চ্যাপ্টার ১৩ : অ্যা ভেরি রিয়েল ওয়ে

সুগারু মিয়াকি

চ্যাপ্টার ১৩ : অ্যা ভেরি রিয়েল ওয়ে

গল্প প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছে। লেখালেখির জন্য হাতে খুব কম সময় আছে, তাই আমি জানি না গল্পটা শেষ করার আগেই সবকিছু শেষ হয়ে যায় কি-না।

আমার মনে হয় আগের মতো বিস্তারিত লেখা যাবে না। কাটছাঁট করে লিখতে হবে।

যদিও মিয়াগির ঋণ শোধ করবো বলে ঠিক করেছি, কিন্তু আমার মূর্খতা এত সহজে নিরাময় করার যোগ্য না। অন্ততপক্ষে যখন কোনো কিছু অনুসরণ করতে হয়, সম্ভবত তখন আমার নেওয়া ভুল সিদ্ধান্তকে দোষ দেওয়ার কিছু নেই।

কার্যত, প্রথমদিকে এটা অসম্ভব মনে হয়েছিল। ওর ঋণ ছিল এক সময়ে হিমেনোর বলা চাকরিজীবীর আয়-ব্যয়ের সমষ্টির চেয়ে অনেক অনেক বেশি। কলেজের কোনো স্টুডেন্টের পক্ষে দুই মাসে এত টাকা যোগাড় করা বলতে গেলে অসম্ভব।

কিন্তু সময়ের সাথে-সাথে, আমি উপায় খুঁজতে লাগলাম। এক্ষেত্রে ভালো কোনো কাজ করা সম্পূর্ণ অবাস্তব চিন্তা। যত কঠোর পরিশ্রমই করি না কেন, দুই মাসের মধ্যে যা পাবো সেটা, পাথর নিংড়ে পানি পাওয়ার মতোই হবে।

তর্কসাপেক্ষে ধরে নিলাম মিয়াগির দেয়া ৩০০,০০০ ইয়েন আমি রোজগার করতে পারলাম। কিন্তু আমার মনে হয় না ও চাইবে আমি শেষ কটা মাস এভাবে কামলা খেটে মরি। সেইসাথে ও নিশ্চয় চাইবে না টাকা উপার্জন করতে গিয়ে আমি জোচ্চুরি, ডাকাতি, প্রতারণা অথবা অপহরণের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ি।

আর যেহেতু আমি ওর জন্যই টাকাটা উপার্জন করতে চাই, অবশ্যই ও চাইবে না এমন কোনো উপায়ে আমি টাকা উপার্জনের চেষ্টা করি।

জুয়া কথাও ভেবে দেখলাম। এমনকি বোকামি করে হলেও ওসব করার কথা মাথায় তুললাম না। আমি জানি আমার ফাটা কপাল নিয়ে ফুটো পয়সাও জিততে পারবো না। জুয়া হচ্ছে এমন খেলা, এটা তারাই জেতে যারা পয়সা খরচ করতে পারে।

সৌভাগ্যের দেবীকে ধরতে গেলে, সে পালিয়ে যাবে। এর জন্য শক্ত হতে হবে এবং তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে কখন দেবী নিজ থেকে ধরা দেয়। তার পরে সঠিক সময় বুঝে ধরতে হবে। কিন্তু সেজন্য যে সময়ের প্রয়োজন তা আমার হাতে নেই। আর সঠিক সময় সম্পর্কেও আমার কোনো ধারণা নেই।

এটা অনেকটা মেঘ ধরার মতো। দুই মাসের মধ্যে যদি সারাজীবনের টাকা উপার্জনের দারুণ কোনো পথ থাকতো, সকলেই সেটা করতো। সত্যি বলতে আমি যা করতে চেষ্টা করছি তা শুনলে সকলেই অসম্ভব বলে ঘোষণা দিতো।

আমার একমাত্র “অস্ত্র” ছিল, বাকি আয়ুষ্কালটুকু। কিন্তু টাকার জন্য জীবন উৎসর্গ করা ব্যক্তি আমিই প্রথম নই। আর আমি নিশ্চিতভাবেই বলে দিতে পারি তাদের জন্য পরিকল্পনা মোটেও কাজে দেয়নি।

তবুও, বেপরোয়াভাবে আমি চিন্তা করে যেতে লাগলাম। আমি জানি, এর আগে কেউ যদি সফল নাও হয়, আমাকেই প্রথম সফল হতে হবে।

নিজেকে বারবার বলে যেতে লাগলাম, চিন্তা করো, চিন্তা করো, চিন্তা করো। কিভাবে বাকি দুই মাসে আমি ঋণটা শোধ করতে পারি? মিয়াগি নিশ্চিন্তে ঘুমানোটা কীভাবে নিশ্চিত করতে পারি? আমার মৃত্যুর পরেও মিয়াগি একা হয়ে যাবে না নিশ্চিত করবো কীভাবে?

