ছোট চাষী
ব্রাদার্স গ্রিম দ্বারাছোট চাষী
এক গ্রামে যত কৃষক ছিল সকলেই ছিল ধনী, শুধু একজন ছিল গরিব—তাকে সবাই বলত ছোট চাষী। ছোট চাষীর কিছুই ছিল না। একটা গরু পর্যন্ত নয়। গরু কেনার পয়সাই ছিল না তার। চাষীর আর চাষানীর বড় ইচ্ছা তাদের একটা গরু হয়। একদিন ছোট চাষী তার বৌকে বলল— শোন্ আমার মাথায় এক বুদ্ধি এসেছে। আমার খুড়তুতো ভাই যে ছুতোর আছে না, তাকে বলব আমাদের একটা কাঠের বাছুর বানিয়ে দিতে। তাতে খয়েরি রং বুলিয়ে দিতে বলব যাতে ঠিক জ্যান্ত বাছুরের মতো দেখতে হয়। সময় হলে ওই বেড়ে আমাদের বড় গরু হবে। চাষানীরও কথাটা ভাল লাগল। ছুতোরকে বলতে সে কাঠ কুঁদে একটা বাছুর বানালে। ঘাড় নিচু করে দিল মাটি অবধি— দাঁড় করিয়ে দিলে যাতে মনে হয় ঘাস খাচ্ছে। তারপর যখন তাকে খয়েরি রং করে দিল, এমন হল যে কে বলবে সত্যিকারের বাছুর নয়!
পরদিন সকালে গ্রামের রাখাল যখন গরুর পাল নিয়ে মাঠে চরাতে যাচ্ছে, ছোট চাষী তাকে ডেকে বলল— রাখাল ভাই, আমার একটা ছোট্ট বাছুর আছে। তবে বড়ই বাচ্চা— একে কোলে করে মাঠে নিয়ে যাবে চরাতে?
রাখাল বললে— বেশ তো। বলে তাকে কোলে তুলে নিয়ে চরাতে চলে গেল। কাঠের বাছুরকে ঘাসের মধ্যে দাঁড় করিয়ে দিতে মনে হল সে যেন ঘাড় নিচু করে ঘাস খাচ্ছে।
রাখাল বললে— দেখ দেখ কেমন আপনি আপনি ঘাস খাচ্ছে। দৌড়তেও শিখে যাবে এক্ষুনি।
সন্ধেবেলা যখন তার গরুর পাল নিয়ে গ্রামে ফেরবার সময় হল রাখাল বাছুরের কাছে এসে বলল— এখনও তোমার ঘাস খাওয়া শেষ হল না? বেশ পেট ভরে খাও। খাওয়া শেষ হলে নিজেই হেঁটে বাড়ি এসো। আমি আর তোমায় কোলে করে নিয়ে যেতে পারব না— ঘাস খেয়ে তুমি যা ভারি হয়েছ!
এদিকে ছোট চাষী তার দরজায় দাঁড়িয়ে আছে, কখন তার বাছুর ফিরবে। রাখাল যখন গরুর পাল নিয়ে ফিরল ছোট চাষী জিজ্ঞেস করল— আমার বাছুরমনি কোথায়?
রাখাল বললে— এখনও মাঠে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘাস খাচ্ছে। আমাদের সঙ্গে ফিরতেই চাইল না।
ছোট চাষী বললে— বা রে! আমার বাছুর ফেরত চাই।
রাখাল আর কি করে, চাষীকে নিয়ে মাঠে গেল। এদিকে কে যেন কাঠের বাছুর চুরি করে নিয়ে গেছে। বাছুর পাওয়া গেল না। রাখাল বললে— তবে তোমার বাছুর পালিয়েছে!
