বাজিরাও পেশোয়ার অভিষেক হবে                       কাল সকালে।     কীর্তনী এসেছে  গ্রামের থেকে,           মন্দিরে ছিল না তার স্থান।    সে বসেছে অঙ্গনের এক কোণে           পিপুল গাছের তলায়।একতারা বাজায় আর কেবল সে ফিরে ফিরে বলে,    “ঠাকুর, তোমায় কে বসালো           কঠিন সোনার সিংহাসনে।’    রাত তখন দুই প্রহর,           শুক্লপক্ষের চাঁদ গেছে অস্তে।        দূরে রাজবাড়ির তোরণে           বাজছে শাঁখ শিঙে জগঝম্প,               জ্বলছে প্রদীপের মালা। কীর্তনী গাইছে,        “তমালকুঞ্জে বনের পথে           শ্যামল ঘাসের কান্না এলেম শুনে,    ধুলোয় তারা ছিল যে কান পেতে,           পায়ের চিহ্ন বুকে পড়বে আঁকা                       এই ছিল প্রত্যাশা।’     আরতি হয়ে গেছে সারা–           মন্দিরের দ্বার তখন বন্ধ,        ভিড়ের লোক গেছে রাজবাড়িতে।               কীর্তনী আপন মনে গাইছে–           “প্রাণের ঠাকুর,এরা কি পাথর গেঁথে তোমায় রাখবে বেঁধে।        তুমি যে স্বর্গ ছেড়ে নামলে ধুলোয়           তোমার পরশ আমার পরশ               মিলবে ব’লে।’         সেই পিপুল-তলার অন্ধকারেএকা একা গাইছিল কীর্তনী,        আর শুনছিল আরেকজনা গোপনে–           বাজিরাও পেশোয়া।শুনুছিল সে–“তুমি আমায় ডাক দিয়েছ আগল-দেওয়া ঘরের থেকে,    আমায় নিয়ে পথের পথিক হবে।        ঘুচবে তোমার নির্বাসনের ব্যথা,           ছাড়া পাবে হৃদয়-মাঝে।    থাক্‌ গে ওরা পাথরখানা নিয়ে           পাথরের বন্দীশালায়        অহংকারের-কাঁটার-বেড়া-ঘেরা।’ রাত্রি প্রভাত হল।শুকতারা অরুণ-আলোয় উদাসী।    তোরণদ্বারে বাজল বাঁশি বিভাসে ললিতে।           অভিষেকের স্নান হবে,    পুরোহিত এল তীর্থবারি নিয়ে।     রাজবাড়ির ঠাকুরঘর শূন্য।        জ্বলছে দীপশিখা,    পূজার উপচার পড়ে আছে–        বাজিরাও পেশোয়া গেছে চলে           পথের পথিক হয়ে।

    টীকা