Chapter Index

    হার্টৎস অরণ্যের মাঝখানে আছে এক উঁচু পাহাড়। এই পাহাড় নিয়ে লোকমুখে নানারকম গল্প শোনা যায়। শোনা যায় রাত্রে সেখানে পরীরা নাচতে আসে। শোনা যায় প্রাচীন সম্রাট লালদাড়ি সেখানে তাঁর মর্মর সিংহাসনে বসে সভা ডাকেন—তাঁর লম্বা দাড়ি মাটি পর্যন্ত লুটোয়।

    এই পর্বতের নিচে এক গ্রামে বহু বহু বছর আগে কার্ল কাটৎস্‌ নামে একটি লোক বাস করত। কার্ল ছাগল চরাতো। প্রতিদিন সকালে সে তার ছাগলের পাল নিয়ে পাহাড়ের গায়ে যেখানে সবুজ ভূমি দেখত সেখানেই যেত। অনেক সময় এমন হত, হঠাৎ সন্ধের অন্ধকার ঘনিয়ে এলে সে আর গ্রামে ফিরত না। পাহাড়ের এক জায়গায় এক ভাঙা রাজপ্রাসাদ ছিল—কতকাল আগের কেউ জানে না—সেইখানে ভাঙা পাঁচিলের বেড়ার মধ্যে ছাগলের পালকে পুরে দিত যাতে তারা পালিয়ে যেতে না পারে। এমনি করে সারা রাত কাটিয়ে দিত।

    জঙ্গলের মধ্যে এই ভাঙা প্রাসাদে এক সন্ধ্যায় প্রবেশ করে সে দেখল, তার সবচেয়ে সুন্দর যে ছাগল সেইটিই কোথায় হারিয়ে গেছে। সব জায়গায় সে খুঁজে দেখল, কিন্তু কোথাও পেল না। কিন্তু অবাক কাণ্ড, সকালবেলা ছাগল গুনতে গিয়ে দেখল সবকটিই আছে—হারানো ছাগলটি শুদ্ধ। বার বার এই একই ঘটনা ঘটতে লাগল।

    তখন সে ভাবল, নাঃ, ভাল করে লক্ষ রাখতে হচ্ছে! পুরোনো পাঁচিল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে চারিদিক খুঁজে সে দেখল একটি সরু দরজা। হঠাৎ মনে হল যেন এরই মধ্যে দিয়ে তার প্রিয় ছাগলটি পালাচ্ছে। দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে কার্ল চলল তার পিছু পিছু। পাথরের এক ফাটলের মধ্যে দিয়ে রাস্তা। সরু রাস্তা ধরে কোনক্রমে সে এগিয়ে চলল। নামতে নামতে শেষে এক গুহার মুখে পৌঁছতে ছাগলটি কোথায় হারিয়ে গেল। সেই সময় তার চোখে পড়ল যে তার বিশ্বস্ত কুকুরটিও তার সঙ্গে নেই। শিস দিয়ে তাকে ডাকল, কিন্তু কুকুর এল না। কাজেই সে ঠিক করল যে গুহার মধ্যে ঢুকে নিজেই ছাগলটাকে খুঁজে বার করবে।

    অনেকক্ষণ ধরে হাতড়ে হাতড়ে অবশেষে সে এক জায়গায় এসে পৌঁছল যেখানে অল্প একটু আলোর রেখা এসে পড়েছে। সেখানে এসে অবাক হয়ে গেল এই দেখে যে ছাদের কোন এক ফাঁক দিয়ে ঝুর-ঝুর করে দানা এসে পড়ছে মেঝেয় আর ছাগলটা দিব্যি আরাম করে সেই দানা খাচ্ছে। শিলাবৃষ্টির মতো কোথা থেকে এত দানা এসে পড়ছে সেটা আবিষ্কার করবার জন্যে সে চারিদিকে ঘুরে দেখতে লাগল; কিন্তু মাথার উপর সমস্তটা এত অন্ধকার যে কিছুই খুঁজে বার করতে পারল না।