শহরজুড়ে হেঁটে বেড়াতে-বেড়াতে আমি চিন্তা করতে লাগলাম। আমার বিশ বছরের ক্ষুদ্র জীবনে এইটুকু অভিজ্ঞতা অন্তত হয়েছে যে, কোনো প্রশ্নের সঠিক কোনো উত্তর জানা না থাকলে হাঁটতে-হাঁটতে চিন্তা করাই সবচেয়ে ভালো।

আমি পরের দিনও হাঁটতে লাগলাম, এবং এরপরের দিনও। আশা করছি উত্তরটা আমার পায়ের কাছে গড়িয়ে পড়বে।

সে সময়ে আমি খুব একটা বেশি কিছু খাইনি।

আবারো অভিজ্ঞতার কথা বলতে হয়। আমি জানি ক্ষুধার্ত থাকার একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে গিয়ে আমার মাথা পরিষ্কার হয়ে যায়। আর আমি সেটার উপরই ভরসা করছি।

আরেকবার দোকানে যাওয়ার চিন্তা মাথায় আসতে খুব বেশি সময় লাগল না।

আমার শেষ ভরসা ছিল পুরাতন দুর্গন্ধযুক্ত বিল্ডিংটা। যেটা একসময় আমাকে হতাশার সাগরে ছুড়ে ফেলেছিল। তবুও আমাকে আরও দুবার কেনাবেচা করার সুযোগ দিচ্ছে।

একদিন আমি মিয়াগিকে জিজ্ঞেস করলাম, “তোমাকে ধন্যবাদ মিয়াগি, আমি এখন আগের চেয়ে অনেক সুখী। যদি ধরে নেওয়া যায় আমি আবারো আমার আয়ুষ্কাল সেই দোকানে বিক্রি করতে চাই। সর্বোচ্চ কত টাকা হবে?”

“আপনি যা ধারণা করেছেন, মূল্যটা কিছু-কিছু বিষয়ের উপর উঠা-নামা করে।” মিয়াগি নিশ্চিত করল। “কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে, আয়ুষ্কালের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে মানসিক সুখ খুবই অল্প প্রভাব রাখতে পারে। তাদের লক্ষ্য থাকে সুখের বাস্তব পরিমাপের উপর। যদিও বিষয়টা নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে।”

“তাহলে, কিসে মূল্য সবচেয়ে বেশি বাড়বে?”

“সামাজিক আবদান, জনপ্রিয়তা। আমার বিশ্বাস ওরা এমন সব বিষয়কে প্রধান্য দেয় যার খুব সহজে বাস্তব মানে খুঁজে পাওয়া যায়।”

“সহজে চেনা যায় এমন, তাই না”

“মি. কুসুনোকি?”

“কিছু বলবে?”

“দয়া করে উল্টাপাল্টা কিছু চিন্তা করবেন না” মিয়াগি চিন্তিত সুরে বলল। “আমি উল্টাপাল্টা কিছু চিন্তা করছি না। এই মুহূর্তে সচরাচর যা চিন্তা করা প্রয়োজন সেটাই চিন্তা করছি।”

“আমার মনে হয় আমি হালকা-পাতলা জানি আপনি কী চিন্তা করছেন,” মিয়াগি বলল। “বেশিরভাগই হচ্ছে কিভাবে আমার ঋণ পরিশোধ করা যায় তা নিয়ে, ঠিক? যদি তাই হয়, তাহলে আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু কৃতজ্ঞ হলেও আমার বলতেই হবে, আমি চাই না আপনি আপনার বাকি সময়টুকু নষ্ট করুন। আপনি যদি আমার সুখের চিন্তা করে থাকেন… আমি খুবই দুঃখিত, নিশ্চিতভাবেই সেটা হবে ভুল ধারণা।”

“শুধুমাত্র জানার জন্য জিজ্ঞেস করছি মিয়াগি, কিসে তোমার সুখ?”

“আমার দিকে নজর দিন” মিয়াগি ঠোঁট ফুলিয়ে বলল। “ইদানীং আপনি আমার সাথে খুব একটা কথা বলেননি, বলেছিলেন কি?”

মিয়াগি ঠিকই বলেছে। আমি যা করছি সেটা আমার দিক থেকে ভুলভাবে চিন্তা করছি।

কিন্তু তার মানে এই না এত সহজে আমি হাল ছেড়ে দিবো। আমি সংকল্প নিয়ে নিয়েছি। আমার উচিত সহজে চেনা যায় এমন জিনিস যেমন সমাজে অবদান রাখা এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করা।

একবার সেটা করতে পারলে আমার জীবনের মূল্য বেড়ে যাবে। আপাতত এটাই মনে হচ্ছে। সাহস করে বলেই ফেলি, আমি আশা করছি আমি এতটা জনপ্রিয় হয়ে যাবো যে সবাই আমাকে এক নামে চিনবে।

আমি সত্যিই জানি না কোনটি বেশি বাস্তবসম্মত; টাকা উপার্জন করা, না- কি এমন মানুষে রূপান্তরিত হওয়া যার আয়ুষ্কাল বেশি দাম বিক্রি করা যাবে।

চিন্তা করে দেখলাম দুটোই সমানভাবে অবাস্তব। কিন্তু আমার আর কোনো উপায় নেই। আমাকে অন্ততপক্ষে একটা চেষ্টা করে দেখতে হবে।

