সর্বনেশে অতিথি
ব্রাদার্স গ্রিম দ্বারাএক ছিল মোরগ আর তার মুরগী।
তারা একদিন ঠিক করল যে তাদের পুরোনো প্রভু ডাক্তার কর্বেস্-এর সঙ্গে দেখা করতে যাবে। ভারি সুন্দর দেখতে একটা গাড়ি তৈরি করল তারা— তাতে চারটি লাল চাকা লাগালো আর গাড়িতে জুতলো চারটি ইঁদুর। তারপর তারা তাইতে বসে চললো ডাক্তার কর্বেস্-এর বাড়ি।
কিছুদূর গিয়েই তাদের এক বেড়ালের সঙ্গে দেখা। বেড়াল বললে— কোথায় চললে গো?
মুরগী জবাব দিলে— চলেছি আমাদের পুরোনো প্রভু ডাক্তার কর্বেস্-এর সঙ্গে দেখা করতে।
বেড়াল বললে— তবে আমাকেও নিয়ে চলো।
মুরগী বলল— সে তো খুব ভালো কথা। তবে তুমি পিছনে উঠে বস ভাই, সামনে বসলে উল্টে পড়ে যাবে।
আট জনে বসা যায় ভিতরে ও বাহিরে
চার-চাকা গাড়ি মোর আর কি বা চাহি রে?
টানিছে ইঁদুর তাহা বড় মনোহর—
চলিয়াছি ডাক্তার কর্বেস-ঘর।
তারপর গাড়িতে উঠল এক যাঁতা কলের পাথর, তারপর উঠল এক ডিম, এক হাঁস, মোজা সেলাইয়ের ছুঁচ আর শেষে এক আলপিন। আটজন যাত্রী নিয়ে গাড়ি চললো ছুটে। তারা যখন ডাক্তার কর্বেস্-এর বাড়ি এসে পৌঁছল, তিনি বাড়ি ছিলেন না। কাজেই বাড়িতে ঢুকে যে-যার আয়েস করে বসল।
ইঁদুররা গাড়িটাকে টেনে নিয়ে গেল আস্তাবলে। মোরগ আর মুরগী উড়ে গিয়ে দাঁড়ে বসল। বেড়াল উনুনের ছাইগাদায় কুণ্ডলি পাকিয়ে বসল। হাঁস গেল ঝরনার জলে সাঁতার কাটতে। ডিম নিজেকে তোয়ালেতে জড়িয়ে আরাম করে রইল। মোজা সেলাইয়ের ছুঁচ চেয়ারে ফুটে রইল মাথা নিচু করে আর আলপিন বিছানায় লাফিয়ে উঠে বালিসে ঢুকে গেল। যাঁতাকলের পাথর করল কি, সদর দরজার উপর ঝুলে রইল।
খানিক পরে ডাক্তার কর্বেস এসে ঢুকলেন। তাঁর চাকর বাড়ি ছিল না। কি আর করেন? নিজেকেই আগুন জ্বালাতে হবে। ঢুকলেন রান্না ঘরে। উনুনের কাছে আসতেই ছাইগাদা থেকে একরাশ ছাই ছুঁড়ে মারল বেড়াল তাঁর মুখে। তিনি ছুটলেন ঝরনায় মুখ ধুতে। সেখানে ছিল হাঁস; সে এত জল ছিটিয়ে দিল যে ডাক্তার কর্বেস ছুটলেন তোয়ালে আনতে। যেই না তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে যাওয়া অমনি তার ভিতর থেকে ডিম লাফিয়ে উঠে তাঁর মুখের উপর ভেঙে গেল। চোখে ডিমের রস আঠার মত লেগে চোখ জুড়ে গেল। তিনি একটু শান্ত হবার জন্যে বসতে গেলেন চেয়ারে। সঙ্গে সঙ্গে মোজা সেলাইয়ের ছুঁচ ঢুকে গেল তার পায়ে। ভীষণ রেগে তিনি লাফিয়ে উঠে ঝাঁপ দিয়ে পড়লেন বিছানায়। অমনি প্যাঁট করে আলপিন ফুটে গেল তাঁর মুখে। আর সহ্য করতে পারলেন না। চিৎকার করে এই বলতে বলতে ছুটে বেরোলেন— কোন শয়তান আমার বাড়ির সব কিছুকে মন্তর করেছে! ছুটে বেরতে গিয়ে যেই সদর দরজা খুলেছেন অমনি মাথার উপর থেকে যাঁতা কলের পাথর খসে দিয়েছে তাঁকে চাপা। সেই ভারি পাথরের আঘাতেই তাঁর প্রাণ বেরিয়ে গেল।