Chapter Index

    এক সময়ে এক রাজা ছিলেন। তাঁর বড় অসুখ করেছিল। বাঁচবার কোনো আশা ছিল না। রাজার তিন ছেলের মনে ভারি দুঃখ। তারা রাজবাড়ির বাগানে গিয়ে কাঁদতে বসল। সেখানে তাদের একটি বুড়ো লোকের সঙ্গে দেখা। সে জিজ্ঞেস করলে, তাদের এত দুঃখের কারণ কী? তারা বললে—তাদের বাবার এমনই অসুখ করেছে যে তিনি মারা যাবেন—কিছুতেই তিনি সারছেন না।

    বুড়ো বললে—আমি এক ওষুধ জানি—তার নাম জীবন-বারি। জীবন-বারি খেলে তিনি সেরে উঠবেনই—কিন্তু পাওয়া বড় শক্ত।

    বড় রাজপুত্র বললেন—আমি আনতে যাব। বলে রুগ্ন রাজার কাছে গিয়ে বললেন—জীবন-বারি ছাড়া যখন আর অন্য কোন ওষুধই আপনার লাগবে না তখন আমায় তাই আনতে দেবার অনুমতি দিন।

    রাজা বললেন—না। ওতে অনেক বিপদ। তার চেয়ে বরং মরি। কিন্তু রাজপুত্র এমন মিনতি তে লাগলেন যে শেষে রাজাকে রাজি হতে হল। রাজপুত্র মনে মনে ভাবলেন—আমি যদি জল আনতে পারি তাহলে বাবা আমাকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসবেন। আমিই বাবার রাজত্ব পাব।

    ভেবে তিনি বেরিয়ে পড়লেন। ঘোড়ায় চড়ে কিছুদূর যাবার পর দেখেন রাস্তায় এক বামন দাঁড়িয়ে। সে তাঁকে ডাকছে—এত তাড়াতাড়ি যাচ্ছ কোথায়?

    রাজপুত্র অবজ্ঞাভরে বললেন—দূর কুচোচিংড়ি! তোর তাতে কী! বলে ঘোড়া হাঁকিয়ে চলে গেলেন। বামন বেজায় রাগ করল। সে মনে মনে শাপ দিল রাজপুত্রকে। রাজপুত্র কিছুদূর গিয়েই এক পাহাড়ের খাতের মধ্যে প্রবেশ করলেন। যত এগোতে লাগলেন দু-পাশ থেকে পাহাড় ততই চেপে আসতে লাগল। শেষে পথ এত সরু হয়ে এল যে তিনি আর এক পা-ও এগোতে পারলেন না। পিছন ফেরবার চেষ্টা করে দেখলেন, ঘোড়ার মুখ ঘোরানো যায় না। ঘোড়ার পিঠ থেকে নামবার চেষ্টা করলেন। দেখলেন তা-ও পারা যায় না। তিনি সেখানেই বন্দী হয়ে গেলেন। রুগ্ন রাজা তাঁর জন্যে অনেক অপেক্ষা করলেন, কিন্তু রাজপুত্র ফিরলেন না।

    তখন মেজ রাজপুত্র বললেন—বাবা, আমায় জল আনতে যেতে দিন। তিনি মনে মনে ভাবলেন, যদি দাদা মারা গিয়ে থাকেন, তাহলে তো রাজ্য আমিই পাব। প্রথমে রাজা তাঁকে ছেড়ে দিতে রাজি হলেন না। কিন্তু শেষটায় তাঁকে মত দিতে হল। তাই মেজ রাজপুত্র তাঁর দাদা যেপথে গিয়েছিলেন সেইপথেই এগোলেন। তাঁর সঙ্গেও বামনের দেখা হল। বামন তাঁকে জিজ্ঞেস করল এত ব্যস্ত হয়ে কোথায় তিনি চলেছেন। রাজপুত্র বললেন—ওরে কুচোচিংড়ি! তোর জেনে দরকার কী? বলে তাঁর দিকে আর না তাকিয়ে ঘোড়া হাঁকিয়ে চলে গেলেন। বামন চটে গিয়ে তাঁকেও জাদু করে পাহাড়ের খাতের মধ্যে নিয়ে গিয়ে বন্দী করে ফেলল। মেজ রাজপুত্র এগোতেও পারলেন না, পিছোতেও পারলেন না।

    মেজ ছেলেও যখন ফিরলেন না, ছোট ছেলে গিয়ে রাজার কাছে অনুমতি চাইল জীবন-বারি আনবার জন্যে। অনেক বলা-কওয়ায় রাজা শেষে মত দিলেন। বড় দুই ভাইয়ের মতো ছোট রাজপুত্রের সঙ্গেও বামনের দেখা হল। বামন তাঁকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করল—অত তাড়াতাড়ি কোথায় যাচ্ছ রাজপুত্র? ছোট রাজপুত্র ঘোড়া রুখে তাকে বুঝিয়ে বললেন—আমি যাচ্ছি জীবন-বারি আনতে আমার বাবার জন্যে। তিনি এত অসুস্থ যে বাঁচবার কোনো আশা নেই।

    —কোথায় পাওয়া যায় সেই জীবন-বারি তুমি জান?

    —না জানি না।

    —তোমার ব্যবহার কথাবার্তা বেশ ভদ্র। তোমার দাদাদের মত উদ্ধত নয়। আমি তোমায় বলব কেমন করে জীবন-বারি পাওয়া যায়। এক জাদু-করা রাজপ্রাসাদের উঠোনে এক ফোয়ারা আছে, তাই থেকেই জীবন-বারি বেরোয়। কিন্তু আমি যদি তোমায় একটি লোহার কাঠি আর দুটি রুটি না দিই তাহলে তুমি প্রাসাদের ভিতর ঢুকতে পারবে না। লোহার কাঠিটা দিয়ে প্রাসাদের লোহার ফটকে তিনবার ঘা মেরো, অমনি ফটক খুলে যাবে। ভিতরে হাঁ-করা দুটি সিংহ শুয়ে রয়েছে। তাদের মুখে রুটি দুটি ছুঁড়ে দিও, দেখবে তারা কিছু বলবে না। চুপ করে যাবে। তারপর দেরি না করে বারোটা বাজবার আগেই জীবন-বারি ধরে নিয়ে এসো। বারোটা বেজে গেলেই লোহার ফটক পড়ে যাবে, আর তুমি হবে বন্দী।

    রাজপুত্র ধন্যবাদ জানিয়ে, লোহার কাঠি আর রুটি নিয়ে এগিয়ে চললেন। রাজপ্রাসাদে এসে যখন পৌঁছলেন, দেখলেন বামন যেমনটি বলেছিল সবই ঠিক তেমনি। লোহার কাঠির তিন ঘায়ে ফটক খুলে গেল। তিনি সিংহদের রুটি খাইয়ে সন্তুষ্ট করে প্রাসাদের মধ্যে ঢুকলেন। সামনেই মস্ত এক সাজানো হল। সেখানে একটি তলোয়ার, আর তার পাশে একটি রুটি রাখা। রাজপুত্র সেদুটি জিনিস তুলে নিয়ে হল পার হয়ে আর-এক ঘরে গিয়ে ঢুকলেন। সেখানে অতি সুন্দরী একটি মেয়ে বসে। রাজপুত্র ঢুকতেই মেয়েটি আনন্দে দাঁড়িয়ে উঠে বললে—তুমি আমায় উদ্ধার করলে। এখন তুমিই আমার এই সমস্ত রাজত্ব পাবে আর যদি তুমি এক বছরের মধ্যে ফিরে আসো তাহলে ধূম করে আমাদের বিয়ে হবে। তারপর রাজকন্যা বলে দিলেন জীবন-বারির উৎস কোথায় আছে। তাঁকে তাড়াতাড়ি যেতে বললেন বারোটা বাজবার আগেই।

    রাজপুত্র এগিয়ে চললেন। অবশেষে তিনি একটি ঘরে এসে ঢুকলেন। সেখানে একটি সুন্দর নতুন বিছানা পাতা। রাজপুত্র এত ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন, যে তাঁর মনে হল একটু বসে নিই বিছানায়। বসতে গিয়ে শুলেন। শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। যখন ঘুম ভেঙে উঠলেন তখন পৌনে বারোটা বাজছে। ভয়ে তিনি লাফিয়ে উঠলেন। দৌড়োলেন ফোয়ারার কাছে। তাড়াতাড়ি একপাত্র জল ধরে পালালেন ছুটে। কিন্তু যেই তিনি লোহার ফটকের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন অমনি ঘড়িতে বারোটা বাজল। আর ফটকটা এমন জোরে এসে পড়ল যে তাঁর গোড়ালির এক টুকরো কাটা পড়ে গেল। যাই হোক, তিনি যে জীবন-বারি পেয়েছেন এইতে ভারি খুশি হলেন। বাড়ি ফেরার পথে আবার বামনের সঙ্গে দেখা। বামন রাজপুত্রের হাতে তলোয়ার আর রুটি দেখে বললে—এ দুটি তোমার মস্ত সম্পদ। এই তলোয়ার দিয়ে তুমি গোটা ফৌজ কেটে উড়িয়ে দিতে পারবে আর এই রুটি কোনোদিন খেয়ে শেষ করতে পারবে না। এ রুটি ফুরোবে না। রাজপুত্রের তখন দাদাদের কথা মনে পড়ল। তাঁদের না নিয়ে একা বাড়ি ফিরতে মন উঠল না। তিনি বললেন—বামন ভাই, আমার দুই দাদা কোথায় আছেন তুমি জান? আমি জীবন-বারির খোঁজে বেরোবার আগেই তাঁরা বেরিয়েছিলেন। তাঁরা আর ফেরেননি।

    বামন বললে—তারা দুই পাহাড়ের মাঝখানে বন্দী হয়ে রয়েছে। আমিই তাদের শাস্তি দিয়ে ধরে রেখেছি। তারা বড় উদ্ধত ব্যবহার করেছিল। ছোট রাজপুত্রের তখন বামনের কাছে মিনতি করে তাদের ছেড়ে দিতে বললেন। শেষে ছোট রাজপুত্রের কথায় বামন তাদের ছেড়ে দিল কিন্তু এই বলে সাবধান করে দিল—ওদের সম্বন্ধে হুঁসিয়ার থেকো। ওদের মন ভালো নয়।

    দাদাদের পেয়ে ছোট রাজপুত্র খুব খুশি হলেন। কী কী হয়েছিল, কেমন করে তিনি জীবন-বারি পেলেন, কেমন করে তিনি এক সুন্দরী রাজকন্যাকে উদ্ধার করলেন যিনি তাঁর জন্যে এক বছর অপেক্ষা করে থাকবেন, তারপর তাঁদের বিয়ে হবে আর তিনি একটা রাজ্য পাবেন, এইসব বললেন।

    তারপর তিন ভাই চললেন ফিরে। পথে এক রাজ্য পড়ল সেখানে ভীষণ লড়াই আর দুর্ভিক্ষ লেগেছে। রাজ্য ছারখার। দেশে এমনই অভাব যে রাজা সব আশা ছেড়ে দিয়েছেন। ভাবছেন এবার ধ্বংস এল বলে। ছোট রাজপুত্র গিয়ে রাজাকে তাঁর রুটিটা দিলেন। সেই রুটিতে দেশের সকলের খিদে মিটল। রাজপুত্র তখন রাজাকে তাঁর তলোয়ার দিলেন। তাই দিয়ে তিনি সমস্ত শত্রুকে মেরে ফেললেন। রাজার সব চিন্তা মিটে গেল—দেশে শান্তি ফিরে এল। ছোট রাজপুত্র তাঁর রুটি আর তলোয়ার ফিরিয়ে নিলেন। তিন ভাই আবার চললেন ঘোড়া ছুটিয়ে। পরে আরো দুই রাজ্য পড়ল। সেখানেও যুদ্ধ আর দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। রাজ্য যায়-যায়। দেশের অবস্থা খুব খারাপ। ছোট রাজপুত্র আবার তাঁর তলোয়ার আর রুটি ধার দিয়ে এই রাজ্যকে উদ্ধার করলেন। শেষে তিন রাজ্য ছাড়িয়ে গিয়ে পৌঁছলেন এক সমুদ্রের ধারে। সেখানে জাহাজে চড়ে তাঁরা সমুদ্রে পাড়ি দিলেন। জাহাজে উঠে বড় আর মেজভাই নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করলেন—ছোট রাজপুত্র যখন জীবন-বারি এনেছে তখন বাবা ওকেই রাজত্ব দেবেন। আমাদের প্রাপ্য রাজ্য আমরা আর পাব না, ও-ই পেয়ে যাবে। কী করে ছোট রাজপুত্রকে ধ্বংস করা যায়, এই কথা ভাবতে লাগলেন।

    একদিন যখন ছোট রাজপুত্র ঘুমোচ্ছেন তাঁরা করলেন কি, তাঁর পাত্র থেকে জীবন-বারিটুকু চুরি করে নিয়ে নিলেন আর তার জায়গায় ঢেলে দিলেন সমুদ্রের নোনা জল।

