Chapter Index

    অনেক দিন আগে এক নবীন শিকারী বনে গিয়েছিল শিকার করতে। প্রাণে তার ছিল ফুর্তি, মন ছিল হালকা, তাই সে মুখে একটা পাতা লাগিয়ে শিস দিতে দিতে যাচ্ছিল।

    হঠাৎ এক কুৎসিত চেহারার বুড়ি কোথা থেকে এসে তাকে বললে—সুপ্রভাত শিকারী মশায়, আপনার তো দেখছি মনে খুব ফুর্তি; কিন্তু আমি খিদেয় তেষ্টায় কষ্ট পাচ্ছি, কিছু ভিক্ষা দেন না!

    বুড়িকে দেখে শিকারীর দয়া হল। পকেটে হাত দিয়ে ক-টা পয়সা বার করে তার হাতে তুলে দিলে।

    শিকারী চলে যেতে যাবে, বুড়ি তাকে আটকে বললে—শুনুন শিকারী মশায়, আপনার মনটা ভাল। আপনাকে আমি কিছু উপহার দিতে চাই। আপনি যে পথে যাচ্ছেন, কিছুদুর গেলেই দেখতে পাবেন একগাছের উপর ন-টি পাখি বসে। দেখবেন তারা একটা গা-ঢাকা নিয়ে টানাটানি করছে। বন্দুকটা তুলে নিয়ে ভাল করে তাক করে আপনি তাদের মাঝের পাখিটাকে গুলি করবেন। তারা গা-ঢাকাটা ফেলে দিয়ে পালাবে আর একটা পাখি মরে পড়ে যাবে। গা-ঢাকাটা তুলে নেবেন। ওর ইচ্ছে-গুণ আছে। ওটা গায়ে দিয়ে যেখানে যাবার ইচ্ছে করবেন সেইখানেই ও নিয়ে যাবে। তারপর মরা পাখিটার কলজেটা বার করে গোটাটাই খেয়ে ফেলবেন। তাহলে রোজ সকালে যখনই আপনি ঘুম ভেঙে উঠবেন, দেখবেন আপনার বালিশের তলায় একটি করে সোনার মোহর রয়েছে।

    শিকারী বুড়িকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভাবল—অনেক কথাই তো বলল বুড়ি, এখন দেখা যাক কী হয়!

    কিছুটা পথ গেছে শিকারী, এমন সময় তার মাথার উপর গাছের শাখার মধ্যে এমন কিচির-মিচির শুনতে পেল যে মাথা তুলে তাকালো। দেখল একঝাঁক পাখি তাদের ঠোঁটে নখে করে একটা কাপড় টুকরো করে ছেঁড়বার চেষ্টা করছে—মনে হচ্ছে সবাই যেন সেটা নিজের জন্যে চায়।

    শিকারী বললে—আশ্চর্য তো! বুড়ি যেমন বলেছিল ঠিক তেমনি হচ্ছে!

    সে তখন কাঁধে বন্দুকটা তুলে তাক করে তাদের মাঝখানে গুলি ছুঁড়ে দিল। একগাদা পালক উড়ে গেল। পাখিরা চেঁচাতে চেঁচাতে উড়ে পালালো। শুধু একটা পাখি মরে গেল আর গা-ঢাকাটা গাছ থেকে খসে পড়ল তার পায়ের কাছে।

    বুড়ি তাকে যা বলেছিল সে তাই করলে। পাখির কলজেটা বার করে গোটাটাই খেয়ে ফেললে। তারপর গা-ঢাকাটা নিয়ে বাড়ি চলে গেল। সকালে যখন ঘুম ভাঙল, বুড়ি যা বলেছিল মনে পড়ল তার। বালিশের তলায় হাত দিয়ে দেখে, সত্যিই সেখানে একটি সোনার মোহর চকচক করছে। পরের দিন আবার একটা সোনার মোহর। তারপর প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই সে একটি করে সোনার মোহর পেতে লাগল। যখন একরাশ মোহর জমল, সে ভাবলে, এত সোনা নিয়ে বাড়িতে বসে থেকে কী লাভ? যাই, দুনিয়া টহল দিয়ে আসি। ভেবে সে বাপ-মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কাঁধে বন্দুক ফেলে বেরিয়ে পড়ল।

    একদিন হল কি, চলতে চলতে সে এক গভীর বনের মধ্যে এসে ঢুকল। বন পার হয়ে দেখল, সামনের উপত্যকায় একটি সুন্দর প্রাসাদ। তার একটি জানলায় এক বুড়ি দাঁড়িয়ে। তার পাশে সোনালি-চুল একটি সুন্দরী মেয়ে।

    বুড়ি ছিল এক ডাইনি। সে মেয়েটিকে বললে—ঐ দেখ বন থেকে কে একজন বেরিয়ে আসছে। ওর সঙ্গে এক অপূর্ব সম্পদ লুকোনো আছে। যেমন করে হোক সেটা আমাদের পেতে হবে। ওর কাছে আছে একটি পাখির কলজে আর তারই ফলে রোজ ঘুম থেকে উঠলেই বালিশের নিচে ও একটি করে সোনার মোহর পায়; ওটা আমাদের চাই।

    শিকারী কাছে এগিয়ে এসে মেয়েটিকে ভাল করে দেখতে গেল। সে তখন বললে—অনেক দিন ধরে আমি ঘুরছি। এইবার একটু বিশ্রাম চাই। প্রাসাদে আমায় থাকতে দেবেন?

    শিকারীর সামনে দরজা খুলে গেল। প্রাসাদে ঢুকতে সে প্রচুর খাতির এবং সেবা পেল। ডাইনির মেয়েকে দেখে শিকারী এমন মুগ্ধ হল যে কেবলই ভাবতে লাগল, কেমন করে মেয়েটিকে খুশি করা যায়!

    ডাইনি তার মেয়েকে বললে—এইবার ঐ পাখির কলজেটা আমাদের পেতে হবে। এমন করে নেব যে ও কিছু টের পাবে না।

    শিকড় বেটে তারা একটা ওষুধ করলে। কাঁচের পাত্রে ঢেলে মেয়েটি শিকারীর কাছে নিয়ে গিয়ে বললে—আমার কথা মনে করে এটি তুমি খাও।

    খেতেই শিকারী অজ্ঞান হয়ে গেল আর তার মুখ থেকে বেরিয়ে এল পাখির কলজেটি। বুড়ি চেয়েছিল সেটা, কিন্তু মেয়েটি মাকে না দিয়ে নিজেই চুপিচুপি খেয়ে ফেলল। সেই থেকে শিকারী আর তার বালিশের তলায় মোহর পেত না। তার বদলে ডাইনির মেয়ের বালিশের তলায় একটি করে মোহর আসতে লাগল। বুড়ির রোজ গিয়ে মোহরটি নিয়ে আসত। এদিকে শিকারী সেই ডাইনির মেয়েকে নিয়ে এমন মেতে রইল যে সে সব ভুলে গেল।

    তখন বুড়ি বললে—পাখির কলজেটা আমরা পেয়েছি; এবার ইচ্ছে-গুণওয়ালা গা-ঢাকাটাও আমাদের চাই।

    মেয়ে বললে—ওটা ছেড়ে দাও না! ওর আসল সম্পত্তিটাই তো আমরা নিয়ে নিয়েছি।

    বুড়ি ভীষণ রেগে গিয়ে বললে—ওরকম একটা গা-ঢাকা কি যেখানে-সেখানে পাওয়া যায় নাকি? ওটা চাই-ই আমার। কাজেই বুড়ির কথামতো মেয়েটি জানলার ধারে গিয়ে দাঁড়িয়ে দুঃখভরা মুখে অনেক দুরের পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে রইল।

    শিকারী বললে,—তোমার এত মন খারাপ কেন গো?

    মেয়েটি বললে—কী বলব আর! দূরের ঐ পাহাড়গুলি চুনির পাহাড়—মহামূল্য পাথরে ভরা! ওগুলি আমার এত পাবার ইচ্ছে যে যখনই ভাবি মন খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু ওখানে তো যাওয়া যায় না!

    শিকারী বললে—এই যদি তোমার দুঃখের কারণ হয় তাহলে এখনই আমি সে দুঃখ দূর করতে পারি।

    বলে সে তার গা-ঢাকা বার করে মেয়েটিকে শুদ্ধ গা-ঢাকার আড়ালে নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে পাহাড়ে গিয়ে হাজির হল। তাদের চারিদিক ঘিরে দামি দামি পাথর। দেখে তাদের ভারি আনন্দ হল। তারা সবচেয়ে ভাল সবচেয়ে বড় কতকগুলি পাথর বেছে তুলে নিলে।

    ডাইনি এদিকে যে যন্ত্র ছেড়েছিল তাতে করে শিকারীর চোখ ঘুমে ঢুলে এল। মেয়েটিকে সে বললে—এস একটু বসি। আমার এত ক্লান্ত বোধ হচ্ছে যে আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না।

    তারা বসতে শিকারী মেয়েটির কোলে তার মাথা রেখে গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে পড়ল। মেয়েটিও অমনি তার গা থেকে ঢাকাটা খুলে নিয়ে নিজে পরে চুনি-বোঝাই হয়ে ঢাকাকে বললে—বাড়ি চল। শিকারী ঘুম ভেঙে দেখল, তাকে ফাঁকি দিয়ে এই বুনো পাহাড়ের মধ্যে একা ফেলে মেয়েটি পালিয়ে গেছে।

    মনের দুঃখে মাটিতে বসে পড়ে শিকারী বলে উঠল—ওঃ, এই পৃথিবীতে কত বঞ্চনা কত প্রতারণা! কী যে সে করবে ভেবে পেল না।

    পাহাড়টা ছিল কয়েকটি বুনো এবং অসভ্য দৈত্যের অধিকারে। তারা ঐ পাহাড়েই থাকত। একটু পরেই শিকারী দেখলে, তিনটে দৈত্য তার দিকে এগিয়ে আসছে। সে তাড়াতাড়ি আবার শুয়ে পড়ে ভান করল যেন কত ঘুমোচ্ছে।

    প্রথম দৈত্যটা এসে শিকারীর গায়ে খেল এক হোঁচট। সে বলে উঠল—এ আবার কী রকম কেঁচো একটা?

    দ্বিতীয়টা বললে—পা দিয়ে মাড়িয়ে মেরে ফেল না!

    কিন্তু তৃতীয়টা বললে—মজুরি পোষাবে না! ছেড়ে দাও ওকে। এখানে তো আর ও থাকতে পারবে না—যখন পাহাড়ের চুড়োর দিকে উঠবে মেঘেরা নেমে এসে ওকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।

    এই বলে তারা চলে যেতেই শিকারী উঠে পড়ে পাহাড়ের চুডোর দিকে উঠতে লাগল। চুড়োয় পৌঁছে খানিকক্ষণ বসে জিরোতেই একখণ্ড মেঘ তার দিকে ভেসে এল আর তাকে উড়িয়ে নিয়ে চলে গেল। প্রথমে হাওয়ার মধ্যে দিয়ে শন্‌-শন্‌ বেগে গেল, তারপর ধীরে ধীরে তাকে নামিয়ে দিল একটা দেয়াল-ঘেরা প্রকাণ্ড বাগানের মধ্যে। সেখানে অনেকগুলি সালাদের ক্ষেত।

    শিকারী চারিদিকে তাকিয়ে বললে—আঃ, যদি কিছু খাবার পাওয়া যেত! এত খিদে পেয়েছে, অথচ এখান থেকে বেরোই কী করে বুঝতে পারছি না। এখানে না আছে আপেল, না আছে নাসপাতি। কোন ফলই নেই। থাকবার মধ্যে শুধু সালাদ। শেষে সে ভাবল—সালাদই খাওয়া যাক। স্বাদ তো কিছু নেই, কিন্তু পেট খানিকটা ভরবে।

    ভাল করে বেছে একটা সালাদের মাথা তুলে নিয়ে সে চিবোতে লাগল। কিন্তু সালাদের টুকরো মুখে যেতেই তার কিরকম অদ্ভুত লাগতে লাগল। মনে হল যেন সে বদলে যাচ্ছে। মনে হল তার চারটে পা গজাচ্ছে, একটা মস্ত মাথা, দুটো লম্বা কান। সে সভয়ে দেখল যে সে একটি গাধা হয়ে গেছে।

    তবুও কিন্তু খিদে তার গেল না। রসে ভরা সালাদ খেতে তার এবার খুবই ভাল লাগল। যত পারে খেতে লাগল সে। শেষে সে আর-একটা ক্ষেতে এসে উপস্থিত হল—সেখানে অন্যরকমের সালাদ। সেই সালাদ মুখে দিতেই তার মনে হল তাবার তার মধ্যে একটা বদল হচ্ছে। তার মানুষের মূর্তি আবার ফিরে পেল। এত ক্লান্ত বোধ হচ্ছিল যে শুয়ে পড়ে ঘুমিয়ে বেশ খানিকটা জিরিয়ে নিল সে।

    পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সে ক্ষেত থেকে দু-রকম সালাদের দুটো মাথা ভেঙে নিল আর ভাবল—দাঁড়াও, এরই সাহায্যে যারা আমায় বঞ্চনা করেছে তাদের উপর শোধ তুলব!

    থলির মধ্যে সালাদ দুটি ভরে পাঁচিল টপকে বাইরে এসে সে বেরিয়ে পড়ল ডাইনির প্রাসাদ খুঁজে বার করতে।

    কিছুদিন ঘোরাঘুরির পর ভাগ্যক্রমে পেয়ে গেল জায়গাটার হদিশ। তখন মুখে কালি ঝুলি মেখে নিজের চেহারাটা এমনই বদল করে ফেলল যে তার নিজের মা পর্যন্ত তাকে চিনতে পারতেন না। সেই চেহারায় প্রাসাদে গিয়ে সে আশ্রয় চাইল। বললে—আমি এমন থকে গেছি যে আর এক পা-ও চলতে পারছি না।

    ডাইনি বললে—কে তুমি গ্রামবাসী? কী চাও?

    সে জবাব দিলে—আমি রাজার দূত। রাজা আমায় পাঠিয়েছিলেন পৃথিবীতে সবচেয়ে দুষ্প্রাপ্য যে সালাদ জন্মায় তার খোঁজে। আমার ভাগ্য, সালাদটা পেয়েছি; সঙ্গে করে নিয়ে ফিরছি। কিন্তু রোদের তেজ এত বেড়ে উঠেছে যে ভয় হচ্ছে পাতাগুলি না শুকিয়ে যায়। বুঝতেই পারছি না রাজার কাছে এদের নিয়ে পৌঁছতে পারব কি না!

    দুষ্প্রাপ্য সালাদের কথা শুনে বুড়ি ডাইনির ভারি লোভ হল খেয়ে দেখতে। ডাইনি বললে—দেখ ভালমানুষের পো, সেই আশ্চর্য সালাদ আমাকে একটু চাখতে দেবে?

    সে বললে—নিশ্চয়, নিশ্চয়! আমার ব্যাগে দুটো সালাদের মাথা আছে, তার মধ্যে থেকে একটা আপনাকে দেব। বলে থলি খুলে খারাপ সালাদটা বার করে বুড়ির হাতে তুলে দিলে।

    ডাইনি কোনরকম সন্দেহ করল না। তার জিভ দিয়ে এত জল ঝরতে লাগল যে সে নিজেই চলে গেল, রান্নাঘরে সালাদের পাতা কেটে ডিশে সাজিয়ে নিয়ে আসতে। সালাদ তৈরি হলে তার আর টেবিলে ডিশ সাজানো পর্যন্ত তর সইল না—কয়েকটা পাতা তুলে মুখে দিল। যেই না চিবিয়ে গেলা অমনি মানব-মূর্তি গিয়ে তার জায়গায় হল এক গাধা-মূর্তি। গাধানীর চেহারায় লাফাতে লাফাতে সে উঠোনের দিকে চলে গেল।

    রান্নাঘরের ঝি এসে দেখল, সালাদের ডিশ তৈরি। ডিশটা তুলে নিয়ে টেবিলে রাখতে যাবে সেই সময় বরাবরের অভ্যাস মতো তার বেজায় ইচ্ছে করল দু-একটা পাতা চেখে দেখতে। সঙ্গে সঙ্গে সালাদের ক্ষমতা প্রকাশ পেল,—সেও একটা গাধায় পরিণত হয়ে উঠোনে বেরিয়ে এল। সালাদের ডিশ মাটিতে পড়ে গেল।

    ইতিমধ্যে রাজার দূত সুন্দরী মেয়েটির সঙ্গে বসেই আছেন, বসেই আছেন, কেউ আসে না। মেয়েটি বললে—দেখে আসি সালাদের কী হল।

    শিকারী মনে মনে ভাবল—যেমন মতলব ভেঁজেছিলুম তেমনি বোধহয় হয়েছে। মুখে বললে—আমি রান্নাঘরে দেখি কী হল।

    নিচে নেমেই সে দেখল উঠোনে দুটো গাধা ছুটোছুটি করছে, আর সালাদটা মেঝেতে গড়াচ্ছে।

    সে বললে—দুটোর তাহলে হয়ে গেছে। বলে সালাদ-পাতাটা তুলে ডিশে সাজিয়ে মেয়েটির কাছে নিয়ে গিয়ে বললে—এই দেখুন আমি নিজেই আপনার জন্যে খাবারটা নিয়ে এলুম।

    একটুকরো মুখে দিতেই মেয়েটিও সঙ্গে সঙ্গে গাধা হয়ে গিয়ে অন্য দুটোর সঙ্গে উঠোনে গিয়ে জড়ো হল।

    শিকারী মুখের রং ধুয়ে মুছে উঠোনে গিয়ে বললে—এইবার দেখ, চিনতে পারো কি না আমাকে! এবার তোমাদের পেজোমির শাস্তি পেতে হবে।

    তিনটেকে একসঙ্গে বেঁধে সে তাদের নিয়ে চলল এক চাকিকলে। জানলায় টোকা দিতে চাকিওয়ালা মুখ বাড়িয়ে বললে—কী চাও?

    শিকারী বললে—আমি তিনটে পাজি গাধা এনেছি। এগুলো আমার আর দরকার নেই। এদের তুমি ভাই যদি নিয়ে আমি যেমনভাবে বলব তেমনি করে এদের খাওয়াও আর এদের সঙ্গে ব্যবহার কর তাহলে তুমি যা দাম চাও তাই দেব।

    চাকিওয়ালা বললে—বল কী রকম কী করতে হবে?

    শিকারী বললে—এই বুড়ি গাধাটা দেখছ, একে রোজ তিনবার করে আচ্ছা করে পেটাতে হবে আর একবার করে খাওয়াতে হবে। এই মাঝবয়সী গাধীটাকে একবার করে ঠেঙাতে হবে, তিনবার করে খাওয়াতে হবে। আর ছোটটাকে তিনবার করে খাওয়াতে হবে কিন্তু একে কেউ মারবে না।

    তারপর প্রাসাদে ফিরে গিয়ে শিকারী গোছগাছ করে বসল।

    কিছুদিন পরে চাকিওয়ালা এসে তাকে বলল—যে বুড়ি গাধীটাকে তিনবার করে মারার পর একবার করে খাওয়ানোর কথা ছিল সেটা মরে গেছে। অন্য যে দুটোকে তিনবার করে খাওয়াবার কথা তারাও রোগা হয়ে যাচ্ছে। বেশিদিন টিকবে না।

    শুনে শিকারীর দয়া হল। চাকিওয়ালাকে সে বললে গাধীদুটোকে নিয়ে আসতে। তারা আসতে শিকারী তাদের অন্য সালাদ থেকে একটু করে খেতে দিল। তারাও নিজমূর্তি ফিরে পেল। সুন্দরী মেয়েটি তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললে—তোমার উপর যা-কিছু অন্যায় করেছি তার জন্যে আমায় ক্ষমা কর। আমায় জোর করে সবকিছু করিয়েছে। আমার নিজের ইচ্ছেয় করিনি। তোমার ইচ্ছে-গুণওয়ালা গা-ঢাকাটি আলমারিতে ঝুলছে। নিতে পার। পাখির কলজেও তোমায় ফেরত দেব।

    শিকারী বললে—দরকার হবে না। ওগুলো রাখো তোমার কাছে। কারণ তোমায় আমি বিয়ে করব।

    কয়েকদিনের মধ্যেই তাদের বিয়ে হয়ে গেল। সেই থেকে তারা পরম সুখে দিন কাটাতে লাগল।

    টীকা