুত ব্যাপার হলো, উপহারের কথা শুনে রাজা হঠাৎ খুব গম্ভীর হয়ে গেল। রাজা বুদ্ধকে জানায় উপহার তার চাই না কিন্তু তার বদলে বুদ্ধ যদি একটা ব্যাপারে তাকে কোনো সহায়তা করতে পারে তবে তার জন্যে বড়োই উপকার হয়। বুদ্ধ জানতে চান, কী উপকারের কথা বলছেন রাজা। জবাবে রাজা খুবই আজব এক গল্প শোনায় বুদ্ধকে। তার রাজ্যে হঠাৎ এক অদ্ভুত সমস্যা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি তার ছোটো ভাই যে কি না তার রাজ্যের পাহাড়ি এক অঞ্চলের দায়িত্বে ছিল সে নাকি খুন হয়েছে বিদ্রোহী এক গোষ্ঠীর হাতে। রাজা বুদ্ধকে জানায় এই বিশেষ গোষ্ঠী নাকি সৰ্প দেবতার পুজো করে…’

‘উরগ,’ আনমনেই বলে উঠল কালন্তি

‘উরগ কি না সেটা সঠিকভাবে জানা যায়নি,’ রাজা মানরু বলে উঠল। তবে হ্যাঁ বুদ্ধের সঙ্গে যাদের শক্তি পরীক্ষার যুদ্ধ হয়েছিল তারাও সর্প দেবতার পুজো করত। তো যাই হোক রাজা জানাল, তাদের রাজ্যে পাহাড়ি দেবতার পুজো করে, রাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী অন্য গোত্রগুলোও পাহাড়ি দেবতার পুজো করতে বাধ্য ছিল। কিন্তু এই বিশেষ গোত্র বহু পুরুষ আগে থেকেই পাহাড়ি দেবতার পুজো করার ব্যাপারটা অস্বীকার করে তাই তাদেরকে রাজ্যের এক কিনারায় অন্যদের থেকে একেবারে আলাদাভাবে থাকার জায়গা করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি ওখানে কিছু একটা হয়েছে যার প্রেক্ষিতে তারা নাকি অনেক বেশ বলবান হয়ে আশপাশের রাজ্যগুলোর ওপরে আক্রমণ শুরু করে। সেই আক্রমণ ফেরানোর জন্যেই তার ছোটো ভাইকে পাঠানো হয়েছিল এই বিশেষ গোত্রের মোকাবেলা করার জন্যে। কিন্তু সেই ছোটো ভাই ও তার বাহিনী পুরোটাই গায়েব হয়ে গেছে। বলতে গেলে কেউই ফিরে আসেনি। কিন্তু তাদের দলের এক সংবাদবাহক ফিরে এসে জানায় ওই সৰ্পপূজক জাতি নাকি বিশেষ এক ধাতু দিয়ে কালো জাদুর মাধ্যমে অস্বাভাবিক শক্তিশালী অস্ত্র নির্মাণ করেছে। তারাই নাকি আশপাশের রাজ্যগুলোতে অত্যাচার করে বেড়াচ্ছে। সেইসঙ্গে দিন-দিন নিজেদের কালো জাদুর মাধ্যমে আরো অধিক শক্তিশালী হয়ে উঠছে।’

‘হিম্বা,’ মৃদু স্বরে ফিসফিস করে উঠল শামান।

রাজা মানরু বলে চলেছে, ‘এরপরে কী হয়েছিল সঠিকভাবে জানা যায়নি তবে এটা জানা যায় বুদ্ধ নাকি তার সহিস ও ভাই আনন্দকে নিয়ে পাড়ি জমায় সেই রাজ্যে। সেখানে নাকি তার সঙ্গে সেই সর্পপূজারি জাতির কালো জাদুকরের ডেকে আনা অন্ধকারের অবতারের মোকাবেলা করতে হয় তাকে। অবশেষে কালো জাদুর প্রকোপ থেকে উনি মুক্ত করেন সেই রাজ্যকে। এরপরে সেই কালো জাদুকর, সেই অস্বাভাবিক ধাতু আর অন্ধকারের অবতারকে বুদ্ধ কী করেছিলেন সেটা কেউই সঠিকভাবে বলতে পারে না। তবে কথিত আছে অন্ধকারের সেই অবতারকে বুদ্ধ নাকি নিজের আত্মার ভেতরে বন্দি করে রেখেছিলেন।’