***********

আমি আমার চিন্তাভাবনার একদম শেষ সীমায় পৌঁছে যাচ্ছি। আমার অন্যের কল্পনা শক্তির সাহায্য প্রয়োজন। প্রথমে আমি পুরাতন বইয়ের দোকানে গেলাম। কারণ, বিপদে পড়লেই কেবল ওখানে যাওয়ার ঝোঁক তৈরি হতো আমার। উদ্দেশ্যহীনভাবে সমস্যার সাথে সম্পর্কহীন বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে-থাকতে বেশিরভাগ সমস্যার সমাধান মাথায় আসে। আমি বুঝতে পারলাম, এবারে কাজটা খুব সহজ হবে না। কিন্তু সেদিন আমি, শুধু বইয়ের উপর ভরসা করলাম না।

আমি বৃদ্ধ মালিকের খোঁজ করলাম। যিনি কিনা পেছনে চারপাশের বইয়ের টালের সারি দ্বারা আবদ্ধ হয়ে রেডিয়োতে বেসবল রিলে শুনছে। আমার ডাকে তিনি মাথা তুললেন।

আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আয়ুষ্কালের দোকান সম্পর্কে কোনো কথাই তুলবো না। যদিও উনি দোকানটা সম্পর্কে ঠিক কতটুকু জানেন সেটা জানার খুব ইচ্ছে হচ্ছে। আর সবচেয়ে বড় কথা গত কয়েক মাসে যা যা ঘটেছে সবকিছু বলতে চাচ্ছিলাম আমি।

কিন্তু যদি আমি কথা বলিই, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আমার বাকি দুই মাসের কথা উঠে আসবে, আর উনি হয়তোবা নিজেকে অপরাধী ভাবতে পারে।

তাই আমি আয়ুষ্কাল নিয়ে কোনো কথাই বললাম না। উনার সাথে অর্থহীন কথাবার্তা বললাম। শুধু এবারের জন্য আমি এমনভাবে অভিনয় করলাম যেন মিয়াগির অস্তিত্ব নেই।

আবহাওয়া নিয়ে, বই নিয়ে, বেসবল নিয়ে, ফেস্টিভ্যাল নিয়ে কথা বললাম। উল্লেখ করার মতো কোনো কথা হলো না। আশ্চর্যজনকভাবে কথোপকথনটা আমাকে প্রশান্তি এনে দিলো। সম্ভবত আমি দোকানটি এবং বৃদ্ধ লোকটিকে পছন্দ করি বলেই।

মিয়াগি যখন বুকশেলফের দিকে তাকাতে ব্যস্ত ছিল, আমি বৃদ্ধের কানে কানে ফিসফিস করে একটা প্রশ্ন করলাম।

“কিভাবে কেউ নিজের মূল্যবৃদ্ধি করতে পারবে?”

দোকানের মালিক অবশেষে রেডিওর ভলিউম কমিয়ে দিলো।

“হুম। ধরে নিতে হবে তোমাকে বিশ্বস্ততার সাথে কাজ করতে হবে। যদিও আমি সেটা করতে পারবো না; তারপরেও, আমার মনে হয় তোমাকে যা করতে হবে সেটা ‘তুমি’ ঠিকই দেখতে পারবে। আর সেটা করার ক্ষেত্রে তোমাকে সেরা হতে হবে। অন্তত আমার এই বয়সে এটাই ভাবি আমি।“

“আচ্ছা।” আমি মাথা ঝাকালাম।

“কিন্তু” লোকটি একটু আগে যা বলছিল সেটা অস্বীকার করার মতো করে বলল, “এটার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা আছে। আর তা হচ্ছে আমার মতো কারো উপদেশে বিশ্বাস করো না। এমন কেউ যে জীবনে কিছুই অর্জন করতে পারেনি সে সফলতা নিয়ে কথা বলছে মানে নিজের ব্যর্থতায় চোখ বন্ধ করে রেখেছে। আমার উদাহরণ অনুসরণ করো না। আমি এমনকি বুঝতেও পারছি না কেন আমি ব্যর্থ হয়েছি। এরকম লোকের প্রতি কোনো শ্রদ্ধা দেখানোর প্রয়োজন নেই।”

“যে সকল মানুষ অনেকবার ব্যর্থ হয়েছে তারা সেসব ব্যর্থতা নিয়ে আভাসে ইঙ্গিতে এমনভাবে কথা বলে যেন আরেকবার জীবন পেলে তারা সফল হবে। সকল ধরনের কষ্ট সহ্য করার পরে তারা ভাবে আর কোনো গড়বড় করবে না তারা। কিন্তু তারা সবাই একটা মৌলিক ভুল করে; এমনকি আমি নিজেও। ব্যর্থরা ব্যর্থতা সম্পর্কে অনেক জানে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ব্যর্থতা সম্পর্কে জানা সফলতা সম্পর্কে জানার চেয়ে হাজারগুণ ভিন্ন। ব্যর্থতা ঠিক কাটিয়ে ওঠা মানে এই নয় যে সে সফল হবে; আসলে নতুন করে শুরু করার জন্য একটা পয়েন্ট পাবে। এটাই ব্যর্থরা বুঝতে চায় না।”

আমার কাছে বিষয়টা হাস্যকর মনে হলো যখন মনে পড়ল মিয়াগি এরকম কিছু একটা বলেছিল।

“তারা শুধুমাত্র স্টার্টিং লাইনে পৌঁছেছে। অনেকগুলো হারের পরে তারা কেবলই মাত্র আত্মসংযম পুনরুদ্ধার করেছে। সেটাকে সবকিছু উলটপালট করে দেওয়ার সুযোগ মনে করা মানেই ভুল করা।“

শেষে উনি বলল:

“তুমি কি আবারো আয়ুষ্কাল বিক্রির কথা ভাবছ নাকি?”

