ব্রেমেন শহরের বাজিয়ের দল
ব্রাদার্স গ্রিম দ্বারাখড়, কয়লা আর শিমের বিচি
এক গ্রামে এক গরিব গৃহিণী ছিল। সে একদিন একপাত্র শিমের বিচি নিয়ে রাঁধতে গেল। উনুনে আঁচ দিল। যাতে আঁচটা বেশি হয়, একবোঝা খড় পুরে দিল তার মধ্যে। যখন সে কড়ায় বীচগুলি ঢালতে যাচ্ছে, একটি বিচি বাইরে পড়ে গেল—গৃহিণীর চোখে পড়ল না। শিমের বিচিটি মাটিতে পড়ে রইল একটি খড়ের টুকরোর পাশে। তার একটু পরেই একটি জ্বলন্ত কয়লার টুকরো উনুন থেকে লাফিয়ে তাদের পাশে এসে পড়ল। খড় বললে—তোমরা কোথা থেকে এখানে এলে ভাই?
কয়লা বললে—আমি উনুন থেকে লাফিয়ে পড়েছি। যদি না জোর করে লাফিয়ে পালাতুম, নিশ্চয়ই আমার মৃত্যু হত উনুনের মধ্যে। একেবারে পুড়ে ছাই হয়ে যেতুম।
শিমের বিচি বললে—আমিও গায়ের চামড়া বাঁচিয়ে কোনরকমে পালিয়ে এসেছি। বুড়ি গিন্নি যদি আমায় একবার হাঁড়ির মধ্যে ফেলতে পারত তাহলে সূপ বানিয়ে ছেড়ে দিত। কোন দয়া দেখাতো না।
খড় বললে—আমারও ভাগ্যটা একবার দেখ। বুড়ি আমার ভাইদের সবাইকে আগুনে পুড়িয়েছে; তারা ধোঁয়া হয়ে উড়ে গেছে। একসঙ্গে ষাটখানাকে মুঠিয়ে ধরে তাদের প্রাণ নিয়েছে বুড়ি। ভাগ্যক্রমে তার আঙুল ফসকে পালিয়ে এসেছি।
কয়লা বললে—কিন্তু আমরা এখন করব কী?
শিমের বিচি বললে—আমার মনে হয় আমরা যখন সৌভাগ্যক্রমে বেঁচেই গেছি, আমাদের উচিত বন্ধুর মতো একসঙ্গে থাকা। আর কোন নতুন বিপদ আসার আগেই আমাদের উচিত একসঙ্গে কোন বিদেশে পালিয়ে যাওয়া।
প্রস্তাব শুনে অন্য দু-জন খুশি হল। তারা একসঙ্গে বেরিয়ে পড়ল পথে। একটু পরেই পথে পড়ল ছোট এক নদী। নদীর উপর কোন সাঁকো ছিল না বলে তারা ভেবেই পেলে না কী করে পার হওয়া যায়। খড়ের মাথায় এল এক বুদ্ধি; সে বললে—আমি এপার থেকে ওপারে শুয়ে পড়ি আর তোমরা আমার উপর দিয়ে পার হয়ে যাও, যেমন সাঁকো পার হও। খড় হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়তে কয়লা লাফিয়ে উঠল সাঁকোর উপর। কিন্তু মাঝামাঝি জায়গায় এসে যখন পৌঁছেছে, শুনতে পেল পায়ের তলায় জল কলকল করে বয়ে চলেছে। তাতে ভয় পেয়ে সে চুপটি করে দাঁড়িয়ে গেল, আর সামনের দিকে এগোবার চেষ্টা করলে না। তার ফলে খড় পুড়তে লাগল আর দেখতে দেখতে দু-টুকরো হয়ে জলে পড়ে গেল। কয়লাও পড়ল সেইসঙ্গে জলে—ফোঁস করে বেরোলো খানিকটা ধোঁয়া—সে-ই হল তার শেষ নিশ্বাস। শিমের বিচি বুদ্ধিমানের মতো পারে দাঁড়িয়ে ছিল, সে না হেসে থাকতে পারল না। এমনই হাসল যে গেল ফেটে। ওতেই ওরও শেষ হয়ে যেত যদি না, কী ভাগ্যিস, এক দর্জি ওকে দেখতে পেত। কাজের খোঁজে বেরিয়ে দর্জি একটু জিরোবার জন্যে নদীর ধারে বসে ফাটা শিমের বিচিকে দেখতে পেয়ে হাতে নিল। তারপর ছুঁচ সুতো বার করে ফাটাটা জুড়ে দিলে। শিমের বিচি তাকে প্রাণভরে ধন্যবাদ দিল। কালো সুতো দিয়ে দর্জি সেলাই করেছিল বলে সেই থেকে শিমের বিচির গায়ে একটি কালো টানা রেখা দেখা যায়।