প্রলাপ লিখন
জয় গোস্বামী দ্বারাপ্রলাপ লিখন
[‘আমাদেরও বুকে আজ জমেছে আগুনভরা জল’]
শোনো এ দীনের বাণী, কবিতা কল্পনালতা শোনোথুতু ও বন্ধুর রক্তে জীবন কাটায় প্রভুদাসজীবন জীবনব্যাপী মজুরী যোগাড় হেরাফেরীটেংরি নাই, জুস নাই,কাঁহা কুচ্ছু নাই,নীলাচলেখাটতে খাটতে জান নিকলে যায়, তবু দম দেওয়া পুতুলপিছনে পিছনে ছোটে, ঘণ্টি মারে:‘হো নও জোয়ান!’
পরমুখাপেক্ষী দিন, কালো সূত্রপাত, মুখনাড়া—হয়ত প্রকাশ্য নয়, ভিক্ষা তবু, হাতপাতা তবুএকদিন একদিন ক’রে ঋণ যায় দানের মকুবেঅমানী অক্রোধী দিন, অপ্রবাসী ভাড়ার বাড়িতেপিছনে উচ্ছেদপত্র, দুয়ারে প্রস্তুত ঠেলাগাড়িতবুও ছপ্পর ফুঁড়ে প্রেম আসে গরীবের বাড়ি
কে বলে তেমন মাঞ্জা দিলে হাত দুনিয়াদারীতেছ’ড়ে যায়⋯ বাচ্চালোগ, লাগাও আর এক দফা তালিদুপুরে বাজার বন্ধ, বন্ধ বাজারের কলে চানমস্তান মস্তান খেলা—পুলিশের জীপ হয়ে ছোটোছেঁড়া হাফপ্যান্ট, মুখে হর্ণ দাও পিপি-ই-প পিপি-ই-পগলায় ধুকধুকি, চলো বাবুলাল মটুয়া ধনিয়া⋯
নৈরাত্ম্যরীতির সিদ্ধি, ‘হায়, কী যে করি মন নিয়া।’শ্রম, বোঝো? পরিশ্রম? ঘাপ বোঝো রোজগার করার?জনার্দন ডাক্তারের বাড়ি বোঝো? বাঁয়ে মনোহারীদোকান ও দোকানীর সেই মনোহারিণী কন্যাকে?বোঝো তুমি এ বিকেলে কনে দ্যাখা আলো কে সাজালো?তোমার বোঝার ’পরে শাকের আঁটি তুলে দেওয়া ভালো
সবই তো ধুলার খেলা, সমস্তই জিলিপির প্যাঁচচন্দ্রকিরণের কথা লিখে হদ্দ হয়েছে চকোরকেমন কাজলরেখা, কীরকম জুতোর ঠোক্করহৃদয়ে, পুঁজির পাতে, পথমাঝে, বেশ্যার গলিতেসবই লিপিবদ্ধ আছে তবে কোন মালায় ছিলামবাজে নূতনের বীণা, গুরুদেব, বিভাসে ললিতে
একদা কী জানি কোন পুণ্যফল ব্যাঘাত ঘটালোদিনগুলি যেতে চাইলো বন্দেমাতরম গেয়ে ফাঁসিকে ধারো কাহার কড়ি? কে প্রাণ কাঁদাও হাজারবার?কে গান অর্ধেক গেয়ে বন্ধ হও? চোখ বুজে চলো কে?ধাক্কা খাও না? প’ড়ে যাও না? হতাহত হও না খবরে?নাকি হও? ফাঁসি যাও? ঘুরে আসো চোখের পলকে?
