খবর আসে!
    দিগ্‌দিগন্ত থেকে বিদ্যুদ্‌বাহিনী খবর;
    যুদ্ধ, বিদ্রোহ, বন্যা, দুর্ভিক্ষ ঝড়
    —এখানে সাংবাদিকতার নৈশ নৈঃশব্দ্য।
    রাত গভীর হয় যন্ত্রের ঝঙ্কৃত ছন্দে- প্রকাশের ব্যগ্রতায়;
    তোমাদের জীবনে যখন নিদ্রাভিভুত মধ্যরাত্রি
    চোখে স্বপ্ন আর ঘরে অন্ধকার।
    অতল অদৃশ্য কথার সমুদ্র থেকে নিঃশব্দ শব্দেরা উঠে আসে;
    অভস্ত হাতে খবর সাজাই-
    ভাষা থেকে ভাষান্তর করতে কখনো চমকে উঠি,
    দেখি যুগ থেকে যুগান্তর।
    কখনো হাত কেঁপে ওঠে খবর দিতে ;
    বাইশে শ্রাবণ, বাইশে জুনে।

    তোমাদের ঘুমের অন্ধকার পথ বেয়ে
    খবর-পরীরা এখানে আসে তোমাদের আগে,
    তাদের পেয়ে কখনো কণ্ঠে নামে ব্যথা, কখনো বা আসে গান ;
    সকালে দিনের আলোয় যখন তোমাদের কাছে তারা পৌঁছোয়
    তখন আমাদের চোখে তাদের ডানা ঝরে গেছে।
    তোমরা খবর পাও,
    শুধু খবর রাখো না কারো বিনিদ্র চোখ আর উৎকর্ণ কানের।
    ঐ কম্পোজিটর কি কখনো চমকে ওঠে নিখুঁত যান্ত্রিকতার কোনো ফাঁকে?

    পুরনো ভাঙা চশমায় ঝাপসা মনে হয় পৃথিবী
    ৯ই আগস্টে কি আসাম সীমান্ত আক্রমণে?
    জ্বলে ওঠে কি স্তালিনগ্রাদের প্রতিরোধে, মহাত্মাজীর মুক্তিতে,
    প্যারিসের অভ্যুত্থানে?
    দুঃসংবাদকে মনে হয় না কি
    কালো অক্ষরের পরিচ্ছদে শোকযাত্রা?
    যে খবর প্রাণের পক্ষপাতিত্বে অভিষিক্ত
    আত্মপ্রকাশ করে নাকি বড় হরফের সম্মানে?
    এ প্রশ্ন অব্যক্ত অনুচ্চারিত থাকে
    ভোরবেলাকার কাগজের পরিচ্ছন্ন ভাঁজে ভাঁজে।

    শুদু আমরা দৈনন্দিন ইতিহাস লিখি!

    তবু ইতিহাস মনে রাখবে না আমাদের-
    কে আর মনে রাখে নবান্নের দিনে কাটা দানের গুচ্ছকে?
    কিন্তু মনে রেখো তোমাদের আগেই আমরা খবর পাই
    মদ্যরাত্রির অন্ধকারে
    তোমাদের তন্দ্রার অগোচরেও।
    তাই তোমাদের আগেই খবর-পরীরা এসেছে আমাদের
    চেতনার পথ বেয়ে।

    আমার হৃদ্‌যন্ত্রে ঘা লেগে বেজে উঠেছে কয়েকটি কথা-
    পৃথিবী মুক্ত- জনগণ চূড়ান্ত সংগ্রামে জয়ী।
    তোমাদের ঘরে আজো অন্ধকার, চোখে স্বপ্ন।
    কিন্তু জানি একদিন সে সকাল আসবেই
    যেদিন এই খবর পাবে প্রত্যেকের চোখেমুখে
    সকালের আলোয়, ঘাসে ঘাসে পাতায় পাতায়।

    আজ তোমরা এখনো ঘুমে।।

    টীকা