    যখন তাঁরা বাড়ি ফিরলেন ছোট রাজপুত্র তাঁর পাত্র নিয়ে রাজার কাছে গেলেন জীবন-বারি খাইয়ে তাঁর অসুখ সারাতে। কিন্তু সেই নোনাজল একটু মুখে পড়তেই তাঁর অসুখ আরো বেড়ে গেল। রাজা বিছানায় শুয়ে ছটফট করছেন, সেই সময় বড় দু-ভাই এসে বললেন—ছোট রাজপুত্র আপনাকে বিষ খাওয়াবার চেষ্টা করেছেন। আমরা জীবন-বারি এনেছি, এই নিন।

    রাজার মুখে সেই জল পড়তেই তাঁর রোগ সেরে যেতে লাগল। দেখতে দেখতে তিনি তাঁর শরীরে বল ফিরে পেলেন, স্বাস্থ্য ফিরে পেলেন—যেমন তাঁর যৌবনে ছিল। দুই দাদা ছোট ভাইয়ের কাছে গিয়ে তাকে মস্করা করে বললেন—জীবন-বারি তুমি আনলে। আমরা পেলুম ফল আর তুমি পেলে কাঁটা! আরো বুদ্ধি থাকলে, চোখ খোলা রাখলে এমনটি হত না। জাহাজে তুমি যখন ঘুমোচ্ছিলে আমরা জল সরিয়ে ফেলেছিলুম। এক বছর হলেই আমাদের একজন গিয়ে সুন্দরী রাজকন্যাকে নিয়ে আসব। কিন্তু সাবধান, এর একটি কথাও যেন তুমি বাবাকে বলো না! তিনি তোমার উপর বিশ্বাস হারিয়েছেন। এসব কথা বললে তোমার প্রাণই যাবে। যদি চুপ করে থাকো তাহলে আমরা তোমার প্রাণ রক্ষা করব।

    রাজার এদিকে মনে বিশ্বাস জন্মেছিল যে ছোট ছেলে তাঁকে প্রাণে মারতে চেয়েছিল। তিনি সেরে উঠেই পাঁচজনকে নিয়ে এক বিচার সভা ডাকলেন। বিচারে স্থির হল, তাঁকে গোপনে হত্যা করা হবে।

    ছোট রাজপুত্র সরল মনে যখন ঘোড়ায় চড়ে শিকার করতে বেরিয়েছেন, রাজার শিকারী তাঁর সঙ্গে বনে গেল। লোকালয় থেকে অনেক দূরে গভীরে বনের মধ্যে তারা যখন ঢুকল, রাজপুত্র শিকারীর দুঃখভরা মুখের ভাব দেখে বললেন—শিকারী! তোমার মনে কিসের কষ্ট?

    শিকারী বললে—তা আমি বলতে পারব না। অথচ বলতে আমাকে হবেই।

    রাজুপুত্র বললেন—খুলে বল কী ব্যাপার। আমি তোমায় ক্ষমা করব!

    শিকারী বললে—হায় রাজপুত্র, রাজা আমায় হুকুম দিয়েছেন আপনাকে মেরে ফেলতে।

    শুনে রাজপুত্রের মনে আঘাত লাগল। তিনি বললেন—শিকারী, আমায় বাঁচতে দাও। এই নাও আমার রাজ-পোশক। তোমার কাপড় আমায় দাও।

    শিকারী বললে—বেশ, তা নিন। আমি কিন্তু আপনাকে মারতে পারতাম না।

    তারা পোশাক বদল করে যে যার পথে গেল। শিকারী ফিরে গেল ঘরে। রাজপুত্র ঢুকলেন আরো গভীর বনে।

    কিছুদিন পরে রাজার রাজ্যে তিন গাড়ি সোনা আর হীরে জহরত এসে হাজির ছোট রাজপুত্রের জন্য। যে তিন রাজা ছোট রাজপুত্রের তলোয়ার দিয়ে তাঁদের শত্রুবাহিনীকে শেষ করেছিলেন আর তাঁরা রুটি দিয়ে সারা দেশের লোকের খিদে মিটিয়েছেন, তাঁরা পাঠিয়েছেন।

    বুড়ো রাজা এইসব দেখেশুনে ভাবলেন—ছেলে কি আমার নিরপরাধী? তার হয়তো কোনো দোষই ছিল না। হায়, সে কি আর বেঁচে আছে? আমিই তো তাকে হত্যা করিয়েছি।

    শিকারী এসে বললে—তিনি এখনও বেঁচে আছেন। আপনার হুকুম তামিল করাতে আমার মন কিছুতেই সরেনি। বলে যা-যা হয়েছিল রাজাকে বললে।

    রাজার অন্তর থেকে একটা পাথর নেমে গেল। তিনি যত দেশ আছে সব জায়গায় প্রচার করে দিলেন, তাঁর ছেলে যেন ফিরে আসে। তাকে আবার আদর করে নেওয়া হবে।