∫∫ ২ ∫∫শোনো এ দীনের বাণী, কবিতা কল্পনালতা শোনোছাই আর ক্ষুধামান্দ্য, ছন্দ আর নিঃশ্বাসগোধূলিদোকান আর নোংরা ফুল, জালা আর টিনের গেলাসচা আর চায়ের ভাঁড়, ভাঁড় ভাঙলে মালিকের চড়সাট্টা আর তাসবংশ, পয়সা আর পয়সার জোরশুঁড়ি ও শুঁড়ির সাক্ষ্য, জ্ঞান গোঁসাই, ‘যামিনী বিভোর⋯’অথচ ভিত্তির কথা এখনো তো শুরুই করিনিএ অবধি প্রারম্ভিক জলঘোলা, জুতো চুরি করাএ অবধি খেই ধরা, খেই হারানো, সেই ন্যাকড়াবাজিসাক্ষ্যপ্রমাণাদি লোপ, এবং বহুবিবাহে রাজিএ অবধি আবশ্যিক, তুলকালাম সমষ্টিচেতনাএরপর বাণীশিল্প, এরপরই তীরে ডোবা তরীএখান থেকেই কিন্তু গোলাবে, গুলিয়ে দেবে সবকাচের জানেলা ’পরে গাল রাখবে রাতপড়োশিনীভেবে কত ফুর্তি হলো দ্যাখো এই ‘জানেলা’ কথাটি—ভেসে যাক যমুনায় প্রীতি-বই-কাগজ-কলমতুলবো না—পায়ের তলার থেকে পা রাখার জমিকেড়ে নিয়ে যায় যাক, আটকাবো না, আমি এরকমইসেদিন পলক ফেলতে ভুলে গ্যাছো সন্ধ্যামণিফুলসেদিন আমার প্রতি ভেসে এলো চোখের পাতাটিঅসম্ভব তাকিয়েছো। এ-বাজারে সে-চাওয়ার দামকে বা দেবে? এ ভুবনে যে-চুম্বন আজো ওষ্ঠহারাকে তাকে নিজের ঠোঁট পেতে বলবে—‘এ নাও, ছোঁয়াও!’কে তাকে সর্বস্ব দেবে বিনাশর্তে?—হে অঝোরধারামেঘে উঠে কে দেখাবে অন্ধকার মেঘে ঢাকা তারা?বস্তুপিণ্ড ক্ষয় হয়। মনপিণ্ড? গা বমি, গা বমি⋯প্রণয়বঞ্চিতা সেই তরুণীর জন্য এ জীবনেকরার কী আছে আর ফিরতি ট্রেনে তুলে দেওয়া ছাড়া?‘জায়গা আছে, বসে পড়ুন’—এই ব’লে নিশ্চিন্ত হওয়া ছাড়া?‘না, আর লিখবেন না চিঠি, যোগাযোগ করবেন না আর!’এইটুকু বলা ছাড়া, বলো বলো, কী আছে করার?বস্তুপিণ্ড ক্ষয়শীল। মনপিণ্ড গা বমি গা বমি।পরমুখাপেক্ষী দিন, অপরে নির্ভরশীল বেলাবয়ে যায়, চেপে বসে, ঘণ্টি মারে, পরিচিতি দেয়—প্রভুদাস নাম নিয়ে সর্বজনসমক্ষে দাঁড়ায়ক্রোধ। প্রতিশোধ। ক্রোধ—মধ্যিখানে এক অস্ত্রহীনভ্যাবলা বসে থাকে, তার মুখ চাটে সোনার হরিণ⋯জনকজননী হাওয়া, বয়ে এসো, সে-চোখ মুছাওযে-চোখ চোখের জল কী জিনিস ভুলে গ্যাছে তাওজনকজননী মেঘ, ছায়া করো পড়োশির বাড়িছায়া করো পাড়াময়, পাশাপাশি আমার ছাদেওদুদণ্ড দাঁড়িয়ে যেও, বেশিক্ষণ থাকতে বলবো না⋯আর যদি বৃষ্টি দিতে মন করো—(সে ভাগ্য আমারহবে কি না জানি না তা)—সবাইকে যা দেবে তা-ই দিওআমি তো নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু বুঝি না বিবেকআমাকে স্বার্থই দিও। বারবার হাত পাততে আরভালো লাগে না। খারাপ শোনাচ্ছে বুঝি? বেশ তবে, বেশ—একদিন আমিও পাবো, বন্ধুগণ,টিফিনেসন্দেশ!
