Chapter Index

    কিন্তু বিস্ময়ের তখনো আরও বাকী ছিল।
    কিরীটী মৃতদেহটা ওল্টাতে অস্ফুটে বলে ওঠে, এ কে? এ কে?
    কে! ঝুঁকে পড়েন মিঃ রামিয়া।
    এ তো মিঃ ডিবরাজ নয়!
    তাই তো!
    কৃষ্ণান, দেখ তো এঁকে চিনতে পার কিনা—দেখেছো আগে কখনো কিনা?
    কিরীটীর ডাকে কৃষ্ণান দরজার গোড়া থেকে এগিয়ে এসে মৃতদেহের প্রতি দৃষ্টিপাত করেই অধস্ফুট কণ্ঠে বললে, এ যে সেক্রেটারি সাহেব।
    রাজীবলোচন?
    জী।
    হঠাৎ কিরীটীর কি মনে হয়। সে মিঃ রামিয়াকে বলে, মিঃ রামিয়া, মিঃ ডিবরাজের অফিস কোথায় জানেন?
    জানি।
    Quick! এখুনি সেখানে চলে যান—গিয়েই আমাকে জানাবেন মিঃ ডিবরাজ সেখানে আছেন কিনা—
    রামিয়া দ্রুতপদে বের হয়ে গেলেন।
    কিরীটী মৃতের মুখের দিকে তখনও তাকিয়ে আছে। মুখখানা যেন ফ্যাকাশে, একবিন্দু রক্ত নেই কোথাও বলে মনে হয়। মুখটা সামান্য যা করা, কশ দিয়ে রক্তের লালা গড়িয়ে পড়ছে, চক্ষু দুটি বিস্ফারিত।
    কিরীটী ঘর থেকে বের হয়ে কৃষ্ণার কাছে যায়।
    কৃষ্ণা!
    কৃষ্ণা তখনও কাদছিল। মুখ তুলে তাকাল কিরীটীর ডাকে।
    ও মৃতদেহটা তো মিঃ ডিবরাজের নয়!
    নয়?
    না।
    তবে কার?
    সেক্রেটারী রাজীবলোচনের—
    তবে ড্যাডি-ড্যাড়ি কোথায়?
    জানি না। মিঃ রামিয়াকে পাঠিয়েছি তার অফিসে খোঁজ নিতে।
    আমি যাব—
    বসুন, ব্যস্ত হবেন না, ব্যস্ত হয়ে কোন লাভ নেই, কারণ আমার সন্দেহ হচ্ছে—
    কি-কি আপনার সন্দেহ হচ্ছে মিঃ রায়?
    তাকে হয়ত তার অফিসেও পাওয়া যাবে না।
    পাওয়া যাবে না?
    সম্ভবতঃ। Still hope for the best!
    ঠিক তাই।
    ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই মিঃ রামিয়া ফিরে এলেন, বললেন, না, অফিস-ঘরে আলো জ্বলছে, অফিস খোলা, ঘরের দরজায় বেয়ারাটা মরে পড়ে আছে-মিঃ ডিবরাজ অফিসে নেই, আর এই পোশাকগুলো সেখানে পেয়েছি-একটা প্যান্ট, একটা কোট।
    হুঁ।
    কি ব্যাপার বলুন তো মিঃ রায়? মিঃ ডিবরাজ কোথায় গেলেন?
    খুব সম্ভবতঃ হলুদ শয়তানের খপ্পরে-তার হাতেই এখন তিনি।
    হলুদ শয়তান তাহলে—
    ঠিক বলতে পারছি না মিঃ রামিয়া, তবে আমার অনুমান–হলুদ শয়তান যে করেই হোক রাজীবকে হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়েছিল–
    বলেন কি!
    তাই। এবং রাজীবকে দিয়েই ফোন করিয়ে আজ সন্ধ্যার পর জরুরী কাজের কথা বলে মিঃ ডিবরাজকে তারা তার অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থাকতেই হলুদ শয়তানের অনুচরেরা প্রস্তুত ছিল। সঙ্গে সঙ্গে মিঃ ডিবরাজকে গায়েব করে অন্যত্র নিয়ে যায়–
    কিন্তু রাজীব।
    ভগবানের দণ্ড-হ্যাঁ, ভগবানের দেওয়া পাপের দণ্ড তাকে মাথা পেতে নিতে হয়েছে। সে নিশ্চয়ই শুনেছিল বা দেখেছিল পার্সেলটার মধ্যে কাঁচের বাস্কের ভিতর জুয়েগুলো আছে। তার লোভ সে সামলাতে পারেনি, সে তাই পরে নিজের পোশাক ছেড়ে মিঃ ডিবরাজের পোশাক পরে সেগুলো হাতাতে এসেছিল। সে তো জানত না যে আমি বারংবার মিঃ ডিবরাজকে সাবধান করে দিয়েছিলাম, কাল কোনরকম পার্সেল বা প্যাকেট কারও হাতে বা ডাকে এলে আমার অনুপস্থিতিতে সেটা না খুলতে। তাই মিঃ ডিবরাজ বোধ হয় কাঁচের বাক্সটা খোলেননি, হয়ত আমাকে কাল সংবাদ দিতেন–
    হঠাৎ ঐ সময় ঘরের ফোনটা বেজে উঠল ঝনঝন করে।
    মিঃ রামিয়া গিয়ে রিসিভারটা তুললেন।
    মিঃ রামিয়া আছেন ওখানে?
    কথা বলছি।
    আমি পোর্ট থেকে প্রহরী কথা বলছি।
    কি ব্যাপার?
