Chapter Index

    কালো
    অন্ধকার রাত।

    সমুদ্রের কিনারা দিয়ে হেঁটে
    চলেছি দুজনে নিরালার দিকে।

    ডাইনে অন্ধকারে গর্জমান
    সমুদ্র যেন কি এক মর্মভাঙা
    যাতনায় আছাড়িপিছাড়ি করছে।

    নিরালার সামনে এসে যখন পৌঁছলাম হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত প্রায়
    সোয়া এগারটা।

    কিরীটী কিন্তু নিরালার সম্মুখ দিক দিয়ে না প্রবেশ করে পশ্চাতের
    দিকে এগিয়ে চলল। প্রায় দেড়মানুষ সমান উঁচু
    প্রাচীর দড়ির মইয়ের সাহায্যে প্রথমে কিরীটী ও পশ্চাতে আমি টপকে নিরালার পশ্চাতে
    বাগানের মধ্যে প্রবেশ করলাম।

    জমাট অন্ধকারে বিরাট প্রাসাদোপম অট্টালিকাটা একটা স্তূপের মত মনে হয়।

    নিরালার মধ্যে প্রবেশ করতে চলেছে কিরীটী, কিন্তু কেন, সেটাই ঠিক
    বুঝে উঠতে পারছি না! কী তার মতলব?

    বাগানের চারিদিকে অযত্ন-বর্ধিত জঙ্গল। অন্য কিছুর না থাক, সাপের ভয়ও
    তো আছে!

    প্রথম দিনের সেই সীতার সতর্কবাণী মনে পড়ে। নিরালায় ভয়ানক সাপের
    উপদ্রব।

    শুধু
    কি তাই? সীতার কুকুর টাইগার! কে জানে সেই মত্যুসদৃশ অ্যালসেসিয়ান কুকুরটা ছাড়া আছে কিনা? সীতার
    মুখখানা যেন কিছুতেই ভুলতে পারি না। কেবলই ঘুরে-ফিরে
    মনে পড়ে সেই মুখখানা। সন্তর্পণে
    পা ফেলে ফেলে অন্ধকারে এগুচ্ছি কিরীটীর পিছু পিছু।

    কী কুক্ষণেই যে সমুদ্রের ধারে হাওয়া বদলাতে এসেছিলাম ওর প্ররোচনায়
    পড়ে!

    পৈতৃক প্রাণটা শেষ পর্যন্ত বেঘোরে না হারাতে হয়!

    কোন প্রশ্ন যে করব ওকে তারও কি জো আছে? এখনি হয়তো খিঁচিয়ে উঠবে। নচেৎ বোবা হয়ে
    থাকবে। হঠাৎ একটা খসখস শব্দ কানে এল।

    চকিতে কিরীটী আমাকে ঈষৎ আকর্ষণ করে একটা ঝোপের মধ্যে টেনে বসে পড়ল।
    আবছা আলো-অন্ধকারে শ্যেনদৃষ্টি মেলে সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। কিছুক্ষণ পূর্বে আকাশে একফালি চাঁদ
    জেগেছে। ক্ষীণ অস্পষ্ট সেই চাঁদের আলো আশপাশের গাছপালার উপরে প্রতিফলিত হয়ে অদ্ভুত
    একটা আলো-ছায়ার সষ্টি করেছে।

    খুব স্পষ্ট না হলেও দেখতে কষ্ট হয় না। ঢ্যাঙা-মত একটা ছায়া
    অন্ধকারে নিরালার
    পশ্চাতের বারান্দায় দেখা গেল। বারান্দা দিয়ে লোকটা পা টিপে টিপে এই দিকেই আসছে।

    আরো একটু
    কাছে এলে দেখলাম, লোকটার দুই হাতে ধরা প্রকাণ্ড একটা কি বস্তু!

    কিরীটীর দিকে তাকালাম। তার শ্বাস-প্রশ্বাসও যেন পড়ছে না। স্থির
    অপলক দৃষ্টিতে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে।

    কে লোকটা? হাতে ওর ধরাই বা কী?

    আরো একটু
    এগিয়ে আসতেই এবারে বুঝতে কষ্ট হল না, লোকটার হাতে ধরা বস্তুটি কী? প্রকাণ্ড একটা ফ্রেমে
    বাঁধানো ছবি। ছবির ফ্রেমে চাঁদের আলো প্রতিফলিত হয়ে চিকচিক করছে। এবং লোকটাকেও এবারে
    চিনতে কষ্ট হল না। এ বাড়ির সেই বোবা-কালা ভুখনা! কিন্তু কোথায় যাচ্ছে ভুখনা ছবিটা
    নিয়ে?

    চাপা স্বরে
    আস্তে আস্তে কিরীটীকে সম্বোধন করে বললাম, ভুখনা!

    হ্যাঁ, চুপ!

    ভুখনা ছবিটা নিয়ে এগিয়ে আসতে লাগল বাগানের মধ্যেই। বাগানের দক্ষিণ
    কোণে একটা প্রশস্ত ঝাউগাছ, তার নীচে এসে দাঁড়াল ভুখনা এবং ছবিটা মাটিতে নামিয়ে
    রাখল।

    চাঁদের অস্পষ্ট আলোয় পরিষ্কার না হলেও আমরা সবই দেখতে পাচ্ছি।
    হঠাৎ দেখলাম পাশের ঝোপ থেকে আর একটি ছায়ামূর্তি
    বের হয়ে এল। ছায়ামূর্তির
    সর্বাঙ্গ একটা কালো কাপড়ে ঢাকা। মুখে বাঁধা একটা কালো রুমাল, সর্বাঙ্গ কালো কাপড়ে আবৃত ছায়ামূর্তি ভুখনাকে চাপা স্বরে কী
    যেন বললে।

    ওদের ব্যবধান আমাদের থেকে প্রায় হাত-আষ্টেক হওয়ায় বুঝতে পারলাম না কী কথা বললে!

    কিন্তু ও কি?
    ভুখনা ও ছায়ামূর্তির ঠিক পশ্চাতে গুটি গুটি পা ফেলে তৃতীয় আর একজন এগিয়ে আসছে। এসব
    কী ব্যাপার!

    অতি সতর্কতার সঙ্গে পিছন থেকে তৃতীয় আগন্তুক এগিয়ে আসলেও, কালো
    কাপড়ে আবৃত
    ছায়ামূর্তির
    অতি সতর্ক
    শ্রবণেন্দ্রিয়কে ফাঁকি দিতে পারেনি। মুহূর্তে
    চোখের পলকে কাপড়ে আবৃত
    ছায়ামূর্তি
    ঘুরে দাঁড়ায় ও আধো-আলো আধো-অন্ধকারে একটা অগ্নিঝলক ঝলসে
    ওঠে ও সেই সঙ্গে শোনা যায় পিস্তলের আওয়াজ—দুড়ুম!
    সেই সঙ্গে শোনা গেল একটা অস্ফুট
    আর্ত চিৎকার।

    সমস্ত ব্যাপারটা এত দ্রুত এত আকস্মিক ভাবে ঘটে গেল যে, প্রথমটায়
    আমরা হতচকিত ও বিমূঢ়
    হয়ে পড়েছিলাম কয়েক মুহূর্তের
    জন্যে।

    কেমন করে যে কী ঘটে গেল যেন বুঝতেই পারলাম না।

    খেয়াল হতেই দেখি, কিরীটী লাফিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। আমিও
    ক্ষিপ্রগতিতে তার পশ্চাদ্ধাবন করলাম।

    কিন্তু অকুস্থানে পৌঁছে দেখি, ভুখনা বা সেই কালো কাপড়ে আবৃত ছায়ামূর্তির সেখানে
    চিহ্নমাত্রও নেই। কেবল কে একজন সুট-পরিহিত
    ডান হাত দিয়ে বাঁ হাতটা চেপে হাঁটু
    গেড়ে মাটিতে বসে যন্ত্রণাকাতর শব্দ করছে।

    উপবিষ্ট লোকটির ওপরে কিরীটীর হস্তধৃত টর্চের তীব্র একটা আলোর রশ্মি
    গিয়ে পড়ল ও সঙ্গে সঙ্গে কিরীটী প্রশ্ন করে, কে? এ কি কুমারেশ সরকার!