∫∫ ৩ ∫∫যেন স্বপ্নে ভেসে এলো : ‘আরেকবার শোনালেই তো হয়।’কী শোনাবো? কী শোনাবো? গলা কাঁপছে কবিতা জানাতে,তখনো দেখিনি ভালো—অন্ধকার ঘরে মোমবাতিবসালো, আড়াল করলো, যাতে চোখে না লাগে আমার।নিয়তি প্রস্তুত ছিলো, আলো এলে কী হলো জানি না—এমন নদীর নামে, এমনই নদীর নামে নামবাঁধ রাখা অসম্ভব, বহুদূর ভেসে গেছিলাম!আজো সেই ভেসে যাওয়া, সেই তীব্র ডুবে মরবারস্মৃতি সে আঘাতপ্রাপ্ত মেঘমধ্যে প্রথম বিদ্যুৎস্মৃতি সে ইস্কুলগামী ছেলেটির পথিমধ্যে থেমেগুলিখেলা দ্যাখা, আর খেলা? সে তো এক বাজিকরবুক অব্দি মাটিতে পুঁতে শূন্যে শুধু দুই পা সাঁতরানো⋯এখনো ভুলিনি আমি, এখনো ভুলিনি কিছু, জানো?
∫∫ ৪ ∫∫যখন বিষাদময় দীপখানি সহনশীলারহাতের যত্নটি পায়, হে সঞ্চয়, সকল কলুষহয় পরিষ্কার, যবে তামস হরণ করে গানজ্বলে ওঠে সেজবাতি, সেজে ওঠে মদের দোকান—ও মোহর, ঝনৎকার, একদিন রূপোর ঘড়াটিনিজে নিজে উল্টে ফ্যালো, বিনামূল্যে গড়াও মাটিতে,এসেছে সুখের বার্তা, তোমাকে নিলাম করে দিতেআমি তো বিশ্বাস করি এইসব ডাক, পাল্টা ডাকঅবশ্য ভ্রূক্ষেপযোগ্য সাড়া যায় দূর দূর দেশছুটন্ত বাতাস পাই চুলে ভ’রে ওঠা বালুকণাএ হাত স্মরণযোগ্য স্পর্শ লেখো মাটির পাতায়পাতাও মাটির থেকে উড়ে যায় নদীপারে বনবনে সদ্জন্তু থাকে, উদ্গ্রীব, কর্তব্যপরায়ণআমি তো কর্তব্য করি নব নব গান বিক্রি ক’রেআমি তো কর্তব্য করি জলে ছেড়ে দিয়ে জলঢোঁড়াপুকুর কাটালে যত মাটি ওঠে, তা দিয়ে তো আমিউনুন বানিয়ে দিই গ্রামে গ্রামে, কাঠ না থাকে তোকাঠি আনি খুঁজে খুঁজে, ফুঁ লাগাই ধোঁয়া অশ্রুজলে⋯তুমি খুশি ফুটিয়েছো, ধন্যবাদ জানাবো কী ব’লে!লগন যাবে না বৃথা। চাপ, ধাক্কা, রাগ, গুপ্তচোটঝাপটাবে, জখম করবে, আয়ু খেয়ে রক্ত ফেলে যাবেবাগিচায়। গুমরে উঠবে। তবু বৃথা যাবে না লগন।আমি বলছি, বৃষ্টিপাত, ভালো লোক হই বা না হইব্রাহ্মণ, ভিক্ষান্নে বাঁচি, জেনে শুনে মিথ্যেবাদী নইআমি বলছি ভালো হবে, কালো মেয়ে, ভালো হবে তোরঅন্ধকার কৃতকাজ, ভয়াবহ আত্মসমর্পণ,তোমার কে ভালো করবে? নিশিকন্যা? জলের বনিতা?মাদক? জ্বরের বড়ি? টোট্কা? তাগা? ফুল? না পাথ্থর?অন্ধকার কৃতকাজ, দৃশ্যে দৃশ্যে, স্থানে, কালে কালেতোমার চরিত্রপাত্র বসিয়ে দিলে বলিহারি হবেধিক্কার কুড়োবে তুমি, ছিছিক্কার সহাস্যে কুড়োবে!তাহলে ভিত্তির কথা বলবার কী অধিকার আছেআমার?—যে-আমি ত্রস্ত, ভিনদেশীয়, ভ্রষ্ট, খানচুর?সকল তর্কের ঊর্ধ্বে ব্যাধিকষ্ট, সকল প্রশ্নেরনিম্নে বহমান স্রোতে উল্টে পাল্টে চূর্ণিত মস্তক⋯শরীর, হাড়গোড় ভাঙা ‘দ’-এর শরীরে প্রতিরোধনেই—শুধু সহ্য করে ক্রোধ, সুস্থসবলের ক্রোধ!
