২১. বিল সাঁতরে প্রমোদভবনে এসে
নীহাররঞ্জন গুপ্ত দ্বারাপুনর্বার
বিল সাঁতরে প্রমোদভবনে এসে যখন পৌঁছল কিরীটী, রাত তখন প্রায় তিনটে হরে। ক্লান্তিতে
সমস্ত শরীর অবসন্ন।
প্রমোদভবনটা মনে হচ্ছে যেন ঘুমে একেবারে পাথর হয়ে আছে।
বাতাসে ঝাউগাছের সর সর চিকন পাতাগুলো সোঁ সোঁ করুণ একটা শব্দে নিশীথের
স্তব্ধতাকে একঘেয়ে ভাবে বিদীর্ণ করে চলেছে।
আর কোন শব্দ শোনা যায় না।
পূর্বের
পথেই কিরীটী প্রমোদভবনে প্রবেশ করে আঙ্গিনা অতিক্রম করে। ভিতরে গিয়ে প্রবেশ করল।
সিঁড়ি-পথের দেওয়ালে আলোটা টিমটিম করে জ্বলছে। ঘোলাটে আলোয় সমস্ত সিঁড়ির পথটা যেন কেমন
ছমছম করছে।
সিঁড়ির মাঝামাঝি উঠেছে কিরীটী, নিচের বারান্দায় যেন কার পদশব্দ
পাওয়া গেল। সিঁড়ির দিকেই কেউ এগিয়ে আসছে।
মুহূর্তে
যেন কিরীটী সক্রিয় হয়ে ওঠে। নিঃশব্দ অথচ অত্যন্ত ক্ষিপ্রগতিতে বাকী সিঁড়িগুলো
কতকটা লাফ দিয়ে দিয়েই অতিক্রম করে কিরীটী দোতলার বারান্দায় উঠে সোজা একেবারে নিজের
ঘরের দরজাটা
ঠেলে ভিতরে গিয়ে প্রবেশ করল। ঘরের আলোটা তেমনি কমানো, পিট পিট করে জ্বলছে। শয্যার দিকে তাকিয়ে দেখলো
পাশাপাশি দুটি শয্যা তার ও সত্যজিতের, দুটিই শূন্য।
কিন্তু অত ভাববারও সময়
নেই কিরীটীর। চকিতে ফু দিয়ে চিমনির উপর ঘরের একটিমাত্র আলো নির্বাপিত করে দিল সে।
নিমেষে নিচ্ছিদ্র আঁধার যেন সমস্ত কক্ষটি গ্রাস করে নিল। কয়েকটা মুহূর্ত নিঃশব্দ। কেবল
শ্রবণেন্দ্রিয় দুটি সজাগ। উৎকর্ণ।
চোখের দৃষ্টিতে ঘরের নিচ্ছিদ্র অন্ধকার ক্রমে সহ্য হয়ে আসে।
সতর্ক নিঃশব্দ পদবিক্ষেপে অতঃপর কিরীটী এগিয়ে গেল কক্ষের ভেজানো দরজাটার দিকে।
কবাট দুটো ঈষৎ ফাঁক করে বাইরের মৃদু আলোকিত বারান্দায় দৃষ্টিপাত করলে কিরীটী। শুনতে ভুল করেনি। পদশব্দই।
কে যেন সিঁড়ি-পথে উপরেই উঠে আসছে।
পদশব্দ ক্রমেই উপরের দিকে এগিয়ে আসছে। কিন্তু একজোড়া তো নয়, জোড়া
পায়ের শব্দ যে শুনেছে কিরীটী!
আশ্চর্য! এত রাত্রে কারা উপরে আসছে?
আরো আশ্চর্য হলো কিরীটী যখন দেখলো শুনতে তার ভুল হয়নি দুজনই!
সত্যজিৎ ও কল্যাণী। এবং পরস্পর ওরা হাত-ধরাধরি করে পাশাপাশি দাঁড়িয়েছে।
কল্যাণী ও সত্যজিৎ! এত রাত্রে দুজনে নিচে ওরা কোথায় ছিল?
সবিতা দেবী!
সবিতা দেবী কোথায়?
তুমি ঠিক দেখেছ তো কল্যাণী, তুমি যখন বিছানা ছেড়ে উঠে আস সবিতা ঘুমিয়েই ছিল? কল্যাণীর
মুখের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করে সত্যজিৎ।
হ্যাঁ। মৃদু চপল
হাসি কল্যাণীর ওষ্ঠপ্রান্তে,
নাক ডাকাচ্ছিল।
এর মধ্যে যদি সে উঠে থাকে বা ঘুম ভেঙে গিয়ে থাকে?
দিন চারেক তো শুচ্ছি
ওর সঙ্গে। গাঢ় ঘুম—এক ঘুমে রাত কাবার করে। কিন্তু কিরীটীবাবু
এতক্ষণে তিনিও হয়ত নাক ডাকাচ্ছেন। চাপা হাসির সঙ্গে জবাব দেয় সত্যজিৎ।
বারান্দার ওয়াল-ক্লকটা
এমন সময় ঢং ঢং করে বাজতে শুরু করল। রাত্রি চারটে। শেষ হয়ে এলো রাত। উঃ রাত চারটে,
চলি! ত্বরিতপদে কল্যাণী তার ঘরের দিকে চলে গেল।
কিরীটীও আর মুহূর্ত
মাত্র দেরি করে না। সোজা ক্ষিপ্রপদ অন্ধকারেই গিয়ে শয্যার উপরে টান টান হয়ে শুয়ে পড়ল।
চোখ বুজেই পড়ে থাকে অন্ধকারে কিরীটী কান দুটো সজাগ রেখে। একটু পরেই ভেজানো কপাট খুলে
গেল। নিঃশব্দে কক্ষমধ্যে
প্রবেশ করল সত্যজিৎ। ওর পায়ের শব্দেই কিরীটী টের পায়।
কিরীটী যে অবস্থায় ছিল ঠিক সেই অবস্থায়ই শয্যায় শুয়ে পড়েছে। ভাল
করে জলও মোছবার অবকাশ পায়নি, বেশটাও বদলাতে পারেনি।
সত্যজিৎ পকেট হতে টর্চ বের করে বোতাম টিপল। টর্চের আলোয় ঘরের
চারিদিক একেবার দেখে নিল। শায়িত কিরীটীর মুদ্রিত
চোখের পাতায় টর্চের তীব্র আলোর রশ্মিটা মুহূর্তের
জন্য এসে পড়ে, কিরীটী বুঝতে পারে।
কিরীটীকে ঐ অবস্থায় শুয়ে ঘুমোতে দেখে সত্যজিৎ একটু অবাকই হয়।
এগিয়ে গেল সত্যজিৎ টেবিলের উপরে রক্ষিত আলোটা ফিরে আবার জ্বালাবার জন্য। টেবিলের
উপরেই দিয়াশলাইটা ছিল।
দিয়াশলাইয়ের একটা কাঠি জালিয়ে হাত বাড়িয়ে আলো হতে চিমনিটা খুলে
হাতে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উত্তপ্ত কাঁচের চিমনির স্পর্শে উঃ করে একটা যন্ত্রণাকাতর
শব্দের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সত্যজিতের হাত হতে চিমনিটা মেঝেতে পড়ে গিয়ে ঝনঝন শব্দে
ভেঙে গুড়িয়ে যায়।
যেন হঠাৎ চিমনি ভাঙার শব্দেই আচমকা ঘুমটা ভেঙে গিয়েছে, ধড়ফড় করে
বিস্ময়-বিস্ফারিত চোখের দৃষ্টি নিয়ে কিরীটী অন্ধকারেই শয্যার উপরে উঠে বসে প্রশ্ন
করল, কে কি হলো?
অপ্রতিভ সত্যজিৎ তাড়াতাড়ি জবাব
দেয়, আমি। কিরীটীবাবু, আমি। আলো জালতে গিয়ে হাত হতে হঠাৎ চিমনিটা পড়ে ভেঙে গেল।
দাঁড়ান, নড়বেন না। ভাঙা কাঁচের টুকরোতে পা কাটবেন। আমার একটা ছোট
হ্যারিকেন আছে, জালাচ্ছি। কিরীটী শয্যা হতে নেমে ঘরের কোণে রক্ষিত একপাশে তার
সঙ্গে আনা ছোট দামী লণ্ঠনটি তুলে নিয়ে বললে, দিয়াশলাই আছে—দিন তো দিয়াশলাইটা! ছুড়ে
দিন এদিকে।
হাত বাড়িয়ে অন্ধকারেই টেবিলের উপর থেকে দিয়াশলাইটা খুঁজে নিয়ে কিরীটীর দিকে
অন্ধকারে ছুড়ে
দিল সত্যজিৎ, অল্প চেষ্টাতেই কিরীটী আলোটা জালল।
ঘরের অন্ধকার দূরীভূত হল
উজ্জ্বল আলোয়।
বাতিটা ছোট হলেও প্রচুর আলো হয়।
হাতের বাতিটা টেৰিলের উপরে নামিয়ে রেখে এতক্ষণে কিরীটী সপ্রশ্ন
দৃষ্টিতে তাকাল সম্মুখে স্থির দণ্ডায়মান সত্যজিতের দিকে।
বাইরের দেওয়ালে ওয়াল-ক্লকটা
বাজতে শুরু করে—ঢং-ঢং- এক দুই তিন চার পাঁচ
রাত শেষ হয়ে এলো, এই ফিরছেন বুঝি? ফিরতে এত দেরি হলো যে সত্যজিৎবাবু।
কিরীটীর প্রশ্নে বারেকের জন্য মুখ তুলে তাকাল সত্যজিৎ কিরীটীর
দিকে, কিন্তু ওর প্রশ্নের কোন জবাব
দেয় না।
কিরীটী এগিয়ে গিয়ে টেবিলের উপর হতে সিগারকেসটা তুলে নিয়ে তা থেকে
একটা সিগার বের করে সিগারটায় অগ্নিসংযোগ করল।
জলন্ত সিগারটায় গোটাকয়েক টান দিয়ে কিরীটী আবার সত্যজিতের দিকে
তাকাল।
সত্যজিৎ তখনও একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। স্থির নির্বাক।
বসুন
সত্যজিৎবাবু।
আপনার সঙ্গে কয়েকটা আমার কথা আছে।
সত্যজিৎ তথাপি নির্বাক।
বসুন!
এবার সত্যজিৎ চেয়ারটার ওপরে উপবেশন করল।
শুনেন সত্যজিৎবাবু,
সবিতা দেবীর ব্যাপারে এখানে আমি এলেও এখানে আমার আসবার যে যোগাযোগ সেটা আপনার
দ্বারাই হয়েছে। বলতে গেলে আপনিই সেদিন আমাকে এখানে এনেছেন।
সত্যজিৎ কিরীটীর দিকে চোখ তুলে তাকাল।
এখানে আসবার পর এই কদিনের অনুসন্ধানে—কিরীটী মৃদুভাবে বলতে লাগল, যতটকু
আমি জেনেছি বা বুঝেছি, সবিতা দেবীর পিতা মৃতুঞ্জয় চৌধুরীর মৃত্যুর ব্যাপারটা
অতীতের একটা অত্যন্ত জটিল কাহিনীর সঙ্গে জড়িত আছে এটা স্পষ্টই বোঝা গেছে এবং আমার
অনুমান যদি মিথ্যা না হয় তাহলে দুচার দিনের মধ্যেই আর একটা বড় রকমের দুর্ঘটনাও যে ঘটবে সে সম্পর্কে
আমি নিঃসন্দেহ। অবশ্য আমি যাতে এই অবশ্যম্ভাবী দুর্ঘটনাটা না ঘটে সে চেষ্টাই করছি।
কিন্তু এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে আমি বর্তমানে এসে দাঁড়িয়েছি, যে অবস্থায় সবিতা
দেবীকে বাদ দিয়ে আমি আশা করছিলাম। অন্ততঃ আপনার সাহায্য আমি পাবই, এই জটিল রহস্যের
পাক খাওয়া সূত্ৰগুলোর
কিরীটীর কথা শেষ হলো না, সত্যজিৎ কথা বললে, আমি তো সর্বদাই প্রথম
হতে আপনাকে সাহায্য করতে প্রস্তুত মিঃ রায়।
তাই যদি হবে তাহলে গত কদিন হতেই লক্ষ্য করছিলাম আমি, আপনি আমাকে
avoid করেই চলেছেন। এবং শুধু তাই নয়, সব কথাও আপনি আমাকে খুলে বলছেন না!
কে বললে? যা যা এখানে এসে আমি জেনেছি সবই তো খুলে আপনাকে আমি
বলেছি।
না,
বলেননি। কিরীটীর কণ্ঠস্বরটা যেন হঠাৎ কেমন কঠিন মনে হয়।
কি বলছেন আপনি মিঃ রায়?
ঠিকই বলছি। এই কদিনেই আপনি যে কল্যাণী দেবীর সঙ্গে সবিতা দেবীর
অজ্ঞাতেই এতটা ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন, কই এই কথাটা তো
মিঃ রায়!
আমি ঘুমোইনি-জেগেই ছিলাম সত্যজিৎবাবু, এতক্ষণ!
আপনি জেগে ছিলেন?
হ্যাঁ। এবং দুর্ভাগ্যবশতঃ এত রাত্রে সিঁড়িতে পদশব্দ পেয়ে কৌতূহলের
বশেই এগিয়ে গিয়েছিলাম কে এত রাত্রে উপরে আসছে দেখবার জন্য। আপনাকে ও কল্যাণী
দেবীকে একান্ত ঘনিষ্ঠভাবে হাত-ধরাধরি করে উঠে আসতে দেখে একটু বিস্মিতই হয়েছিলাম; কিন্তু সত্যি কথা বলতে
কি সত্যজিৎবাবু,
তার চাইতেও বিস্মিত হয়েছি আমার ভুল ভেঙে যাওয়াতে।
আপনার ভুল ভেঙে যাওয়ায়! কি ভুল?
সবিতা দেবী ও আপনার মধ্যে যে সম্পর্কটা গড়ে উঠেছে বলে আমি অনুমান
করেছিলাম, এখন দেখছি সেটা ভুল!
না,
ভুল নয় কিরীটীবাবু।
ভুল নয়?
বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে কিরীটী সত্যজিতের মুখের দিকে তাকাল।
না। এবং সবিতা সব জানে।
সবিতা দেবী সব জানেন! আপনার ও কল্যাণীর
হ্যাঁ, সে জানে।
কি বলছেন আপনি সত্যজিৎবাবু?
সব জেনেশুনে সবিতা দেবী
হ্যাঁ, কারণ
তার ও আমার সম্পর্কটা পূর্বের
মতই অটুট আছে। কোন প্রকার সন্দেহ বা গোলমাল হবার অবকাশ এখনও ঘটেনি আমাদের পরস্পরের
মধ্যে।
কিরীটীও যেন সত্যিই কিছুক্ষণের জন্য বিমূঢ় হয়ে গিয়েছে। কণ্ঠে তার স্বর ফোটে না। কিছুক্ষণ সে
স্তব্ধ হয়েই বসে থাকে।
সহসা বিদ্যৎ-চমকের মত একটা কথা তার মনের মধ্যে উদয় হওয়ায়
সত্যজিতের দিকে ফিরে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, তাহলে সেরাত্রে আপনিই কি কানাইয়ের মার শোবার
ঘরে যে ঘর হতে সে নিরুদ্দিষ্টা হয়, সেই ঘরে গিয়েছিলেন?
এবারে সত্যজিতের চমকাবার পালা। চমকে সে কিরীটীর মুখের দিকে তাকাল,
আপনি সে কথা জানলেন কি করে মিঃ রায়?
সে কথা পরে হবে, তার আগে আমি জানতে চাই, তাহলে আপনি last person এ
বাড়ির মধ্যে যিনি শেষবারের মত কানাইয়ের মাকে সেরাত্রে এ বাড়ি হতে নিরুদ্দিষ্টা
হবার পূর্বে
দেখেছিলেন—and not I! But at what time! রাত তখন কটা মনে আছে কি আপনার?
কানাইয়ের মার ঘর হতে আসি রাত বোধ করি তখন পৌনে একটা হবে। গোপন না
করে এবারে সত্যজিৎ বলে।
কিরীটী কিছুক্ষণ অতঃপর নিজের মনেই কি যেন চিন্তা করে এবং পরে মৃদুকণ্ঠে বলে, হুঁ! তাহলে রাত একটার পর কোন
এক সময়ে she was removed!
আপনার কি ধারণা মিঃ রায়, তাহলে তাকে কেউ জোর করেই
সত্যজিতের কথা শেষ হয় না, কিরীটীই আবার পাল্টা প্রশ্ন করে, অবশ্যই
এবং তাকে আমার যতদূর
অনুমান কতকটা বাধ্য করা হয়েছিল এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার জন্য। কিন্তু আপনার কি অন্য
রকম কিছু বলে মনে হয় সত্যজিৎবাবু?
কিরীটী সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে
তাকিয়ে থাকে সত্যজিতের মুখের দিকে।
আমার মনে, সত্যজিৎ যেন কেমন ইতস্তত করতে থাকে।
বলুন!
বলুন! কি বলতে চান বলুন
সত্যজিৎবাবু?
বলুন
সে রাত্রে হঠাৎ কেন আপনি নিচের মহলে কানাইয়ের মার ঘরে গিয়েছিলেন? কেন? কি কথা হয়েছিল
আপনাদের মধ্যে?
কিরীটীর কণ্ঠস্বরে যেন একটু
অনুনয়, ব্যগ্রতা ঝরে পড়ে।
আপনার অনুমানই বোধ হয় ঠিক মিঃ রায়। আমি গিয়ে দেখি, কানাইয়ের মা
already যেন যাবার জন্য তৈরি। ছোটমত একটা পুটলিতে খানকয়েক কাপড় ও টুকিটাকি প্রয়োজনীয়
জিনিসপত্র বেধে একপ্রকার প্রস্তুত হয়েই আছে—কিন্তু আপনি সেটা অনুমান করলেন কি করে,
আমি তো কারো কাছেই ও-কথা বলিনি। এমন কি
এমন কি সবিতা দেবীর কাছেও বলেননি! বেশ করেছেন। আমি জানতে পেরেছি
কি করে, আপনি জিজ্ঞাসা করছিলেন না?
আপনার নস্যি নেওয়ার অভ্যাস আছে একমাত্র এ বাড়িতে, তাই না? সে নস্যি কিছু পড়ে আছে আমি ঘরের মেঝেতে
পরের দিন সকালে দেখতে পেয়েছিলাম। তাছাড়াও ঐদিন সকালে ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে যাবার
পর আপনার মুখের দিকে তাকিয়েও স্পষ্টই আমি বুঝলাম you have something under your
sleeve! কিন্তু আপনি গোপন করেছেন এবং সেটা অবশ্য আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়ে ছিল,
কিছুক্ষণ পরেই কানাইয়ের মার ঘরে গিয়ে মেঝেতে নস্যির গুঁড়ো পড়ে থাকতে দেখে। কিন্তু
কেন? কেন আপনি কানাইয়ের মার সঙ্গে অত রাত্রে দেখা করতে গিয়েছিলেন? কিরীটী যেন আবার
তার পূর্বের
প্রশ্নেই ফিরে এলো।
কারণ
আমি তাকে সন্দেহ করেছিলাম। আরো অনেক কিছুই এ ব্যাপারের সে জানে। এ-বাড়ির বহুদিনের পুরাতন দাসী
সে—আমার ধারণা হয়েছিল। নিশ্চয়ই সে মৃত্যুঞ্জয়বাবুর
জীবনের এমন কোন রহস্যময় গোপন ব্যাপার জানে—
ঠিক তাই। সে জানত—আপনার ধারণা নির্ভুল। মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর
জীবনের কোন জটিল গোপনীয় ঘটনা সে জানত এবং সেই কারণেই তাকে অন্যত্র চলে যেতে হয়েছে।
তবে কি নায়েব বসন্ত সেনই? উৎকণ্ঠিত ভাবে প্রশ্ন করে সত্যজিৎ।
না,
বসন্ত সেন হত্যাকারী নন। তবে
তবে?
মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর হত্যাকারীকে হয় তিনি জানেন, না হয় হত্যার কারণ তিনি জানেন।
বলেন কি! তা সত্ত্বেও তিনি সব কথা এভাবে গোপন করেছেন?
হ্যাঁ করেছেন। তারও কারণ
হয়ত, আর কোন উপায় ছিল না।
তাই যদি হবে তাহলে এভাবে ধরা না দিয়ে নায়েব বসন্ত সেন mysteriously
গা-ঢাকা দিলেন কেন?
ঐ একই কারণেই হয়ত, কিরীটী আবার বলে।
কিন্তু এতে করে কি লাভ হল?
তাঁর লাভ হোক আর নাই হোক, অন্ততঃ আমার লাভ হয়েছে। গা-ঢাকা দিয়ে
তাঁর একান্ত অনিচ্ছায় ও অজ্ঞাতেই তিনি আমাকে এই হত্যা-রহস্যের তদন্তের ব্যাপারে
কিছু সময় দিয়েছেন যেটার প্রয়োজন আমার একান্ত ভাবেই হয়েছিল। কিন্তু আর একটা কথা
সত্যজিৎবাবু
বলুন?
আপনার ও কল্যাণী দেবী সম্পর্কে
আজ নয়। আর একটা দিন আপনার কাছে সময় চাই মিঃ রায়। কাল আগামী কাল সব
কথা কল্যাণী সম্পর্কে আপনাকে খুলে বলব।
হয়ত তার আর কোন প্রয়োজন হবে না। মৃদুকণ্ঠে কিরীটী প্রত্যুত্তর দেয়। কিরীটী চেয়ার
হতে উঠে এগিয়ে গিয়ে বিলের দিককার জানলার কবাট দুটো আরো ভাল করে খুলে দেয়।
রাতের আকাশ অত্যাসন্ন প্রভাতের প্রথম আলোর স্পর্শে ক্রমে ক্রমে
লালচে হয়ে উঠছে।
ভোর হয়ে এলো।
মৃদুমন্দ
রাত্রি-শেষের স্নিগ্ধ বায়ু
কিরীটীর জাগরণ-ক্লান্ত
চোখে একটা ঝাপটা দিয়ে গেল।
সত্যজিৎ এগিয়ে গিয়ে কাঁচের ভাঙা টুকরোগুলো এক এক করে মেঝের উপর
থেকে কুড়িয়ে একটা কাগজের উপরে তুলতে লাগল।
দিগন্তপ্রসারী বৌরাণী বিলের বুকের উপর হতে রাত্রিশেষের ঘোলাটে
পর্দাটা একটু একটু
করে কে যেন টেনে তুলে নিচ্ছে।
অদূরে
নন্দনকাননে গাছপালাগুলোও ক্রমে দৃষ্টির
সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
ভাঙা কাঁচের টুকরোগুলো কাগজের মধ্যে জড়ো করে সত্যজিৎ ঘরের বাইরে
চলে গেল।
থানায় গিয়ে একবার দারোগা লক্ষ্মীকান্ত
সাহার সঙ্গে দেখা করা প্রয়োজন।
কিরীটী আশা করেছিল, গত সন্ধ্যায়ই লক্ষ্মীকান্ত বসন্ত সেনের ব্যাপারে হয়ত
প্রমোদভবনে আসবে, কিন্তু আসেনি।
কিরীটী একটু
যেন আশ্চর্যই হয়েছে লক্ষ্মীকান্ত
আসেনি দেখে।
সন্তোষ চৌধুরীকে থানায় নিয়ে যাবার পর কি এমন সে লক্ষ্মীকান্তকে বলেছে যাতে করে সেই
রাত্রেই লক্ষ্মীকান্তকে
বসন্ত সেনের সঙ্গে দেখা করতে আসতে হয়েছিল?
অবশ্য লক্ষ্মীকান্ত
গতকাল সকালে বলেছিল সে থানায় গেলে নাকি অনেক interesting ব্যাপার জানতে পারত।
লক্ষ্মীকান্তর
কথায় কিরীটী বিশেষ আগ্রহ দেখায়নি এই কারণেই যে সে অনুমান করেছিল নিশ্চয়ই সে সব সন্তোষের কাছে শোনা কোন ঘটনা
বা তার কাছে প্রাপ্ত চিঠিপত্রের মধ্যে কোন সংবাদ পেয়েছে, যাতে করে লক্ষ্মীকান্ত উত্তেজিত হয়ে এখানে ছুটে
এসেছিল।
লক্ষ্মীকান্তর
সঙ্গে এখন একবার দেখা করা প্রয়োজন।
প্রথম ভোরের আলো খোলা জানলাপথে কক্ষমধ্যে এসে প্রবেশ করল।
হঠাৎ কিরীটীর খেয়াল হয়, ভাঙা কাঁচের টুকরোগুলো ফেলবার অছিলায় সেই
যে কিছুক্ষণ পূর্বে
সত্যজিৎ এ ঘর হতে বের হয়ে গেল আর ফিরে আসেনি।
সহসা একটা কথা কিরীটীর মনে পড়ে যায়, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর ড্রয়ারের
মধ্যে প্রাপ্ত দেবনাগরী অক্ষরে লেখা চিঠির বাণ্ডিলটা।
চিঠিগুলো সব পড়া হয়নি।
ঘরের দরজায়
খিল তুলে দিয়ে কিরীটী চিঠির ফিতে বাঁধা বাণ্ডিলটা সুটকেসের ভিতর হতে টেনে বের করল।
চেয়ারে বসে চিঠির বাণ্ডিলটা খুলল কিরীটী।
বহুদিন
আগেকার লেখা। কাগজগুলো লালচে হয়ে গিয়েছে। কালিও যেন অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
প্রত্যেকটি চিঠির শুরুতে সম্বোধন করেছে বাবুজী বলে এবং চিঠির শেষে নাম দস্তখত করেছে কোন
এক লক্ষণ।
আটখানা চিঠি। হাতের বাঁকা লেখা ও নাম দেখে বুঝতে কষ্ট হয় না
প্রত্যেকটি চিঠির লেখক একই ব্যক্তি এবং চিঠিগুলো দুএক মাস তো বটেই, কোন কোন চিঠি
আবার ছ মাস বা এক বৎসরের ব্যবধানে লেখা হয়েছে।
একটা চিঠিতে লেখা–
সে মরেছে। আমিও মরবো। কিন্তু মরতে পারছি না কেবল একজনের মুখ চেয়ে।
ওর যাহোক একটা ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত মরতে পারছি না। তাছাড়া চেৎ সিং, সেও তোমাকে
নিষ্কৃতি দেবে না।
কে এই চেৎ সিং! আর একখানা চিঠিঃ
চেৎ সিং তোমাকে একদিন খুঁজে পাবেই, কারণ আমার স্থির ধারণা চেৎ সিং তোমারই খোঁজে
মুলক ছেড়েছে। চেৎ সিংয়ের বুকের পাঁজরা তুমি ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছ। হায়, কেন সেদিন তোমায় বিশ্বাস করেছিলাম! লোভের উপযুক্ত শাস্তিই আমার
মিলেছে।
আরো পরের একখানা চিঠি এবং সর্বশেষ চিঠিই বোধ হয়–
এইবার আমি নিশ্চিন্ত। চেৎ সিং আমায় জানিয়েছে সে তোমার সংবাদ পেয়েছে,
কিন্তু এই দুঃখ আমার থেকে গেল—তোমার সংবাদটা শোনা পর্যন্ত আর হয়ত আমার বাঁচা হবে
না।
বন্ধ দরজায়
মৃদু
করাঘাত শোনা গেল, মিঃ রায়!
কিরীটী চমকে ওঠে, কে?
দরজাটা
খুলন মিঃ রায়। আপনার চা এনেছি। কল্যাণীর গলা।
ক্ষিপ্রহস্তে চিঠিগুলো কোনমতে গুছিয়ে কিরীটী বাণ্ডিলটা সুটকেসের
মধ্যে ভরে ফেলে।
দরজাটা
খুলতেই দেখা গেল ধুমায়িত চায়ের কাপ হাতে প্রসন্ন হাস্যমুখে দোরগোড়াতেই দাঁড়িয়ে
কল্যাণী।
ঘুমোচ্ছিলেন নাকি এখনো?
প্রশ্ন করে কল্যাণী চায়ের কাপ হাতে ঘরে প্রবেশ করতে করতে।
না।
আসুন, সুপ্রভাত!
চায়ের কাপটা টেবিলের ওপরে নামিয়ে রেখে চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসতে
বসতে কল্যাণী বলে, কাল রাত্রে আমাদের ঘরে কেউ বোধ হয় এসেছিল মিঃ রায়!
চায়ের কাপটা হাতে তুলে নিয়ে কিরীটী সবেমাত্র চুমুক দিয়েছিল, কল্যাণীর কথায়
চকিতে ওর মুখের দিকে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে
তাকাল।
অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই এবং বোধ হয় বিশ্বাস করতে চাইছেন না আমার কথা?
দুটোর একটাও নয় কল্যাণী দেবী। কিন্তু কিসে বুঝলেন আপনি?
কল্যাণী বোধ হয় লক্ষ্য করলে না যে কিরীটী তাকে তুমির বদলে আবার
আপনি বলে কথা বলছে।
ঘুম ভেঙেছে প্রথমে আমারই উঠেই
দেখি ঘরে কতগুলো জুতোর অস্পষ্ট ছাপ।
ঘুম ভেঙেছে! কতটুকু সময় তাহলে ঘুমিয়েছিলেন?
মানে?
সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে
তাকাল কল্যাণী কিরীটীর প্রশ্নভরা দুই চোখের দিকে।
আমার চাইতে সে কথাটা কি আপনি ভাল জানেন না কল্যাণী দেবী!
কল্যাণী কিন্তু নিরুত্তর। তার কণ্ঠে কোন ভাষাই যোগায় না যেন।
ঘরে তো গেলেন ভোর পাঁচটায়। ঘুমোবার সময় পেলেন কখন?
এবারে কিরীটী লক্ষ্য করে, কল্যাণীর সমস্ত মুখখানা যেন একটা চাপা
রক্তিমাভা ধারণ
করেছে।
কল্যাণী দেবী! মৃদুকণ্ঠে
কিরীটী আবার ডাকে।
কল্যাণী তাকাল কিরীটীর মুখের দিকে। ঠিক এমনি সময় সবিতা কক্ষমধ্যে
প্রবেশ করল,
মিঃ রায়!
আসুন
সবিতা দেবী। সুপ্রভাত।
রাত্রে নিশ্চয়ই কাল খুব গভীর নিদ্রা দিয়েছিলেন!
প্রশ্নসূচক
দৃষ্টিতে সবিতা তাকাল কিরীটীর মুখের দিকে।
যাক, আপনার সৌভাগ্য বলতে হবে, গতরাত্রে আপনার কোন ক্ষতি হয়নি!
আপনি
হ্যাঁ। এইমাত্র কল্যাণী দেবীর মূখেই শুনলাম আপনার শয়নঘরের দরজা খোলা
পেয়ে সেই সুযোগে কে নাকি আপনার শয়নঘরে অনধিকার প্রবেশ করেছিলেন। এবং এও বোঝাই
যাচ্ছে যিনিই গতরাত্রে আপনার শয়নঘরে প্রবেশ করে থাকুন না কেন, সুযোগের অভাবে তাঁর
মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়নি।
কিন্তু একটা কথা আমি বুঝতে পারছি না মিঃ রায়, কেউ যে গতরাত্রে কোন
এক সময় আমার ঘরে প্রবেশ করেছিল সন্দেহ নেই সত্যি, কিন্তু কি করে সেটা আদৌ সম্ভব হলো?
আমি ও কল্যাণী শোবার আগে, নিজে হাতে আমি দরজা
বন্ধ করে দিয়েছিলাম ঘরের, সবিতা বিহ্বলভাবে
কথাগুলো বললে।
কিরীটী কৌতুকোজ্জল দৃষ্টিতে বারেকের জন্য কল্যাণীর মুখের দিকে
তাকিয়ে সবিতার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললে, বন্ধ থাকলেই
বা! কারো খুলতে
তো সেটা কষ্ট হতে পারে না!
কিন্তু আমি বা কল্যাণী কেউই তো রাত্রে আমরা উঠিনি! সবিতা আবার
বলে।
আপনি ওঠেননি এটা ঠিকই, কিন্তু কল্যাণী দেবী? কিরীটী প্রশ্ন করল।
না,
কলিও ওঠেনি। আমাদের দুজনের ঘুম প্রায় একই সঙ্গে ভেঙেছে। সবিতা জবাব দেয়।
সে প্রশ্নের মীমাংসা পরে করলেও চলবে। আগে একবার চলুন দেখি, দেখে
আসি আপনার ঘরটা। কল্যাণী দেবী বলছিলেন আপনার শয়নঘরের মেঝেতে নাকি কার জুতোর অস্পষ্ট ছাপ রয়েছে!
আলোচনাটা যেন কতকটা ইচ্ছে করেই বন্ধ করে দিয়ে কিরীটী চেয়ার হতে
উঠে সবিতাকে নিয়ে অগ্রসর হল তার ঘরের দিকে।
শ্লথ
মন্থর পায়ে কল্যাণীও ওদের অনুসরণ
করল।
অষ্পষ্ট জুতোর ছাপই বটে।
এবং সেই পূর্বের
ক্রেপসোল দেওয়া জুতোরই ছাপ কয়েকটা ঘরের মেঝেতে তখনও রয়েছে।
কিরীটী তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে ছাপগুলো পরীক্ষা করে দেখে আর একবার ঘরের
চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখে নিল।
সবিতার নিদ্রিত অবস্থায় যে সময়টা কল্যাণী ঘরে ছিল না এবং ঘরের দরজা খোলা
ছিল সেই সুযোগেই
কেউ এসেছিল এই ঘরে সুনিশ্চিত।
কিন্তু কেন? কি উদ্দেশ্যে এসেছিল সে?
নিশ্চয়ই একেবারে বিনা উদ্দেশ্যে কেউ গতরাত্রে কল্যাণীর অবর্তমান
ঘরে আসেনি এবং সম্ভবতঃ রাত্রে ঠিক এ সময় কল্যাণী যে ঘরে থাকবে না এবং দরজা খোলাই
থাকবে তাও তো নিশীথ আগন্তুক জানত না!
কিন্তু
পরক্ষণেই যেন কিরীটীর সন্দিগ্ধ মন প্রশ্নে আবর্তিত হয়ে ওঠে।
অপাঙ্গে একবার অদূরে নিঃশব্দে দণ্ডায়মান কল্যাণীর মুখের দিকে না
তাকিয়ে পারে না কিরীটী।
আবার কিরীটী মেঝের উপরে জুতোর ছাপগুলোর দিকে তাকাল। সবিতার
পালঙ্কের একেবারে কাছবরাবর ঘেষে জুতোর
ছাপগুলো।
ঘরের দক্ষিণ দিক ঘেষে দুটো শয্যা, একটা সবিতার দামী পালঙ্কের
উপরে, অন্যটা হাত দুই
ব্যবধানে কল্যাণীর, ছোট একটা তক্তপোশের উপরে।
দুটি খাটের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় মেঝেতেই জুতোর ছাপগুলো রয়েছে।
সহসা কিরীটী সবিতার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, আপনাদের মধ্যে কে
প্রথম ঐ ছাপগুলো দেখতে পান মিস চৌধুরী?
কল্যাণী। ওই আমাকে পরে দেখায়।
দরজার
বাইরে এমন সময় ভৃত্যের কণ্ঠস্বর শোনা গেল, দিদিমণি?
কে রে?
কলকাতা থেকে উকীলবাবু
এসেছেন। মামাবাবু,
আপনাকে একবার এখনি নিচে ডেকে দিতে বললেন।
যান মিস্ চৌধুরী। বোধ হয় কলকাতা থেকে আপনাদের সলিসিটার অতীনলাল
বোস এসেছেন। কিরীটীই এবারে সবিতার দিকে তাকিয়ে বললে।
মিঃ বোস
সলিসিটার! তাঁর আসবার কথা ছিল কই
হ্যাঁ, নায়েব বসন্তবাবুই
তাঁকে আসতে লিখেছিলেন আপনার বাবার উইল সংক্রান্ত ব্যাপারেই। কিরীটী জবাব দিল।
বাবার উইলের ব্যাপারে?
হ্যাঁ। যদিও সাধারণভাবে
বিচার করে দেখতে গেলে আপনিই আপনার পিতার যাবতীয় সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী,
তাহলেও সকলের
অজ্ঞাতে যদি উইলের মধ্যে অন্য কোন ব্যবস্থা বা এমন কোন প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে গিয়ে
থাকেন যেটা জানা দরকার,
সেদিক দিয়েও তো উইলের মধ্যে কি লেখা আছে বা না আছে আপনার জানা দরকার সবিতা দেবী। যান নিচে
যান।
আপনিও আসুন
মিঃ রায়!
কিন্তু আমার সেখানে থাকাটা কি উচিত হবে সবিতা দেবী? আমি তো আপনাদের
ফ্যামিলির কেউ নই, সম্পূর্ণ তৃতীয় ব্যক্তি!
তা হোক, আপনি চলুন। সত্যজিৎবাবু কোথায়?
তিনি তো অনেকক্ষণ ঘর থেকে বের হয়ে এসেছেন, জানি না তো! কিরীটী জবাব দেয়।
তুমি দেখ তো কল্যাণী, সত্যজিৎবাবু, কোথায়? কল্যাণীর দিকে ফিরে তাকিয়ে সবিতা কথাটা
বললে।
সকাল থেকে কই সত্যজিতের সঙ্গে তো আমার দেখাও হয়নি!
কিরীটী চকিতে একবার কল্যাণীর মুখের প্রতি দৃষ্টিপাত করে বললে,
চলুন দেখা যাক, নিচেও হয়ত তিনি থাকতে পারেন।
নিচে বাইরের ঘরেই সত্যজিতের দেখা পাওয়া গেল।
নিত্যানন্দ সান্যাল একজন সাহেবী পোশাক পরিহিত সুশ্রী গৌরবর্ণ হৃষ্টপুষ্ট মধ্যবয়সী ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলছিলেন,
তাঁদের পাশেই দাঁড়িয়েছিল সত্যজিৎ রায়।
ওদের সকলকে ঘরে প্রবেশ করতে দেখে নিত্যানন্দ সান্যালই আহ্বান জানালেন, এই যে সবি মা,
এসো! ইনি অতীনলাল বোস তোমাদের সলিসিটার। এবং উপবিষ্ট মিঃ বোসের
দিকে ফিরে তাকিয়ে বললেন, মিঃ বোস
এই সবিতা, মৃত্যুঞ্জয়
চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে।
নমস্কার মিস চৌধুরী বসুন।
বসন্তবাবুরই
জরুরী চিঠি পেয়ে আমি আসছি, কিন্তু এখানে এসে ওঁর মুখে বসন্তবাবু সম্পর্কে সব কথা শুনে তো
বিরক্তি ও ভ্রূকুটিপূর্ণ
দৃষ্টিতে সবিতা সম্মুখেই উপবিষ্ট নিত্যানন্দ সান্যালের মুখের দিকে তাকাল এবং
পরক্ষণেই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে অতীনলালের দিকে তাকিয়ে বললে, কি আপনি শুনেছেন নায়েবকাকার
সম্পর্কে মিঃ বোস
আমি জানি না—তবে আমি বলতে পারি, ব্যাপারটা সম্পূর্ণই একটা misunderstanding বা দারোগা
লক্ষ্মীকান্তবাবুর
misjudgement! যাক, সে আলোচনা বর্তমানে আমাদের না করলেও চলবে। আর আমার ইচ্ছাও নয়।
আপাতত ঐ বিষয় নিয়ে আর আলোচনা করবার। আপনি বোধ হয় বাবার উইল এনেছেন?
সবিতার অদ্ভুত সংযত কণ্ঠস্বরে উচ্চারিত কথাগুলি কিরীটীকে বিস্মিত করে।
গতকাল দ্বিপ্রহরের দিকে জমিদারী দেখাশোনার ব্যাপারে সবিতার যে অদ্ভুত দৃঢ়তা ও
সংযমের পরিচয় পেয়েছিল, আজও সবিতার কণ্ঠে যেন ঠিক সেই সুরটিই ধ্বনিত হয়ে উঠেছে।
অকস্মাৎ কক্ষের মধ্যে যেন একটা অপ্রিয় পরিস্থিতি ঘনিয়ে ওঠে।
ঘরের মধ্যে উপস্থিত সকলেই
পরস্পরের মুখের দিকে তাকায়। কিছু ক্ষণের জন্য একটা স্তব্ধতা ঘরের মধ্যে বিরাজ করে।
স্তব্ধতা ভঙ্গ করে সলিসিটার অতীনলালই আবার কথা বললেন, হ্যাঁ,
উইলটা আমি সঙ্গেই এনেছি বসন্তবাবুর নির্দেশ অনুযায়ী। পূর্বের অপ্রিয় আলোচনাটা যেন কতকটা ইচ্ছা করেই
সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে, একেবারে অন্য ধারায় বক্তব্য শুরু করলেন, তা সে যাই হোক, তিনি
উপস্থিত যখন নেই-ই, আপনাদের সকলের
সামনে মৃত্যুঞ্জয়
চৌধুরীর উইলটা পড়তে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু উইল পড়বার আগে সবিতা দেবী আপনাকে আমার
একটা প্রশ্ন আছে এবং যে প্রশ্নের উপরে উইল এখন আর পড়া না-পড়াটা সম্পূর্ণভাবেই
নির্ভর করছে। অতীনলাল সবিতার মুখের প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন।
বিস্মিত জিজ্ঞাসু
দৃষ্টিতে সবিতা তাকায় অতীনলালের দিকে, প্রশ্ন?
হ্যাঁ। যে শিলমোহর-করা খামটা আপনার নামে তাঁর আয়রন-সেফে ছিল। সেটা
খুলে আপনি আপনার বাবার শেষ চিঠিটা পড়েছেন কি?
অতীনলালের প্রশ্নে মনে হল সবিতা যেন অতিমাত্রায় বিস্মিত হয়েছে এবং
বিস্ময়সন্দিগ্ধভরা কণ্ঠে কোনমতে বললে, বাবার আয়রন-সেফে আমার নামে শিলমোহর করা
খামের মধ্যে তাঁর শেষ চিঠি?
হ্যাঁ, কেন পাননি আপনি সে চিঠি? আমার প্রতি মৃত্যুঞ্জয়বাবুর শেষ নির্দেশ ছিল, যে
নির্দেশ তাঁর আকস্মিক মৃত্যুর মাত্র আট দিন আগে জরুরী রেজিস্টার্ড একটা চিঠির
মারফৎ পাই যে, এ চিঠি যেটা তিনি তাঁর সেফে রেখে গেলেন, আপনি খুলে না পড়া পর্যন্ত
উইল যেন সর্বসমক্ষে তো নয়ই আপনাকে পর্যন্তও যেন পড়ে না শোনানো হয়।
কিন্তু বাবার আয়রন-সেফ এবং যে টেবিলে বসে তিনি সাধারণতঃ লেখাপড়া করতেন, সব আমি
বসন্তকাকার কাছ থেকে চাবি চেয়ে নিয়ে এখানে আসবার পরদিনই তন্ন তন্ন করে পরীক্ষা করে
দেখেছি যদি কোন চিঠি বা এ ধরণের কোন কাগজপত্র পাওয়া যায় যাতে করে বাবার মৃত্যুর
ব্যাপারে কোন হদিস পাওয়া যায়, কিন্তু কিছুই তো পাইনি!
সবিতার কথায় অতীনলাল কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে কি যেন ভাবলেন। অতঃপর মৃদুকণ্ঠে
বললেন, এ অবস্থায় তাহলে নায়েববাবু,
ফিরে না আসা পর্যন্ত বা তাঁর কাছ হতে ঐ চিঠি সম্পর্কে সব না জানা পর্যন্ত তো উইলটা
আমি পড়তে পারবো না সবিতা দেবী!
নিত্যানন্দ সান্যাল এবারে কথা বললেন, একটা কথা মিঃ বোস ক্ষমা
করবেন, অবশ্য না বলে এক্ষেত্রে আমি পারছি না। ধরুন যদি সে লেফাপাটার কোন হদিসই না পাওয়া যায়, তাহলে সবি মা
কি তার উইলটা সম্পর্কেও জানতে পারবে না?
পারবেন। তবে কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে।
অপেক্ষা করতে হবে মাত্র ঐ সামান্য একটা কারণে?
কারণটা
যে সামান্য, সে কথা আপনি জানলেন কি করে, মিঃ সান্যাল? ঐ চিঠির বিষয়বস্তুর সঙ্গে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর
উইলেরও এমন একটা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে যে, যাতে করে ঐ চিঠিটা পূর্বে না পড়া থাকলে উইলের বিষয়বস্তু সঠিকভাবে উপলব্ধিই করতে পারবেন না অন্ততঃ
সবিতা দেবী।
তার মানে?
ক্ষমা করবেন মিঃ সান্যাল। বর্তমানে এর বেশী কিছু বলা আমার পক্ষে
সম্ভব নয়। কারণ
যেটুকু
আমি বলেছি ঐটুকুই চিঠিতে মৃত্যুর
আগে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী আমাকে জানিয়েছিলেন। ঐ শিলমোহর করা লেফাপার মধ্যে চিঠিতে
তিনি তাঁর মেয়েকে কি লিখেছিলেন বা না লিখেছিলেন, সে সম্পর্কে আমিও কিছু জানি না
বিশ্বাস করুন।
দেখ মা, সবিতাকে লক্ষ্য করে নিত্যানন্দ সান্যালই আবার কথা বললেন।
এবং সকলেই
নিত্যানন্দ সান্যালের মুখের দিকে তাকায়।
নিত্যানন্দ বললেন, তুমি মনে হয়ত দুঃখ পাবে মা আমার কথাটা শুনে,
কিন্তু কথাটা আমি না বলেও পারছি না। জীবনে কোন দিন মিথ্যার আশ্রয় নিইনি-চিরদিন
সত্যকেই জীবনের লক্ষ্য করে এসেছি এবং অপ্রিয় হলেও সত্য যখন মনে হচ্ছে, বলতে বাধ্য
হচ্ছি কথাটা—আমারও এখন স্থিরবিশ্বাস হচ্ছে, এ কাজ বসন্ত ভায়ারই।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সবিতা তাকাল
নিত্যানন্দ সান্যালের দিকে,
না, না, না—
স্থিরভাবে বিবেচনা করে দেখো, সে ছাড়া আর কারো পক্ষেই
মামাবাবু?
মা রে! চুলে
পাক ধরেছে, বয়সও আমার অনেক হলো। এ বয়সে দেখলামও অনেক, অবশ্য বসন্ত ভায়াও আমার বহুদিনের এবং যথেষ্ট পরিচিত।
এ কাজ তার দ্বারা সম্পন্ন হয়নি প্রমাণ হলে আমার চাইতে এ জগতে আর কেউ বেশী সুখী ও আনন্দিত হবে না হয়ত,
তবু
চক্ষুলজ্জার খাতিরে অপ্রিয় ও কষ্টকর বলে সত্যকে যদি আমরা অস্বীকার করি, তার চাইতে
দুঃখ ও গ্লানি আর বেশী কিছু থাকবে না মা। তাই বলছিলাম, আমার মনে হয় এ কাজ তারই।
ভেবে দেখো মা, তোমার পিতার আকস্মিক অপঘাতে মৃত্যুর পর একমাত্র এ বাড়িতে সে-ই তো এ
কটা দিন ছিল। এবং তার হাতেই চাবি ছিল। বিচারবুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করে দেখতে গেলেও
স্বভাবতই কি মনে হবে না যে, লেফাপাটা সরানো তার পক্ষে যতটা সহজ ও সুবিধা ছিল তেমন
আর কারো পক্ষেই সুবিধা ছিল না। শুধু,
সেই নয় মা, আরো একটা কথা আমাদের এক্ষেত্রে ভাবতে হবে, মিঃ বোস যখন বলছেন মৃত্যুঞ্জয়ের
মতুর মাত্র কয়েকদিন আগেই ওঁকে ঐ লেফাপার সংবাদ দিয়ে একটা জরুরী পত্র দিয়েছিলেন,
তখন নিশ্চয় তাঁর Iron-safe-এ লেফাটা ছিল। এবং ছিলই যখন, তখন সেটা গেল কোথায়? চাবিবদ্ধ Iron-safeএর
ভিতর থেকে পাখা মেলে তো কিছু
আর লোপাটা উধাও হয়ে যেতে পারে না!
উপস্থিত নিত্যানন্দ সান্যালের যুক্তিকে কেউ যেন অস্বীকার করতে
পারে না,
করবার উপায়ও নেই।
অতীনলালই বলেন, মিঃ সান্যাল ঠিকই বলেছেন সবিতা দেবী। কথাটা ভেবে
দেখবার মত।
ভাবতে আর হবে না মিঃ বোস। অতর্কিত
কণ্ঠস্বরে সকলেই
একসঙ্গে চমকে বক্তার দিকে ফিরে তাকায় ঘরের মধ্যে যারা উপস্থিত ছিলেন। বক্তা
সন্তোষ চৌধুরী।
কেউই ঘরের মধ্যে উপস্থিত ইতিমধ্যে টের পায়নি কখন একসময় সন্তোষ
চৌধুরী সবার পশ্চাতে এসে দাঁড়িয়েছে এবং তার উপস্থিতিটা না জানলেও ক্ষণপূর্বে ঘরের মধ্যে যে আলোচনাটা
চলছিল সেটা সে শুনছে।
সন্তোষ চৌধুরী বক্তব্যটা শেষ করে, সেই শয়তানের কাজ! এখন সময় বুঝে
ধরা পড়ে কৌশলে গাঢাকা দিয়েছে।
আপনি! আপনাকে তো চিনতে পারছি না? কথাটা বললেন মিঃ অতীনলাল সন্তোষকে লক্ষ্য
করে।
আমি। আমার নাম সন্তোষ চৌধুরী, সবিতার জাঠতুতো ভাই আমি। ওর বাবা ও
আমার বাবা আপন জাঠতুতো ভাই ছিলেন। দিন তিনেক হলো আমি এডেন থেকে এসে পৌঁছেছি।
অতীনলাল সন্তোষ চৌধুরীর কথা শুনে তীব্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওর মুখের
দিকে তাকিয়ে রইলেন। একটি কথাও বললেন না।
এতক্ষণ পর্যন্ত কিরীটী একটিও কথা উচ্চারণ করেনি। একান্ত নির্লিপ্তভাবেই চক্ষু কর্ণকে সজাগ রেখে এক
পাশে চুপটি করে দাঁড়িয়ে সকলের
কথা শুনছিল এবং এখনও কোন কথাই বলল না—কেবল অতীনলালের সন্তোষ চৌধুরীর মুখের প্রতি
নিবন্ধ স্থিরসন্ধানী দৃষ্টিটাই তাকে যেন বিশেষভাবেই কৌতুহলী করে তুলল।
স্পষ্টই বুঝতে পারছিল কিরীটী, এবারে অতীনলাল কিছু একটা বলবেন। প্রতীক্ষায় উদগ্রীব হয়ে ওঠে
কিরীটী।
আপনি সন্তোষ চৌধুরী?
এডেন থেকে এসেছেন? ধীরকণ্ঠে অতীনলাল সন্তোষের
মুখের দিকে স্থির-নিবদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়েই প্রশ্নটা করলেন।
হ্যাঁ।
অদ্ভুত যোগাযোগ তো! এত আস্তে অতীনলালের কণ্ঠে কথাটা উচ্চারিত হল
যে, একমাত্র কিরীটীর অতিমাত্র সজাগ শ্রবণেন্দ্রিয় ব্যতীত ঘরের মধ্যে উপস্থিত অন্য
কারোরই শ্রবণে কথাটা প্রবেশ করল না। এমন কি সন্তোষ চৌধুরীও কথাটা শুনতে পেল না।
কি বললেন মিঃ বোস?
না,
কিছু না! অতীনলাল শান্তকণ্ঠে জবাব
দিলেন।
তাহলে উইলটা পড়বার কি হবে মিঃ বোস? প্রশ্নটা এবারে নিত্যলাল সান্যালই করলেন।
উইল! আরো দুটো দিন বসন্তবাবুর জন্য আমি অপেক্ষা করবো এখানে। পরশু
সকালে উইল পড়ে শোনাব সকলকে। জবাব
দিলেন অতীনলাল।
তুমি কি বল মা সবি?
প্রশ্ন করলেন সান্যাল সবিতাকে।
ক্ষতি কি, তাই হবে। আপনি কি বলেন মিঃ রায়?
কালকের দিনটা তো মধ্যে, তাই হবে না হয়। কিরীটী জবাব দিল।
প্রভু হে, দয়াময়! মা কলি, আমার উপাসনার আয়োজন করে দেবে চল মা বহুক্ষণ সময় উত্তীর্ণ হয়ে
গেছে।
নিত্যানন্দ সান্যাল অতঃপর কক্ষত্যাগ করবার জন্যই বোধ হয় চেয়ার হতে
গাত্রোখান করে, দুয়ারের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ আবার ফিরে দাঁড়িয়ে বললেন, তাহলে
মিঃ অতীনলালের থাকা-খাওয়ার একটা ব্যবস্থা করে দাও মা। পথশ্রমে উনি ক্লান্ত চায়ের
ব্যবস্থা করো।
প্রশান্ত পদক্ষেপে কক্ষ হতে নিষ্ক্রান্ত হয়ে গেলেন সান্যাল।
পশ্চাতে পশ্চাতে তাঁকে অনুসরণ
করে কল্যাণী।
চাকর বেটারাই বা সব গেল কোথায়? ভদ্রলোককে
যে এক কাপ চা দিতে হয়, সে হুঁশও
কি বেটাদের নেই? এই বনমালী! বলতে বলতে সন্তোষ চৌধুরীও কক্ষ ত্যাগ করলেন।
সত্যজিৎ এরপর
ইঙ্গিতে সবিতাকে ডেকে নিয়ে কক্ষ ত্যাগ করল।