    চুপ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে শুনতে লাগল। তার মনে হল ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনি আর তাদের খুর ঠোকার শব্দ শুনতে পাচ্ছে। আবার শুনতে তার মনে হল, সত্যিই তাই। তখন সে বুঝল যে মাথার উপর ঘোড়ারা খাচ্ছে, তাদেরই গামলা থেকে উপছে পড়ছে দানা। যে পাহাড়ের ফাটলের মধ্যে একমাত্র ছাগল ছাড়া আর কেউ চরতে পারে না, সেখানে এইসব ঘোড়া এল কোথা থেকে? এখানে নিশ্চয়ই কোন-না-কোন রকমের লোক আছে। কারা তারা? এই অজানা লোকেদের মধ্যে এসে পড়া কি তার পক্ষে ভাল হয়েছে? কার্ল খানিকক্ষণ ভাবল, কিন্তু ক্রমেই তার বিস্ময় বেড়ে চলল। হঠাৎ সে শুনল কে তার নাম ধরে ডাকছে। গুহার মধ্যে প্রতিধ্বনি শোনা গেল—কার্ল কাটৎস! কার্ল কাটৎস! সে পিছন ফিরে কাউকে দেখতে পেল না। আবার তার কানে এল তীক্ষ্ণ ডাক—কার্ল কাটৎস! তারপরই দেখা গেল ছোট্ট এক বামনের আকৃতিতে এক রাজভৃত্য—মাথায় চুড়োওয়ালা টুপি, গায়ে লাল কোট—গুহার এক অন্ধকার কোণ থেকে বেরিয়ে আসছে।

    বামন ঘাড় নেড়ে তাকে ডাকল তার পিছনে পিছনে আসবার জন্যে। কার্ল ভাবল, আগে জেনে নিই লোকটা কে, তবে তো তার সঙ্গে যাব। কার্লের প্রশ্নে সে শুধু ঘাড় নাড়ল, কোন কথা বলল না। তারপর আবার তাকে ইশারা করে ডাকল সঙ্গে আসবার জন্যে। কার্ল তখন চলল তার পিছু-পিছু। ভাঙা-দেয়াল বাড়ির মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে একটু পরেই সে শুনতে পেল, মাথার উপর কি যেন সব গড়াচ্ছে, যেন বাজ পড়ছে—আর পাথরে পাথরে উঠছে তার প্রতিধ্বনি। যত এগোতে লাগল শব্দ ততই বাড়তে লাগল। অবশেষে সে এসে পৌঁছল এক উঠোনে যার চারিদিক আইভি-লতা ছাওয়া দেয়ালে ঘেরা। জায়গাটা মনে হল এক ছোট উপত্যকার মধ্যস্থল। চারিপাশ ঘিরে উঠছে উত্তুঙ্গ সব পাথর। তার থেকে লম্বা লম্বা গাছের শাখা ছড়িয়ে পড়েছে মাথার উপর চাঁদোয়ার মতো, কাজেই শুধু একটু গোধূলি-আলোর মতো আলো এসে পড়েছে তার মধ্যে দিয়ে। আর এইখানে কার্ল দেখল মখমলের মত নরম ঘাসের উপর বারো জন অদ্ভুত চেহারার বুড়ো গম্ভীরমুখে গোলা গড়িয়ে গড়িয়ে স্কিট্‌ল্ খেলছেন।

    তাঁদের পোশাক কার্লের খুব বেশি খাপছাড়া মনে হল না, কারণ তাদের শহরের যে গির্জে তার ভিতরে একটা পুরাকালীন স্মৃতিস্তম্ভ ছিল তার গায়ে যে প্রাচীন বীরপুরুষদের মূর্তি খোদাই ছিল তাঁদের পোশাক অনেকটা এই রকম। এঁরা কেউ একটি কথাও বললেন না। গম্ভীরভাবে তাঁদের খেলাতেই মগ্ন রইলেন। শুধু যিনি সবচেয়ে বড় তিনি ইসারা করে কার্লকে বললেন, খেলতে খেলতে কাঠের মূর্তিগুলি যেমন যেমন পড়ে যাচ্ছে অমনি তাদের উঠিয়ে বসিয়ে দিতে। প্রথমটা ভয়ে তার হাঁটু কাঁপছিল, ভাল করে বৃদ্ধ বীরদের দিকে তাকাবারই তার সাহস হচ্ছিল না। কিন্তু একটু পরেই সে লক্ষ করল যে প্রত্যেক বুড়ো তার দান শেষ হয়ে গেলেই নিজের বসবার জায়গায় ফিরে যাচ্ছে, আর সেই বামন সুগন্ধী সুরায় তার পাত্র ভরে দিচ্ছে।