“মানে কী?” আমি নিষ্পাপভাবে হেসে বললাম।

বইয়ের দোকান থেকে বের হয়ে আগের মতোই, সিডির দোকানে প্রবেশ করলাম। সচরাচর যে থাকে; সেই সোনালি চুলের ক্লার্কটা আমাকে স্বাগত জানালো।

এখানেও, আমি আয়ুষ্কাল নিয়ে কোনো কথা বললাম না। কেবলমাত্র ইদানীং যেসব সিডি শুনেছি সেসব নিয়ে খাজুরে আলাপ করলাম।

শেষে, মিয়াগি শুনতে পাবে না এমন সময় বেছে নিয়ে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলাম:

“কম সময়ের মধ্যে কোনো কিছু অর্জন করার যায় কিভাবে?”

ক্লার্কের উত্তর এলো খুব দ্রুত। “ধরে নিন আপনাকে অন্যের উপর নির্ভর করতে হবে, ভায়া। কারণ, একা একজন ব্যক্তি কিছুই করতে পারবে না, তাই না? সত্যি বলতে, তার মানে হচ্ছে আপনাকে অন্যের সাহায্য নিতে হবে। আমার নিজের উপরে এতটা ভরসা নেই। যদি এমন কোনো সমস্যায় পড়ি, যা আমি মোকাবেলা করতে পারবো না; আমি সোজা অন্যের কাছে সাহায্যের জন্য চলে যাই।”

উপদেশটা কি আমি শুনবো না-কি শুনবো না; নিশ্চিত হতে পারছিলাম না।

বাইরে হঠাৎ ভারী বৃষ্টিপাত হতে লাগল। গ্রীষ্মে যা হয়

বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম আমি। কিন্তু ক্লার্ক আমার হাতে একটা ভিনাইল ছাতা ধরিয়ে দিলো।

“আমি জানি না আপনার সাথে কী ঘটছে। কিন্তু আপনি যদি কোনো কিছু অর্জন করতে চান আপনার স্বাস্থ্যের কথা ভুলবেন না।” সে বলল।

লোকটাকে ধন্যবাদ দেওয়ার পর, ছাতা মাথায় দিয়ে মিয়াগির সাথে বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলাম। ছাতাটা ছোট বিধায় আমাদের কাঁধ ভিজে একাকার হয়ে গেল।

লোকজন আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তারা একটা নির্বোধকে ভুল জায়গায় ছাতা ধরতে দেখছে।

“আমার ব্যাপারটা পছন্দ হয়েছে।” মিয়াগি হাসতে লাগল।

“কেন তোমার পছন্দ হয়েছে?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।

“আসলে… অন্য সবার কাছে কী রকম হাস্যকর দেখাচ্ছে জানা সত্ত্বেও, আপনি আপনার কাঁধ ভিজতে দিচ্ছেন। আমার এরকম ব্যাপার খুব পছন্দের।”

“ওহ…” আমি বললাম। আমার চিবুক হালকা লাল হয়ে গেল।

“আপনি একজন বেহায়া লাজুক পুরুষ” আমার কাঁধে একটা খোঁচা দিয়ে মিয়াগি বলল।

কিন্তু এক্ষেত্রে, মানুষ আমাকে নিয়ে কী ভাবছে তা গ্রাহ্য করি না। মানুষ আমার সম্পর্কে কী ভাবছে তা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। কারণ, আমি যা করছি সেটা মিয়াগিকে খুশি করছে। আমাকে যতটা হাস্যকর লাগছে, মিয়াগি ঠিক ততটাই হাসছে।

*********

বৃষ্টি থেকে বাঁচতে একটা দোকানের ছাউনিতে আশ্রয় নিলাম আমরা। দূরে ব্রজপাতের গর্জন শুনতে পেলাম। নর্দমা থেকে বৃষ্টির পানি উপচে পড়ে আমার ভেজা জুতার ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে।

সেখানে, আমি একটা পরিচিত মুখ দেখতে পেলাম। মানুষটি গাঢ় নীল রঙের ছাতা মাথায় দ্রুত হেঁটে যাচ্ছিল। আমাকে দেখে থামল সে।

ছেলেটা আমার ডিপার্টমেন্টের। ওকে আমি চিনি কারণ, আমাদের মাঝে প্রায়ই অভ্যর্থনা আদান-প্রদান হতো।

“অনেক দিন হয়ে গেল” ছেলেটা ঠান্ডা চোখে বলল। “এতদিন ধরে কোথায় ছিলে? বেশ অনেকদিন ধরে তোমাকে ক্যাম্পাসে দেখছি না।”

আমি মিয়াগির কাঁধে একটা হাত দিয়ে বললাম, “আমি এই মেয়েটার সাথে ঘোরাঘুরি করছি। ওর নাম মিয়াগি।”

“মজা করো না” সে বলল। স্পষ্টতই নারাজ হয়েছে সে। “এমনিতে তুমি উদ্ভট একটা ছেলে।”

“তোমাকে দোষ দিতে পারি না।” আমি উত্তর দিলাম। “আমি নিশ্চিত তোমার জায়গায় আমি থাকলেও একই কথা বলতাম। কিন্তু মিয়াগি এখানেই আছে, ঠিক আছে। আর ও সত্যিই অনেক কিউট। তুমি যদি বিশ্বাস না করো আমি সেটাকে সম্মান করবো। আমি চাই তুমিও আমার ব্যাপারটাকে সম্মান করো।”

“আমি সবসময়ই জানতাম। কিন্তু তুমি, তুমি সত্যি মানসিক বিকারগ্রস্ত, কুসুনোকি। মানুষের সাথে মেলামেশা করার বদলে তুমি সবসময়ই তোমার খোলসের ভিতরে লুকিয়ে থাকতে, তাই না? বাইরের জগতে একটু উঁকি দিয়ে দেখলে কেমন হয়?”

