বেদূইন
    ধবল কঙ্কাল যেথা দিকে দিকে রয়েছে ছড়ায়ে
    অন্তহীন বালুকা জড়ায়ে,
    দিবানিশি জুলিতেছে লক্ষ চুল্লিশিখা
    পথে পথে দৈন্য যেথা, গ্লানি বিভীষিকা,
    নিঃসহায় প্ৰাণ,
    মরুভূ-ঝটিকা গর্জে দিকে দিকে ক্ষিপ্ত, বহ্নিমান!
    কোটি কোটি বিষতীব্র ভুজঙ্গম ফণার ঘূর্ণনে
    মরীচিকা জাগে ক্ষণে ক্ষণে—
    মোহের মাধুরী মাখা মৃত্যুর পাথার!
    —শ্যামা বসুন্ধরা ত্যজি সেই পথে তুমি কেন যাও বারবার
    ওগো বেদুইন!
    —মোদের নগর পল্লী–আমাদের সুসজ্জিত, শান্ত রাত্রি দিন
    ঝলমল প্রাসাদ বিপণি,
    লীলাকক্ষ, নৃত্যগীত, প্রমোদের ধ্বনি
    বিভ্ৰম, বিলাস,
    মনোহরা এ ধরণী–পুষ্পকুঞ্জ, জ্যোৎস্নানিশি, সুরভিত এই মধুমাস
    এ বিচিত্র গৃহাঙ্গন, এই অন্তঃপুর,
    শান্ত সুমধুর,
    প্ৰেয়সীর হাসি অশ্রু মাখা;
    –যৌবনের এ জয়পতাকা,
    মোদের এ বর্ষ, ঋতু, উষা, বিভাবরী
    তোমারে করে না মুগ্ধ–কোন দূর দিগন্তের দীর্ঘ পথ ধরি,
    ধু ধু ধু ধু বালুকার বিজন সংকটে,
    চক্রবালতাটে
    উঠিতেছ আস্ফালিয়া তুমি!
    —তোমার চরণতলে নাচিতেছে যোজনান্ত তপ্ত মরুভূমি
    উন্মাদ, উত্তাল!
    বালুকার পারাবার, আকাশের আরক্ত মশাল
    বক্ষে তব আসিতেছে ছুটে!
    শ্যেনতীক্ষ্ণ তীব্র রক্ত তোমার ও আঁখির সম্পুটে
    পলে-পলে ঘুরে যায় ধূম্রাকাশ গিরি, বালিয়াড়ি।
    তন্দ্রাহারা যাত্রী ওগো—শ্ৰান্তিহীন মরুপথচারী,
    হারায়েছ দিশা
    অনন্ত নৃত্যের লোভে, অফুরন্ত উল্লাসের তৃষা
    চিত্তে তব নিরন্তর উঠিতেছে দহি,
    হে দূর-বিরহী!
    —মৌন গৃহতলে বসি নিরালা—একাকী,
    শতাব্দীর সভ্যতার পিঞ্জরের পাখি
    আছি মোরা আর্ত স্নান আঁখি দুটি তুলে!
    –সীমাহারা নীলিমার কূলে
    যেতে চাই ছুটে,
    অসংখ্য শৃঙ্খলাঘাতে বিদ্রোহীর বক্ষে শুধু রক্ত ওঠে ফুটে!
    ভাঙে না এ প্রাচীরের কারা,
    জেগে আছে চিরন্তন ব্যর্থ বিধিবিধানের এই মিথ্যা বিরাট পাহারা!
    মনে মোর ঘুরে মরে লক্ষ্যহারা, বাধাবন্ধহীন
    মরুভূর কোন বেদূইন।

    টীকা