    একটু একটু করে কার্লের সাহস ফিরে এল। তখন সে ইসারা করে বামনকে বললে তার দিকে এক পাত্র সুরা এগিয়ে দিতে। বামন এগিয়ে এসে নতজানু হয়ে তাকে সুরা দিলে। কার্লের মনে হল এমন চমৎকার জিনিস যে জীবনে কখনো চাখেনি। তার মনে, তার গায়ে নতুন বল এসেছে। কাজেই সে বার-বার সুরা চেয়ে পান করতে লাগল।

    সে কিংবা বুড়োরা—কে যে আগে খেলতে খেলতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল কার্ল তা জানে না। কার্ল শুধু জানে সুরার প্রভাবে সে ঘুমিয়ে পড়েছিল এবং যখন সে জেগে উঠল, দেখল যে প্রথমে যে জায়গায় সে তার ছাগলের পালকে বন্দী করেছিল সেইখানেই সে শুয়ে রয়েছে। চারিদিক উজ্জ্বল—সূর্য উঠেছে মাথার উপরে। পায়ের তলায় সেই একই সবুজ ঘাস, চারিদিকে আইভিলতা-ছাওয়া সেই একই ভেঙে-পড়া দেয়াল। চোখ কচলে উঠে সে তার কুকুরকে ডাকল, কিন্তু কুকুরকেও দেখা গেল না, ছাগলরাও নেই। তারপর সে যখন আবার তাকালো মনে হল কালকের চেয়ে ঘাসগুলো যেন আরো অনেক লম্বা হয়েছে। মাথার উপর কতকগুলো গাছ; সেগুলো হয় সে আগে দেখেনি অথবা একেবারেই ভুলে গেছে। কার্ল মাথা নাড়তে লাগল। বুঝতেই পারল না তার মস্তিষ্ক ঠিক আছে কি না। তারপর সে গা-মোড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। দেহের গাঁটগুলো কেমন যেন অসাড় ঠেকল। একটু একটু করে তার গতকালের ঘটনা এবং খেলার কথা মনে পড়ল। ভাবল, আচ্ছা, কারা এইসব আশ্চর্য লোক যাঁরা এই অদ্ভুত জায়গায় স্কিট্‌ল্ খেলতে এসেছিলেন?

    প্রথমেই সে চেষ্টা করল, কাল যে দরজার ফাঁক দিয়ে তার ছাগলটা পালিয়েছিল সেটা খুঁজে বার করতে। কিন্তু অবাক হয়ে দেখল, কোনদিকে একটুও ফাঁক নেই। দেয়ালের গায়ে কোনদিকে একটি ফুটোও নেই। চিন্তায় পড়ে সে তার মাথা চুলকোতে গেল। দেখল তার টুপি ভরা ছিদ্র। সে ভাবল—এই তো সেদিন নতুন টুপি কিনেছিলুম। কী হল? জুতোর দিকে চোখ পড়তে দেখল, বাড়ি থেকে বেরোবার সময় প্রায় নতুন ছিল যে জুতো তা এত পুরোনো হয়ে গেছে যে ওটা পায়ে দিয়ে বাড়ি যেতে গেলে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে যাবে। সমস্ত পোশাকেরই ঐ অবস্থা। যত সে দেখতে লাগল, যত সে ভাবতে লাগল ততই সে বুঝে উঠতে পারল না, কী তার হয়েছে!

    অবশেষে সে দেয়ালের ঘের থেকে বেরিয়ে চলল তার ছাগলের পাল খুঁজতে। ধীর পদে দুঃখভরা মন নিয়ে সে পাহাড়ের পথ দিয়ে চলল যেখানে তার ছাগলদের থাকবার সম্ভাবনা তাই দেখতে দেখতে। কিন্তু একটি ছাগলছানাও দেখা গেল না। আবার সে শিস দিয়ে তার কুকুরকে ডাকল, কিন্তু কেউ এল না। পাহাড়ের নিচে সমতলের উপর তার গ্রাম, যেখানে তার বাড়ি। অবশেষে সে নাবাল পথ ধরল তার গ্রামের দিকে।

    সে ভাবলে—নিশ্চয় কোন না কোন গ্রামবাসীর সঙ্গে দেখা হবে যে বলতে পারবে আমার ছাগলগুলো কোথায়। কিন্তু গ্রামের কাছে সে যত এগোতে লাগল, যাদের সঙ্গে তার দেখা হল তারা সবাই অচেনা। তাদের পোশাক পর্যন্ত তার গ্রামবাসীদের মতো নয়। এমনকি সন্দেহ হয় তাদের কথাবার্তাও বুঝি অন্যরকম। তারা কাছে এলে সে উদ্বিগ্ন স্বরে যখন তার ছাগলের কথা জিজ্ঞেস করল তারা শুধু তার দিকে ফ্যাল-ফ্যাল করে তাকিয়ে নিজেদের থুঁতনিতে হাত দিয়ে দেখাতে লাগল। অবশেষে সে-ও নিজের থুঁতনিতে হাত দিতেই দেখল, আধ হাতের উপর লম্বা তার দাড়ি গজিয়ে গেছে।

    সে ভাবল—হয় দুনিয়াটাই একেবারে উল্টে গেছে আর না হলে আমায় জাদু করেছে কেউ। অথচ যখন পাহাড়ের দিকে ঘুরে তাকালো, দেখল সেই পাহাড়ই আছে। পাহাড়ের উপরের বন সেই একই রকম। গ্রামে ঢুকে দেখল—গ্রামের বাড়িগুলি, বাড়ির বাগানগুলিও আগেরই মতো আছে—ঠিক আগে যেখানে ছিল সেইখানেই। একজন পথিক গ্রামের ছেলেদের গ্রামের নাম জিজ্ঞেস করল। উত্তরে কার্লের গ্রামের নামই করল তারা।

    কিছুই বুঝতে না পেরে ঘাড় নাড়তে নাড়তে সে গ্রামের পথ ধরে সোজা নিজের কুটিরে গিয়ে হাজির হল। দেখল বহুদিন তার কুটির সারানো হয়নি। জানলাগুলো ভাঙা, দরজার কব্জা খুলে গেছে, উঠোনে অচেনা একটা ছেলে এক দন্তহীন বুড়ো কুকুরের সঙ্গে খেলা করছে। কার্ল-এর মনে হল কুকুরটাকে সে যেন চিনতে পারছে, কিন্তু তাকে ডাকতে কুকুরটা ঘেউ-ঘেউ করে উঠল। খোলা দরজা দিয়ে সে ভিতরে উঁকি দিল কিন্তু ভিতরটা এত ফাঁকা, এত দরিদ্র যে তাই দেখে সে টলতে টলতে বেরিয়ে এল। বেরিয়ে এসে তার স্ত্রীর আর ছেলেমেয়েদের নাম ধরে চেঁচিয়ে ডাকতে লাগল। কিন্তু কেউ এল না, কেউ তার ডাকে সাড়া দিল না।

    দেখতে দেখতে একদঙ্গল মেয়ে আর শিশু সেই অদ্ভুত চেহারার লম্বা, পাকাদাড়িওয়ালা লোকটির চারিদিকে ঘিরে এল। সবাই তাকে প্রশ্ন করল—কে তুমি? কাকে তুমি চাও?

    ব্যাপারটা তার ভারি অদ্ভুত লাগল। এই তো সে নিজের বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে রয়েছে; আর অচেনা লোকেদের কাছ থেকে তাকে নিতে হচ্ছে তার নিজেরই স্ত্রীপুত্রের খবর! ভিড় হঠাবার জন্যে সে বললে—বেশ, তাহলে কামারশালার হান্স কোথায়?

    সকলেই চুপ। ফ্যাল-ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। শেষে একটি বুড়ি বলল—সে সাত বছর আগে এমন জায়গায় চলে গেছে যেখানে আজ তোমরা পৌঁছতে পারবে না।

    —বেশ, তাহলে দর্জি ফ্রিট্ৎস?

    পাগলাটে এক খোঁড়া ছিল, সে তার লাঠির উপর ভর করে বললে—তার আত্মার শান্তি হোক। আজ দশ বছর হল সে যে বাড়িতে গিয়ে শুয়েছে সেখান থেকে সে কোনদিন বেরোবে না।

    কার্ল কাট্ৎস বুড়ির মুখের দিকে একবার তাকিয়ে শিউরে উঠল। ও ছিল গ্রামের ঘুঁট-চর্চি বুড়ি, কিন্তু ওর মুখের চেহারা এত বদলে গেছে যে বলবার নয়। আর প্রশ্ন করবার সমস্ত ইচ্ছে তার চলে গেল। শেষে ভিড় ঠেলে এগিয়ে এল একটি কমবয়সি মেয়ে। তার কোলে একটি দুধের শিশু আর তার হাত আঁকড়ে ধরে একটি তিন বছরের খুকি। সকলেরই চেহারা অবিকল কার্ল-এর বৌ-এর মতো।

    বুনো গলায় সে বলে উঠল—তোমার নাম কী?

    —লিজে।

    —বাবার নাম?

    —কার্ল কাট্‌ৎস। ঈশ্বর তাঁকে আশীবাদ করুন। অনেক দিন আগে তিনি হারিয়ে গেছেন। আজ কুড়ি বছর হয়ে গেল রাতে আমরা তাঁকে পাহাড়ে খুঁজে খুঁজে বেরিয়েছি। তাঁর কুকুর আর ছাগলের পাল ফিরে এসেছিল, কিন্তু তিনি কোনদিন আর আসেন নি, কেউ তাঁর কথা শোনেও নি। আমার বয়েস তখন সাত।

    বেচারা কার্ল আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। সে বললে—আমি হচ্ছি কার্ল কাট্ৎস। সে ছাড়া আর কেউ নই। বলে তার মেয়ের কোল থেকে শিশুটিকে টেনে নিয়ে বার-বার চুমু খেতে লাগল।

    সবাই হাঁ করে দাঁড়িয়ে রইল। কী বলবে কেউ ভেবে পেল না। সেই সময় ইস্কুল মাস্টার স্ত্রপকেন লাঠি ঠুকতে ঠুকতে এগিয়ে এসে বললেন—কার্ল কাট্ৎস্! কার্ল কাট্‌ৎস্। এ তো সত্যিই দেখছি কার্ল কাট্ৎস্! আমার দেওয়া দাগ পর্যন্ত ওর গায়ে রয়েছে! ঐ দেখ ওর ডান চোখের উপর কপালে কাটার দাগ—আমিই একদিন আমার ওকের লাঠি দিয়ে বসিয়ে দিয়েছিলুম।

    তারপর আরো অনেকে বলে উঠল—হ্যাঁ, এই তো কার্ল কাট্ৎস! সুস্বাগত জানাই!

    তারপর সবাই বলল—কিন্তু তোমার মতো সৎ, ধীর-স্থির মানুষ কোথায় এই কুড়ি বছর কাটালে?

    সারা গ্রাম ভেঙে পড়ল তাকে দেখতে। শিশুদের হাসির শব্দ, কুকুরের ঘেউ-ঘেউ, এর মধ্যে সবাই জানালো প্রতিবেশী কার্ল এতদিন পরে বেঁচে ফিরে আসায় তারা খুশি হয়েছে। কোথায় সে এই কুড়ি বছর ছিল এ প্রশ্নের জবাবে কার্ল শুধু তার কাঁধ নাচাতো। সে নিজেই ব্যাপারটা ভাল করে বুঝত না তো বোঝাবে কী? ভাবত কী, এ বিষয়ে যত কম আলোচনা হয় ততই ভাল। কিন্তু তার স্মৃতিতে যেটা সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে জেগে ছিল তা হচ্ছে সেই অপূর্ব রাজসিক সুরা আর সেই বীর পুরুষদের স্কিট্‌ল্ খেলা!

    টীকা