এক-চোখো, দু-চোখো আর তিন-চোখো
ব্রাদার্স গ্রিম দ্বারাএক-চোখো, দু-চোখো আর তিন-চোখো
অনেক দিন আগে ছিল এক বুড়ি। তার ছিল তিন মেয়ে। বড় মেয়ের নাম এক-চোখো— তার কপালের মাঝখানে ছিল শুধু একটি চোখ। মেজ মেয়ের নাম দু-চোখো— যেমন আর সকলের থাকে। ছোট মেয়ের ছিল তিনটি চোখ— মেজদিদির মত দুটি আর বড়দিদির মত কপালের মাঝখানে আরো একটি। তার নাম ছিল তিন-চোখো।
মেজ মেয়ে দু-চোখোকে আর পাঁচজন মানুষের মত দেখতে ছিল বলে তার মা আর বোনেরা তাকে দেখতে পারত না। তারা বলত— ও তো সাধারণ মানুষের মত— এমন কী ভালো? দুটো চোখ। আমাদের দলেই নয়।
উঠতে বসতে তারা তাকে ধাক্কা মারত, পুরোনো কাপড় পরতে দিত, নিজেদের, খেয়ে যা বাকি থাকত তাই খেতে দিত আর যত রকমে পারে কষ্ট দিত। দু-চোখোকে মাঠে পাঠানো হত ছাগল চরাবার জন্যে, আর বেচারা খিদেয় ভারি কষ্ট পেত। এদিকে তার বোনেরা যত খুশি খেতে পেত। একদিন সে মাঠের মাঝে একটা টিপির উপর বসে কাঁদতে শুরু করল। এমনই কাঁদতে লাগল যে তার চোখের জলে ছোট ছোট দুটি নদীই বইতে লাগল। কাঁদতে কাঁদতে একবার সে চোখ তুলে দেখে, একটি মেয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে। তিনি বললেন— দু-চোখো খুকি, তুমি এত কাঁদছ কেন?
সে বললে— আমি না কেঁদে থাকতে পারি না। আর সব মানুষের মতো আমার দুটি চোখ বলে আমার মা আর বোনেরা আমাকে সইতে পারে না। তারা আমায় কেবল ধাক্কা মারে। তাদের পুরা পুরোনো কাপড় পরতে দেয়, তাদের পাতে যা পড়ে থাকে তা ছাড়া আর কিছু খেতে দেয় না। তাই সারাক্ষণ আমার খিদে পায়। আজ তারা আমায় এত কম খেতে দিয়েছে যে আমি প্রায় উপোসি আছি।
মেয়েটি বললে— চোখের জল মোছো বাছা। আমি এক বিদ্যে শিখিয়ে দিচ্ছি— তোমার আর কোনোদিন খিদে পাবে না। তোমার ছাগলটিকে শুধু একবার বলবে—
ছাগল ছানা, ছাগল ছানা—
বিছিয়ে দে না টেবিলখানা।
অমনি সঙ্গে সঙ্গে তোমার সামনে ছোট্ট চমৎকার একটি টেবিল এসে যাবে, তাতে সাজানো থাকবে ভালো ভালো খাবার যত চাও তত। তারপর যখন পেট ভরে যাবে, বলবে—
ছাগল ছানা, খেলুম খানা—
টেবিলখানা নিয়েই যা না।
আর অমনি টেবিল যাবে উড়ে।
বলে মেয়েটি চলে গেল। দু-চোখো ভাবলে— চেষ্টা করে দেখা যাক যেমন উনি বলে গেলেন। বড় খিদে পেয়েছে। সে বললে—
ছাগল ছানা, ছাগল ছানা—
বিছিয়ে দে না টেবিলখানা।
কথা শেষ হতে না হতেই একটি চমৎকার সুন্দর ছোট টেবিল এসে পড়ল তার সামনে। তাতে সাদা চাদর পাতা, তার উপরে প্লেট, ছুরি, কাঁচি, রুপোর চামচ আর এমন সুস্বাদু খাবার— গরম, যেন এইমাত্র রান্নাঘর থেকে এসেছে। দু-চোখোর কী ভালেই যে লাগল খেতে! খাওয়া শেষ হয়ে গেলে মেয়েটির শেখানো মত সে বললে—
ছাগল ছানা, খেলুম খানা—
টেবিলখানা নিয়েই যা না।