∫∫ ৫ ∫∫মূল ক্রোধ, স্বপ্ন পাও? সমুদ্রে অপেক্ষমাণ হাড়?গলগ্রহ, স্বপ্ন পাও? অযত্নে বসানো খাদ্যথালা?হে ডাল, পরাস্ত রুটি, বুড়ো লঙ্কা, হে নুনবিহীনস্বাদসহিষ্ণুতা, নাও ভেবে নাও একছিটে আচারযা তুমি কখনো খাওনি চিন্তা করো সেইসব খাওয়া—জলের উপরে উঠবে শক্ত কবজি, খোবলানো হাতনা, আমি চল্লিশ পেলে তুমি কেন বিয়াল্লিশ পাবে?না, আমি আঠেরো পেলে তুমি কুড়ি পেতেই পারো না!না, আমি সহস্র পেলে তুমি থাকবে সেই সহস্রেরঅন্তত একদাগ নিচে, নইলে সম্পর্ক ভেঙে যাবেতে-রাত্তিরে ছিঁড়ে যাবে নারীপুরুষের যৌনসুতো—রক্ত পড়বে। তখন কি ‘পানপাতা মুছে নেবে গাল?’রাজন, মার্জনা করো, আশ্রয়ের সন্ধানে এসেছি।(তোমাকে বিদ্রূপ করলে জেনো এই জিভে কুষ্ঠ হবে)এসেছি রাজার কাছে গণ্ডারের পুরু চামড়া নিয়েএসেছি তোমাকে দিয়ে ‘হ্যাঁ’ বলিয়ে নিতে বারংবারএসেছি নিজের মাথা জলে ঠুকে, পাথরে ভাসিয়েএসেছি বিদীর্ণ পেট, লোক হাসাতে, নাড়িভুঁড়ি ফাঁসিয়েএসেছি পিঁপড়ের মতো, পাখা উঠবে বলে একদিনআগুনের কুণ্ডে ঢুকবো উড়ে যাবো অগ্নি মুখে নিয়েবিচুলির স্তূপ, আর, পেট্রলের ট্যাঙ্ক, বারুদেরপিপে, মণ্ডা, মিঠাই, ঘি, নোট, মুদ্রা, শব কিংবা খুনসবকিছুর মধ্যে যাবো বেরিয়ে আসবো শেষে একদিনআকাশ পাখায় ঢাকা⋯পাক মারছে সমুদ্রশকুন⋯হে চেষ্টা, মরীয়া হও, নরকের নদীকে চুমুকেপান করো, ভুলে যাও কভু পান করেছিলে কিনাহে, ছিলা, কান অবদি এসো, ক্ষমতার সীমাকে ছাড়াওধনুর্বিদ্যা ভুল নয় নিজেকে নিক্ষেপ করো আজোজলে, স্থলে, অন্তঃরীক্ষে⋯হে অপদেবতা সাজো সাজো।
∫∫ ৬∫∫পেখম দ্যাখাচ্ছো বলে, ও ময়ূর, মেজাজ নিও নাএখনো তো বাকি আছে মেঘে মেঘে সারা বর্ষাকালবাকি আছে বলপ্রয়োগ, পুজো-আচ্চা উচ্চাশাপূরণ।কুর্নিশ লুটাতে থাকো, পট থেকে চিত্রস্থ দেবতানেমে এসে সামরিক অভিবাদন নিয়ে উঠে যাবেথেকে যাবে পোড়া ধোঁয়া, সফলতা রণ-রক্ত-রণনিজেদের মধ্যে শুধু ল’ড়ে মরবে কয়েকটি বামনএই নীলাঞ্জনছায়া, এই রক্ত-মসল্লা-প্রকৃতিএই উর্দি, টুপি এই, আর এই সশস্ত্র বনাঞ্চলএই জল, মাটি এই, মাটি আর জলে মিশে থাকাঅতীত জীবদেহ সব, মেঘ ও বিদ্যুতে ভেসে থাকাসমস্ত আগামী প্রাণ, হে ধারণ, হে দায়িত্বভারবাসায় বাসায় করো পক্ষিণীকে ডিমের আব্দার!প্রতিভা, আপদমাত্র পদে পদে অসুবিধাকারীপ্রতিভা, আকুল খেলনা, যথাযোগ্য গ্রাহক পেলে না?উড়াল নির্বিঘ্নে ঘটলো, খাসা হলো শোভা নিরীক্ষণনামার সময়ে দেখলে সে-অবতরণক্ষেত্রে জলপ্রতিভা, বেরিয়ে পড়ো ঝাড়া-হাত-পা পথিক আর পথ—তৃপ্ত থাকবে না আর খণ্ড কবিতায় ভবিষ্যৎ—‘জীবন, মহাকবিতা, তিক্ত অতিরিক্ত স্বপ্ন শ্লেষেলিখিত হয়েই আছে, যাও তুমি উদ্ধার করো পাঠ।’—‘কে, তুমি কে অসম্ভব প্রজাতির গাছ, যে এখনোজেগে আছো একাধিক বজ্রপাত ধারণ করেও?—’—‘যদি, আজো ডাক দাও বসন্তে বসন্তে জলঝারিসাড়া দিতে পারি আমি, অবিশ্বাস্য সাড়া দিতে পারি!’প্রলাপ, হে হাস্যাস্পদ, অর্থ ভেঙে দাও পদে পদেপ্রলাপ, শৃঙ্খলমুক্ত, প্রথা ছিন্ন আপদে বিপদেপ্রলাপ, তরুণ পান্থ, সমাজ সংসারে মারো থুকযে সমাজ রাণ্ডিখানা, যে সংসার আদ্যন্ত মিথ্যুকপ্রলাপ, হে প্রাণবায়ু, ঠোক্করে ঠোক্করে স্বতঃশ্চলবলো, উড়ে চল্ পালকি, এ মহাগগনে উড়ে চল্
∫∫৭ ∫∫উড়ে চলো জংলী ফুল, উড়ে চলো কাঙালের পথউড়ে চলো ব্যাট উইকেট, উড়ে চলো অন্ধ দাদুভাইউড়ে চলো বর বউ, কোল আলো করা খোকাখুকুউড়ে চলো সোনামণি নর্দমায় ফেলে দেওয়া ভ্রূণউড়ে চলো ডোবা নৌকো, মাছে খাওয়া অভিযাত্রীদলউড়ে চলো সে-মেয়েটি যে-মেয়ের প্রেম ভেঙে গ্যাছেউড়ে চলো মলিপিসি, উড়ে চলো বুড়িদি, বীণাদিউড়ে চলো রত্না দাস, গলা থেকে উগরে ফলিডলযাদের মিলন হয়নি, ও যার মিলন থেমে আছেও যার মিলন হবে উজাড় মিলন উড়ে চলোউড়ে চলো আবর্জনা, ষত ব্যর্থ প্রাণসংকলনচলো অগ্নিধূলিকণা, উড়ে চলো অব্যর্থ জীবন
∫∫৮∫∫আমি নেমে চললাম অন্ধকার সমুদ্রের নিচেআমি নেমে চললাম পৃথিবীর উদরগহ্বরেআমার ধমনীগুলি কেটে কেটে বসানো হয়েছেশহরের পেটে, আর, শিরাগুলি উপশিরাগুলিহাজার কিলোমিটার ছুটে যাওয়া হাইওয়ের তলায়চালানো হয়েছে রক্ত নিষ্কাশন করবার কাজেআজ আমি এগিয়ে যাচ্ছি সমুদ্রের অতলে অতলজলস্তর; শিলাস্তর, লোহাস্তর—তারও কত নিচেগুঁড়ি মেরে এগিয়ে যাচ্ছি উদরগহ্বরে পৃথিবীরপিঠের উপরে নিয়ে সঞ্চরণশীল মহাদেশপিঠের উপরে নিয়ে দিনরাত্রিময় মহাদেশপিঠের উপরে নিয়ে হাজার হাজার অধিবাসী⋯