খেলাধুলো সব রহিল পড়িয়া,
    ছুটে চ ‘ লে আসে মেয়ে—
    বলে তাড়াতাড়ি, ‘ওমা, দেখ্‌ দেখ্‌,
    কী এনেছি দেখ্‌ চেয়ে। ‘
    আঁখির পাতায় হাসি চমকায়,
    ঠোঁটে নেচে ওঠে হাসি—
    হয়ে যায় ভুল, বাঁধে নাকো চুল,
    খুলে পড়ে কেশরাশি।
    দুটি হাত তার ঘিরিয়া ঘিরিয়া
    রাঙা চুড়ি কয়গাছি,
    করতালি পেয়ে বেজে ওঠে তারা;
    কেঁপে ওঠে তারা নাচি।
    মায়ের গলায় বাহু দুটি বেঁধে
    কোলে এসে বসে মেয়ে।
    বলে তাড়াতাড়ি, ‘ওমা, দেখ্‌ দেখ্‌,
    কী এনেছি দেখ্‌ চেয়ে। ‘

    সোনালি রঙের পাখির পালক
    ধোওয়া সে সোনার স্রোতে—
    খসে এল যেন তরুণ আলোক
    অরুণের পাখা হতে।
    নয়ন-ঢুলানো কোমল পরশ
    ঘুমের পরশ যথা—
    মাখা যেন তায় মেঘের কাহিনী,
    নীল আকাশের কথা।
    ছোটোখাটো নীড়, শাবকের ভিড়,
    কতমত কলরব,
    প্রভাতের সুখ, উড়িবার আশা—
    মনে পড়ে যেন সব।
    লয়ে সে পালক কপোলে বুলায়,
    আঁখিতে বুলায় মেয়ে,
    বলে হেসে হেসে, ‘ওমা, দেখ্‌ দেখ্‌,
    কী এনেছি দেখ্‌ চেয়ে। ‘

    মা দেখিল চেয়ে, কহিল হাসিয়ে,
    ‘কিবা জিনিসের ছিরি!’
    ভূমিতে ফেলিয়া গেল সে চলিয়া,
    আর না চাহিল ফিরি।
    মেয়েটির মুখে কথা না ফুটিল,
    মাটিতে রহিল বসি।
    শূন্য হতে যেন পাখির পালক
    ভূতলে পড়িল খসি।
    খেলাধুলো তার হল নাকো আর,
    হাসি মিলাইল মুখে,
    ধীরে ধীরে শেষে দুটি ফোঁটা জল
    দেখা দিল দুটি চোখে।
    পালকটি লয়ে রাখিল লুকায়ে
    গোপনের ধন তার—
    আপনি খেলিত, আপনি তুলিত,
    দেখাত না কারে আর।

    টীকা