Chapter Index

    একদিন এক গৃহস্থ তাঁর স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খেতে বসেছেন, তাঁদের সঙ্গে বসেছেন একজন নিকট বন্ধু। যখন সবাই খাচ্ছে আর ঘড়িতে ঢং ঢং করে বারোটা বাজছে সেই সময় বন্ধু দেখলেন দরজাটা খুলে গেল আর একটি পাঙাস বরণ শিশু বরফের মতো সাদা কাপড় পরে ঘরে এসে ঢুকল। কোনো দিকে না তাকিয়ে কোনো কথা না বলে সে সোজা চলে গেল পাশের ঘরে। একটু পরেই সে বেরিয়ে এল, তারপর কোনোদিকে না চেয়ে ধীর গতিতে বেরিয়ে গেল যে দরজা দিয়ে ঢুকেছিল সেই দরজা দিয়ে। দ্বিতীয় দিনেও ছেলেটি আবার এল গেল আগের মতো। তৃতীয় দিনেও একই ব্যাপার।

    এ ক’দিন এ নিয়ে কোনো কথা বন্ধুটি বলেন নি। কিন্তু তৃতীয় দিনে তিনি জিজ্ঞেস করলেন—ঐ যে ছেলেটি রোজ পাশের ঘরে যায় আবার বেরিয়ে আসে, ও ছেলেটি কার?

    গৃহস্থ বললেন—কই আমি তো কোনো ছেলে দেখিনি? কার ছেলে তা-ও জানি না।

    পরদিন ছেলেটি যখন আবার এলো বন্ধু আঙুল তুলে তার দিকে দেখালেন। কিন্তু গৃহস্থ কিছুই দেখতে পেলেন না। গৃহিণী বা ছেলেমেয়েরাও কিছু দেখতে পেল না।

    বন্ধু খানিকটা অবাক হয়ে উঠে গিয়ে পাশের ঘরের দরজার কাছে দাঁড়ালেন। তারপর দরজাটা একটু খুলে উঁকি মেরে দেখলেন। দেখেন ছেলেটি কাঠের মেঝের উপর হাঁটু গেড়ে বসে কাঠের ফাঁকে ফাঁকে কি যেন খুঁজছে। তাঁকে দেখতে পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটি মিলিয়ে গেল।

    তিনি এসে গৃহস্থকে বললেন সব কথা। ছেলেটিকে কেমন দেখতে তা-ও ভাল করে বলতেই গৃহিণী বললেন—বুঝেছি, এ তো আমারই ছেলে যে এক মাস আগে মারা গেছে।

    সকলে মিলে তখন পাশের ঘরে গিয়ে মেঝের কাঠ ফাঁক করতেই তার তলা থেকে দুটি তামার আধলা বেরিয়ে পড়ল।

    গৃহিণী তখন বললেন—এই আধলা দুটি আমার ছেলেকে দিয়েছিলুম, গরীব দুঃখীকে দেবার জন্যে, মনে আছে।

    ছেলেটি হয়তো বিস্কুট কেনবার জন্যে আধলা দুটি কাঠের ফাঁকে লুকিয়ে রেখেছিল। এই কারণেই কবরের মধ্যে থেকেও সে শান্তি পাচ্ছিল না। তাই প্রতিদিন দুপুর বেলা খুঁজতে আসছে।

    গৃহস্থ তখনই একজন ভিখারীকে ডেকে আধলা দুটি দিয়ে দিলেন। তার পর থেকে আর সেই শিশুটিকে দেখা যায়নি।

    টীকা