Chapter Index

    পরদিন সকালে যখন রাজুর ঘুম ভাঙল,
    সে দেখলে সুব্রত তখনও ঘুমোচ্ছে। সে তাড়াতাড়ি উঠে সুব্রতকে
    ডেকে বললে, এই সুব্রত, ওঠ ওঠ, বেলা অনেক হয়েছে।

    রাজার ডাকে সবে সুব্রত চোখের পাতা রাগড়াতে
    রাগড়াতে শয্যার ওপরে উঠে বসেছে, ভূত্য এসে ঘরের মধ্যে
    প্রবেশ করে।—বড়দাদাবাব, উঠেছেন
    শিব? সুব্রতই প্রশ্ন করে।

    তিনি তো তাঁর ঘরে নেই!

    নেই? আর
    কালকের সেই বাবুটি?

    না, তিনিও
    নেই।

    সে আবার কি! এত
    সকালে গেল কোথায় তারা? বাইরে তখনও টিপ টিপ করে বৃষ্টি
    পড়ছে, বর্ষাসিক্ত প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে রাজু বলে, এই বৃষ্টির মধ্যে কোথায় আবার গেল তারা?

    মা এসে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলেন,
    হ্যাঁ রে, সনৎ কোথায় গেছে জানিস? তাকে দেখলাম না তার ঘরে?

    না তো মা! রাজা
    জবাব দেয়।

    চল তো রাজু, ওদের
    ঘর-ব্দটো একবার ঘরে দেখে আসি।

    প্রথমেই রাজু ও সুব্রত এসে সনৎ-এর ঘরে প্রবেশ করল। নিভাঁজ শয্যা দেখে মনে হয় রাত্ৰে
    শয্যা স্পর্শ পর্যন্ত করা হয়নি।

    হঠাৎ সামনের টী-পয়ের ওপর সুব্রতর নজর পড়ে, জলের গ্লাসটা চাপা
    দেওয়া একটা ভাঁজকরা হলুদবর্ণের তুলট কাগজ। সুব্রত এগিয়ে এসে কাজগটা তুলে চোখের
    সামনে মেলে ধরতেই বিস্ময়ে আতঙ্কে যেন স্তব্ধ হয়ে যায় ও।

    সেই ভ্ৰমর-আঁকা
    চিঠি!

    নমস্কার। চিহ্ন দেখেই চিনবো। সনৎকে নিয়ে
    চললাম। ভোরের জাহাজেই বর্মা যাব। ইচ্ছা হলে সেখানে সাক্ষাৎ করতে পার।
    –কালো ভ্রমর

    কিরে ওটা? রাজু
    এগিয়ে আসে।

    সুব্রত চিঠিটা রাজুর হাতে তুলে দেয়
    নিঃশব্দে।

    আবার সেই কালো ভ্ৰমর!
    মরিয়া না মরে রাম এ কেমন বৈরী! উঃ,
    কি বোকাটাই সকলকে বানিয়ে গেল! শয়তান!
    ডিব্রুগড় থেকে আসছি, অমরবাবুর ভাইপো! ধাপ্পাবাজ! সনৎদা কি তবে শয়তানটাকে চিনতে
    পেরেছিল?

    গতরাত্রের আগাগোড়া ব্যাপারটার মধ্যে তার
    এতটকু উৎসাহও ছিল না। সে যেন এড়াতেই চাইছিল। বলে রাজু।

    রাগে দুঃখে অননুশোচনায় সুব্রতর নিজেরই চুল
    চলে যেন নিজেরই টানতে ইচ্ছে করে।

    উঃ, এত বড়
    আপসোস সে রাখবে কোথায়?

    দেওয়ালে টাঙানো ওয়াল-ক্লকটার দিকে তাকিয়ে
    সুব্রত দেখল বেলা তখন আটটা বেজে পনেরো মিনিট। সাতটা তিরিশে জাহাজ ছেড়ে চলে গেছে।
    বাইরের দিকে তাকায়। বৃষ্টি থেমেছে, মেঘ-ভাঙা
    আকাশে সূর্যের আত্মপ্রকাশ, স্নিগ্ধ-সুন্দর।

    এখন তাহলে কি করা যায় বল তো সু?

    আর দেরি করা নয়। চল,
    এখনই গিয়ে আগে তো থানায় একটা ডাইরি করিয়ে আসি!

    তাতে কি সংবিধা হবে?

    তাহলে অন্তত বেতারে জাহাজের ক্যাপ্টেনকে
    একটা সংবাদ দেওয়া যেতে পারে, যদি আজকের জাহাজেই তারা
    গিয়ে থাকে!

    তারপর?

    তারপর সামনের শনিবারে জাহাজে সীট পাই ভাল,
    না হয়। পরের মঙ্গলবার আমাদের রেঙ্গুনের জাহাজ ধরতেই হবে,
    তা যে উপায়েই হোক। শুধু রেঙ্গুনে কেন, সনৎদার
    খোঁজে পৃথিবীর আর এক প্রান্তে যেতে হলেও যাব। আমি খাঁজে বের করবই, আর একবার সেই শয়তান-শিরোমণির সঙ্গে মুখোমুখি দাঁড়াব।
    সে আমার ধৈয্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছে, স্কাউন্ড্রেল!

    মা এসে ঘরে প্রবেশ করলেন,
    তোদের চা জুড়িয়ে গেল। পরক্ষণেই ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস
    করলেন, কি হয়েছে রে?

    সুব্রত মার হাতে চিঠিটা তুলে দেয়। চিঠিটা পড়বার সঙ্গে সঙ্গে
    এক অস্ফুট কাতরোক্তি মার কন্ঠ হতে নির্গত হয়ে আসে, সর্বনাশ!
    কালো ভ্ৰমর!

    সুব্রত দাঁতে দাঁত চেপে কঠিনস্বরে বললে,
    হ্যাঁ মা, আবার সেই কালো ভ্ৰমর! কিন্তু
    এবার সত্যিসত্যিই তার পাপের ভরা পূর্ণ হয়েছে।

    কথাবার্তায় আর সময় নষ্ট না করে,
    কিছু, জলখাবার ও চা খেয়ে, রাজ্য ও সুব্রত তাড়াতাড়ি লালবাজারের দিকে ছুটল।

    লালবাজারে গিয়ে সোজা তারা একেবারে ডেপুটি
    কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে সব বললে।

    ওদের সমস্ত কথা মনোযোগ সহকারে শুনে সাহেব
    আবশ্যকীয় সব কথা নোট করে নিলেন এবং বললেন, বাব,
    তোমাদের কথা শুনে আমি আশ্চর্য! এ
    একেবারে miracle (অত্যাশ্চর্য)!
    যা হোক, আমি এখনই জাহাজের ক্যাপ্টেনকে বেতারে সংবাদ
    প্রেরণের সব বন্দোবস্ত করছি।

    সুব্রত লালবাজার থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে পোস্ট-অফিসে গিয়ে রেঙ্গুনে সি. আই. ডি. ইন্সপেক্টর সলিল সেনকে একটা তারা করে দিল—সনৎ সম্পর্কিত সকল ব্যাপার জানিয়ে।–

    তারপরই দুজনে গেল জাহাজের বুকিং অফিসের দিকে।
    জাহাজ ছাড়বে শনিবার-পরশুর পরের দিন, এবং সেই জাহাজে দুখানা সীট রিজার্ভের সব বন্দোবস্ত করে যখন ওরা বাড়ির
    দিকে পা বাড়াল, তখন প্রখর রৌদ্রে সারা পৃথিবী যেন ঝলসে
    যাচ্ছে। কমচঞ্চল শহরের বকে অগণিত নরনারী ও বাসট্রামের আনাগোনার শব্দ।

    ফিরতি-পথে
    ওরা যে রাস্তাটা দিয়ে আসছিল, তার দু পাশে চীনা পট্টি। সেই
    চীনা পট্টি দিয়ে চলতে চলতে একসময় রাজু চাপা, গলায়
    সুব্রতকে বললে, একটা লোক অনেকক্ষণ থেকে আমাদের পিছ নিয়েছে
    সুব্রত!

    সুব্রত পিছনপানে না তাকিয়েই বললে,
    তাই নাকি?

    অন্ততঃ আমার তো তাই মনে হয়।

    লোকটা কি বাঙালী?

    না, বর্মী
    বলে মনে হয়।

    কি করে বুঝলে যে লোকটা আমাদের পিছ নিয়েছে?

    রাজু প্রত্যুত্তরে একটু হাসলে মাত্র,
    তারপর বললে—তুই ভুলে যাচ্ছিস যে,
    একদিন এ দলে আমি বহু ঘোরাফেরা করেছি। শিকারী বিড়ালের গোঁফ দেখলেই
    আমাদের চিনতে কষ্ট হয় না।

    আচ্ছা ওকে অনুসরণ করতে দে। দেখা যাক,
    লোকটার দৌড় কতদূর পর্যন্ত!

    একটা কাজ করলে হয় না?

    কি?

    আয়, শ্যামবাজারের
    একটা ট্রামে এখন উঠি; খানিকটা ঘরে-ফিরে পরে বাড়ি যাওয়া যাবে।

    মন্দ কি, বেশ
    তো!

    চট করে তারা একটা শ্যামবাজার-গামী ট্রামে চেপে বসল।

    ***

    আমহার্ট স্ট্রীটের যেখানটায় সুব্রতর বাড়ি,
    তার পিছনে একটা খালি মাঠ। তারই ওপাশে বহুদিনকার একটা চারতলা বাড়ি।

    শোনা যায় এককালে নাকি বাড়িটা ছিল এক মস্ত
    ধনী ব্যবসায়ীর। ব্যবসায়ী মারা যাবার পর,
    তার ছেলে যখন সমস্ত অর্থের মালিক হয়ে বসল, তখন বিপুল অর্থ হাতে পেয়ে তার মনে হল (বেশীর ভাগ লোকের যা হয়), দুনিয়া তো তারই।
    এখনকার রাজাই তো সে। স্ফূর্তির স্রোতে গা ভাসিয়ে সে চোখ বাজে আকাশকুসম স্বপ্ন
    দেখতে শুরু করলে। আর হতভাগ্য পিতার বহু কষ্টার্জিত অৰ্থ রাশি দুদিনের জন্য তাকে
    নিয়ে পুতুল-খেলা খেললে, পরে তাকে
    হাত ধরে পথের ধুলোয় বসিয়ে কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেল।

    সুখের দিনে একদিন যারা ছিল দিবারাত্র
    পাশাপাশি বন্ধুর মত, পরমাত্মীয়ের মত, সর্বনাশের নেশায় একদিন যারা ছিল তার মুখোশপরা একনিষ্ঠ বন্ধু, তারাই আজ অচেনার ভান করে অলক্ষ্যে বিদায় নিয়ে গেল। কেউ বা যাবার বেলায়
    দিয়ে গেল শুষ্ক সহানভূতির সোনালী হাসি।

    যার মুখে একদিন সোনার বাটিতে জমাটবাঁধা দধি
    উঠিত, আজ তার মুখে ভাঙা কাঁসার বাটিতে জলটুকুও ওঠে
    না।

    সৌভাগ্যের শৈলশৃঙ্গ হতে সে দুর্ভাগ্যের
    নরককুন্ডে নেমে এল। এতকাল সে শুধু হেসে-গেয়েই
    এসেছে, আজ তার দু চোখে জল উঠল ছলছলিয়ে।

    তারপর অভাবের তাড়নায় অধীর হয়ে একদিন সে
    নিজের শয়নগৃহেরই কড়িকাঠের সঙ্গে পরনের কাপড় গলায় দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে এ দুনিয়া থেকে
    চিরবিদায় নিল। অভিমানে না দুঃখে কে জানে!

    এদিকে একজন ধনী মারোয়াড়ী লোকটার জীবিতকালেই
    বাড়িখানা ক্রয় করে নিয়েছিল দেনার দায়ে, কিন্তু
    ঐ কেনা পর্যন্তই। কারণ বাড়িখানা সে কোন কাজে লাগাতে পারলে না। সমস্ত রাত্রি ধরে
    নাকি বুভুক্ষিত অশরীরীর দল সারা বাড়িময় হাহাকার করে বেড়াত। লোক এসে একদিনের বেশী
    দীদিন ও বাড়িতে টিকতে পারে না। সারারাত্রি ধরে কারা নাকি সব সময়ে কেঁদে কেঁদে
    ফেরে। অসহ্য তাদের সেই বকভঙা বিলাপ।

    ক্ৰমে একদিন বাড়িটা জনহীন হয়ে ধীরে ধীরে
    শেষটায় পোড়ো বাড়ি বা ভূতের বাড়িতে পরিণত হল।

    তারপর আজ প্রায় দশ বৎসর ধরে বাড়িটা পড়ে আছে।
    ভাড়াও কেউ নেয়নি, ক্ৰয় করতেও কেউ চায়নি।

    সুব্রত গভীর রাত্রে ঘরে শুয়ে শুনত,
    রাতের বাতাসে নির্জন বাড়িটার খোলা আধভাঙা কপাটগলো বার বার শব্দ
    করে আছড়ে আছড়ে পড়ছে। কখনও বা দেখত জ্যোৎস্নারাত্রে চাঁদের নির্মল আলো বাড়িটার সারা
    গায়ে ছড়িয়ে পড়েছে দঃস্বপ্নের মত করুণ বিষণ্ণে।

    সেদিন গভীর রাত্ৰে ঘাম ভাঙতেই সুব্রত চমকে
    উঠল—সেই মাঠের ওপারে পোড়ো বাড়ির জানালার খোলা
    কপাটের ফাঁক দিয়ে যেন একটা আলোর শিখা দেখা যাচ্ছে। পোড়ো বাড়িতে আলোর শিখা! আশ্চর্য কৌতূহলী চোখের পাতা দুটো রগড়ে নিল। তারপর আপন মনে বলল-না, ঐ তো মাঝে মাঝে হাওয়া পেয়ে আলোর শিখাটা
    কেঁপে কেঁপে উঠছে!

    সুব্রত বিছানা থেকে উঠে খোলা জানালার কাছে
    এসে দাঁড়ায়। সহসা
    এমন নিশীথ রাত্রির জমাট স্তব্ধতা ভেদ করে জেগে উঠল একটা তীক্ষ্ণ বাঁশীর আওয়াজ।
    তারপর আর একটা, আরও একটা; পর পর তিনটে।

    আকাশে মেটে-মেটে
    জ্যোৎস্না উঠেছে। স্বল্প আলো-আঁধারিতে পোড়ো বাড়িটা যেন
    একটা মাতৃ-বিভীষিকা জাগিয়ে তুলেছে! চারিদিক নিস্তব্ধ। কোথাও জনপ্রাণীর সাড়াশব্দ পর্যন্ত নেই। জীব-জগৎ সুপ্তির কোলে বিশ্রাম সুখ লাভ করছে। দিবাভাগের জনকোলাহল মুখরিত জগৎ যেন এখানকার এই
    স্তব্ধ ঘুমন্ত পৃথিবী থেকে দূরে—অনেক দূরে।

    এমনি সময়ে হঠাৎ পোড়ো বাড়ির দোতলার দক্ষিণ
    দিককার একটা ঘরের একটা জানালার কপাট খালে গেল এবং সেই খোলা জানালার পথে একটা
    টর্চের সতীব্র আলোর রশ্মি মাঠের ওপর এসে পড়ল।

    সুব্রতর দু চোখের দৃষ্টি এবারে তীক্ষ্ণ হয়ে
    ওঠে। রহস্যঘন পোড়ো বাড়ির মধ্যে যেন হঠাৎ প্রাণ-স্পন্দন!

    ইতিমধ্যে কখন একসময়ে রাজু এসে ওর পাশেই
    দাঁড়িয়েছে সুব্রত তা টেরও পায় নি। হঠাৎ কাঁধের ওপর মদ,
    স্পর্শ পেয়ে সে চমকে ফিরে তাকাল, কে?
    ও রাজু!

    হ্যাঁ, কিন্তু
    কি আমন করে দেখছিলি বলা তো?

    চেয়ে দেখ না। মাঠের ওদিকে ঐ ভাঙা বাড়িটা!…

    আলোটা ততক্ষণে নিভে গেছে—নির্জন মাঠের মাঝে অসপালট চন্দ্রালোকে সহসা যেন একটা বিভীষিকার আবছা
    ছায়া নেমে এসেছে।

    তাই তো! নির্জন
    পোড়ো বাড়িতে হঠাৎ কারা আবার এসে হাজির হলেন?—এতক্ষণে বললে
    রাজ্য।

    হ্যাঁ, তোমার
    কথাই বোধ হয় ঠিক রাজু—

    কি বলছিস?

    শিকারী বিড়াল?

    হ্যাঁ, তার
    গায়ের গন্ধ পেয়েছি। তারপর হঠাৎ চকিতে ঘরে দাঁড়িয়ে সুব্রত বললে, চল, একবার ওদিককার পথটা ঘরে দেখে আসা যাক।

    এই রাত্রে?

    ক্ষতি কি, চল না!

    বেশ, চল। তাড়াতাড়ি গায়ে একটা
    শার্ট চাপিয়ে দেওয়াল-আলমারি থেকে সিলাককডোর
    মইটা ও একটা টিচ নিয়ে সৰ্ব্বত ও রাজ, রাস্তায় এসে নামল।

    মাথার ওপর রাত্রির কালো আকাশ তারায় ভরা।
    অস্তমিত, চাঁদের আলো তখন আরো
    মালান হয়ে এসেছে। চারিদিকে থমথমে জমাট রাত্রি, যেন এক
    অতিকায় বাদাড়ের সবিশাল ডানার মত ছড়িয়ে রয়েছে। বড় রাস্তাটা অতিক্রম করে দুজনে এসে
    গলির মাথায় দাঁড়াল।

    কিরীটী রায়কে মনে পড়ে?
    সুব্রত সহসা একসময় প্রশ্ন করে।

    কোন কিরীটী রায়? ঐ সে আমাদের এখানে ফিরে আসার পর প্রীতিভোজের নিমন্ত্রণে যিনি এসেছিলেন? সাড়ে ছয় ফুট লম্বা গৌর বর্ণ, পাতলা চেহারা,
    মাথাভাতি কোঁকড়ানো চুল, চোখে পুর
    লেন্সের কালো সেলুলয়েডের ফ্রেমের চশমা!

    ও হ্যাঁ, মনে
    পড়েছে। ঐ যে শখের ডিটেকটিভ, গোয়েন্দাগিরি করেন, টালিগঞ্জে না কোথায় থাকেন? যিনি ড্রাগনটা তোর
    কাছ হতে চেয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন?

    হ্যাঁ, নির্জলা
    শখেরই গোয়েন্দাগিরি! কাকার প্রকান্ড কেমিকেল ল্যাবোরেটারী
    আছে। আর সে তাঁর একমাত্র ভাইপো।

    ওর নামও তো খুব শুনি।

    আমাদের পাশের বাড়ির শান্তিবাবুর
    বিশেষ বন্ধু উনি। তিনিই আমাদের কিরীটীবাবুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। আমরা
    শান্তিবাবুর সঙ্গে কিরীটীবাবুকেও নিমন্ত্রণ করেছিলাম। মনে নেই, কিরীটীবাবু আমাদের
    সব কাহিনী শুনে কি বলেছিলেন। আবার কোন আপদ-বিপদ ঘটলে তাঁকে যেন আগেই খবর দেওয়া হয়।
    ওঁর কথাটা আমার একেবারেই মনে ছিল না। কাল সকালে উঠেই একবার তাঁর ওখানে যেতে হবে,
    মনে করো।

    ইতিমধ্যে ওরা চলতে চলতে দুজনে গলিটার মাঝামাঝি এসে দাঁড়িয়েছে। আর
    অল্প একটু এগোলেই পোড়ো বাড়িটার পেছনের দরজার কাছে এসে পড়বে। এমন সময় ক্রিং ক্রিং
    করে সাইকেলের ঘন্টি শোনা যায়। পরক্ষণেই দুজনের দৃষ্টি পড়ল আবছা আলো-আঁধারে কে একজন
    তীব্র বেগে সাইকেল চালিয়ে গলির ভিতর দিয়ে ঐদিকেই এগিয়ে আসছে। সাইকেলের সামনের আলোটা
    টিম টিম করে জলছে।

    রাজু বা সুব্রত সাবধান হয়ে সরে যাবার আগেই সাইকেল-আরোহী হড়মড় করে
    এসে একেবারে অতর্কিতে রাজুর গায়ের ওপরই সাইকেল সমেত পড়ল।

    সরি, আপনার লেগে গেল নাকি? দুঃখিত–

    রাজুর পায়ে বেশ লেগেছিল। সে উষ্ণস্বরে বললে, ঐ ভাঙ্গা আলো লাগিয়ে
    বাইক চালানো! চলুন আপনাকে hand over করে দেব।

    আহা, আপনার কোথাও লেগেছে নাকি? কিন্তু আপনিই বা এত রাত্রে এই
    চোরাগলির মধ্যে হাওয়া খেতে বেরিয়েছেন কেন?

    কেন হাওয়া খেতে বের হয়েছি শুনতে
    চান?
    বলেই ক্রুদ্ধ রাজু লোকটার দিকে লাফিয়ে এসে সজোরে লোকটার নাকের
    ওপরে একটা লৌহ-মুষ্ট্যাঘাত করে।

    লোকটা অতর্কিত ঐ প্রচণ্ড মুষ্ট্যাঘাতে প্রথমটা বেশ হকচকিয়েই গিয়েছিল,
    কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে ক্ষিপ্রগতিতে রাজকে আক্রমণ করল।

    কেউ শক্তিতে কম যায় না।

    দুজনে জড়াজড়ি করে ঐ সরু
    গলির মধ্যেই লুটিয়ে পড়ে। সুব্রত
    স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল ব্যাপারটা কতদূর
    গড়ায়।

    হঠাৎ এমন সময় তীব্র একটা অস্ফুট যন্ত্রণাকাতর শব্দ করে রাজু একপাশে ছিটকে পড়ল।

           
    সুব্রতও কম বিস্মিত হয়নি। এক কথায় সে সত্যই
    হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। ইতিমধ্যে আক্রমণকারী তড়িৎ বেগে উঠে পড়ে, সাইকেলে আরোহণ করে
    চালাতে শুরু করেছে।

    রাজু
    যখন উঠে দাঁড়াল, সাইকেল-আরোহী তখন অদৃশ্য
    হয়ে গেছে। সুব্রত
    এগিয়ে এসে বলে, কি হল রাজু?–

    টীকা