    কুমারেশ সরকার! আমিও বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকালাম।

    কে আপনি? যন্ত্রণাক্লিষ্ট
    কুমারেশ সরকার প্রশ্ন করেন কিরীটীকে।

    আমি কিরীটী। কোথায় গুলি লাগল? দেখি! কিরীটী এগিয়ে গেল।

    গুলি
    করবার আগেই চট করে হেলে পড়েছিলাম ডান দিকে। গুলিটা বাঁ হাতের পাতায় লেগেছে। একটুর জন্য শয়তানটাকে ধরতে
    পারলাম না, উঃ!

    দেখি হাতটা?
    কিরীটী এগিয়ে গিয়ে কুমারেশ সরকারের গুলিবিদ্ধ আহত রক্তাক্ত বাঁ হাতটা টর্চের আলোয়
    পরীক্ষা করতে লাগল। পরীক্ষা করে বললে,
    না, গুলি pierce করে বেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু woundটার তো এখনি একটা
    ব্যবস্থা করা দরকার!
    বুলেট-উণ্ড—neglect করা যায় না। আমার রুমালটা অপরিষ্কার। সুব্রত, তোর কাছে পরিষ্কার রুমাল আছে।

    কুমারেশ বললেন, দেখুন আমার শার্টের ভিতরের পকেটে কাচা রুমাল আছে, বের করুন!

    কুমারেশের বুকপকেট হতে পরিষ্কার রুমালটা বের করে কিরীটী কুমারেশের আহত হাতটা বেধে
    দিল।

    কিন্তু লোকগুলো যে পালিয়ে গেল! কুমারেশ বলেন।

    পালাবে আর কোথায়?
    নিজের জালে নিজেই আটকে পড়েছে। অন্যের সঞ্চিত গুপ্তধনের প্রতি লোভ একবার জন্মালে সে
    লোভ সংবরণ
    করা বড় দুঃসাধ্য মিঃ সরকার! তাড়াতাড়িতে প্রাণভয়ে সেই বস্তুটিকেই তাঁদের এখানে ফেলে
    পালাতে হয়েছে যখন, এ জায়গা ছেড়ে তারা বর্তমানে খুব বেশী দূরে যাবে না। না জেনে আগুনে হাত দিলে হাত পোড়েই।
    সেটাই আগুনের
    ধর্ম। সে পোড়া হাত খুঁজে বের করতে আমাদের আর খুব বেশী বেগ পেতে হবে না। কিন্তু কালো
    কাপড়ে আবৃত মূর্তিটিকে
    অন্তত আপনার তো চেনা উচিত ছিল মিঃ সরকার, চিনতেই পারলেন না?

    না।
    ভুখনাকে চিনেছিলাম, কিন্তু—

    যাক, চলুন আপনার হাতের ক্ষতস্থানটির সর্বাগ্রে একটা ব্যবস্থা করা
    প্রয়োজন। চলুন দেখি উপরের তলায় শতদলবাবুর
    ঘরে, যদি কোন ঔষধপত্র। থাকে! বলতে বলতে কিরীটী আমার দিকে চেয়ে তার বক্তব্য শেষ
    করল, ছবিটা একা নিয়ে যেতে পারবি না?

    কেন পারব না! চল—

    আগে আগে কিরীটী ও কুমারেশ সরকার ও পশ্চাতে আমি ছবিটা তুলে নিয়ে
    অগ্রসর হলাম। বারান্দা দিয়ে এগিয়ে যেতে হঠাৎ নজরে পড়ল হিরণ্ময়ী দেবীর ঘরের ভেজানো দ্বারপথের ঈষৎ ফাঁক দিয়ে মৃদু একটা
    আলোর ইশারা।

    আশ্চর্য, হিরণ্ময়ী
    দেবীর ঘরে এখনো আলো জ্বলছে!
    বলতে বলতে সর্বাগ্রে কিরীটী ও পশ্চাতে আমরা দুজনে এগিয়ে গেলাম।

    ভেজানো দরজার
    ঈষৎ ফাঁক দিয়ে বারেকের জন্য কিরীটী দৃষ্টিপাত
    করেই দরজাটা
    খুলে ফেলল। খোলা দ্বারপথে
    কক্ষের অভ্যন্তর আমাদের দৃষ্টিগোচর হল এবং থমকে দাঁড়ালাম। নিশ্চল পাষাণ-প্রতিমার
    মতই ইনভ্যালিড চেয়ারটার উপরে স্থির অচঞ্চল বসে আছেন হিরণ্ময়ী দেবী।

