Chapter Index

    এক শেয়াল এক নেকড়েকে বোঝাচ্ছিল যে মানুষের কত ক্ষমতা— বিশেষ করে পুরুষ মানুষের। শেয়াল বললে— দেখ নেকড়ে ভাই, মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় এমন জন্তু কোথাও নেই। মানুষের আছে বুদ্ধি আর কৌশল। আমাদের তা কই? শুধু গায়ের জোরে কিছু হয় না।

    নেকড়ে বললে— নিশ্চয় হয়। আমার খুব ইচ্ছে আমার সামনে একটা পুরুষ মানুষ এসে পড়ুক। আমার হাত থেকে তাকে আর পালাতে হবে না। কিছুতেই আমি ছেড়ে দেব না।

    শেয়াল বললে— তোমার ইচ্ছাপূরণে আমি সাহায্য করতে পারি। কাল ভোরবেলা যদি তুমি আমার সঙ্গে আসো আমি তোমায় একজন পুরুষ মানুষ দেখিয়ে দেব।

    নেকড়ে খুব ভোরেই তৈরি। শেয়াল তাকে একটা বেড়ার ভিতর দিয়ে এক রাস্তার ধারে নিয়ে গেল। শেয়াল জানত যে সেই রাস্তা দিয়ে শিকারীরা রোজ যায়।

    প্রথমে এল একজন খুব বুড়ো মানুষ।

    নেকড়ে বললে— এই কি পুরুষ মানুষ?

    শেয়াল জবাব দিলে— একসময় ছিল। এখন আর নেই।

    তারপর এল একটি ছোট ছেলে। সে ইস্কুলে যাচ্ছিল।

    নেকড়ে আবার জিজ্ঞেস করলে— এই কি পুরুষ মানুষ নাকি?

    শেয়াল বললে— এখনও হয়নি। একদিন না একদিন হবে।

    শেষে একজন শিকারী এল। কাঁধে তার দু-নলা বন্দুক আর কোমরে শিকারী ছোরা।

    শেয়াল বললে— ঐ যে, এতক্ষণে একজন পুরুষ মানুষ আসছে।. ওকে তোমার হাতে ছেড়ে দিয়ে গেলুম। আমি পালাচ্ছি আমার গর্তে।

    নেকড়ে সঙ্গে সঙ্গে মানুষটির দিকে ছুটে গেল। শিকারী তৈরিই ছিল। বন্দুকটা তুলে সে বললে— বড়ই দুঃখের কথা আমার বন্দুকে আজ বড় গুলি ভরা নেই।

    যাই হোক, নেকড়েটা লাফাতেই শিকারী তার মুখে ছর্‌রা গুলি ছিটিয়ে দিলে। কিন্তু বন্দুকের শব্দ বা ছর্‌রা গুলির জ্বালা— কিছুতেই নেকড়ে ভয় পেলে না, এগিয়ে এল। শিকারী আবার বন্দুক ছুঁড়ল। নেকড়ে মুখের জ্বালা সহ্য করে আবার এগিয়ে এসে বেগে ঝাঁপিয়ে পড়ল শিকারীর উপর। শিকারী চট করে তার ছোরা বার করে তাকে এমন দু-চার ঘা কসিয়ে দিল যে সে রক্তমাখা শরীর নিয়ে দৌড়ে পালালো শেয়ালের কাছে।

    —কী ভাই নেকড়ে? মানুষকে জয় করছ?

    নেকড়ে বললে— মানুষের ক্ষমতা সম্বন্ধে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। প্রথমে সে তার কাঁধ থেকে একটা লাঠি নিয়ে আমার মুখের মধ্যে কিসব ছুঁড়ে দিলে। ভীষণ জ্বালা করতে লাগল। তার কাছে আসবার আগেই সে তার লাঠির মধ্যে আবার ফুঁ দিতেই বিদ্যুৎ, চমকালো, বজ্রপাত হল আর শিলের মতো কিসব আমার নাকে লাগল। তবুও আমি হার মানলুম না। আমি ঝাঁপিয়ে পড়লুম। সঙ্গে সঙ্গে সে তার বুক থেকে একটা সাদা পাঁজরার হাড় টেনে বার করে এমনভাবে আমার গা কেটে দিলে যে আমার মনে হচ্ছে এইখানে শুয়েই আমি মরে যাব।

    শেয়াল বললে— বুঝলে তো ভাই— না জেনে গর্ব করার কী ফল?

    টীকা