বুড়ো ঘোড়া
ব্রাদার্স গ্রিম দ্বারাবুড়ো ঘোড়া
এক চাষীর এক বিশ্বাসী ঘোড়া ছিল। ঘোড়াটি যখন বুড়ো হয়ে পড়ল সে আর তার প্রভুর কোনো সেবা করতে পারল না। চাষীও তাই তাকে খাবার দেওয়া বন্ধ করে দিয়ে বললে— তোমাকে আর আমার দরকার নেই। তোমায় দিয়ে কোনো কাজ হয় না। তবে, তুমি যদি দেখাতে পারো যো তোমার গায়ে জোর আছে, যদি একটা সিংহ ধরে আনতে পারো, তাহলে তুমি যতদিন বাঁচো, তোমায় খাওয়াবো। এখন আমার আস্তাবল ছেড়ে বেরোও, মাঠে গিয়ে বাসা বাঁধো গে।
মনে ভারি দুঃখ নিয়ে ঘোড়াটি ঘুরতে ঘুরতে এক বনের ধারে এসে হাজির হল। ভাবলে এইখানেই ঝড় বৃষ্টি থেকে বাঁচবার জন্যে কোনো গাছের তলায় গিয়ে আশ্রয় নিই।
এক শেয়াল এসে বললে— বন্ধু, অমন ঘাড় নিচু করে মনের দুঃখে চলেছ কোথায়?
ঘোড়া জবাব দিলে — লোভ আর বিশ্বাস এক বাড়িতে একসঙ্গে থাকতে পারে না। আমার প্রভু আজ ভুলে গেছেন কত বছর আমি তাঁর সেবা করেছি, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পিঠে করে নির্বিঘ্নে পৌঁছে দিয়েছি। আজ লাঙল টানতে পারি না বলে খাবার বন্ধ করে তিনি আমায় তাড়িয়ে দিয়েছেন।
—একটি মিষ্টি কথাও বলেন নি?
—মিষ্টি কথা? যা বলেছেন তার কোনো মানে হয় না। তিনি বলেছেন, আমার গায়ে যদি সিংহ ধরে আনবার জোর থাকে তাহলে তিনি আমাকে আবার ঘরে রাখবেন, খেতে দেবেন। তিনি ভালো করেই জানেন যে এ আমার পক্ষে অসম্ভব।
শেয়াল বললে—দেখ ভাই ঘোড়া—নিরুৎসাহ হোয়ো না। আমি তোমায় সাহায্য করব। এইখানে চার পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়— যাতে মনে হয় যে তুমি মরেই গেছ। একটুও নোড়ো না।
শেয়াল যেমন বললে ঘোড়াও তাই করলে। কাছেই এক সিংহের গাড়া ছিল। শেয়াল সেখানে গিয়ে সিংহকে বললে— মহারাজ, কাছেই একটি মরা ঘোড়া পড়ে রয়েছে। আমার সঙ্গে আসুন আমি দেখিয়ে দেব, আপনার ভূরিভোজন হবে।
সিংহ তার সঙ্গে চলল। সেই জায়গায় পৌঁছে শেয়াল বললে —এখানে আপনি আরাম করে খেতে পারবেন না। এক কাজ করুন। আপনার ল্যাজে আমি ঘোড়াটাকে বেঁধে দিই। আপনি ওটাকে টেনে নিয়ে গিয়ে আপনার গাড়ার মধ্যেই বেশ নিশ্চিন্ত মনে রয়ে বসে খেতে পারবেন।
পরামর্শ শুনে সিংহ খুশি হল। ঘোড়ার কাছে গিয়ে সে পিছন ফিরে চুপটি করে দাঁড়ালো আর শেয়াল বেশ শক্ত করে তার ল্যাজের সঙ্গে দড়ি বেঁধে দিল। ল্যাজে দড়ি বাঁধতে গিয়ে শেয়াল কায়দা করে সিংহের পায়ে দড়িটা এমনভাবে জড়িয়ে দিল যে সিংহের আর পা নাড়ানোর ক্ষমতা রইল না। দড়ি বাঁধা শেষ হলে শেয়াল ঘোড়ার কাঁধ চাপড়ে বললে উঠে পড় বুড়ো, উঠে দাঁড়াও।
বলতেই ঘোড়া লাফিয়ে উঠল আর জোর কদমে দৌড় দিল সিংহকে টানতে টানতে। বনের মধ্য দিয়ে যখন তারা ছুটে চলেছে, সিংহ গর্জন শুরু করল। এমনই তার গর্জন যে গাছের যত পাখি ভয়ে উড়ে পালালো। কিন্তু ঘোড়া তাতে কান না দিয়ে খেতের উপর দিয়ে, মাঠের উপর দিয়ে তাকে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে তার প্রভুর বাড়ির দরজায় এনে ফেললে। চাষী দেখে আশ্চর্য হয়ে গেল। সে বললে— আমি যা চেয়েছিলুম তা যখন তুমি করলে, এবার থেকে তুমি আমার কাছেই থাকবে, আর যতদিন বেঁচে থাকবে দানাপানি আর আস্তাবল পাবে।