চাষী বললে— সে কথা আমি শুনব কেন? চলো হাকিমের কাছে।
বলে তাকে হাকিমের কাছে নিয়ে গেল।
হাকিমের বিচারে ঠিক হল, রাখালের অসাবধানতার জন্য যে বাছুর খোয়া গেছে তার বদলে দণ্ডস্বরূপ রাখালকে একটা গরু দিতে হবে।
এতদিন পরে চাষী আর চাষানীর বহুদিনের ইচ্ছে পূর্ণ হল। তাদের গরু হল। গরু তো হল, কিন্তু তাকে খাওয়ায় কি? গরুকে দেবার মতো কিছুই তাদের নেই। কাজেই গরুকে কেটে তার মাংস নুন দিয়ে জরিয়ে রেখে দিল। চামড়াটা বিক্রি করবার জন্যে চাষী চললো শহরে। ভাবলে বিক্রির পয়সা দিয়ে হয়তো একটা ছোট্ট বাছুর কিনতে পারবে। গরুর খাবার জোটেনি, কোনো রকমে বাছুরের খাবার জুটিয়ে নেবে।
পথে যেতে যেতে এক চাকী কল পড়ল। সেখানে দেখে ডানা ভাঙা একটা দাঁড়কাক পড়ে রয়েছে। দেখে চাষীর মায়া হল। সে দাঁড়কাকটিকে তুলে চামড়ায় মুড়ে আবার পথে এগোল। কিন্তু একটু এগিয়েই হঠাৎ দেখে আকাশ অন্ধকার করে ঝড় আর বৃষ্টি আসছে। আর এগোবার উপায় নেই দেখে চাষী দৌড়ে ফিরে এল চাকী কলে। দরজায় ধাক্কা দিয়ে বললে— আজকের মতো আশ্রয় দিন গরিবকে।
কলে ছিল চাকিওয়ালার বৌ একা। বৌ বললে— এই দুর্যোগে কোথায় যাবে, ঐ খড়ের উপর শুয়ে পড়। বলে তাকে এক টুকরো রুটি আর তার উপর খানিকটা পনির দিয়ে বলল, খাও। চাষী তাই খেয়ে গরুর চামড়াটা পাশে রেখে খড়ের বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ল।
চাকিওয়ালার বৌ ভাবল— পথের শ্রমে ক্লান্ত চাষীর যেমন শোওয়া, তেমনি ঘুম।
একটু পরেই এক গুরুমশাই এসে চাকী কলে ঢুকলেন। গুরু ঢুকতেই চাকিওয়ালার বৌ তাঁকে খুব খাতির করে বসালো আর বললে— আজ আমার স্বামী ভিন গাঁয়ে গেছেন। আসুন আমরা খুব মজা করে ভোজ খাই।
চাষী এদিকে ঘুমোয়নি। সব শুনেছে। সে বুঝলে চাকিওয়ালা এই গুরুটিকে বিশেষ পছন্দ করে না, তাই ওরা চাকী-ওয়ালাকে লুকিয়ে ভোজের আয়োজন করেছে। ভোজের কথা শুনে সে চক্ষু প্রায় খুলে ফেলেছিল আর কি। কোনোরকমে চোখ টিপে শুয়ে রইল। তাকে শুধু শুকনো রুটি আর পনির খেতে দিয়েছে ভেবে তার ভারি বিরক্ত লাগল। চোখ এক চিলতে ফাঁক করে সে দেখল চাকিওয়ালার বৌ চার রকম লোভনীয় খাবার এনে টেবিলে রাখছে— রোস্ট করা মাংস, সালাড, কেক আর সরাব!
ঠিক তারা দুজনে যখন খেতে বসতে যাবে তখনই বাইরে কে যেন দরজায় ধাক্কা দিল। চাকিওয়ালার বৌ বলে উঠল, সর্বনাশ! আমার স্বামী ফিরে এসেছেন।
সে তাড়াতাড়ি মাংসের রোস্টটা স্টোভের মধ্যে লুকিয়ে রেখে দিল। সরাবের বোতলটা বালিসের নিচে, সালাদটা বিছানার আড়ালে আর কেকটা খাটের তলায়। তারপর গুরুমশাইকে দরজার পাশে যে আলমারিটা ছিল তার মধ্যে। শেষে দরজা খুলে চাকিওয়ালাকে বলল— কি ভাগ্যিস্ তুমি বাড়ি এলে। যা ঝড় বৃষ্টি, আমার তো ভাবনাই হয়েছিল কি হবে তোমার।
চাকিওয়ালার চোখ পড়ল খড়ের উপর। দেখল সেখানে কে শুয়ে আছে। সে জিজ্ঞেস করল— ও লোকটা ওখানে কোত্থেকে এল?