    দৃষ্টি
    তাঁর মাটিতে নিবদ্ধ।

    আর সামনেই পায়ের নীচে একরাশ পোড়া কাগজ।

    সর্বপ্রথমে কিরীটী ও পশ্চাতে আমি ও কুমারেশ সরকার ছবিটা ঘরের
    বাইরে দেওয়ালের গায়ে ঠেস দিয়ে রেখে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলাম।

    ঘরের বাতাসে একটা কাগজপোড়া কটু গন্ধ এবং তখনও পাতলা একটা ধোঁয়ার পর্দা
    ঘরের মধ্যে ভাসছে।

    আমরা যে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলাম তা যেন হিরণ্ময়ী দেবী টেরই পেলেন না। নিজের মধ্যে এমন গভীর
    ভাবে নিমগ্ন যে তিনজনের আমাদের কক্ষের মধ্যে প্রবেশের ব্যাপারটা পর্যন্ত তাঁর
    সমাধিগ্রস্ত মৌনতাকে এতটুকু নাড়াও দিতে পারলে না।

    আরো কাছে এগিয়ে গেলাম। তবু,
    আশ্চর্য, হিরণ্ময়ী
    দেবীর কোন সাড়া-শব্দ নেই! নিস্তব্ধ, নিশ্চুপ।
    হিরণ্ময়ী
    দেবী! মৃদুকণ্ঠে
    কিরীটী ডাকল।

    না,
    তবু
    সাড়া নেই। হিরণ্ময়ী
    দেবী! শুনছেন?
    ঈষৎ উচ্চকণ্ঠেই এবারে কিরীটী ডাক দিল।

    এবারে মুখ তুলে তাকালেন হিরণ্ময়ী
    দেবী।

    ঘরের আলোয় হিরণ্ময়ী
    দেবীর মুখের দিকে তাকালাম। মড়ার মত ফ্যাকাশে রক্তহীন মুখ। আর দুই চোখের দৃষ্টিও
    যেন ঘষা কাঁচের মত নিশ্চল প্রাণহীন।

    কিরীটী আবার ডাকল, হিরণ্ময়ী
    দেবী!

    ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন হিরণ্ময়ী দেবী। কোন সাড়া-শব্দই দেন না।

    সর্বস্ব হারানোর এক মর্মান্তিক বেদনা যেন হিরণ্ময়ী দেবীর মুখখানিতে ছড়িয়ে পড়েছে।

    সামনের ঐ ভস্মস্তূপের
    মত যেন তাঁরও সব কিছু
    আজ শেষ হয়ে গিয়েছে।

    হঠাৎ কথা বলেন হিরণ্ময়ী
    দেবী, সব পুড়িয়ে
    ফেলেছি মিঃ রায়! সীতার শেষ স্মৃতিচিহ্নটুকুও পুড়িয়ে ফেলেছি! কিন্তু কই, তবু তো
    তাকে ভুলতে
    পারছি না। কিছুতেই তো মন থেকে তাকে মুছে ফেলতে পারছি না?

    যে গিয়েছে তার কথা আর মিথ্যে ভেবে কী লাভ বলুন হিরণ্ময়ী
    দেবী! বাকি জীবনটা এমনি করেই তার স্মৃতি বার বার আপনার মনের মধ্যে এসে উদয় হবেই।
    ভেবেছেন কি তার চিঠিপত্রগলো পুড়িয়ে ফেললেই তার স্মৃতির হাত হতে আপনি রেহাই পাবেন!
    তা আপনি পাবেন না। বরং যে রহস্য এতকাল আপনার কাছে অজ্ঞাত ছিল, তার বাক্স ঘেটে তার
    চিঠিপত্রগুলো পড়ে

    কিরীটীর কথা শেষ হল না, হিরণ্ময়ী
    দেবী চকিতে কিরীটীর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন, আপনি—আপনি সেসব কথা কেমন করে
    জানলেন মিঃ
    রায়!

    আপনি না জানলেও আমি জানতাম হিরণ্ময়ী দেবী, আপনার মেয়ে সীতার মনটা কোথায় পড়ে
    আছে! আরও একটা কথা আপনি হয়তো জানেন না!

    কী?