‘অদ্ভুত তো…’

হ্যাঁ, অদ্ভুত তো বটেই। কিন্তু এর পেছনে কারণও ছিল। অন্ধকারের সেই অবতার নাকি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, সে নাকি পৃথিবীর সকল ভালো শক্তির বিনাশ সাধন করার ক্ষমতা রাখত তাই একে বুদ্ধ অন্য কোথাও বন্দি করার সাহস পাননি। এ কারণেই এই কালো শক্তিকে নিজের ভেতরে বন্দি করে রাখেন বুদ্ধ।’

‘এই ঘটনার সঙ্গে বর্তমান সময়ের এই অন্ধকারের অবতারের সম্পর্ক কি? আর ডুকপা লামাকেইবা এসবের সঙ্গে জড়ানো হলো কেন?’ শামান জানতে চাইল।

‘এই প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারব,’ পেছন থেকে ভেসে আসা কণ্ঠস্বরটা শুনে সবাই ফিরে তাকাল। রাজা বিক্রমকে দেখে যারপরনাই অবাক হলো সবাই। নিজের একজন লোকের কাঁধে ভর দিয়ে পায়ে পায়ে হেঁটে ভেতরে এসে ঢুকল সে।

‘রাজা বিক্রম আপনি ঠিক আছেন?’ রাজা মানরু বিক্রমকে বসার জন্যে জায়গা করে দিয়ে জানতে চাইল।

‘আমি একদম ঠিক আছি, আর আমার ঠিক থাকার চেয়ে এই মুহূর্তে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো পরিস্থিতি বিবেচনা করে কাজে নামা,’ বিক্রম রাজা মানরুর দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে শামানের দিকে ফিরে তাকাল। ‘তুমি নিশ্চয়ই তিব্বত থেকে আসা সেই যোদ্ধা, যার কথা আমি শুনেছি,’ রাজা বিক্রমের প্রশ্নের জবাবে শামান কিছুই না বলে স্রেফ একবার মাথা নাড়ল। শামানের জবাব পেয়ে রাজা নিজের দুই হাত জোড় করে শামানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল। ‘আমি রাজ পরিবারে জন্ম নিয়েছি। কিন্তু আমার রাজ্য আমি শুধু পারিবারিক ক্ষমতাবলে অর্জন করিনি বরং আমি নিজের কাজ দিয়ে মানুষের মাঝে প্রতিষ্ঠা পাবার চেষ্টা করেছি, ঠিক যেমনটা বুদ্ধ বলে গেছেন,’ রাজা বিক্রম এই পর্যন্ত বলতেই শামান ফিরে তাকাল কালন্তির দিকে।

কালন্তি অন্যদিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু তারপরও শামান বুঝতে পারল রাগের সঙ্গে ফুঁসছে সে।

রাজা বিক্রমের এদিকে খেয়াল নেই। সে বলে চলেছে, ‘তবুও আজ পর্যন্ত কারো কাছে আমি কোনোদিন হাত জোড় করিনি। আজ তোমার সামনে করছি ধন্যবাদ জ্ঞাপণের জন্যে,’ বলে সে আবারো রাজা মানরু আর শামানের লোকদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘আজ আপনারা না থাকলে এতক্ষণে আমার মাথা ধর থেকে বিচ্ছিন্ন থাকত,’ বলে সে দুই হাত জোড় করে মাথা নিচু করে রইল। একটু পরে যখন মাথা তুলল তার দুই চোখ বেয়ে নেমে আসছে অশ্রুধারা। ‘আমি আজ সবার সম্মুখে শাক্য আর থারুদের মাঝে গত বিশ বছর ধরে বিরাজমান সমস্ত বিবাদ, যুদ্ধ আর অত্যাচারের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। সেইসঙ্গে আমি কথা দিচ্ছি, আমি যদি আবারো আমার রাজ্য ফিরে পাই গত বিশ বছর ধরে চলে আসা পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার চেষ্টা করব,’ বলে সে আবারো দুই হাত জোড় করে মাথা নিচু করল।

