চাষী আর শয়তান
ব্রাদার্স গ্রিম দ্বারাঅনেক কাল আগে এক খুব চতুর আর দূরদর্শী চাষী ছিল, তার কৌশলের নানারকম গল্প লোকমুখে শোনা যায়। সবচেয়ে ভাল গল্প হচ্ছে, একবার কেমন করে সে শয়তানকে ধরে বোকা বানিয়ে দিয়েছিল।
চাষী একদিন তার খেতে কাজ করছিল। সূর্য অস্ত গেছেন কিন্তু তখনও আলো রয়েছে। সে তখন বাড়ি ফেরবার জন্যে তৈরি হচ্ছে, সেই সময় দেখল তার খেতের মাঝখানে একরাশ জ্বলন্ত কয়লা। অত্যন্ত অবাক হয়ে সে কাছে এগিয়ে যেতেই দেখতে পেল, একটি ছোট, কালো শয়তান জ্বলন্ত কয়লার উপর বসে আছে।
চাষী বললে—আপনি তো দেখছি মহামূল্য ধনের উপর বসে আছেন!
শয়তান বললে—সত্যিই তাই। আমি যেখানে বসে আছি সেখানে এত সোনা আর রূপো আছে যা কোনোদিন তুমি চোখে দেখনি।
চাষী বললে—রত্ন যদি থেকে থাকে তাহলে সে রত্ন তো আমার।
শয়তান বললে—তোমারই হবে, যদি তুমি বল যে তোমার খেতে সামনের দু-বছরে যা ফসল হবে তার অর্ধেক আমাকে দেবে। টাকা আমার অনেক আছে, কিন্তু মাটির ফসলের উপর আমার লোভ।
শয়তানের শর্তে চাষী রাজী হল। বললে—দেখ ভাই, যাতে ফসলের ভাগাভাগি নিয়ে পরে কোন গোলমাল না হয়, এখন থেকেই এস ঠিক করি মাটির উপরে যা হবে সব তোমার, আর মাটির নিচে যা হবে সব আমার। সমান দু-ভাগ হয়ে গেল।
শয়তান রাজি হল। বললে—এ তো সুবিচার। চাষী তখন খেতে শালগম লাগালো।
যখন ফসল তোলবার সময় এল শয়তান এসে হাজির তার ভাগ নেবার জন্যে। সে পেল শুধু হলদে আধ-শুকনো পাতা আর চাষী মনের আনন্দে মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে পুরুষ্টু শালগম তুলে গাড়ি বোঝাই করে বাড়ি নিয়ে গেল।
শয়তান বললে—এবার তো তুমিই ভাই ভাল অংশটা পেয়ে গেলে। এস পরের বছর শর্ত করি, মাটির উপরে যা হবে তা তোমার আর মাটির নিচে যা হবে তা আমার।
চাষী বললে—বেশ, এই শর্তে আমি রাজি।
কিন্তু আবার যখন বীজ বোনার সময় এল চাষী আর শালগম বুনলে না। এবারে বুনলে গম।
ক্রমে গমের গাছ বড় হয়ে গমের শিস পেকে এল। চাষী যখন খেতে গিয়ে গম কাটতে শুরু করলে, শয়তান এসে দেখল তার জন্যে রয়েছে মুড়োনো গমের গাছ আর তার শিকড়গুলো। রাগে ফুলতে ফুলতে সে চলে গিয়ে পাহাড়ের ফাটলের মধ্যে লুকিয়ে রইল।
চাষী বললে—এমনি করেই শয়তানকে ঠকাতে হয়। বলে খেত থেকে ধনরত্ন তুলে ঘরে নিয়ে গেল।