    যে ভালবাসার মধ্যে সীতা নিজেকে অমনি নিঃস্ব করে বিকিয়ে দিয়েছিল
    সেই ভালবাসাই কালসাপ হয়ে তার বুকে মৃত্যু-ছোবল হেনেছে, অথচ বেচারী সে কথা তার শেষ মুহূর্তে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি!

    কিরীটীবাবু?
    আর্ত চিৎকারের মতই ডাকটা শোনায় হিরণ্ময়ীর
    কণ্ঠে।

    হ্যাঁ, হিরণ্ময়ী
    দেবী। একটা দিকই আপনার নজরে পড়েছে। মালাটাই আপনি দেখেছেন কিন্তু সেই মালার মধ্যেই
    যে ছিল দংষ্ট্রা কীট সেটা আপনার নজরে পড়েনি!

    আমি—আমার যে সব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে মিঃ রায়! এ সব আপনি কি বলছেন?

    সময় আর তো নেই হিরণ্ময়ী
    দেবী। এখুনি একবার আমাকে নার্সিং হোমে যেতে হবে। কুমারেশবাবুর হাতে গুলি
    লেগেছে। একটা dressing-এর বিশেষ প্রয়োজন।

    কুমারেশ!

    হ্যাঁ। দেখুন
    একে চিনতে পারছেন কিনা?

    এতক্ষণ কিরীটী কুমারেশ সরকারকে আড়াল করে দাঁড়িয়েই কথাবার্তা
    চালাচ্ছিল। এবারে সরে দাঁড়াল।

    কে?

    চিনতে পারছেন না? বনলতা দেবী ও অধ্যাপক ডঃ শ্যামাচরাণু সরকারের একমাত্র ছেলে
    কুমারেশ সরকার!

    সে কি! তবে যে শুনেছিলাম—

    কি শুনেছিলেন? তার কোন পাত্তাই পাওয়া যাচ্ছে না, তাই না?

    হ্যাঁ।

    তার জবাব
    অবিশ্যি উনিই সঠিক দিতে পারবেন। আচ্ছা এবারে আমরা চলি হিরণ্ময়ী দেবী।

    আমরা দুজনে কিরীটীর পিছু পিছু দরজার দিকে অগ্রসর হতেই কিরীটী হঠাৎ আবার ঘুরে
    দাঁড়িয়ে বললে, হ্যাঁ, একটা ছবি আপনার জিম্মায় রেখে যেতে চাই হিরণ্ময়ী দেবী। সুব্রত, ছবিটা ওঁর কাছেই রেখে যাও।
    আমার দিকে তাকিয়ে কিরীটী তার বক্তব্য শেষ করল।

    ছবি, কিসের ছবি?

    আমি ততক্ষণে ঘরের বাইরে গিয়ে ছবিটা এনে হিরণ্ময়ী দেবীর পায়ের সামনে দিলাম। ছবিটা দেখে হিরণ্ময়ী দেবী সবিস্ময়ে বলে
    উঠলেন, এ কী! এ ছবিটা দাদার স্টুডিও-ঘরে ছিল না?

    হ্যাঁ। আর যত বিভ্রাট এই ছবিটা নিয়েই। এইটা চুরি করবার মতলবেই
    গতরাত্রে এ বাড়িতে চোরের আবির্ভাব ঘটেছিল।

    এই ছবিটা চুরি করতে? কী বলছেন আপনি মিঃ রায়?

    হ্যাঁ, বললাম তো। নিরালা-রহস্যের মূলে এই ছবিটাই।

    তবে—তবে আমার মেয়ে সীতাকে—

    প্রাণ দিতে হল কেন, তাই না আপনার জিজ্ঞাসা হিরণ্ময়ী দেবী? একান্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই আপনার মেয়ে
    হত্যাকারীর স্বার্থের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিল, তাই তাকে প্রাণ দিতে হল। কিন্তু আমার
    আর দেরি করা তো চলবে না—ওদিকে
    সময় বয়ে যাচ্ছে।

    একটা কথা মিঃ রায়

    বলুন।

    আমার স্বামী-

    সে কথার জবাব তো আজ সকালেই দিয়ে দিয়েছি হিরণ্ময়ী দেবী!

    আমরা সকলে
    অতঃপর নিরালা থেকে বের হয়ে এলাম।

    হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম, রাত দুটো বেজে গিয়েছে।

    টীকা