‘বিশ বছরের জখম কখনোই বিশ দিনে ভরে না রাজা বিক্রম,’ কালন্তি এতক্ষণ চুপচাপ থাকলেও হঠাৎ সে কথা বলে উঠল। রাজা মানরু তার দিকে তাকিয়ে নিশ্চুপ থাকার জন্যে ইশারা করলেও সে রাজার কথা শুনল না। বরং বেশ ঝাঁঝের সঙ্গে বলে উঠল। আর আপনার জ্ঞাতার্থে বলছি যে জখম ভরবার নয় সেই জখমে মলম না লাগানোই ভালো। তারচেয়ে বরং নিজেদের ভবিতব্য নিয়ে আলোচনা করাই সবদিক থেকে শ্রেয়।’

‘হ্যাঁ, সেইটাই,’ শামান যোগ করল। ‘রাজা বিক্রম, আমি যোদ্ধা, যুদ্ধই আমার পেশা কিন্তু আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি এখানে আমি যুদ্ধের জন্যে আসিনি। আমি এখানে এসেছি ডুকপা লামাকে উদ্ধার করতে, এর পাশাপাশি অন্য যা কিছু ঘটছে বা ঘটবে সেটা আপনাদের প্রাধান্য হতে পারে আমার নয়। কাজেই আমি প্ৰথমেই আপনার কাছে জানতে চাই। ডুকপা লামা কি বেঁচে আছেন?’ এই শেষ শব্দ কয়টা উচ্চারণ করতে ওর বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল। যদি সত্যিই আজকের ঘটনার পর আপনার মনে হয় আমার কাছে আপনার কোনো কৃতজ্ঞতা আছে, তবে আমি জানতে চাই ডুকপা লামার জীবিত থাকার ব্যাপারে আপনি যা জানেন আমাকে জানালে কৃতার্থ হবো,’ কথাগুলো বলে শামান একবার বিধুর দিকে তাকাল। বিধুর দৃষ্টিতেও অদমনীয় কৌতূহল।

রাজা বিক্রম শামানের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘ডুকপা লামা বেঁচে আছেন, আমি আপনাদের নিশ্চিত করছি। যদিও সাঁচি থেকে ধরে নেয়ার পরই আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছিল কিন্তু আমি নিশ্চিত উনি বেঁচে আছেন। লিচ্ছবী আর উরগরা তাকে কোনোভাবেই মারবে না। কেন মারবে না সেটা বলতে হলে আগে আমাকে পুরো ঘটনাটা বলতে হবে। রাজা মানরু বুদ্ধের অন্ধকারের অবতারের ব্যাপারে যা বললেন সেই ঘটনার কয়েকটা রকমফের প্রচলিত আছে লোকমুখে। তবে মূল ঘটনাটা মোটামুটি কাছাকাছি। তবে এটাও ঠিক যে আসলেই এরকম কিছু ঘটেছিল কি না অতীতে সেটার কোনো নিশ্চয়তা কেউই দিতে পারেনি। এমনকি বুদ্ধও কখনো এই ব্যাপারে নিজে থেকে কিছু বলেননি।

‘তাহলে আজ শত বছর পরে এই ব্যাপারটা কেন আবারো আলোচনায় এলো সেটাই তো বুঝতে পারছি না আমি,’ শামান বলে উঠল।

‘বলছি। আগে বলে নেই আমাদের সঙ্গে কী ঘটেছিল। ব্ৰাহ্মণ শুঙ্গ সেনাপতি রাজা বৃহদ্রথকে মেরে ভারতবর্ষে শুঙ্গ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পরই এই খবর এসে পৌঁছায় আমাদের কাছে কিন্তু আমি প্রথম থেকেই ব্যাপারটাকে আমলে নিইনি। পাহাড়- জঙ্গল বিধৌত এলাকা হবার কারণে আমি ভাবতেই পারিনি ভারতবর্ষের সেই তমসা আমাদের এখান পর্যন্ত এসে পৌঁছাবে। আর অন্যদিকে তিব্বত থেকে ডুকপা লামার দ্বিবার্ষিক সফরেরও সময় ঘনিয়ে আসছিল। তো আমি ভেবেছিলাম ডুকপা লামার সফরটা শেষ হয়ে যাক, এই সফরের যজ্ঞানুষ্ঠান সম্পন্ন করার পর আমি তার সঙ্গে ব্যাপারটা আলোচনা করব কিন্তু এরই মধ্যে ঘটে গেল সব। আমাদেরকে সাঁচির স্তুপা থেকে ধরে নেয়ার পর প্রথমে আমাকে আর ডুকপা লামাকে একসঙ্গেই রাখা হয়েছিল। আমাদের প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় রামগড়ে। সেখানে এমনকি আমাদেরকে পাশাপাশি কামরাতেই আটকে রাখা হয়। আমাদের ধরে নেয়ার দুইদিন পরেই উরগরা এসে ডুকপা লামাকে সেখান থেকে নিয়ে যায়। এরপরে আমাকে ওখানে বন্দি করে রাখা হয় মন্তলার হাটে নিয়ে আসার আগ পর্যন্ত,’ এই পর্যন্ত বলে রাজা বিক্রম একটু থামল।

একটু থেমে আবারো শুরু করল, ‘রামগড়ে বন্দি থাকা অবস্থায়, এরপরে মন্তলাল হাটে মস্তক ছিন্নকরণের জন্যে নিয়ে আসার সময়ে আমি আরো বেশ কিছু ব্যাপারে জানতে পারি উরগ আর লিচ্ছবীদের ভেতরে কথোপকথন থেকে,’ বলে সে রাজা মানরুর দিকে একবার দেখে নিয়ে শুরু করল। রাজা মানরু যে পর্যন্ত বললেন এর পর থেকে আমি শুরু করব। যদি বুদ্ধের ওই ঘটনা সত্যি হয়ে থাকে তবে ধারণা করা হয় যাদের সঙ্গে বুদ্ধের গোলযোগ হয়েছিল উরগরা তাদেরই বংশধর। সর্প দেবতার পুজো, কালো জাদু-বিশেষ ধাতুর ব্যবহার এসবে ওরাই পারঙ্গম।’

‘মৌর্য শাসনের অবসান, শুঙ্গদের সঙ্গে লিচ্ছবীদের যোগাযোগ আর সর্বোপরি এই ঘটনার সঙ্গে উরগদের সংযোগ, সেইসঙ্গে ডুকপা লামার অপহরণ। এই ব্যাপারগুলোকে আমি কোনোভাবেই এক সুতোয় আনতে পারছি না,’ শামান মন্তব্য করল।

‘সেটাই করার চেষ্টা করব আমি,’ রাজা বিক্রম বলে উঠল। ‘আমি এখন পর্যন্ত যা যা শুনেছি সেগুলোর সঙ্গে খানিকটা নিজের ধারণা মিশিয়ে আমি পুরো ব্যাপারটা পরিষ্কার করার চেষ্টা করছি। শুঙ্গ সেনাপতি রাজা বৃহদ্রথকে হত্যা করে মৌর্য শাসনের অবসান করার পর যখন ভারতবর্ষ থেকে বৌদ্ধদের অবলুপ্তি ঘোষণা করল তখন আমাদের এই কন্নোরে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় আরোহণ করতে ইচ্ছুক আমাদের জ্ঞাতি ভাই লিচ্ছবীরা এটাকে একটা সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করে। তারা নাকি নিজ থেকেই শুঙ্গ রাজার কাছে বার্তা পাঠায়, কন্নোর থেকে আমাদের শাসন উৎখাত করে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়, সেইসঙ্গে তারা এর মাধ্যমে শুঙ্গদের সঙ্গে একাত্ম হতে চায়। কিন্তু শুঙ্গ রাজা লিচ্ছবীদের অসভ্য বিবেচনা করে তাদের প্রস্তাবকে ফিরিয়ে দিতে চাইলে তখন লিচ্ছবীরা তার সঙ্গে এক বিশেষ চুক্তিতে আসে। তারা শুঙ্গ রাজাকে জানায় তাদের কাছে বিশেষ কিছু একটা আছে। তারা চাইলে বুদ্ধের অন্ধকার অবতারকে পৃথিবীতে নামিয়ে আনতে পারবে। শুঙ্গ রাজা তখন খানিকটা আগ্রহী হয়ে ওঠে। শুঙ্গরা জানায় যদি লিচ্ছবীরা এটা করতে পারে তবে ওদের বিরাট সুবিধে হবে। কারণ একদিকে তারা গণহত্যা তো চালাচ্ছেই অন্যদিকে স্বয়ং বুদ্ধের অবতার সাধারণ মানুষের সামনে নিয়ে আসতে পারলে তাদের জন্যে এই গণহত্যাকে বৈধ করার একটা পন্থা পাবে কারণ, লোকসম্মুখে নাকি স্বয়ং বুদ্ধের অবতার তার অন্ধকার দিক তুলে ধরবে।’

‘এর মানে কি? বুদ্ধের অবতার আবার কথা বলবে কিভাবে?’