পরমুহূর্তেই টেবিল-শুদ্ধু যা কিছু ছিল সব অদৃশ্য হয়ে গেল। দু-চোখো বললে— বাঃ, বাসন-কোসন তুলতে হবে না, মাজতে হবে না, ধুতে হবে না, এ বেশ মজা তো! তার ভারি ভালো লাগল। সন্ধেবেলায় ছাগলটি নিয়ে যখন সে বাড়ি ফিরল, দেখল মাটির সরায় তার বোনেরা নিজেদের এঁটো খাবার তার জন্যে রেখে দিয়েছে। সে ছুঁলোও না। পরদিন সকালবেলা এঁটো খাবার যেমন ছিল তেমনি ফেলে রেখে সে তার ছাগল নিয়ে চরাতে চলে গেল। প্রথম দু-তিন দিন তার বোনেরা লক্ষ করে নি কিন্তু তারপর তারা যখন দেখল রোজই খাবার না ছুঁয়ে দু-চোখো বেরিয়ে যায়, তারা বলাবলি করতে লাগল— দু-চোখোর ব্যাপারখানা কী? রোজই ও খাবার ফেলে চলে যায়, সব খাবার নষ্ট হয়! নিশ্চয় অন্য কোথাও খেতে পায় ও।
কাজেই তারা ঠিক করল, কী হয় জানতে হবে।
দু-চোখো সেদিন যখন ছাগল চরাতে যাচ্ছে এক-চোখো এসে বললে— আমি আজ তোমার সঙ্গে যাব। দেখব ছাগলকে তুমি ভালো করে খাওয়াচ্ছ কি না।
কিন্তু দু-চোখো ঠিক বুঝে নিল তার আসল উদ্দেশ্য কী? তাই সে ছাগলকে নিয়ে গেল উঁচু ঘাসের বনের মধ্যে আর বললে— এস এক-চোখো এখানে আমরা বসে জিরোই। আমি তোমায় গান শোনাবো।
এক-চোখো বসল। অতদূর হাঁটা তো তার অভ্যেস নেই, রোদ্দুরে ঘোরাও অভ্যেস নেই ; তাই সে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল আর দু-চোখোর গান শুনতে শুনতে সে তার একটা চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ল। দু-চোখো এই দেখে বুঝল এবারে আর একচোখো কিছুই টের পাবে না, তাই সে বললে—
ছাগল ছানা, ছাগল ছানা—
বিছিয়ে দে না টেবিলখানা।
টেবিল আসতেই সে বসে গেল আর তাড়াতাড়ি খাওয়া শুরু করে দিলে। খাওয়া শেষ হয়ে যেতে সে বললে—
ছাগল ছানা, খেলুম খানা—
টেবিলখানা নিয়েই যা না।
চোখের পাতা ফেলতেই টেবিল অদৃশ্য হল। তখন একচোখোকে ঘুম থেকে তুলে দু-চোখো বললে— একচোখো, তুমি তো বেশ ছাগলের পাহারাদার। এতক্ষণ ঘুমোচ্ছিলে, ছাগলগুলো এদিকে-ওদিকে কোথায় ছটকে যেত তার ঠিক নেই। চল এখন বাড়ি যাই।
তারা বাড়ি ফিরে এল। দু-চোখো আবার তার সরার খাবার ছুঁলো না। এক-চোখো তার মা-কে বলতে পারলে না দু-চোখো মাঠে কিছু খেয়েছে কি না। সে বললে— আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলুম।
পরদিন তিন-চোখোকে ডেকে তার মা বললেন— আজ তুমি মাঠে যাও। গিয়ে দেখবে, দু-চোখোর জন্যে মাঠে কেউ খাবার নিয়ে আসে কি না। নিশ্চয় ও লুকিয়ে লুকিয়ে খায়।
দু-চোখো যখন তার ছাগল চরাতে যাবে তিন-চোখো পিছনে পিছনে এসে বললে— আমি আজ তোমার সঙ্গে যাব। দেখব কেমন তুমি পাহারা দাও, ছাগলটা ভালো করে খেতে পায় কি না।
কিন্তু দু-চোখো বুঝে ফেলল কী তার আসল উদ্দেশ্য। সে বড় উঁচু ঘাসের বনের মধ্যে দিয়ে ছাগল নিয়ে চলল যাতে তিন-চোখো চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অনেক দূরে গিয়ে সে বললে— এসো তিন-চোখো এখানে বসে জিরোই। আমি তোমায় গান শোনাবো।
