সন্ধ্যা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

অয়ি সন্ধ্যে ,       অনন্ত আকাশতলে বসি একাকিনী ,                      কেশ এলাইয়া      মৃদু মৃদু ও কী কথা    কহিস আপন মনে                    গান গেয়ে গেয়ে ,                   নিখিলের মুখপানে চেয়ে ।     প্রতিদিন শুনিয়াছি , আজও তোর কথা                 নারিনু বুঝিতে ।     প্রতিদিন শুনিয়াছি ,   আজও তোর গান                নারিনু শিখিতে ।               চোখে লাগে ঘুমঘোর ,              প্রাণ শুধু ভাবে হয় ভোর ।     হৃদয়ের অতিদূর দূর দূরান্তরে     মিলাইয়া কণ্ঠস্বর তোর কন্ঠস্বরে             উদাসী প্রবাসী যেন     তোর সাথে তোরি গান করে ।      অয়ি সন্ধ্যা , তোরি যেন স্বদেশের প্রতিবেশী        তোরি যেন আপনার ভাই   প্রাণের প্রবাসে মোর দিশা হারাইয়া              বেড়ায় সদাই ।       শোনে যেন স্বদেশের গান ,       দূর হতে কার পায় সাড়া              খুলে দেয় প্রাণ ।        যেন কী পুরোনো স্মৃতি       জাগিয়া উঠে রে ওই গানে ।     ওই তারকার মাঝে   যেন তার গৃহ ছিল ,           হাসিত কাঁদিত ওইখানে ।           আরবার ফিরে যেতে চায়           পথ তবু খুঁজিয়া না পায় ।     কত - না পুরানো কথা , কত - না হারানো গান ,            কত না প্রাণের দীর্ঘশ্বাস ,    শরমের আধো হাসি ,       সোহাগের আধো বাণী ,           প্রণয়ের আধো মৃদু ভাষ ,           সন্ধ্যা , তোর ওই অন্ধকারে           হারাইয়া গেছে একেবারে ।           পূর্ণ করি অন্ধকার তোর           তারা সবে ভাসিয়া বেড়ায়            যুগান্তের প্রশান্ত হৃদয়ে           ভাঙাচোরা জগতের প্রায় ।     যবে এই নদীতীরে         বসি তোর পদতলে           তারা সবে দলে দলে আসে           প্রাণেরে ঘেরিয়া চারি পাশে ;     হয়তো একটি হাসি        একটি আধেক হাসি           সমুখেতে ভাসিয়া বেড়ায় ,           কভু ফোটে কভু বা মিলায় ।      আজি আসিয়াছি সন্ধ্যা , বসি তোর অন্ধকারে              মুদিয়া নয়ন     সাধ গেছে গাহিবারে -- মৃদু   স্বরে শুনাবারে              দু - চারিটি গান ।     যেথায় পুরোনো গান       যেথায় হারানো হাসি              যেথা আছে বিস্মৃত স্বপন     সেইখানে সযতনে         রেখে দিস গানগুলি ,              রচে দিস সমাধিশয়ন ।              জানি সন্ধ্যা , জানি তোর স্নেহ ,              গোপনে ঢাকিবি তার দেহ     বসিয়া সমাধি - ' পরে       নিষ্ঠুরকৌতুকভরে              দেখিস হাসে না যেন কেহ ।              ধীরে শুধু ঝরিবে শিশির ,               মৃদু শ্বাস ফেলিবে সমীর ।              স্তব্ধতা কপোলে হাত দিয়ে                একা সেথা রহিবে বসিয়া ,                মাঝে মাঝে দু - একটি তারা                সেথা আসি পড়িবে খসিয়া ।
অধ্যায় ১ / ২৪

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন