কুশাসনে ইন্দ্রজিৎ পূজে ইষ্টদেবে
    নিভৃতে; কৌশিক বস্ত্র,কৌশিক উত্তরি,
    চন্দনের ফোঁটা ভালে, ফুলমালা গলে।
    পুড়ে ধূপ দানে ধূপ; জ্বলিছে চৌদিকে
    পুত ঘৃতরসে দীপ; পুস্প রাশি রাশি,
    গন্ডারের শৃঙ্গে গড়া কোষা কোষী, ভরা
    হে জাহ্নবি, তব জলে, কলুষনাশিনী
    তুমি; পাশে হেম-ঘন্টা, উপহার নানা
    হেমপাত্রে ; রুদ্ধ দ্বার ;— বসেছে একাকী
    যমদূত, ভীমবাহু লক্ষণ পশিলা
    মায়াবলে দেবালয়ে। ঝনঝনিল অসি
    পিধানে,ধ্বনিল বাজি তুণীর-ফলকে,
    কাঁপিল মন্দির ঘন বীরপদভরে।
    চমকি মুদিত আঁখি মিলিলা রাবণি।
    দেখিলা সম্মুখে বলী দেবকৃতি রথী—
    তেজস্বী মধ্যাহ্নে যথা দেব অংশুমালী ;
    সাষ্টাঙ্গে প্রণমি শূর, কৃতাঞ্জলিপুটে,
    কহিলা “হে বিভাবসু, শুভক্ষণে আজি
    পূজিল তোমারে দাস, তেঁই, প্রভু, তুমি
    পবিত্রিলা লঙ্কাপুরী ও পদ-অর্পণে;
    কিন্তু কি কারণে,কহ, তেজস্বি, আইলা
    রক্ষঃকুলরিপু নর লক্ষণের রূপে
    প্রসাদিতে এ অধীনে ? এ কি লীলা তব,
    প্রভাময় ?” পুনঃ বলী নমিলা ভূতলে।
    উত্তরিলা বীরদর্পে রৌদ্র দাশরথি ;—
    ” নহি বিভাবসু আমি, দেখ নিরখিয়া,
    রাবণি; লক্ষণ নাম, জন্ম রঘুকুলে;
    সংহারিত, বীরসিংহ, তোমায় সংগ্রামে
    আগমন হেথা মম ; দেহ রণ মোরে
    অবিলম্বে।” যথা পথে সহসা হেরিলে
    ঊর্দ্ধফণা ফণীশ্বরে, ত্রাসে হীনগতি
    পথিক, চাহিলা বলী লক্ষণের পানে
    সভয় হইল আজি ভয়শূ্ন্য হিয়া;
    প্রচন্ড উত্তাপে পিন্ড হায় রে গলিল;
    গ্রাসিল মিহিরে রাহু, সহসা আঁধারি
    তেজপুঞ্জ ;অম্বুনাথে নিদাঘ শুষিল;
    পশিল কৌশলে কলি নলের শরীরে;
    বিস্ময়ে কহিলা শূর, “সত্য যদি তুমি
    রামানুজ,কহ,রথি,কি ছলে পশিলা
    রক্ষোরাজপুরে আজি ? রক্ষঃ শত শত,
    যক্ষপতিত্রাস বলে, ভীম-অস্ত্রপাণি,
    রক্ষিছে নগরদ্বার;শৃঙ্গধরসম
    এ পুর-প্রাচীর উচ্চ ;—প্রাচীর উপরে

    টীকা