পত্রলেখা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দ্বারাদিলে তুমি সোনা‐মোড়া ফাউণ্টেন পেন, কতমতো লেখার আসবাব। ছোটো ডেস্কোখানি। আখরোট কাঠ দিয়ে গড়া। ছাপ‐মারা চিঠির কাগজ নানা বহরের। রুপোর কাগজ‐কাটা এনামেল‐করা। কাঁচি, ছুরি, গালা, লাল ফিতে। কাঁচের কাগজ‐চাপা, লাল নীল সবুজ পেন্সিল। বলে গিয়েছিলে তুমি, চিঠি লেখা চাই একদিন পরে পরে।
লিখতে বসেছি চিঠি, সকালেই স্নান হয়ে গেছে।লিখি যে কী কথা নিয়ে কিছুতেই ভেবে পাই নে তো। একটি খবর আছে শুধু— তুমি চলে গেছ। সে খবর তোমারও তো জানা। তবু মনে হয়, ভালো করে তুমি সে জান না। তাই ভাবি, এ কথাটি জানাই তোমাকে— তুমি চলে গেছ। যতবার লেখা শুরু করি ততবার ধরা পড়ে, এ খবর সহজ তো নয়। আমি নই কবি— ভাষার ভিতরে আমি কণ্ঠস্বর পারি নে তো দিতে, না থাকে চোখের চাওয়া। যত লিখি তত ছিঁড়ে ফেলি।
দশটা তো বেজে গেল। তোমার ভাইপো বকু যাবে ইস্কুলে, যাই তারে খাইয়ে আসিগে। শেষবার এই লিখে যাই— তুমি চলে গেছ। বাকি আর যতকিছু হিজিবিজি আঁকাজোকা ব্লটিঙের ’পরে।
১৪ আষাঢ় ১৩৩৯