তারপরে ছেলেটা হতাশ এবং স্তব্ধ হয়ে চলে গেল।

আমি বেঞ্চে বসে বৃষ্টি পড়া দেখতে লাগলাম। দ্রুতই সবকিছু পরিষ্কার হতে শুরু করল।

“ধন্যবাদ” আমার দিকে হেলান দিয়ে মিয়াগি বলল।

আমি ওর মসৃণ চুলে আঙুল চালিয়ে বিলি কেটে দিলাম।

আমি বইয়ের দোকানের বৃদ্ধের উপদেশ জোরে উচ্চারণ করলাম। যদিও তিনি বলেছিলেন, উনাকে বিশ্বাস করা উচিত হবে না, এখন কথাগুলোর মানে বুঝতে পেরেছি।

হয়তো ওর ঋণ ফিরিয়ে দেয়া ছিল খুব বেশি অতিরঞ্জিত। ভেবে দেখলাম, মিয়াগিকে খুশি করার জন্য আমি অন্য একটা জিনিস করতে পারি

এটা অনেকটা ওর বলা কথার মতো; “ওর দিকে মনোযোগ দেয়া”। আমার চারপাশের লোকজনের কাছ থেকে ছিটগ্রস্তের মতো আচরণ পাওয়াটা ওকে বিলক্ষণ আনন্দ দিবে।

এটা ঠিক আমার চোখের সামনেই ছিল। তাহলে কেন আমি এতদিন এটা করিনি?

মিয়াগি এমন সময়ে কথা বলে উঠল যেন ও আমার মনের চিন্তা-ভাবনা ধরতে পেরেছে।

“মি. কুসুনোকি? আমি সত্যি সত্যিই খুব খুশি হয়েছি যে, আপনি আপনার বাকি থাকা অল্প আয়ুষ্কাল আমাকে সাহায্য করার জন্য ব্যবহার করার চিন্তা করছেন। কিন্তু এর কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ, আপনি অনেক আগেই আমাকে বাঁচিয়েছেন। এমনকি আপনাকে ছাড়া এক দশক কাটিয়ে ফেললেও আমি বিশ্বাস করি, আপনার সাথে কাটানো সময়গুলোর কথা আমার মনে থাকবে। আমি সেগুলো মনে করে হাসবো, কাঁদবো। আমি বিশ্বাস করি এটুকু স্মৃতি যে কারো বেঁচে থাকা সহজ করে দিবে। আপনি আমার জন্য যথেষ্ট করেছেন। ঋণের ব্যাপারে ভুলে যান।“

“তার বদলে,” মিয়াগি বলল, ওর গায়ের ভর আমার দিকে চাপিয়ে দিয়ে। “তার বদলে আমাকে স্মৃতি দিন। আপনি চলে যাওয়ার পরে যখন আমি একাকী অনুভব করবো, নিজেকে বারেবারে উষ্ণ রাখার জন্য যতগুলো সম্ভব স্মৃতি দিন।”

মিয়াগি এবং আমি বড় পুকুরওয়ালা পার্কের উদ্দেশ্যে বাসে উঠলাম।

ওখানে আমি কী করেছিলাম সেটা যদি কেউ শোনে তাহলে বেশিরভাগই চোখ কপালে তুলবে অথবা হাসতে-হাসতে গড়াগড়ি খাবে।

হৃদে আমি একটা নৌকা ভাড়া নিলাম। যেখানে সাধারণ বৈঠাওয়ালা নৌকা ছিল, আমি হাস্যকর সোয়ান বোট নেওয়ার সাহস দেখালাম।

যেহেতু আমাকে একাই দেখা যাচ্ছিল, ডকের ক্লার্ক আমার দিকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় চাহনী দিল; হয়তো বলতে চাইছে “একা?”

সাধারণত কপোত-কপোতী জোড়া অথবা মেয়েদের যুগল এসবে ওঠে

আমি ঘুরে মিয়াগির দিকে তাকিয়ে হেসে বললাম, “ঠিক আছে, চল তাহলে!”