বৌ বললে— বেচারা ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে পড়ে এখানে এসে আশ্রয় চাইছিল। তাই ওকে একটু রুটি আর পনির দিয়ে খড়ের গাদাটা দেখিয়ে দিয়েছি।
চাকিওয়ালা বললে— ভালই করেছ। এখন চট করে আমায় কিছু খেতে দাও তো। বেজায় খিদে পেয়েছে।
বৌ মুখ গোমড়া করে বলল— বাড়িতে শুধু রুটি আর পনির আছে, আর কিচ্ছু নেই।
চাকিওয়ালা বললে— তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। রুটি আর পনির হলেই আমার চলবে। বলে চাষীর দিকে তাকিয়ে বলল—এসো ভায়া, আমার সঙ্গে আর কিছু খাও।
চাষীকে দু-বার বলতে হল না। সে লাফিয়ে উঠে চাকিওয়ালার পাশে গিয়ে বসল। চাকিওয়ালার তখন চোখে পড়ল চামড়ায় মোড়া কি যেন রয়েছে। চাকিওয়ালা জিজ্ঞেস করল—ওর মধ্যে কী?
চাষী বললে— ওর মধ্যে একজন সর্বদ্রষ্টা আছেন।
চাকিওয়ালা বললে— আমাকে উনি কিছু বাণী দেবেন নাকি?
চাষী বললে— কেন দেবেন না ? তবে উনি শুধু চারটি বাণী দেন। পঞ্চমটি নিজের মনেই রেখে দেন।
চাকিওয়ালার শুনে কৌতূহল হল। সে বললে— বেশ তাহলে উনি আমায় কিছু বলুন না!
চাষী তখন দাঁড়কাককে একটা চিমটি কাটলো। দাঁড়কাক অমনি বলে উঠল— ক্ র্ র্ র্ কোঁয়া।
চাকিওয়ালা বললে— কি বললেন উনি ?
চাষী বলল— প্রথমে, উনি বলছেন বালিসের তলা খুঁজলে এক বোতল সরাব পাওয়া যাবে।
চাকিওয়ালা বললে— তাজ্জব কি বাত ! বলে বালিসের তলা থেকে সরাব বার করে আনল।
চাষী তখন আবার এক চিমটি কেটে দিল দাঁড়কাকের মাথায়। দাঁড়কাক বলে উঠল— ক্ র্ র্ র্ কোঁয়া!
চাষী বলল — দ্বিতীয়তঃ উনি বলছেন স্টোভের মধ্যে কিছু মাংসের রোস্ট পাওয়া যাবে।
—বাস্ রে বাস্। বলে চাকিওয়ালা উঠে গিয়ে স্টোভের মধ্যে থেকে মাংস বার করে নিয়ে এল।
আবার চাষী দাঁড়কাককে দিয়ে বাণী দেওয়ালো। চাষী বললে— তৃতীয়তঃ উনি বলছেন যে বিছানার আড়ালে কিছু সালাদ পাওয়া যাবে।
তাই পাওয়া গেল। আবার চিমটি কাটতেই দাঁড়কাক করল ক্র্র্র্ কোঁয়া। আর চাষী বলল— চতুর্থতঃ উনি বলছেন খাটের তলায় কেক আছে।
—বারে, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। বলে চাকিওয়ালা কেক বার করে নিয়ে এল।
তারপর দুজনে খেতে বসল টেবিলে। কিন্তু চাকিওয়ালার বৌ এমন ভয় পেয়ে গেল যে সে সব চাবি সঙ্গে করে বিছানায় গিয়ে ঢুকল। এদিকে চাকিওয়ালার বেজায় কৌতূহল হচ্ছে পঞ্চম বাণীটা কি তাই জানবার। সেকথা বলতে চাষী বললে— দাঁড়ান। আগে যে খাবারগুলি পাওয়া গেছে তা খেয়ে শেষ করা যাক, তারপর পঞ্চম বাণী শোনা যাবে— কারণ পঞ্চমটি ভালো নয়।
খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে চাষী বললে— পঞ্চম বাণী তো অমনি শোনা হবে না— আগেই বলেছি ওটা শুনতে মানা। শুনতে গেলে টাকা লাগবে। কত দেবেন আপনি ?
দর কষাকষি করে শেষে ঠিক হল যে তিনশ’ টাকা চাকিওয়ালা দেবে। তখন চাষী দাঁড়কাকের মাথায় আবার চিমটি কাটল আর দাঁড়কাক বলে উঠল— ক্র্র্র্ কোঁয়া!
চাকিওয়ালা বলল— কি বললেন?
—উনি বললেন দরজার পাশে আপনার যে আলমারি তাতে স্বয়ং শয়তান লুকিয়ে আছেন।
চাকিওয়ালা বলল— শয়তানকে তো বাড়ির মধ্যে থাকতে দেওয়া নয়। বার করে দিতে হবে। বলে বাড়ির দরজা খুলে রেখে গিন্নীর কাছ থেকে আলমারির চাবি নিয়ে এল।
বৌ কি সহজে চাবি দিতে চায় ? কিন্তু কর্তাও নাছোড়বান্দা। বললে— বাড়ির মধ্যে শয়তান পুষে মরি আর কি ?
আলমারির চাবি খুলতেই একটা কালো ঝুলন্ত পোষাক পরা মানুষ ঝড়ের মতো বেরিয়ে গেল।
চাকিওয়ালা বলল— ঠিক তো! কালো মত ওটা শয়তান না হয়ে যায় না। বাঁচা গেল।
তিন শো টাকা পকেটে ফেলে পরদিন সকালে চাষী বিদায় নিয়ে চলে গেল।
বাড়ি পৌঁছে ছোট চাষী আস্তে আস্তে এক নতুন বাড়ি তৈরি করল। বড় কৃষকরা দেখে শুনে বলল— কোথায় গিয়েছিল ছোট চাষী ? নিশ্চয় এমন জায়গায় গিয়েছিল যেখানে আকাশ থেকে সোনার তুষার ঝরে!
ছোট চাষীকে জিজ্ঞেস করলে সে কিছু বলে না। শেষে তাকে ধরে কাজীর কাছে নিয়ে যাওয়া হল। কাজী বিচার দণ্ড হাতে নিয়ে বললেন— শিগগির বল কোথা থেকে তুমি এত টাকা পেলে যা দিয়ে এত সুন্দর বাড়ি করতে পার !
ছোট চাষী বলল— বলতেই যদি হয় তাহলে বলি। শহরে গিয়েছিলুম আমার গরুর চামড়া নিয়ে। সেখানে চামড়া বেচে তিনশো টাকা পেয়েছি।
অন্য চাষীরা এই শুনে ভাবল, তারাই বা এই লাভের ব্যবসা করে কিছু টাকা করে না কেন? বাড়ি গিয়ে যার যত গরু ছিল সব কেটে ফেলল। তারপর তাদের চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে চলল শহরে বেচতে।
যারা প্রথমে গিয়েছিল তারা চামড়া বেচে পেল দু-টাকা, যারা শেষে গিয়ে পৌঁছল তারা পেতে লাগল এক টাকা করে।
কৃষকরা ছোট চাষীর উপর ক্রুদ্ধ হয়ে আবার কাজীর কাছে নালিশ জানালো। কাজীর বিচারে ঠিক হল ছোট চাষীর প্রাণ বধ করা হবে! একটা পিপের মধ্যে তাকে পুরতে নিয়ে যাওয়া হল— পিপের সর্বাঙ্গে ফুটো। সেই পিপের মধ্যে ভরে তাকে জলে ফেলে দেওয়া হবে।
মরবার আগে গুরু মশাইয়ের আশীর্বাদ নিতে হয়। সব লোক সরিয়ে দেওয়া হল। গুরুমশায় এগিয়ে এলেন আশীর্বাদ করতে। ছোট চাষী তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে ইনিই সেই যিনি চাকিওয়ালার বাড়ি গিয়েছিলেন।
চাষী চুপিচুপি বলল— আপনার প্রাণ একবার আমি বাঁচিয়েছি। আমার প্রাণ বাঁচান। ঐ দেখুন কে আসছে— ওকে পিপের মধ্যে পুরে দিন।
এখন, ব্যাপার কি দেখবার জন্যে সেদিকে আসছিল গ্রামের রাখাল। সঙ্গে তার এক পাল ভেড়া। গ্রামের গরু তো সব কাটা পড়েছে, তাই অন্য গ্রাম থেকে ভেড়া নিয়ে আসছে।
সে যাতে শুনতে পায় এই ভাবে ছোট চাষী বলল— আমি কাজী হতে চাই না। কেন আমায় করা হচ্ছে ? যে কাজী হতে চায় তাকে করুন না!
এখন হয়েছে কি ছোট চাষী জানতো রাখালের কাজী হবার খুব ইচ্ছে। কেমন করে কাজী হওয়া যায় অনেককে সে জিজ্ঞেস করেছে। কিন্তু কেউই কোনো সহজ পন্থা বাতলাতে পারেনি।
রাখাল ছোট চাষীর কথা শুনতে পেলে। সে এসে বললে— কি হয়েছে?
ছোট চাষী বললে— দেখ না, এরা আমাকে কাজী করবে তাই এই আয়োজন। এই পিপেয় ঢুকে পড়লেই নাকি আমি কাজী হয়ে যাবো। আমি কিন্তু চাইছি না।
রাখাল লাফিয়ে উঠে বলল— তুমি চাইছ না, তবে আমাকে দাও না কেন সুযোগটা ? আমি এখ্খুনি রাজি। এত সহজে যদি কাজী হওয়া যায়, কে না রাজি হবে?
এই বলে আর বাক্যব্যয় না করে সে গিয়ে পিপের মধ্যে ঢুকল আর ছোট চাষী পিপের ডালা এঁটে দিলে। তারপর রাখালের ভেড়ার পালকে নিয়ে সে কেটে পড়ল।
গুরমশায় আর সকলকে কাছে আসতে বললেন। বললেন তাঁর আশীর্বাদ বাচন শেষ হয়েছে। লোকেরা তখন পিপে ঠেলতে ঠেলতে নদীর কাছে নিয়ে চলল
রাখাল ভিতর থেকে বলল— আমি কাজী হতে রাজি।
কৃষকরা ভাবল ছোট চাষীই বলছে। তারা বলে উঠল— আমরাও রাজি। বলে তাকে ঠেলে জলে ফেলে দিলে।
তারপর বড় চাষীরা গ্রামে ফিরে গেল। যখন তারা গ্রামে ঢুকছে, দেখে অন্য দিক থেকে মস্ত এক ভেড়ার পাল নিয়ে ছোট চাষী হাসতে হাসতে আসছে। তাদের চক্ষু তো ছানাবড়া। তারা বলল— ছোট চাষী, কোথা থেকে তুমি এলে ? তোমায় তো এইমাত্র আমরা নদীতে ডুবিয়ে দিয়ে এলুম।
ছোট চাষী বললে— তা সত্যি বটে। আমি তো ডুবতে ডুবতে নদীর তলায় গিয়ে পৌঁছলুম। পিপের ঢাকাটা চাড় দিয়ে খুলে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখি কী সুন্দর ঘাসে ভরা মাঠ। তাতে অনেক ভেড়া চরছে। সেখান থেকে এই ভেড়ার পাল নিয়ে ফিরছি।
বড় চাষীদের গরু গিয়েছিল। তারা ভাবলে ভেড়া পেলে মন্দ কি ? জিজ্ঞেস করলে— সেখানে আরও ভেড়া আছে?
—অনেক আছে। এত যে গুনে শেষ করা যাবে না।
শুনে চাষীরা ঠিক করল তারাও নদীর তলায় যাবে। গিয়ে প্রত্যেকে এক-এক পাল ভেড়া নিয়ে ফিরবে।
কাজী বললেন— আমি যাবো সবার আগে।
সকলে মিলে যখন নদীর ধারে গিয়ে পৌঁছল তখন নীল আকাশে সাদা সাদা কোদালে কুড়ুলে মেঘ করেছে। ছোট চাষী নদীর জলে সেই মেঘের ছায়া দেখিয়ে বলল— ঐ দেখ নদীর মধ্যে ভেড়ার পাল দেখা যাচ্ছে।
কাজী জলের ধারে এগিয়ে গিয়ে বললেন— আমি প্রথমে নামব। আমার পর তোমরা সবাই এসো।
বলেই ঝপ্! কাজীকে আর দেখা গেল না।
তখন আর চাষীদের তর সয় না। পাছে কাজী একাই সব ভেড়া নিয়ে পালান তাই যে যেখানে ছিল ঝপাঝপ্ জলের মধ্যে লাফিয়ে পড়ল।
গ্রামে আর কেউ রইল না। ছোট চাষী একা ফিরে এসে ফেলে যাওয়া যত বাড়ি ছিল সব দখল করে বসল।