    এদিকে রাজকন্যা তাঁর প্রাসাদের সামনে সিং-দরজা পর্যন্ত এক চওড়া রাস্তা তৈরি করালেন। সোনার রঙে রাস্তা জ্বলজ্বল করতে লাগল। তাঁর লোকজনদের বলে দিলেন এ রাস্তা দিয়ে যে একেবারে সোজা চলে আসবে সেই হবে তাঁর বর। তাকে যেন প্রাসাদের মধ্যে নিয়ে আসা হয়। যে রাস্তা না মাড়িয়ে পাশ দিয়ে আসবে সে আসল বর নয়। তাকে যেন ঢুকতে দেওয়া না হয়। এক বছর সময় যখন প্রায় হয়ে এল বড় রাজপুত্র ভাবলেন তিনি এইবার রাজকন্যার কাছে যাবেন। বলবেন তিনিই রাজকন্যাকে উদ্ধার করেছেন। কাজেই রাজকন্যা আর রাজ্য তাঁরই প্রাপ্য। এই ভেবে তিনি ঘোড়ায় চড়ে চললেন। যখন প্রাসাদের সামনে এসে পৌঁছলেন, দেখলেন সামনে এক জ্বলজ্বলে সোনার রাস্তা রয়েছে। তিনি ভাবলেন অমন সুন্দর সোনার উপর দিয়ে ঘোড়া হাঁকিয়ে যাওয়া বড়ই ক্ষোভের কথা। তিনি রাস্তা ছেড়ে তার ডান পাশ দিয়ে ঘোড়া হাঁকিয়ে নিয়ে গেলেন। কিন্তু যখন রাজপুত্র সিং-দরজার কাছে এসে পৌঁছলেন চাকরেরা বললে—আপনি আসল বর নন। ফিরে যান।

    এর কিছু পরেই মেজ রাজপুত্র বেরোলেন রাজকন্যাকে আনতে। তিনি যখন সোনার রাস্তায় এসে পৌঁছলেন, তাঁর ঘোড়া সামনের একটা পা সোনার রাস্তার উপর তুলেছিল কিন্তু তিনি ভাবলেন ঘোড়ার খুরে যদি এর এক টুকরোও ভেঙে যায় তাহলে বড় ক্ষোভের কথা হবে। তাই তিনি সরে গিয়ে রাস্তার বাঁ পাশ দিয়ে ঘোড়া হাঁকিয়ে নিয়ে গেলেন। যেই রাজপুত্র দরজার কাছে পৌঁছলেন, চাকরেরা বললে—আপনি আসল বর নন। বাড়ি ফিরে যান।

    তারপর বছর যখন ফুরিয়ে গেল ছোট রাজপুত্র ভাবলেন এইবার তিনি বন থেকে বেরিয়ে তাঁর রাজকন্যার কাছে যাবেন ; গিয়ে তাঁর দুঃখের কথা ভুলবেন। পথে বেরিয়ে সারাক্ষণ তিনি রাজকন্যার কথা এত ভাবতে লাগলেন যে রাস্তাটা যে সোনার তা তাঁর চোখেই পড়ল না। কাজেই তাঁর ঘোড়া রাস্তার ঠিক মাঝখান দিয়ে টগ্‌বগ্‌ করে চলে গেল সিং-দরজা পর্যন্ত। দরজার কাছে আসতেই দরজা খুলে গেল আর রাজকন্যা মহা আনন্দে তাঁকে কাছে ডেকে নিয়ে বললেন—তিনিই রাজকন্যার উদ্ধারকর্তা আর সেই দেশের প্রভু। মহা ধুমধামে তাঁদের বিয়ে হয়ে গেল।

    বিয়ে চুকলে রাজকন্যা বললেন তিনি খবর পেয়েছেন রাজপুত্রের বাবা তাঁকে ক্ষমা করেছেন—তাঁর জন্যে পথ চেয়ে বসে আছেন। শুনে রাজপুত্র দেশে গেলেন। গিয়ে বাবাকে সব খুলে বললেন। দাদারা কেমন করে তাঁকে ঠকিয়েছেন আর তিনি কেমন করে এতদিন মুখ বুজে ছিলেন সব রাজা শুনলেন। রাজা তাঁদের শাস্তি দেবেন বলে ভাবলেন কিন্তু তারা তখন সমুদ্রে পাড়ি দিচ্ছে। তারা আর কোনদিন ফিরে আসেনি।

    টীকা