ক্লার্কের চেহারা কুঁচকে গেল। ব্যাটার চোখে আতঙ্ক দেখা গেল।

পুরোটা সময় নৌকাতে আমাদের দেখতে কেমন লাগছে মনে করে মিয়াগি কিছুতেই হাসি আটকাতে পারল না।

আমরা ধীরে-ধীরে হৃদটা ঘুরতে লাগলাম। পানির শব্দের মধ্যে, মিয়াগি “স্ট্যান্ড বাই মি”-এর শিস দিল। দিনটি ছিল গ্রীষ্মের শান্ত বিকেল।

হৃদের সীমানার চারপাশের মধ্যে ইয়োশিনো চেরি গাছ লাগানো হয়েছে। বসন্তে নিশ্চিতভাবেই হৃদটা চেরির পাপড়ি দিয়ে ভরে যাবে।

অন্যদিকে শীতকালে, হৃদটার বেশিরভাগ অংশ জমে যাবে এবং সোয়ান বোটকে অবসরে যেতে হবে। সত্যিকারের রাজহাঁস তার জায়গা নিবে।

একজন মানুষ হিসাবে চিন্তাটা অনেকটা বিষণ্ণ, যে কিনা আর কখনই বসন্ত কিংবা শীত দেখবে না। কিন্তু আমার পাশে মিয়াগিকে হাসতে দেখে খুব দ্রুতই চিন্তাটা বন্ধ হয়ে গেল।

নৌকার মাঝেই ব্যাপারটা সীমাবদ্ধ রইল না। পরের কয়েকটা দিন আমি একটার-পর-একটা হাস্যকর কাজ-কারবার করতে লাগলাম। সহজ কথায় বলতে গেলে, একা-একা করা যায় না-এমন সবকিছুই করলাম আমি। অবশ্যই, সবকিছু মিয়াগির সাথেই করেছিলাম। কিন্তু সবাই ব্যাপারটা সেভাবে দেখল না।

এক-একা ফেরি হুইলে চড়লাম। একা-একা মেরি-গো রাউন্ডে চড়লাম। একা-একা পিকনিক করলাম। একা-একা অ্যাকুরিয়াম ঘুরতে গেলাম। একা-একা চিড়িয়াখানা ঘুরতে গেলাম। একা-একা পুলে গেলাম, বারে একা-একা টোস্ট করলাম। একা-একা বারবিকিউ করলাম।

একা-একা করলে বিব্রত হওয়া লাগে এমন প্রায় সবকিছুই আমি করলাম। আর যখনই আমি সেগুলো করছিলাম, আমি সবসময়ই সানন্দে মিয়াগির নাম উচ্চারণ করেছিলাম। ওর সাথে হাতে হাত ধরে হাঁটাহাঁটি করা, চোখে চোখ রাখা, এবং ওর অস্তিত্বকে সাধারণভাবে নেওয়ার চেষ্টা করলাম।

টাকা-পয়সা শেষ হয়ে এলে, আমি কয়েকদিন পার্ট-টাইম জব করতাম। তার পরে আবারো মাস্তি করা শুরু করতাম।

সেসময়ে খেয়াল করিনি যে আমি ধীরে-ধীরে ছোট শহরটার কুখ্যাত সেলিব্রেটিতে পরিণত হচ্ছিলাম।

স্বাভাবিকভাবেই কেউ-কেউ আমাকে টিটকারি দিলো, কেউ-কেউ স্পষ্টভাবেই এড়িয়ে চলল, তাদের ভ্রূ কুঁচকাতো; কিন্তু অন্যদিকে, কেউ-কেউ ভাবতো আমি মূক অভিনয়ের প্রতিভা দেখানোর চেষ্টা করছি অথবা আমার কাজ কারবারকে মননশীল কোনো ব্যায়াম বলে বিবেচনা করত।

না, শুধু তাই নয়; সম্ভবত কিছু-কিছু মানুষের হৃদয়ে প্রশান্তি এনে দেয় আমাকে দেখলে। আমি আসলেই মানুষকে খুশি করতাম।

আশ্চর্যজনকভাবে, যারা আমাকে খারাপ বলে জানতো এবং যারা ভালো বলে জানতো; তাদের দু’দলের অনুপাত সমান ছিল।

কেন অর্ধেক লোক আমার আহাম্মকি কাজ-কারবার দেখে ভালো অনুভব করতো? কারণটা ছিল হয়তো বিস্ময়করভাবে খুবই সাধারণ।

কারণ, আমাকে দেখে মনে হচ্ছিল, আমি আমার জীবনের সেরা সময় কাটাচ্ছি।

সম্ভবত সেটাই ঘটেছে।

********

একদিন সকালে মিয়াগি আমাকে জিজ্ঞেস করল, “মি. কুসুনোকি, আপনি কি চান আমি আপনার জন্য কিছু একটা করি?”

“হঠাৎ করে কী হলো আবার?”

“আমার কাছে মনে হচ্ছে আপনি আমাকে সবকিছুই দিচ্ছেন। আমিও অল্প হলেও আপনাকে কিছু দিতে চাই।”

“এরকম কিছু এই মুহূর্তে আমার মনে আসছে না। বিষয়টা আমার মাথায় থাকবে” আমি বললাম “মিয়াগি, তুমি চাও এমন কিছু কি আছে যা আমি তোমার জন্য করতে পারি?”

“এরকম কিছু নেই। আমার ইচ্ছা হলো আপনার ইচ্ছে সম্পর্কে জানা।”

“তাহলে আমার ইচ্ছে হলো তোমার ইচ্ছে সম্পর্কে জানা।”

“আপনার ইচ্ছে জানাটাই আমার একমাত্র ইচ্ছে, মি. কুসুনোকি”

উদ্দেশ্যহীনভাবে চার-পাঁচবার এভাবে পুনরাবৃত্তি করার পরে, মিয়াগি হার মানল।

‘কয়েকদিন আগে, আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন আমার যদি বেঁচে থাকার কয়েক মাস থাকতো তাহলে আমি কি করতাম। আমি আপনাকে তিনটা উত্তর দিয়েছিলাম, তাই না?”