‘রাজা মানরু এই ব্যপারটা সবাইকে বলেননি। বুদ্ধের অন্ধকারের অবতারের ব্যাপারে একটা কথা প্রচলিত আছে যে তাকে পৃথিবীতে তুলে আনতে পারলে নাকি সে স্বয়ং কথা বলবে, বুদ্ধের সকল খারাপ আর অন্ধকার দিক সে তুলে ধরবে। ব্যাপারটা অনেকটা জীবন আলোকিত করার উলটো দিক। বুদ্ধ সারাজীবন মানুষের জীবন আলোকিত করার বাণী প্রচার করে গেছেন—তার অন্ধকারের অবতার নাকি উলটোটা করতে সক্ষম। পাগলামি আরকি। তবে প্রশ্ন সেটা না, প্রশ্ন হলো লিচ্ছবীদের এই পাগলামি প্রস্তাব শুনে শুঙ্গরা আগ্রহী হয়ে ওঠে, তাদের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপরে লিচ্ছবীরা বিশেষ বাহিনী গঠন করে স্তুপা থেকে আমাদের ধরে নিয়ে আসে। এর পেছনে কারণ ছিল দুটো; এক, আমাকে বন্দি করতে না পারলে ওরা রাজ্য দখল করতে পারছিল না। দুই, ডুকপা লামা। ভারতবর্ষের বৌদ্ধদের জন্যে ডুকপা লামা একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। বৌদ্ধ রাজা বিক্রম, ডুকপা লামা আর বুদ্ধের অন্ধকার অবতার এই তিনটে শুঙ্গদেরকে ভেট হিসেবে দিতে পারলেই লিচ্ছবীরা শুঙ্গদের মাধ্যমে চিরকালের জন্যে এই এলাকার শাসক হতে পারবে। এটাই ছিল শুঙ্গদের সঙ্গে তাদের চুক্তি। এ ছাড়াও ডুকপা লামাকে ধরে নেয়ার পেছনে আরো একটা কারণ আছে। আপনি কি জানেন শ্ৰমণ হিসেবে দীক্ষা নেবার অগে ডুকপা লামার পেশা কী ছিল?’ রাজা বিক্রম শেষ কথাটা বলেছে শামানকে উদ্দেশ্য করে।

শ্রমণ হিসেব দীক্ষা নেয়ার আগে?’ শামান আনমনেই মাথা নাড়ল। ‘আমি জানি না।’

ডুকপা লামার পরিবার ছিল তিব্বতের সেরা কামার গোত্রগুলোর একটি। প্রাথমিক জীবনে ডুকপা লামা ধাতব জিনিসপত্র নির্মাণের কারিগর হিসেবে শিক্ষা নিয়েছিলেন। তার বাবা ছিল তিব্বতের সেরা কারিগরদের একজন। ডুকপা লামার বাবা নাকি পুরো তিব্বতের ভেতরে একমাত্র মানুষ যিনি জানতেন ভিন্ন ভিন্ন ধাতুকে কিভাবে নানাবিধ পন্থায় ভিন্ন রূপ দিয়ে সেরা অস্ত্র নির্মাণ করা যায়। সেইসঙ্গে আরো একটা জিনিস উনি জানতেন,’ বলে রাজা বিক্রম থামল। ‘আমরা এতক্ষণ ধরে যে অন্ধকারের অবতার বিষয়ে আলোচনা করছি, আপনাদের কি কারো মনে হয়েছে এই অন্ধকারের অবতারটা আসলে কি?’