তিন-চোখো রোদ্দুরে অনেকক্ষণ হেঁটে ক্লান্ত হয়েছে। বসতে তার ভালোই লাগল। তার বোনের গান শুনে শুনে তার দু-চোখ বুজে এলো। সেই দু-চোখ ঘুমিয়ে পড়ল কিন্তু তৃতীয় চোখ ঘুমোল না। আসলে ঐ একখানা চোখের মধ্যে দিয়ে সে দিব্যি জেগে রইল। দু-চোখো যা করল সব সে দেখল, শুনল। দু-চোখো বেচারা ভাবল যে সে ঘুমোচ্ছ, তাই সে ছাগলকে ছড়া শোনালো, ভালো ভালো খাবার টেবিল এল, খাওয়া হয়ে গেলে টেবিল অদৃশ্য হল আর তিন-চোখো চালাকি করে তার এক চোখ দিয়ে সমস্তই দেখে নিল। তার বোন যখন তাকে জাগালো সে ভাব দেখালো যেন সে কতই ঘুমোচ্ছিল।
সেদিন সন্ধেয় যখন দু-চোখো আবার তার খাবার সরিয়ে রেখে দিল তিন-চোখো তার মা-কে বললে— গরবিনী কোথা থেকে তাঁর খাবার পান দেখেছি! ও গান গেয়ে আমার দু-চোখকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল, কিন্তু আমার কপালের চোখ ছিল খোলা।
হিংসুটি মা দু-চোখোকে ডেকে বললে— আমাদের চেয়ে ভালো খেতে চাস তুই? দাঁড়া বন্ধ করছি। বলে সে একটা কসাইয়ের ছুরি নিয়ে বেরিয়ে গিয়ে ছাগলটির বুকের মধ্যে বিঁধিয়ে দিলে। দিতেই ছাগলটি মরে গেল।
দু-চোখো তাই দেখে মাঠে চলে গেল। সেখানে একটি টিপির উপর বসে অঝোর ঝরে কান্না শুরু করে দিলে।
একটু পরেই সেই মেয়েটি আবার তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললে— দু-চোখো খুকি! কাঁদছ কেন?
সে বললে— হায়, আমায় কাঁদতেই হবে। যে ছাগলটি রোজ আমায় খাবার এনে দিত, অমন সুন্দর করে টেবিল সাজিয়ে দিত, আমার মা তাকে মেরে ফেলেছে।
—শোনো দু-চোখো খুকি। বাড়ি গিয়ে তোমার বোনকে বল যে মরা ছাগলটার পেটটা তোমায় দিতে। তারপর সেই পেটটা নিয়ে গিয়ে তোমাদের বাড়ির দরজার সামনে পুঁতে দিও।
বলে সেই মেয়েটি মিলিয়ে গেল।
দু-চোখো খুকি তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে তার বোনকে বললে—কাটা ছাগলটার খানিকটা আমায় দাও না! আমি কোনো ভালো অংশ চাই না। শুধু পেটটা আমায় দাও।
তার বোন হেসে বললে— বেশ আর কিছু যদি না চাও ওটা পেতে পারো।
তখন ছাগলের পেটটা নিয়ে, সন্ধেবেলা যখন সব চুপচাপ, তাদের বাড়ির দরজার সামনে দু-চোখো সেটা মাটিতে পুঁতে দিলে।
পরদিন সকালে সবাই ঘুম ভেঙে দেখে সেখানে এক অতি আশ্চর্য গাছ গজিয়েছে। গাছের ডালে রুপোর পাতা। তার মাঝে ঝুলছে সোনার আপেল। এমন সুন্দর এত দামি জিনিস সারা দুনিয়ার কেউ কোনোদিন দেখেনি। এক দু-চোখো ছাড়া আর কেউই জানত না, কেমন করে গাছটা ওখানে এল এক রাতের মধ্যে। সে ধরে নিলে ছাগলের পেট থেকেই গাছটা হয়েছে, কারণ ঠিক যেখানে সেটা সে পুঁতেছিল সেইখানেই গাছটা দাঁড়িয়ে।
মা তখন একচোখোকে বললেন— গাছে ওঠো তো মা, কটা ফল পাড়ো।
একচোখো গাছে উঠল, কিন্তু যেই সে ডাল ধরে একটা আপেল পাড়তে গেল অমনি ফলটা সরে গেল তার হাত থেকে দূরে। যতবারই সে ধরতে যায় কিছুতেই আর ফল ধরতে পারে না।
মা বললেন— তিন-চোখো তুমি ওঠ, দেখ ফল পাড়তে পারো কি না। তোমার তিনটে চোখ দিয়ে একচোখোর চেয়ে তুমি আরো ভালো করে দেখতে পাবে।
একচোখো নেমে আসতে তিনচোখো উঠল গাছে। কিন্তু সেও কিছু করতে পারলে না। যতই চেষ্টা করুক সে ডালও নুইল না, ফলও হাতের কাছে এল না। যেই সে হাত বাড়ালো অমনি তারা লাফিয়ে লাফিয়ে সরে যেতে লাগল।
শেষে আর থাকতে না পেরে মা নিজেই গাছে উঠলেন। কিন্তু তিনিও কিছু ধরতে পারলেন না। ডাল হোক পাতা হেক ফল হোক যা-ই তিনি মুঠিয়ে ধরতে যান তাই হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।
দু-চোখো বললে— আমি চেষ্টা করে দেখব? আমি পারবো হয়ত।
বোনেরা চেঁচিয়ে বললে—তুই? তবেই হয়েছে। তোর দুটো চোখ দিয়ে তুই করতে পারিস কী?
দু-চোখো যখন গাছে উঠল তার হাত থেকে সোনার আপেল পালিয়ে গেল না। সে ছুঁতেই তার হাতে আপনি এসে পড়তে থাকল ফলগুলি। একটি একটি করে আপেল তুলে সে তার কোঁচড় ভরে ফেললে।
মা সেগুলি তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে তার বোনদের দিয়ে দিলেন। বললেন, দু-চোখো আপেলগুলোকে নষ্ট করে ফেলবে। আসলে হিংসে— কারণ একমাত্র দু-চোখোই ফল পাড়তে পেরেছে।
তিন বোন যখন গাছতলায় দাঁড়িয়ে আছে, সেই সময় এক যোদ্ধা সেখান দিয়ে ঘোড়ায় করে যাচ্ছিলেন।
—পালা দু-চোখো, লুকিয়ে পড়্! গা-ঢাকা দে কোথাও! তোর সঙ্গে আমাদের যদি উনি দেখতে পান আমরা লজ্জায় মরে যাব! বলে তারা তাড়াতাড়ি ঠেলতে ঠেলতে গাছের পিছনে যে খালি পিপে ছিল তার ভিতরে দু-চোখোকে লুকিয়ে ফেলল, তার কোঁচড়ে যে কটা আপেল ছিল সেগুলি শুদ্ধ নিয়ে।
যোদ্ধা যখন কাছে এলেন সবাই দেখল, তাঁর চেহারা অতি সুন্দর। তিনি গাছটি দেখে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। দুই বোনকে বললেন—এই আশ্চর্য গাছটি কার? এর একটা ডাল যে পৃথিবীর সমস্ত ঐশ্বর্যের সমান!
দুই বোন বললে—এ গাছ আমাদের। আপনি যদি চান একটা ডাল আপনাকে দিতে পারি। বলে তারা অনেক চেষ্টা করল কিন্তু কোনো ফল হল না, তাদের হাতের ছোঁয়া পেতেই ডাল পাতা ফল লাফিয়ে লাফিয়ে পালিয়ে যেতে লাগল।
যোদ্ধা বললেন— ভারি আশ্চর্য তো! গাছটা তোমাদের, অথচ তোমরা একটা ডালও ভাঙতে পারছ না!
তারা বললে— গাছ আমাদেরই, আর কারো নয়। পিপের মধ্যে বসে দু-চোখো সব শুনল। দিদিদের মিথ্যে কথায় তার ভারি রাগ হল। সে তার কোঁচড় থেকে দুটি সোনার আপেল তুলে গড়িয়ে দিল। আপেল দুটি গড়িয়ে গিয়ে ঠেকল যোদ্ধার ঘোড়র পায়ের কাছে। যোদ্ধা দেখে বললেন— আরে! কোথা থেকে এল এ-দুটো?
বোনদুটি বললে— আমাদের আরেকটি বোন আছে সে-ই গড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু তাকে আমরা লোকের সামনে বার করি না কারণ তার দুটি মাত্র চোখ— যেমন খুব সাধারণ লোকের হয়ে থাকে। তার নাম তাই দু-চোখো।
যোদ্ধার কিন্তু তাকে দেখবার বড় কৌতুহল হল। তিনি ডাকলেন— দু-চোখো খুকি, বেরিয়ে এস। বলতেই দু-চোখো খালি পিপের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এল। যোদ্ধা তার রূপ দেখে অবাক হয়ে গেলেন।
তিনি বললেন— দু-চোখো খুকি! আমার জন্যে ঐ গাছের একটি ডাল ভেঙে দিতে পারবে?
সে বললে— কেন পারব না? গাছটা যে আমার। বলে সে গাছে উঠে কোন কষ্ট না করেই রুপোর পাতা আর সোনার ফল ভরা একটি ডাল ভেঙে যোদ্ধাকে দিলে।
মেয়েটি ঘোড়ার পাশে দাঁড়িয়ে। যোদ্ধা তার দিকে তাকিয়ে বললেন— দু-চোখো খুকি—এর বদলে তোমায় কী দেব বল!
সে বললে—ওঃ আমার এখানে বড় কষ্ট! খিদে আর তেষ্টা, দুঃখ আর বিপদ— সকাল থেকে সন্ধে অবধি ভূগতে হয়। আপনি যদি আমায় এখান থেকে নিয়ে গিয়ে উদ্ধার করেন তাহলে আমি বড় সুখী হই।
যোদ্ধা তখন তাকে ঘোড়ায় তুলে নিলেন। তুলে তাকে নিয়ে গেলেন তাঁর বাবার প্রাসাদে। সেখানে তাকে ভালো ভালো দামি দামি সুন্দর সুন্দর কাপড় পরতে দেওয়া হল, পেট ভরে খেতে দেওয়া হল। তারপর সে যখন বড় হল যোদ্ধার তাকে এত পছন্দ হল যে তিনি তাকে বিয়ে করলেন মহা ধুমধামের মধ্যে।
দুই বোন যখন দেখল যে তাদের মেজ বোনকে যোদ্ধা নিয়ে চলে গেলেন, তারা ভাবল বাঁচলুম। খুশি হল এই ভেবে যে এইবার গাছটা আমাদের হল। যদি আমরা এ গাছের ডাল ভাঙতে না-ও পারি তাহলেও যে-ই এখান দিয়ে যাবে সে-ই থমকে দাঁড়াবে গাছ দেখে। আর এই করে আমরাও হয়ত ভাল বর পেয়ে যাব— কে জানে?
কিন্তু পরদিন সকালবেলা যখন তাদের ঘুম ভাঙল, তারা দেখে গাছটা অদৃশ্য হয়েছে, সেইসঙ্গে তাদের সমস্ত আশাও নির্মূল হয়েছে। ঠিক সেইদিন দু-চোখো তার ঘরের জানলা থেকে মুখ বাড়িয়ে দেখতে পেল, তারই সঙ্গে তার গাছও চলে এসেছে। দেখে তার ভারি আনন্দ হল।
দু-চোখো বহুদিন সুখে কাটালো। কিন্তু তার বোনেদের কোনো খবর সে পেত না। শেষে একদিন দুটি ভিখিরিনী তাদের প্রাসাদে এল ভিক্ষে করতে। দু-চোখো তাদের মুখের দিকে ভালো করে দেখেই চিনতে পারল—এরাই তার দুই বোন। তারা এত গরিব হয়ে গেছে যে দুয়োর থেকে দুয়োরে রুটি মেগে খায়।।
দু-চোখো তাদের হাত ধরে ভিতরে নিয়ে এল। বললে যে সে তাদের যত্ন করবে। তাদের যা দরকার তাই দেবে। বোনেরা দোষ স্বীকার করলে আর ছেলেবেলায় মেজবোনর সঙ্গে যে দুর্ব্যবহার করত তার জন্যে ক্ষমা চাইলে। সেই থেকে তিন বোন একসঙ্গে বাস করতে লাগল।