“তারা খচিত হৃদ, তোমার কবর, ছোটবেলার বন্ধু।”

“হ্যাঁ।”

“তুমি তোমার ছোটবেলার বন্ধুর সাথে দেখা করতে চাও তাহলে?”

মিয়াগি ক্ষমা প্রার্থনার মতো করে মাথা নাড়ল। “চিন্তা করে দেখলাম, আমি কবে মারা যাবো জানি না। সেহেতু, আমি ভেবেছি যত দ্রুত সম্ভব ওর সাথে দেখা করতে চাই। আমি এখনো জানি ও কোথায় থাকে। যদিও আমাদের দেখা হবে না। আমি শুধু ওকে দেখবো। আপনি কি আমার সাথে যাবেন?”

“হ্যাঁ, অবশ্যই।”

“দয়া করে আপনার ইচ্ছের কথা আমাকে দ্রুত বলবেন, মি. কুসুনোকি।”

“একবার মনে আসলেই বলবো।“

ওর গন্তব্যস্থলে যাওয়ার জন্য যে যানবাহনের প্রয়োজন আমরা দ্রুত সেটা সম্পর্কে খোঁজ -বর নিলাম। এবং মিয়াগির হোমটাউনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম।

পাহাড়ি রাস্তা ধরে বাস যাওয়ার সময়, ও স্মৃতিকাতর হয়ে জানালা দিয়ে তাকিয়ে রইল।

“আমি জানি আমি হতাশ হবো। আমার ইচ্ছেটা খুবই অবাস্তব, স্বার্থপর এবং শিশুতোষ। ‘আমি কিছুই পরিবর্তন করতে চাই না’ ইচ্ছেটার কথা হতে পারে কেউ কখনো শোনেনি। কিন্তু আমার স্মৃতিও প্রতারণা করতে পারে। আমার মনে হচ্ছে আমি এখন সব সইতে পারবো। কারণ, আপনি পাশে আছেন, মি. কুসুনোকি।”

“কারণ, যন্ত্রণা সঙ্গী ভালোবাসে।”

“আমি এটা বুঝাইনি, আপনি কি গাধা নাকি?”

“আমি জানি। আমার ভুল হয়েছে” বললাম আমি। তারপরে মিয়াগির মাথার বিলি কেটে বললাম, “ঠিক এভাবে?”

“হ্যাঁ, এভাবে।’ মিয়াগি মাথা নাড়ল।

শহরটা খুবই ছোট। শপিং ডিস্ট্রিকের সবগুলো দোকান ছিল যন্ত্রপাতির। ছোট চেইন সুপারমার্কেটের রেজিস্টারে বিশাল লম্বা লাইন। কোথাও না যেতে পেরে স্টুডেন্টরা কমিউনিটি সেন্টারে জড় হয়েছে; এরকম একটা শহর।

অস্বাভাবিকভাবে, সেদিন মিয়াগি আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। ওর ছোটবেলার বন্ধু যে শহরে বাস করে সেটা ও চিনতো। কিন্তু কোন বাসায় বাস করে সেটা জানতো না।

আমি এমন জায়গা খুঁজতে লাগলাম সেখানে ছেলেটা থাকতে পারে। মিয়াগি বলল, মনে হয় ওর নাম ছিল এনিশি।

আমরা যখন এনিশিকে খুঁজে পেলাম, মিয়াগি ঠিক তখনই ওর কাছে গেল না। প্রথমে, ও আমার পিছেন লুকালো। ভয়ে ভয়ে ওর মাথা বের করল, এবং আস্তে আস্তে ওর সামনে এগিয়ে গেল।

সেটা এতই ক্ষুদ্র একটা স্টেশন ছিল যেখানে একসাথে দশজন থাকলে বন্ধী বন্ধী লাগে। এনিশি কোণের একটা বেঞ্চে বসে বই পড়ছিল।

তার চেহারা এবং অঙ্গ-ভঙ্গিতে সুখী-সুখী ভাব ছিল। বিশেষ করে তার অভিব্যক্তির কথা বলতেই হয়।

একটা আয়েশি অভিব্যক্তি। অনেকটা আত্মবিশ্বাসকে চাপা দেওয়ার কৌশল। এরকম অভিব্যক্তি তৈরি করতে কি প্রয়োজন সেটা সম্প্রতি আমি বুঝতে শিখেছি।

সংক্ষেপে, এই অভিব্যক্তি তৈরি করা তাদের দ্বারাই সম্ভব যারা কাউকে ভালোবাসার এবং ভালোবাসা পাবার আস্থা অর্জন করতে পারে।

এনিশিকে দেখে আমি বলে দিতে পারি সে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছে না, বরং কোনো একজনের আসার জন্য অপেক্ষা করছে।

আমি বুঝতে পারলাম মিয়াগি সেই “কেউ একজন”কে দেখতে চায় না। আমি সময় দেখলাম। তারপরে ফিসফিস করে বললাম, “আমার মনে হয় আমাদের চলে যাওয়াই ভালো।” মিয়াগি মাথা নাড়ল।

“ধন্যবাদ, আমি দেখতে চাই ও কোন ধরনের মেয়েকে ভালোবাসে।”

একটা সাবওয়ে ট্রেন এসে থামল। ট্রেনে থেকে নামা বেশিরভাগ প্যাসেঞ্জারই স্টুডেন্ট। এদের মধ্যে একজন বিশ বছর বয়সি মেয়েকে দেখা গেল।

এমনকি ওরা নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ হাসি ছুড়ে দেওয়ার আগেই আমি এখান থেকেই বলে দিতে পারি যে এনিশি মেয়েটার জন্যই অপেক্ষা করছিল।

মেয়েটার হাসি সহজাত। এতটাই সহজাত যে এটাকে হাসিও বলা যায় না। যতই সহজাত হোক না কেন, বেশিরভাগ মানুষের হাসি অন্ততপক্ষে কিছুটা হলেও জোর করে হয়। কিন্তু ওর হাসিতে এরকম কোনো আভাস দেখা গেল না। হয়তো সবসময়ই হাসার ফল এটা।

যেহেতু কোনো প্রকার কথাবার্তা ছাড়া ওরা স্বাভাবিকভাবে কাছে এলো, মনে হচ্ছে ওরা বেশ অনেকদিন ধরেই ডেটিং করছে। ওদের চেহারায় তাৎক্ষণিক যে খুশির ঝিলিক দেখলাম, মনে হচ্ছিল ওদের প্রথমবার দেখা হয়েছে।

খুশির ঝিলিকটা মাত্র কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। তারা যে সুখী সেটা জানার জন্য ওইটুকুই যথেষ্ট।

মিয়াগিকে ছাড়া এনিশি সুখেই আছে।

মিয়াগি ওদের দিকে আবেগশূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

হয়তোবা একমাত্র আমিই এখানে বেশি বিরক্ত হচ্ছি। এনিশি এবং ওর গার্লফ্রেন্ডের মধ্যে আমি নিজেকে এবং হিমেনোকে দেখতে পাচ্ছি। যদিও খুবই অল্প সময়ের জন্য হলেও, আমি এমন একটা সুখী ভবিষ্যতের ছবি কল্পনা করলাম।

এনিশি এবং ওর গার্লফ্রেন্ড চলে গেল। ভিতরে শুধু মিয়াগি এবং আমি রয়ে গেলাম।

“ও আমাকে দেখবে না জেনেও, আমি বেশ কিছু জিনিস করার চিন্তা করেছিলাম।” মিয়াগি বলল। “কিন্তু আমি মত পাল্টেছি।”

“যেমন?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।

“যেমন ওকে জোর করে জড়িয়ে ধরা। এরকম কিছু একটা।”

এরকম কিছু, অ্যা। আমি যদি সে জায়গায় থাকতাম তাহলে আরও বেশি কিছু করতাম।”

“যেমন?”

মিয়াগি শব্দ দুটো শেষ করার আগেই, আমার হাত দুটো ওর হিপ জড়িয়ে ধরে ওকে ‘আরও বেশি’র নমুনা দেখিয়ে দিলাম।

আমরা ওভাবে মিনিট দুইয়ের মতো ছিলাম।

যদিও প্রথমদিকে মিয়াগি অসাড় হয়ে গিয়েছিল। আস্তে-আস্তে ও স্থির হয়ে গিয়ে আমার সাথে সাড়া দিতে লাগল।

আমাদের ঠোঁট আলাদা হলে আমি ওকে বললাম, “যদি কেউ আমাকে দোষ দিতে না চায়, তাহলে নিশ্চিতভাবেই আমি এরকম স্বার্থপর কাজ করবোই।

“অবশ্যই, কেউ আপনাকে দোষ দিবে না” মিয়াগি অবশেষে বলল, ওর মাথা তখনো নিচু।

সকল অধ্যায়

১. চ্যাপ্টার ১ : অ্যা প্রমিজ ফর টেন ইয়ার’স টাইম
২. চ্যাপ্টার ২: দ্য বিগিনিং অভ দ্য এন্ড
৩. চ্যাপ্টার ৩ : দ্য অবজার্ভার উইথ হার নি’স আপ
৪. চ্যাপ্টার ৪ : লেট’স কম্পেয়ার আন্সার’স
৫. চ্যাপ্টার ৫: এভ্রিথিং টু কাম
৬. চ্যাপ্টার ৬ : ওয়ান হু চেঞ্জড, ওয়ান হু নেভার ডিড
৭. চ্যাপ্টার ৭ : টাইম ক্যাপসুল রাইডিং
৮. চ্যাপ্টার ৮: ইনঅ্যাপ্রোপিয়েট অ্যাক্ট
৯. চ্যাপ্টার ৯ : ঠু গুড টু বি ট্র
১০. চ্যাপ্টার ১০ : টু মাই ওয়ান অ্যান্ড ওয়ানলি চাইল্ডহুড ফ্রেন্ড
১১. চ্যাপ্টার ১১ : পুশিং ফর অ্যা ভেন্ডিং মেশিন ট্যুর
১২. চ্যাপ্টার ১২ : অ্যা লায়ার অ্যান্ড অ্যা লিটল প্রেয়ার
১৩. চ্যাপ্টার ১৩ : অ্যা ভেরি রিয়েল ওয়ে
১৪. চ্যাপ্টার ১৪ : দ্য ব্লু পিরিয়ড
১৫. চ্যাপ্টার ১৫ : দ্য গিফট অভ দ্য ম্যাজাই

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন