Chapter Index

    এক বণিক একবার দূর যাত্রায় বেরোবার আগে তাঁর তিন মেয়ের কাছে বিদায় নেবার সময় বললেন—বল মা-রা কার জন্যে কী আনব?

    বড় মেয়ে বললে—মুক্তো। মেজ মেয়ে বললে—হীরে। আর ছোট মেয়ে বললে—আমার জন্যে একটি উড়ন্ত গায়ন্ত লার্ক পাখি এনো।

    বাবা বললেন—বেশ যদি পাই তো নিশ্চয়ই আনব। তিন মেয়েকে চুমু খেয়ে বিদায় নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়লেন। বিদেশে গিয়ে বড় দুই মেয়ের জন্যে তিনি মুক্তো আর হীরে কিনলেন কিন্তু যত জায়গায় উড়ন্ত গায়ন্ত লার্ক পাখির খোঁজ করলেন কোথাও পেলেন না। তাঁর বড় দুঃখ হল, কারণ ছোট মেয়েটিই ছিল তাঁর সবচেয়ে প্রিয়।

    একদিন তিনি এক বনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, দেখলেন বনের মাঝে সুন্দর এক রাজপ্রাসাদ। প্রাসাদের কাছে একটি গাছ আর সেই গাছের একেবারে মাথায় একটি লার্ক পাখি উড়ছে আর গাইছে।

    বণিক বললেন—ঠিক সময় এসে পড়েছি! বলে তাঁর চাকরকে বললেন—ঘোড়া থেকে নেমে পাখিটা ধর তো! কিন্তু যেই না গাছের কাছে যাওয়া অমনি কোথা থেকে এক সিংহ লাফিয়ে এসে গা-ঝাড়া দিয়ে গর্জন করে বললে—কে আমার পাখি চুরি করে? খেয়ে ফেলব তাকে!

    বণিক এগিয়ে এসে বললেন—মাপ করুন হুজুর, আমরা জানতুম না যে পাখিটি আপনার। এর জন্যে যত টাকা দণ্ড দিতে হয় দেব—শুধু আমাদের প্রাণে মারবেন না!

    কিন্তু সিংহ বললে—তোমার বাঁচবার কোন উপায় নেই। শুধু একমাত্র উপায়, যখন তুমি বাড়ি ফিরবে তখন প্রথমেই তোমার কাছে যে আসবে তাকে যদি আমায় দিয়ে দাও তো তোমায় ছেড়ে দেব। যদি রাজি হও তাহলে পাখিটাও পেতে পার!

    বণিক ইতস্তত করতে লাগলেন। বললেন—এমন তো হতে পারে যে আমি যখন বাড়িতে ঢুকব তখন আমার সবচেয়ে প্রিয় যে ছোট মেয়ে সে-ই ছুটে আসবে!

    চাকর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভয়ে কাঁপছিল। সে বললে—আপনার মেয়েই যে প্রথমে আপনার কাছে আসবে তারই বা ঠিক কী? একটা বেড়াল বা কুকুরও তো আসতে পারে?

    শেষ অবধি বণিক রাজি হলেন। লার্ক পাখি হাতে নিয়ে সিংহকে বললেন—বাড়িতে ঢুকতে প্রথমে যা আমার কাছে আসবে তাই হবে আপনার।

    বাড়ি পৌঁছে তিনি যখন ঢুকতে যাচ্ছেন প্রথমেই যার সঙ্গে তাঁর দেখা হল সে হচ্ছে তাঁর ছোট মেয়েটি। ছুটতে ছুটতে মেয়েটি এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরে আদর করে চুমু খেল। তারপর যখন দেখল যে বাবা উড়ন্ত গায়ন্ত লার্ক পাখি এনেছেন, সে আনন্দ রাখবার আর জায়গা পেলে না।

    কিন্তু বাবার মুখ শুকিয়ে গেল। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বললেন—মা, এই পাখির বদলে আমি যা দেব বলে এসেছি তা আমার জীবনের চেয়ে মূল্যবান। এক সিংহের মুখে তোমাকে পাঠাবো বলে এসেছি। সিংহ তোমায় একবার হাতে পেলে টুকরো-টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলবে। এই বলে যা-যা ঘটেছিল সব তাঁর মেয়েকে খুলে বললেন। বলে বললেন—যাই ঘটুক মা, তোমাকে সিংহের কাছে যেতে হবে না।

    মেয়েটি তার বাবাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললে—দেখ বাবা, তুমি যখন কথা দিয়েছ, সে কথা রাখতেই হবে। আমি যাব, গিয়ে সিংহের মনকে নরম করে সুভালাভালি ফিরে আসব।

    পরদিন সকালে মেয়েটিকে রাস্তা দেখিয়ে দেওয়া হল। সে মনে সাহস নিয়ে চলল বনের মধ্যে।

    এক রাজপুত্রকে মায়াবলে সিংহ করে রেখেছিল এক জাদুকর—তিনিই ছিলেন ঐ সিংহ। দিনের বেলায় রাজপুত্র এবং তাঁর লোকলস্কর সবাই সিংহ হয়ে যেত। রাত এলে আবার তাঁরা নিজেদের রূপ ফিরে পেতেন। মেয়েটি সেখানে এসে পৌঁছতেই তাকে খাতির করে রাজপ্রাসাদের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হল। রাত হতে সিংহ রূপ নিল এক সুন্দর ছেলের। সেই রাতেই খুব ধুম করে দু-জনের বিয়ে হয়ে গেল। সেই থেকে তারা খুব সুখে থাকতে লাগল—রাতে জেগে দিনে ঘুমিয়ে।

    একদিন রাজপুত্র এসে বললেন—কাল তোমার বাবার বাড়িতে মস্ত এক উৎসব। তোমার বড় ভগ্নির বিয়ে। যদি তুমি যেতে চাও, আমার সিংহেরা তোমায় নিয়ে যেতে পারে।

    মেয়েটি বললে—অনেকদিন বাবাকে দেখিনি, যাই। বলে সে সিংহদের সঙ্গে চলল।

    সে আসতে সবাই ভারি আনন্দিত হল; কারণ সবাই ভেবেছিল তাকে বুঝি সিংহ ছিঁড়ে ফেলেছে—মরেই গেছে অনেক কাল আগে। সে সবাইকে বললে কী সুন্দর স্বামী পেয়েছে সে, কত সুখে আছে। বিয়ের উৎসব যতদিন চলল ততদিন সে বাপের বাড়িতে রইল। তারপর ফিরে গেল বনে।

    মেজদিদির বিয়ের সময় আবার নেমন্তন্ন এল। সে সিংহকে বললে—এবারে আমি একলা যাব না। তোমাকেও আসতে হবে।

    সিংহ বললে—তাতে বিপদ আছে। কারণ রাত্রিবেলা যদি একছিটে আলোও এসে আমার গায়ে পড়ে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আমি পায়রা হয়ে গিয়ে সাত বছর পায়রার রূপে ঘুরব।

    মেয়েটি বললে—ভেবো না। চল আমার সঙ্গে। সবরকম আলোর রশ্মি থেকে আমি তোমায় রক্ষা করব।

    দু-জনে একসঙ্গে গেল তারা। সঙ্গে নিয়ে গেল তাদের ছোট ছেলেটিকে। সেখানে গিয়ে তারা মোটা-মোটা কাঠের তক্তার দেয়াল দিয়ে একটা ঘর বানালো যার মধ্যে একটুও ফাঁক রইল না। ঠিক হল, যখন বিয়ের মশাল জ্বালানো হবে তখন রাজপুত্র সেই ঘরের মধ্যে গিয়ে শুয়ে থাকবেন যাতে তাঁর গায়ে কোনরকম আলো এসে লাগতে না পারে। কিন্তু দরজাটা তৈরি হয়েছিল কাঁচা কাঠের; কাঠ শুকোতেই তার মধ্যে সরু একটি ফাঁক জন্মেছিল। কারুর চোখে পড়েনি সেটা।

    খুব ধুম করে বিয়ে হল। গির্জে থেকে যখন বিয়ের মিছিল অনেক মশাল জ্বালিয়ে ফিরল তখন সুতোর মতো সরু এক-ছিটে আলো এসে পড়ল রাজপুত্রের গায়ে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর রূপ গেল বদলে। তার স্ত্রী এসে তাঁকে খুঁজে পেল না। দেখল ঘরের মধ্যে শুধু একটি সাদা পায়রা বসে আছে।

    পায়রা বললে—সাত বছর আমায় পৃথিবীর নানা স্থানে ঘুরে বেড়াতে হবে। সাত পা অন্তর আমি এক ফোঁটা করে রক্ত আর একটি করে সাদা পালক ফেলে যাব। এই দেখে তুমি জানবে কোন্ দিকে আমি গেছি। এই পথে যদি তুমি আমার পিছনে পিছনে আসতে পার তাহলে তুমি আমায় মুক্ত করতে পারবে।

    বলে পায়রা দরজা দিয়ে উড়ে চলে গেল। মেয়েটি গেল তার পিছু-পিছু। দেখল সাত পা অন্তর এক ফোঁটা রক্ত আর একটি সাদা পালক পড়ে আছে। সারা পৃথিবীতে সে ঘুরল। সাত বছরের মধ্যে একবারও সে থামল না। সাত বছর যখন শেষ হয়ে আসছে, তার মনে আনন্দ হল এই ভেবে যে এইবার তার সব দুঃখের অবসান হবে। কিন্তু তা হবার নয়। একদিন যখন চলেছে, হঠাৎ সে দেখল রক্তের ফোঁটাও পড়ে নেই, পালকও পড়ে নেই। আকাশের দিকে চেয়ে দেখল পায়রাটি কোথাও নেই।

    মেয়েটি ভাবল—কোন মানুষের সাধ্য নেই আমায় সাহায্য করে। ভেবে সে সূর্যের কাছে গিয়ে উঠল। উঠে বললে—সূর্যদেব, আপনি পৃথিবীর সব উপত্যকায় সব পর্বত-চূড়ায় আলো দেন। আপনি কি কোন সাদা পায়রাকে উড়ে যেতে দেখেছেন?

    সূর্য বললেন—না, তা তো দেখিনি। তবে, তোমায় আমি একটি ছোট্ট কৌটো দেব। যখন দরকার পড়বে খুলো।

    সূর্যকে ধন্যবাদ দিয়ে মেয়েটি চলল রাত পর্যন্ত। তারপর যখন চাঁদ উঠল সে চাঁদকে বললে—আপনি তো মাঠের উপর বনের উপর সারা রাত আলো দেন। আপনি একটি সাদা পায়রাকে উড়ে যেতে দেখেছেন?

    চাঁদ বললেন—না, আমি দেখিনি। তবে এই নাও একটি ডিম। যখন খুব দরকার পড়বে এটিকে ভেঙো।

    চাঁদকে ধন্যবাদ দিয়ে সে চলল যতক্ষণ পর্যন্ত না রাতের হাওয়া ওঠে। রাতের হাওয়াকে মেয়েটি জিজ্ঞেস করলে—আপনি গাছ আর পাতার মধ্যে দিয়ে বহে যান। আপনি একটি সাদা পায়রা দেখেছেন?

    রাতের বাতাস বললে—না আমি দেখিনি। তবে আর তিন জন বাতাস আছেন তাঁদের জিজ্ঞেস কর, তাঁরা হয়ত দেখেছেন।

    পুবে বাতাস আর পশ্চিমা বাতাস এল—তারা কোন পায়রা দেখেনি। শুধু দক্ষিণা বাতাস বললে—আমি সাদা পায়রাকে দেখেছি। সে উড়ে গেছে লাল সমুদ্দুরের দিকে। সেখানে গিয়ে তার সাত বছর কেটে যাওয়ার ফলে সে আবার সিংহ হয়ে গেছে। সিংহের সঙ্গে সারাক্ষণ এক ড্রাগনের লড়াই চলেছে। সেই ড্রাগন হচ্ছে এক জাদু-করা রাজকন্যা।

    তখন রাতের হাওয়া বললে—শোনা আমার উপদেশ। লাল সমুদ্দুরে যাও। সমুদ্দুরের ডান পাড়ে দেখবে লম্বা লম্বা খাগড়ার বন। একটা একটা করে খাগড়া গুণে এগারোটা কেটে ফেলবে। সেই কাটা খাগড়ার লাঠি দিয়ে ড্রাগনকে ঘা মারবে। মারলেই দেখবে সিংহ ড্রাগনকে বশ করে ফেলেছে। সঙ্গে সঙ্গে দু-জনেই তাদের নিজ রূপ ফিরে পাবে। একটু খুঁজলেই দেখতে পাবে ডানাওয়ালা এক পক্ষীরাজ—সে লাল সমুদ্দুরের ধারে বাস করে। রাজপুত্তুরকে নিয়ে তার পিঠে চড়ে বোসো। তাহলেই সে তোমাদের নিয়ে সমুদ্র পার হয়ে চলে আসবে। এই নাও একটি বাদাম। মাঝসমুদ্দুরে এসে যখন পৌঁছবে তখন বাদামটি জলে ফেলে দিয়ো। দেখবে সঙ্গে সঙ্গে বাদামটি খুলে গিয়ে জলের মধ্যে থেকে একটি লম্বা বাদাম গাছ গজিয়ে উঠবে। পক্ষীরাজ তার উপর বসে বিশ্রাম করবে। বিশ্রাম না করলে ওর ক্ষমতা নেই যে তোমাদের নিয়ে সমুদ্র পার হয়। যদি জলে বাদাম ফেলতে ভুলে যাও তাহলে ও-ই তোমাদের জলে ফেলে দেবে।

    মেয়েটি এগিয়ে চলল। রাতের হাওয়া যেমন বলেছিল সবই ঠিক তেমনি হল। সমুদ্রের ধারে খাগড়া গুণে এগারোরটা কেটে সে ড্রাগনকে তাই দিয়ে ঘা মারল, আর সিংহও তাকে আয়ত্তে এনে ফেললে। সঙ্গে সঙ্গে দু-জনেই মানুষের দেহ ফিরে পেল। কিন্তু ড্রাগন-রূপী রাজকন্যা যেই মায়ামুক্ত হলেন অমনি তিনি রাজপুত্রের হাত ধরে পক্ষীরাজের পিঠের উপর গিয়ে বসলেন আর তারা উড়ে চলল। বেচারি পথচারিণী মেয়ে মাটিতে বসে পড়ল কাঁদতে। অনেকক্ষণ কেঁদে শেষে সে বললে—যেখানে বাতাস বয় সেখানেই আমি যাব। যতদিন মোরগ ডাকবে ততদিন আমি তাকে খুঁজব। খুঁজে পেলে তবে থামব।

    এমনি করে অনেক পথ চলে শেষে সে এসে হাজির হল এক প্রাসাদে যেখানে রাজপুত্র আর রাজকন্যা বাস করছেন। সেখানে পৌঁছে সে শুনল যে তাঁদের বিয়ের জন্যে এক মস্ত উৎসব হবে। মেয়েটি বললে—ভগবান আমার সহায় হন! বলে সূর্যের দেওয়া সেই কৌটোটি খুলে ফেললে। কৌটোর মধ্যে এমনই একটি পোশাক যা কেউ কোনদিন দেখেনি। সূর্যে মতো উজ্জ্বল। সেটি বার করে গায়ে দিয়ে সে প্রাসাদে গেল। সবাই তাকে দেখে অবাক! কনেরও চোখ ধাঁধিয়ে গেল। পোশাকটি কনের এত পছন্দ হল যে সে বললে—এটি আমি কিনতে চাই।

    মেয়েটি বললে—সোনা দানা দিয়ে এ জিনিস বিক্রি হয় না, শুধু রক্ত মাংস দিয়ে হয়।

    কনে জিজ্ঞেস করলে—তার মানে কী?

    মেয়েটি উত্তর দিলে—আজ রাতে রাজপুত্রের সঙ্গে তাঁর ঘরে আমায় কথা কইতে দিতে হবে।

    কনে বললে—তা হয় না। কিন্তু সেই পোশাকের উপর এমনই তার লোভ যে শেষটা রাজি হল। ঘরের চাকরকে কনে রাজকন্যা বলে দিল রাজপুত্রকে একটা ঘুমের ওষুধ দিয়ে দিতে।

    রাত্রে রাজপুত্র যখন ঘুমোচ্ছন, মেয়েটি গেল তাঁর ঘরে। রাজপুত্রের বিছানায় বসে সে বললে—সাত বছর আমি তোমার পিছনে পিছনে ঘুরেছি। আমি সূর্যের কাছে গেছি, চাঁদের কাছে গেছি, চার বাতাসের কাছে গেছি তোমায় খুঁজতে। ড্রাগনের হাত থেকে তোমায় বাঁচিয়েছি। তুমি কি আমায় ভুলে যাবে?

    কিন্তু রাজপুত্রের এমনই ঘুম যে তিনি তার গলা শুনে ভাবলেন বুঝি পাইন বনের মধ্য দিয়ে সর-সর করে বাতাস বয়ে যাচ্ছে। সকাল হতে সে ঘর ছেড়ে চলে গেল। তার পোশাক নিলেন কনে-রাজকন্যা। মেয়েটি মাঠে গিয়ে কাঁদতে বসল। সেখানে বসে থাকতে থাকতে তার মনে পড়ল চাঁদ যে ডিমটি দিয়েছেন তার কথা। ডিমটি ভাঙতেই তার মধ্যে থেকে একটি সোনার মুরগি আর তার বারোটি সোনার বাচ্চা বেরিয়ে এল। তারা কিচমিচ করে ঘুরে বেড়াতে লাগল আর থেকে-থেকে মায়ের ডানার তলায় এসে লুকোতে লাগল। এমন সুন্দর দৃশ্য কেউ দেখেনি।

    মেয়েটি উঠে মাঠে তাদের চরাতে লাগল। জানলা থেকে রাজকন্যা দেখতে পেলেন। মুরগিগুলি দেখে তাঁর এত ভাল লাগল যে তিনি জানতে পাঠালেন, ওগুলি বিক্রির জন্যে কি না।

    মেয়েটি বললে—সোনা-দানায় নয়। রক্তে আর মাংসে। আজ আবার রাজপুত্রের ঘরে তাঁর সঙ্গে আমায় কথা কইতে দিতে হবে।

    রাজকন্যা ভাবলেন, আগের বারের মতই, ওকে ঠকাবো। ভেবে বললেন—বেশ, তাই।

    এদিকে রাজপুত্র সেদিন যখন শুতে যাবেন তিনি ঘরের চাকরকে জিজ্ঞেস করলেন—কাল রাত্রে যেসব গাছের পাতার ঝর-ঝর মর-মর শব্দ শুনছিলুম তা কোথায় থেকে আসছিল? চাকর তখন খুলে বলল—আপনার ঘরে একটি গরিব মেয়েকে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল বলে রাজকন্যা আপনাকে ঘুমের ওষুধ দিতে বলেছিলেন। আজ রাতেও সেই হুকুম।

    রাজপুত্র বললেন—ঘুমের ওষুধটা আমার মাথার কাছে রেখে দিয়ো।

    রাত্রে মেয়েটি আবার এল। তারপর যখন সে তার দুঃখের ইতিহাস বলতে আরম্ভ করল, রাজপুত্র তাঁর ভুলে-যাওয়া স্ত্রীর কণ্ঠস্বর চিনতে পারলেন। বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে বললেন—এতদিনে আমার মায়া সম্পূর্ণ কাটল! সমস্তই এতদিন ছিল স্বপ্ন। রাজকন্যা আমায় যাদু করেছিলেন, তাইতেই আমি তোমায় ভুলে গিয়েছিলুম। কিন্তু ভগবান আমার চোখ ফুটিয়ে দিয়েছেন।

    তারপর তাঁরা দু-জনে লুকিয়ে রাজপ্রাসাদ থেকে বেরোলেন। রাজকন্যার বাবা ছিলেন এক জাদুকর, তাঁকেই ভয়। তাঁরা পক্ষীরাজে চড়ে লাল সমুদ্দুরের উপর দিয়ে উড়লেন। মাঝ-সমুদ্দুরে এসে মেয়েটি বাদামটি ফেলে দিতেই একটি বাদাম গাছ গজিয়ে উঠল। পক্ষীরাজ বিশ্রাম করতে বসল তার উপর। তারপর বাড়ি পৌঁছলেন। পৌঁছে দেখলেন, তাঁদের ছেলে বড় হয়েছে, লম্বা হয়েছে, সুন্দর হয়েছে। সেই থেকে তাঁরা সুখে বাস করতে লাগলেন।

    টীকা