সবাই চুপ এই ব্যাপারটা কারো মাথায় আসেনি।

‘এতটা না জানলেও এটা তো জানেন যে, বুদ্ধ মারা যাবার পর তার দেহভস্ম প্রথমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে তৎকালীন সম্ভ্রান্ত সাত পরিবারের মাঝে। তারপর সম্রাট আশোকের সময়ে নির্মাণকৃত সব স্তুপায় ছড়িয়ে দেয়া হয় তার দেহভস্ম। লিচ্ছবীরা শুঙ্গদের সহায়তায় সেরা বারোটা স্তুপা থেকে বুদ্ধের দেহভস্ম সংগ্রহ করেছে, সেইসঙ্গে তারা উরগদের মাধ্যমে সংগ্রহ করেছে পৃথিবীর অন্যতম দুষ্প্রাপ্য ধাতু হিম্বা, বুদ্ধের দেহভস্ম আর কালো জাদুর আধার হিম্বার মাধ্যমে ওরা ফিরিয়ে আনতে চলেছে বুদ্ধের অন্ধকারের অবতারকে।’

‘মূর্তি,’ রাজা বিক্রমের কথা শেষ হবার আগেই শামান বলে উঠল। ‘ওরা আসলে বুদ্ধের দেহভস্ম আর আর কালো জাদুর সংমিশ্রণে একটা মূর্তি নির্মাণ করছে।’

‘একদম ঠিক,’ রাজা বিক্রম সবাইকে দেখে নিয়ে যোগ করল। ‘লিচ্ছবীদের ধারণা উরগদের মাধ্যমে যদি তারা এই বিশেষ ধাতু হিম্বা—যেটাকে ওরা বলে কালো জাদুর আধার, এর খোলসের ভেতরে বুদ্ধের দেহাবশেষকে বন্দি করতে পারে তবে শত বছর আগে বুদ্ধ যে অন্ধকারের অবতারকে নিজের ভেতরে বন্দি করেছিলেন সেই অন্ধকারের অবতার আবার ফিরে আসবে পৃথিবীতে, স্বয়ং বুদ্ধমূর্তির ভেতর থেকে কথা বলে উঠবে সেই অবতার। বুদ্ধ নিজের জ্ঞান দিয়ে ঠিক যেভাবে সমগ্র পৃথিবীর মানুষকে আলোকিত করার চেষ্টা করেছেন ঠিক উলটোভাবে এর মাধ্যমে শুঙ্গরা বিপরীত কাজটা করবে।’

শামান উঠে দাঁড়াল। ‘বুদ্ধের দেহাবশেষ আর এই ধাতুর সম্মিলন ঘটানোর জন্যে ওরা বেছে নিয়েছে তিব্বতের সেরা মানুষটাকে।’

‘ডুকপা লামা,’ রাজা বিক্রম বলে উঠল। যদি এই কাজে ওরা সফল হয় তবে…’

‘সেটা হবে না,’ শামান দৃঢ় স্বরে বলে উঠল। ‘কারণ অমি সেটা হতে দেবো না। ডুকপা লামাকে এই ঘৃণ্য কাজ করতে বাধ্য হবার আগেই তাকে উদ্ধার করব আমি,’ বলে সে সবাইকে দেখল। ‘আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে ঠেকাতে হবে এটা। যেভাবেই হোক।

২৮০

সকল অধ্যায়

১. ব্ল্যাক বুদ্ধা – পূর্বকথা – ১৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
২. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ১
৩. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ২
৪. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৩
৫. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৪
৬. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৫
৭. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৬
৮. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৭
৯. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৮
১০. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৯
১১. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ১০
১২. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ১১
১৩. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ১২
১৪. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ১৩
১৫. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ১৪
১৬. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ১৫
১৭. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ১৬
১৮. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ১৭
১৯. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ১৮
২০. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ১৯
২১. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ২০
২২. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ২১
২৩. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ২২
২৪. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ২৩
২৫. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ২৪
২৬. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ২৫
২৭. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ২৬
২৮. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ২৭
২৯. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ২৮
৩০. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ২৯
৩১. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৩০
৩২. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৩১
৩৩. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৩২
৩৪. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৩৩
৩৫. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৩৪
৩৬. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৩৫
৩৭. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৩৬
৩৮. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৩৭
৩৯. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৩৮
৪০. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৩৯
৪১. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৪০
৪২. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৪১
৪৩. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৪২
৪৪. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৪৩
৪৫. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৪৪
৪৬. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৪৫
৪৭. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৪৬
৪৮. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৪৭
৪৯. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৪৮
৫০. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৪৯
৫১. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৫০
৫২. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৫১
৫৩. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৫২
৫৪. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৫৩
৫৫. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৫৪
৫৬. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৫৫
৫৭. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৫৬
৫৮. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৫৭
৫৯. ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৫৮

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন