রবিদাস চামার ঝাঁট দেয় ধুলো।    সজন রাজপথ বিজন তার কাছে,        পথিকেরা চলে তার স্পর্শ বাঁচিয়ে।গুরু রামানন্দ প্রাতঃস্নান সেরে           চলেছেন দেবালয়ের পথে,দূর থেকে রবিদাস প্রণাম করল তাঁকে,        ধুলায় ঠেকালো মাথা।    রামানন্দ শুধালেন, “বন্ধু, কে তুমি।’উত্তর পেলেন, “আমি শুক্‌নো ধুলো–    প্রভু, তুমি আকাশের মেঘ,           ঝরে যদি তোমার প্রেমের ধারা        গান গেয়ে উঠবে বোবা ধুলো               রঙ-বেরঙের ফুলে।’    রামানন্দ নিলেন তাকে বুকে,               দিলেন তাকে প্রেম।      রবিদাসের প্রাণের কুঞ্জবনে               লাগল যেন গীতবসন্তের হাওয়া। চিতোরের রাণী, ঝালি তাঁর নাম।        গান পৌঁছল কানে,    তাঁর মন করে দিল উদাস!        ঘরের কাজে মাঝে মাঝে           দু চোখ দিয়ে জল পড়ে ঝ’রে।        মান গেল তাঁর কোথায় ভেসে।           রবিদাস চামারের কাছে        হরিপ্রেমের দীক্ষা নিলেন রাজরানী।           স্মৃতিশিরোমণি               রাজকুলের বৃদ্ধ পুরোহিতবললে, “ধিক্‌ মহারানী, ধিক্‌।                   জাতিতে অন্ত্যজ রবিদাস,               ফেরে পথে পথে, ঝাঁট দেয় ধুলো,                   তাকে তুমি প্রণাম করলে গুরু ব’লে–                       ব্রাহ্মণের হেঁট হল মাথা                           এ রাজ্যে তোমার।’ রানী বললেন, “ঠাকুর, শোনো তবে,        আচারের হাজার গ্রন্থি    দিনরাত্রি বাঁধ কেবল শক্ত করে–           প্রেমের সোনা কখন পড়ল খসে               জানতে পার নি তা।        আমার ধুলোমাখা গুরু               ধুলোর থেকে কুড়িয়ে পেয়েছে।    অর্থহারা বাঁধনগুলোর গর্বে, ঠাকুর,               থাকো তুমি কঠিন হয়ে।    আমি সোনার কাঙালিনী               ধুলোর সে দান নিলেম মাথায় করে।’

    টীকা