    আজ বিকেলের দিকেই একটা ছোট সাদা রঙের জাহাজ এসেছিল এবং এতক্ষণ নোঙর করে ছিল। এখন মনে হচ্ছে জাহাজটা ছেড়ে যাবে। আপনি বলেছিলেন নতুন কোন লঞ্চ বা জাহাজ দেখতে পেলে, সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে ফোন করে জানাতে। তাই বাড়িতে আপনার ফোন করে জানলাম আপনি এখানে আছেন–
    ঠিক আছে।
    বস্তুত কিরীটীই রামিয়াকে গতকাল ঐ নির্দেশ দিয়েছিল, পোর্টে constant ওয়া রাখবার জন্য। রামিয়া বললেন ফোনের সংবাদ কিরীটীকে।
    মিঃ রামিয়া, পুলিসের লঞ্চও আছে নিশ্চয়ই পোর্টে?
    হ্যাঁ, জল-পুলিসের লঞ্চও আছে-দ্রুতগামী লঞ্চ গান-বোট।
    এখুনি পোর্ট-পুলিসে ফোন করে ঐ সাদা জাহাজটার প্রতি নজর রাখতে বলুন—আমরা এখুনি আসছি। আরও বললেন, যেন গান-বোট রেডি থাকে।
    মিঃ রামিয়া কিরীটীর নির্দেশমত ফোন করে দিলেন।
    তারপরেই দুজনে গাড়ি নিয়ে বের হল।
    গাড়িতে বসে কিরীটী শুধাল, সঙ্গে আর্মস আছে তো আপনার মিঃ রামিয়া?
    হ্যাঁ, লোডেড পিস্তল আছে।
    পোর্টে এসে ওরা জানতে পারল, তখুনি সেই সাদা জাহাজটা ছেড়েছে-বেশীদূর যেতে পারেনি। গান-বোট মেসেজ পেয়ে প্রস্তুতই ছিল।
    গান-বোটের কমাণ্ডার ক্যাপ্টেন বালকৃষ্ণ ডেকের উপর দাঁড়িয়ে—একটা লঞ্চ করে ওরা তিনজন—কিরীটী, মিঃ রামিয়া আর রাজু গান-বোটে উঠে বোট ছাড়বার নির্দেশ দিল।
    সঙ্গে সঙ্গে গান-বোট দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলল—কিছু দূরে চলমান সাদা জাহাজটা লক্ষ্য করে।
    যেমন করে হোক ক্যাপ্টেন, ঐ জাহাজটার গতি রোধ করতেই হবে।
    ক্যাপ্টেন বললে, একটা ওয়ারলেস মেসেজ পাঠাব অগ্রবর্তী জাহাজটাকে থামাবার জন্য মিঃ রামিয়া?
    কিরীটী বললে, কোন ফল হবে না। ওরা আমাদের মেসেস ইগনোর করবে।
    কিন্তু জাহাজের কাছাকাছি হলে ওরা যদি কামান দাগে! মিঃ রামিয়া বললেন।
    সম্ভবতঃ ঐ জাহাজে সেরকম কোন অ্যারেঞ্জমেন্ট নেই। সেরকম হলে আমাদেরই কামান দেগে জাহাজটা ড়ুবিয়ে দিতে হবে।
    আপনার কি ধারণা মিঃ রায়, ঐ জাহাজেই ডাঃ ওয়াং আছে?
    নিঃসন্দেহে। কিরীটী বললে, শুধু তাই নয়, মিঃ ডিবরাজকে ও মিঃ চিদাম্বরমকেও ঐ জাহাজেই বন্দী করে নিয়ে যাচ্ছে ডাঃ ওয়াং।
    কিন্তু–
    ওয়াং বুঝতে পেরেছিল এখানে আর তার সুবিধা হবে না—তাই ওদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তারপর একটা মোটা রকমের টাকা ওরা ডিমাণ্ড করবে। কিরীটী বললে।
    গান-বোট জাহাজটার কাছাকাছি আসতেই কিরীটী চাঁদের আলোয় দেখতে পেল, জাহাজের ডেকে একটা দীর্ঘকায় মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে যেন ছায়ার মত।
    কিরীটী বললে, মিঃ রামিয়া, ঐ যে ডেকের উপর একটা লোক দাঁড়িয়ে, দেখতে পাচ্ছেন?
    ইয়েস!
    ক্যাপ্টেন? এবারে কিরীটী ক্যাপ্টেনকে সম্বোধন করলে।
    ইয়েস!
    কিন্তু তার আগেই পর পর দুটো গুলি ওই জাহাজটা থেকে ছুটে এল।সাবধান! ওরা রিভলবার চালাচ্ছে। কিরীটী সকলকে হুশিয়ার করে দেয়।
    ক্যাপ্টেন ততক্ষণে জাহাজ লক্ষ্য করে গুলি করেছে।
    পর পর কয়েকটা গুলিবিনিময় হল দুপক্ষের মধ্যে, এবং গুলি করতে করতেই গানবোট জাহাজের গায়ে এসে ভিড়ল।
    জাহাজের ডেকের উপরে তখন চার-পাঁচজন পিস্তল হাতে গুলি চালাচ্ছে, গানবোট থেকেও গুলি চলে।
    একটা খণ্ডযুদ্ধের পর জাহাজের ডেক থেকে গুলি ছোঁড়া বন্ধ হল।
    জাহাজটা তখনও চলেছে ধীরে ধীরে।

    টীকা