Chapter Index

    অবনী সাহা উৎসুক দৃষ্টিতে কিরীটীর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা
    করেন।

    কিসের?

    মানে বলছিলাম ঐ সুশান্ত চ্যাটার্জি আর মিত্ৰাণীকে—

    একটা কথাই ওদের সম্পর্কে মনে হচ্ছে আপাততঃ—

    কী?

    ভাবছি, দুজনেই যেন মনে হল মিথ্যা কথা বলল।

    মিথ্যা কথা!

    হুঁ।
    সুশান্ত ও মিত্ৰাণী দেবী মনে হচ্ছে দুজনেই মিথ্যা বলছে!

    কি মিথ্যা বলেছে?

    প্রথমতঃ আমার মনে হচ্ছে, কাল রাত্রে—মানে ভোর হবার অনেক আগেই
    সুশান্ত কোন একসময় বাড়ি ফিরেছিল।

    আপনার তাই মনে হয়? হ্যাঁ, তাই। তারপর আবার ফিরে গিয়ে ভোরনাগাদ কোয়ার্টারে
    ফিরে এসেছে আজ।

    কিন্তু–

    ভাবছেন সে বলেছে যে রাত আড়াইটের ডিউটি থেকে ফিরে অশান্তির ভয়ে ভোররাত
    পর্যন্ত স্টেশনের রেস্টিং রুমে ছিল! তা কিন্তু নয় বলেই আমার মনে হয়, যদিও তার
    অ্যালিবিটা খুব স্ট্রং।

    তা যদি সত্যিই হয় তো সেটা তো অনায়াসেই আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারব।

    না,
    তা হয়ত পারবেন না।

    পারব না?

    ন।

    কেন, না?

    যেহেতু তার ব্রাদার অফিসার, যে কাল রাত্রে ওর সঙ্গে একই স্টেশনে
    রেস্টিং রুমে ছিল, সে হয়ত সত্যিই ঘুমিয়ে ছিল।

    কি বলছেন?

    ঠিক তাই অবনীবাবু, তার ঘুমের মধ্যেই কোন এক সময় তো অনায়াসেই
    সুশান্তবাবু উঠে আসতে পারে তার কোয়াটারে, তারপর আবার ফিরে যেতে পারে ইচ্ছা করলে।
    ধরুন যদি ঐসময় অন্যজনের ঘুম ভেঙেও যেত, সে কখনই মনে করতে পারত না যে সুশান্তবাবু
    ইতিমধ্যে তার কোয়ার্টারে গিয়ে ফিরে আসতে পারে এবং—সে যাই হোক সুশান্তবাবু যে
    এসেছিল রাত আড়াইটে থেকে ভোর সাড়ে চারটে এই দুই ঘণ্টার মধ্যে কোন এক সময় তার কোয়ার্টারে
    সে বিষয়ে আমি অন্ততঃ নিঃসন্দেহ। কিন্তু এখন কথা হচ্ছে, কেন-কেন এসেছিল? আবার ফিরেই
    বা গিয়েছিল কেন?

    কেন?

    সেই তো ভাবছি!

    অবিশ্যি দুটো কারণ তার থাকতে পারে।

    কি-কি?

    আপনিও একটু চিন্তা করলে সে কারণ দুটো খুঁজে পাবেন।

    কিরীটী যেন ইচ্ছে করেই প্রশ্নটা এড়িয়ে প্রসঙ্গান্তরে চলে গেল।

    বললে, তাই বলছিলাম, সুশান্তবাবু যেমন মিথ্যা বলেছে, তেমনি
    মিত্ৰাণী দেবীও মিথ্যা বলেছে যে কাল রাত্রে তার ঘরে সুশান্তবাবু ও আপনি ছাড়া আর
    তৃতীয় কোন ব্যক্তি যায়নি।

    তবে—

    তাই তো ভাবছি, কে সে? কে যেতে পারে কাল কোন এক সময় রাত্রে তার
    ঘরে?

    কেন, আপনি যা বলছেন তাতে তো সুশান্তবাবুও সেই লোক হতে পারেন!

    পারে না যে তা নয়, তবে—

    কী, তবে?

    মনে হয় না সে ব্যক্তি সুশান্তবাবু!

    তাহলে আপনি বলতে চান যে সত্যিই কোন তৃতীয় ব্যক্তি কাল রাত্রে
    মিত্ৰাণীর ঘরে প্রবেশ করেছিল?

    হ্যাঁ। আর—

    কি?

    তার প্রমাণও আমি পেয়েছি।

    প্রমাণ!

    হ্যাঁ, প্রমাণ। ১নং—

    কিন্তু কিরীটী কথাটা শেষ করল না, হঠাৎ আবার কথার মোড় ঘুরিয়ে অন্য
    প্রসঙ্গে চলে গেল। বললে, আচ্ছা অবনীবাবু।

    বলুন?

    আপনার কি মনে হয় আপনার সন্দেহটা খুব সত্যি?

    কোন সন্দেহ?

    সুশান্ত আর মিত্ৰাণী তাদের পরস্পর পরস্পরের প্রতি সত্যিই একটা
    আকর্ষণ-মানে আপনাদের ভাষায় ‘লভ্‌’ আছে?

    আমার অন্ততঃ তো তাই মনে হয়।

    অবিশ্যি সেটা খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ঐ রুগ্ন
    বিকৃত-মস্তিস্ক স্ত্রীর নিরন্তর একটানা
    যন্ত্রণা, তারই পাশে এক তরুণীর সস্নেহ আচরণ—ওয়েল, অনায়াসেই সেরকম কিছু
    একটা ওদের পরস্পরের মধ্যে গড়ে ওঠা বিচিত্র নয়!

    কিন্তু–

    কি?

    তাহলে দুজনকেই আমরা হত্যাকারী বলে সন্দেহ করতে পারি?

    পারিই তো, আর তাই তো আমি বলতে চাই–

    অবিশ্যি পোস্টমর্টেম রিপোটটা পেলে সেটা আমরা ভাল করে বিচার করে
    দেখতে পারি। কারণ সর্বাগ্রে আমাদের নিঃসন্দেহ হতে হবে শকুন্তলা দেবীর মৃত্যুটা
    সুইসাইড না মাডার-অর্থাৎ তাকে খুন করা হয়েছে কিনা!

    ইতিমধ্যে জীপটা রসা রোড়ের কাছাকাছি এসে গিয়েছিল।

    কিরীটী বলে, এখানেই আমাকে নামিয়ে দিন অবনীবাবু।

    এখানে নামবেন?

    হ্যাঁ। একটা কাজ ছিল এদিকে, সেরে যাই।

    অবনী সাহা জীপ থামালেন।

    কিরীটী জীপ থেকে নেমে চলে গেল।

    টীকা